Saturday, January 8, 2011

শুকনো পদ্ধতিতে বোরো চাষ

শুকনো পদ্ধতিতে বোরো চাষ

শুকনো পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, ডিএই (এইসি) ডানিডা এএসপিএস গতবছর ৪টি জেলায় (নেত্রকোনার নারান্দিয়া, দিনাজপুরের সুন্দরবন, রাজশাহীর বিজয় নগর, টাঙ্গাইলের নরকোনায়) পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে সফলতার পর এবারো কৃষক পানি সাশ্রয়ের জন্য চাষ করতে পারেন তার জমিতে। এ পদ্ধতিতে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ সেচের পানি সাশ্রয় হবে ও ধানের ফলন ভাল পাওয়া যাবে।
প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মশিউর রহমান জানান, শুকনো জমিতে প্রাইমিং করা ধানের বীজ নির্দিষ্ট দূরত্বে বপন করতে হবে। পরবর্তীতে প্রয়োজনমত সেচ দিতে হবে। ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি মাসের ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত বীজ বপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে ব্রিধান ২৯ সবেচেয়ে ভাল। তবে বিনা ধান ৬, ব্রিধান ৪৭ ও ব্রিধান ২৮ জাতের চাষ করা যেতে পারে। বীজ প্রথমে ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টা জাগ দিয়ে ধান বীজের মুখ ফাটা অবস্থা তৈরি করতে হবে। আমন ধান কাটার পরে জোঁ অবস্থায় প্রয়োজনমত চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে জমি তৈরি করতে হবে। জমিতে রস না থাকলে সেচ দিয়ে পরে জোঁ অবস্থা তৈরি করে নিতে হবে। হাতে অথবা যন্ত্রের সাহায্যে ২৫ সেমি. দূরে দূরে লাইন এবং লাইনে ১৫ সেমি. দূরে দূরে ৩ থেকে ৫ সেমি. গভীর গর্তে ও প্রতি গর্তে ৪ থেকে ৬টি বীজ বপন করতে হবে। জমির উর্বরতা ধানের জাত ভেদে সারের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। তবে বিএআরসি/সরকারি সার প্রয়োগ সুপারিশ নীতিমালা অনুয়ায়ী অঞ্চলভেদে যে মাত্রা নির্ধারিত আছে সে অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। গোবর, কম্পোস্ট, টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও দস্তা সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ৪ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি শেষে চাষের সময়, দ্বিতীয় কিস্তি বীজ বপনের ৪৫ থেকে ৫৫ দিন পরে, তৃতীয় কিস্তি ৬০ থেকে ৭০ দিন পরে এবং শেষ কিস্তি ৭৫ থেকে ৮০ দিন পরে প্রয়োগ করতে হবে।
আগাছা দমন এই পদ্ধতির প্রধান সমস্যা। যন্ত্র বা নিড়ানির মাধ্যমে আগাছা দমন করতে হবে। এ পদ্ধতিতে আগাছার আক্রমণ রোধ করতে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ২ বা ৩টি বেশি নিড়ানি দরকার হয়। নিড়ানি খরচ বেশি হলেও পানি ও চারা রোপণের খরচ কম লাগে বলে অধিক মুনাফা পাওয়া যাবে। চীন ও ভারতের বিভিন্ন আগাছা নাশক যেমন বাই স্পাইরিকেব সোডিয়াম, ট্রাইফ্লুরালিন, পেনক্সসুলাম ইত্যাদি ব্যবহার করে কম খরচে সফলতার সাথে শুকনো পদ্ধতির ধানের জমিতে আগাছা দমন করতে হবে। বপনের পরে জমিতে রস না থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে। এরপর ৬০ থেকে ৭০ দিন পর হতে প্রয়োজনমত ৭ থেকে ১০টি সেচ দিতে হবে। উলেস্নখ্য যে, শুকনো পদ্ধতিতে বপন থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত খুব অল্প পরিমাণ সেচ লাগে। থোড় আসার সময় থেকে বীজ পুষ্ট হওয়ার সময় পর্যন্ত জমিতে সামান্য পানি রাখা ভাল। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এই পদ্ধতিতে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয়। পোকামাকাড় ও রোগের আক্রমণ হলে আইপিএম অথবা আইসিএম পদ্ধতি অনুসরণ করে পোকামাকাড় দমন করতে হবে।
Source: Daily Ittefaq

No comments:

Post a Comment