Sunday, December 22, 2013

বিস্ময়কর বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্ভাবন

বিস্ময়কর বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্ভাবন

 মহাজাগতিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এক বিস্ময়কর পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ এফ কামাল। এই অত্যাশ্চর্য আবিষ্কারে অভিভূত হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করে আবিষ্কারকের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ী শিল্পপতি-উদ্যোক্তারা। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজসহ (সিসিসিআই) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তার উদ্ভাবিত বিশেষ বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য লিখিত প্রস্তাবও দিয়েছে। প্রকল্পটির মধ্য দিয়ে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং জ্বালানি সংকট নিরসনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইঞ্জিনিয়ার ড. আহমেদ এফ কামালের এই বিশেষ বিদ্যুৎ প্রকল্পের অন্যতম বিশেষত্বগুলো হলো- এটি পরিবেশবান্ধব, এতে ধোঁয়া, শব্দ, ক্ষতিকারক বর্জ্য বা তেজষ্ক্রিয়তা নির্গমন হয় না, এ থেকে সারা বছর একই হারে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়, এটিকে সহজে এবং নামমাত্র খরচে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় এবং স্থাপনের জন্য অত্যন্ত স্বল্প স্থানই যথেষ্ট। তবে প্রকল্পটির সবচেয়ে চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এটি নিয়মিত কোনো জ্বালানি (তেল, গ্যাস, কয়লা বা তেজষ্ক্রিয়তা পদার্থ) অথবা প্রাকৃতিক শক্তি (পানি, বাতাস বা সৌররশ্মি) ছাড়াই কেবলমাত্র চৌম্বকক্ষেত্রে তরঙ্গের পর্যায়ক্রমিক বিবর্তনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। সুতরাং উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পুরোটাই বাংলাদেশ সরকারের তহবিলে মুনাফা হিসেবে জমা হবে।
সদ্য মার্কিন মুলুক থেকে ফেরা পারড়ু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবচেয়ে কম সময়ে ব্যাচেলরস ড. আহমেদ এফ কামাল জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনে তার এই প্রকল্পের মাধ্যমে অভাবনীয় ব্যয় হ্রাসের সুযোগটি পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো গেলে দেশে নিকট ভবিষ্যতেই বিদ্যুতের দাম কমবে, চাহিদাও মিটবে সহসাই। উপরন্তু বিদ্যুতের বহুমুখী ব্যবহার ও জাতীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করে আয় হবে হাজার হাজার কোটি টাকা। সিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বন্দর আসনের এমপি এম এ লতিফ বলেন, ড. আহমেদ এফ কামাল উদ্ভাবিত প্রকল্পটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারণের জন্য সিসিসিআই প্রস্তাব দিয়েছে। দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে এটি সম্ভব হলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে নতুন যুগের সূচনা ঘটবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিশিষ্ট গবেষক নাসিমুল কামালের ছেলে আহমেদ এফ কামাল। ছেলের এই উদ্ভাবনের বিষয়ে জানাতে গিয়ে তিনি জানান, ড. আহমেদ তার আবিষ্কারের ওপর পৃথিবীর সবচেয়ে খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক সাময়িকী 'নেচার'-এর জন্য একটি প্রবন্ধ রচনা করছেন। উল্লেখ্য, নেচার সম্পাদক এবং লেখকরা সবাই পরবর্তীকালে পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল কিংবা সমকক্ষ পুরস্কার পেয়েছেন। ড. আহমেদ সেই সফল বিজ্ঞানীদের একজন যারা তাত্তি্বক এবং ব্যবহারিক দুই ধরনের গবেষণাই করেছেন। তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গসহ পদার্থবিদ্যা, গণিত এবং প্রকৌশলবিদ্যার বহু শাখায় তার মৌলিক গবেষণা রয়েছে। তার অন্যান্য আবিষ্কারের বিবরণ ইন্টারনেটে নাসা এবং বেল ল্যাবরেটরিসহ বহু বিশ্বখ্যাত সাইটে পাওয়া যায়। প্রচারবিমুখ ড. আহমেদ থ্রিডি ইমেজ প্রসেসিংয়ের অন্যতম আবিষ্কারক (যা চিকিৎসা জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনকারী এবং বহু জীবন রক্ষাকারী এমআরআই, সিটিস্ক্যান, ত্রিমাত্রিক সার্জারি জাতীয় প্রযুক্তিসমূহের এবং থ্রিডি টেলিভিশনের সূচনা করেছে) এবং থ্রিজি-ফোরজি টেলিকমিউনিকেশন্সের অন্যতম প্রবক্তা (যা পৃথিবীকে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের বর্তমান থ্রিজি-ফোরজি সংস্করণগুলোর দ্বারপ্রান্তে এনে দিয়েছে)। কিংবদন্তি আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ফেনীর গভর্নর মরহুম খাজা আহমেদ এমপির নাতি ড. আহমেদ । অধ্যয়ন করেছেন আমেরিকায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। তিনি পারড়ু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বকালের সবচেয়ে কম সময়ে ব্যাচেলরস, ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে আরেকটি মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার, ফলিত গণিত এবং আইসিটিতে বিশেষজ্ঞতা লাভ করেন। অত্যন্ত অল্প বয়স থেকেই তিনি গবেষক, অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান পদে আমেরিকায় এবং বাংলাদেশে কর্মরত ছিলেন।

Saturday, April 27, 2013

FR Khan


Tuesday, January 1, 2013

জাপানে বাংলাদেশী ছাত্রের কৃতিত্ব: মাছের সেক্স পরিবর্তনের অজানা রহস্য উঘাটিত

জাপানে বাংলাদেশী ছাত্রের কৃতিত্ব:
মাছের সেক্স পরিবর্তনের অজানা রহস্য উঘাটিত
মশিউর রহমান : সমুদ্রে এমন কিছু মাছ বসবাস করে যারা জীবনের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে সেক্স পরিবর্তন করে পুরুষ মাছ স্ত্রীতে অথবা স্ত্রী মাছ পুরুষ মাছে রূপান্তরিত হয়। ঠিক কী কারণে এসব মাছ সেক্স পরিবর্তন করে তা এতদিন বিজ্ঞানীদের অজানা ছিল। সম্প্রতি জাপানের ওকিনাওয়ার রিউকিউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিতে গবেষণারত বাংলাদেশী ছাত্র ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম এ অজানা রহস্য উঘাটন করতে সমর্থ হয়েছেন। উদ্ভাবনের স্বীকৃতি হিসেবে গত ১১ সেপ্টেম্বর তাকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মান প্রেসিডেন্ট পদকে ভূষিত করা হয়।
ড. আলম জানান, সেক্স পরিবর্তনকারী মাছের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কোরাল রীফে (প্রবালের খাঁজ) বসবাসকারী গ্রুপার (Grouper) মাছ। এ গ্রুপার মাছ প্রথমে স্ত্রী হিসেবে জন্মগ্রহণ করে ও পরিপক্কতা লাভ করে এবং এক বা একাধিকবার প্রজননে অংশ নেয়। এসব স্ত্রী মাছ পরবর্তীতে সেক্স পরিবর্তন করে পুরুষ মাছে রূপান্তরিত হয় এবং সক্রিয় পুরুষ মাছ হিসেবে প্রজননে অংশগ্রহণ করে। গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মান প্রেসিডেন্ট পদকে ভূষিত হন।
মজার ব্যাপার হলো এসব মাছ আর কখনই পূর্বের সেক্সে ফিরে আসে না। কিন্তু কিভাবে এই গ্রুপার (Grouper) মাছ সেক্স পরিবর্তন করে সক্রিয় পুরুষ মাছে রূপান্তরিত হয় তাই ছিল ডঃ মোহাম্মদ আশরাফুল আলমের গবেষণার বিষয়বস্তু। তিনি প্রথমবারের মতো তার গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, স্ত্রী মাছের গোনাডের (প্রজনন অঙ্গ) মধ্যে এক ধরনের বিশেষ কোষ আছে যারা পুরুষ হরমোন (এন্ড্রোজেন) তৈরি করে। সাধারণত এসব মাছ যখন তার মূল দৈর্ঘ্যের দুই-তৃতীয়াংশ বড় হয় তখনই এই বিশেষ কোষগুলো এন্ড্রোজেন তৈরি শুরু করে এবং স্ত্রী মাছ ধীরে ধীরে পুরুষ মাছে রূপান্তরিত হয়। আর এ অনবদ্য গবেষণার জন্য ড. আলম জাপান সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান প্রেসিডেন্ট পদকে ভূষিত হন।
তিনি আরও দেখিয়েছেন যে, এ পরিবর্তনের সময় স্ত্রী মাছের (ফিমেল স্পেসেফিক) জিনগুলো ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে এবং তাদের প্রকাশ (expression) কমে যায়। অন্যদিকে এ সময় পুরুষ মাছের (মেইল স্পেসেফিক) জিনগুলো সক্রিয় হয় এবং এদের প্রকাশ (expression)-এর পরিমাণ বেড়ে যায়। আর এভাবেই স্ত্রী মাছটি পুরুষ মাছে রূপান্তরিত হয়। ড. আলমের এ গবেষণা সম্পর্কিত ১০টি নিবন্ধ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ড. আলমের জাপানের পিএইচডি তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক মাশারু নাকামুরা জানান, এটি একটি অনবদ্য ও যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এর ফলে কৌলিতত্ত্ব গবেষণায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা হলো।
ড. আলমের বাংলাদেশের এমএস তত্ত্বাবধায়ক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ বায়োলজি এন্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ সামছুল আলম বলেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা সুযোগ পেলে মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ড. আলম। তিনি কৌলিতত্ত্ব গবেষণায় পদক লাভ করে দেশের সুনাম বাড়িয়েছেন। ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রে প্রবালের খাঁজে ভেটকি বা কোরাল মাছও ওইভাবে সেক্স পরিবর্তন করে। তিনি তার গবেষণালব্ধ জ্ঞান দেশ ও জাতির সেবায় কাজে লাগাতে চান।
মাছের সেক্স পরিবর্তনের সময় ব্রেন (মস্তিষ্ক) কি ভূমিকা পালন করে বর্তমানে এর ওপর তিনি তার গবেষণা কর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। মাছের সেক্স পরিবর্তনের বর্তমান জ্ঞানের বাইরে কারো কোন প্রস্তাবনা থাকলে তার ল্যাবে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম ১৯৭৭ সালে টাঙ্গাইল জেলার মগড়া ইউনিয়নের ভিতর শিমুল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। টাঙ্গাইলে পড়াশুনা শেষ করে ১৯৯৩-১৯৯৪ শিক্ষাবর্ষে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে ভর্তি হন এবং ১৯৯৭ সালের (২০০০ সনে অনুষ্ঠিত) বিএসসি ফিসারিজ অনার্স চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করেন। ২০০২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার্সে এ প্লাস (A+) প্রাপ্ত হন। ২০০২ সালে তিনি ডেনমার্কের Aarhus বিশ্ববিদ্যালয় হতে জেনেটিক্স ডাটা এনালাইসিস-এর সফটওয়ারের ওপর প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন। অতঃপর ২০০৩ সালে জাপান সরকার প্রদত্ত মনোবুকাগাকুশো বৃত্তি নিয়ে জাপানের ওকিনাওয়ার রিউকিউ বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এস শুরু করেন এবং এ ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মাছের সেক্স পরিবর্তনের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পিএইচডিতে অনন্য গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মান প্রেসিডেন্ট পদকে ভূষিত হন।