Saturday, September 25, 2010

কচুরিপানা কলাগাছ ধনচে থেকে কাগজ : খুবি গবেষকদের সাফল্য

কচুরিপানা কলাগাছ ধনচে থেকে কাগজ : খুবি গবেষকদের সাফল্য

সোহেল রানা বীর, খুবি
শিক্ষা উপকরণের অন্যতম কাগজ। আর এ কাগজ তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বনজসম্পদ ব্যবহার করা হয়। বাঁশ, আখের ছোবড়া ইত্যাদি থেকে সাধারণত কাগজ তৈরি হয়। কিন্তু প্রথমবারের মতো বনজসম্পদের বিকল্প হিসেবে কাগজের কাঁচামাল তৈরি করল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
কাগজের কাঁচামাল হিসেবে বনজসম্পদের বিকল্প বের করতে গবেষণা শুরু করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের একদল গবেষক। অবশেষে কচুরিপানা, কলাগাছ এবং ধনচে থেকে কাগজের মণ্ড আবিষ্কার করলেন এ গবেষকরা। আবিষ্কৃত মণ্ড থেকে উত্পাদিত কাগজ বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কাগজের মতোই বলে মন্তব্য গবেষকদের। শুধু তাই নয়, কাঁচামালের সহজলভ্যের কারণে উত্পাদন খরচও অনেক কম হবে বলে তাদের বিশ্বাস।
ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অতনু কুমার দাশের উদ্যোগে একই ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় এ গবেষণা কার্যক্রম। ড. মো. নজরুল ইসলাম এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে পাল্প অ্যান্ড পেপার টেকনোলজিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর মনবুকাগাকাশো বৃত্তি নিয়ে জাপান যান এ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার জন্য। এরপর দেশে এসে ড. মো. নজরুল ইসলাম এ বছর মিনিস্ট্রি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে বায়োপাল্পিং প্রকল্পের জন্য অর্থ পান। তিনি প্রকল্পে সহকারী গবেষকের আওতায় নিয়োগ দেন অতনু কুমার দাশকে। দীর্ঘ ১ বছর ধরে গবেষণায় অতনু কচুরিপানা, কলাগাছ এবং ধনচে থেকে কাগজের মণ্ড আবিষ্কার করলেন। এ প্রকল্পে তাকে সহযোগিতা করেছেন তার আরও ক’জন বন্ধু।
অতনু বলেন, মণ্ড তৈরির প্রক্রিয়া খুব সহজ। কলাগাছের বাকল, কচুরিপানা ও ধনচে প্রথমে শুকিয়ে নিতে হবে। অতঃপর একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কেমিক্যাল পাল্পিং প্রক্রিয়ায় ল্যাবরেটরিতে সহজেই এ মণ্ড তৈরি সম্ভব।
গবেষকদের বিশ্বাস, কাগজের এ বিকল্প আবিষ্কার বাংলাদেশের কাগজ শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করবে। কারণ কাঠের চেয়ে কচুরিপানাতে প্রায় চার ভাগের এক ভাগ এবং কলাগাছের ক্ষেত্রে তিন ভাগের এক ভাগ রাসায়নিক দ্রব্য লাগবে। অন্যদিকে খরচের ক্ষেত্রে শতকরা তিন ভাগ কম লাগবে। এদিকে কচুরিপানা এবং কলাগাছের ফলন দেয়ার পর তেমন কোনো অর্থনৈতিক ব্যবহার নেই। তাছাড়া কলাগাছ, কচুরিপানা ও ধনচেও প্রচুর জন্মায় এবং দ্রুত বর্ধনশীল। সুতরাং এগুলো যদি কাগজ শিল্পে ব্যবহার হয়, তবে কাঁচামালের সমস্যাটা কমবে এবং কাগজের মূল্যও অনেকটা কমে আসবে। এসব থেকে তৈরি কাগজের গুণাগুণ বাজারে প্রচলিত কাগজের মতোই হবে। এর জন্য নতুন কোনো প্লান্ট বসানো লাগবে না।
ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এতে কাগজের গুণাগুণের নিশ্চয়তা দেয়া যাবে। তবে যে পদ্ধতিতে করা হয়েছে সেটা হলো কেমিক্যাল পাল্পিং। কাগজের গুণাগুণ নির্ভর করে মণ্ডের গুণাগুণের ওপর। আমাদের মণ্ডের গুণাগুণ বাজারে প্রচলিত কাগজের গুণাগুণের মতো। সুতরাং এ মণ্ডের কাগজ হবে বাজারে প্রচলিত কাগজের গুণাগুণের মতোই, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য সত্যিই ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে গবেষকদের বিশ্বাস।
তাই দেশে বিদ্যমান কাগজকলে তাদের এ আবিষ্কারকে কাজে লাগানোর জন্য অতনু এবং নজরুল ইসলাম সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা কামনা করেন। যে কোনো প্রয়োজনে ড. নজরুল ইসলাম (+৮৮০-৪১-৭২০১৭১-৩), অতনু কুমার দাশ (০১৯১৫-০৪৮৬৮১)।

2 comments:

  1. আমি উৎপাদন প্রক্রিয়া জানতে চাই,ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হবার জন্য,ধন্যবাদ আপনাদের

    ReplyDelete
  2. আমি উৎপাদন প্রক্রিয়া জানতে চাই,ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হবার জন্য,ধন্যবাদ আপনাদের,০১৮৬৫০৫৪২৮৪

    ReplyDelete