Friday, October 5, 2012

বগুড়ার আমির হোসেনের অটোব্রিক্স মেশিন বিদেশে রফতানি হচ্ছে

বগুড়ার আমির হোসেনের অটোব্রিক্স মেশিন বিদেশে রফতানি হচ্ছে

মোস্তফা মোঘল, বগুড়া অফিস : কোন প্রকৌশল বিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়েও প্রকৌশলী হয়েছেন তিনি। তার উদ্ভাবিত যন্ত্র এখন দেশের কৃষি বিপ্লবের অন্যতম হাতিয়ার। শুধু তাই নয়; দেশের পাশাপাশি বিদেশেও সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। তার উদ্ভাবিত স্বল্পমূল্যের মিনি অটোব্রিক্স মেশিন এখন রফতানি হচ্ছে বিদেশে। আগুন যেমন ছাই চাপা দিয়ে রাখা সম্ভব নয়, তেমনি হাজারো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও প্রতিভার বিকাশ ঠেকানো যায় না। চিরসত্য এই কথার বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন স্বশিক্ষিত যন্ত্রবিজ্ঞানী আমির হোসেন।
আমির হোসেন বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ায় অবস্থিত রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের মালিক। ইতিপুর্বে তিনি কৃষি কাজে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করে দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন। এবার অটোমেটিক পদ্ধতি ইট তৈরির মেশিন আবিষ্কার করে আবারও সবাইকে তাক লাগিয়েছেন। আমির হোসেন জানান, আধুনিক মডেলের এই মেশিন সহজে স্থানান্তর করা যায়। মেশিনটি রাখতে জায়গা লাগবে ৬ ফুট বাই ২২ ফুট। জনবল লাগবে ১০ জন। এই মেশিন থেকে প্রতি ঘণ্টায় ১২শ' ইট তৈরি করা যাবে। ইলেকট্রিক ও ডিজেল দুই পদ্ধতিতে এই মেশিন চলানো যাবে। ৩৫ হর্সের একটি ডিজেল শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে চলবে প্রতি ঘণ্টায় ১.৫ লিটার ডিজেল লাগবে। ৩টি মেশিন সংযোগ করলে সম্পূর্ণ ইটভাটা চলবে।
কম খরচে স্বল্প জনবলে এ মেশিনে ইট উৎপাদিত হওয়ায় ভাটা মালিকদের কাছে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশের বাজারে ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি এই মিনি অটো ব্রিক্স মেশিন ভারত, নেপাল ও ভুটানে রফতানি হচ্ছে। ভবিষ্যতে বিশ্বের আরও অনেক দেশে এই মেশিন রফতানি হবে এমন প্রত্যাশা করছেন আমির হোসেন।
আমির হোসেন কোন প্রযুক্তি একবার চোখে দেখেই তা তৈরি করতে সক্ষম। ফলশ্রুতিতে নিত্য নতুন মেশিন আবিস্কার করেই চলেছেন তিনি। দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে রেলগাড়ী, ইটভাঙ্গা মেশিন, সেমাই তৈরি মেশিন, ফিস ফিড, পোলট্রি ফিড, গো-খাদ্য অটো মেশিন, মিকচার মেশিন, ভুট্টা মাড়াই ও ভাঙ্গা মেশিন, শুটকি মাছ, ঝিনুক খৈল ক্রাশার মেশিন, সিলিকান ভাঙ্গা অটো মেশিন, জৈব মিশ্র সার তৈরি সেমি অটো মেশিন ও প্লাসটিক পাইপ তৈরি মেশিন তৈরি করে দেশে ব্যাপক আলোচনায় চলে এসেছেন তিনি। এছাড়াও তার আবিস্কৃত রয়েছে বড়ই, আদা, রশুন, মরিচ ও সস তৈরি অটো ক্রাশার মেশিন, আম, আনারস, টমেটো, কমলা লেবু ক্রাশার মেশিন, ড্রাম সিডার চাষ ছাড়াই বীজ বপন যন্ত্র, শস্য মাড়াই, ধান কাটা মেশিন। এছাড়া বিনোদন পার্কে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী তিনি তৈরি করে আলোচিত হয়েছেন।
বগুড়া শহরের ঠিকাদারপাড়া লেনের ধলু মেকার প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ গড়ে তোলেন ১৯৪০ সালে। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তৎকালিন বগুড়ার ডিসির নির্দেশে ধলু মেকার সতর্কতামুলক ‘সাইরেন মেশিন' তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এই ধলু মেকার নিজেই হস্ত চালিত লেদ মেশিন তৈরি করে বগুড়াসহ উত্তরবঙ্গে আলোচনায় আসেন। তিনি ১৯৮৮ সালের ১৩ নবেম্বর মাসে মারা যাওয়ার পর রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের দায়িত্ব নেন তার ছেলে আমির হোসেন। ধলু মেকারের ৮ ছেলে- মেয়ের মধ্যে আমির হোসেন চতুর্থ। পিতার মৃত্যুর পর থেকেই শুরু হয় গবেষণা। শুরু হয় বিভিন্ন মেশিন তৈরির কল্পনা। প্রকৌশলী আমির হোসেন ২০০৩ সালে বুয়েট থেকে বিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী ও জিটিজেড থেকে কৃষি সামগ্রী উদ্ভাবনের উপর প্রশিক্ষণ নেন। এ কাজে আমির হোসেনকে সাহায্য করেন তার দ্বিতীয় মেয়ে আসমা খানম আশা ও তৃতীয় মেয়ে তাহিয়া খানম। তার প্রথম মেয়ে আমনিরা খানম এলএলবিতে লেখাপড়া করলেও মাঝে মাঝে তিনিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আমিরের মেয়ে আসমা খানম আশা বুয়েট থেকে এই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর পদকও পেয়েছেন। আমির হোসেন পাথর ভাঙা মেশিন উদ্ভাবন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক আবিস্কার তাকে নিয়ে গেছে অনেক উচ্চাসনে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নতুন নতুন আবিস্কারের জন্য তাগাদা দেয়া হয়। এতে তিনি আরও উৎসাহিত হয়ে নতুন নতুন যন্ত্র আবিষ্কারে সক্ষম হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আমির হোসেন।

Source: http://www.dailysangram.com
4th October, 2012 

বাংলাদেশী গবেষকদের আবিষ্কার ডাক্তার ছাড়াই প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা

বাংলাদেশী গবেষকদের আবিষ্কার ডাক্তার ছাড়াই প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা

প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়, নিকটবর্তী কোন হাসপাতাল বা ডাক্তার নাই। আপনার বাচ্চা অসুস্থ মনে হচ্ছে কিন্তু কি হয়েছে বুঝতে পারছেন না। এদের কথা চিন্তা করেই সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তৈরি করা হয়েছে ডাক্তার ছাড়াই প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পদ্ধতি।
ড. আতিকুর রহমান এবং বাহারুল ইসলাম গবেষক হিসাবে কাজ করছেন জেমস কুক ইউনিভার্সিটি সিংগাপুর ক্যাম্পাসে। স্বল্প মূল্যের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশ বিশেষ করে আফ্রিকা এবং এশিয়ার অনেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মাঝে কিভাবে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া যায় সেই চিন্তা থেকে তারা নিরলস এক বছর গবেষণা করে এমন একটা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যার মাধ্যমে ডাক্তার ছাড়াই এক থেকে আট বছর বয়সের বাচ্চাদের শ্বাস কষ্টজনিত রোগ যেমন সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদির প্রাথমিক অবস্থায় জানা যাবে।
এই কাজ করতে তারা উন্নয়নশীল দেশ যেমন ভারত, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২ হাজার বাচ্চার শ্বাস কষ্ট জনিত বিভিন্ন রোগের তথ্য-উপাত্ত যেমন বাচ্চার নিঃশ্বাসের শব্দ, রোগের লক্ষণ, ডাক্তারের বক্তব্য, পিতামাতার বক্তব্য ইত্যাদি নিয়েছেন। তারা বাংলাদেশের ঢাকা (আজিমপুর, মিরপুর), নরসিংদি ও ভোলা জেলার এবং ভারতেরর তামিলনাইডু ও দিল্লী থেকে এই ডাটা গুলো সংগ্রহ করেছেন।
এ প্রসংগে গবেষক ড. আতিকুর রহমান বলেন, ‘‘আমি মনে করি এই সিস্টেম উন্নয়নশীল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য একটা আশীর্বাদ স্বরূপ। এক থেকে ৮ বছর বয়সের বাচ্চাদের প্রায় ১২০০ ফিচার ও বিভিন্ন রোগের উপাত্ত নিয়ে আমরা এই সিস্টেমটা ডেভেলপ করেছি।‘‘
সম্প্রতি তারা তাদের উদ্ভাবিত সিস্টেমটি বাংলাদেশের ভোলা জেলার তজুমুদ্দিন থানার চাপড়ী গ্রামে প্রায় ৫০টি পরিবারের ওপর সফল ভাবে প্রয়োগ করেছেন। প্রত্যেক পরিবারকে একটি করে  মোবাইল ফোন প্রদান করে তাদের সিস্টেমের ফলাফল পরীক্ষা করছেন। ওই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পিতা-মাতা তাদের বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে বাচ্চার নিঃশ্বাসের শব্দ রেকর্ড করে মাল্টিমিডিয়া মেসেজ (এমএমএস) করে পাঠালে সাথে সাথে তারা ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারেন তাদের বাচ্চার স্বাস্থ্যের অবস্থা কি। এখন পর্যন্ত এই সিস্টেমের ফলাফল দেখে ৮ জন বাচ্চার পিতা-মাতা তাদের বাচ্চাকে নিয়ে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করলে তাদের ভিতর ৭ জন বাচ্চার রেস্পাইরেটরী বা শ্বাস কষ্ট জনিত রোগ আছে বলে ডাক্তার নিশ্চিত করেছেন। ফলে ঐ শিশুরা এই সিস্টেমের মাধ্যমে জটিল রোগে আক্রান্তের হাত থেকে রক্ষা পেল।
এই সম্পর্কে গবেষক বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘‘উন্নয়নশীল দেশের প্রায় কম বেশি সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। সুতরাং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কিভাবে তাদের স্বংক্রিয় ভাবে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া যায় এই চিন্তা থেকে আমাদের এই পদ্ধতি তৈরি করা।’’
এই প্রজেক্টের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. ইনসু সং বলেন, "This mobile phone based health technology is for children that will save many children's life in the world."
আপনার বাচ্চার শ্বাস কষ্টজনিত রোগ আছে কিনা বা থাকলে কি পরিমাণ আছে তা এখনি জানতে পারেন। এর জন্য আপনাকে শুধু আপনার মোবাইল থেকে আপনার বাচ্চার নিঃশ্বাসের শব্দ রেকর্ড করে এমএমএস করতে হবে। সাথে সাথে আপনি আপনার বাচ্চার অবস্থার উপর তার একটা ফিরতি ম্যাসেজ পাবেন। ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমেও এই সেবা পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে নিঃশ্বাস রেকর্ড করে অনলাইনে আপলোড করলে সাথে সাথে জেনে যাবেন আপনার বাচ্চার অবস্থা।  
এই প্রজেক্টের অর্থায়ন করছে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন (মাইক্রোসফট) এবং সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন ড. ইনসু সং, জেমস কুক ইউনিভার্সিটি সিংগাপুর।
ড. আতিকুর রহমান খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করে সেখানেই ৭ বছর অধ্যাপনা করেছেন পরে ন্যানইয়াং টেকনোলোজিক্যাল ইউনিভার্সিটি সিংগাপুর থেকে পিএইচডি করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলায়।
বাহারুল ইসলাম রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারে বিএসসি এবং  ন্যানইয়াং টেকনোলোজিক্যাল ইউনিভার্সিটি সিংগাপুর থেকে মাস্টার্স করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার মোহাম্মাদপুর থানার রো-নগর গ্রামে।
বাচ্চার নিঃশ্বাস আপলোড করতে এই লিংক যেতে http://www.infor.kopo.com/breathing-sound-analyser হবে অথবা এমএমএস করতে পারেন + ৬৫ ৯১০৮৮৯৯২ নাম্বারে।            

Source: http://www.dailysangram.com