Thursday, September 30, 2010

পৃথিবী বদলে দেবে আমাদের সালমান!

পৃথিবী বদলে দেবে আমাদের সালমান!পৃথিবী বদলে দিতে পারে_এমন সব 'আইডিয়া' জনসমক্ষে তুলে আনার জন্য গুগল ২০০৮ সালে তাদের দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে 'প্রজেক্ট টেন টু দ্য হানড্রেড' পুরস্কার ঘোষণা করে। ১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এ পুরস্কার জেতার জন্য এক লাখ ৫৪ হাজার 'আইডিয়া' জমা পড়ে। দুই বছর যাচাই-বাছাই শেষে সেরা পাঁচ আইডিয়ার মধ্যে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী সালমান খানের বিনা মূল্যে অনলাইন ভিডিও টিউটরিয়াল 'খান একাডেমী'। জিতে নিয়েছেন ১৪ কোটি টাকার সমমানের পুরস্কার। বিস্তারিত জানাচ্ছেন হাজ্জাজ-বিন-ইউসুফ ও আল-আমিন কবির শখের বসে বা প্রয়োজনের তাগিদেই হাজারটা 'আইডিয়া' ঘুরপাক খায় মানুষের মাথায়। এর মধ্যে এমন অনেক আইডিয়া আছে, যা বাস্তবায়ন করতে পারলে বদলে যাবে গোটা পৃথিবীই। এ রকম পরিকল্পনাগুলোকে জনসমক্ষে আনার জন্য 'প্রজেক্ট টেন টু দ্য হানড্রেড' (www.project10tothe100.com) নামে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ১৭০টির বেশি দেশ থেকে পৃথিবী বদলে দিতে পারে এমন দাবি নিয়ে এক লাখ ৫৪ হাজার অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়ে। দীর্ঘ দুই বছর যাচাই-বাছাই শেষে এ বিপুলসংখ্যক আইডিয়া থেকে চূড়ান্তভাবে ১৬টি পরিকল্পনা নির্বাচন এবং তার তালিকা প্রকাশ করে গুগল। এরপর চূড়ান্তভাবে এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে মাত্র পাঁচটি প্রকল্পকে চূড়ান্ত বিজয়ী আইডিয়া হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। এসব নির্বাচিত আইডিয়াকে আরো বিস্তৃত করার জন্য প্রতিটি প্রকল্পকে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আর পরিকল্পনাকারীদের সম্মাননা দেওয়া হয়েছে পৃথিবী বদলে দেওয়ার 'আইডিয়া গুরু' হিসেবে।

সেরা পাঁচ 'আইডিয়া'
সেরা পাঁচ আইডিয়া'র মধ্যে শিক্ষা বিভাগে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে সালমান খানের 'খান একাডেমী'র (www.khanacademy.org) বিনা মূল্যে শিক্ষামূলক অনলাইন ভিডিও টিউটরিয়াল। এ প্রকল্প আরো এগিয়ে নিতে খান একাডেমীকে ২০ লাখ ডলার বা ১৪ কোটি টাকা পুরস্কার দিয়েছে গুগল। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান ও গণিত প্রতিযোগিতা দলকে (www.usfirst.org) 'রিয়েল ওয়ার্ল্ড ওয়ার্কিং এক্সপেরিয়েন্স' ধারণা দেওয়ার জন্য ৩০ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে। সরকারের সব কাজকে একেবারেই স্বচ্ছ করার জন্য http://public.resource.org ধারণাকেও দেওয়া হয়েছে ২০ লাখ ডলার পুরস্কার। গাড়ি চালানোতে নতুন প্রযুক্তির 'আইডিয়া' দেওয়ার জন্য http://shweeb.com প্রকল্পকে দেওয়া হয়েছে ১০ লাখ ডলার। আর আফ্রিকান শিক্ষার্থীদের গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষা দিতে নতুন ধরনের আইডিয়া দেওয়ার জন্য ২০ লাখ ডলার পুরস্কার পেয়েছে এইমস নামের( www.aims.ac.ya) একটি প্রকল্প।
একজন সালমান খান
সালমানের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার নিউ অর্লিয়ন্স শহরে। তাঁর দাদাবাড়ি বাংলাদেশের বরিশালে। অনেক আগেই সালমানের বাবা অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। যুক্তরাষ্ট্রেই বেড়ে ওঠেন সালমান। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব আইটি (এমআইটি) থেকে গণিত, তড়িৎ কৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞান_এ তিন বিষয়েই স্নাতক করেন তিনি। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ কৌশলে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এখানেই থেমে থাকেনি তাঁর শিক্ষাজীবন। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে ব্যবসায় প্রশাসন থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এ মেধাবী।
তাঁর অনলাইন অঙ্ক শেখার টিউটরিয়াল সাইট www.khanacademy.org ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করলেও ২০০৯ সালের শেষ দিক থেকে তিনি এতে পরিপূর্ণ সময় দিতে শুরু করেন। এ পর্যন্ত খান একাডেমীর ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিডিও টিউটরিয়াল দেখা হয়েছে আড়াই কোটিরও বেশি বার! আর এ ইউটিউব চ্যানেলটির স্থায়ী দর্শকসংখ্যা ৭৫ হাজারের বেশি!

খান একাডেমীর বেড়ে ওঠা
২০০৪ সালের শেষ দিকে চাচাতো বোন নাদিয়াকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূর থেকেই ইয়াহু ডুডল নোটপ্যাডের মাধ্যমে অঙ্ক শেখাতে শুরু করেন সালমান খান। অল্প অল্প করে তাঁর এ উদ্যোগে 'ফেল্টুশ' চাচাতো বোনটি একসময় অঙ্ক পরীক্ষায় দারুণ ফল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল। এ ঘটনার পর অন্য আত্মীয়স্বজনও তাঁদের সন্তানদের অঙ্ক শেখানোর দায়িত্ব দিলেন সালমানের ওপর। হায়! এত শিক্ষার্থীকে অঙ্ক শেখানোর সময় তিনি কিভাবে পাবেন? এ সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি ভাবতে শুরু করলেন। পেয়েও গেলেন 'আইডিয়া'।
২০০৬ সালের ১৬ নভেম্বরে কম্পিউটারে অঙ্কের ওপর কয়েকটি ভিডিও টিউটরিয়াল তৈরি করে সেগুলো ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে আপলোড করে দিলেন তিনি। ভিডিও দেখেই তাঁর শিক্ষার্থীরা অঙ্ক শিখতে লাগল। ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর পরিকল্পনাটি আরো বিস্তৃত করলেন তিনি। শুধু নিকটাত্মীয় নয়, পৃথিবীর সব শ্রেণীর শিক্ষার্থী যাতে এ ভিডিও দেখে অঙ্ক শিখতে পারে সে উদ্যোগ নিলেন। কাজের ফাঁকে বিভিন্ন 'লেসন'-এর ভিডিও টিউটরিয়াল তৈরি করতে লাগলেন। দিন দিন বাড়তে থাকল তাঁর ভিডিও টিউটরিয়ালের জনপ্রিয়তা। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শক তাঁর ভিডিওগুলো দেখতে শুরু করলেন। ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে ২০০৯ সালের শেষ দিকে ছেড়ে দিলেন চাকরি। এরপর দিনের সম্পূর্ণ সময় তিনি ভিডিও টিউটরিয়াল তৈরির কাজে মন দিলেন।

টিউটরিয়াল কথা
সালমানের তৈরি অনলাইন টিউটরিয়াল প্রতিষ্ঠানে (www.khanacademy.org) বর্তমানে এক হাজার ৮০০-র বেশি ভিডিও টিউটরিয়াল রয়েছে। সাইটটিতে ভিডিওগুলোর মধ্যে রয়েছে বীজগণিত, পাটিগণিত, ব্যাংকিং ও অর্থ, জীববিদ্যা, ব্রেইন টিজার, ক্যালকুলাস, রসায়ন, ক্রেডিট ক্রাইসিস, অর্থনীতি, ডেভেলপমেন্ট ম্যাথ, ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন, ফিনান্স, গিথনার প্ল্যান, জিওমেট্রি, ইতিহাস, লিনিয়ার অ্যালজেবরা, অরগানিক রসায়ন, পলসন বেলআউট, ফিজিকস, প্রি-অ্যালজেবরা, প্রি-ক্যালকুলাস, প্রোবাবলিটি, পরিসংখ্যান, ট্রিগনোমেট্রি, ভ্যালুয়েশন ও ইনভেস্টিং, ভেনচার ক্যাপিটাল ও শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সব ধরনের টিউটরিয়াল। ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো গুগলের ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে আপলোড করে রাখা। আর প্রতিষ্ঠানটির মূল সাইটে পাওয়া যাবে টিউটরিয়ালগুলোর ভিডিও লিংক। খান একাডেমীর সব ভিডিও টিউটরিয়াল পাওয়া যাবে www.youtube.com/user/khanacademy চ্যানেলে। নিজের তৈরি টিউটরিয়ালগুলো সম্পর্কে টিভি চ্যানেল সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সালমান খান বলেন, যে উদ্যোগটি আমি গ্রহণ করেছি সেটি বিশ্বব্যাপী সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীর জন্য ছড়িয়ে দিতে চাই। আমি নিজে যতটুকু করেছি সেটি এ প্রকল্পের ছোট্ট একটি দিক। আমার এ প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি শিক্ষার্থী যেমন শিখতে পারবে, তেমনি কোটি কোটি মানুষ এর সঙ্গে সহজে যুক্তও হতে পারবে।

মুক্ত ভিডিও
খান একাডেমী সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি প্রকল্প। এ প্রকল্প ঘিরে বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও অফুরন্ত। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাঁর ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো বাণিজ্যিকীকরণ করার জন্য। কিন্তু সেসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন সালমান খান। তাঁর সব ভিডিও টিউটরিয়াল তিনি মুক্ত (ওপেনসোর্স) করে দিয়েছেন। বাণিজ্যিকীকরণ করলে টিউটরিয়ালগুলো থেকে তিনি লাখ লাখ ডলার আয় করতে পারতেন জেনেও তা তিনি সহজেই প্রত্যাখ্যান করেছেন! তাঁর ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো ওপেনসোর্স লাইসেন্সের অধীনে থাকায় যে কেউ এগুলো অনলাইন থেকে ডাউনলোড, অন্যকে বিতরণ, অনুবাদ প্রকল্প এবং এগুলো বর্ধিত করতে পারবেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশে এ ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো আঞ্চলিকীকরণ বা সে দেশের নিজস্ব ভাষায় অনুবাদকরণ শুরু হয়ে গেছে।

বিল গেটসের প্রিয় শিক্ষক!
বিল গেটসের পরিচয় নিশ্চয়ই কাউকে নতুন করে দিতে হবে না। বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের উল্লেখযোগ্য এ ব্যক্তির সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষকের নাম কী? এমন প্রশ্নের জবাবে বিল গেটস বলেছেন সালমান খানের নাম! এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, "সালমান খান যে কাজটি করেছেন সেটি সত্যিই 'অ্যামেজিং'! কঠিন কঠিন বিষয়কে তিনি খুব সহজেই তুলে এনেছেন।" বিল গেটস ও তাঁর ১১ বছরের সন্তান এখন নিয়মিত খান একাডেমী থেকে অনলাইনে বীজগণিত ও জীববিদ্যার বিভিন্ন বিষয় শিখছেন। এটি তাঁদের বীজগণিত ও জীববিদ্যা শিখতে অনেক সহযোগিতা করছে। বিল গেটসের ভাষায়, 'সালমান খান যে কাজটি করেছেন সেটি সত্যিই অবিশ্বাস্য!'

অনুবাদ করা যেতে পারে টিউটরিয়াল
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের গণিতে অনেক ভয়। তাদের জন্য টিউটরিয়ালগুলো অনুবাদ বা আঞ্চলিকীকরণ করা যেতে পারে। তাহলে তাদের অঙ্কভীতি দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো ওপেনসোর্স-ভিত্তিক হওয়ায় যেকোনো ভাষায় এটি অনুবাদ করে নিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। টিউটরিয়ালগুলো সহজবোধ্য করার উদ্যোগ নিলে আমাদের শিক্ষার্থীরাও হতে পারবে বিল গেটসের সহপাঠী।

জাগরণীর সাফল্য : তিন হাজারের বেশি নারীর কর্মসংস্থান

জাগরণীর সাফল্য : তিন হাজারের বেশি নারীর কর্মসংস্থান

শাহানাজ পারভীন সুমী
‘জাগরণী জুট হ্যান্ডিক্রাফট্স শপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার’—তেজগাঁওয়ের হলিক্রস স্কুলের বিপরীত পাশে অবস্থিত। জাগরণী’র সৌন্দর্য বর্ধনের বা প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে, তেমনি এর চারপাশে শান্ত, নির্মল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্রেতাদের মন জুড়িয়ে দেয়।
১৯৭১ সালে যুদ্ধের পরপরই যাত্রা শুরু হয় জাগরণীর। সিস্টার মেরি লিলিয়ানের উদ্যোগে শুরু হয় এর প্রথম পথচলা। শুরুর দিকে একজন বিদেশি উদ্যোক্তাও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বর্তমানে শুধু সিস্টার মেরিই আছেন এবং তার তত্ত্বাবধানেই সব কাজ সম্পন্ন হয়। মেরি লিলিয়ান প্রতিষ্ঠানটির ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত। এখানে ২০ থেকে শুরু করে আরও বেশি বয়সের নারীরা কাজ করেন। জাগরণীর জন্য প্রায় ৩ হাজারের বেশি মহিলা কর্মী কাজ করেন।
ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্যগুলো এখানে আসে। প্রায় দু’শ’ প্রকারের উপর পণ্য আছে জাগরণীতে। মাটি, কাপড়, পাট, বাঁশ, বেত, বিটস (পুঁথি), চট, মুক্তা, লেদারসহ আরও নানা উপকরণে তৈরি হয় এখানকার পণ্যগুলো। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে গৃহসজ্জার এবং সৌন্দর্য বর্ধনের সব জিনিসই এখানে পাওয়া যায়। এমনকি রূপচর্চার নানা প্রসাধনীও পাওয়া যায় এখানে।
পাট দিয়ে তৈরি শিকা, ম্যাট, ব্যাগ ও নানা ধরনের শো-পিস পাওয়া যায় এখানে। মাটি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের গহনা, কয়েল স্ট্যান্ড, শো-পিস, ল্যাম্প, কলমদানি ইত্যাদি রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। এছাড়া লুঙ্গি, শার্ট, সালোয়ার-কামিজ, বাচ্চাদের কাপড়, পাঞ্জাবি, নকশি কাঁথা, টেবিল ক্লথ, বিছানার চাদরসহ সব প্রয়োজনীয় জিনিস এখানে রয়েছে।
পাট ও পাটজাত দ্রব্য থেকে তৈরি জিনিসের মূল্য ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৫০/৬০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। মাটির তৈরি জিনিস এবং গহনা ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকার মধ্যে, নকশিকাঁথার বেডকাভার ১২০০ টাকার মধ্যেই পাওয় যায়। বিশেষ করে ক্রেতাদের কাছে এখানকার ফুলের ঝাড়ুর চাহিদা বেশি। ক্রেতাদের কাছে সাজগোজের জিনিসেরও খুব চাহিদা রয়েছে বলে জানালেন এখানে কর্মরত মার্গারেট বাড়ই।
খোঁপার কাঁটা, লেদারের জুয়েলারি বক্স, পার্স, লেডিস ব্যাগ, পাটের জুতা, বাঁশি প্রভৃতি শৌখিন জিনিস এখানে রয়েছে। ঘরের কাজের জিনিস—কাঠের চামচ, ডাল ঘুটনি ইত্যাদিও এখানে পাওয়া যায়। এছাড়া এখানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন ধরনের কার্ডের সমাহার, যা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে।
রূপচর্চার জন্য রয়েছে চন্দন ও উপটান। এছাড়া সুতা ও কাপড়ের বালা, চাবির রিং, মোম, ঘি, বই, কাপড়ের পুতুল, মাটির ফুলদানি এখানে পাওয়া যায়। জাগরণীর সুতার কাজ করা ও ব্লকের শাড়ির খুব চাহিদা রয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অপর একজন।
কাজের সমস্যার কথা জানতে চাইলে মার্গারেট বাড়ই জানান—উপকরণের বেশি দাম বলে সমস্যা হয়।
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এবং ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রোববার বন্ধ থাকে।

Tuesday, September 28, 2010

আপনিও শুরু করুন ই-কমার্স

আপনিও শুরু করুন ই-কমার্স রিপন রায়হান গত জুন থেকে আমাদের দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইন পণ্য কেনাকাটা সুবিধা বা ই-কমার্স চালু হয়েছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের গেটওয়ের মাধ্যমে বর্তমানে ক্রেতারা অনলাইনে পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছেন যেকোনো পণ্য। পণ্য কেনার পাশাপাশি যে কেউ ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজের পণ্য বিক্রিও করতে পারেন। আইনগতভাবে বৈধ হওয়ার পরও জনসচেতনতা আর উদ্যোগ না থাকায় এটি তেমন জনপ্রিয় হচ্ছে না। তবে এ ব্যবসা যে আমাদের দেশে শিগগিরই জনপ্রিয় হবে এমনটি স্বীকার করেন সবাই। ই-কমার্স ব্যবসার শুরুতেই তাই যোগ দিতে পারেন ই-কমার্স ব্যবসায়ীর দলে।ই-কমার্সে পণ্য বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইন-নির্ভর, তাই এটি শুরুর প্রথম পদক্ষেপই হলো নজরকাড়া এবং নিরাপদ একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা। ওয়েবসাইটের ডোমেইন নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে ছোট এবং সহজে মনে রাখা যায় এমন নাম নির্বাচন করা উচিত। 'ওয়েবসাইট যেন দ্রুত খোলা যায় এ জন্য উন্নতমানের হোস্টিং বেছে নেওয়া উচিত। উন্নতমানের হোস্টিংয়ে সাইট দ্রুত খোলে। হোস্টিং নির্বাচনের ক্ষেত্রে ডেডিকেটেড বা ভিপিএস সার্ভার নির্বাচন করতে হবে। কারণ শেয়ারড হোস্টিং ই-কমার্সের জন্য একেবারেই নিরাপদ নয়। আর সাইটটি থেকে যাতে খুব সহজেই ব্যবহারকারীরা পণ্য কিনতে পারেন এমনভাবে ডিজাইন করা উচিত।' জানান বিডিওয়েবমল্যুশনসের প্রধান নির্বাহী এস এম মেহেদী হাসান। তিনি আরো জানান, বিভিন্ন স্ক্রিপ্টে ই-কমার্স সাইট তৈরি করা যায়। ই-কমার্স সাইট ডেভেলপ করতে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। তবে এসএসএল সার্টিফিকেট ও ভেরিসাইন কমোডো সাইটের নিরাপত্তা প্রত্যয়নপত্র কিনতে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে হয়। যাঁরা কম টাকার মধ্যে ই-কমার্স সাইট তৈরি করতে চান তাঁরা বিনা মূল্যে ম্যাজেন্টা কমার্স স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি ডিফল্ট ওয়েব স্ক্রিপ্ট, যেটি থেকে বিনা মূল্যে কোড নিয়ে সার্ভারে আপলোড করে দিলেই ই-কমার্স সাইট তৈরি হয়ে যায়। ই-কমার্স সাইট তৈরি করতে এটি অনেক জনপ্রিয় একটি স্ক্রিপ্ট আর এর নিরাপত্তায়ও তেমন কোনো ত্রুটি নেই। জনপ্রিয় পেমেন্ট সিস্টেমগুলো এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই (ডিফল্ট) দেওয়া থাকে। গুগল চেকআউট, পেপাল, মাস্টার কার্ডসহ অন্যান্য পেমেন্ট ব্যবস্থা রয়েছে এতে।
সাইট ডেভেলপের কাজ শেষ হওয়ার পর অনলাইনে ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্থ পাওয়ার জন্য ব্যাংকের সঙ্গে অনলাইন পেমেন্ট চুক্তি সম্পাদন করতে হয় বলে জানালেন আঁকা টেকনোলজিসের প্রধান নির্বাহী সোহেল ইকবাল। বাংলাদেশে একমাত্র ডাচ্-বাংলা ব্যাংক অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা দিচ্ছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মার্চেন্ট হওয়ার পর ব্যাংকের সরবরাহ করা এপিআই সাইটে বসাতে হবে। 'এপিআই বসানোর কাজ সাইটটির ডেভেলপাররাই সাধারণত করে দেন'_বলেন সোহেল ইকবাল। এ ছাড়া ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড সংগ্রহ করেও অনলাইনে পেমেন্ট গ্রহণ করা যায়। সে ক্ষেত্রে যে ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড সংগ্রহ করতে চান সে ব্যাংকে যোগাযোগ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কিছু কাগজপত্র ও পাসপোর্ট জমা দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড সংগ্রহ করা যায়। অনলাইন অর্থ লেনদেন প্রতিষ্ঠান পেপালের মাধ্যমেও অনেকেই পণ্য বিক্রি করে থাকেন। আমাদের দেশে পেপালের সমর্থন না থাকায় আপাতত এ সুবিধা ব্যবহার করা যায় না।

বান্দরবানে বনজসম্পদ থেকে বছরে আয় ১শ’ কোটি টাকা : পরিকল্পিত বনায়ন ও পাচার রোধ করা গেলে আয় হবে দ্বিগুণ

বান্দরবানে বনজসম্পদ থেকে বছরে আয় ১শ’ কোটি টাকা : পরিকল্পিত বনায়ন ও পাচার রোধ করা গেলে আয় হবে দ্বিগুণ

নুরুল করিম আরমান, লামা (বান্দরবান)
শুধু বান্দরবানের বনজ সম্পদ থেকে বছরে একশ’ কোটি টাকারও বেশি আয় হচ্ছে। পরিকল্পিত বনায়ন, পরিপূর্ণ গাছ কাটা এবং নির্বিচারে বনজ সম্পদ উজাড় ও পাচার রোধ করে নিয়মে আনা গেলে বছরে এই আয় দেড়শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বন বিভাগের দাবি, এ অবস্থা আগামী ৫ বছর বিরাজ করলে শুধু বান্দরবান থেকে বছরে ২শ’ কোটি টাকার রাজস্ব আয় সম্ভব।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলায় মোট তিনটি বন বিভাগ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে লামা বন বিভাগ, বান্দরবান সদর বন বিভাগ ও বান্দরবান পাল্পউড বাগান বিভাগ। এছাড়া সদর উপজেলার কিছু অংশ ও রোয়াংছড়ি উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে রাঙামাটির কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগ এবং বান্দরবানে তিনটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল, যা বমু, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্ট নামে পরিচিত। এছাড়া বন বিভাগের আওতায় বনাঞ্চল এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন কয়েক হাজার বনবাগান রয়েছে। এখানকার বনজ সম্পদের মধ্যে সেগুন, গামারি, মেহগনি, চম্পাফুল, চাপালিশ, কড়ই, রেইনট্রি, গর্জন, রাবার ও শিশুগাছ অন্যতম। এছাড়া হাইব্রিডজাতীয় গাছের মধ্যে একাশিয়া, আকাশনীলা, ইউকেলিপটাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। অন্যদিকে আম, কাঁঠাল, জাম, কুল, আগরসহ বিভিন্ন ফলজাতীয় বৃক্ষ রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক। এসব গাছ থেকে প্রাপ্ত কাঠ ও বনজ সম্পদ বিক্রি করে প্রতি বছর বান্দরবান জেলায় একশ’ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হয়। তবে এই হিসাব বন বিভাগের। প্রকৃত আয় আরও অনেক বেশি বলে সচেতন মহল ধারণা করছে। বিভিন্ন এলাকা দিয়ে পাচার হওয়া বৃক্ষ, পারিবারিকভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিক্রীত গাছ/কাঠ এবং গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত গাছ/কাঠের হিসাব ধরা হলে তা আরও অনেক বেশি হবে।
বান্দরবান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরএমএম মুনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যে তিনটি রিজার্ভ ফরেস্ট রয়েছে তার মোট আয়তন প্রায় দুই লাখ ৬ হাজার একর। এর মধ্যে লামা বমু রিজার্ভ ৩ হাজার একর, সাঙ্গু ৮২ হাজার ৮০ একর এবং মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্ট এক লাখ ২০ হাজার একর। বন বিভাগের হিসাবমতে, এসব বনাঞ্চল থেকে বছরে একশ’ কোটি টাকার বেশি আয় হয়ে থাকে। গত বছর বান্দরবান বন বিভাগ ৫ লাখ ৬০ হাজার ঘনফুট এবং পাল্পউড বাগান বিভাগ ২ লাখ ৮০ হাজার ঘনফুটসহ দুই বন বিভাগ প্রায় সাড়ে ৮ লাখ ঘনফুট কাঠের পারমিট দিয়েছে। প্রতি ঘনফুট কাঠের গড় মূল্য এক হাজার টাকা ধরা হলে শুধু গাছ/কাঠ থেকে আয় ৮৫ কোটি টাকা। বান্দরবান পাল্পউড বাগান বিভাগ বছরে দুই লাখ ঘনফুট পাল্পউড বৃক্ষ অনুমোদন দিয়ে থাকে। এ থেকে প্রায় ৮ কোটি টাকা আয় হয়। এছাড়া বান্দরবানের ২ বন বিভাগ বছরে এক লাখ ১০ হাজারটি বাঁশ এবং লামা বন বিভাগ এক লাখ ও কাপ্তাই পাল্পউড এক লাখ ১০ হাজার বাঁশ থেকে রাজস্ব আয় করেছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। এছাড়া জ্বালানি কাঠ থেকে আয় হয় আরও ৮-১০ কোটি টাকা।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বন আইন মোতাবেক ব্যক্তিগতভাবে একজন সর্বোচ্চ একশ’ ঘনফুট কাঠ বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই কর্তন/চেরাই করতে পারেন। এ হিসাব ধরলে কয়েক লাখ ঘনফুট কাঠ ব্যক্তিগতভাবে কর্তন/চেরাই করা হয়। অনেকে ঘরের কাজেও বিপুল পরিমাণ কাঠ ব্যবহার করেন, যা বন বিভাগের হিসাবের মধ্যে নেই। তবুও বন বিভাগের হিসাবমতে, বন সম্পদ তেকে সব মিলিয়ে শত কোটি টাকারও বেশি আয় হচ্ছে। রাবারকে যদি বনজ সম্পদের আওতায় ধরা হয়, সেক্ষেত্রে এ খাতে বিপুল পরিমাণ রাবারও উত্পাদন হচ্ছে। এ থেকেও কয়েক কোটি টাকা আয় হচ্ছে। অপরদিকে ৭টি উপজেলা থেকে প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক গাছ/কাঠ অবৈধভাবে চোরাপথ দিয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে, যার কোনো হিসাব বন বিভাগ বা সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই। চোরাপথে চলে যাওয়া গাছ/কাঠের সংখ্যাও বছরে কমপক্ষে ৩-৪ লাখ ঘনফুট হতে পারে বলে বেশ কয়েকজন কাঠ ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে। এসংখ্যক কাঠের বর্তমান আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এছাড়া ফার্নিচার তৈরি হয়েও বান্দরবানের বাইরে বিক্রি হচ্ছে। এ খাতের আয়ও বছরে ১৫-২০ কোটি টাকা হবে। এ হিসাবে বছরে দেড়শ’ কোটি টাকারও বেশি আয় হচ্ছে বনজ সম্পদ থেকে। চোরাপথে যে কিছু গাছ/কাঠ যাচ্ছে না, তা নয়। তবে যেভাবেই যাক, এসব বিক্রি করে অর্থ তো আয় হচ্ছে, যা আমাদের বন সম্পদ থেকে মোট আয়কে সমৃদ্ধ করছে।

Saturday, September 25, 2010

সার ও জ্বালানি যখন মলমূত্র

সার ও জ্বালানি যখন মলমূত্র


মানুষের মল, মূত্র এবং শরীরের ঘামেরও দাম আছে। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের চলমান গবেষণার প্রাথমিক রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মতো বিশাল জনবসতিসম্পন্ন রাষ্ট্রের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মলমূত্র সংরক্ষণের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি পেলে বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষা থেকে শুরু করে বিরাটসংখ্যক শিশুর ডায়রিয়ায় মৃত্যুরোধ করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সার এবং জ্বালানি হিসেবে এসব মলমূত্র ব্যবহার করা হবে বলে গবেষকরা আশা করছেন। তবে এখনই সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এ সময়ে বিশ্বে সবচেয়ে বড় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের পক্ষে ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী এ গবেষণা চালাচ্ছেন। তারা বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশের প্রায় আড়াই বিলিয়ন মানুষ মলমূত্র ত্যাগ করেন খোলা মাঠে, জঙ্গলে অথবা রাস্তার পাশে। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, ঠিক তেমনিভাবে পরিবেশ দূষণের কারণ। গবেষকরা জানান, এছাড়া শহরাঞ্চলের আরও ২.১ বিলিয়ন মানুষ পাকা অথবা আধা পাকা পায়খানা-প্রস্রাবখানা ব্যবহার করেন, সেগুলোও যথাযথভাবে সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। অর্থাত্ সেসব মলমূত্রকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ধ্বংসের কোনো পন্থা অবলম্বন করা হয়নি। ফলে তা রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে।
প্রতি বছর ১৬ লাখ শিশু মারা যাচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা-প্রস্রাবখানা ব্যবহার না করার কারণে। শুধু তাই নয়, নিকটস্থ পানি সরবরাহ লাইন অথবা খাবার পানি সরবরাহের স্তরেও বিস্তৃত হচ্ছে এসব মলমূত্রের নির্যাস। স্যানিটেশন সার্ভিস যদি সত্যিকার অর্থে নিরাপদ করা সম্ভব হয় তাহলে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ ২০ থেকে ৪০ ভাগ হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে মহিলা ও বালিকারাও প্রাইভেসি বজায় রেখে পর্দানশিনভাবে মলমূত্র ত্যাগের সুযোগ পাবেন।
গবেষকরা আশা করছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তা অথবা জনবসতি রয়েছে এমন এলাকায় মলমূত্র ত্যাগের জন্য স্বল্প ব্যয়ে টয়লেট অথবা পায়খানা তৈরির অনুমতি পাবেন সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে। এরপর তারা ওই কর্মসূচিকে জনপ্রিয় করতে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারণা চালাবেন। টয়লেটগুলো ভরে গেলে মলমূত্র সরিয়ে নেয়া হবে নির্দিষ্ট একটি স্থানে, যা পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হবে না। এরপর এমনভাবে সেগুলো সংরক্ষণ করা হবে যা ক্ষেত-খামারে সার হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী হতে পারে অথবা জ্বালানি কিংবা শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত হতে পারে।
গবেষকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাই-ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশী-আমেরিকান আতিকুর রহমান এরই মধ্যে ফ্লোরিডা থেকে ঢাকায় এসেছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনার পর তিনি বাংলাদেশে কাজ শুরু করতে চান। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশের ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া এ উদ্যোগ সাফল্যমণ্ডিত করা সম্ভব নয় বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিল গেটস ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা নেয়ার তেমন প্রয়োজন হবে না যদি বাংলাদেশ সরকার এ পরিকল্পনাকে লুফে নেয়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এরই মধ্যে মলমূত্র সংরক্ষণের প্রকল্প চালু হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, টয়লেটগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এলাকাভিত্তিক পাহারাদার নিয়োগ করা হবে। সেসব অসামাজিক কাজের জন্য কিংবা অপরাধীদের আস্তানা হিসেবে কেউ যাতে ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যবস্থাও করা হবে।
সূত্র : এনা।

কচুরিপানা কলাগাছ ধনচে থেকে কাগজ : খুবি গবেষকদের সাফল্য

কচুরিপানা কলাগাছ ধনচে থেকে কাগজ : খুবি গবেষকদের সাফল্য

সোহেল রানা বীর, খুবি
শিক্ষা উপকরণের অন্যতম কাগজ। আর এ কাগজ তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বনজসম্পদ ব্যবহার করা হয়। বাঁশ, আখের ছোবড়া ইত্যাদি থেকে সাধারণত কাগজ তৈরি হয়। কিন্তু প্রথমবারের মতো বনজসম্পদের বিকল্প হিসেবে কাগজের কাঁচামাল তৈরি করল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
কাগজের কাঁচামাল হিসেবে বনজসম্পদের বিকল্প বের করতে গবেষণা শুরু করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের একদল গবেষক। অবশেষে কচুরিপানা, কলাগাছ এবং ধনচে থেকে কাগজের মণ্ড আবিষ্কার করলেন এ গবেষকরা। আবিষ্কৃত মণ্ড থেকে উত্পাদিত কাগজ বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কাগজের মতোই বলে মন্তব্য গবেষকদের। শুধু তাই নয়, কাঁচামালের সহজলভ্যের কারণে উত্পাদন খরচও অনেক কম হবে বলে তাদের বিশ্বাস।
ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অতনু কুমার দাশের উদ্যোগে একই ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় এ গবেষণা কার্যক্রম। ড. মো. নজরুল ইসলাম এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে পাল্প অ্যান্ড পেপার টেকনোলজিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর মনবুকাগাকাশো বৃত্তি নিয়ে জাপান যান এ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার জন্য। এরপর দেশে এসে ড. মো. নজরুল ইসলাম এ বছর মিনিস্ট্রি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে বায়োপাল্পিং প্রকল্পের জন্য অর্থ পান। তিনি প্রকল্পে সহকারী গবেষকের আওতায় নিয়োগ দেন অতনু কুমার দাশকে। দীর্ঘ ১ বছর ধরে গবেষণায় অতনু কচুরিপানা, কলাগাছ এবং ধনচে থেকে কাগজের মণ্ড আবিষ্কার করলেন। এ প্রকল্পে তাকে সহযোগিতা করেছেন তার আরও ক’জন বন্ধু।
অতনু বলেন, মণ্ড তৈরির প্রক্রিয়া খুব সহজ। কলাগাছের বাকল, কচুরিপানা ও ধনচে প্রথমে শুকিয়ে নিতে হবে। অতঃপর একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কেমিক্যাল পাল্পিং প্রক্রিয়ায় ল্যাবরেটরিতে সহজেই এ মণ্ড তৈরি সম্ভব।
গবেষকদের বিশ্বাস, কাগজের এ বিকল্প আবিষ্কার বাংলাদেশের কাগজ শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করবে। কারণ কাঠের চেয়ে কচুরিপানাতে প্রায় চার ভাগের এক ভাগ এবং কলাগাছের ক্ষেত্রে তিন ভাগের এক ভাগ রাসায়নিক দ্রব্য লাগবে। অন্যদিকে খরচের ক্ষেত্রে শতকরা তিন ভাগ কম লাগবে। এদিকে কচুরিপানা এবং কলাগাছের ফলন দেয়ার পর তেমন কোনো অর্থনৈতিক ব্যবহার নেই। তাছাড়া কলাগাছ, কচুরিপানা ও ধনচেও প্রচুর জন্মায় এবং দ্রুত বর্ধনশীল। সুতরাং এগুলো যদি কাগজ শিল্পে ব্যবহার হয়, তবে কাঁচামালের সমস্যাটা কমবে এবং কাগজের মূল্যও অনেকটা কমে আসবে। এসব থেকে তৈরি কাগজের গুণাগুণ বাজারে প্রচলিত কাগজের মতোই হবে। এর জন্য নতুন কোনো প্লান্ট বসানো লাগবে না।
ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এতে কাগজের গুণাগুণের নিশ্চয়তা দেয়া যাবে। তবে যে পদ্ধতিতে করা হয়েছে সেটা হলো কেমিক্যাল পাল্পিং। কাগজের গুণাগুণ নির্ভর করে মণ্ডের গুণাগুণের ওপর। আমাদের মণ্ডের গুণাগুণ বাজারে প্রচলিত কাগজের গুণাগুণের মতো। সুতরাং এ মণ্ডের কাগজ হবে বাজারে প্রচলিত কাগজের গুণাগুণের মতোই, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য সত্যিই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে গবেষকদের বিশ্বাস।
তাই দেশে বিদ্যমান কাগজকলে তাদের এ আবিষ্কারকে কাজে লাগানোর জন্য অতনু এবং নজরুল ইসলাম সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা কামনা করেন। যে কোনো প্রয়োজনে ড. নজরুল ইসলাম (+৮৮০-৪১-৭২০১৭১-৩), অতনু কুমার দাশ (০১৯১৫-০৪৮৬৮১)।

Friday, September 24, 2010

চাই প্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ

চাই প্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ

সাদ আবদুল ওয়ালী
আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে বসবাস করছি। ইদানীং ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দটি বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরাও চাই ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণায় একটি কল্যাণমুখী বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে শামিল হতে। শুধু রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখলে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ভুগতে হবে এতে সন্দেহ নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ নয়, বরং দরকার প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসরমান একটি বাংলাদেশের।

ডিজিটাল বলতে কী বোঝায়
ডিজিটাল বলতে একটি ইলেকট্রনিক টেকনোলজি বা প্রযুক্তি যার মাধ্যমে তথ্য জেনারেট, তথ্য সংরক্ষণ এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করাকে বোঝায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাঝে উপযুক্ত সমন্বয় সাধন এবং এর সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকৃত ডিজিটাল রূপ।

ডিজিটাল বাংলাদেশে যা থাকবে
সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে যা থাকবে বা যা থাকা বাঞ্ছনীয় তার একটি ধারণা দেয়া যেতে পারে, যা নিম্নরূপ :

ম্যানুয়াল ফাইল ব্যবস্থাপনার অপসারণ
যে কোনো অফিসে ফাইলের ওপর ফাইল স্তূপ হয়ে থাকবে এবং সেখান থেকে প্রয়োজনমাফিক যে কোনো তথ্য খুঁজে বের করা সত্যিই সময় সাপেক্ষ। অর্থাত্ এতে করে যথেষ্ট সময়ের অপচয় ঘটে। বরং এর চেয়ে প্রতিটি ডেস্কে একটি কম্পিউটার থেকে যে কোনো সময় তথ্য খুঁজে নেয়া এই ভোগান্তিকে অনেকাংশে কমিয়ে দিবে। তবে এ ব্যাপারে দেশীয় সফটওয়্যারের উপর গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।

ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা
সার্বিকভাবে প্রতিটি সেক্টরে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা দরকার। ম্যানুয়াল ফাইল ব্যবস্থাপনার চেয়ে কম্পিউটারাইজড সিস্টেমে সব ইনফরমেশন বা তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। আর এভাবে প্রতিটি সেক্টরে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে ওঠবে। ইতিমধ্যে সরকার সাশ্রয়ী মূল্যে ল্যাপটপ ছাড়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। মালেয়শিয়ান প্রতিষ্ঠান টিএফটির প্রযুক্তিগত সহায়তায় বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর বাস্তবায়ন কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা দেখার বিষয়।

কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়ানো
শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, আমরা চাই প্রতিশ্রুতির সঠিক বাস্তবায়ন। আমরা সামনের দিনে ডিজিটাল বাংলাদেশ, একটি প্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ পাবার অপেক্ষায় রয়েছি। আর এজন্য শহর এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কম্পিউটারের ব্যবহার অধিক হারে বাড়ানো প্রয়োজন।

ই-গভর্নমেন্ট
ই-গভর্নমেন্ট অর্থাত্ ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট। বাংলাদেশে ই-গভর্নেন্সের সূচনা হয় ১৯৯০ সালের দিকে। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সরকার কম্পিউটার সামগ্রীর উপর থেকে কর প্রত্যাহার করে নেয়। ২০০১ সালের শুরুতে ‘জাতীয় আইসিটি টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। তবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আইসিটির প্রয়োগ এখনও সীমিত পর্যায়ে রয়েছে। জরুরি হয়ে পড়েছে নির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যাওয়া। কেবল কম্পিউটারায়নই যথেষ্ট নয়, চাই প্রতিটি সেক্টরে, প্রতিটি পর্যায়ে কম্পিউটারাইজড সিস্টেমের সঠিক বাস্তবায়ন। ধরা যাক, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। এ ওয়েবসাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ সাইটগুলো টেক্সট কিংবা গ্রাফিক্সগুলো তথ্য বিবরণ থাকলে হবে না, বিশাল তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ ডেটাবেজ থাকা বাঞ্ছনীয় এবং একেকটি মন্ত্রণালয়ের সাথে আরেকটি মন্ত্রণালয়ের তথ্যের সম্পর্ক স্থাপন থাকবে অবশ্যই। অর্থাত্ প্রয়োজনমাফিক প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের মাঝে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে অনায়াসে। যে কোন সময় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য হালনাগাদ করা যাবে খুব সহজে। দেশের জনসাধারণ যেন এ ওয়েবসাইটগুলো থেকে প্রয়োজনানুসারে তথ্য নিতে পারে এর নিশ্চয়তা থাকা অপরিহার্য। কিছু কিছু তথ্য হতে পারে ব্যবহারকারীর নিজস্ব তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং ব্যবহারকারীর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকা ভালো। সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারী তার ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে তা নিয়ন্ত্রণ করবেন। এতে করে ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে।

টেলিসেন্টারের সংখ্যা বাড়ানো
বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্কের এক হিসাবমতে, বাংলাদেশে দুই হাজারের অধিক টেলিসেন্টার বিদ্যমান রয়েছে। আর এ টেলিসেন্টারগুলো গড়ে ওঠছে প্রধানত বেসরকারি উদ্যোগেই। সরকারকে এ ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে, একটি নির্দিষ্ট কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিসেন্টারের সংখ্যা বাড়ানো উচিত।

নাগরিক সেবাগুলো ডিজিটালাইজেশন
ডিজিটাল বাংলাদেশে জনসাধারণ ঘরে বসেই অধিকাংশ নাগরিক সুবিধা পাবেন। যেমন মানুষ অনলাইনে কিংবা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে সব বিল যেমন টেলিফোন, গ্যাস ইত্যাদি পরিশোধ করবেন। ইতিমধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবাও পাওয়া যাবে অনলাইনে। টেলিমেডিসিন সেবা এখন হাতের মুঠোয়। যানবাহনের সময়সূচি পাওয়া যাচ্ছে নির্দিষ্ট ওয়েব পোর্টাল থেকে। ডিজিটাল পাসপোর্ট প্রক্রিয়া অনেকটা স্তিমিত থাকলেও ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে মাত্র। ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে শুভ সূচনা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস কার্যক্রম চালু হয়েছে ২০০৯ সালের নভেম্বর থেকে। তবে আর একটি আশার কথা, বাংলাদেশ ব্যাংক পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ব্যাংককে পরীক্ষামূলকভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করার অনুমতি দিয়েছে।
নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবস্থা গড়ে তোলা
কেবল নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবস্থার মাধ্যমে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা গড়ে ওঠবে। ফলে বিকল্পভাবে ইন্টারনেট সার্ভিসসহ অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সিঙ্গাপুর বা হংকংয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। চড়া দামের ভি-স্যাট অব্যাহত রাখার প্রয়োজন আসবে না।

অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা প্রসার রোধ করা উচিত
কিছুদিন হলো অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। সরকারের উচিত অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসার প্রসার ঘটতে না দেয়া। বরং বৈধভাবে ভিওআইপি প্রযুক্তির বিস্তারে সরকারকে যথার্থ উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।

ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স
সম্প্রতি সরকার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে একটি সার্কুলার জারি করে আইসিটি টাস্কফোর্সের নাম পরিবর্তন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। বলা হচ্ছে, এই টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সরকার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা সম্ভব। এর আওতায় সংক্ষিপ্ত মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা জরুরি। এ কমিটি জাতীয় কার্যক্রমের একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করবে। এক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি স্তরে ডিজিটাল রূপ দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে দ্রুতগতিতে।

চাই সঠিক বাস্তবায়ন
সরকারের সব কার্যক্রম এবং তথ্যাবলী ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত থাকবে। এতে বরং সুবিধা হবে সরকারের। যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের প্রতিটি পর্যায়ে আগে ডিজিটাইলেশন অর্থাত্ কম্পিউটারায়ন পদ্ধতির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। এসব না করলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন যে তিমিরে সেই তিমিরেই থেকে যাবে।
ইমেইল : walisearch@yahoo.com

জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন তৈরির দ্বারে রাইহান

জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন তৈরির দ্বারে রাইহান

এমরানা আহমেদ
জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী রাইহান উদ্দিন আহমেদ। তিনি তার সূত্রের একটি গাণিতিক ভিত্তি দাঁড় করিয়েছেন, যা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাস্তবসম্মত বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
রাইহান আহমেদের জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন মূলত দুটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত।
একটি অংশ অরবিটকে, যা কক্ষপথের সঙ্গে এবং অপর অংশ ক্যারিয়েজকে, যা অক্ষের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ১৬টি শ্যাফট একটার ওপর একটা নির্দিষ্ট মাপে সাজিয়ে গঠন করা হয়েছে ক্যারিয়েজ। ১৩টি গোলাকার ফিক্সচার ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে অরবিট। যন্ত্রে মোট দুটি অরবিটকে একটির ওপর আরেকটি সেট করা হয়েছে। প্রতিটি অরবিটের চার পাশে চারটি ক্যারিয়েজ স্থাপন করা হয়েছে। নিজস্ব ভর থেকে ঘুরে শক্তি উত্পাদন করবে ক্যারিয়েজ। ক্যারিয়েজের শক্তি ঘোরাবে অরবিটকে। পরে অরবিটের শক্তিকে বলবৃদ্ধি নীতি প্রয়োগ করে বাড়ানো হয়। এভাবে উত্পন্ন শক্তিতেই চলবে ইঞ্জিন। রাইহান আহমেদ জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন তৈরির সূত্রের যে গাণিতিক ভিত্তি দাঁড় করিয়েছেন তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ প্যাটেম্লট অফিস। অনেক যাচাই-বাছাই করে ঢাকা প্যাটেম্লট অফিস ২০০১ সালে এ প্রযুক্তিকে প্যাটেম্লট করাতে রাজি হয়। ২০০২ সালে এ প্যাটেম্লট গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গাজীপুরের মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির পক্ষ থেকে রাইহান আহমেদের জ্বালানিবহীন ইঞ্জিন তৈরির সূত্র ও তার গাণিত্যিক ভিত্তিকে বাস্তবসম্মত বলে মত দেয়া হয়। প্যাটেন্টের নিয়মানুসারে এ প্রযুক্তি ২০০২ সালে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। গত আট বছরে বিশ্বের কোনো বিজ্ঞানী এ ধরনের ইঞ্জিন তৈরির সম্ভাব্যতা ও সূত্রের গাণিত্যিক ভিত্তি নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেননি।
১৯৮৩ সালে জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন তৈরির চিন্তা মাথায় আসে রাইহান আহমেদের। তিনি প্রথমে জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন তৈরির একটি সূত্র তৈরি ও তার গাণিতিক ভিত্তি দাঁড় করালেন। সূত্রটি হচ্ছে, ‘প্রত্যেক বস্তুর ওজন তার একটি নিজস্ব শক্তি, যা ব্যবহার করে বস্তুটিকে গতিশীল করা যায়।’ তিনি তার সূত্রের নামকরণ করলেন ‘ল অব পার্টিকুলার মেথড’।
ইঞ্জিন তৈরির কাজ শুরু করতেই প্রয়োজন পড়ে বিপুল পরিমাণ অর্থের। গবেষণার প্রয়োজনে একে একে বিক্রি করে দেয়া হলো বেশিরভাগ জমাজমি। কিছু পার্টস তৈরি করতে বেশ কয়েকবার যেতে হয়েছিল ভারতের ওয়ার্কশপে। গবেষণার কাজ এগিয়ে নিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তার বন্ধু আবু হানিফ। প্রযুক্তিটি জানাজানি হওয়ায় পাচার বন্ধ করতে সূত্র ও সূত্রের গাণিতিক ভিত্তি ২০০১ সালে ঢাকা প্যাটেম্লট অফিস থেকে প্যাটেম্লট করিয়ে নেয়া হয়।
রাইহান আহমেদ এ গবেষণার পেছনে তার প্রায় সব সম্পদ ব্যয় করেছেন।
সূত্র ও গাণিতিক ভিত্তি অনুসরণ করে তিনি একটি জ্বালানিবহীন ইঞ্জিন তৈরির কাজও অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন। তবে তার এই যন্ত্রের চূড়ান্ত রূপ দিতে এখন প্রয়োজন ন্যানো টেকনোলজির কম্পিউটারচালিত যন্ত্রপাতি এবং বিপুল অর্থের। এ দুটির কোনোটিই না থাকায় তার এ গবেষণাকর্ম এখন থেমে আছে।
রাইহান আহমেদ জানান, আমার বয়স হয়েছে। আমি চাই একদল তরুণ গবেষক এ গবেষণায় অংশ নিক। ইঞ্জিনের বিভিন্ন অংশ তৈরি করতে ন্যানো টেকনোলজির কম্পিউটারচালিত যন্ত্রের প্রয়োজন। অংশগুলোর মাপ সূক্ষ্মতম পরিমাণ কমবেশি হলে ইঞ্জিন কাজ করবে না। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাই কেবল পারে এ গবেষণাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। এ গবেষণা থেকে আমি কোনো আর্থিক লাভ চাই না। আমি চাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। জ্বালানিবিহীন ইঞ্জিন তৈরি সম্ভব হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের একটি বিস্ময় এবং প্রযুক্তিটির রয়্যালটি বাবত দেশ যা আয় করবে তাতে সমৃদ্ধ দেশ গড়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন এই উদ্ভাবক।

অটো ওয়াটার পাম্প কন্ট্রোল সুইচ

অটো ওয়াটার পাম্প কন্ট্রোল সুইচ

মোঃ হাবিবুর রহমান
বিদুত্ এবং পানির অপচয় দুটিই রোধ করা যাবে এমন ছোট একটি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মাইনূর হোসেন নিহাদ। এ যন্ত্র সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার পানির পাম্পটিকে নিয়ন্ত্রণ করবে। ছোট এই ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের নাম দেয়া হয়েছে ‘অটোপাম্প সুইচ’। অন্যান্য অটোসার্কিটের তুলনায় এ অটোপাম্প সুইচটি সাশ্রয়ী দামে ডিজাইন করা হয়েছে এবং এটি খুবই নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারে।
যেভাবে কাজ করবে : প্রতিটি বাড়িতে অন্তত দুটি ওয়াটার রিজার্ভার বা পানির আধার থাকে। একটি হলো আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার বা ভূগর্ভস্থ পানির আধার এবং অন্যটি হলো রুফটপ ওয়াটার রিজার্ভার বা ছাদের ওপর থাকা পানির আধার। সার্কিট ডিজাইনে দুটি সংক্ষিপ্ত নাম দেয়া হয়েছে। ১. অ = আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার এবং ২. ই = রুফটপ ওয়াটার রিজার্ভার।
মডেল ১.যদি আপনার রুফটপ ওয়াটার রিজার্ভারে (ই) পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে রুফটপ ওয়াটার রিজার্ভার (ই) থেকে ‘অটোপাম্প সুইচ’ সংকেত দিয়ে আপনাকে সতর্ক করে দেবে, যাতে আপনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন আপনার আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভারে (অ) পরিমাণ মতো পানি আছে কিনা। যখন আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার (অ) ‘অটোপাম্প সুইচ’-কে সংকেত দেবে রিজার্ভারে যথেষ্ট পানি আছে [পানির পরিমাণ হবে ৮০% থেকে ১০০% পর্যন্ত] তখন ‘অটোপাম্প সুইচ’টি পাম্পকে (অন) করবে। আবার যদি আপনার আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার (অ) পানির পরিমাণ ১০%-এর নিচে থাকে তাহলে পাম্প (অন) হবে না এবং যখনই আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার (অ) পানির পরিমাণ ৮০% থেকে ১০০% হবে, তখনই ‘অটোপাম্প সুইচ’টি পাম্পকে (অন) করবে। এতে করে বিদুত্ অপচয় রোধ হবে এবং অনেক সময় পানি ছাড়া পাম্প চলার কারণে পাম্পের যে ক্ষতি হয় তাও রোধ করা যাবে।
মডেল ২.
আপনার পাম্প যদি অন থাকে এবং আপনার রুফটপ ওয়াটার রিজার্ভার (ই) যদি পানিতে পরিপূর্ণ হয় তখন সঙ্গে সঙ্গে ‘অটোপাম্প সুইচ’ সংকেত দেবে যে, রিজার্ভার পানিতে পরিপূর্ণ হয়েছে। সংকেত দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘অটোপাম্প সুইচ’ পাম্পটি অফ করে দেবে। আবার যখন রুফটপ ওয়াটার রিজার্ভারে (ই) পানির পরিমাণ কম থাকবে তখন আবার মডেল ১ অনুযায়ী কাজ করবে রিজার্ভার পানি পরিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত। একবার পাম্পের সঙ্গে সংযোগ হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি চলতে থাকবে। এই ‘অটোপাম্প সুইচ’টির দাম পড়বে ১৪০ টাকা। যদি রুফটপ ওয়াটার রিজার্ভারটি ৬ তলায় থাকে তাহলে সম্পূর্ণ সেটআপসহ খরচ পড়তে পারে ৩ থেকে ৪শ’ টাকার মতো।

কৃষিতে দরকার আধুনিক প্রযুক্তি

কৃষিতে দরকার আধুনিক প্রযুক্তি

গোটা বিশ্ব তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির জোয়ারে ভাসছে। উন্নত দেশগুলো প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও এখানে লাগসই প্রযুক্তির তেমন ব্যবহার হচ্ছে না। অথচ প্রযুক্তি সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে কৃষিতে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি আনা সম্ভব। উন্নত বিশ্বে কৃষিতে ব্যবহারযোগ্য এসব প্রযুক্তি নিয়ে লিখেছেন—
সাদ আবদুল ওয়ালী

ই-কৃষি
ই-কৃষি হচ্ছে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে যেমন রেডিও, টিভি, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল, সিনেমা, সিডি, ডিভিডি ইত্যাদি কাজে লাগিয়ে কৃষকদের মাঝে কৃষি সংক্রান্ত সব তথ্যাবলী পৌঁছে দেয়া। আমাদের মতো দেশে কৃষকদের জ্ঞান সীমিত পর্যায়ে। সেক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কৃষকদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ করা সহজ হবে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এ মাধ্যমগুলো কৃষকদের তথ্য সরবরাহে সহায়তা প্রদান করবে। আমাদের কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানে শিক্ষিত হয়ে উঠবে।

কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি
আমাদের দেশে যত বর্গ কিলোমিটার জায়গা রয়েছে ততটুকু জায়গার সদ্ব্যবহার করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ের মাধ্যমে এ জায়গাগুলোকে উপযোগী করতে হবে উত্পাদনশীল ফসল সমৃদ্ধকরণে। উন্নত প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল ধান কিংবা অন্যান্য ফসল উত্পাদনে প্রযুক্তিকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি উপকরণ ব্যবহার করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে আমাদের কৃষিতে যথেষ্ট পরিবর্তন সাধিত হবে। এখানে একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, যেমন কলের লাঙ্গলের ফলা ব্যবহারের মাধ্যমে উত্পাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন উন্নত দেশে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃত হয়েছে। আমাদের দেশে সেসব আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উত্পাদন বাড়ানোর কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। অবশ্য এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সমপ্রতি একটি তথ্যে জানা গেছে, দেশে তৈরি হচ্ছে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি।

আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি
বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি লক্ষ্য করা যায়। এ যন্ত্রপাতিগুলো উন্নত দেশের কৃষিতে পরিবর্তন আনতে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে চীনে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এখানে আধুনিক কৃষি ফার্ম বা খামার গড়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে র্যাংকিংয়ে চীন প্রথম। প্রায় ৩০০ মিলিয়নের অধিক কৃষক কাজ করছেন অত্যন্ত সফলভাবে। যেসব কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষি বিপ্লবে ভূমিকা রাখছে সেসব আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতিগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
কম্বাইন হার্ভেস্টর : উন্নত দেশে কম্বাইন হার্ভেস্টর এমন এক ধরনের কৃষি যন্ত্র যা ফসল কাটা, আবর্জনা হতে ফসল দানা আলাদা করা ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমেরিকা, জার্মান, চীনসহ প্রভৃতি উন্নত দেশে এ যন্ত্রের ব্যবহার লক্ষণীয়।
পাওয়ার টিলার : এটি একটি ট্রাক্টরের সহিত অতিরিক্ত সংযুক্ত যন্ত্র যা মাটিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গভীর থেকে আলগা করার মাধ্যমে চাষের উপযোগী করে। এটি আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, ভারত, বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
Plough : এক ধরনের কৃষি যন্ত্র যা মাটিকে বীজ বপনের উপযোগী করে প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি প্রাথমিক টুল মাটিকে যথাযথভাবে সংমিশ্রণ করতে সহায়তা করে থাকে। এটি দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে এ টুলটি ট্রাক্টরের সহিত স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে।
সাব সয়লার : এটি চষড়ঁময যন্ত্রের ন্যায় কাজ করলেও মাটিকে প্রায় ১২ ইঞ্চি গভীর হতে আলগা করে। এতে শক্ত ধারাল ব্লেড রয়েছে।
টু হুইল ট্রাক্টর : এটিও মাটিকে চাষাবাদের উপযোগী করতে বিশেষত বসতবাড়ির ভিটেতে কাজে আসে। এটি ইতালি, জার্মানি, আমেরিকা, জাপান, ভারত, বাংলাদেশসহ প্রভৃতি দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ব্রডকাস্ট সিডার : এটি সাধারণত বীজ বপন, সার দেয়া, কীটনাশক ছিটানো প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হয়।
সিড ড্রিল : এ যন্ত্রটি ব্রডকাস্ট সিডার অপেক্ষা আধুনিক। এ যন্ত্রের সহায়তায় নির্দিষ্ট অবস্থানে বীজ বপন করা যায়।
এছাড়া আরও কিছু যন্ত্র যেমন মেনুয়র সেপ্রডার, সেপ্রয়ার, বিন হার্ভেস্টার, চেজার বিন, কর্ন হার্ভেস্টার, ইরিগেশন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

কৃষিতে প্রযুক্তির প্রয়োগ
উন্নত দেশগুলো কৃষি ফসল উত্পাদনে ব্যবহৃত কৃষি যন্ত্রপাতি ডিজাইন করা হয়েছে বাস্তবতার ভিত্তিতে। যেমন বীজ বোনা, চাষাবাদ করা, চারা রোপণ, পোকামাকড় থেকে শস্যকে রক্ষা করা, মাঠ থেকে শস্য তোলা এবং শস্যের প্রক্রিয়াজাত প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষণীয়। প্রযুক্তির প্রয়োগে চীনে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে সহজলভ্য দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি। এর অংশ হিসেবে আমাদের দেশে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাওয়ার টিলার, পাওয়ার রিপার, ধান ও গম মাড়াই কল, ভেনটিরেটিং ড্রায়ার, ভুট্টা মাড়াই কল ইত্যাদি যন্ত্রপাতি তৈরি শুরু হয়েছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক।

সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি
আমাদের দেশের জন্য চাই সাশ্রয়ী প্রযুক্তি। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সাশ্রয়ী প্রযুক্তি আমাদের জন্য সহজে কার্যকর হয়ে ওঠবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এতে ঘর-গৃহস্থালী থেকে শুরু করে পানি ও স্যানিটেশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি শক্তি, কৃষি ও যন্ত্রপাতি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।

বায়োগ্যাস প্রযুক্তি
এ প্রযুক্তি ক্ষুদ্র ও মাঝারি পরিসরে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষত গৃহস্থালী কাজের জন্য অর্থাত্ রান্না ও বৈদ্যুতিক কাজে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি অনন্য। এ প্রযুক্তি অর্থনৈতিকভাবে অনেক সাশ্রয়ী অর্থাত্ কম খরচে অধিক লাভবান হওয়া যায়।

রি-সাইকেল প্রযুক্তি
রি-সাইকেল এমন একটি প্রযুক্তি যা পুনরায় ব্যবহার করা যায়। যেমন বায়োগ্যাস প্রযুক্তিতে পরিবেশের মারাত্মক কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসে না। বরং এর সঙ্গে মাটির উর্বরতার বিষয়টি সম্পৃক্ত । অর্থাত্ রি-সাইকেল প্রযুক্তিতে এ ক্ষেত্রে জৈব সার উত্পাদন করা যায়।

সৌর বিদ্যুত্ প্রযুক্তি
সূর্যের আলো এ বিদ্যুত্ প্রযুক্তির একমাত্র উপাদান। এ প্রযুক্তি অনেক সাশ্রয়ী।

আর্সেনিকমুক্ত পানি প্রযুক্তি
এ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর কৃতিত্ব উল্লেখ করার মতো, সারা বিশ্বে যা ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেই বিজ্ঞানীদ্বয় হচ্ছেন ডক্টর আবুল হুসসাম এবং ডক্টর আবুল মনির। বাংলাদেশের এ দু’জন বিজ্ঞানী পানিকে আর্সেনিকমুক্ত করার জন্য আবিষ্কার করেন সাশ্রয়ী সনো ফিল্টার।

খামারজাত সার তৈরি প্রযুক্তি
পশু-প্রাণীর বর্জ্য থেকে বিশেষত গোবর এই সারের মূল উপাদান। তবে তা সুষম করতে হয়।

আবর্জনা পচা সার প্রযুক্তি
প্রতিদিনের আবর্জনা থেকে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সার উত্পাদন করা হয়।

কম্পোস্ট সার তৈরি প্রযুক্তি
আবর্জনা পচা সার ও এর উপাদান একই। তবে এর উপাদান স্তরে স্তরে সাজিয়ে একটি ভিন্ন প্রক্রিয়ায় এ সার তৈরি হয়।

আরও কিছু প্রযুক্তিগত সেবা...
যেসব প্রযুক্তিগত সেবা আমরা পেয়ে আসছি তা আমাদের জন্য সূচনা মাত্র। প্রয়োজন বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিগত সেবার নিশ্চয়তা। আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর এসব প্রযুক্তিগত সেবাগুলো হচ্ছে :

কমিউনিটি বেতার
সরকার কমিউনিটি বেতার স্থাপনের জন্য লাইসেন্স প্রদান করেছেন। এ কমিউনিটি বেতার কৃষকদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানে সহায়তা করতে সক্ষম হবে। কৃষকদের মাঝে এটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মুঠোফোনে সহায়তা
মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে কৃষি সেবা কল কৃষকদের মাঝে প্রয়োজনীয় তথ্য সেবা প্রদান করবে। নির্দিষ্ট কল সেন্টারে সরাসরি ফোন দিয়ে জরুরি তথ্য জানা যাবে অনায়াসে। ইতিমধ্যে কৃষকরা এমনকি ক্ষেতে বসে এ সেবা পেয়ে আসছেন।

টিভিতে কৃষিবিষয়ক সমপ্রচার
অবশ্য টিভিতে কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠান সমপ্রচার হয়ে আসছে। এক্ষেত্রে চ্যানেল আইয়ের ভূমিকা অগ্রগণ্য। এছাড়া বিটিভি, বাংলাভিশনের নাম উল্লেখ করা সমীচীন। তবে কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠানের সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত। এ ধরনের অনুষ্ঠানের সংখ্যা আরও ব্যাপকভাবে বাড়ানো প্রয়োজন। কৃষি সম্পর্কিত স্বতন্ত্র চ্যানেল করা যেতে পারে। কৃষিবিষয়ক সমপ্রচারগুলোর মাধ্যমে কৃষকরা জানতে পারবে প্রযুক্তিসমৃদ্ধ যাবতীয় তথ্য, খবরাখবর, নতুন নতুন প্রযুক্তির তথ্য।

ওয়েবসাইটে তথ্যসেবা
ওয়েব রিসোর্স একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্স হতে পারে। অবশ্য কিছু কিছু কৃষিভিত্তিক ওয়েবসাইটে তথ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে। আরও ব্যাপকভাবে এ তথ্যসেবা দেয়া যেতে পারে, যাতে কৃষকরা তাত্ক্ষণিকভাবে তথ্য পেতে পারেন। এজন্য প্রয়োজন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবাসুলভ করা এবং সে সঙ্গে ১০০ ডলারের মতো কম বাজেটে ল্যাপটপ সহজলভ্য করা।
কৃষিনির্ভর দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা কৃষিতে যথাযথ পরিবর্তন আনতে পারিনি। অবশ্য এর মূল কারণ আধুনিক প্রযুক্তিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে না পারা। উন্নত দেশগুলোতে কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে আশাতীতভাবে। আমাদের দেশে সরকারিভাবে কৃষি প্রযুক্তির বিকাশে সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনায় কৃষি ক্ষেত্রে ঘটে যেতে পারে একটি নীরব বিপ্লব। কৃষির উন্নয়নে এদেশ সমৃদ্ধিশালী হবে একদিন।
walisearch@yahoo.com

আর্সেনিকোসিস সমাধানে প্রবাসী তরুণ বিজ্ঞানী : ড. কাদেরের নতুন উদ্ভাবন

আর্সেনিকোসিস সমাধানে প্রবাসী তরুণ বিজ্ঞানী : ড. কাদেরের নতুন উদ্ভাবন

আতাউর রহমান কাবুল
প্রায় সাড়ে ৮ কোটি লোক আর্সেনিক ঝুঁকির মুখে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য আর্সেনিককে বেশি দায়ী করা হচ্ছে। এর দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়ায় শরীরের চামড়া, ফুসফুস, কিডনি ও অন্যান্য মুল্যবান অংশে ক্যান্সারের মত কঠিন অসুখের সম্ভাবনা তৈরি করে। আর্সেনিক দূষনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি লোক আর্সেনিক ঝুঁকির মুখে। জানা গেছে, বর্তমানে মাত্র ১১টি জেলা আর্সেনিকমুক্ত। আর্সেনিকযুক্ত পানি পরিশোধিত করে ব্যবহার করা উত্তমপন্থা হলেও এসব প্রযুক্তি বেশ ব্যয়বহুল। আর্সেনিকে আক্রান্তের সংখ্যা দিনদিন বাড়লেও এখন পর্যন্ত অন্য কোন পন্থায় আর্সেনিকোসিস সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়নি। তবে আশার কথা হলো— সমপ্রতি ভিয়োলা ভিটালিস, বার্কলি আমেরিকার এলিয়াম ভিটালিস এর সাথে যৌথভাবে আর্সেনিকোসিস সমস্যা সমাধানে নিউট্রাসিউটিক্যালস পণ্য উদ্ভাবন করেছে। যা আমেরিকার খাদ্য ও ওষুধ অধিদপ্তর (এফডিএ) কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে। এর আবিষ্কারক বাংলাদেশী তরুন বিজ্ঞানী ড.আব্দুল কাদের।
দীর্ঘ সাধনার ফল
সম্প্রতি আব্দুল কাদের বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি জানালেন, ভিয়োলা ভিটালিস ও এলিয়াম ভিটালিস বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে উপযোগী নিউট্রাসিউটিক্যালস উদ্ভাবন করে আর্সেনিক সমস্যার সমাধান এনেছে। এটা তাদের দীর্ঘ সাধনার ফল যা নিউট্রাসিউটিক্যালস প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি এবং যা প্রাণীদেহে পরীক্ষিত। তাদের উদ্ভাবিত ‘আর্সেনিকিওর’ (অত্ংবহরপঁত্ব) নামক লোশন শরীরের বাহ্যিক লক্ষণসমূহ দূর করে এবং অত্ং-ফবঃড়ী নামের ক্যাপসুল শরীরের ভেতরের আর্সেনিক দমন করে।
আবার ভিওলা ভিটালিস জার্মানির হেলমহোলস সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ, লাইপযিগ এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে সুনিদৃষ্ট মাত্রার আর্সেনিক নির্নয়ের জন্য ‘বায়োসেন্সর’ উদ্ভাবন করেছে। স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে আর্সেনিকের মাত্রা পরীক্ষার জন্য এ বায়োসেন্সর অত্যন্ত উপযোগী বলে জানা গেছে।
প্রয়োজন সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ
চাঁদপুরের হাজী গঞ্জে প্রায় দুই শতাধিক আর্সেনিক আক্রান্ত মানুষের দেহে এটা প্রয়োগ করে যথেষ্ঠ ফল পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। তাদের উদ্যোগে ইতোমধ্যে আর্সেনিকে আক্রান্তদের মাঝে নিউট্রাসিউটিক্যালস সরবরাহ করতে বিভিন্ন বেইস ও স্যাটেলাইট ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। একটি বেইস ক্লিনিকের অধীনে ৫টি স্যাটেলাইট ক্লিনিক থাকবে এবং প্রতিটি ক্লিনিকে ৫০০ রোগীর স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা থাকছে। এসব স্যাটেলাইট ক্লিনিক ৩ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত কার্যক্রম চালাবে। তবে সরকার কিংবা বেসরকারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে তিনি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহন করতে চান। ড. কাদের আশা করছেন এতে আর্সেনিক সমস্যার সমাধান আনা সম্ভব।
এ সংক্রান্ত সেমিনার
বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স (বিএএস) এর উদ্যোগে গত শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আর্সেনিক সংক্রান্ত এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ এটমিক এনার্জি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স (বিএএস) এর সাধারন সমপাদক অধ্যাপক নঈম চৌধুরী, ভিয়োলা ভিটালিস এর প্রতিষ্ঠাতা তরুন বিজ্ঞানী ড. আবদুল কাদের, হেল্মহোল্টজ সেন্টার ফর ইনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ জার্মানীর মিস. ক্যারোলা ইনডেস, প্রফেসর আমির হোসেন খান, ড. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ প্রমূখ।

স্বশিক্ষিত উদ্ভাবকদের উদ্ভাবন : ৫ : আজিজের সার ব্যবহার ফর্মুলা

স্বশিক্ষিত উদ্ভাবকদের উদ্ভাবন : ৫ : আজিজের সার ব্যবহার ফর্মুলা

এমরানা আহমেদ
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শালিয়াবহ গ্রামের আবদুল আজিজ। প্রচলিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে তিনি পানিতে গুলিয়ে ইউরিয়া স্প্রে করে থাকেন। প্রচলিত ফর্মুলায় মাটিতে ইউরিয়া ছিটানো হয়। উদ্ভিদের শেকড় এই ইউরিয়া থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে। অন্যদিকে আজিজের ফর্মুলা মোতাবেক উদ্ভিদের পাতায় পানিতে গোলানো ইউরিয়া স্প্রে করা হয়। পাতার অসংখ্য ছিদ্রের মাধ্যমে উদ্ভিদ এই ইউরিয়া থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে। তার উদ্ভাবিত ইউরিয়া সার ব্যবহারের নতুন ফর্মুলা রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছে। আবদুল আজিজ জানান, গত ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন ফল-ফলাদির গাছে পানিতে গোলানো ইউরিয়া মিশিয়ে স্প্রে করে আসছেন। প্রচলিত ফর্মুলায় ৬০ শতাংশ আনারসের জমিতে যেখানে প্রয়োজন ৬ হাজার কেজি ইউরিয়া, সেখানে তার ফর্মুলায় ৬০ কেজিতেই মিটে যাচ্ছে। এভাবে উচ্চ ফলনশীল জাতের কুলের ক্ষেত্রে এক একর জমিতে যেখানে প্রায় ২০০০ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয়, সেখানে এ পদ্ধতিতে মাত্র ২০ কেজি ইউরিয়া ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। একই প্রক্রিয়ায় ধানে ইউরিয়া স্প্রে করেও তিনি সফলতা পেয়েছেন। এক্ষেত্রে ২০ শতাংশ জমিতে তিন দফায় ৭৫০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করছেন। অর্থাত্ বিঘাপ্রতি ইউরিয়ার প্রয়োজন হচ্ছে মাত্র ১ কেজির কিছু বেশি। অথচ প্রচলিত পদ্ধতিতে কৃষক ১ বিঘা বোরো ধানের জমিতে ৪৫ থেকে ৫০ কেজি ইউরিয়া ছিটিয়ে থাকে। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক কৃষক ফল গাছের পাশাপাশি ধান ক্ষেতেও ইউরিয়া স্প্রে করে প্রয়োগ করা শুরু করেছে। এভাবে আজিজের হাত ধরে এ পদ্ধতি ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। আব্দুল আজিজের অনুরোধে ব্রি’র গবেষণা প্লটে পরীক্ষামূলক গবেষণা করা হয়। সেখানেও ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। তিনি বোরো মৌসুমে কয়েকটি এলাকায় কৃষক পর্যায়ে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে ধান আবাদের উদ্যোগ নেয়। এক্ষেত্রে ফলাফল ইতিবাচক।

স্বশিক্ষিত উদ্ভাবকদের উদ্ভাবন : ৪ : সালাউদ্দিনের সৌরবিদ্যুত্

স্বশিক্ষিত উদ্ভাবকদের উদ্ভাবন : ৪ : সালাউদ্দিনের সৌরবিদ্যুত্

এমরানা আহমেদ
উদ্ভাবনের নেশায় বিভোর মোবাইল মেরামতের কারিগর ময়মনসিংহের স্থায়ী বাসিন্দা সালাহউদ্দিন আহমেদ একদিন স্টেডিয়াম মার্কেটের একটি দোকান থেকে ‘সোলার সেল’ কেনেন। ক্যালকুলেটরের যন্ত্রাংশের অনুকরণে ‘সোলার সেলটি’ সংযোজন করে সৌরবিদ্যুত্ উত্পাদন করে একটি বাল্ব জ্বালাতে সক্ষম হন। তবে সে সময় কিছুতেই একসঙ্গে দুটি বাল্ব জ্বালাতে পারেননি তিনি। পরে তার উদ্ভাবিত সৌরবিদ্যুিট বাচ্চাদের আলো জ্বালানোর খেলনা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সালাউদ্দিন থেমে থাকেননি। চালিয়ে যান তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফসল হিসেবে দু’ সপ্তাহ পরে এটি ভিন্নভাবে সংযোজন করে ১২ ভোল্টের ব্যাটারির একটি বাল্ব জ্বালাতে সক্ষম হন স্বশিক্ষিত উদ্ভাবক সালাহউদ্দিন। এটি সূর্যের আলোতে জ্বলে। দীর্ঘ ৪ বছর ২০০৭ সালে তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দিয়ে সৌরবিদ্যুত্ উত্পাদন প্লান্ট তৈরি করতে সক্ষম হন এবং ২০০৯ সালে তার এক শিল্পপতি বন্ধুর সহযোগিতায় প্রত্যন্ত জনপদ কুতুবদিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে একটি অতি ক্ষুদ্র সৌরবিদ্যুত্ স্থাপনা গড়ে তোলেন। গত ৫ মাস ধরে এ স্থাপনা থেকে বিদ্যুত্ উত্পাদিত হচ্ছে কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই। এ স্থাপনার উত্পাদিত বিদ্যুত্ থেকে চলছে একটি এক ঘোড়া শক্তিসম্পন্ন ওয়াটার পাম্প, দশটি ৫৬ ইঞ্চির সিলিং ফ্যান, আঠারোটি ২৫ ওয়াট মানের এনার্জি বাল্ব, দুটি ২১ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন।
উদ্ভাবক সালাউদ্দিন জানান, ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে মনের ভেতরকার লালিত স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যায়। মোবাইল ফোনের প্রসার লাভ করলে তিনি মোবাইল সার্ভিসিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। আর এ অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের ওপর একটি বই লেখেন। স্টেডিয়াম মার্কেটের মোবাইল ফোন দোকানের সঙ্গে অংশীদারি চুক্তির ভিত্তিতে বইটি বাজারজাত করেন। এই দোকানেই একদিন তিনি সোলারসেল দেখতে পেয়ে তা বাসায় নিয়ে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এই সৌরবিদ্যুত্ উদ্ভাবন করেন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই সৌরবিদ্যুত্ নিয়ে তিনি আরও গবেষণা করতে পারবেন বলে জানান উদ্ভাবক সালাউদ্দিন।