Friday, October 15, 2010

সমুদ্রের উষ্ণতা থেকে বিদু্যৎ উৎপাদনের উদ্যোগ

সমুদ্রের উষ্ণতা থেকে বিদু্যৎ উৎপাদনের উদ্যোগ

জ্বালানির জন্য বিকল্প শক্তি ব্যবহারের ভাবনা মানুষের নতুন নয়। কিন্তু বাস্তবে কেউ তা করতে পারছে আর কেউ পারছে না। জার্মানির মত দেশে বিদু্যতের মূল্য যেভাবে বেড়ে চলেছে, তার ফলে এইসব বিকল্প পথে সেখানে বিদু্যৎ উৎপাদনের আগ্রহ বাড়ছে। যেমন সমুদ্রের উত্তাপ থেকে বিদু্যৎ উৎপাদনের কথা ভাবা হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা সাধারণত ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার থেকে বেশি। অন্যদিকে ১,০০০ মিটার গভীরে তাপমাত্রা প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এই দুই স্তরের মধ্যে তাপমাত্রার ব্যবধান ২০ ডিগ্রিরও বেশি। ঠিক এই পার্থক্যকে কাজে লাগিয়েই বিদু্যৎ উৎপাদন করা সম্ভব। -খবর ডয়চে ভেলের।

এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে যারা কাজ করছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের আধা-সরকারি জাহাজ নির্মাণ সংস্থা ডিসিএনএস। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় 'ওশান থার্মাল এনার্জি কনভার্শন' বা 'ওটেক'। বিদু্যৎ উৎপাদনের পদ্ধতিও বেশ সহজ। প্রথমে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাইপের মধ্য দিয়ে সমুদ্রের গভীরের ঠাণ্ডা পানি সমুদ্রপৃষ্ঠে পাম্প করা হয়। এই পানি এক বিশেষ ধরনের গ্যাসকে তরল পদার্থে পরিণত করে। সবশেষে এই তরল গ্যাস সমুদ্রপৃষ্ঠের গরম জলের সংস্পর্শে এসে ফুটতে থাকে। এই প্রক্রিয়া চালু রাখলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার টার্বাইন বা বিশাল চাকা ঘোরানো সম্ভব। কয়লার সাহায্যে তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রেও প্রায় একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদু্যৎ উৎপাদন করা হয়।

তবে 'ওটেক'-এর ক্ষেত্রে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় কোনোরকম কার্বন-ডাই-অক্সইডের নির্গমণ ঘটে না। ফলে এই প্রযুক্তি সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব। ডিসিএনএস'এর প্রতিনিধি এমানুয়েল ব্রশার এ সম্পর্কে বলেন, বায়ুশক্তি বা সৌরশক্তির ক্ষেত্রে সবসময়ে বিদু্যৎ উৎপাদন সম্ভব নয়? কখন বাতাস বইবে বা কখন রোদ উঠবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অথচ সমুদ্রের এই শক্তি কাজে লাগিয়ে একটানা বিদু্যৎ উৎপাদন করা যায়। এটা একটা বিশাল সুবিধা।

বাস্তবে প্রয়োগ:গত শতাব্দীর আশির দশকেই সমুদ্রশক্তি চালিত বিদু্যৎ উৎপাদনের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। বেশ কিছু প্রোটোটাইপ বা প্রাথমিক যন্ত্রও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সে সময়ে তেলের দাম কম থাকায় খরচে পোষায়নি। এখন তেলের দাম বেড়ে চলায় ও পরিবেশের ক্ষতির কারণে 'ওটেক' পদ্ধতি আবার আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এমানুয়েল ব্রশার বেশ কিছু বড় আকারের প্রকল্পের কথা জানালেন। তিনি বললেন, ''আমরা প্রাথমিক স্তরে এক কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছি, যা ১০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন করতে পারবে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে এক রিপোর্টও তৈরি হয়ে গেছে। এই মডেল প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল আমাদের এই প্রযুক্তির জন্য বিনিয়োগকারীদের মন জয় করা। ২০১৫ সালে আমাদের কেন্দ্র বিদু্যৎ উৎপাদন শুরু করতে পারবে বলে আমরা আশা করছি।

সমুদ্রশক্তি কাজে লাগিয়ে বিদু্যৎ উৎপাদন করলে সেই এলাকার উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের উপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে কি না, তাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বিচ্ছিন্ন যেসব দ্বীপে বিদু্যৎ সরবরাহ করা কঠিন, তাদের জন্য এমন বিদু্যৎ কেন্দ্র সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়।
Source: Daily Ittefaq

No comments:

Post a Comment