Saturday, November 27, 2010

দুই ঘণ্টায় সেন্টমার্টিন


দুই ঘণ্টায় সেন্টমার্টিন
-মেহেদী হাসান রাহাত

কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাবেন? কিন্তু পথের ঝক্কিতে সাহস পাচ্ছেন না? তাদের জন্য সুসংবাদ। কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন ৪-৫ ঘণ্টার পথ আপনি পাড়ি দিতে পারবেন মাত্র ২ ঘণ্টায়! বিশ্বাস হচ্ছে না? বিশ্বাস না হবার মতোই কথা। তবে এ অসম্ভবকে সম্ভব করতেই এ রুটে চলতে শুরু করেছে রাকেতা নামে এক দ্রুতগতির নৌযান।
বর্তমানে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পেঁৗছতে সময় লাগছে ৪-৫ ঘণ্টা। কারণ কক্সবাজার থেকে সড়ক পথে ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে টেকনাফ পেঁৗছতে সময় লাগছে দেড় ঘণ্টারও বেশি। সেখান থেকে আবার আড়াই ঘণ্টা সাগর পাড়ি দিয়ে তবেই সেন্টমার্টিন। যাতায়াতের ঝক্কিঝামেলায় যাদের বেড়াতে যাওয়ার আগ্রহটাই মাটি হয়, তাদেরকেও বলছি, এখন থেকে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগবে মাত্র ২ ঘণ্টা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটার লিংক লজিস্টিক লি. এবং ওশান ট্যুরিজম কক্সবাজার যৌথ উদ্যোগে চালু করছে এই সেবা। বাহনের নাম এমভি ডলফিনাস। কক্সবাজার থেকে উপকূল ধরে সেন্টমার্টিনে পৌঁছতে এই জলযানের সময় লাগবে দুই ঘণ্টা। উন্নত বিশ্বে এ বোটের প্রচলন থাকলেও এদেশি পর্যটকদের জন্য এটা নতুন একটা বাহনই বটে। হাইড্রোফয়েল এ জাহাজের ঘণ্টায় গতি গড়ে ৬০ কিলোমিটার।
কক্সবাজারে যে হাইড্রোফয়েল জাহাজের দেখা মিলছে, তার আসল নাম রাকেতা। রাশিয়ায় তৈরি এই জাহাজ ৬৬ জন আরোহী বহন করতে পারে। কক্সবাজারের নূনিয়ারছড়ার আইডবি্লউটিএ ঘাট থেকে প্রতিদিন এই জাহাজ ছেড়ে যাবে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে। যাত্রীপ্রতি ভাড়া ২৮০০ থেকে ৩২০০ টাকা।
উল্লেখ্য, নারিকেল-জিঞ্জিরা খ্যাত প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেন। দ্বীপটিতে পাঁচ প্রজাতির কাছিম, নানা প্রজাতির প্রবাল ছাড়াও ৬৮ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে।  

Source: Bangladesh Pratidin

Sunday, November 14, 2010

মুরগির জটিল রোগ নির্ণয়ে দেশি পদ্ধতি

মুরগির জটিল রোগ নির্ণয়ে দেশি পদ্ধতি

মুরগি পালন লাভজনক হলেও বিভিন্ন প্রকার রোগ এ লাভের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবছর বিভিন্ন রোগের কারণে ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকা। তাছাড়াও রোগ নিরাময়, রোগ নির্ণয় করতে বিদেশ থেকে বিভিন্ন ঔষধ আনতে হয়। মুরগির রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারলে তা নিরাময় করা সহজ হয়। কিন্তু এ রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রতিবছর বিদেশ থেকে আনা হয় বিভিন্ন কিট, যা অনেক ব্যয়বহুল। এসব দিক চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের প্যাথলজি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক এমদাদুল হক চৌধুরী উদ্ভাবন করেছেন মুরগির দুটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ সালমোনেলোসিস ও মাইকোপস্নাজমসিস নির্ণয়ের দেশি প্রযুক্তির কিট। এগুলো ব্যবহার করে খুব কম সময়ে সহজে ও অতি অল্প খরচে নিভর্ুলভাবে রোগ দুটি নির্ণয় করা সম্ভব।

সালমোনেলোসিস মুরগির ব্যাকটেরিয়াজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগে মুরগির মৃতু্যর হার বেশি এবং মুরগির ডিম ও মাংস উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যায়। ফলে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সালমোনেলা গোত্রভুক্ত বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বাংলাদেশে মূলত মুরগির হোয়াইট ব্যাসিলারি ডাইরিয়া বা পুলুরাম রোগ, ফাউল টাইফয়েড নামক রোগ হয়ে থাকে। প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিডএগেস্নাটিনেশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, এটেস্টে অনেক সময় ভুল ফলাফল পাওয়া যায়। তাছাড়া এ পরীক্ষাটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। নানা সমস্যার কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ অতি সহজে স্বল্প খরচে এবং নিভর্ুলভাবে রোগ সনাক্তকরণের জন্য "BUA Path S-antigen kit" উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে সালমোনেলুসিস রোগটি নির্ভুলভাবে সনাক্ত করা যাবে।

মাইকোপস্নাজমসিস মুরগির আরেকটি মাইকোপস্নাজমাজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগেও খামারিরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাইকোপস্নাজমা গোত্রভুক্ত চার ধরনের প্রজাতি দ্বারা মুরগি, তিতির ও অন্যান্য পাখির এ রোগ দেখা দেয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য র্যাপিডএগেস্নাটিশন টেস্ট ব্যবহার করা হয়, যা আমদানি নির্ভর এবং তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। এ কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ স্বল্প খরচে এবং নিভর্ুলভাবে রোগ সনাক্তকরণের জন্য "BAU Path Mg-antigen kit" উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে মাইকোপেস্নাজমসিস রোগটি নিভর্ুলভাবে সনাক্ত করা সম্ভব।

"BUA Path S-antigen kit""BAU Path Mg-antigen kit"এর সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রণালীর স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সালমোনিলা ও মাইকোপস্নাজমা হতে প্রস্তুতকৃত এন্টিজেনটি ৪০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। পরীক্ষাটি সম্পন্নের জন্য অতিরিক্ত হিসেবে গস্নাস সস্নাইড, ড্রপার, সন্দেহযুক্ত মুরগির রক্তরস প্রয়োজন হয়। সস্নাইডের উপর বিশ মাইক্রোলিটার এন্টিজেন ("BAU Path Mg-antigen kit") এবং সমপরিমাণ রক্তরস মেশানোর ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে খালি চোখে সুস্পষ্ট দানার উপস্থিতি দেখে রোগটি উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যায়। এখানে উলেস্নখ্য যে, রক্তরস ও এন্টিজেন মেশানোর এক মিনিটের অধিকাল অপেক্ষা করলে ভুল ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেবলমাত্র এক মিনিটের মধ্যে সৃষ্ট দানা রোগটির উপস্থিতি নিশ্চিত করে।

বর্তমানে বাজারে প্রচলিত কিটগুলো আমদানি নির্ভর ব্যয়বহুল এবং এই কিটগুলোর ব্যবহার কালে গাঢ় নীল রঙয়ের দ্রবণের মধ্যে অস্পষ্ট নীল দানা সৃষ্টি হয় বলে রোগ সনাক্তকরণে জটিলতার সৃষ্টি হয়। অথচ উদ্ভাবিত কিটটি ব্যবহার করলে সস্নাইডে গোলাপী রঙয়ের দ্রবণের মধ্যে সুস্পষ্ট লালদানা সৃষ্টি হয় যা সহজেই খালি চোখে দেখা যায়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগ উদ্ভাবিত "BUA Path S-antigen kit" ও "BAU Path Mg-antigen kit" কিট দুটি মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা গেলে একদিকে রোগটি স্বল্প খরচে দ্রুততার সাথে সনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে, অপরদিকে খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।

আব্দুস সালাম সাগর, ছাত্র, বাকৃবি, ময়মনসিংহ
Source: Daily Ittefaq

Saturday, November 13, 2010

বিদ্যুৎ মানব

বিদ্যুৎ মানবরাস্তায় গাড়ির চাপ থেকে বিদ্যুৎ, হস্তচালিত বৈদ্যুতিক বাতি, আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ, খেলনা গাড়ি, সেমি-অটোরিকশা_সব মিলিয়ে প্রায় ৩০টি আবিষ্কার আছে তাঁর ঝুলিতে। গবেষকের নাম এইচ এম ওয়াহিদুজ্জামান বাচ্চু। সম্ভাবনাময় এই গবেষকের উদ্ভাবনগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন সমুদ্র সৈকত বলিউডের 'তারে জামিন পার' ছবির ছোট্ট দারশিলের কথা মনে আছে? তার মতোই ডানপিটে ছিলেন বাচ্চু। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময়ই পাঁচ চাকার ইলেকট্রিক খেলনা গাড়ি বানিয়ে বন্ধুদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। শিক্ষকদের বাহবাও পেয়েছিলেন বেশ। স্কুল পালিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরেফিরে খুঁজে বেড়াতে লাগলেন ফেলে দেওয়া ব্যাটারি, টিনের কৌটা, ভাঙা চুম্বক, পেরেক ও বিদ্যুতের তার। বাসায় এনে নাড়াচাড়া করতে করতেই তৈরি করেছেন কত কী। স্কুলের গণ্ডি আর টানল না তাঁকে। এসএসসি পর্যন্ত পড়েই ঢুকে পড়লেন নিজের জগতে। এরপর কেটে গেল কয়েক দশক।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞানের ওপর পড়াশোনা না থাকলেও বই পড়েই শিখেছেন বিজ্ঞানের সাধারণ বিষয়গুলো। তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন 'ওয়াহিদ ল্যাব'। যে গবেষণাগার দেখতে এখনো স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসেন বাঘা বাঘা শিক্ষকরাও।

রাস্তায় বিদ্যুৎ
রাস্তায় গাড়ি চলবে, আর সেই গাড়ির চাপে তৈরি হবে বিদ্যুৎ। প্রযুক্তির নাম_'ওয়াহিদ পাওয়ার এনজি-৪'। এটি পুরোপুরি চাপের ওপর নির্ভরশীল। উদ্ভাবক ওয়াহিদুজ্জামান জানান, এক হাজার কিলোওয়াট বা এক মেগাওয়াটের প্রতিটি পাওয়ার প্ল্যান্টের দৈর্ঘ্য হবে ৫০ মিটার এবং প্রস্থ ৩ মিটার। প্ল্যানটি তৈরি করতে হবে ইস্পাত দিয়ে। দেখতে অনেকটা বেইলি ব্রিজের মতো হবে। ব্যস্ত হাইওয়ের পাশে এই পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা যাবে। প্ল্যান্টের ওপর দিয়েই চলবে গাড়ি। এমন একটি এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার প্ল্যান্টে হারমোনিয়ামের মতো ৫০টি পাওয়ার বাটন থাকবে। এর ওপর দিয়ে গাড়ি চললে প্রতিটি বাটনে চাপ পড়বে এবং এতে করেই বিদ্যুৎ তৈরি হবে।
পাওয়ার প্ল্যান্টের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি গ্রিডে যুক্ত হবে না। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ব্যাটারিতে চার্জ করা বিদ্যুৎ দুই-তিন দফায় সাত থেকে আট ঘণ্টা পর পর গ্রিডে যুক্ত করতে হবে। আর এই প্ল্যান্ট স্থাপনে বিদেশি কারিগরি সহযোগিতাও লাগবে না।
২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে খণ্ড খণ্ড অথবা একত্রে এক কিলোমিটার লম্বা পাওয়ার প্ল্যান্ট বসাতে হবে। এই হিসাবে মাত্র ২৫ কিলোমিটার পাওয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে ওয়ানওয়ে ৫০০ মেগাওয়াট এবং টুওয়ে রাস্তায় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
ওয়াহিদুজ্জামান জানান, প্রতি এক মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে খরচ পড়বে প্রায় ৯ কোটি টাকা। চার-পাঁচ মেগাওয়াটে এ খরচ আনুপাতিক হারে কমে আসবে। এ প্রযুক্তির সুবিধা হলো, একবার স্থাপনের পর রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ কোনো খরচ নেই।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সিলিং ফ্যান
সৌরবিদ্যুতে চালানোর উপযোগী নতুন প্রযুক্তির সিলিং ফ্যান উদ্ভাবন করেছেন গবেষক ওয়াহিদুজ্জামান। এর মধ্যে ২৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের চার ব্লেডের দুটি ও ৩৬ ইঞ্চি ব্লেডের একটি মডেল তৈরি করেছেন। একটি ফ্যান চলবে মাত্র একটি এএ সাইজের ১ দশমিক ৫ ভোল্ট ব্যাটারিতে। তবে ১২ ভোল্ট প্রয়োগে আরো জোরে ঘুরবে পাখা। বিদ্যুৎ খরচ হবে ১৫ থেকে ২০ ওয়াট।

আবর্জনা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ
ধানের খড়, চিটা, তুষ, গমগাছ, মুগ-মসুর-খেসারি গাছের ডাল, আলুগাছ, কাঠের গুঁড়ো, আখের ছোবড়া, ডাব-নারিকেলের ছোবড়া এমনকি গোবরের চট-মুটিয়া প্রভৃতি বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সহজ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন এই গবেষক। নাম দিয়েছেন 'ওয়াহিদ পাওয়ার এনজি-৩'। গিয়ার, টারবাইন, বয়লার, জেনারেটর যুক্ত করে খুব সহজেই পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি সম্ভাব। ওয়াহিদুজ্জামান জানান, 'আমার মডেলটি বড় আকারে তৈরি করতে ২ দশমিক ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য খরচ পড়বে প্রায় ১৪ কোটি টাকা।

সেমি অটোরিকশা
আমাদের দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের চেয়ে চাহিদা অনেক গুণে বেশি। তাই প্রতিদিন পোহাতে হয় লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ। জানা যায় যে উৎপাদিত বিদ্যুতের ১৬ ভাগের এক ভাগ চলে যায় ব্যাটারিচালিত যানবাহন চার্জ করতে। শহর থেকে গ্রামে এখন অটোরিকশার ছড়াছড়ি। বৈধ ও অবৈধভাবে এসব যানবাহন চার্জ দিতে প্রতিদিন অপচয় হচ্ছে প্রচুর বিদ্যুৎ। প্রতিদিনের এই বিদ্যুৎ অপচয় বন্ধ করতে তাই উদ্ভাবক ওয়াহিদুজ্জামান গত ২৬ অক্টোবর তৈরি করেছেন সেমি অটোরিকশার মডেল। সাধারণ রিকশার চেন-গিয়ার-প্যাডেল ঘোরানোর মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুতে চলবে এই যান। এতে শক্তিও লাগবে কম। রিকশা চালাতে যানজটে আটকা পড়লে কিংবা অবসরে প্যাডেল ঘুরিয়ে ১২ ভোল্টের রিচার্জবেল ব্যাটারি চার্জ দেওয়া যাবে। পরে সুইচ টিপে চালানো যাবে রিকশা। এতে গতিও বাড়বে আনেকখানি। দামও থাকবে রিকশাওয়ালাদের সাধ্যের মধ্যে।

আরো আরো যন্ত্র
ওয়াহিদুজ্জামানের অন্যান্য উদ্ভাবনগুলো হলো_হাতে গিয়ার ঘুরিয়ে তৈরি বিদ্যুতে চলবে এমন টর্চ লাইট, টেবিল ল্যাম্প, 'অটো পাম্প কন্ট্রোলার-২', রিকশা ও ভ্যানের জন্য 'অটো হারিকেন', রিমোট কন্ট্রোলারচালিত রিচার্জেবল 'বেবি কার', এক ব্যাটারিচালিত 'বেবি ইউরিন এলার্ম' এবং 'ব্যাটারিচালিত বেশ কিছু খেলনা গাড়ি'। এছাড়া পানির কলে লাগিয়েছেন এমন সেন্সর, যাতে করে কলের নিচে হাত রাখলেই পড়বে পানি।

স্বপ্ন
এ উদ্ভাবক এখন কাজ করছেন 'ওয়াহিদ পাওয়ার টেকনোলজি (ওয়াহিদ ইঞ্জিন)' নিয়ে। এতে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ তৈরি হবে। এতে সামান্য চাপ প্রয়োগেই আশাতীত পরিমাণ বিদ্যুৎ তৈরি হবে বলে দাবি করছেন ওয়াহিদুজ্জামান।
ওয়াহিদুজ্জামান আরো জানান, পুঁথিগত বিদ্যার বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাধারণ সূত্রের মধ্যে কাজ করছেন না তিনি। তবে তাত্তি্বকভাবে যে সফলতা এতে পেয়েছেন তাতেও যথেষ্ট আশাবাদী।
এ কাজে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ওয়াহিদুজ্জামানের সঙ্গে একটি প্রতিষ্ঠানের আলাপ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সহায়তা পেলে যে তিনি আরো এগিয়ে যাবেন, তা তার 'ওয়াহিদ ল্যাব' ঘুরে এলেই বোঝা যাবে।

Friday, November 12, 2010

সিরাজগঞ্জে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দেশীয় পাওয়ারলুম

সিরাজগঞ্জে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দেশীয় পাওয়ারলুম

এনায়েতপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
বিদেশ থেকে আমদানি করা যানবাহন টেম্পোর মতো স্থানীয়ভাবে তৈরি হচ্ছে সহজলভ্য টেম্পো, যা দেশজুড়ে নসিমন নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ঠিক একই ধরনের লোহার তৈরি ভারী পাওয়ারলুমের আদলে এখন কাঠের তৈরি বিদ্যুত্চালিত পাওয়ারলুম উদ্ভাবন করেছেন সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ এনায়েতপুরের ক্ষুদ্র তাঁতিরা। এর নামও দেয়া হয়েছে নসিমন পাওয়ারলুম। তাই বিদেশ থেকে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে বিদ্যুত্চালিত পাওয়ারলুম বাংলাদেশী শিল্প উদ্যোক্তাদের আর কষ্ট করে আনতে হবে না। স্বল্প অর্থ ব্যয়ে সহজলভ্য নতুন উদ্ভাবিত এই তাঁতে শ্রমিকরা আগের মতো একটি তাঁতে নয়, এখন শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই কাজ করছেন একসঙ্গে দুটি তাঁতে। যে কারণে বিদেশি পাওয়ারলুমের মতো উত্পাদিত হচ্ছে দ্বিগুণ কাপড়। তাই তারা পাচ্ছেন বাড়তি মজুরি এবং মালিকরাও হচ্ছেন লাভবান। এক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা পেলে দিন বদল হবে দেশের লাখো দরিদ্র তাঁতির।
এনায়েতপুর থানার খুকনী, রূপনাই, গোপালপুর, বেতিল, খামারগ্রাম, গোপরেখী, আজগড়া, মাধবপুর, শীবপুর, গোপীনাথপুর এবং চৌহালী উপজেলার জোতপাড়া, খাসপুকুরিয়া, রেহাই পুকুরিয়ায় প্রায় ৫০ হাজার তাঁত হস্তচালিত এবং বিদ্যুত্চালিত পাওয়ারলুম রয়েছে। প্রযুক্তিগত কারণে বেশি কাপড় উত্পাদনের লক্ষ্যে গত ৮ থেকে ১০ বছর আগে বিদ্যুত্চালিত পাওয়ারলুম এ অঞ্চলে প্রথম নিয়ে আসা হয়। এ তাঁত বিদ্যুতের সাহায্যে চলে বলে শ্রমিকদের তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। আর দেশীয় হস্তচালিত তাঁতের চেয়ে কাপড়ও হয় দ্বিগুণ। এই পাওয়ারলুম সম্পূর্ণ লোহা দিয়ে তৈরি বলে ওজন প্রায় ১ টন। আর একেকটি তাঁতের মূল্য প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা, যা ক্ষুদ্র তাঁতিদের পক্ষে ক্রয় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এনায়েতপুর থানার গোপালপুর গ্রামের ক্ষুদ্র তাঁতি বাবুল হোসেন চেষ্টা করে কীভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে কাঠের তৈরি হ্যান্ডলুম তাঁতকে বিদেশি পাওয়ারলুমে পরিণত করা যায়। বেশ কিছুদিন চেষ্টার পর গত ছয় মাস আগে তিনি তৈরি করতে সক্ষম হন কাঠ দিয়ে বিদ্যুত্চালিত পাওয়ারলুমে শাড়ি-লুঙ্গি উত্পাদন করতে। হস্তচালিত কাঠের তাঁত পাওয়ারলুমে রূপান্তর করার আগে তাঁতের ডান পাশের ওপরে বসানো হয় একটি মোটর। নিচে লোহার চাকার সঙ্গে একটি মোটা ফিতা দিয়ে ওই মোটরের সঙ্গে লাগানো হয়। এরপর তার দিয়ে কানেকশন দেয়ার পর তাঁতের পাশে সুইচ লগিয়ে করা হয় পাওয়ারলুম। নতুন উদ্ভাবিত পাওয়ারলুমের ওজন প্রায় ৮ থেকে ১০ মণ। আর তা তৈরিতে খরচ হয় মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বলে উদ্ভাবনকারী বাবুল হোসেন জানান। তিনি আরও জানান, তার উদ্ভাবিত কাঠের পাওয়ারলুম এখন সব থানাজুড়ে।

Source: Daily Amardesh

সিরাজগঞ্জে তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের পাওয়ার লুম যন্ত্রাংশ

০০ ফজল-এ-খোদা লিটন,সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা

সিরাজগঞ্জের এক নিভৃত পলস্নীতে তৈরী হচ্ছে বিশ্বমানের পাওয়ারলুম যন্ত্রাংশ। দেশের দ্রুত বর্ধনশীল বস্ত্রখাতের পাওয়ারলুমের সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠার এটি এক অনন্য উদ্যোগ। সাউথ এশিয়ান হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ বস্ত্রখাতের পাওয়ারলুম শিল্পের বিকাশে শাটেল-পিকার ও ওয়ারাইন্টেডসহ আন্তর্জাতিকমানের যন্ত্রাংশগুলো এখন নিজেরাই তৈরি করছে। এই অনন্য উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলার তামাই গ্রামে।

জানা গেছে, তাঁতশিল্প বিকাশের এক সহায়ক শিল্প গড়ে ওঠায় দেশের হাজার হাজার তাঁতীরা এ সকল যন্ত্রাংশ সহজেই স্বল্প মূল্যে ক্রয় করতে পারছেন। যেখানে কোরিয়ার শাটেল ৭০০ টাকা, সিরাজগঞ্জে তৈরি একপিচ টি.এস-৭ শাটেল ৪৫০ দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় তৈরি গস্নাস ফাইবার শাটেল কোরিয়ার শাটেলের চেয়েও অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন কিন্তু দামে কোরিয়ার তৈরী শাটেলের চেয়ে ২০০ টাকা কম। এখন সুনামের সঙ্গে তাদের উৎপাদিত যন্ত্রাংশগুলি বিদেশী যন্ত্রাংশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে একের পর এক অভ্যন্তরীণ বাজার দখল করছে। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানী করার মত পুঁজি না থাকায় মাসে প্রায় ৩ হাজার শাটেল তৈরি করা হচ্ছে। তারা জানান, অল্প কিছুদিনের মধ্যে উৎপাদন বাড়িয়ে খুব শীঘ্রই এই যন্ত্রাংশগুলো পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি করা হবে । সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশে উৎপাদিত এই যন্ত্রাংশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে বিপুল টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে সক্ষম হবে।

জানা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে তামাই গ্রামে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পাওয়ারলুম যন্ত্রাংশ তৈরি শুরু হয়। এদের গস্নাস ফাইবার মিশ্রিত ইঞ্জিনিয়ারিং পলিমার ও পাল্প সংযুক্ত সিনথেটিক রেজিনের সংমিশ্রণে তৈরি যন্ত্রাংশগুলো পাওয়ারলুম শিল্পের বিকাশে এক নব দিগন্তের সৃষ্টি করেছে। উদ্যোক্তারা জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এগুলো দেশীয় তাঁতশিল্পের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে জানা গেছে। তারা জানান, ইন্দোনেশিয়ায় ও পাকিস্তানে কয়েকশ' কোটি টাকার যন্ত্রাংশ রপ্তানির সুযোগ পেয়েও সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

জানা যায়, প্রায় এক যুগে পাওয়ারলুম শিল্পের প্রসার ঘটায় শুধু নরসিংদী জেলায় প্রায় ৩ লাখ পাওয়ারলুম রয়েছে। এছাড়াও সমপ্রতি সিরাজগঞ্জে প্রায় ৪০ হাজার আধুনিক পাওয়ারলুম স্থাপিত হয়েছে। এ হিসেব সারা দেশের প্রায় ৪ লাখ পাওয়ারলুমের জন্য দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ আমদানী করতে হয় বলে আমদানীকারকরা জানান। বর্তমানে এগুলোর অধিকাংশই কোরিয়া, চীন ও ভারত থেকে আমদানী হয়ে আসছে। এই যন্ত্রাংশ তৈরির অন্যতম উদ্যোক্তা সিরাজগঞ্জের মোসলেহউদ্দিন আহমেদ মন্টুর। ১৯৯৬ সনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক মিটিংয়ে পরিচয় হয় পোলান্ডের ওয়ার'শ ইউনিভার্সিটির পলিমার ডিভিশনের বিভাগীয় প্রধান মিঃ মিসতেরেকের সাথে। এ পস্নাষ্টিক শিল্পে তেরেসের সহযোগিতায় তিনি কমপ্রেশন মোল্ডিং পদ্ধতিতে টেক্সটাইল যন্ত্রাংশ তৈরির ধারণা এদেশে প্রথম চালু করেন। নিজের সীমিত অর্থ এবং একটি ক্ষুদ্র শিল্পে অর্থ সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ নিয়ে তিনি এ বিষয়ে বছরের বছর পর গবেষণা করতে থাকেন। ২০০৭ সালে তিনি সাউথ এশিয়ান হাইটেক শাটেল ইন্ডাস্ট্রিজ স্থাপন করে । তিনি ৪ বছর প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি বিরাট দক্ষ কারিগর বাহিনী গড়ে তুলেছেন। এ নিয়ে সরেজমিন তাঁত শিল্প মালিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, সিরাজগঞ্জের তৈরি শাটেল, পিকার ও অন্যান্য যন্ত্রাংশা মানসম্মত ও টেকসই। বিদেশী যন্ত্রাংশের চেয়ে এগুলোর দাম কম হওয়ায় তাঁত শিল্প বিকাশে খুবই সহায়ক হচ্ছে। ঢাকার নবাবপুরের বিশিষ্ট আমদানীকারক খান ট্রেডিং কোম্পানীর মালিক নুরুল ইসলাম জানান, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হওয়ায় সিরাজগঞ্জের তৈরি যন্ত্রাংশই এখন বাইরের দেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
Daily Ittefaq, 12th January

Wednesday, November 10, 2010

উখিয়ার ঘুনধুমে আরেকটি কুমির চাষ প্রকল্প

উখিয়ার ঘুনধুমে আরেকটি কুমির চাষ প্রকল্প

০০ উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদতা

কক্সবাজারের উখিয়া ঘুনধুমে পাহাড়ী এলাকায় বাস্তবায়ন হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কুমির প্রজনন কেন্দ । প্রায় ২৫একর সরকারি বনভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ কুমির চাষ প্রকল্পের কাজ পূর্ণ উদ্যমে শুরু হলে আগামী ১০বছর পরে হাজার কোটি টাকা আয়করা সম্ভব হবে বলে সংশিস্নষ্টরা মনে করছেন। কুমির চাষ প্রকল্পকে ঘিরে ৫একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটন স্পট। প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ কুমির চাষ প্রকল্প দেখার জন্য ভীড় করতে দেখা গেছে। জানা গেছে, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের টেলিভিশন রিলে কেন্দ থেকে ১কিঃমিঃ অদূরে ঘুনধুম সীমান্ত এলাকায় সরকারি পরিত্যক্ত বনভূমির ৩০একর জায়গা বন্দোবস্তী গ্রহণ করে আকিজ গ্রুপ। ২০০৯ সালে কুমির চাষ প্রকল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ শুরু করে ৩শতাধিক কুমির বসবাসের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে। চলতি বছরের আগস্ট মাসে মালেশিয়া থেকে আমদানি করা ৫০টি মেইল-ফিমেইল কুমির উক্ত খামারে অবমুক্ত করে। এর আগে বিশেষজ্ঞ কুমির পরিবেশ সম্মত বসবাসের সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। এরি মধ্যে অজ্ঞাত কারণবসত একটি কুমির মারা গেলেও ৪৯টি কুমির জীবিত রয়েছে।

প্রকল্পের ব্যবস্থাপক হাসান জাহেদ বলেন, ৩১ ফিমেইল কুমির আগামী মে, জুন, জুলাই-এ ডিম ছাড়বে। প্রতিটি কুমির এসময় ৫০/৫৫টি পর্যন্ত ডিম দেবে। তিনি বলেন, মালেশিয়া থেকে আমদানি করা একটি কুমিরের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ টাকা। এক বছর লালন-পালন করার পর একটি কুমির থেকে আয় হবে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। এখামারে আরো ২৫০টি কুমির অবমুক্ত করার পর কুমির চাষ প্রকল্পে পূর্ণতা আসবে। আগামী ১০বছর পরে এ কুমির চাষ প্রকল্প থেকে হাজার-কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। একজন বিদেশী কুমির বিশেষজ্ঞ ও ১৬জন কর্মচারী দিয়ে পরিচালিত এ কুমির চাষ প্রকল্পে একটি মেইল ও একটি ফিমেইল কুমিরকে একত্রে খাঁচাবন্দি করে রাখা হয়েছে।

এ ভাবে ১০জোড়া কুমিরকে খাঁচাবন্দি রাখা হলেও বাকি কুমিরগুলোকে পাহাড়ের পাদদেশে বিকল্প তৈরি উম্মুক্ত জলাশয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে ৩কেজি মাংস একটি কুমিরের খাবার হিসাবে সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। কুমির চাষ প্রকল্পকে ঘিরে ৫একর জায়গার উপর গড়ে তোলা হচ্ছে পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্র, কটেজ ও বিনোদন কেন্দ । পর্যটন স্পটের উন্নয়ন কাজ অতি শিঘ্রই সম্পন্ন করা হবে বলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন।
Source: Daily Ittefaq

Monday, November 8, 2010

বিদ্যুৎ ছাড়াই হিমাগার!

বিদ্যুৎ ছাড়াই হিমাগার! বিদ্যুতের অভাবে প্রতিবছরই পচে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ ফসল, শাকসবজি ও ফল। আর এ ভাবনা থেকেই স্বল্পব্যয়ে চমৎকার একটি হিমাগার তৈরি করেছেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের তরুণ গবেষক সহকারী অধ্যাপক পারভেজ ইসলাম। তাঁর আবিষ্কৃত হিমাগারে সবজি ঠাণ্ডা রাখতে লাগবে না কোনো বিদ্যুৎ! বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিস্তারিত জানাচ্ছেন তাওহিদুল ইসলাম-
এ বছরের প্রথমদিকে বিদ্যুৎ ছাড়াই হিমাগার তৈরি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন পারভেজ ইসলাম। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন 'পদক্ষেপ' মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের কৃষি ও পরিবেশ বিভাগের পরিচালক ড. শেখ তানভীর হোসেন এবং একই বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার (হর্টিকালচার) সালমা আক্তার। গবেষণা চলতে থাকে ঢাকার অদূরে গাজীপুরের ভবানীপুরের পদক্ষেপ নার্সারি ও হর্টিকালচার সেন্টারে। পরীক্ষামূলকভাবে সেখানে একটি শীতলীকরণ চেম্বার তৈরি করা হয়। দীর্ঘদিনের পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল পান তাঁরা। প্রাকৃতিক পরিবেশে বিদ্যুৎহীন হিমাগার তৈরির আগাগোড়া পদ্ধতি জানালেন পারভেজ ইসলাম। প্রথমে ৯০ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত করে ইট দিয়ে আয়তকার (দৈর্ঘ্য ১৬৫ সেন্টিমিটার ও প্রস্থ ১১৫ সেন্টিমিটার) একটি মেঝে তৈরি করতে হবে। মেঝের চারপাশে তৈরি করতে হবে দুই স্তর দেয়াল। স্তর দুটির মধ্যে পাঁচ ইঞ্চি ফাঁকা থাকবে। ফাঁকা স্থানটি ছোট ছোট পাথরের টুকরো ও মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে। অবশিষ্ট ফাঁকা স্থানটুকু নদীর ভেজা বালু দিয়ে পূর্ণ করে দিতে হবে। চেম্বার ঢেকে রাখতে ব্যবহার করতে হবে বাঁশের তৈরি ঢাকনা। এরপর শুকনো খড় অথবা গোলপাতা দিয়ে কক্ষটির চারপাশে একটি দোচালা ছাউনি বানাতে হবে, যাতে সূর্যের আলো সরাসরি পড়তে না পারে। এরপর দুই দেয়ালের মাঝে রাখা বালিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি দিতে হবে। এ কাজে কক্ষ থেকে সামান্য উঁচু স্থানে একটি ঢাকনাযুক্ত ড্রাম রাখতে হবে। ওই ড্রামের সঙ্গে যুক্ত পাইপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে পানি সরবরাহ করতে হবে। এতে দুই দেয়ালের মাঝের বালি সব সময় ভেজা থাকবে। ওই বালি বাইরের তাপ ভেতরে ঢুকতে দেবে না, আবার ভেতরের তাপ বাইরেও আসতে দেবে না।
পারভেজ জানালেন, কক্ষের ভেতরের ও বাইরের তাপমাত্রায় প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো পার্থক্য থাকে। কক্ষের আর্দ্রতাও থাকে বেশি। ফলে শাকসবজি ও ফলমূল অনেকদিন সতেজ থাকে। একটি শীতলীকরণ চেম্বার তৈরির খরচ প্রায় ছয় হাজার টাকা। যাতে প্রায় ২০০ কেজি সবজি রাখা যাবে। প্রতিটি কক্ষের স্থায়িত্বকাল কমপক্ষে পাঁচ বছর।
এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রীষ্মকালে ঢেঁড়শ, বেগুন, মরিচ, পটল, টমেটো, করলা ও সজিনা সংরক্ষণের সময়কাল ৮-১০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে জানান পারভেজ ইসলাম। দেখা গেছে, শীতকালে এ সময়কাল প্রায় দ্বিগুণ হয়।
এ পদ্ধতিতে দেশীয় ফুলও সংরক্ষণ করা যাবে বলে মনে করেন তিনি। এ প্রযুক্তির সম্প্রসারণে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন পারভেজ ইসলাম।
 

Sunday, November 7, 2010

ফিশ ফিডের দাম বাড়ছে : মত্স্য বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনে ফলন হবে তিনগুণ

ফিশ ফিডের দাম বাড়ছে : মত্স্য বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনে ফলন হবে তিনগুণ

মো. আরিফুল হক
বর্তমানে মাছের খাবারের মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা লাভবান হতে পারছেন না। এ দিক বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। তেমনি একটি উদ্ভাবন হলো পেরিফাইটন, যা মত্স্য উত্পাদনকে করেছে দুই থেকে তিন গুণ। অথচ খরচ খুবই কম। সাধারণ খামারিরা সহজেই এ পদ্ধতিতে চাষ করতে পারেন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সহজ স্বল্পব্যয়ের কারণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও হাতিয়ে নিচ্ছে দেশীয় উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তিটি। দীর্ঘ সময় গবেষণা পেরিফাইটন পদ্ধতিতে মত্স্য চাষের এ প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছেন দেশের খ্যাতনামা মাত্স্যবিজ্ঞানী ও ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল ওহাব।
প্রধান গবেষক ড. ওহাব বলেন, স্বল্পমূল্যে এবং অল্প জমিতে অধিক মত্স্য উত্পাদনের মাধ্যমে জনগণের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদে শুরু হয় গবেষণা। যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড ও ভারতীয় বিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্যোগে ‘পেরিফাইটন-ভিত্তিক মাছ চাষ’ প্রকল্পের আওতায় গবেষণা শুরুর দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছর পর এ কাজে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন।
তিনি বলেন, পেরিফাইটন এক ধরনের শৈবাল, যা মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন জলজ জীব-অণুজীবের জটিল মিশ্রণ এই পেরিফাইটন, যা জলাশয়ের পানিতে অবস্থিত কোনো কিছুর গায়ে লেগে থাকে। এসব জীব-অণুজীবের মধ্যে রয়েছে—ব্যাকটেরিয়া, এককোষী প্রাণী, ছত্রাক, ফাইটোপ্লাংটন, জুপ্লাংটনসহ বিভিন্ন তলদেশীয় ও অমেরুদণ্ডি প্রাণী। পেরিফাইটন বিভিন্ন মত্স্যকুলকে শুধু আকৃষ্টই করে না বরং এসব অণুজীব মাছ ও চিংড়ি জাতীয় মাছের খুবই প্রিয় এবং পুষ্টিকর খাবারও বটে। সাধারণত যেসব মাছ গ্রেজিং বা কোনো কিছুর সঙ্গে লেগে থাকা খাবার চেঁছে খায় সেসব মাছই পেরিফাইটন পদ্ধতিতে চাষের জন্য উপযোগী। দেশীয় মত্স্য প্রজাতির মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশসহ তেলাপিয়া ও চিংড়ি পেরিফাইটন পদ্ধতিতে চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
পেরিফাইটন এক ধরনের শৈবাল হলেও সাধারণ পানিতে এবং সব পরিবেশে এটা জন্মায় না। সাবস্ট্রেট বা ভিত্তিমূলের ওপর পেরিফাইটন জন্মে থাকে। এক্ষেত্রে হিজল ডাল সবচেয়ে উপযোগী। তবে বাঁশ, কঞ্চি, শেওড়া ইত্যাদি গাছের ডাল এমনকি পাটের খড়ি, গ্লাস রড, প্লাস্টিক দণ্ডও ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব ডালপালা পুকুরজুড়ে বা ধান ক্ষেতের কোণে পুঁতে রাখলে তাতেই ওই শৈবাল জাতীয় জুপ্লাংটন বা ফাইটোপ্লাংটন জন্মে থাকে এবং সবুজাভ রংয়ের একটি আস্তরণ পড়ে। এছাড়া অন্যান্য প্রাণিজ খাবারও তৈরি হয়। ওইসব ডালপালার ওপর জন্মানো আস্তরণ বা শৈবালই পেরিফাইটন, যা মাছের প্রিয় খাবার। খাবার প্রয়োগের বাড়তি খরচ লাগে না বিধায় গরিব খামারিদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। একই পুকুরে একই বাঁশ বা কঞ্চি প্রায় তিন বছর ব্যবহার করা যায়। অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে মাছের বৃদ্ধির তুলনায় পেরিফাইটন প্রযুক্তিটি অত্যন্ত পরিবেশবান্ধবও বটে।
পেরিফাইটন পদ্ধতিতে রুই মাছের উত্পাদন হেক্টরপ্রতি ১৯০০ কেজি সম্ভব। যেখান স্বাভাবিক পদ্ধতিতে উত্পাদন হেক্টরপ্রতি ১০০০ কেজিরও কম। এছাড়া তেলাপিয়া-চিংড়ি মিশ্রচাষে ১৪৫ দিনে সর্বোচ্চ মোট উত্পাদন হেক্টরপ্রতি ২৪৪৫ কেজি তেলাপিয়া এবং ১৪১ কেজি চিংড়ি পাওয়া গেছে।
গবেষক ড. ওহাব বলেন, পরিবেশবান্ধব, ব্যয়স্বল্পতা এবং সহজে সম্পাদনযোগ্য প্রযুক্তিটি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বর্তমানে বিদেশের মাটিতেও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, হাইতি, ইসরাইল, ঘানাসহ বেশ কয়েকটি দেশে পরীক্ষামূলক ব্যবহারও চলছে। তবে সম্প্রসারণ সুবিধার অভাবে দেশের অনেক স্থানেই যথেষ্ট সম্ভাবনাময় এ প্রযুক্তিটির ব্যবহার জানেন না অনেক খামারি। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সক্রিয় ভূমিকা রাখা দরকার বলে মনে করেন ড. ওহাব।

Source: Daily Amardesh

পর্যটন শিল্পে নতুন সংযোজন : বান্দরবানের মেঘলায় কেবল কার উদ্বোধন

পর্যটন শিল্পে নতুন সংযোজন : বান্দরবানের মেঘলায় কেবল কার উদ্বোধন

এমএ মালেক, বান্দরবান
বান্দরবানে গতকাল মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে সম্পূর্ণ দেশি প্রযুক্তিতে সংযোজিত হলো কেবল কার। ফলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হলো। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান ও বান্দরবানের এমপি বীর বাহাদুর এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ কেবল কারের উদ্বোধন করেন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল বিকালে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠান জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার শাহ আতিকুর রহমান পিএসসি, জেলা জজ আবু কাউসার, পুলিশ সুপার কামরুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক
সোহেল ইমাম। প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসন পরিচালিত মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সে এ কেবল কার স্থাপন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বান্দরবানের মেঘলায় প্রথম কেবল কার উদ্বোধনের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের নতুন মাত্রা সংযোজন হলো। এর মাধ্যমে পার্বত্য বান্দরবান জেলা পর্যটন শিল্পে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। এতে চড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
Source: Daily Amardesh

Saturday, November 6, 2010

ডুবে যাওয়া জাহাজ উত্তোলনের সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন

ডুবে যাওয়া জাহাজ উত্তোলনের সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন

০০ বরিশাল অফিস

দুর্ঘটনাকবলিত যে কোন ওজনের জাহাজ পানির তলদেশ থেকে উত্তোলনের সহজ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন নগরীর পূর্ব হরিনাফুলিয়ার বাসিন্দা বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য তোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী। তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বুয়েটের পরীক্ষায় সফলতা পেয়েছে।

এক হিসেবে দেখা যায় দশ বছরে দেশে ১৮৬টি নৌ দুর্ঘটনা ঘটলেও উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তুম ও হামজা'র উত্তোলন ক্ষমতার চেয়ে ডুবন্ত জাহাজের ওজন ১০ গুণ বেশি হওয়ায় বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এতে করে জ্বালানি তেল ও জনবল বাবদ সরকারকে কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। বর্তমানেও দুর্বল ঐ জাহাজের পিছনে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

দেশের দু'টি উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তুম ও হামজার উত্তোলন ক্ষমতা মাত্র ৬০ টন। বর্তমানে দেশে ৫/৭শ' টন ওজনের জাহাজ তৈরি হচ্ছে। সরকারই তা তৈরিতে অনুমতি দিচ্ছে। অথচ দুর্ঘটনাকবলিত হলে কিভাবে জাহাজ উত্তোলন করা হবে সে ব্যাপারে স্বাধীনতা পরবর্তী কোন সরকার মাথা ঘামায়নি। রাজনৈতিক সরকারগুলোর একই কথা দাতা গোষ্ঠী না পাওয়া গেলে বিদেশ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ আনা সম্ভব নয়।

১৯৯১ সালে ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী ১৭০ টন ওজনের সামাদ লঞ্চ কীর্তনখোলা নদীতে ডুবে যায়। উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তুম ও হামজা দিয়ে তা তোলা সম্ভব হয়নি। এরপর থেকে বিমান বাহিনীর নন কমিশন লিডিং এ্যায়ারক্রাফট ম্যান তোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী এ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণায় তিনি সফলও হন। কিন্তু আর্থিক দৈন্যতার কারণে তিনি বেশিদূর এগোতে পারেননি।

তিনি ইত্তেফাককে জানান, ডুবন্ত জাহাজ উত্তোলনে তার গবেষণালব্ধ বিষয়টি কাজে লাগালে যে কোন ওজনের জাহাজ মহাসাগর, সাগর ও নদীর তলদেশ থেকে উত্তোলন সম্ভব। তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিকে তিনি ৩টি ভাগে ভাগ করেছেন। সাড়ে ১১শত টন ওজনের জাহাজ উত্তোলনের জন্য তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি তৈরিতে ব্যয় হবে ৭৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ৭ হাজার ৮৫০ টন ওজনের জাহাজ উত্তোলনের জন্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ৭৮ হাজার ৫শ' টন ওজনের নৌযানের জন্য ৭৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বাংলাদেশে প্রাপ্য কাচামাল দিয়ে তৈরি করা যাবে তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সপ্তাহখানেকের মধ্যে ডুবন্ত নৌযানকে পানিতে ভাসানো সম্ভব হবে।

তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে ডুবন্ত নৌযান তুলতে হলে লঞ্চ তৈরির সময় বডির দু'পাশে শক্ত লোহার পিলার এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে জাহাজ ডুবে গেলেও ঐ পিলার কাজে লাগানো যায়। ডুবে গেলে ঐ লোহার পিলারের সাথে ব্যবহার করা হবে পানি ভর্তি স্টিলের সিলিন্ডার। ঐ সিলিন্ডার ডুবন্ত নৌযানের দুপাশে চেইন দিয়ে আটকে দেয়া হবে। সিলিন্ডারগুলো এমনভাবে তৈরি করা হবে যাতে করে তার ভিতরে পানি প্রবেশ ও বের করা যায়। গোলাকার সিলিন্ডারটি হবে ১ হাজার মিটার লম্বা এবং ব্যাস হবে ১০ মিটার। সিলিন্ডারের ভিতর থেকে পানি বের করার জন্য কমপ্রেসার মেশিন এবং পানির উপর থেকে ডুবন্ত নৌযান পর্যন্ত পাইপ দেয়া থাকবে। এ জন্য প্রয়োজন হবে প্রশিক্ষণরত ডুবুরি।

ডুবন্ত নৌযানে সিলিন্ডার বেঁধে পানি বের করার সাথে সাথে প্রবল বেগে সিলিন্ডার ভেসে উঠবে সাথে সাথে নৌযানটিও ভেসে উঠবে। এতে সমস্ত নৌযানটি পানির উপর ভেসে উঠবে না। নৌযানটি কাঁত হয়ে পড়তে পারে। সে জন্য তিনি আরো একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এক হাজার মিটার লম্বা ও ১০ মিটার প্রস্থের ৪টি এ্যাংগেলের সাথে সিলিন্ডার দেয়া থাকবে।

যা ডুবন্ত নৌযানের নিচে থাকবে। এতে নৌযানটিকে সম্পূর্ণরূপে ভেসে উঠতে সহায্য করবে। যা একটি ভাসমান ডকইয়ার্ডের কাজ করবে।

বিষয়টি উদ্ভাবনের পর তোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. মোঃ খোরশেদ এবং ন্যাভাল আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. সিদ্দিকুল বারীর সাথে দেখা করলে তাকে মডেল তৈরির নির্দেশ দেন। তিনি বিভিন্ন ডকইয়ার্ড ঘুরে একটি মডেল তৈরি করে বুয়েটে জমা দেন। সেখানকার পরীক্ষায় তার উদ্ভাবনী বিষয়টি সফলতা পায়। তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সরকারি কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন পেয়েছেন।

তোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরীর উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সফলতা পেয়েছে স্বীকার করে ড. বারী জানান, সমপ্রতি বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে তোফাজ্জেল চৌধুরীর আবিষ্কৃত পদ্ধতি সম্পর্কে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পোস্ট গ্রাজুয়েট লেকচার কক্ষে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনার শেষে ঐ পদ্ধতি বাস্তবায়নে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ঐ প্রকল্পের মাধ্যমে শীঘ্রই বুড়িগঙ্গা নদীতে আরো একটি পরীক্ষা চালানো হবে। 
Source: Daily Ittefaq, 25-10-10

কেঁচোসার উৎপাদনে নারীর সফল্য

কেঁচোসার উৎপাদনে নারীর সফল্য

গ্রামীণ দরিদ্র মহিলাদের আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি হিসেবে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সৈকারচরে প্রথম প্রতিষ্ঠা করা হয় কেঁচো কম্পোস্ট। এর আগে নরসিংদীতে ইউএনডিপি পরিচালিত রিওপা প্রকল্পের আওতায় স্বল্প পরিসরে কেঁচো সার উৎপাদন করা হলেও এ বছরের ১৩ জুন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক অমৃত বাড়ৈ ম্যাট-২ প্রকল্পের আওতায় সৈকারচরে এ কার্যক্রম শুরু করেন। জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে প্রায় ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সৈকারচরে ২১টি হাউসে কেঁচো সার তৈরির কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে রায়পুরা উপজেলার আদিয়াবাদ উত্তর পাড়ায় ২৫টি হাউস এবং আদিয়াবাদ কাশ্মীর পাড়ায় উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে ২৮টি হাউস তৈরি করে গ্রামীণ মহিলাদের নিয়ে কেঁচো কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন। এসব হাউসে কেঁচো দিয়ে সার তৈরি করতে ৪৫ দিন সময় লাগে। এভাবে একটি হাউসে বছরে ৬ বার কেঁচো সার তথা জৈব সার উৎপাদন করা যায়। সৈকারচরের ১ম ও ২য় দফায় উৎপাদনে সফলতা পাওয়ায় গত ১ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেছেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক অমৃত বাড়ৈ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান সৈকারচরের ২১টি হাউসে ২য় দফায় ২১০ কেজি কেঁচো ও সাড়ে ৮ মেট্রিক টন কেঁচোসার উৎপাদন করা হয়েছে। বর্তমান বাজার দরে প্রতি কেজি কোঁচোর দাম দেড় হাজার টাকা এবং প্রতি টন সারের দাম ১২ হাজার টাকা। এতে করে গ্রামীণ মহিলারা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনের সুযোগ পাচ্ছে কৃষকরা। এ সার প্রয়োগ করা হলে পরবতর্ী বছরের জন্য জমিতে ৬০% সার থেকে যায়। ফলে পরবর্তী বছর কেবলমাত্র ৪০% সার প্রয়োগ করলেই চলে। এ সারে

ইউরিয়া, পটাশসহ সব ধরনের সারের গুণাগুণ রয়েছে। এর ফলে নরসিংদী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ সারের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সার ও কেঁচো সরবরাহ করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়া হলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ভতর্ুকি দিয়ে সার উৎপাদন ও বিপণনের প্রক্রিয়া থেকেও রক্ষা পাবে সরকার। কিছুটা হলেও গ্যাস বিদু্যৎ সংকট দূর হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক জানান পর্যায়ক্রমে জেলার সবকটি উপজেলায় এ কার্যক্রম শুরু করা হবে। তাছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কেউ উদ্যোগ নিলে জেলা প্রশাসন সহযোগিতা প্রদান করবে বলে তিনি জানান।

নিবারণ রায়, নরসিংদী ও মোঃ জয়নুল আবেদীন রায়পুরা
Source: Daily Ittefaq

Friday, November 5, 2010

পোকা দমনে জৈব বালাই পদ্ধতি ব্যবহারে বদরগঞ্জে সবজির বাম্পার ফলন

পোকা দমনে জৈব বালাই পদ্ধতি ব্যবহারে বদরগঞ্জে সবজির বাম্পার ফলন

০০ বদরগঞ্জ (রংপুর) সংবাদদাতা

রংপুরের বদরগঞ্জের কৃষকরা সবজি ক্ষেতের পোকা দমনে জৈব বালাই পদ্ধতি ব্যবহার করে অধিক ফসল ঘরে তুলছেন। রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে ঐ পদ্ধতি ব্যবহার করে অল্প খরচে কৃষকরা সবজির বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন। বিশেষ করে লাউ, কুমড়া, শসা, ঝিঙ্গে ও বেগুন চাষে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যাচ্ছে।

উপজেলার কিসমত ঘাটাবিল মীরাপাড়া গ্রামের কৃষক জাহিদুল আলী তাঁর লাউ ক্ষেতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে লাউয়ের বাম্পার শসা, ফলিয়েছেন। তার লাউ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, সাদা স্বচ্ছ পস্নাষ্টিক বয়মের মাঝখানে কেটে দিয়েছেন, যাতে পোকা উড়ে গিয়ে সেখানে প্রবেশ করতে পারে। ঐ বয়মের নিচে দেয়া হয়েছে সাবানের ফেনাযুক্ত পানি। আর বয়মের ভিতরে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে 'লিউর'(সেক্স ফেরোমন ) যা দেখতে গাছের শিকড়ের মত। লিউরে রয়েছে স্ত্রী পোকার শরীরের গন্ধ। এ গন্ধের কারণে পুরুষ পোকা ক্ষেতে গিয়ে ফসলে বসার আগে লিউরের গন্ধে বয়মের ভিতরে প্রবেশ করে এবং সাবানযুক্ত পানিতে পড়ে মারা যায়।

কৃষক জাহিদুল আলী জানান, এই পদ্ধতিতে মাছিপোকা দমন করে তিনি লাউয়ের বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন। তিনি বলেন কীটনাশকের পরিবর্তে অল্প খরচে এই পদ্ধতিতে ফসলের ভাল ফলন হয় এবং পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জিয়াউল হক জানান, পরিবেশ বান্ধব 'লিউর' জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পোকা দমন পদ্ধতি ব্যবহার করে অল্প খরচে অধিক ফসল ফলানো যায়।
Source: Daily Ittefaq

Car will drive on both land and water


























Source: Daily Jugantor

Wednesday, November 3, 2010

পড়তে পারেন ইউনিভার্সিটি অব টোকিও-তে

পড়তে পারেন ইউনিভার্সিটি অব টোকিও-তে

সিরাজুল ইসলাম
দ্বিতীয় বৃহত্ অর্থনীতির দেশ জাপান। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা ও প্রযুক্তির দিক দিয়েও এর অবস্থান শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর প্রথম সারিতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী এখানে পড়ালেখা করছে। পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরিরও সুযোগ আছে। তবে তা অবশ্যই কর্তৃপক্ষের অনুমতিসাপেক্ষে। শিল্পোন্নত এই দেশটিতে আছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এদের কোনোটি সরকারি, আবার কোনোটি বেসরকারি। ইউনিভার্সিটি অব টোকিও দেশটির প্রথম সারির একটি সরকারি সমৃদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর অবস্থান বাঙ্কো এলাকায়। ১৮৭৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এর প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন জুনিচি হামারা। বিশ্বব্যাপী যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলা এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে এর যাত্রা শুরু হয়। এটি শুধু জাপান নয়, এশিয়ারও বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথমে এটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৮৮৬ সালে এর নাম বদলে ইমপেরিয়াল ইউনিভার্সিটি করা হয়। পরের বছর আরও অনেক বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নাম রাখা হয় ইউনিভার্সিটি অব টোকিও।
শিক্ষার্থী : এখানে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তাদের মধ্যে ১৪ হাজার ২৭৪ জন আন্ডার গ্র্যাজুয়েট, ১৩ হাজার ৭৩২ জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, ৬ হাজার ২২ জন ডক্টরাল ও ৭৪৭ জন বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করছে। এদের মধ্যে ২ হাজার ১শ’জন শিক্ষার্থী বিদেশি।
যেসব বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ আছে : এখানে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ল, মেডিসিন, ইঞ্জিনিয়ারিং, লেটারস, সায়েন্স, এগ্রিকালচার, ইকোনমিকস, আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স, এডুকেশন, ফার্মাসিউটিক্যালস সায়েন্স, হিস্টোরি ও এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ। গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে পড়াশোনা করা যাবে হিউম্যানিটিস অ্যান্ড সোসলজি, এডুকেশন, ল অ্যান্ড পলিটিক্স, ইকনোমিকস, আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স, সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড লাইফ সায়েন্স, মেডিসিন, ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স, ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্স, ফ্রন্টায়ার সায়েন্স, ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইন্টারডিসিপ্লিনারি ইনফরমেশন স্টাডিজ ও পাবলিক পলিসি। গবেষণা করা যাবে মেডিক্যাল সায়েন্স, আর্থকুয়াক, অরিয়েন্টাল কালচার, সোস্যাল সায়েন্স, হিস্টোগ্রাফিক্যাল, মোলকুলার অ্যান্ড সেলুলার বায়োসায়েন্স, কসমিক রে রিসার্চ, সলিড স্টেট ফিজিক্স, ওস্যান রিসার্চ ও অ্যাডভান্সড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
ক্যাম্পাস : এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে ৫টি ক্যাম্পাস। প্রধান ক্যাম্পাসটির নাম হংগো ক্যাম্পাস। এটির অবস্থান হংগো এলাকায়। এখানে আছে আরও একটি ক্যাম্পাস। এর নাম স্যানশিরও পন্ড। অপর ক্যাম্পাস ৩টি হলো কোমাবা ক্যাম্পাস, নাকানো ক্যাম্পাস ও কাশিওয়া ক্যাম্পাস। এগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিবেশ খুবই ভালো।
আবাসিক ব্যবস্থা : এখানকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই আবাসিক। ছাত্রছাত্রীদের জন্য একক ও যৌথ রুম আছে। আছে বিনোদনের পর্যাপ্ত সুযোগ। ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্যাম্পাসেই আছে শপিংমল।
খেলাধুলা : খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য আছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। এখানকার শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের খেলাধুলা করে থাকে।
সম্প্রীতি : এখানে জাতি ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে সবাই মিলেমিশে থাকে। কোনো দাঙ্গাহাঙ্গামা নেই। নেই কোনো বিদ্বেষ। সবাই যেন এক পরিবারের সদস্য।
লাইব্রেরি : এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্যাম্পাসের জন্য আছে আলাদা সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। এগুলোতে আছে হাজার হাজার বই, জার্নাল ও পত্রপত্রিকা।
অ্যালামনাই : এর আছে ৬টি অ্যালামনাই। এতে আছে বিখ্যাত ব্যক্তিরা। জাপানের ৬ জন প্রধানমন্ত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। 
বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইট: http://www.u-tokyo.ac.jp

প্যাডেল + বিদ্যুৎ + পেট্রোল = অ্যান্ট্রো গাড়ি

                  প্যাডেল + বিদ্যুৎ + পেট্রোল = অ্যান্ট্রো গাড়ি
হাঙ্গেরির অ্যান্ট্রো কম্পানি এই সংকর গাড়িটি তৈরি করেছে। এমনিতে পেট্রলে ভালোই চলে। রয়েছে সাইকেলের মতো প্যাডেল ও বৈদ্যুতিক মোটর। সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎশক্তি রূপান্তরের জন্য আছে সোলার প্যানেল। এটি দামে সস্তা, তবে চালকের পাশে মাত্র দুজন ভ্রমণ করার মতো জায়গা আছে। পরিবারের সবাই মিলে বাইরে বেরুলে দুটি অ্যান্ট্রো গাড়ি একত্রে জোড়া লাগিয়ে একটিতে পরিণত করার অনন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এতে

পামঅয়েল চাষ : সবুজ গাছের তরল সোনা

পামঅয়েল চাষ : সবুজ গাছের তরল সোনা

সবুজ গাছের তরল সোনা পাল্টে দিয়েছে মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক চিত্র। দেশটিতে জনপ্রতি ২০টি পাম গাছ রয়েছে। যারা আমাদের দেশ থেকে চাকরির জন্য মালয়েশিয়া যান তাদের অনেকেই কাজ করেন এই পামঅয়েল বাগানে। অথচ তারা যদি বাহিরমুখী না হয়ে নিজেদের মেধা আর শ্রম দিয়ে বাড়ির আশেপাশে কিংবা পতিত জায়গায় মাত্র ৫টি করে পামগাছ লাগায় তাহলে ওই পরিবারের সারা বছরের ভোজ্যতেলের চাহিদা যেমন মিটবে তেমনি পরিবারে আসবে আর্থিক সচ্ছলতা। পাশাপাশি দেশ হবে ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

দেশের কুমিলস্না, ময়নামতি, লালমাই, গোমতীর তীর, মেঘনার চরাঞ্চল, পাহাড়ি অনাবাদি অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকা যেমন সিলেট, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জের ও ময়মনসিংহের টিলাঞ্চল, রেলপথ ও সড়ক পথের দু'পাশে লাখ লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। এ জায়গাগুলোতে পামগাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে সরকারি বেসরকারি সংস্থাসহ যে কেউ।

কয়েক বছর ধরে আমি দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণের জন্য পামচাষে উৎসাহী করার জন্য বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার কৃষি অফিসের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। পাম চাষ সম্প্রসারণের জন্য নানামুখী কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা ১৬ কোটি লোকের প্রত্যেকে যদি পনেরোটি করে পামগাছ রোপণ করি তাহলে আমাদের চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর প্রায় ৪১ লাখ মেট্রিক টন পাম তেল রফতানি করতে পারব, যার মূল্য প্রায় ২৪ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা।

কৃষিক্ষেত্রে ফসল উৎপাদনে সেচ দিতে পাম বায়োডিজেল ব্যবহার অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্ব রাখতে পারে। আমি একজন কৃষক হিসেবে এক লিটার পাম বায়োডিজেল দিয়ে তিন ঘণ্টা সেচ দিয়েছি। সেক্ষেত্রে ডিজেলের চেয়ে পাম বায়োডিজেলের খরচ কম হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে। পামঅয়েল চাষে খুব কম পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। পাম ফল হতে তেলে আহরণের সময় যে বজর্্য পাওয়া যায় তা পামঅয়েল বাগানের সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গুচ্ছমূলজাতীয় উদ্ভিদ হওয়ায় সাধারণ ঘূর্ণিঝড় পামগাছকে সহজে উপড়ে ফেলতে পারে না। তাই গাছটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের ক্ষিপ্রতা হ্রাস করতে বিশেষভাবে কার্যকর। ২০১০-১১ অর্থ বছরের কৃষি/পলস্নীঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে পামচাষ কৃষিঋণ নীতিমালা কর্মসূচিতে অন্তভর্ুক্ত করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিয়া রহমান। ঋণ বিতরণ এ বছরই শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। একজন কৃষক ৩৩ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করে বছরে পায় ৪,০০০ টাকা, অন্যদিকে পাম চাষ করে একজন কৃষক বছরে আয় করে নূ্যনতম ৮০,০০০ টাকা। পাম চাষের মাধ্যমে আমাদের দেশ হতে পারে একটি মাঝারি আয়ের দেশ, ঘুচে যেতে পারে লাখো মানুষের বেকারত্ব।

মনজুর হোসেন, পাম চাষি, কুমিলস্না
Source: Daily Ittefaq

ধৈঞ্চার অাঁশ :কৃষি অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা

ধৈঞ্চার অাঁশ :কৃষি অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা

ইঞ্জিনিয়ার মশিউর রহমান স্বপন

ধৈঞ্চার অাঁশ টেক্সটাইল জগতে একটি নতুন ফাইবার। চাষাবাদ থেকে শুরু করে উৎপাদন ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ধৈঞ্চার গুরুত্ব বাংলাদেশের সোনালি অাঁশের প্রায় কাছাকাছি। ধৈঞ্চা অাঁশের বৈশিষ্ট্য, গুণাগুণ, প্রায়োগিক দিকে পাট ও ধৈঞ্চা সমমাত্রিক গুরুত্ব ধারণ করে আছে। কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রয়েছে পিছিয়ে। বাংলাদেশে পাট অর্থকরী ফসল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করলেও ধৈঞ্চা অাঁশের ব্যবহার এখন পর্যন্ত প্রায় শূন্যের কোঠায়। ধৈঞ্চার অফুরন্ত সম্ভাবনা আমাদের নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে থাকলেও শুধু ব্যবহারগত দিকটির অজ্ঞতার কারণে এই বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায়নি। ফলে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে।

পরিবেশবান্ধব অাঁশ হিসেবে নেচারাল ফাইবারের গুরুত্ব বিশ্বে বৃদ্ধি পাচ্ছে। টেক্সটাইলের ভাষায়- টেক্সটাইল বা সুতা তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে যে তন্তু বা অাঁশ ব্যবহূত হয় সেগুলোকে টেক্সটাইল ফাইবার বলে। টেক্সটাইলের দু' ধরনের ফাইবারের মধ্যে পাট, ধৈঞ্চা, তুলা হল নেচারাল টেক্সটাইল ফাইবার। টেক্সটাইল ফাইবারের বিশেষ ধরনের বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী রয়েছে। পাট ও তুলা সারা বিশ্বে বহুল ব্যবহূত উন্নতমানের ফাইবার। দেশে এখন পর্যন্ত পাটের বিকল্প কোনো ফাইবার পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় যদি পাটের বিকল্প বা আংশিক বিকল্প হিসেবে ধৈঞ্চার অাঁশকে কাজে লাগানো যায় তবে তা হবে বাংলাদেশ তথা সারা টেক্সটাইল জগতের জন্য আশীর্বাদ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে সহজে ও সব জায়গায় আবাদ করতে পারে ধৈঞ্চা যা পাটের বিকল্প হতে পারে।

ধৈঞ্চার বোটানিক্যাল এনালাইসিস করলে অবাক হতে হয় যে, ধৈঞ্চা গাছের শিকড় থেকে শুরু করে বাঁকল, কাণ্ড, ডাল, পাতা ও বীজ সমস্ত অংশই আমাদের পারিবারিক ও অর্থনৈতিক জীবনে কার্যকরী ব্যবহারিক ও অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে। লক্ষ্য করলে বুঝা যাবে যে, শুধুমাত্র ছাল বা বাঁকলের অংশ থেকে অাঁশ বের করার প্রক্রিয়া বা জাগ দেওয়ার জ্ঞানের অভাবে মূল্যবান অাঁশ প্রাপ্তি থেকে এ ক্ষেত্রটি বঞ্চিত হচ্ছে। গুণেমানে পাটের মত অাঁশ পাওয়া না গেলেও পরিমাণগত ও ব্যবহারগত দিক থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থনৈতিক সুবিধা নেওয়া সম্ভব। পাট ও বস্ত্র ক্ষেত্রের একজন প্রকৌশলী ও ধৈঞ্চা অাঁশের নবীন গবেষক হিসেবে গবেষণালব্ধ ও পরীক্ষণীয় কিছু বিষয় উপস্থাপন করছি:

একক গাছ হিসেবে পাট ও ধৈঞ্চার তুলনামূলক ফলন ও ব্যবহার: ১. ধৈঞ্চা গাছের শেকড়ে ছোট ছোট অংখ্য গুটি হয় তা থেকে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন সার পাওয়া যায়। পাটে কোনো গুটি হয় না। ২. ধৈঞ্চা গাছের কাণ্ড শক্ত ও আকারে বড়, উৎকৃষ্ট মানের জ্বালানি; বেড়া বা খুঁটি হয়; গৃহস্থালী কাজে ব্যবহূত হয়; কৃষিতে ও সবজির মাচান হিসেবে ব্যবহূত হয়। পাটের ক্ষেত্রে কাণ্ড হয় নরম ও আকারে ছোট; উৎকৃষ্ট মানের জ্বালানি হয়; বেড়া হয়; গৃহস্থালী কাজে ব্যবহূত হয়; কৃষি কাজের অনেক ক্ষেত্রে লাগে। ৩. ধৈঞ্চা গাছের বাঁকলে অাঁশ পাওয়া সম্ভব যার বর্তমানে অর্থকরী কোনো মূল্য নেই, জাগ দেওয়া বা পচনের মাধ্যমে অাঁশ পাওয়া যায়, অাঁশের রঙ রূপালি। পাটের ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন বেশি অাঁশ পাওয়া যায়, অর্থকরী মূল্য আছে; জাগ দেওয়া বা পচনের মাধ্যমে অাঁশ পাওয়া যায়; অাঁশের রঙ সোনালি। ৪. ধৈঞ্চা গাছের ডাল পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। ৫. ধৈঞ্চা গাছের পাতায় প্রচুর সবুজ সার পাওয়া যায়, ফলন হেক্টরপ্রতি ১০ থেকে ২০ টন। পাটের ক্ষেত্রে সবুজ সারের পারিমাণ খুবই কম। ৬. ধৈঞ্চা গাছের বীজে প্রচুর আমিষ থাকে ও পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। ফলন হেক্টরপ্রতি ২ টন। পাটের ক্ষেত্রে ফলন অনেক কম।

এ থেকে বোঝা যায় যে, ধৈঞ্চার তুলনায় পাটের ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন বেশি অাঁশ প্রাপ্তি ছাড়া অন্য সব অংশই ধৈঞ্চার অর্থনৈতিক মূল্যমান, প্রায়োগিক সুবিধা বেশি। তবে অাঁশের মানের দিকটির উন্নয়ন ঘটানো গেলে ধৈঞ্চা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং টেক্সটাইল খাত হবে সমৃদ্ধ।

ধৈঞ্চা ও পাট এক প্রকার নেচারাল বাস্ট ফাইবার। পাটের মতই গাছের বাঁকল বা ছালের মধ্যে পচন বা জাগ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় পাওয়া যায়। ধৈঞ্চা শিম বা মটর জাতীয় ফসল। আমাদের দেশে দুই প্রকারের ধৈঞ্চা পাওয়া (ক) স্থানীয় ধৈঞ্চা যার বোটানিক্যাল নাম- ংঁংনবহরধ ধপঁষবধঃধ। এর শিকড়ে রাইজোবিয়াম গুটিকা (বীজানো) থাকে। (খ) আফ্রিকান ধৈঞ্চা যার বোটানিক্যাল নাম- ংঁংনবহরধ ৎড়ংঃৎধঃধ। এর শিকড়ে ও কাণ্ডে রাইজোবিয়াম গুটিকা (বীজাণু) থাকে, যা থেকে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন সার পাওয়া যায়, যা হেক্টরপ্রতি ১৮০ থেকে ২৫০ কেজি ইউরিয়া সারের সমপরিমাণ উপকার পাওয়া।

ভৌত ও রাসায়নিক বিশেস্নষণে ধৈঞ্চা ও পাটের অাঁশের তুলনা:

ধৈঞ্চার যে বৈশিষ্ট্য এবং ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ পাটের তুলনায় উন্নতমানের সেগুলো হল: ফাইবারের দৈর্ঘ্য, আনবিক বিন্যাস, শক্তি দৃঢ়তা অনমনীয়তা, স্থায়ীত্ব পস্নাস্টিসিটি, তাপীয় প্রতিক্রিয়া, ঘর্ষণ প্রতিরোধ ক্ষমতা, উজ্জ্বলতা, পরিছন্নতা, সহজে ধাহ্য ট্রাস কন্টেন্ট, ছত্রাক প্রতিরোধ ক্ষমতা, ময়লা প্রতিরোধ ক্ষমতা ও আলোর প্রতিফলন।

ধৈঞ্চার যে বৈশিষ্ট্য পাটের তুলনায় নিম্নমানের সেগুলো হল: পৃষ্টদেশীয় অবস্থা, মূলায়েম ক্রিম্প, টেনাসিটি, সংশক্তি প্রবণতা, অনমনীয়তা, প্রসারণ ক্ষমতা, অ্যাবজরবেঞ্চি, আর্দ্রতা ধারণ ক্ষমতা, সংকোচন ক্ষমতা, পরিধেয় গুণ, রিজেলিয়েন্সি স্পর্শ অনুভূতি, শোষন ক্ষমতা ও পাকানোর ক্ষমতা।

ধৈঞ্চা অাঁশের যে গুণাবলী আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে সেগুলো হল: অাঁশের দৈর্ঘ্য, অাঁশের ব্যাস, ফাইননেস, অাঁশের শক্তি, টেনাসিটি, ইলাস্টিসিটি, প্রসারণ, সংকোচন, ড্রাপাবিলিটি, হাইগ্রোসকোপিক নেচার, কেমিক্যাল কম্পোজিশন, তড়িৎ ও তাপীয় আচরণ, ডাই-ফাস্টনেস, এসিড ও এ্যালক্যালি উপর প্রতিক্রিয়া ডিগ্রি অব ডিকম্পোজিশন, ইত্যাদি।

যে যে ক্ষেত্রে ধৈঞ্চা অাঁশ ব্যবহূত হতে পারে: ১. যে যে ক্ষেত্রে পাট ব্যবহূত হয় সেখানে পাটের সহায়ক, মিক্সিং বা বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব; ২. দড়ি, কাছি, সুতলি বা ঘরের কাজে; ৩. কৃষি কাজে বা সবজি চাষে; ৪. জিও-ধৈঞ্চা হিসেবে, জিও জুটের বিকল্প হিসেবে ও অন্যান্য গবেষণালব্ধ ক্ষেত্রে।

ধৈঞ্চা অাঁশ বৈশিষ্ট্যে গুণে ও মানে এখন পর্যন্ত পিছিয়ে আছে। যদি ধৈঞ্চা গাছের বাঁকলে অাঁশের পরিমাণ ও মান বৃদ্ধি করা যায় তবে সহজেই এই অাঁশ পাটের মতই অফুরন্ত সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। তার জন্য প্রয়োজন বর্তমান সময়ের বিষ্ময় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা প্রয়োগ করে পাটের জিনের ডি.এন.এ. ধৈঞ্চায় প্রয়োগ করে আরো ভাল অাঁশের সুফল পাওয়া সম্ভব। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা পাটের জিনঘঠিত অগ্রগতি সাধিত করেছেন। কাজেই ধৈঞ্চার অাঁশের ক্ষেত্রেও এর উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করি। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, কৃষি ও পাট গবেষণাকেন্দ্রসহ সংশিস্নষ্ট গবেষণা কেন্দ্রগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে দরকার জনগণের সম্পৃক্ততা।

লেখক: পাট ও বস্ত্র প্রকৌশলী, গবেষক ও লেখক, ফরিদপুর

হোমিওপ্যাথিক ওষুধ রপ্তানি শুরু

হোমিওপ্যাথিক ওষুধ রপ্তানি শুরু

ম্যাক্সফেয়ার এন্ড কোম্পানি লিমিটেড বাংলাদেশের একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হোমিওপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ২০০২ সালে সর্ব প্রথম অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ রপ্তানি করে।

আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের লক্ষ্যে দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর ইউরোপের বেলজিয়ামের ল্যাবোটিকস্ সাপলাইস বিভিবিএ নামক প্রতিষ্ঠান হতে ৫ হাজার কেজি হোমিওপ্যাথিক ঔষধের বাহক 'গেস্নাবিউলস' রপ্তানির আদেশ পায়। উক্ত আদেশের ভিত্তিতে গত ৫ অক্টোবর ১৩শ ৭৫ কেজির প্রথম চালান রপ্তানি করে। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ হতে এই ধরনের পণ্যের রপ্তানি প্রথম।

ম্যাক্সফেয়ার এন্ড কোম্পানি লিমিটেড ১৯৯৭ সালে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর হতে লাইসেন্স প্রাপ্তির মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করে। 
Source: Daily Ittefaq

Tuesday, November 2, 2010

আখ বিক্রিতে এবার ডিজিটাল পুর্জি

আখ বিক্রিতে এবার ডিজিটাল পুর্জি

একজন কৃষক যে ফসল ফলান, তা যদি তিনি সময়মত বিক্রি করতে না পারেন, তাহলে তাদের বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। তা যেন না হয়, সে জন্য মোবাইল ফোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি সমন্বিত সরকারি ক্রয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে বাংলাদেশে। ‘ডিজিটাল পুর্জি’ নামে এ পদ্ধতির সফল পরীক্ষা চালানো হয়েছে এ বছর ফরিদপুর আর ঝিনাইদহের আখচাষীদের মধ্যে—যারা ওই এলাকার চিনিকলগুলোয় আখ বিক্রি করেন।
মোবাইল ফোনেই কেনাবেচার তথ্য
কৃষকদের জন্য তাদের উত্পাদিত কৃষিপণ্য সময়মত বিক্রি করতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময়ই কৃষিপণ্য একটা নির্দিষ্ট সময়ের বেশি ফেলে রাখলেই তার মান খারাপ হতে শুরু করে এবং দামও পড়তে শুরু করে। কৃষককে তখন বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়ে পণ্য বিক্রি করতে হয়। কৃষকদের যেন এভাবে লোকসান দিতে না হয়, সেজন্য মোবাইল ফোনে তাদের তথ্যসেবা দেয়ার একটি পদ্ধতি এ বছর সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে ফরিদপুর আর ঝিনাইদহে আখচাষীদের মধ্যে।
ডিজিটাল পুর্জি যেভাবে কাজ করে
এ দু’টি চিনিকলের জন্য যে চাষীরা আখ সরবরাহ করেন, তারা কবে, কখন এবং কী পরিমাণ আখ মিলগেটে নিয়ে আসবেন, তার নোটিশটি তারা পান তাদের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে। এ নোটিশকে বলে পুর্জি। এ পুর্জি প্রথা চলছে প্রায় ২০০ বছর ধরে। আগে তা দেয়া হতো কাগজে লিখে, অনেক সময়ই তা হারিয়ে যেত বা অনেক অসাধু লোক বিক্রি করে দিত। ফলে অনেক আখচাষীই তাদের ক্ষেতের আখ কাটার পরও সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করতে পারতেন না। দিনের পর দিন আখ ফেলে রাখতে হতো। ফলে তা শুকিয়ে যেত এবং বিক্রি করার সময় তার দামও অনেক কমে যেত।
তবে এখন ঝিনাইদহ এবং ফরিদপুরের চিনিকলগুলোয় আখ সরবরাহকারী প্রায় ২০ হাজার কৃষক এখন এ ডিজিটাল পুর্জির সুবিধা পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
চিনিকলের সার্ভার রুম থেকে একটা সমন্বিত পদ্ধতিতে এলাকার চাষীদের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে জানিয়ে দেয়া হয় কোন দিন কাকে কী পরিমাণ আখ বিক্রির জন্য চিনিকলে নিয়ে আসতে হবে।
মোবাইলে পুর্জি চালু হওয়ার পর মোবারকগঞ্জ চিনিকলের চাষীরা এখন পরিকল্পনা করে আখ কাটছেন এবং তা নির্দিষ্ট দিনেই বিক্রি করতে পারছেন। ফলে লোকসানের সম্ভাবনা আর থাকছে না। আখচাষী আয়নাল হোসেন জানান, পুর্জির মেসেজটি ইংরেজিতে এলেও তার অর্থ বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না, দরকার পড়লে তিনি তার ছেলে বা অন্য কাউকে জিজ্ঞাস করে নিচ্ছেন। পুর্জি নিয়ে আগে যে দুর্নীতি হতো তা ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুদর্শন মল্লিক বলছেন, এই পুর্জি প্রথা নিয়ে আগে যে দুর্নীতি হতো তাও এই ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এর ফলে পুর্জি হারিয়ে যাওয়া বা কোনোভাবে হাতছাড়া হওয়া বা কারও কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়ার পথও বন্ধ হয়েছে।
জানা গেছে, এই ‘ডিজিটাল পুর্জি তথ্যসেবা বাস্তবায়নে সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন কর্মসূচি এবং চিনি ও খাদ্য শিল্প কপোরেশনকে সহায়তা দিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি বা ইউএনডিপি। ইউএনডিপির সহকারী কান্ট্রি ডিরেক্টর কেএএম মোরশেদ বলছেন, এর ফলে চিনিকলগুলোকে মৌসুমের মাঝখানে আখের অপেক্ষায় আর বসে থাকতে হচ্ছে না, এগুলো আরও দক্ষভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এতে কৃষকদের আয় ও জীবনযাত্রার মান বেড়েছে এবং তাদের ক্ষমতায়ন হয়েছে বলেও তিনি জানান।
আহসান হাবিব, বিবিসি অবলম্বনে

আসছে খরাসহিষ্ণু ধান

আসছে খরাসহিষ্ণু ধান

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের বিস্তৃর্ণ এলাকা দিন দিন খরাপ্রবণ অঞ্চলে পরিনত হচ্ছে। অসময়ে বৃষ্টিপাত এবং বিলম্বিত বর্ষার কারণে কৃষকরা উপযুক্ত সময়ে চারা রোপণ করতে পারছে না। আবার অঙ্গজ বৃদ্ধির পর্যায়ে বা ফুল আসার সময়ে অথবা দানা বাধার সময়ে প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হলে ধানের ফলন আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে। খরার মাত্রা বেশি হলে অনেক সময় সম্পূর্ণ ফসলই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই প্রতিকূল অবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট খরাসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অনেক দিন ধরে। সমপ্রতি ব্যাপক গবেষণার ফলে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট একটি ধানের জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে, যা খরা মোকাবিলায় যথেষ্ট কার্যকর বলে বিভিন্ন গবেষণার মাঠে প্রমাণিত হয়েছে। ইরি উদ্ভাবিত খরাসহিষ্ণু ধানের এই জাতটির লাইন নম্বর হচ্ছে আই আর ৪৩৭১-৭০-১-১। কৃষকের মাঠে খরা মোকাবিলায় অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হওয়ায় ভারত ২০০৯ সালে শাহবাগী ধান নামে এই জাতটিকে অনুমোদন দেয়, যা এখন ভারতের খরাপ্রবণ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে এই জাতটির ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। মনে করা হচ্ছে অচিরেই এই জাতটি খরাসহিষ্ণু জাত হিসেবে বাংলাদেশে অনুমোদন পাবে। ঝঞজঅঝঅ-ওজজও প্রকল্পের আওতায় বিল এন্ড মেলিন্ডা গেট্স ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে আরডিআরএস গত দুই মৌসুম ধরে এই জাতটির খরাসহিষ্ণুতা পর্যবেক্ষণ করছে এবং এই বছর কৃষকের মাঠে এর গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করেছে। দেখা যাচ্ছে কৃষক স্বতঃস্ফুর্তভাবে জাতটিকে একটি খরাসহিষ্ণু জাত হিসেবে গ্রহণ করছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খরা মোকাবিলায় কার্যকর এবং উপযুক্ত বলে বিভিন্ন গবেষণায় ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।

খরাসহিষ্ণু জাতের পরিচিতি:খরাসহিষ্ণু জাত হিসেবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আই আর ৪৩৭১-৭০-১-১ ধানের জাতটির উপযুক্ততা যাচাই হচ্ছে। এই ধানের জীবনকাল ১১৫ থেকে ১২০ দিন। ধানের ছড়ার দৈর্ঘ্য ২২.১ থেকে ২৫.৪ সেমি। খরাসহিষ্ণু এই ধান গাছের উচ্চতা ৮৫ থেকে ৯০ সেমি। ১০০০ ধানের ওজন ২২.৮০ গ্রাম এবং ধানে চালের পরিমাণ ৬৪.৭%। স্বাভাবিক অবস্থায় হেক্টরপ্রতি ৩.৮ থেকে ৪.৫ টন ফলন পাওয়া যায়।

খরাসহিষ্ণু ধান উৎপাদন কলাকৌশল:সাধারণত খরাপ্রবণ এলাকায় খরাসহিষ্ণু এই ধরনের ধানের চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। জুন মাসের মাঝামাঝিতে বীজতলায় বীজ ফেলে জুলাই মাসের প্রথমদিকে ২৫ দিনের চারা রোপণ করা উচিত। যেহেতু এই ধান স্বল্পমেয়াদি তাই কোনোভাবেই ২৫ দিনের বেশি বয়সের চারা রোপণ করা উচিত নয়। প্রতি হেক্টরে চারা রোপণের জন্য ৪০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। যেহেতু স্বল্পমেয়াদি ধানের জাতে কুশির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হয়, সেহেতু চারা রোপণের ক্ষেত্রে ৬ ইঞ্চির (১৫ সেমি) বেশি দূরত্বে চারা রোপণ করা উচিত হবে না। চারার গোছা থেকে গোছার দূরত্বও ৬ ইঞ্চির বেশি হওয়া উচিত নয়। প্রতি গোছায় ৩ থেকে ৪টি চারা রোপণ করা উচিত।

মাটি পরীক্ষা করে অনুমোদিত মাত্রায় সার প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব। মাটি পরীক্ষা করা সম্ভব না হলে প্রতি হেক্টর জমিতে ৭৫ কেজি টিএসপি এবং ৩৪ কেজি এমওপি সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হয়। চারা রোপণের ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে আরো হেক্টরপ্রতি ৬৫ কেজি ইউরিয়া সার এবং চারা রোপণের ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে হেক্টরপ্রতি আরো ৬৫ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। অবশ্যই জমিকে আগাছামুক্ত রাখতে হবে। দ্বিতীয়বার ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের সময় জমি থেকে আগাছা পরিস্কার করে সারকে কাঁদার সাথে মিশিয়ে দিলে ধানগাছ ভালভাবে সার গ্রহণ করতে পারবে।

চারা রোপণের প্রথম ৪০ দিন পর্যন্ত জমিকে আগাছামুক্ত রাখলে পরবর্তীতে সাধারণত আর আগাছা হয় না। আগাছানাশক দিয়েও জমিকে আগাছামুক্ত রাখা যায়। এজন্য চারা রোপণের ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে জমিতে ছিপছিপে পানি থাকা অবস্থায় হেক্টরপ্রতি ৮০০ গ্রাম পেটিলাক্লোর অথবা হেক্টরপ্রতি ২০ গ্রাম পাইরাজোসালফিউরোন ইথাইল প্রয়োগ করতে হবে। ধানের জমির বিভিন্ন স্থানে বাঁশের কঞ্চি পুঁতে দিয়ে পাখি বসার ব্যবস্থা করে দিলে পাখি পোকা-মাকড় খেয়ে জমিতে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব কমাতে পারে। ধানগাছে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বেশি হলে উপযুক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশে সাধারণত আশ্বিন-কার্তিক মাসে খরা হয়। এই সময়ে সেচ ব্যবস্থার সুযোগ না থাকলেও এই ধানগাছ সহজে ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। প্রায় ৮০ ভাগ ধান পেকে গেলে ফসল কেটে ফেলতে হবে।

সাধারণত বীজ বপনের ১১৫ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে ধান পেকে যায়। ঠিকমত চাষাবাদ করলে হেক্টরপ্রতি ৪ থেকে ৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যেতে পারে।

খরাসহিষ্ণু ধানগাছ শুষ্কতা সহ্য করতে পারলেও ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে না। সেজন্য উত্তরাঞ্চলে কোনোভাবেই এই ধানের জাত দেরীতে চাষাবাদ করা যাবে না। পাশাপাশি বোরো মৌসুমেও এ ধানের চাষ করা যাবে না।

ড. এম. জি. নিয়োগী

হেড অফ এগ্রিকালচার, আরডিআরএস, বাংলাদেশ

ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চিটাগং ক্যারিয়ারনির্ভর পড়াশোনায় মেয়েরাই এগিয়ে

ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চিটাগং ক্যারিয়ারনির্ভর পড়াশোনায় মেয়েরাই এগিয়ে

মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম
এক সময় মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণের বিষয়ে পরিবারগুলোতে ছিল চরম উদাসীনতা। তবে সময়ের বিবর্তনে এ জাতীয় মানসিকতার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। মেয়েরাও বাস্তবতার নিরিখে ভাবতে শিখেছে। তাই কোনোমতে একটা পাস জুটিয়ে নামমাত্র শিক্ষিত না হয়ে ছেলেদের পাশাপাশি তারাও এখন এমবিএ-বিবিএ’র মতো বাজার উপযোগী বিষয়ে লেখাপড়া করে স্বাবলম্বী হতে ব্যস্ত। আর এই পরিবেশ তৈরির পেছনে রয়েছে আইআইইউসি ঢাকা ক্যাম্পাসের বিশাল অবদান। এখানে মেয়েরা আত্মনির্ভরশীলতার প্রশ্নে এবং জব মার্কেটে নিজের শক্ত অবস্থান গড়তে এমবিএ করছে।
এ প্রসঙ্গে আইআইইউসি’র চাকরিজীবী প্রাক্তন ছাত্রী আবিদা সুলতানার বলেন— প্রফেশনালদের জন্য মানসিক যে জোর প্রয়োজন তা আমি পেয়েছি আইআইইউসি’র এমবিএ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে। পেশাগত জীবনের ম্যাচুরিটি আনতে এটা আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক মাস্টার্স ও এমবিএ-বিবিএ’র পার্থক্য মূলত এখানেই; একটা শুধুই থিওরি, অন্যটা বাস্তব প্রয়োগ।
আরেক চাকরিজীবী সাবেক শিক্ষার্থী সেয়দা নাফিসা শাহনাজ বলেন, মার্কেটিংয়ে মাস্টার্স করার পর আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করি। যা চাকরি জীবনে আমাকে প্রত্যক্ষ সহায়তা করছে। দেশব্যাপী উন্নত উচ্চ শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৃহত্তর চট্টগ্রামে ১৯৯৫ সালে আত্মপ্রকাশ ঘটে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি গুণগত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করার ফলে দ্রুত এর চাহিদা বাড়তে থাকে। চট্টগ্রামে এদের একাধিক ভবনবিশিষ্ট স্থায়ী ক্যাম্পাসটি যেমনি দৃষ্টিনন্দন, তেমনি নির্মল পরিবেশ বেষ্টিত। তাই ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০০ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় আইআইইউসি ঢাকা ক্যাম্পাস। ধানমন্ডিতে ২০টি ভবনে চলছে তাদের এই ক্যাম্পাসের কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই যুগের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন গ্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে এখানে। ঢাকা ক্যাম্পাসে ৪০০০ এরও বেশি ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে। তার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছাত্রী। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ছাত্রীসংখ্যা বেশি বলে জানা যায়। এখানে মেয়েদের জন্য রয়েছে পৃথক ক্যাম্পাস। ফলে পড়াশোনায়ও এখানে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের সুস্থ প্রতিযোগিতা বিরাজমান। সর্বশেষ ২০০৭ এ আন্তর্জাতিক চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য তৃতীয় সমাবর্তন। আইআইইউসি’র প্রোগ্রামসমূহ: বিবিএ, এমবিএ, ইইই, ইএলএল, এললবি, এএলএল, সিএসই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর মোঃ ইমরুল করিম বলেন, ঢাকায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা যেমন অনেক, তেমনি এদের মধ্যকার প্রতিযোগিতাও তীব্র। তবে এই প্রতিযোগিতা অধিকাংশই কে কত ছাত্র ভর্তি করাবে কেবল তা নিয়েই। অবশ্য স্বল্প হলেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যাদের লক্ষ্য ও প্রতিযোগিতা কেবল গুণগত মানের শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত্ গড়ে তোলা। যে লক্ষ্যে প্রতিনিয়তই তারা নতুন নতুন বিভিন্ন পরিকল্পপনা ও উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং অফার করছে সময়োপযোগী বিভিন্ন কোর্স। আইআইইউসি’র লক্ষ্য যেহেতু শিক্ষাবাণিজ্য নয়, সেহেতু এরা পূর্ণকালীন উন্নত শিক্ষা ও অবকাঠামো নিয়ে ভালো পড়াশোনা নিশ্চিত করছে।
ঢাকা ক্যাম্পাসকে ক্রমান্বয়ে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে ঢেলে সাজানো হচ্ছে এবং ঢাকায় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের সার্বিক পরিকল্পনা, কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বান্দরবানে বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টের গ্যাস সিএনজি-সিলিন্ডারে বিক্রি হচ্ছে

বান্দরবানে বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টের গ্যাস সিএনজি-সিলিন্ডারে বিক্রি হচ্ছে

০০মিলন চক্রবতর্ী, বান্দরবান

বান্দরবানে বায়োগ্যাস পস্ন্ল্ল্যান্টে উৎপাদিত গ্যাস সিএনজি ও সিলিন্ডারে বিক্রি হচ্ছে। বায়ো গ্যাস পস্ন্যান্টের উৎপাদিত বিদু্যতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে প্রকল্পসহ আশপাশের ঘরবাড়ি। জেলা সদরের সূয়ালক এলাকায় ২ একর পাহাড়ী জমির উপর বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্ট করেছে খোকন দাস। বেকার এই যুবকের উদ্ভাবিত বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্ট দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। দুই একর পাহাড়ী জমির উপর প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচ করে গড়ে তোলা বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্ট পার্বত্য চট্টগ্রামে মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন প্রতিদিন বান্দরবানে উদ্ভাবিত বায়োগ্যাস প্রকল্পের কৌশল শিখতে ভীড় জমাচ্ছে সূয়ালকে। বায়োগ্যাস প্রকল্পটি থেকে বর্তমানে ৫ হাজার ওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন ছাড়াও সিএনজি ও গ্যাস সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে।

প্রতিদিন উক্ত পস্ন্ল্যান্ট থেকে সাতকানিয়া ও কেরানীহাট সড়কে চলাচলকারী সিএনজিগুলো গ্যাস ভরাট করে নিচ্ছে বলে জানান সংশিস্নষ্টরা। পাশাপাশি উৎপাদিত গ্যাস এখন গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তি করে বান্দরবানসহ পার্শ্ববতর্ী বাজারগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রকল্প থেকে প্রচুর পরিমাণ জৈব সারও উৎপাদন করা হচ্ছে। আর্থিক সংকটে ক্ষুদ্র বায়োগ্যাস প্রকল্পটি বৃহৎ পরিসরে করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান উদ্ভাবক খোকন দাস। তিনি আরো জানান, বর্তমানে বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্টে মাত্র ৯টি গরু এবং কিছু হাঁস-মুরগি রয়েছে। কিন্তু বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্টের জন্য প্রচুর পরিমাণ কাঁচা গরুর গোবর ও হাঁস-মুরগীর বিষ্ঠা প্রয়োজন। এ কারণে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরুর গোবর এবং হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা সংগ্রহ করে বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্ট চালানো হচ্ছে। বর্তমানে বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টে গ্যাসের চাপ প্রচুর। সার্বক্ষণিক গ্যাসের চাপ ধরে রাখতে প্রচুর পরিমাণে গরুর গোবর দরকার হলেও জেলায় প্রয়োজনীয় গরুর গোবর পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান আবিষ্কারক খোকন দাস। অপরদিকে বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্টে উৎপাদিত ৫ হাজার ওয়াট বিদু্যৎ জেনারেটরের সাহায্যে সূয়ালক বাজার ও পাশর্্ববতর্ী বসতবাড়িতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট (যন্ত্রাংশ) পাওয়া গেলে উদ্ভাবিত বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্টের মাধ্যমে বান্দরবানে গ্যাসের সংকট দূর করা সম্ভব বলে মনে করছে স্থানীয়রা। বর্তমান সময়ে বিদু্যৎ সংকট দূর করতে বেসরকারীভাবে এই ধরনের উদ্যোগ অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে। রবিবার ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊধর্্বতন কর্মকর্তারাও প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছে।
Source: Daily Ittefaq

বায়োগ্যাস থেকে সিএনজি:
বান্দরবানের খোকন দৃষ্টি কেড়েছেন সারাদেশের কৃষি উদ্যোক্তার
- মাটি ও মানুষের কৃষি ডেস্ক

দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত বহুবার বায়োগ্যাস পস্ন্যান্ট স্থাপন ও কৃষকের লাভবান হওয়ার কথা আমরা পত্র-পত্রিকা কিংবা টিভির মাধ্যমে জানতে পেরেছি। অনেক ঝক্কি ঝামেলা পার হয়ে শেষ পর্যন্ত তারা দেখতে পেরেছেন সফলতার মুখ। আপনারা দেখেছেন তিন বছর আগে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের শ্যামেরঘন গ্রামে আব্দুর রাজ্জাক সিএনজি চালিত জেনারেটরের মাধ্যমে মাঠে মাঠে সেচ সুবিধা পেঁৗছে দিতে। রায়গঞ্জ উপজেলা ছাড়িয়ে সিএনজি চালিত সেচ পাম্প পেঁৗছে যায় তাড়াশ উপজেলায়। অগভীর থেকে গভীর নলকূপের মাধ্যমেও চলতে থাকে সেচ সুবিধা পেঁৗছে দেয়ার কাজ। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের পটিয়ায় শিকলবাহার দুগ্ধপলস্নীর ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে বায়োগ্যাস পস্ন্যান্ট। গ্যাসের বিদু্যতে আলোকিত হচ্ছে এক একটি ঘর, মিটছে তাদের নিত্য দিনের জ্বালানি চাহিদা।
বায়োগ্যাস পস্ন্যান্ট থেকে জ্বালানি হয়, বড় জোর জ্বলে বাতি, খামার পর্যায়ে এ প্রযুক্তির বিকাশ ছিল একুটুই। বান্দরবানের খোকন দাসই প্রথম বায়োগ্যাসের আরো কার্যকর ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছেন। ইতিমধ্যে টেলিভিশন ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার কল্যাণে তার এ সফলতা পেঁৗছে গেছে অনেক অনেক দূর। সারাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষি উদ্যোক্তার দৃষ্টি এখন এমন লাভজনক উদ্যোগের দিকে। কারণ, আমাদের দেশে দিন দিন বাড়ছে জৈব সারের চাহিদা; সে সঙ্গে জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রয়োজনীয়তার কথা তো বলাই বাহুল্য। আছে বিদু্যতের চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনে বায়োগ্যাস থেকে দেয়া বিদু্যতেরও।
খোকন দাস দরিদ্র পরিবারের সন্তান। লেখাপড়ায় প্রাথমিক শ্রেণীর গণ্ডি পেরোতে পারেননি। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তার ভাবনায় গুরুত্ব পায় কৃষি। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা থেকে শুরু করে কীটনাশকের আগ্রাসন থেকে কৃষিকে বাঁচানোর জন্য চিন্তা-ভাবনা করে আসছেন অনেক আগে থেকেই। তার চিন্তায় ছিল উৎকৃষ্টমানের জৈব সার তৈরির বিষয়টি। এ চিন্তার পথ ধরেই একদিন পেঁৗছে যান বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টের কাছে।
খোকন দাস করতে চেয়েছেন ব্যতিক্রম কিছু। তাই বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টেই তিনি থেমে থাকেননি। পস্ন্যান্ট নিয়ে নতুন নতুন চিন্তা করেছেন রাত-দিন। দিনের পর দিন এঁকেছেন নতুন নতুন মানচিত্র। একদিন সূয়ালক এলাকায় ২একর পাহাড়ি জমির উপর গড়ে তোলা বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টটির দিকে দৃষ্টি আনতে পেরেছেন সারা দেশবাসীর। খোকন তার বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টের সঙ্গেই যুক্ত করেছেন গ্যাস জেনারেটর। সেখান থেকে উৎপাদিত বিদু্যতের শক্তি দিয়ে বায়োগ্যাসকে তৈরি করেছেন রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসে। যাকে আমরা সিএনজি বলি।
দেশের লক্ষ লক্ষ যানবাহনের সবচেয়ে লাভজনক জ্বালানি সিএনজি। এখন প্রতিদিনই সিএনজি চালিত অটোরিক্সা আসে খোকনের এই পাম্প থেকে গ্যাস নিতে। এখানে ভাল মানের সিএনজি পাওয়াতে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন সিএনজি পরিবহনের চালকরা। খুব বেশি সিএনজির চাহিদা পূরণ সম্ভব হয় না ঠিকই কিন্তু এলাকাবাসী এখন বিশ্বাস করেছে যে এখান থেকে একদিন ঠিকই তাদের নানা ধরনের চাহিদা পূরণ হবে। কিন্তু মানুষের আশা বাড়িয়ে দেয়া এই প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন অনেক অনেক অর্থের।
বর্তমানে এই পস্ন্যান্টে মাত্র ৯টি গরু এবং কিছু হাঁস-মুরগি রয়েছে। কিন্তু পস্ন্যান্টের জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণ কাঁচা গোবর ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা। এ কারণে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরুর গোবর এবং হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা সংগ্রহ করে বায়োগ্যাস পস্ন্যান্ট চালানো হচ্ছে। বর্তমানে বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টে গ্যাসের চাপ প্রচুর। সার্বক্ষণিক গ্যাসের চাপ ধরে রাখতে প্রচুর পরিমাণে গরুর গোবর দরকার হলেও জেলায় প্রয়োজনীয় গরুর গোবর পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানালেন খোকন দাস। এখনো এই প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে খোকন চিন্তা করেন বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টের উচ্ছিষ্ট অংশের জৈব সারকে। পস্ন্যান্টের মধ্যেই তিনি তার পরিকল্পনা ও নকশা অনুযায়ী স্থাপন করেছেন জৈব সারের একটি কক্ষ। যেখানে জমা হয় উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার। এরও বাণিজ্যিক গুরুত্ব কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের জন্য কম নয়। খোকন দাসের এই প্রকল্পের সঙ্গে সবচেয়ে সহায়ক হিসেবে রয়েছেন এই এলাকারই যুবক নূরুল আমীন।
বান্দরবানের সূয়ালকে খোকন দাসের উদ্ভাবন ও প্রয়াস সাড়া জাগিয়েছে গোটা এলাকাসহ সারাদেশে। একটি উদ্ভাবন থেকে ছোটখাটো একটি ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়িয়ে গেছে খোকন দাসের নিরলস পরিশ্রমে। সিএনজি পরিবহনের পাশাপাশি বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য সিলিন্ডারেও গ্যাস নিতে আসেন অনেকেই। গ্যাসের মান নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। এখন স্বল্প উৎপাদনেই দৈনিক কমপক্ষে তিন সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করেন খোকন দাস। যারা গ্যাস নিচ্ছেন তারাও আছেন বেশ স্বস্তিতে।
কৃষিকে লাভজনক করতে কিংবা জীবনের প্রাত্যহিক প্রয়োজনগুলো আরো সহজে মেটানোর জন্য তৃণমূলে চলছে বহু রকম গবেষণা। বিদু্যত, জ্বালানি আর জৈব সারের চিন্তা থেকেই বায়োগ্যাস, সেখান থেকেই সিএনজি। খোকন দাসের এই প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত এদেশে বহুমুখি উৎপাদন ব্যবস্থার একটি মডেল। দেশের অনেক উদ্যোগী কৃষক ও খামারিই ইতিমধ্যে স্থাপন করেছেন বিভিন্ন আকারের বায়োগ্যাস পস্ন্যান্ট। সেখান থেকে তারা মেটাচ্ছেন দৈনন্দিন বিদু্যত ও জ্বালানির চাহিদা। এবার সিএনজির চাহিদা পূরণের চিন্তা নিয়ে এমন এক একটি পস্ন্যান্ট স্থাপিত হতে পারে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। সেক্ষেত্রে খোকন দাসের এই পস্ন্যান্টটিই হতে পারে অনুসরণীয়। তা একদিকে আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রতিদিনের চাহিদা পূরণে যেমন কিছু অংশের যোগানদার হতে পারে, অন্যদিকে জৈব সার উৎপাদনেও আমরা এগিয়ে যেতে পারি বেশ খানিকটা পথ

Source: Daily Ittefaq, 30th January-2011

Monday, November 1, 2010

বাংলাদেশে চালু হলো ই-পেমেন্ট গেটওয়ে

বাংলাদেশে চালু হলো ই-পেমেন্ট গেটওয়ে

গেস্নাবালাইজেশন এর এই যুগে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আজ আমরা পৃথিবী নামক গ্রহটিকে পরখ করতে পাচ্ছি একদম হাতের মুঠোয়। যোগাযোগ, শিক্ষা-সংস্কৃতি-বিনোদনের ক্ষেত্রে ঘটিয়েছে এক বৈপস্নবিক মহা-পরিবর্তন। বেড়েছে জানার সুযোগ, বলার সুযোগ, আয়ের সুযোগ। ইন্টারনেটকে ভাল উদ্দেশ্যে যথার্থভাবে কাজে লাগাতে পারলে এটিই হতে পারে আর একটি 'গার্মেন্টস শিল্প'- আরেকটি কারখনা- যার থেকে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি অনায়াসেই। যখন একটি নতুন পদ্ধতি কোন জনগোষ্ঠীর পরিবর্তন সাধিত করার স্বার্থে প্রয়োগ করা হয়, তখন এর সাফল্য নির্ভর করে এই জনগোষ্ঠীর ব্যাপক অংশগ্রহণে। আর ঐ পদ্ধতিটি ভেস্তে যায় যদি জনগোষ্ঠীর কোন প্রকার উপকারে আসে না বা পদ্ধতির দ্বারা তারা উপকারটি সহজে লাভ করতে পারে না। ইন্টারনেট প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ এখন ই-কমার্স নামক যে পদ্ধতিতে সারা বিশ্বব্যাপী নিজস্ব পণ্য-দ্রব্য বেচা-কেনার সুযোগ পাচ্ছে সে পদ্ধতিটি যদি আমরা আমাদের দেশে সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে আমরাও পিছে পড়ে থাকব না এবং পিছে পড়ে থাকতে হবে না। কিন্তু তার জন্য অনেকগুলো কাজ করতে হবে যা এখনো আমাদের দেশে অনুপস্থিত। ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে উভয় পক্ষকেই তার মূল্য পরিশোধ/ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। আর এই প্রাপ্তি/পরিশোধ পদ্ধতিটি যে প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত করতে হয় তার নামই হল ই-পেমেন্ট প্রসেসর পদ্ধতি। পেমেন্ট গেটওয়ের সাথে আমাদের দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাও জড়িত। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ব্যাংকগুলি বাইরের দেশের ই-চেক, মেইল চেক, মানি ট্রান্সফার, ব্যাংক ওয়্যারহাউজ ট্রান্সফার ইত্যাদি ব্যাপারগুলি নিয়ে কাজ করে না। যার ফলে অনলাইন মানি ট্রান্সফার সম্ভব হয় না।

ই-পেমেন্ট প্রসেসর/ গেটওয়ে'র সাথে পণ্য ক্রেতা, বিক্রেতা, ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড কোম্পানী, ব্যাংক কোম্পানী, ই-পেমেন্ট প্রসেসিং কোম্পানী ও সরকার জড়িত থাকে।

ই-পেমেন্ট একাউন্ট কি: জিমেইল, ইয়াহু, হটমেইল, ইত্যাদি ই-মেইল একাউন্ট এর মতই একটি একাউন্ট; যেখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাদি, ব্যাংক একাউন্টস, ক্রেডিক/ডেবিট/ভিসা বা মাষ্টার কার্ডের মতো ইন্টারন্যাশনাল একসেপ্টেড কার্ড সংক্রান্ত হিসাব জমা থাকবে। এবং আপনি এই একাউন্ট ব্যবহার করার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী টাকা ট্রান্সফার, ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি লেনদেন সমুহ সম্পন্ন করতে পারবেন।

ই-পেমেন্ট একাউন্ট প্রসেসিং কোম্পানী: সমগ্র বিশ্বে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত, কার্যকর ও একসেপ্টেড প্রতিষ্ঠান হল 'পেপাল'। এছাড়াও রয়েছে এলার্টপে, ই-গোল্ড সহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান। আমাদের পাশর্্ববর্তী দেশ ভারতে পেপাল, এলার্টপে, ডিসকভারসহ বিভিন্ন ই-পেমেন্ট সিস্টেম বিদ্যমান রয়েছে অথচ আমাদের দেশেই এর ব্যবস্থা নেই। সমপ্রতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ইলেকট্রনিক কমার্স (ই-কমার্স) ব্যাংকিং চালুর অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দ্রুত পরিবর্তনশীল তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে ই-কমার্স ব্যাংকিং চালু করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালু করার বিষয়টি সময়ের দাবী হলেও বাংলাদেশে অনেক দেরীতে চালু হলো শুধুমাত্র ই-কমার্স ব্যাংকিং সেবা। প্রাথমিক পর্যায়ে এর মাধ্যমে প্রথমবারের মত বাংলাদেশে অনলাইন লেনদেন কার্যক্রম চালু হলো। কিন্তু বিদেশ থেকে টাকা আনার পদ্ধতিতে জটিলতা এখনো বিদ্যমান। যদিও বাংলাদেশে অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা চালু করার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সকল লেনদেন এখন ঘরে বসেই করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন সেবা খাতের বিল পরিশোধ, শপিংমলে কেনাকাটাসহ সঞ্চয়ী হিসাব থেকে চলতি হিসেবে অর্থ স্থানান্তর করতে কারো বাইরে যাওয়ার দরকার হবে না। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া বাকী সব ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং শুরুর প্রস্তুতি নেই, যাদের প্রস্তুতি আছে তারাও গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবে সহসাই অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না। বাংলাদেশে অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি সংশিস্নষ্ট বিশেষজ্ঞরা। কেননা, ইতোমধ্যেই সার্কুলার জারির মাধ্যমে ই-কমার্সের আওতায় সার্বিক লেনদেন সম্পন্ন করতে দেশের সকল তফসিল ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সার্কুলারে বলা হয়েছে, ই-কমার্স কার্যক্রমের সুবিধার জন্য এখন থেকে সব তফসিলি ব্যাংক গ্রাহকদের বিভিন্ন তথ্য ও সেবা প্রদান করবে। এর মধ্যে রয়েছে- অনলাইনে যেকোন গ্রাহক তার প্রাপক পক্ষের সেবা (গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন, হাসপাতাল) বিল পরিশোধ করতে পারবেন। আশা করা যাচ্ছে, ই-কমার্স ভিত্তিক অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা ও পেপাল-এর অনুমোদন হলেই আউটসোর্সিং শিল্প হতে অর্থ আনায়নের কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম চালু হবে যাবে পুরোদমে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইন্টারনেটে পন্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত একমাত্র ডাচবাংলা ব্যাংক লিমিটেড কার্যকারি পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়েছে। ব্যাংকটি চলতি বছরের ৩ জুন তিনটি মার্চেন্ট নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ই-কমার্স কার্যক্রম চালু করে। ই-কমার্স কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের সাথে কথা বলেছেন ব্যাংকটির ই-কমার্স প্রজেক্টের হেড অব বিজনেস মো. রবিউল আলম।

কাস্টমারগণ কিভাবে আপনাদের ব্যাংকের ই-কমার্স সেবা গ্রহন করবে?

আমাদের সাথে ডেসকো, চরকা ডট কম এবং একুশে ডট কম ডট বিডি প্রথম থেকেই ই-কমার্স মার্চেন্ট হিসেবে কাজ করছে। সমপ্রতি আরও চারটি প্রতিষ্ঠান আমাদের মার্চেন্ট হয়েছে। কাষ্টমারগণ সংশিস্নষ্ট মার্চেন্টদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে তাদের পছন্দের পণ্য বা সেবা পছন্দ করবে। তারপর শিপিং এড্রেস, ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, একাউন্ট হোল্ডারের নাম, সিভিসি নাম্বার এবং এক্সপায়ারি তারিখ প্রবেশ করাতে হবে। তবে ডাচ বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস কার্ড ব্যাবহারকারীগণ সিভিসি কার্ডের বদলে কার্ডটির গোপন পিন নাম্বার দিবেন।

আপনাদের গেটওয়ে ব্যবহার করে কোন কোন ব্যাংকের একাউন্টহোল্ডারগণ পণ্য ক্রয় করতে পারবে?

বিশ্বের যেকোন স্থানের যেকোন ব্যাংকের ভিসা বা মাস্টার কার্ড এবং ডাচ বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস কার্ড ব্যবহার করে আমাদের গেটওয়ে ব্যবহার করা যাবে এবং কেনাকাটা করা যাবে। এখানে মজার ব্যাপার হচ্ছে যেকোন ব্যক্তি খুব সহজেই অন্যদেশে বসেও তার ঢাকার বন্ধু বা আত্মীয়কে পছন্দের পণ্য বা সেবা কিনে দিতে পারবে।

ই-কমার্সে আগ্রহীগণ কীভাবে আপনাদের অনুমোদিত মার্চেন্ট হতে পারবে?

ই-কমার্স মার্চেন্ট হতে চাইলে তার কয়েকটি বিষয়ে আমরা নজর দিয়ে থাকি। সেগুলো হচ্ছে- আগ্রহী প্রার্থীর একটি কোম্পানির প্রোফাইল আমাদের কাছে জমা দিতে হবে। কোম্পানির তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রার্থীর অফিস ভিজিট করা হয়। কোম্পানির নামে ডিবিবিএল একাউন্ট থাকতে হবে। কোম্পানির একটি ওয়েব পোর্টাল, ডেডিকেটেড সার্ভার এবং স্ট্যাটিক আইপি প্রয়োজন হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আমাদের সাথে একটি চুক্তি করতে হবে।

০০ মাহফুজুর রহমান মুকুল

সাক্ষাৎকার

অনলাইনে বা ইন্টারনেটে অর্থ লেনদেন বর্তমানে উন্নত দেশগুলোতে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। ঘরের চাল-ডাল থেকে শুরু করে সবকিছুই ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে এই দৃশ্যটি খুব সামান্য কিছু মানুষের কাছে পরিচিত হলেও অধিকাংশ মানুষই ই-কমার্সের সাথে কিংবা অনলাইন পেমেন্টের সাথে পরিচিত নয়। অনলাইনে লেনদেন মূলত দুই প্রকারের বলা যায়। একটি হচ্ছে স্থানীয় বা অভ্যন্তরীন এবং অন্যটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক। এবছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে স্থানীয় অনলাইন লেনদেন এর অনুমতি প্রদান করলেও এখনো পর্যন্ত এর বাস্তব প্রয়োগ খুব একটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের অনলাইন লেনদেন এবং ই-কমার্সের সম্ভাবনা ও বাস্তবতা নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকের সাথে কথা বলেছেন শীর্ষস্থানীয় আইএসপি প্রতিষ্ঠান বিডিকম অনলাইন লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক সুমন আহমেদ সাবির।

এই মুহুর্তে আমাদের দেশে অনলাইনে লেনদেনের বাস্তবতা কি?

অনলাইনে বা ইন্টারনেটে লেনদেনের এই বিষয়টি ১০ বছরের পুরনো একটি ধারণা। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যেই আমাদের দেশে অনলাইনে লেনদেনের অনুমতি দিলেও শুধুমাত্র ডাচবাংলা ব্যাংক ছাড়া তেমন কাউকে ফলপ্রসু কোন কার্যক্রম এখনো নিতে দেখা যায়নি। তবে আরও কয়েকটি ব্যাংক ইতোমধ্যে অনলাইনে লেনদেনের বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে।

অনলাইন পেমেন্ট কার্যক্রম চালু হলে কী ধরনের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যেতে পারে?

অনলাইনে লেনদেন চালু হলে নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিনোদন পণ্য ঘরে বসেই সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। বাস,ট্রেন, পেস্নন, স্টিমারের টিকেট কাটার ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। অনলাইনে লেনদেনের সুযোগ থাকলে বিভিন্ন টিকেট কাটার কাজগুলো খুব সহজ হয়ে যাবে।

ই-কমার্স চালু হলে পণ্যে ক্রেতারা কতখানি স্বচ্ছ সেবা পাবে বলে মনে করছেন?

সমাজের অপেক্ষাকৃত ধনী শ্রেনীর মানুষই ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয় করবে যারা খুবই সচেতন। অন্যদিকে যারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করবে তারা নিজেদের ব্যবসার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই ভালো সেবা দিতে বাধ্য থাকবে। কারণ, ভালো সেবা দিতে না পারলে কখনোই একজন ক্রেতা দ্বিতীয়বার তার সেবা নিতে আসবে না। তবে, বর্তমানে উন্নত দেশ গুলোতে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে প্রতারণা বন্ধের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ই-কমার্সকে নিরাপদ রাখার স্বার্থে এই প্রযুক্তি বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হবে।

পেপাল উন্মুক্ত করে দিলে আমাদের দেশের মানুষের কী ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবে?

আমাদের দেশে পেপাল চালু হলে আন্তর্জাতিক লেনদেনগুলো অনেক সহজতর হবে। বর্তমানে দেশে পেপাল চালু না থাকায় তরুণ প্রজন্মের সুযোগগুলো মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে। ইন্টারনেটে অনেক ফ্রিল্যান্সিং কাজ আছে যেখানে পেপাল একাউন্ট না থাকলে অর্থ উত্তোলন করা যায় না। পেপাল চালু হলে সেসব কাজ করে আমাদের তরুণ প্রজন্ম প্রচুর বৈদেশিক অর্থ উপার্জন করতে পারবে।

অনলাইনে লেনদেন চালু এবং ই-কমার্স বাস্তবায়নে আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোর কী ধরনের ভূমিকা পালন করা উচিত?

যেহেতু সরকার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে, সেহেতু ব্যাংকগুলো নিজেদের স্বার্থেই ই-কমার্স চালু করা উচিত। কারণ যারা ই-কমার্স আগে চালু করবে তারাই এই জগতে অগ্রপথিক হয়ে থাকবে।

এই মুহুর্তে কোন বিষয়গুলো অনলাইনে লেনদেন চালুর পথে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে?

এই মুহুর্তে তেমন কোন অন্তরায় আছে বলে আমি মনে করি না। এখন শুধুই প্রয়োগ করার ব্যাপার। এতদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ কনটেন্ট ছিল না। আশা করছি আগামী এক বছরের মধ্যেই আমাদের দেশে ই-কমার্সের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করতে পারব।

একজন ফ্রিল্যান্সারের দৃষ্টিতে অনলাইন লেনদেন

দেশের অভ্যন্তরে অনলাইন লেনদেনে বাস্তবিক পক্ষে এখন আর তেমন কোন সমস্যা নেই। তা যেমন আইটি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তেমনি ব্যাংক কতর্ৃপক্ষও ভাবছেন। শুধুমাত্র কনটেন্টের অভাব, মানসিকতার অভাব, সাহসী উদ্যোক্তার অভাব এবং মানুষের কাছে প্রচারনার অভাবে স্থানীয় বাজারে ই-কমার্সের প্রসার এখনো ঘটেনি বলেই ধরা যায়। তবে, দেশের অভ্যন্তরীন অনলাইন লেনদেন সন্তুষ্ট করতে পারেনি অনেক ফ্রিল্যান্সারকেই। তারা এখন পেপাল এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অর্থ লেনদেনকারী গেটওয়ে চালু হওয়ার প্রত্যাশা করছেন। আমরা কথা বলেছি রাকিবুর রহমান নামে এমনই একজন ফ্রিল্যান্সারের সাথে যিনি দীর্ঘদিন ধরে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে অর্থ উত্তোলনে ঝামেলায় পড়েছেন।

একজন ফ্রিল্যান্সার কোন কোন মাধ্যম ব্যবহার করে অর্থ লেনদেন করতে হয়?

ফ্রিল্যান্সারগণ অর্থ লেনদেনের জন্য ক্রেডিটকার্ড, পেপাল, মানিবুকার্স, এলার্টপে, লিবার্টি রিভার্স, ব্যাংক ট্রান্সফার, গুগল চেকআউট কিংবা বিভিন্ন সাইট থেকে প্রদত্ত পেঅনার ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে থাকেন। তবে এর মধ্যে পেপাল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

এই মুহুর্তে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারগণ কিভাবে অর্থ লেনদেন করে থাকে?

বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারগণ অর্থ লেনদেনের মধ্যে অর্থ গ্রহণটাই বেশি করে থাকেন। এর জন্য তারা পেপাল, মানিবুকার্স, এলার্টপে অথবা বিভিন্ন সাইট থেকে প্রদত্ত পেঅনার ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে থাকেন। যদিও পেপাল বাংলাদেশে অনুমদিত নয়। কিছু কিছু ফ্রিল্যান্সারগণ বিভিন্ন উপায়ে পেপাল ব্যবহার করে থাকেন। কেউ কেউ অন্যের ভেরিফাইড পেপাল একাউন্ট ব্যবহার করেও অর্থ গ্রহণ করে থাকেন। আবার বাংলাদেশে বসেও কেউ কেউ অন্য দেশের এড্রেস ব্যবহার করে পেপাল একাউন্ট তৈরী করে থাকেন। তবে এই ক্ষেত্রে একাউন্টটি ভেরিফাইড করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের একাউন্ট দিয়ে ফরেন কারেন্সি শুধু মাত্র পেপালে গ্রহণ করা যায়। পরে পরিচিত কারো ভেরিফাইড একাউন্টে সেই ফরেন কারেন্সি ট্রান্সফার করে বাংলাদেশি টাকা গ্রহণ করতে হয়। এত কিছুর মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে মানিবুকার্স ব্যবহার করা অনেকটা সহজ। এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশি যেকোন ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করা যায়। আস্তে আস্তে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

অর্থ লেনদেন করতে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে?

মানিবুকার্সের মাধ্যমে বাংলাদেশে অর্থ আনা সহজ হলেও বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো কিংবা বায়াররা মানিবুকার্সের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করতে চান না। অনেক ক্ষেত্রে একমাত্র পেপালেই অর্থ লেনদেন করতে হয়। এ জন্য তখন বাধ্য হয়ে কাজগুলো ছেড়ে দিতে হয় অথবা অন্যের পেপালের মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করতে হয়। আর সেক্ষেত্রে ডলার প্রতি ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকার বেশি পাওয়া যায় না। কখনও কখনও ২০% থেকে ২৫% পর্যন্ত পেপাল ইউজারকে দিয়ে অর্থ গ্রহণ করতে হয়। আবার সবার ক্ষেত্রে এরকম পরিচিত পেপাল ভেরিফাইড ইউজার ম্যানেজ করাও সম্ভব হয় না।

অন্যদিকে কোন কোন ফ্রিল্যান্সার তাদের প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন সফটওয়্যার কিংবা সার্ভিস নিয় থাকেন। আর তার জন্য মাস্টার কার্ড কিংবা ভিসা কার্ড অথবা পেপালের প্রয়োজন হয়। আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো থেকে যে সকল ক্রেডিটকার্ড প্রদান করা হয় সেগুলো দেশের বাইরে ব্যবহার করা যায়না। কিছু কিছু ব্যাংক ডুয়াল কারেন্সি কার্ড দিলেও সেসব কার্ড দিয়ে অনলাইনে পেমেন্ট করা যায় না, শুধুমাত্র বিদেশে কেনাকাটা, হোটেল কিংবা বিমান ভাড়া দেওয়া যায়। অন্য কোন কাজে লাগানো যায় না। যদিও এখন কিছু কিছু ব্যাংক অনলাইনে পেমেন্ট করার জন্য বিভিন্ন শর্ত আরোপে ক্রেডিটকার্ডের সুবিধা দিচ্ছে কিন্তু সেসব কার্ড পাওয়ার জন্য যেসকল নিয়মকানুন এবং শর্ত থাকে তা প্রায় বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সারদের পক্ষেই মেটানো সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই এক্ষেত্রেও অন্যের ভেরিফাইড পেপাল একাউন্ট ব্যবহার করতে হয়। এর জন্য ডলার প্রতি ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা গুনতে হয়। 
Source: Daily Ittefaq

সম্ভাবনাময় জাহাজ নির্মাণ শিল্প

সম্ভাবনাময় জাহাজ নির্মাণ শিল্প

রেজাউল হক কৌশিক
রফতানির নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প। এ শিল্পের যথাযথ বিকাশ হলে এখাত থেকে বছরে আয় হবে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। কর্মসংস্থান হবে লক্ষাধিক শ্রমিকের। বদলে যাবে দেশের অর্থনীতির চেহারা। সম্ভাবনাময় এ খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও বাড়তে শুরু করেছে। বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্কসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ।
নানা কারণেই জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বাংলাদেশ অন্যতম স্থান হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় তুলনামূলক কম খরচ। জাহাজ নির্মাণে প্রচুর দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণে স্বল্প খরচে প্রচুর শ্রমিক পাওয়া যায়। আর এ কারণে নির্মাণ খরচ অনেক কম। দক্ষিণাঞ্চল সমুদ্রবেষ্টিত বিধায় ভৌগোলিক সুবিধা এ সম্ভাবনার ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থা আইএমও’র জারিকৃত আইএসপিএস কোডের কারণে ২৫ বছরের বেশি পুরনো জাহাজসমূহ আগামী বছর থেকে চলাচল করতে পারবে না। আইএমও’র এ নির্দেশনার কারণে কেবল ইউরোপীয় দেশগুলোকেই কিছু দিনের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার নতুন জাহাজ বাদ দিতে হবে এবং এর স্থলে নতুন জাহাজ যোগ করতে হবে। আর এ জাহাজ নির্মাণে বাংলাদেশই হতে পারে অন্যতম বিকল্প। কারণ, বিশ্বের অন্যতম জাহাজ নির্মাণকারী দেশ চীন, ভিয়েতনাম, ভারতের সবকটি শিপইয়ার্ড আগামী ৫ বছরের জন্য বুকড হয়ে আছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলে সম্ভাবনার পালে লাগবে নতুন হাওয়া।
চলতি বছরে সাড়ে তিন কোটি টাকা মূল্যের জাহাজ নির্মাণ কাজ চলছে। তিনটি ইয়ার্ড রফতানিমুখী জাহাজ নির্মাণ করছে। ইয়ার্ডগুলো হলো—আনন্দ শিপইয়ার্ড, ওয়েস্টার্ন মেরিন এবং হাইস্পিড। তবে এ ধরনের আরও ইয়ার্ড থাকলে এখাত থেকেই বাংলাদেশের বছরে ১০০ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব হতো। এর মধ্যে জাহাজ রফতানি করে বাংলাদেশ প্রায় চার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে।
তবে এ খাতে রয়েছে নানা সমস্যা। অবকাঠামোগত সমস্যা, ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে উচ্চসুদের হার, কাঁচামাল আমদানিতে ব্যাংক গ্যারান্টির ক্ষেত্রে দেশীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় রেটিং না থাকা। উদ্যোক্তারা জানান, এখাত বিকাশে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করা এবং শতভাগ রফতানিমুখী শিল্পে প্রচলিত শর্তে বন্ডেড সুবিধা। এ শিল্প বিকাশে যে সমস্ত সমস্যা রয়েছে তার অন্যতম হলো ব্যাংক সার্ভিস চার্জ অনেক বেশি। জাহাজ নির্মাণের জন্য বিদেশ থেকে যে কাঁচামাল নিয়ে আসা হয় সেগুলোর জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হয়। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর আন্তর্জাতিক রেটিং অনেক কম হওয়ায় বিদেশ থেকে তারা প্রত্যাখ্যাত হয়। তখন বিদেশি কোনো ব্যাংক থেকে এ গ্যারান্টি নিতে হয়। এ গ্যারান্টি বাবদ কমিশন অনেক বেশি। জাহাজ নির্মাণ যেহেতু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এজন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যাংক ঋণ নিতে হয়। অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে যেখানে সুদ দিতে হয় ৭ থেকে ৮ শতাংশ, সেখানে এ শিল্পের জন্য সুদ দিতে হয় ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ, যা উদ্যোক্তাদের জন্য বড় সমস্যা। কাঁচামাল আমদানি করার সময় ডিউটি খরচও অনেক বেশি, ১০ মিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল আমদানি করতে ৩ থেকে ৪ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এছাড়া ছাড়পত্রের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা সমস্যা। ইয়ার্ডসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো সুবিধা, শিল্প প্রসারে সহায়তা, প্রণোদনা সুবিধা নিশ্চিত করা না হলে সম্ভাবনাময় এ খাতটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
অবশ্য জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সমস্যাগুলো দূর করে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন এক্সপোর্ট প্রোমোশন ব্যুরো (ইপিবি) একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করেছে। অপরদিকে ইপিবি খুব শিগগিরই জাহাজ নির্মাণ শিল্প বিষয়ক জাতীয় সেমিনারের আয়োজন করতে যাচ্ছে।
এ খাতের বিকাশে বিশেষ সহায়তা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে ঋণের সুদের হার কমানো, সহজে ও দ্রুত ঋণ দেয়া এবং বড় অঙ্কের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রচলিত নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। ঘোষিত মুদ্রানীতিতেও জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এই খাতে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দিতেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক উত্সাহিত করছে।
রফতানিমুখী জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়নে ২০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সম্মতি দেয়ার পরও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে বাংলাদেশে রফতানিযোগ্য জাহাজ নির্মাণকারী তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো ওয়েস্টার্ন মেরিন, আনন্দ শিপইয়ার্ড ও হাইস্পীড গ্রুপ।
ওয়েস্টার্ন মেরিন : চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কোলাগাঁও গ্রামে ওয়েস্টার্ন মেরিন তাদের শিপইয়ার্ডের কার্যক্রম শুরু করে। ওয়েস্টার্ন মেরিন জার্মান, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, পাকিস্তান এবং লিবিয়া থেকে জাহাজ নির্মাণের অর্ডার পেয়েছে। এছাড়া এর মধ্যে তারা ফিনল্যান্ডের জন্য ১টি এবং জার্মানির জন্য ২টি জাহাজ নির্মাণ করেছে। জার্মানির গ্রোনা শিপিং-এর জন্য ১২টি এমপিসি ভ্যাসেল, ডেনমার্কের স্টেলা শিপিং-এর জন্য ৫টি আইস ক্লাস কন্টেনার ভ্যাসেল, পাকিস্তানের করাচি পোর্টের জন্য ২টি পেসেঞ্জার ভ্যাসেল, লিবিয়ার আল-রুপন সার্ভিসের জন্য ১টি প্লাটফর্ম সাপ্লাই ভ্যাসেল এবং ফিনল্যান্ডের পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান লেমর এবি’র জন্য কিছু স্পেশাল ভ্যাসেল নির্মাণ করছে।
আনন্দ শিপইয়ার্ড : নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাটের কাছে চর রমজানে গড়ে উঠেছে এ শিপইয়ার্ডটি। শুরুতে পন্টুন নির্মাণ করত কোম্পানিটি। কোম্পানিটির বড় সাফল্য ‘স্টিলা মুন’ নামের জাহাজ তৈরি। আনন্দ শিপইয়ার্ড লি. কর্তৃপক্ষের নির্মিত এটি অষ্টম জাহাজ। এর আগে আরও সাতটি জাহাজ ডেনমার্ক এবং মোজাম্বিকে রফতানি করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরও বৃহদাকৃতির ১০টি জাহাজ জার্মানির বিভিন্ন কোম্পানির জন্য তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। আগামী ২০১৩ সালের মধ্যে জাহাজগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
হাইস্পীড শিপইয়ার্ড : হাইস্পীড শিপইয়ার্ড আর জাপানের মিটসুই ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড শিপবিল্ডিং যৌথভাবে গত ৩০ বছরে প্রায় ১৫০টি বিশ্বমানের জাহাজ নির্মাণ করেছে।


জাহাজ রফতানি খাতে বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের আশাবাদ


চট্টগ্রাম ব্যুরো, শুক্রবার ২৭ নভেম্বর ২০১০

জাহাজ নির্মাণ শিল্পের উন্নয়ন করে শতভাগ রফতানিমুখী জোন হিসেবে গড়ে তোলা হলে ২০১৫ সালের মধ্যে বছরে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া। তিনি বলেন, সরকার সম্ভাবনাময় জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, ২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় জাহাজ নির্মাণ খাতে অর্থ সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায় রয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের ড্রাইডকে জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিনের তৈরি সমুদ্রগামী দুটি জাহাজ জার্মানির গ্রোনা শিপিংয়ের কাছে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ওয়েস্টার্ন মেরিনের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম ‘গ্রোনা অ্যামারসাম’ ও ‘গ্রোনা বিয়েসসাম’ নামের জাহাজ দুটি মার্কু ভেডরের কাছে হস্তান্তর করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জার্মানির ফেডারেল ফরেন অফিসের এস্টেট সেক্রেটারি মার্টিন ভ্যাসেল, বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত হলগার মাইকেল, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন।
মার্টিন ভ্যাসেল বলেন, জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বাংলাদেশের জন্য এটি বিশাল সফলতা। এর মাধ্যমে জার্মানির বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আরও বেশি উত্সাহিত হবেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গ্রোনা শিপিংয়ের পক্ষে মার্কু ভেডর, দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট ডিরেক্টর জালাল খালেদ প্রমুখ।
আইএমও নির্দেশনায় এবং জার্মানিশিয়ার লয়েডের তত্ত্বাবধানে ১০০ মিটার লম্বা এবং ৫ হাজার ২০০ ডিডব্লিউটি আইস ক্লাস মাল্টিপারপাস জাহাজ দুটি নির্মাণ করা হয়। ১৫ নভেম্বর জাহাজ দুটি সফলভাবে সি ট্রায়াল সম্পন্ন করে। ই-৩ আইস ক্লাস ভ্যাসেল হিসেবে অনুমোদিত জাহাজ দুটি যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশে স্বচ্ছন্দে চলাচলে সক্ষম।
ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ দীর্ঘকায় জাহাজগুলো নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ১৫শ’ মেট্রিক টন আইস ক্লাস স্টিল এবং এগুলো সংযুক্ত করতে ৬০ মেট্রিক টন ওয়েল্ডিং ইলেকট্রডস খরচ হয়। এগুলোতে আরও ব্যবহার করা হয়েছে ২২ কি.মি. মেরিন ক্যাবল এবং এগুলোর মরিচা প্রতিরোধ ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজে ব্যবহার করা হয়েছে ২৪ লিটার সিগমা ব্যবহৃত পেইন্ট। এ সার্বিক কর্মকাণ্ডে ব্যয় হয়েছে মোট ১০ লাখ কর্মঘণ্টা।
পরে মন্ত্রী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে কেক কাটেন এবং জাহাজের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।

Source: Daily Amardesh


কথাটা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে


অহংকারে মন নেচে নেচে ওঠে, যখন একটি মানসম্পন্ন পণ্যের গায়ে লেখা থাকে 'মেইড ইন বাংলাদেশ'। দেশটাকে সম্পূর্ণভাবে উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে এই সেস্নাগানটিকেই আমাদের কর্তব্য হিসেবে নিতে হবে। আজ আমরা যে সব দামি ভোগ্যপণ্য ব্যবহার করছি তা হয়তো ইউরোপ অথবা আমেরিকা কিংবা বিশ্বের অন্যকোন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ শিল্পপণ্য দেশের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ১৫ কোটি মানুষের এদেশ । এর বাজার ছোট নয়। এই চাহিদার বিরাট অংশ পূরণ করা হয় বিশাল আমদানি বাণিজ্যদ্বারা। শুধু আসছেই পণ্য। আমরা কী রপ্তানি করতে পারছি ? আমাদের উলেস্নখযোগ্য রপ্তানিপণ্যের তালিকায় আছে তৈরি পোশাক, চা, চামড়া ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য। এগুলো নিয়ে আমরা খুব গর্ব করতে পারি না। তৈরি পোশাক বাদ দিলে বাকিগুলো প্রকৃতির আশীর্বাদে ধন্য। আবার তৈরি পোশাকও আমাদের সস্তা শ্রমের ফসল, এগুলা জটিল কোনো প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প নয় । দেশীয় শিল্পকে সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আমাদের উন্নত জটিল প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প গড়ে তুলতে হবে। আজও আমরা না তৈরি করতে পেরেছি একটি রেলওয়ে ইঞ্জিন, না তৈরি করতে পেরেছি একটি বিমান ইঞ্জিন। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এগুলো অবাস্তব কথা মনে হতে পারে। কিন্তু কোনো দেশের সম্ভাবনা যে অসীম। তা চিন্তা করেই এসব কথা আমাদের ভাবতে হবে।

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে। পৃথিবীর যত জাতির বৈপস্নবিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তাদের জনগণ, ও রাজনৈতিক নেতারা বড় বড় স্বপ্ন দেখতেন। অদম্য মনোবল আর কঠোর পরিশ্রম দ্বারাই তারা পেয়েছেন স্বপ্নের স্বাদ। নিজের দেশকে বসিয়েছেন শ্রেষ্ঠত্বের আসনে । বাঙালি জাতি মেধার দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে তারাও মেধার স্ফুরণ ঘটাতে পারে। এইতো ক'দিন হলো বাংলাদেশের তৈরি দু'টি জাহাজ জার্মানিকে হস্তান্তর করা হলো। জাহাজ দ'ুটি অত্যাধুনিক মানের। জাহাজ নির্মাণের মতো বড় শিল্প আমাদের দেশে গড়ে উঠেছে। এবং তা রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের মতো শিল্পোন্নত মহাদেশে। এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় কৃতিত্ব। যা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে আমরা যতদূর এগিয়েছি। বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সম্ভাবনার প্রশংসা করছেন। এটা অনেক বড় আশার কথা। আমাদের দেশেও মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে। সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচন হচ্ছে। আমরা যদি আমাদের সীমাবদ্ধতাকে জয় করতে পারি তাহলে অবশ্যই আমরা বিশ্বদরবারে মর্যাদার আসন পাবো। একটি গর্বিত জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবো বিশ্বের অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশ যেভাবে অনেক বড় বড় শিল্পপণ্যের গায়ে 'মেইড ইনঃ' কথাটা লিখতে পারে_ আমরা সেভাবে 'মেইড ইন বাংলাদেশ' কথাটা লিখতে সক্ষম হবো। আমাদের পণ্যকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। 'মেইড ইন বাংলাদেশ' কথাটাকে বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসাতে হবে।

এম এস আলম সোহেল,
ভেলুয়াতলী, বালুচড়া, কলমাকান্দা, নেত্রকোনা।