Friday, October 15, 2010

ভ্রমণের মাধ্যমে শিক্ষা

ভ্রমণের মাধ্যমে শিক্ষা

শাবি'র এফইটিটি বিভাগ

০০ মুহাম্মাদ রিয়াজ উদ্দিন

বিশেষজ্ঞদের অভিমত বর্তমান বিশ্বে মানুষের অধিকতর যুদ্ধ হবে খাদ্যের জন্য যুদ্ধ। দিন দিন আবাদভূমি ক্রমশ ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে। খাদ্য ঘাটতি রয়েছে বহু দেশে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার জন্যও রয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি। আর মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য। খাদ্য ঘাটতি মেটাতে পারলেই পূরণ হবে উন্নয়নের মূল লক্ষ্য। আর দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টি টেকনোলজি(এফইটিটি) বিভাগের পড়াশুনার সুযোগ। এখান থেকে তৈরি হবে আগামী দিনের খাদ্য বিশেষজ্ঞ। যারা কাজ করবে দেশের উন্নতির লক্ষ্যে। এ বিভাগের যেমন রয়েছে ক্লাসের তাত্তি্বক পড়াশুনার গুরুত্ব তেমনি রয়েছে মাঠ পর্যায়ের গবেষণারও গুরুত্ব। আর তাই বছরে দু-একবার দেশের নানারকম খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে গিয়ে হাতে-কলমে জানার জন্য রয়েছে ফিল্ড ওয়ার্ক। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টি টেকনোলজি বিভাগের ৪র্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে মাসব্যাপী শিক্ষা ভ্রমণের মাধ্যমে বহুজাতিক কোম্পানিসহ নানা ঐতিহাসিক স্থানও পরিদর্শন করে। নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ(টিআইসিআই) পরিদর্শনের মাধ্যমে তাদের মাঠ পর্যায়ের গবেষণার কার্যক্রম শুরু হয়। এখানকার প্রতিষ্ঠানে ট্রেনিং-এ অংশ নেয় বিভাগের ২৮ জন ছাত্র-ছাত্রী। নির্দিষ্ট বিষয়ে কয়েকটি সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয়। ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টি টেকনোলজি পড়ালেখা করে পরবর্তী জীবনে কিভাবে বাস্তবে প্রয়োগ করবে এবং ব্যবহারিক দক্ষতা বাড়াবে এমন বিষয়ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বিভাগের প্রধান ড. মো. মোজাম্মেল হক ও সহকারী অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমদের সার্বিক নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ ছিল বেশ আনন্দপূর্ণ। নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায় অবস্থিত দেশের বহুজাতিক কোম্পানি প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিজও ঘুরে দেখে শিক্ষার্থীরা। মিলের ভেতর নানারকম যন্ত্রাংশ, উৎপাদন কৌশল, পদ্ধতি ও বাজারজাত প্রক্রিয়া দেখে অভিভূত শিক্ষার্থীরা। প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিজ ঘুরে দেখা ছাড়াও ছিল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়। কৌতূহলী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রশ্ন করে জেনে নেয় তাদের অজানা সব তথ্যগুলো। একঝাঁক তরুণ ফুড ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে মত বিনিময় করে খুশি কোম্পানির সংশিস্নষ্টরা।

আগস্টের এ মাসব্যাপী সফরের শেষে ছিল কুমিলস্নার ময়নামতি ও কুমিলস্নায় অবস্থিত বার্ড পরিদর্শন। ভ্রমণের প্রত্যেকটি দিনই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবহারিক ক্লাসকক্ষের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবাই মনোযোগের সাথেই পর্যবেক্ষণ করেছে বিষয়গুলো। সময় ছিল না একটু বেড়ানোর। একটু অবসরের। এটা যেন ক্যাম্পাস জীবনের উল্টো পাশ। তাই সবার ক্লান্তি দূর করার জন্যই এবার একটু মনের আনন্দে বেড়ানো। শেষদিকে এসে যখন দর্শনীয় স্থান দেখা_ তখন আনন্দ ছিল সবার চোখে -মুখে। দেশের বৌদ্ধ সভ্যতার প্রাচীন প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন কুমিলস্নার ময়নামতি। শহরের অদূরেই অবস্থিত বৌদ্ধদের তীর্থস্থান হিসেবে খ্যাত এ স্থানটি। ময়নামতি এসে জানতে পারে এখানকার সব ঐতিহাসিক অজানা কথাগুলো। বাংলাদেশে বৌদ্ধ সভ্যতার উদ্ভব, বিকাশ ও ধ্বংসের এমন নিদর্শন দেখে শিক্ষার্থীরা উৎফুলস্ন। কখনো একাকী কিংবা বনু্লদের নিয়ে ক্যামেরায় বন্দি রাখতে ভুলে যায়নি কেউই।

ভ্রমণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিভাগের প্রধান ড. মো. মোজাম্মেল হক জানান, এফইটিটি বিভাগের তাত্তি্বক ক্লাসের পাশাপাশি ব্যবহারিক ক্লাসের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। শিক্ষার্থীদের তাত্তি্বক জ্ঞানকে আরো শাণিত করতেই এরকম ভ্রমণের ব্যবস্থা। বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমদ জানান, বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন নতুন বিষয় জানা ও পর্যবেক্ষণ করতে পেরে ভালো লেগেছে। বিভাগের তরুণ প্রকৌশলীরাও জানিয়েছে, তাদের ভ্রমণের হাতে-কলমে শিক্ষণ, মজার মজার অভিজ্ঞতা ও আনন্দের কথা। ৪র্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. জাকির হোসেন ভ্রমণকে বাস্তব জীবনের নতুন অভিজ্ঞতা হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, স্যারদের নির্দেশনায় সবকিছুই আমাদের জন্য কল্যাণকর ছিল তাই কৃতজ্ঞ স্যারদের প্রতি। বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান শিপুর মতে, পুরো ভ্রমণই ছিল আনন্দদায়ক। হাবিবুর রহমান জানান, শিক্ষা ভ্রমণের মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু জানতে পেরেছি। এরকম উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণকর হিসেবে মনে করি। দেশের তরে নিজেদের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে তরুণ খাদ্য প্রকৌশলীরা এমনটিই কাম্য সবার।০০ 
Source: Daily Ittefaq

No comments:

Post a Comment