Thursday, October 6, 2011

ব্রির সাফল্য : খরা লবণাক্ততা ঠাণ্ডা প্রতিরোধী তিনটি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন

ব্রির সাফল্য : খরা লবণাক্ততা ঠাণ্ডা প্রতিরোধী তিনটি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন

- আশরাফ আলী
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘ব্রি’ আরো তিনটি নতুন উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। খরা, লবণাক্ততা, ঠাণ্ডা ও রোগবালাই প্রতিরোধী ব্রি ধান৫৫, ব্রি ধান৫৬ এবং ব্রি ধান৫৭ নামে এই জাতগুলো ইতোমধ্যে অবমুক্ত করা হয়েছে। উদ্ভাবিত এ জাত তিনটিসহ ব্রির এ যাবৎ নতুন জাতের ধান উদ্ভাবনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০টিতে। এর বাইরে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্রি ধান২৯ জাতে ভিটামিন ‘এ’, উৎপাদনকারী জিন সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্রি ধান৫০-এর (বাংলামতি) উদ্ভাবন ব্রির আরেকটি বড় অর্জন। এসব ধানের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে অদূরভবিষ্যতে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির পাশাপাশি শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদানের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে।
ব্রি সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত চারটি হাইব্রিডসহ মোট ৬০টি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব ধান সনাতন ধানের জাতের তুলনায় দু-তিন গুণ বেশি ফলন দেয়। বর্তমানে দেশের প্রায় ৮০ ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ধানের চাষাবাদ করা হচ্ছে। দেশের মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৯০ ভাগই আসছে ব্রি উদ্ভাবিত এসব জাতের ধান থেকে। এর ফলে দেশে আবাদি জমি কমে যাওয়া সত্ত্বেও চার দশক আগের তুলনায় ধান উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ।
ব্রির গবেষকেরা জানান, ব্রি ধান৫৫ বোরো মওসুুমে দেশে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকা ব্রি ধান২৮ জাত থেকে পাঁচ দিন নাবী। অর্থাৎ বোরোতে এর জীবনকাল ১৪৫ দিন। হেক্টরে এক টন বেশি ফলন দেবে। অন্য দিকে আউশ মওসুমে এর জীবনকাল ব্রি ধান২৭-এর চেয়ে ১০ দিন আগাম অর্থাৎ ১০৫ দিন। হেক্টরে সাড়ে চার থেকে পাঁচ টন ফলন দিতে সক্ষম। এর চাল চিকন ও লম্বাটে। এ জাত মধ্যম মানের লবণাক্ততা, খরা ও ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে। এতে রোগবালাই প্রচলিত অন্যান্য জাতের চেয়েও কম হয়।
ব্রি ধান৫৬-এর জীবনকাল বিনা ধান৭-এর চেয়ে পাঁচ দিন এবং ব্রি ধান৩৩-এর চেয়ে প্রায় ১০ দিন আগাম অর্থাৎ ১১০ দিন। এটি একটি খরা সহনশীল জাত। প্রজননপর্যায়ে সর্বোচ্চ ১০-১২ দিন বৃষ্টি না হলেও ফলনের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। এটি রোপা আমনের জাত। খরা প্রবণ এলাকায় চাষাবাদের উপযোগী এ জাত হেক্টরে সাড়ে চার থেকে পাঁচ টন ফলন দিতে সক্ষম।
অনুরূপভাবে ব্রি ধান৫৭ দেশে খরা প্রবণ এলাকায় স্বল্পমেয়াদি (১০৫ দিন) জীবনকালসম্পন্ন জাত হিসেবে ফলন পরীক্ষায় সনে-াষজনক প্রমাণিত হয়েছে। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে রোপা আমনের এ জাত হেক্টরে চার থেকে সাড়ে চার টন পর্যন- ফলন দিতে সক্ষম। ব্রি ধান৫৭-এর চালের আকার-আকৃতি প্রচলিত জিরাশাইল ও মিনিকেট চালের মতো। এর জীবনকাল আগাম উফশী জাত বিনা ধান৭-এর চেয়ে ১০ দিন এবং ব্রি ধান৩৩-এর চেয়ে প্রায় ১৫ দিন কম।
ব্রি সূত্র জানায়, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্রি ধান২৯ জাতে ভিটামিন ‘এ’ উৎপাদনকারী জিন সংযোজন করা হয়েছে। পাশাপাশি অধিক আয়রন ও জিঙ্কসমৃদ্ধ কৌলিক সারি চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ধানের সমপ্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশ অদূরভবিষ্যতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির পাশাপাশি শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এসব উপাদানের চাহিদাও অনেকখানি পূরণ হবে।
এ ছাড়া ব্রি ধান৫০ (বাংলামতি)-এর উদ্ভাবন ব্রির আরেকটি বড় সামপ্রতিক অর্জন। এটি বোরোধানের জাত। এর জীবনকাল ১৫৫ দিন এবং গড় ফলন হেক্টরে সাড়ে ছয় টন। ব্রি এই প্রথমবারের মতো বোরো মওসুমের উপযোগী একটি সুগন্ধি ধানের জাত উদ্ভাবনে সফল হয়েছে। সাধারণত আমন মওসুমে সুগন্ধি ধানের চাষ হয়ে থাকে। এ দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী বাংলামতি ধানের চালের আকার পাকিস্তান ও ভারতের বাসমতি চালের অনুরূপ এবং ফলনও হেক্টরে এক টন বেশি।
এ দিকে গত এক বছরের গবেষণা কার্যক্রমের পাশাপাশি দেশের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের চার দশকের অর্জন ও অগ্রগতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরতে আগামী রোববার থেকে ব্রির বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা শুরু হচ্ছে। ওই কর্মশালায় ‘গবেষণা অগ্রগতি ২০১০-১১’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস'াপন করবেন ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ড. মো: খায়রুল বাশার।
ওইদিন সকাল ১০টায় গাজীপুরে ব্রি মিলনায়তনে এ উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সি কিউ কে মুসতাক আহমদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপসি'ত থাকবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপসি'ত থাকবেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ওয়ায়েস কবীর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে ব্রির মহাপরিচালক ড. এ কে জি মো: এনামূল হক সভাপতিত্ব করবেন। এতে বিএআরসি, ডিএই, ইরিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস'া, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কৃষকসহ তিন শতাধিক প্রতিনিধি যোগ দেবেন বলে গতকাল ব্রির প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের প্রধান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এম এ কাসেম জানান।
Source: http://www.dailynayadiganta.com, ৬ অক্টোবর ২০১১

No comments:

Post a Comment