Tuesday, February 15, 2011

উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি প্রযুক্তি "লবণের বাটিতে গাছ"

উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি প্রযুক্তি "লবণের বাটিতে গাছ"

প্রফেসর ড. মো. সদরুল আমিন

আমরা চারা রোপণের পূর্বে গর্তের তলদেশে কয়েক কেজি লবণ দিয়ে যে নারিকেলসহ বেশ কিছু নাট-পাম গাছ লাগাই তা "লবণের বাটিতে গাছ" লাগানোর মতই। দেশের উপকূলীয় কৃষি পরিবেশ অঞ্চল ১৩ থেকে ১৮ এবং ২৩/২৪ মিলে ফসলি জমির প্রায় শতকরা ৩৬ ভাগ অনাবাদি থাকে, যদিও এ মাটির লবণের তীব্রতা মধ্যমেরও কম। পটুয়াখালীর দুমকি এলাকায় আমি হেক্টরে ৪ টন গম, ৭ টন ভুট্টা, ৪৫ টন মিষ্টি আলু, ৩০ টন লাউ, ৩৫ টন মুলা, ৩০ টন টমেটো নিজে উৎপাদন করেছি। এজন্য প্রযুক্তির মধ্যে ছিল মাটির সোডিয়াম, কেলসিয়াম, মেগনেসিয়ামের সালফেট, কার্বনেট/ বাইকার্বনেট লবণসমূহের পারস্পারিক অনুপাত ভিত্তিতে এসএআর, টিএসএস, ইসি এবং পিএইচ বিশেস্নষণ করে মৃত্তিকা পরিচর্যা করা, জমি গভীর চাষ দেয়া ও সুষম সার দেয়া, যা একজন কৃষিবিদ মৃত্তিকা বিজ্ঞানীর দক্ষতার আওতাভুক্ত। তাই উপকূলীয় অঞ্চলের মৃত্তিকা প্রযুক্তি হিসেবে আমি নিম্নরূপ সুপারিশ করছি-

১. একটু লম্বা জাতের ধান (স্থানীয়/উফশী/হাইব্রিড) চাষ করতে হবে; ২. তেল ফসল হিসেবে চিনাবাদাম, তিল ও সূর্যমুখীর চাষ করতে হবে। সূর্যমুখী জাতের মধ্যে হাইব্রিড এসএইচ/কেবিএইচ/পিএসি/সানব্রেড গ্রুপের জাত নির্বাচন করে তাতে বিঘাতে ২৬ কেজি ইউরিয়া, ৮০ কেজি এসএসপি এবং ২৩ কেজি পটাশ সার দিতে হবে। সবজির জন্য জমিতে ভিরিডি পাউডার প্রয়োগসহ উঁচু আইল তৈরি করে তার ঢালে চারা লাগাতে হবে। সকল জমিতে বিঘাপ্রতি ১.৫ থেকে ২ টন জৈব সার এবং ১ থেকে ২ কেজি বোরন সার দিতে হবে।

বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে চকোরিয়া মহেশখালী পর্যন্ত কশ মাটিতে (এসিড সালফেট) যে ফসল হয় তা নিতান্তই "লবণের বাটিতে গাছ" লাগানোর মত। বর্ণিত এসব প্রযুক্তি অবলম্বন করে এলাকার বিপুল পরিমাণ জমি আবাদে আনা এবং আবাদকৃত জমির ফসল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব, এজন্য প্রয়োজন কেবল সরকারের সদিচ্ছা এবং উপযুক্ত মৃত্তিকা প্রযুক্তি নির্বাচন ও প্রতিপালন। দেশের দক্ষিণ এলাকার জন্য ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এ পর্যন্ত অন্তত ১০টি ছোট-মধ্যম প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, যার ফাইনাল রিপোর্ট পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না, অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছায় দুর্বলতা ছিল। তাই বলছি সরকারের সদিচ্ছা ও যথার্থ মৃত্তিকা পরিচর্যা অবলম্বন করে দেশের উপকূলীয় পশ্চিমাঞ্চলে খাদ্যসহ অনেক ফসল উৎপাদন সম্ভব, যা ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত উপকূল ও পাশর্্ববতর্ী এলাকার গাছের জন্য প্রজাতিভেদে নূ্যনতম সহনীয় মাত্রার লোনা মাটিতে সম্ভব করা হয়েছে। কেবল খেয়াল রাখতে হবে যে কেউ যেন বাটির লবণ ফেলে দিয়ে সেখানে গাছ লাগিয়ে "লবণের বাটিতে গাছ" লাগানোর কথাটি বলার সুযোগ না পায়।

Friday, February 11, 2011

বিশ্বের কনিষ্ঠ প্রাণী আবিষ্কারক সাজিদ

বিশ্বের কনিষ্ঠ প্রাণী আবিষ্কারক সাজিদ
আবদুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ হাওলাদার। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বন্যপ্রাণীবিষয়ক জার্নাল জুট্যাক্সয়ে লেখা প্রকাশ করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রাপ্ত বিরল প্রজাতির এ ব্যাঙ আবিষ্কার করে তিনি পরিণত হয়েছেন বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রাণী আবিষ্কারক হিসেবে। বাংলাদেশে প্রাপ্ত বা কোনো বাংলাদেশি কর্তৃক উভচর, সরীসৃপ বা স্তন্যপায়ী প্রাণী আবিষ্কারের রেকর্ড এটিই প্রথম।
এ প্রসঙ্গে সাজিদের লেখা প্রকাশিত হওয়া জার্নাল 'জুট্যাক্সা'র প্রধান সম্পাদক ড. জি-ক্যুআ্যং জ্যাং (Dr Zhi-Qiang Zhang) বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই প্রতিনিধিকে এক ই-মেইল বার্তায় জানান, বিশ্বে এ প্রজাতির ব্যাঙ আর কোথাও আবিষ্কৃত হয়নি, এটিই প্রথম। আমরা তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং কোনো বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের জার্নালে এটিই কোনো বাংলাদেশির লেখা প্রকাশিত হলো।
সাজিদ তার শিক্ষক আসমতের নামানুসারে তার আবিষ্কৃত ব্যাঙের নাম দিয়েছেন 'ফেজারভারিয়া আসমতি'। গত ৯ ফেব্রুয়ারি জুট্যাক্সয়ে তার প্রাপ্ত ব্যাঙ সম্পর্কিত প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। একক ব্যক্তি কর্তৃক খ্যাতিমান কোনো কো-অথরের সহায়তা ছাড়া প্রাণী আবিষ্কার ও আন্তর্জাতিক জার্নালে লেখা প্রকাশের ঘটনা এটিই প্রথম।
এ ব্যাপারে সাজিদ হাওলাদার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি কতটা আনন্দিত বুঝাতে পারব না। আমার সব কৃতিত্ব আমার শিক্ষক ও দেশের মানুষকে দিতে চাই। সরীসৃপ প্রজাতি নিয়ে অব্যাহতভাবে কাজ করে আমি আমার কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর এমন আবিষ্কার সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. আলাউদ্দিন বলেন, তার আবিষ্কার সম্পর্কে শুনে আমরা খুবই আনন্দিত। সে বিশ্বের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমরা তার গবেষণা কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই।
খ্যাতিমান প্রাণিবিজ্ঞানী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আসমত সাজিদের আবিষ্কার প্রসঙ্গে জানান, সাজিদই একমাত্র বাংলাদেশি যে প্রাণী আবিষ্কারের কৃতিত্ব অর্জন করল। তার কৃতিত্বের জন্য সারা বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে। এ ধরনের গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডে ভবিষ্যতে সাজিদকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
সাজিদ কর্তৃক আবিষ্কৃত ব্যাঙ ও তার প্রবন্ধ প্রকাশে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি-এর কিউরেটর ড. ড্যারেল ফ্রস্ট। বিশ্বের সরীসৃপ প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসের ক্ষেত্রে সাজিদই সর্বকনিষ্ঠ বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন। বিশ্বজুড়ে সমাদৃত প্রাণী বিজ্ঞানী ড. ক্রেইগ এডলার সম্পাদিত ইনডেক্স অব অথরস অব হারপেটোলজিক্যাল ট্যাক্সোনমিস্ট-এর লেখক ড. জন এস এপলেগার্থ এক অভিনন্দন বার্তায় সাজিদের কৃতিত্বের জন্য তাকে অভিনন্দন জানিয়ে তার সাফল্য কামনা করেছেন।
২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ব্যাঙ নিয়ে কাজ শুরু করেন সাজিদ। ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাঙের জীবন প্রণালী ও বংশবৃদ্ধি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা চালিয়ে যান তিনি। এ সময়ে ব্যাঙের বংশবৃদ্ধির জন্য হটস্পট হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটাপাহাড় রাস্তার দুই পাশ থেকে বিভিন্ন ব্যাঙের স্যাম্পল সংগ্রহ করতে থাকেন তিনি। এর মধ্যে ২০০৮ সালে একদিন পেয়ে যান বিরল প্রজাতির একটি ব্যাঙ। স্বভাবমতো সেটিকে তিনি ব্যক্তিগত সংরক্ষণাগারে নিয়ে গিয়ে এটির প্রজাতি ও প্রকৃতি উদ্ধারের কাজে লেগে যান। কিন্তু সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ও তালিকাভুক্ত সাড়ে ছয়শ প্রজাতির মধ্যেও এ ব্যাঙের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। তারপর শুরু হয় অন্য ধরনের গবেষণা। এ ব্যাঙের ব্যতিক্রমী ডাক ও বৈশিষ্ট্য বের করতে তিনি যোগাযোগ করেন বিশ্বের সেরা সব প্রাণিবিজ্ঞানীর সঙ্গে। দীর্ঘসময় ধরে পর্তুগাল, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় ব্যাঙের ডাকের সাউন্ড এনালাইসিস এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে এ ধরনের ব্যাঙের অস্তিত্ব বাংলাদেশেই পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে তিনি বিশ্বের সেরা প্রাণিবিজ্ঞানীদের সম্পাদনায় প্রকাশিত বণ্যপ্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসের কাজে নিয়োজিত জার্নাল জুট্যাক্সা-তে এ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ পাঠান। ওই জার্নাল কর্র্তৃপক্ষ তার আবিষ্কারের সত্যাসত্য যাচাইয়ের পর চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি প্রবন্ধটি গ্রহণ করেন। এরপর গত মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জুট্যাক্সা জার্নালের ২৭৬১ ভলিউমে এটি প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে প্রথম কোনো বাংলাদেশির প্রবন্ধ এ জার্নালে প্রকাশিত হলো।

Source: Daily Bangladesh Pratidin, 11th Feb-2011

Wednesday, February 9, 2011

ভৈরবে গড়ে উঠেছে স্টিলের নৌকা নির্মাণ শিল্প

ভৈরবে গড়ে উঠেছে স্টিলের নৌকা নির্মাণ শিল্প

মো. মোস্তাফিজুর রহমান আমিন, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

ভৈরবে গড়ে উঠেছে স্টিলের মালবাহী নৌকা নির্মাণ শিল্প। অসংখ্য নদ-নদী আর খাল-বিল-হাওরাঞ্চল পরিবেশিষ্ট হওয়ায় এ অঞ্চলে এ নৌকার চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। ফলে প্রতি বছরই নতুন নতুন উদ্যোক্তা এ সম্ভাবনাময় খাতে পুঁজি বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আর এ শিল্পে এলাকার কয়েকশ’ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হওয়ায় তারাও বেশ ভালো আছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে।
ড্রেজিংয়ের বালি, পাথর, কয়লা, কাঠ ও ইট ইত্যাদি মালামাল পরিবহন করা হয় এসব স্টিলের নৌকা দিয়ে। মালামাল পরিবহনে এ নৌকা অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় এর চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। ভৈরবসহ আশপাশে বর্তমানে ১০ থেকে ১২টি স্থানে এ নৌকা তৈরি হচ্ছে। ২ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার ৬শ’ বর্গফুট আয়তনের একেকটি স্টিলের নৌকা তৈরি করতে সময় লাগে তিন মাসের মতো। প্রতিটি নৌকা নির্মাণে শ্রমিকের প্রয়োজন ১০ থেকে ১২ জন। দক্ষ-অদক্ষ প্রতি শ্রমিক প্রতি মাসে বেতন পান সাড়ে ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। স্টিলের নৌকা তৈরির উদ্যোক্তারা জানান, প্রথমে তারা সুনামগঞ্জ, সরাই ও বাজিতপুর এলাকা থেকে এসব স্টিলের নৌকা কিনে আনতেন। ধীরে ধীরে এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ১০/১২ বছর আগে থেকে ভৈরবে সীমিত আকারে এর নির্মাণ কাজ শুরু হলেও পরে চাহিদা থাকায় ভৈরবসহ আশপাশে বেশ কয়েকটি স্থানে নৌকা নির্মাণ শুরু হয়। তারা জানান, বছরে প্রায় অর্ধশত স্টিলের নৌকা নির্মাণ হচ্ছে এখানে। প্রতিটি নৌকা তৈরিতে প্রথমে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা ব্যয় হলেও নির্মাণসামগ্রী এবং শ্রমিকের মজুরিসহ আনুষঙ্গিক সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে খরচ পড়ে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা। আয়তন ও আকার অনুযায়ী কোনোটির ব্যয় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ১৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদি একেকটি নৌকা থেকে এক বছরে ভাড়া আদায় হয় ৫ থেকে সাড়ে ১০ লাখ টাকা। ফলে লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এ শিল্প খাতে পুঁজি বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
Source: Daily Amardesh

Saturday, February 5, 2011

আমিরের বায়ুচালিত গাড়ি আসছে শিগগিরই

আমিরের বায়ুচালিত গাড়ি আসছে শিগগিরই

আসাদুজ্জামান ফিরোজ, বগুড়া
বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক আমির হোসেন এক অসাধারণ প্রতিভাবান ব্যক্তি। এর আগে তিনি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করে দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন। আবারও দেশে ঝড় তুলতে যাচ্ছেন। অল্পদিনের মধ্যে বাতাসচালিত গাড়ি দেশবাসীকে উপহার দিতে পারবেন বলে তিনি জানান।
প্রাকৃতিক বাতাস শক্তিকে অটোমেটিক ফাংশনে রূপান্তর করে বিদ্যুত্ উত্পাদনের মাধ্যমে কিছু করা যায় কি-না তার ওপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে আবার প্রাকৃতিক বজ্রপাতকে আয়ত্তে এনে কিভাবে জ্বালানির কাজে লাগানো যায় তার ওপরও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমির হোসেন বলেন, আমরা শুধু মরীচিকার পেছনে ছুটছি। কারণ আল্লাহ পৃথিবীতে ৪টি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়েছেন। এগুলো হলো পানি, বাতাস, সূর্য ও বজ্রপাত রশ্মি। এই বজ্রপাত অল্প সময়ের জন্য হয়। কিন্তু এই বজ্রপাত রশ্মি বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে আয়ত্বে নিতে পারলে এখান থেকেও জ্বালানি কাজে লাগানো সম্ভব। তবে সর্বশেষ তার তৈরি বাতাসচালিত গাড়ি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালাচ্ছেন তিনি।
সর্বাধুনিক ও সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি নতুন গাড়ি চলবে বাতাসে। এই গাড়ি চালাতে লাগবে না জ্বালানি। ঘনীভূত বাতাস ট্যাংকে ভরে পিচঢালা পথ ধরে ছুটবে গাড়ি। অন্য ১০টি গাড়ির মতো সমানতালে চলবে। এতে মূল্যবান জ্বালানি তেলের অপচয় রোধের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণকারী কোনো গ্যাস নির্গমনের আশঙ্কাও থাকবে না। বাতাসনির্ভর গাড়িটি হলো ৫ আসনবিশিষ্ট। গাড়ির বডি নির্মিত হবে হাওয়াই অ্যালাই দিয়ে। ওজন মাত্র ৩০০ কেজি। অন্য গাড়িগুলো যেভাবে জ্বালানি তেল সংরক্ষণের জন্য ট্যাংক থাকে, এটিতেও তেমনি থাকবে। তবে ট্যাংকে শুধু প্রাকৃতিক ঘনীভূত বাতাস ভরা থাকবে। কমপ্রেসারের মাধ্যমে এই ট্যাংকে প্রাকৃতিক বাতাস ভরতে সময় লাগবে ৮ মিনিট। প্রতি চার ঘণ্টা পর পর গাড়িটিতে কমপ্রেসারের মাধ্যমে বিকল্প পথে একটি ফুয়েল বার্নার ঘনীভূত বাতাস গরম করার মাধ্যমে বাতাসের চাপ বাড়িয়ে দেবে। এভাবে গাড়ির গতি বাড়বে। শুধু ২৪টি পিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা ইঞ্জিন, যা চলবে শুধু এয়ার টারবাইন দিয়ে।
দূর পথ ভ্রমণের ক্ষেত্রে খুব সহজ হবে এই গাড়িটি। আবার যদি এমনটি হয় রাস্তায় যানজটে পড়লে গাড়ি যাতে উড়ে চলতে পারে তারও ব্যবস্থা আছে। এই গাড়ি খাড়াভাবে শূন্যে ওঠে যেতে পারবে এবং একই সঙ্গে শূন্যে স্থির হয়ে থাকতে পারবে। রাস্তায় প্রতি ঘণ্টায় ৮০ মাইল এবং আকাশে এর গতি হবে প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ কিমি প্রায়। বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ইয়ার টারবাইনে ঘুরবে ১০০০ ওয়াটের একটি জেনারেটর। এটি সর্বোচ্চ ৫০০ ফুট পর্যন্ত উঁচুতে উড়তে পারবে। চলন্ত সময়ে ডানে-বামে ইচ্ছামত ঘোরানো যাবে।
দরজাগুলো অটোরিমোট সিস্টেমে খোলা ও বন্ধ করা যাবে। সামনে-পেছনে চলাচলের জন্য অটোমনিটর ফাংশন সিস্টেম থাকবে। যে কোনো সময় যে কোনো অবস্থায় গাড়ি চলাচলে কোনো প্রকার সমস্যায় পড়তে হবে না। এ গাড়ি তৈরিতে খরচ হবে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে মিডিয়ার সামনে চলন্ত অবস্থায় উপস্থাপন করা হবে বাতাসচালিত এই গাড়ি এমনই দাবি করলেন এর উদ্ভাবক আমির হোসেন। এই প্রযুক্তিগুলো মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের বেশকিছু সূরা থেকে গবেষণা করে পেয়েছেন বলে তিনি জানান।
Source: Daily Amardesh, 06th Feb-2011

Friday, February 4, 2011

নাটোরে বিনা চাষে রসুন

নাটোরে বিনা চাষে রসুন

চলতি রবি মৌসুমে নাটোরে বিনা চাষে রসুনের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় চার হাজার হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে এবার রসুন চাষের আওতায় এসেছে।
১৯৯৫-৯৬ সালে জেলার গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলা এলাকার কৃষকরা স্ব-উদ্যোগে বিনা চাষে রসুনের আবাদ প্রচলন করেন- যা বাংলাদেশে প্রথম। এরপর গ্রামগুলোতে রসুন চাষের জমির পরিমাণ বাড়তে থাকে। পরে গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার পাশাপাশি অন্য উপজেলাগুলোতে এর চাষাবাদ সমপ্রসারিত হয়।
বিনা চাষে রসুনের চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে গুরুদাসপুরের কাছিকাটা এলাকার কৃষক জেহের আলী বলেন, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর সাধারণত কার্তিক মাসে নরম জমিতে বিনা চাষে রসুনের কোয়া লাগানো হয়। এতে সেচেরও বেশি প্রয়োজন হয় না। জমিতে আগাছা থাকে কম। তুলনামূলকভাবে সারের ব্যবহারও কম করতে হয়। রোপণের ১২০ দিনের মধ্যে রসুন তোলা যায়। রবি মৌসুমের রসুন উৎপাদন খরচ প্রচলিত চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদিত রসুনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম। বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয় ২৫ থেকে ৩০ মণ। জেলা কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ২০০৮-০৯ সালে ৭,৫৫০ হেক্টর এবং ২০০৯-১০ সালে ৯,৩৯০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ হয়। রসুন চাষের পরিধি পর্যায়ক্রমে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মৌসুমে ১০ হাজার ৭০ হেক্টর জমি চাষাবাদ করে ৬০ হাজার ৪২০ টন রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, উৎপাদন ৮০ হাজার টন ছাড়িয়ে যাবে। আবাদি জমির মধ্যে ৮ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বিনা চাষে রসুন এবং অবশিষ্ট জমিতে প্রচলিত পদ্ধতির চাষের মাধ্যমে রসুন আবাদ করা হয়েছে। আবাদি জমির বেশিরভাগ গুরুদাসপুর উপজেলায়।
বিনা চাষে রসুন আবাদ সম্পর্কে শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত সিংড়া উপজেলার কুমিরা গ্রামের কৃষক জুলফিকার আনাম বলেন, অল্প পরিশ্রমে অল্প ব্যয়ে কৃষকরা বিনা চাষে রসুন আবাদে ঝুঁকছেন। এটি একটি লাভজনক ফসল হিসেবেই আমরা এর আবাদ করে থাকি। পাশাপাশি রসুনের বাজারমূল্য বেশি হওয়ার কারণেও কৃষকদের রসুন আবাদে আগ্রহ আরো বেড়েছে।
নাটোর কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক এম. দেলোয়ার হোসেন বলেন, কৃষকদের মাঝে বিনা চাষে রসুন জনপ্রিয় হওয়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। রসুনের বাজারমূল্য চড়া হওয়ার কারণে কৃষকরা বেশি মুনাফার আশায় এবার অধিক জমিতে রসুন চাষ করেছেন। কৃষকদের যেকোনো ধরনের সমস্যায় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ তাদের পাশে আছে।
ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন, বাসস

Thursday, February 3, 2011

'মারের সাগর পাড়ি দেব'

'মারের সাগর পাড়ি দেবইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তত্ত্বাবধানে নতুন প্রযুক্তির ১০টি নৌকা তৈরি করেছে সাভারের 'তাড়াতাড়ি শিপইয়ার্ড'। পাটের নৌকার মতো ফাইবার গ্লাসের এ নৌকাও বাংলাদেশের জেলেদের জন্য কাজ করবে লাইফজ্যাকেটের মতো। বিস্তারিত বলছেন তায়েফুর রহমান তাড়াতাড়ি শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নৌপ্রকৌশলী ইভ মার বলেন, 'নৌকাটি ফাইবার গ্লাস ও প্লাস্টিকের সমন্বয়ে তৈরি।' দেড় থেকে দুই টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নৌকাটির নকশা করেছেন ফ্রান্সের বিখ্যাত ভিপিএলপি ইয়েস্ট ডিজাইন কোম্পানির নৌপ্রকৌশলী মার্ক ভ্যান পেটিগেম। প্রতিটি নৌকা তৈরিতে খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। কাঠের নৌকার চেয়েও দ্রুত চলবে এগুলো।
আকারে প্রতিটি নৌকা ৩০ ফুট লম্বা ও সাড়ে ছয় ফুট চওড়া। মাস্তুলের উচ্চতা সাত মিটার এবং পাল ১৮ বর্গমিটার। সুদৃশ্য পালের রং লাল। জ্বালানি সাশ্রয়ী এ নৌকার রক্ষণাবেক্ষণেও তেমন খরচ হবে না। তা ছাড়া পানিতে ডুবে না যাওয়াটাই এর সবচেয়ে বড় গুণ।ফাইবার গ্লাসের প্রতিটি নৌকায় রয়েছে ১৬ অশ্বশক্তির ইঞ্জিন, দুইটি ব্যাটারি, সোলার সিস্টেম, জ্বালানি তেলের তিনটি পাত্র, অগি্ননির্বাপক যন্ত্র, নৌকা বাঁধার লোহার চেইন, দুটি বয়া, পাঁচটি লাইফজ্যাকেট, কম্পাস, রেডিও ও দিকনির্দেশনার বাতি। ডিজেলচালিত হলেও বাতাস অনুকূলে থাকলে পালের সাহায্যেও চলবে এ নৌকা।২২ জানুয়ারি ঢাকার সাভারের কর্ণপাড়ায় তাড়াতাড়ি শিপইয়ার্ডে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের বাগেরহাটের রামপাল, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা, পটুয়াখালীর দশমিনা ও বাউফল, ভোলার দৌলতখান ও তজুমদ্দিন, বরগুনার বেতাগী, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ এবং সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ৫০ জন দরিদ্র জেলের মধ্যে প্রথম দফায় বিনা মূল্যে ১০টি নৌকা হস্তান্তর করা হয়। এর আগে ওই ৫০ জনকে সাভারের বংশী নদীতে চারদিন ধরে ফাইবার নৌকা চালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, 'প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০টি নৌকা বিতরণ করা হবে। এতে উপকৃত হবে ২০০ জেলে। ভালো ফল পাওয়া গেলে পরে আরো নৌকা বিতরণ করা হবে।ইইউর প্রতিনিধি কোন ডোচাটু বলেন, 'দরিদ্র মৎস্যজীবীদের পক্ষে নৌকাগুলো কেনা সম্ভব নয়। তাই দরিদ্র জেলেদের বিনা মূল্যে এ নৌকা প্রদানের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ইইউ।বিনা মূল্যে উন্নত প্রযুক্তির নৌকা পেয়ে প্রান্তিক জেলেরা বেশ উচ্ছ্বসিত। ভোলার দৌলতখানের জেলে জাহাঙ্গীর জানান, আইলা তার নৌকার সঙ্গে ভাইকেও কেড়ে নিয়েছিল। তিনি হয়ে যান নিঃস্ব। এখন ফাইবার গ্লাসের নৌকায় সওয়ার হয়ে জীবন বদলে দেওয়ার পালা।
Source: Daily Kalerkantho, 1th Feb-2011

Tuesday, February 1, 2011

দুর্গম পাহাড় আলোকিত বিদু্যতের আলোয়: বরকলে বিদায় হারিকেন কুপিবাতি

দুর্গম পাহাড় আলোকিত বিদু্যতের আলোয়
বরকলে বিদায় হারিকেন কুপিবাতি
০০ রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা

দুই হাজার সালে বান্দরবানের মনজয় পাড়ায় একটি ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ উৎপাদন ইউনিট স্থাপন করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলো পাহাড়ী যুবক অং থুই খাই। তার সেই উদ্ভাবনে খুলে গেছে সম্ভাবনার দুয়ার। সেই ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ প্রকল্প দিয়ে দীর্ঘকাল অন্ধকারে থাকা দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলো এখন আলোকিত হতে পারে বিদু্যতের আলোয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ওনটেক পাওয়ার সিস্টেমের যৌথ উদ্যোগে রাঙ্গামাটির বরকলে বাস্তবায়িত ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ প্রকল্পের সাফল্যে এমন আশাই জেগেছে পাহাড়ি মানুষের মনে।
দুর্গম বরকলের পাহাড়ি মানুষ যেখানে এতদিন হারিকেন আর কুপিবাতি জ্বালাতো আজ তারা বিদু্যতের আলো পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের অর্ধ লক্ষ মানুষকে বিদু্যৎ সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে। বিজিবি ও ওনটেক পাওয়ার সিস্টেমের যৌথ উদ্যোগে ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ কেন্দ্রের পাইলট প্রকল্পের সাফল্যে এই আশাবাদ জেগেছে ।
বরকল সদরে পাহাড়ি ঝরনার পানি ব্যবহার করে এই ক্ষুদ্র বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ কেন্দ্র চালু করতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি টাকা । মঙ্গলবার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রামের ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন।
ওনটেক পাওয়ার সিস্টেমের ইঞ্জিনিয়ার হাফিজ রশিদ বরকলে স্থাপিত ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ কেন্দ্র সম্পর্কে জানান, এটি একটি পাইলট প্রজেক্ট। এটা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত সফলভাবে শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এ বিদু্যৎ কেন্দ্র থেকে ৫০ কিলোওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই উৎপাদন ক্ষমতা আরো বাড়ানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বরকলের মতো পার্বত্যাঞ্চলের দুর্গম এলাকা যেখানে পানির উৎস রয়েছে, জলপ্রপাত রয়েছে সেখানে এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে এ ধরনের ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ কেন্দ্র করা গেলে সাফল্য পাওয়া যাবে। তবে এই কাজের জন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার যদি ব্যাংক ঋণের সুবিধা করে দেয় তাহলে পার্বত্যাঞ্চলের অনুন্নত এলাকা উন্নত করতে তারা প্রচেষ্টা নিতে পারবে।
ওনটেক পাওয়ার সিস্টেমের উদ্যোক্তা নজরুল ইসলাম (নান্নু) জানান, বরকলে ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার প্রাকৃতিক উৎস ব্যবহার করে পার্বত্যাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে বিদু্যৎ সুবিধা পেঁৗছে দেয়া সম্ভব। পাহাড়ে অনেক পাহাড়ি ঝরনা রয়েছে। সেসব ঝরনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে আরো বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বিজিবি'র ২৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল সৈয়দ সাইয়েদিস সাকলাইন।
Source: Daily Ittefaq

এক একর আঙুর বাগান থেকে ৪০ বছরে কোটি টাকা

এক একর আঙুর বাগান থেকে ৪০ বছরে কোটি টাকা

মো. আলী আশরাফ খান
স্বল্প পরিসরে আঙ্গুর চাষের জন্য বাড়তি জায়গার প্রয়োজন হয় না। বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় যে স্থানে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রৌদ্র থাকে অথচ পানি দাঁড়ায় না এমন জায়গা নির্বাচন করে আঙ্গুর চাষ করা যায়। প্রতি ৮০ বর্গফুটে (২.৫০–৩.২৫ মিটার) চারটি আঙ্গুর গাছ লাগানো যায়। যেহেতু আঙ্গুর গাছ ৪০-৫০ বছর বাঁচে সেজন্য লোহা/সিমেন্টের পিলার ও জিআই তার দ্বারা মাচা তৈরী করা উচিত। যদি একর প্রতি ১র্০–র্৮ পদ্ধতিতে ৫৪৪টি গাছ লাগানো যায় এবং প্রতি গাছে বছরে গড়ে কমপক্ষে ৪ কেজি করে আঙ্গুর উত্পাদিত হলে মোট আঙ্গুরের পরিমাণ হবে ২১৭৬ কেজি। বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি কেজি ১৫০ টাকা হিসাবে মোট মূল্য দাঁড়াবে ৩,২৬,৪০০ টাকা। এক একর জমিতে আঙ্গুর চাষ করতে খরচ হবে আনুমানিক ১,৫০,০০০ টাকা। খরচ বাদে মোট লাভ দাঁড়াবে ১,৭৬,০০০ টাকা, যা অন্য যে কোনো ফল ও ফসলের তুলনায় বেশ লাভজনক।
ইংরেজিতে Grape এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Vitis Vinifera আঙ্গুর Vitaceae পরিবারভুক্ত। এটা মিষ্ট এবং উপাদেয় ফল। তবে সঠিক পরিচর্যা এবং জমিতে প্রয়োজনীয় উপাদানের অভাবে আঙ্গুরের স্বাদ টকও হতে পারে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আঙ্গুর চাষের তেমন প্রসার ঘটেনি। সমপ্রতি গাজীপুর জেলার কাশিমপুরে বিএডিসির উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রের সহযোগিতায় বিভিন্ন স্থানে সীমিত পরিমাণে আঙ্গুরের চাষ হচ্ছে। এদেশের আবহাওয়া এবং জলবায়ু কিছু কিছু জাতের আঙ্গুর চাষের উপযোগী বিধায় এর উত্পাদন বৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। আঙ্গুর চাষের জন্য একদিকে যেমন উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া প্রয়োজন হয়, তেমনি প্রয়োজন অল্প বৃষ্টিসহ শীতল আবহাওয়া। যে সময়ে আঙ্গুরের ফুল আসে সে সময়ে আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে আঙ্গুরের ফলন বেড়ে যায়। শীতকালে আঙ্গুরগাছের পাতা ঝরে পড়ে এবং বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন লতাপাতা গজাতে থাকে। এসময় গাছে ফুল আসে এবং কালক্রমে তা ফলে রূপান্তরিত হয়। পরিমিত বৃষ্টিপাত এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন স্থানই আঙ্গুর চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। এছাড়া শুষ্ক এবং উষ্ণ আবহাওয়া অত্যন্ত জরুরি। তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকা উত্তম। তবে সূর্যকরোজ্জ্বল শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু আঙ্গুর চাষের জন্য অনুকূল। তবে আঙ্গুর গাছের দৈহিক বৃদ্ধির সময় ঠাণ্ডা জলবায়ু এবং ফল ধারণের সময় শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু আবশ্যক। জাতের ভিন্নতাহেতু আঙ্গুর কম-বেশি নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়াতেও জন্মে থাকে।
অপেক্ষাকৃত হালকা দোআঁশযুক্ত লাল মাটি যেখানে বৃষ্টির পানি দাঁড়াতে পারে না অথচ নিষ্কাশন সহজ এমন জমি আঙ্গুর চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত। তাছাড়া জৈবিক সারসহ কাঁকড় জাতীয় মাটি এবং পাহাড়ের পাললিক ভূমিতেও আঙ্গুর চাষ করা যায়। যেহেতু রৌদ্র ব্যতীত আঙ্গুর গাছে ফুল ও ফল ধরে না, সেজন্য ছায়ামুক্ত রৌদ্রজ্জ্বল স্থানই নির্বাচন করা উত্তম।
সারা পৃথিবীতে মোট ১২ ধরনের ৬০০ প্রজাতির আঙ্গুর উত্পাদিত হয়ে থাকে। তন্মধ্যে বেশ কিছু জাত উপমহাদেশীয় জলবায়ুতে লাগসই হওয়াতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও থাইল্যান্ডে এর চাষ হয়ে থাকে। এসব জাতের মধ্যে উন্নতমানের হলো : (১) থম্পসন (বীজশূন্য), (২) পুসা (বীজশূন্য), (৩) বিউটি (বীজশূন্য), (৪) পারলেট (দু্রত পাকে), (৫) আনার-ই-শাহী, (৬) চিমা সাহেবি, (৭) কালি সাহেবি (কালো), (৮) ভোকাবি, (৯) খলিলি (দ্রুত পাকে), (১০) আর্লি মাস্কাট, (১১) ডিলাইট, (১২) কার্ডিনাল (কালো), (১৩) হোয়াইট মালাগা (থাই) ইত্যাদি। এসব জাতের মধ্যে বীজহীন এবং বীজযুক্ত উভয়ই রয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী জাতের নাম ‘পার্পেল’। এ জাতটি এদেশে সবচেয়ে ভালো জন্মে। চাষের প্রসারতা বাড়ানোর জন্য সঠিক জাত নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আঙ্গুরের বীজ ও শাখা কাটিং দ্বারা বংশবিস্তার করা যায়। ভালো জাতের আঙ্গুর গাছ নির্বাচন করে তা থেকে এক বছরের পুরাতন শাখা যা তামাটে রং ধারণ করছে এমন শাখা থেকে কাটিং করে কলম তৈরি করা যায়। এই পদ্ধতি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য। রোগবিহীন সুস্থ -সবল আঙ্গুর গাছের শাখা বংশবিস্তারের জন্য উপযোগী। শীতকালে অর্থাত্ অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে আঙ্গুর গাছ সুপ্তাবস্থায় চলে যায়। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে শাখা কর্তন পদ্ধতিতে ৩/৪টি গিরাসহ কাটিং করতে হবে, যা লম্বায় ১৩/১৪ সেমি. হবে। কাটিংগুলো একত্রে বেঁধে ২৪ ঘণ্টা ধরে নিচের অংশ উপরের দিক করে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে রাখা উচিত। কারণ কাটার পর থেকে এক ধরনের আঠা নির্গত হয় যা সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লাগালে চারা নাও গজাতে পারে। বীজতলায় কাটিং বসানোর পর এক মাসের মধ্যে চারা উত্পন্ন হয়। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে উক্ত কলম নির্বাচিত জমিতে রোপণ করা যায়। তবে কলমের জন্য ডাল কেটে নেয়ার পর ভিজে কাপড় দ্বারা ১৫ দিন জড়িয়ে রেখে তারপর বীজতলায় বসালে তাড়াতাড়ি শিকড় গজায়। প্রথমে নির্বাচিত জমিটি উত্তমরূপে চাষ দিতে হবে। তারপর ৭০–৭০–৭০ সেমি. মাপের গর্ত করতে হবে। উক্ত গর্তে ১০ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১০০ গ্রাম পটাশ একত্রে মিশ্রিত করে খননকৃত মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে উক্ত গর্তটি ভরাট করে দিতে হবে। এভাবে ২০/২৫ দিন উক্ত গর্তটিতে প্রয়োজনানুযায়ী পানি দিতে হবে, যাতে প্রয়োগকৃত সারগুলো পচে যায়। অতঃপর চারা রোপণের জন্য গর্তটি তৈরি হবে। পরে বীজতলা থেকে সংগৃহীত শক্তিশালী একটি চারা এনে উক্ত গর্তে রোপণ করতে হবে। চারাটি সোজাভাবে রোপণ করে একটা লাঠি দ্বারা আটকে দিতে হবে। উক্ত চারার গোড়ায় হালকাভাবে পানি সেচ দিতে হবে।
আঙ্গুর গাছ যেহেতু লতানো সেজন্য এ গাছে প্রচুর সার প্রয়োগের ব্যবস্থা থাকা দরকার। আমাদের এই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ৩–৩ মিটার পদ্ধতিতে গাছ লাগানো যায়। রোপণের পর এক মাসের মধ্যে রোপণকৃত গাছ যদি সতেজ না হয় তবে গাছটির গোড়ায় মাটি আলগা করে কিছু পরিমাণ ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। আবহাওয়াজনিত কারণে বাংলাদেশে আঙ্গুর গাছ রোপণের উত্কৃষ্ট সময় হলো মার্চ ও এপ্রিল মাস। এক থেকে তিন বছরের প্রতিটি গাছে প্রতি বছর ৩ কেজি গোবর সার, ১০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০ গ্রাম পটাশ দিতে হবে। ৫ বছরের উপরে প্রতি গাছে ৫ কেজি গোবর সার ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম পটাশ দিতে হবে। পটাশ বেশি দিলে আঙ্গুর মিষ্টি হয় এবং রোগবালাই প্রতিরোধ করে। তাছাড়া প্রতি চার মাস অন্তর অন্তর প্রতি গাছে আধাকেজি করে হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আঙ্গুর গাছের ডাল ও কাণ্ড ছাঁটাই করা অতি আবশ্যক। এর ব্যতিক্রম হলে গাছের ফলন অনেক কমে যায়। আঙ্গুর গাছের নতুন ডালে ফুল ও ফল ধরে বিধায় সময়মত এর অঙ্গ ছাঁটাই না করলে ফুল ও ফল ধরবে না। আঙ্গুর গাছের ফল বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। ছাঁটাইয়ের আগে বা পরে সেচ দেয়ার প্রয়োজন নেই। গাছ রোপণের পর থেকে মাচায় ওঠা পর্যন্ত প্রধান কাণ্ড ছাড়া অন্যসব পার্শ্বশাখা ছেঁটে ফেলতে হবে।
ক) প্রথম ছাঁটাই : মাচায় কাণ্ড ওঠার পর ৩৫-৪০ সেমি. লম্বা হলে প্রধান কাণ্ডের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে, যাতে ওই কাণ্ডের দু’দিক থেকে দুটি করে ৪টি কাণ্ড গজায়।
খ) দ্বিতীয় ছাঁটাই : উক্ত ৪টি কাণ্ড দু’দিকে বড় হতে থাকবে এবং ১৫-২০ দিন পর যখন কাণ্ডগুলো ৪৫-৬০ সেমি. পর্যন্ত লম্বা হবে তখন উক্ত ৪টি কাণ্ডের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে, যাতে প্রতিটি শাখার দু’দিক থেকে আগের মতো ২টি করে ৪টি কাণ্ড গজায় । এভাবে মোট ১৬টি কাণ্ড গজাবে।
গ) তৃতীয় ছাঁটাই : এবার ওই ১৬টি কাণ্ড ১৫-২০ দিন পর যখন প্রতিটি ৪৫-৬০ সেমি. লম্বা হবে তখন পুনরায় শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে, যাতে করে প্রতিটি শাখার দু’দিকে দুটি করে ৪টি কাণ্ড এবং এভাবে ১৬টি শাখা থেকে সর্বমোট ৬৪টি কাণ্ড গজাবে। অনেক সময় গাছের দুর্বলতার কারণে ৬৪টি কাণ্ড নাও পাওয়া যেতে পারে। কাণ্ড গজানোর পর দুর্বল কাণ্ডগুলো মারা যেতে পারে। ফলে ৪০-৫০টি সতেজ কাণ্ড থাকে এবং এর প্রশাখার ৩/৪টি গিরার মধ্যেই ফুল ও ফল ধরবে। পরবর্তী সময়ে ছাঁটাইয়ের সময় খুব সাবধানে কাণ্ড কর্তন করতে হবে, যাতে ৫ম গিরার পর ছাঁটাই হয়, অন্যথায় আঙ্গুর ধরবে না। আঙ্গুরের জাতের ভিন্নতার কারণে অনেক গাছে ৫ম ও ৬ষ্ঠ গিরাতেও আঙ্গুর ধরে। এমতাবস্থায় ৭ম গিরার পর ছাঁটাই করতে হবে।
এ ছাঁটাই পদ্ধতিতে কলম রোপণের ৬৫-৭৫ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল এসে যায় এবং তাতে আঙ্গুর ধরে। ফুল থেকে আঙ্গুর পাকা পর্যন্ত সময় লাগে ১১০-১২৫ দিন। প্রথম বছর ফল পাওয়ার পর শাখাগুলোকে ১৫-২০ সেমি. লম্বা রেখে শীতের প্রারম্ভেই ছেঁটে দিতে হবে। ফলে বসন্তের প্রাক্কালে নতুন শাখা গজাবে এবং ফুল ধরবে। এই পদ্ধতি ৩-৪ বছর পর্যন্ত চলবে। অতঃপর বেশি ফুল ও ফল পাওয়ার জন্য মূল কাণ্ডটিকে সামান্য গোড়া খেকে ছেঁটে দিলে আবার নতুন কাণ্ড ও শাখা গজাবে এবং তাতে ফুল ও ফল ধরবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে ফোন করা যেতে পারে : মোবাইল নং-০১৭১০৪০৭০৭৪, ০১১৯৯৪২৫৫২৩, ০১৯১১৪০৫৩৬৬, লেখক : কবি, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক, গবেষক, গ্রন্থাকার ও প্রধান নিরীক্ষা কর্মকর্তা, বিসিক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা। E-mail: asraf.khan98@yahoo.com

শ্রীবরদীতে নতুন প্রযুক্তিতে কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য

শ্রীবরদীতে নতুন প্রযুক্তিতে কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য

- রেজাউল করিম বকুল শ্রীবরদী (শেরপুর)

এক বছর আগেও বেকারত্বের অভিশাপ জেঁকে বসেছিল হরলাল রায়ের পরিবারে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন হরলাল। তিনি মাঝে-মধ্যেই যেতেন শ্বশুরবাড়ি নিলফামারীতে। তিনি নিলফামারীতে এক কৃষকের কাছ থেকে আপেল আর বাউকুলের কলম (চারা) এনে শুরু করেন চাষাবাদ। মাত্র ৫০ শতাংশ জমিতে কুলের বাগান করে গত বছর চাষাবাদের ব্যয় মিটিয়েও লাভ করেন ৪০ হাজার টাকা। তার এ সাফল্য দেখে স্থানীয় উপজেলা কৃষি অধিদফতর ও জেলা কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা তার কুলের বাগান পরিদর্শন করে নানা দিক থেকে সহায়তা দিচ্ছেন। ফলে এবার তার কুল বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে আশা করেছেন তিনি। এ যুবকের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল গ্রামে। এখন তাকে এলাকার মানুষ বড়ই চাষী বলেই চেনে। কর্ণঝোরার জহির রায়হান, বাবেলাকোনার ভূপেন্দ্র মাস্টার, রাঙ্গাজানের ব্রতিন মারাক, তাতিহাটির জামাল উদ্দিনসহ অনেক কৃষকই আপেল কুল, বাউকুল, লিচু, বাঁশ, কমলা, লেবু, পেঁপেসহ বিভিন্ন জাতের শাক-সবজির চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আয়তন ২৫২ বর্গকিলোমিটার। তন্মধ্যে লোকসংখ্যা ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭৯১ জন। এতে নিট আবাদি জমি ১৯ হাজার ২২৮ হেক্টর। বনবিভাগ রয়েছে ১ হাজার ২২৮ হেক্টর। এতে কৃষির উপর নির্ভরশীল ৫৫ হাজার ৬৩৩টি পরিবার। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কারণে অনেক কৃষকই ধান চাষাবাদের পরিবর্তে গম, গোল আলু, আখ, সরিয়া, শাক-সবজি, আপেল, পেঁপে ও মাছ চাষসহ বিভিন্ন চাষাবাদে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এতে সাফল্যও পাচ্ছেন তারা। নইলের পাড় গ্রামের কৃষক আমের আলী, সোহরাব আলী, কুমর উদ্দিন, আব্দুল জলিলসহ অনেকে জানান, এ গ্রামে এখন ধান চাষাবাদের পরিবর্তে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে মাছ চাষাবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে অনেকে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ধান চাষাবাদের চেয়ে কম খরচে অল্প সময়ে মাছ চাষাবাদ করে বেশি লাভ পাওয়া যায়। তাই কৃষকরা মাছ চাষ বেশি করছেন।
গারো পাহারের রাঙ্গাজান গ্রামের বাসন্তি মারাক, গোলাপ হোসেন, নিলারাণীসহ অনেকে জানান, তাদের বাড়ি পাহাড়ি টিলায়। বছরের কোনো মৌসুমে তাদের জমিতে কোনো ফসল করা যেত না। কিন্তু নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কারণে এখন তাদের এলাকায় বাঁশ, কলা, আনারস, লেবু, শিমুল আলু, পেঁপে, লেবু, লটকন ইত্যাদির চাষাবাদ বেড়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এফএম মোবারক আলী বলেন, মাত্র ৩/৪ বছরের ব্যবধানে উপজেলায় নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনে চাষাবাদে বিপ্লব ঘটেছে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে তথ্যানুসন্ধানে গেলে সফল যুবক হরলাল রায়ের স্ত্রী কবরী রানী বলেন, বিয়ের পর থাইকা মেলা কষ্ট করছি। পোলাপান গোরে দু’বেলা ঠিকমত খেতে দিতে পারি নাই। অহন আপেল আর বাউকুলের চাষাবাদ করে লাভের ট্যাহা দিয়ে পুকুর দিছি। পুকুরে মাছ আছে। হাইব্রিড জাতের ধানও চাষ করছি। ১ মেয়ে আর ১ ছেলে। দু’জনেই স্কুলে পড়ালেহা করে। কবরী রানীর মতো কৃষি ক্ষেত্রে স্বপ্ন দেখছেন অনেকে। তবে তাদের মতে, সরকারি-বেসরকারি ও এনজিওগুলো এসব নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে জোরালো ভূমিকা নিলে আরও ছেলে-মেয়েরা খুঁজে পাবে স্বপ্নের ঠিকানা।
Source: Daily Amardesh