Friday, October 1, 2010

গাড়ি নিয়ে পালাবে কোথায়?

গাড়ি নিয়ে পালাবে কোথায়? একটু বেখেয়াল হলেই কয়েক লাখ টাকা দামের গাড়িটি নিয়ে চম্পট দিতে পারে চোর। টাকার লোভে আপনার অজান্তে যাত্রী বা মালামাল বহন শুরু করতে পারে অসৎ ড্রাইভার। তবে জিপিএস প্রযুক্তির সহায়তায় গাড়ির তাৎক্ষণিক অবস্থান জানা এখন অনেক সহজ। স্টিয়ারিং হাতে না থাকলেও দূর থেকে গাড়ি বন্ধ করে দেওয়াও সম্ভব। বিস্তারিত জানাচ্ছেন
আল-আমিন কবির গাড়ি নিয়ে ভাবনার দিন বুঝি ফুরোল। মাত্র কয়েকটি প্রযুক্তি, ব্যস। নিত্যনতুন আপনার গাড়িটি চোখের আড়ালে রেখেও এবার নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। অবশ্য এ জন্য গাঁট থেকে কিছু পয়সা খসবে। প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্টরা এ ব্যবস্থার নাম দিয়েছেন 'ভেহিকল ট্র্যাকিং সিস্টেম'।

যেভাবে কাজ করে
ভেহিকল ট্র্যাকিং সিস্টেমে যানবাহনের অবস্থান বের করার জন্য গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস, জিপিআরএস এবং জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম বা জিআইএস একত্রে কাজ করে। প্রতিটি প্রযুক্তিই আলাদাভাবে কাজ করলেও এটির সমন্বিত ফলাফলেই একটি যানবাহনের সুনির্দিষ্ট অবস্থান বের করা সম্ভব। এর জন্য নির্দিষ্ট যানবাহনটিতে আগে একটি বিশেষ ধরনের জিপিএস সমর্থক ডিভাইস ইনস্টল করতে হয়। গাড়ির গোপন স্থানে থাকা এ ডিভাইসটি মালিককে তাঁর গাড়ির সব ধরনের তথ্য দেয়। ডিভাইসটি জিপিআরএসের মাধ্যমে ওয়েবে এবং সংশ্লিষ্ট সার্ভারে বার্তা পাঠাতে সক্ষম। জিপিএস প্রযুক্তি জিপিআরএসের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জিআইএস ম্যাপে প্রদর্শন করতে পারে নির্দিষ্ট যানবাহনটি কোথায় আছে, কিভাবে আছে।
ভেহিকল ট্র্যাকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান 'এনট্র্যাক'-এর বিক্রয় বিভাগের সিনিয়র নির্বাহী তন্ময় সাহা জানান, যানবাহন ট্র্যাক করার এ প্রযুক্তির মাধ্যমে গাড়ির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে যেমন জানা সম্ভব তেমনি এর মাধ্যমে গাড়ির গতিও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। চালক বেপরোয়া গতিতে চালালেও মালিক ঘরে বসে তা স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনতে পারবেন। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেকটাই কমবে। কোনোভাবে গাড়ি চুরি হলেও মালিক দূর থেকে এর স্টার্ট বন্ধ করে দিতে পারবেন। ফলে গাড়ি খোয়া যাওয়ার আশঙ্কাও কমে যাবে।
গাড়ি চলার সময় তেলের খরচ, তেলের বর্তমান অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কেও ব্যবহারকারীকে বিস্তারিত তথ্য দেবে এ প্রযুক্তি। একই সঙ্গে এ ডিভাইস এক স্থান থেকে অন্য স্থানের দূরত্ব নিরূপণ, ট্রিপ রিপোর্ট এবং ওভারস্পিড রিপোর্টও আলাদা করে দিতে পারে।
এ সেবার ব্যবহারকারীরা ওয়েবসাইট, মোবাইল এসএমএস এবং নির্দিষ্ট কল সেন্টারের মাধ্যমে গাড়ির অবস্থান জানতে পারবেন। ব্যবহারকারীরা যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে এ সেবা নেবেন তাদের প্রত্যেকেরই আলাদা ওয়েবসাইট রয়েছে। এ ওয়েবসাইটে গাড়ির মালিককে তার ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হবে। এর পরই তাঁর গাড়ির সম্পর্কে সব তথ্য জানা যাবে। এ ওয়েবসাইট ছাড়াও এসএমএসের মাধ্যমে গাড়ির আপডেট পাওয়া যাবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানই ঠিক করে দেবে ব্যবহারকারী কোন নম্বরে কী লিখে এসএমএস পাঠাবেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আলাদা কল সেন্টারও রয়েছে, যেখানে কল করে ব্যবহারকারী তাঁর গাড়ির তথ্য জানতে পারবেন।

রয়েছে পুলিশি সেবাও
চুরি হওয়া গাড়ি তাৎক্ষণিক উদ্ধারে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগে 'অটোমেটিক ভেহিকল ট্র্যাকিং ইউনিট' নামে একটি আলাদা ইউনিটও খোলা হয়েছে। ট্র্যাকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান 'এনট্র্যাক'-এর সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে এ সেবা ঢাকা মেট্রোপলিশন পুলিশ বা ডিএমপিতে চালু করা হয়েছে। যেসব যানবাহনে এ ডিভাইসটি ইনস্টল করা থাকবে তার মালিক সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডিএমপিকে জানাতে পারবেন। ডিএমপি এ সিস্টেম ব্যবহার করে গাড়িটির অবস্থান ও গতিবিধি নির্ণয় করে সেটি উদ্ধারে তাৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেবে।

সব গাড়িতেই বসানো যাবে
তন্ময় সাহা জানান, বেশির ভাগ মানুষের ধারণা, এ ধরনের ট্র্যাকিং সিস্টেম শুধু প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রেই কাজ করে। এ জন্য অন্যান্য যানবাহনে তারা এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো উদ্যোগ নেয় না। এ জন্য তারা প্রায়ই ব্যাপক ক্ষতিরও সম্মুখ হয়। ট্রাক বা অন্যান্য মালবাহী গাড়িতে অন্য কারো মালামাল ওঠানো হচ্ছে কি না সেটিও জানা সম্ভব এ ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে। মোটরগাড়ি, বাস, ট্রাক, মিনিবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহনেই এ প্রযুক্তি কাজ করবে। এ জন্য ডিভাইসটি ইনস্টল করে নিতে হবে গাড়িতে।

খরচাপাতি
ডিভাইসটির দাম পড়বে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। আর প্রতি মাসে ব্যবহারকারীদের দিতে হবে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। তবে প্রতিষ্ঠানভেদে এবং করপোরেট ব্যবহারকারীদের জন্য খরচের হেরফের হতে পারে। অনেক গাড়ির জন্য একই সঙ্গে এ প্রযুক্তির সহায়তা নিলে খরচ কম পড়ে।
ছয় মাস ধরে গাড়িতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন গুলশানের মিজানুর রহমান। 'এ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে গাড়ির খরচ কিছুটা বাড়ছে এটা সত্য, কিন্তু সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনা করলে খরচটা তেমন কিছু নয়। যে ব্যক্তি ১০ থেকে ৩০ লাখ বা ৪০ লাখ টাকা খরচ করে গাড়ি কিনবেন তিনি তাঁর গাড়ির নিরাপত্তার জন্য স্বল্প পরিমাণের এ খরচকে বড় মনে করবেন না। আমি ছয় মাসে এ সেবা ব্যবহার করে অনেক সুবিধা পাচ্ছি। আমার গাড়ি এখন অনেক নিরাপদ।' _এমনটিই জানালেন বেসরকারি ব্যাংকের এ কর্মকর্তা।

যারা সেবা দেবে

বিডিকম : 'গ্রাহকদের চাহিদামতো সব ধরনের সুবিধা দিতেই আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আর আমাদের যানবাহন ট্র্যাকিং সিস্টেমেও রয়েছে প্রয়োজনীয় সব সুবিধা।'_জানালেন বিডিকম অনলাইনের প্রধান নির্বাহী সুমন আহমেদ সাবির। প্রতিষ্ঠানটির এ সুবিধা সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করতে হবে বাড়ি-৪৩, রোড-২৭ (পুরাতন), ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা-১২০৯ ঠিকানায়। এ ছাড়া ৮১২৫০৭৪-৫ ফোনে এবং ওয়েবে www.bdcom.com-এ এ সেবা সম্পর্কে জানা যাবে।

ফাইন্ডার : এ প্রতিষ্ঠানটিও ভেহিকল ট্রাকিং-সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা অফিসের ঠিকানা : হাউস নম্বর-৭৬৯ (দ্বিতীয় তলা), সাত মসজিদ রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা-১২০৯। ৮১৫৭২১২ এবং ৮১৫৭১৩২ নম্বরে ফোন করে বিস্তারিত জানা যাবে। ওয়েবে জানতে পারেন www.finder-lbs.com থেকে। ঢাকার বাইরে সিলেট, চট্টগ্রাম, বগুড়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে এর আঞ্চলিক শাখা রয়েছে।
ট্র্যাক বাংলা : ট্র্যাক বাংলার যানবাহন ট্র্যাকিং সিস্টেম সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির মাহবুব ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, ডিএমসি-ক-৪৬ (নিচতলা), মহাখালী দক্ষিণপাড়া, গুলশান, ঢাকা ঠিকানার অফিসেও যোগাযোগ করা যাবে। ০১৮১৭০০৪৩৩৫ নম্বরে কল করার পাশাপাশি www.trackbangla.com ঠিকানার ওয়েবসাইট থেকেও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
এনট্রাক : পরিবহন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিটল-নিলয় গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান এনট্রাক। www.nitsbd.com থেকে প্রতিষ্ঠানটির ভেহিকল ট্রাকিং সিস্টেম সম্পর্কে জানা যাবে। ফোন করা যাবে ০১৯৭০০০০৯৯৯ নম্বরে। মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংকের সাথে চুক্তিবদ্ধভাবে এসএমএসের মাধ্যমে ট্রাকিং সুবিধা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
তালুকদার আইসিটি : তালুকদার আইসিটির বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এঙ্িিকউটিভ মাহফুজুর রহমান জানান, গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের যানবাহন ট্র্যাকিং প্রযুক্তি সেবা দেওয়া হচ্ছে। ৫৭/১২ (তৃতীয় তলা, সোনারগাঁও প্লাজা, পূর্ব রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা ঠিকানায় সরাসরি যোগাযোগের পাশাপাশি ০১৭৩০-০৬১৮৮৮ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। www.talukderict.com/ vehicle-tracking-system.php ওয়েবসাইট থেকেও জানা যাবে বিস্তারিত।

No comments:

Post a Comment