Sunday, January 2, 2011

রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবন : কাপ্তাইয়ে সবুজ পাহাড়ে হলুদ মাল্টা

রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবন : কাপ্তাইয়ে সবুজ পাহাড়ে হলুদ মাল্টা

মো. রেজাউল করিম কাপ্তাই (রাঙামাটি)
বাংলাদেশের মাটিতে হলুদ বর্ণের মাল্টা ফলাতে সক্ষম হয়েছে কাপ্তাইয়ের রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। দীর্ঘ ২ বছরের গবেষণার পর সবুজ পাহাড়ের মাল্টা গাছে থোকায় থোকায় ধরেছে হলুদ মাল্টা ফল। কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে এর আগে মাল্টার জাত উদ্ভাবিত হলেও এসব মাল্টা ফল ছিল সবুজ রংয়ের। আর বিদেশ থেকে আমদানিকৃত মাল্টার রং হলুদ। ফলে দেশে উত্পাদিত মাল্টা ক্রেতা আকর্ষণে তেমন একটা সফল হয়নি। এ অবস্থায় কাপ্তাই রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র টানা দুই বছর গবেষণা চালিয়ে দেশের মাটিতে হলুদ বর্ণের মাল্টা উত্পাদনে সক্ষম হয়েছে।
রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম হারুনুর রশিদ জানান, দেশে প্রথমবারের মতো হলুদ বর্ণের মাল্টা জাত পাওয়া গেছে। কাপ্তাই গবেষণা কেন্দ্রের বাগানের মাল্টা গাছে এবার প্রচুর হলুদ মাল্টা ধরেছে, যা খেতে অতি সুমিষ্ট ও বিদেশি মাল্টার মতো হলুদ বর্ণের। এর আগে একই গবেষণা কেন্দ্র থেকে বারি মাল্টা-১ নামের একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছিল। কিন্তু এই মাল্টা পাকা ও সুমিষ্ট হলেও বর্ণ ছিল সবুজ। ফলে এটি ক্রেতা আকর্ষণে ব্যর্থ হয়। বর্তমানে উদ্ভাবিত হলুদ বর্ণের মাল্টা বারি মাল্টা-২ জাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা) ড. সিরাজুল ইসলাম জানান, কাপ্তাইয়ে হলুদ বর্ণের মাল্টার জাত উদ্ভাবন প্রকৃতই একটি বড় সাফল্য। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে এই মাল্টা জাত হিসেবে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কাপ্তাই উপজেলার নারানগিরি রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষণায় মাল্টার ফলন সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, এখানে সৃজিত বাগানের গাছে গাছে মাল্টা ফলের ব্যাপক সমারোহ। প্রায় ৫/৬ ফুট উচ্চতার ডালপালা আর সবুজ পাতায় পরিবেষ্টিত গুচ্ছ আকৃতির গাছে হলুদ মাল্টা ফলের ভারে প্রায় ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে প্রতিটি গাছ। প্রতিটি গাছে গড়ে শতাধিক মাল্টা ফল ধরেছে। ফলের আকৃতি ও গঠন বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করা মাল্টা অপেক্ষা হৃষ্টপুষ্ট এবং রসালো প্রকৃতির। গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম হারুন আরও জানান, কম বৃষ্টিবহুল সুনির্দিষ্ট গ্রীষ্ম ও শীতকালবিশিষ্ট শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু মাল্টা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত মাল্টা ফলের গুণাগুণকে প্রভাবিত করে। ঢালু এবং অম্লীয় মাটিতে মাল্টা ভালো জন্মে। মাল্টা গাছ জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না এবং উচ্চমাত্রায় লবণের প্রতি সংবেদনশীল। পার্বত্যাঞ্চলের হাজার হাজার একরের পাহাড়ি ভূমি মাল্টা চাষাবাদের জন্য খুবই উপযোগী, যাতে মাল্টার বাণিজ্যিকভিত্তিক আবাদে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে। মাল্টার আবাদ পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে পাহাড়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাড়া জাগাতে পারে।
গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তারেক আল মেহেদী জানান, গাছ থেকে ছেঁড়া দেশীয় মাল্টা ফল কোনো প্রকার প্রযুক্তির ব্যবহার বা ফ্রিজিং করা ছাড়াই কমপক্ষে এক মাস স্বাভাবিক থাকবে। প্রতিটি গাছের উচ্চতা সর্বসাকুল্যে ৭ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। একবার বাগান করলে প্রতি বছরই এই বাগান থেকে ফল পাওয়া যাবে।
Source: Daily Amardesh

No comments:

Post a Comment