দেশের মাটিতে বিদেশী সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছে দাগনভূঞার গৌতমখালী গ্রিন হাউজ।
ছোট ফেনী নদী থেকে খালটি বেরিয়ে গেছে। প্রায় গোলাকার বৃত্তের মতো ঘিরেছে একটি গ্রামকে। নাম তার গৌতমখালী। এখানকার কিছু মানুষ প্রবাসী ও শহর-বন্দরে কাজ করেন ঠিকই কিন্তু এখানে নগরজীবনের কোনো ছোঁয়াও নেই। বিদ্যুৎ আছে তবে রাস্তাঘাটের দুর্দশা ভোগাচ্ছে দ্বীপবাসীকে। অথচ একেবারেই আধুনিক বিদেশী সবজি উৎপাদন হচ্ছে গ্রামের ছায়াঘেরা গ্রিন হাউজে। এসব সবজি যাচ্ছে ঢাকার সোনারগাঁওসহ অসংখ্য অভিজাত হোটেল ও রেস্টুরেন্টে। গ্রামের বালাগাত উল্যার তিন ছেলের মধ্যে নজির আহমদ দ্বিতীয়। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে নিকটাত্মীয়দের সহায়তায় তিনি পাড়ি জমান হল্যান্ডে। সেখানে একটি কৃষি খামারের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে আস্তে আস্তে রপ্ত করেন কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের নানা কৌশল। এ ছাড়া হল্যান্ডে তিনি দু’দফায় ১০ বছর বিজ্ঞানসম্মত কৃষি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন। নাড়ির টানে ফিরে আসেন দেশে এবং গড়ে তোলেন ‘বাংলা ডাচ অ্যাগ্রিকালচার ফার্ম লিমিটেড’। ২০০৪ সালে নজির আহমদ ফিরে আসেন গৌতমখালীতে। ৩ একর জমিতে গ্রিন হাউজখ্যাত প্লাস্টিকের টিনের ছাউনি তৈরি করে শুরু করে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ। এ পর্যন্ত নজির আহমদ ডাচ বাংলা এগ্রো ফার্মে প্রায় ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
তার ফার্মে উৎপাদিত সবজি হলোন্ধ আইসবার্গ, লোকাল লেটুস, রেড কেবিচ, ব্রোকলি, সুইট পেপার, চাইনিজ কেবিজ, লেমন ট্রি, থাই আদা, চেরি টমেটো ও এগপ্লান্ট। বিদেশী এসব সবজি বছরে চারবার উৎপাদিত হয়। রৌদ্র কিরণ ও ঝড় বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য গ্রিন হাউজের অর্ধেক অংশে প্লাস্টিকের টিন দেয়া হয়েছে। নজির আহমদ জানান, পর্যায়ক্রমে পুরো জায়গায় টিনের ব্যবস্খা করা হবে।
উৎপাদিত সবজি সোনারগাঁ, কেপি এস, পিজা হাট, ডোমিনাস পিজা, র্যাডিসা, সারিনাসহ ঢাকার অভিজাত হোটেলগুলোতে বিক্রি হয়। ফার্ম থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকার সবজি সরবরাহ করা হয়। নজির আহমদ বলেন, পরিপূর্ণভাবে চালু করা গেলে এ প্রকল্প থেকে প্রতি মাসে খরচ বাদে ৫ লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব হবে।
এগ্রো ফার্মে ৯ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রকল্পের মাঝে আরো রয়েছে দুগ্ধ খামার, মৎস্য খামার, হাঁস-মুরগির খামার। এগুলো এখনো পূর্ণোদ্যমে চালু হয়নি। চালু হলে প্রায় শতাধিক লোকের কর্মসংস্খান সৃষ্টি হবে। পুরো ফেনী জেলা নয়, চট্টগ্রাম বিভাগেও এ রকম বিদেশী পুষ্টি গুণসমৃদ্ধ সবজির কোনো ফার্ম গড়ে ওঠেনি। ব্যতিক্রম এই সবজি খামারে সরকারের কোনো সহযোগিতা নেই। পুঁজির সঙ্কট হলেও তারা থেমে নেই।
স্খানীয় ইউপি সদস্য আবদুল হামিদ জানান, গ্রামের প্রত্যেকের মনে এই ফার্ম নিয়ে অনেক স্বপ্ন আছে। ভিনদেশের সবজি এই মাটিতে উৎপন্ন হচ্ছে তা দেখতে মানুষ এখানে প্রতিনিয়ত আসেন।
নজির আহমদ বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্খার সমস্যা তো আছেই। উৎপাদিত সবজি ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছানোয় যা কষ্ট হয় তার চেয়ে বেশি কষ্ট হয় গ্রাম থেকে মহাসড়কে পৌঁছতে।
তিনি বলেন, কম্পোস্ট সার বেশি দেয়া হলে উৎপাদন অনেক বেড়ে যাবে। এর বীজগুলো হল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়। ব্যতিক্রমী এই বিদেশী সবজি ভিনদেশ থেকে এ দেশে আমদানি করা হয় অথচ এ দেশেও তা উৎপাদন করে অনেক খরচ বাঁচানো যায়। প্রচুর পরিমাণ উৎপাদন করা গেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে এবং গৌতমখালীর এই গ্রিন হাউজ খুলে দিতে পারে অপার সম্ভাবনার দ্বার।
Source: http://bangladeshagri.com
Could you please provide contact number of the farm ?
ReplyDelete