Thursday, October 6, 2011

ব্রির সাফল্য : খরা লবণাক্ততা ঠাণ্ডা প্রতিরোধী তিনটি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন

ব্রির সাফল্য : খরা লবণাক্ততা ঠাণ্ডা প্রতিরোধী তিনটি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন

- আশরাফ আলী
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ‘ব্রি’ আরো তিনটি নতুন উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। খরা, লবণাক্ততা, ঠাণ্ডা ও রোগবালাই প্রতিরোধী ব্রি ধান৫৫, ব্রি ধান৫৬ এবং ব্রি ধান৫৭ নামে এই জাতগুলো ইতোমধ্যে অবমুক্ত করা হয়েছে। উদ্ভাবিত এ জাত তিনটিসহ ব্রির এ যাবৎ নতুন জাতের ধান উদ্ভাবনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০টিতে। এর বাইরে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্রি ধান২৯ জাতে ভিটামিন ‘এ’, উৎপাদনকারী জিন সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্রি ধান৫০-এর (বাংলামতি) উদ্ভাবন ব্রির আরেকটি বড় অর্জন। এসব ধানের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে অদূরভবিষ্যতে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির পাশাপাশি শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদানের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে।
ব্রি সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত চারটি হাইব্রিডসহ মোট ৬০টি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব ধান সনাতন ধানের জাতের তুলনায় দু-তিন গুণ বেশি ফলন দেয়। বর্তমানে দেশের প্রায় ৮০ ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল ধানের চাষাবাদ করা হচ্ছে। দেশের মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৯০ ভাগই আসছে ব্রি উদ্ভাবিত এসব জাতের ধান থেকে। এর ফলে দেশে আবাদি জমি কমে যাওয়া সত্ত্বেও চার দশক আগের তুলনায় ধান উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ।
ব্রির গবেষকেরা জানান, ব্রি ধান৫৫ বোরো মওসুুমে দেশে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকা ব্রি ধান২৮ জাত থেকে পাঁচ দিন নাবী। অর্থাৎ বোরোতে এর জীবনকাল ১৪৫ দিন। হেক্টরে এক টন বেশি ফলন দেবে। অন্য দিকে আউশ মওসুমে এর জীবনকাল ব্রি ধান২৭-এর চেয়ে ১০ দিন আগাম অর্থাৎ ১০৫ দিন। হেক্টরে সাড়ে চার থেকে পাঁচ টন ফলন দিতে সক্ষম। এর চাল চিকন ও লম্বাটে। এ জাত মধ্যম মানের লবণাক্ততা, খরা ও ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে। এতে রোগবালাই প্রচলিত অন্যান্য জাতের চেয়েও কম হয়।
ব্রি ধান৫৬-এর জীবনকাল বিনা ধান৭-এর চেয়ে পাঁচ দিন এবং ব্রি ধান৩৩-এর চেয়ে প্রায় ১০ দিন আগাম অর্থাৎ ১১০ দিন। এটি একটি খরা সহনশীল জাত। প্রজননপর্যায়ে সর্বোচ্চ ১০-১২ দিন বৃষ্টি না হলেও ফলনের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। এটি রোপা আমনের জাত। খরা প্রবণ এলাকায় চাষাবাদের উপযোগী এ জাত হেক্টরে সাড়ে চার থেকে পাঁচ টন ফলন দিতে সক্ষম।
অনুরূপভাবে ব্রি ধান৫৭ দেশে খরা প্রবণ এলাকায় স্বল্পমেয়াদি (১০৫ দিন) জীবনকালসম্পন্ন জাত হিসেবে ফলন পরীক্ষায় সনে-াষজনক প্রমাণিত হয়েছে। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে রোপা আমনের এ জাত হেক্টরে চার থেকে সাড়ে চার টন পর্যন- ফলন দিতে সক্ষম। ব্রি ধান৫৭-এর চালের আকার-আকৃতি প্রচলিত জিরাশাইল ও মিনিকেট চালের মতো। এর জীবনকাল আগাম উফশী জাত বিনা ধান৭-এর চেয়ে ১০ দিন এবং ব্রি ধান৩৩-এর চেয়ে প্রায় ১৫ দিন কম।
ব্রি সূত্র জানায়, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্রি ধান২৯ জাতে ভিটামিন ‘এ’ উৎপাদনকারী জিন সংযোজন করা হয়েছে। পাশাপাশি অধিক আয়রন ও জিঙ্কসমৃদ্ধ কৌলিক সারি চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ধানের সমপ্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশ অদূরভবিষ্যতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির পাশাপাশি শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এসব উপাদানের চাহিদাও অনেকখানি পূরণ হবে।
এ ছাড়া ব্রি ধান৫০ (বাংলামতি)-এর উদ্ভাবন ব্রির আরেকটি বড় সামপ্রতিক অর্জন। এটি বোরোধানের জাত। এর জীবনকাল ১৫৫ দিন এবং গড় ফলন হেক্টরে সাড়ে ছয় টন। ব্রি এই প্রথমবারের মতো বোরো মওসুমের উপযোগী একটি সুগন্ধি ধানের জাত উদ্ভাবনে সফল হয়েছে। সাধারণত আমন মওসুমে সুগন্ধি ধানের চাষ হয়ে থাকে। এ দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী বাংলামতি ধানের চালের আকার পাকিস্তান ও ভারতের বাসমতি চালের অনুরূপ এবং ফলনও হেক্টরে এক টন বেশি।
এ দিকে গত এক বছরের গবেষণা কার্যক্রমের পাশাপাশি দেশের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের চার দশকের অর্জন ও অগ্রগতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরতে আগামী রোববার থেকে ব্রির বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা শুরু হচ্ছে। ওই কর্মশালায় ‘গবেষণা অগ্রগতি ২০১০-১১’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস'াপন করবেন ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ড. মো: খায়রুল বাশার।
ওইদিন সকাল ১০টায় গাজীপুরে ব্রি মিলনায়তনে এ উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সি কিউ কে মুসতাক আহমদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপসি'ত থাকবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপসি'ত থাকবেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ওয়ায়েস কবীর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে ব্রির মহাপরিচালক ড. এ কে জি মো: এনামূল হক সভাপতিত্ব করবেন। এতে বিএআরসি, ডিএই, ইরিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস'া, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কৃষকসহ তিন শতাধিক প্রতিনিধি যোগ দেবেন বলে গতকাল ব্রির প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের প্রধান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এম এ কাসেম জানান।
Source: http://www.dailynayadiganta.com, ৬ অক্টোবর ২০১১

Monday, September 26, 2011

বরফবাক্স : মাছ সংরক্ষণের সাশ্রয়ী কৌশল

বরফবাক্স : মাছ সংরক্ষণের সাশ্রয়ী কৌশল

লেখক: আব্দুসসালাম সাগর, বাকৃবি, ময়মনসিংহ |

Details

বাংলাদেশে মাছ ধরার পর থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণের প্রতিটি ধাপে মত্স্যজীবী, মাছ ব্যবসায়ী বা মাছ পরিবহনকারীদের অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে বিপুল পরিমাণ মাছ পচে নষ্ট হয়ে যায়। মাছ ধরার পর থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত গুণাগুণ প্রায় ২৫ থেকে ২৮ শতাংশও টিকে থাকে না। মাছ পচনের এসব ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মাছ সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য বরফ বাক্সের ব্যাপক প্রচলনের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। সমপ্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট মত্স্যবিজ্ঞানী ও বাকৃবির অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. নওশাদ আলম এসব তথ্য দেন।

অধ্যাপক ড. নওশাদ আলম জানান, এফএও এর অর্থায়নে মত্স্য বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত ‘উপকূলীয় মত্স্যজীবীদের জীবিকার নিরাপত্তার জন্য ক্ষমতায়ন (ইসিএফসি)’ শীর্ষক এক প্রকল্পের গবেষণায় দেখা গেছে, মাছ ধরার পর পর মাছকে যথোপযুক্ত বরফ বাক্সে রেখে পরিমাণমত বরফ দিলে মাছের আহরণোত্তর ক্ষতি প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব। বর্তমান সময়ে সঠিকভাবে বরফ বাক্সে মাছ সংরক্ষণ ও পরিবহনের ফলে বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে, যা আমাদের মত একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে।

মত্স্যজীবী ও মাছ ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করে মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য ড. নওশাদ আলম দেশীয় বস্তু দিয়ে তৈরি কয়েকটি আদর্শ ও ব্যয় সাশ্রয়ী বরফ বাক্স তৈরি করেছিলেন। বর্তমান সময়ে এসব বরফ বাক্স দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি হিসেবে বর্তমানে দেশে বছরে মাছ উত্পাদন প্রায় ২৮ লক্ষ মেট্রিক টন। যথাযথ পরিচর্যার অভাবে এর প্রায় চার ভাগের এক ভাগ অর্থাত্ প্রায় ৭ লক্ষ মেট্রিক টন মাছ খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়।

ইসিএফসি এ প্রকল্পটি ২০০১ সাল থেকে শুরু হয়ে চলমান থাকে ৬ বছর। তবে মাছ পরিবহন ও অবিক্রিত মাছ বরফে সংরক্ষণ করে পরে বিক্রির জন্য বরফ বাক্সের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়তে থাকে। কক্সবাজার থেকে শুরু হলেও এই সহজ ও টেকসই প্রযুক্তিটি চট্টগ্রাম, ঢাকা, যশোর, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের প্রধান প্রধান মাছ উত্পাদন ও ব্যবসা অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ২০১১ সালে এসে

দেখা যায় দেশের প্রায় সকল মত্স্য কেন্দ্র, আড়ত ও মাছ বাজারে বরফ বাক্সের ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে বলে দাবি করেন ড. নওশাদ আলম। ড. নওশাদ আলম সম্পাদিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দাউদকান্দি প্লাবনভূমি মত্স্য প্রকল্পের মাছ একটির উপর আর একটি বসানো পর পর ২টি বাঁশের ঝুড়িতে রেখে ট্রাকে পরিবহন করে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ২৭ ভাগ মাছ পচে নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে মাছ চাষিরা ৩০ শতাংশ মূল্য কম পেয়েছেন। অবিক্রিত মাছ সংরক্ষণের জন্য বরফ বাক্স অপেক্ষাকৃত ছোট বরফ বাক্স (৩০ x ২৪ x ১৮ ইঞ্চি) এবং ট্রাকে মাছ পরিবহনের জন্য কমিউনিটি বরফ বাক্সের (৬ x ৩ x ৩ ফুট) ব্যবহার করা হয় যেটি তুলনামূলকভাবে বড় আকারের। প্রয়োজনের তাগিদে মাছ পরিবহনকারীরা ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন করে নিয়েছেন। বড় বাক্সে শীতকালে বরফসহ ২৫০ থেকে ২৮০ কেজি ও গ্রীষ্মকালে বরফসহ ২০০ থেকে ২২০ কেজি এবং ছোট বাক্সে শীতকালে বরফসহ ১২০ থেকে ১৫০ কেজি ও গ্রীষ্মকালে ৮০ থেকে ১২০ কেজি মাছ পরিবহন করা হয়।

মাছ সংরক্ষণ ও পরিবহনে ব্যবহূত এই বরফ বাক্সগুলো তৈরির জন্য দেশব্যাপী অসংখ্য ছোট-বড় উদ্যোক্তা ও নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এখন কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় বাণিজ্যিকভাবে এই সকল বরফ বাক্স তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে মাছের পচন অনেকাংশে কমে গিয়ে মাছের গুণাগুণ ঠিক থাকছে। বরফ বাক্সের ব্যবহার ও উন্নত পরিচর্যার ফলে মাছের আহরণোত্তর পচন ২৮ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে বলে অতি সমপ্রতি এফএও এর অর্থায়নে ড. নওশাদ আলমের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ‘বাংলাদেশে মাছ আহরণের পর তার গুণগত মান হ্রাস: খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণায় জানা গেছে। গত এক দশকে মাছের আহরণোত্তর ক্ষতি প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে আসাতে এখন বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। সরকারি সহায়তা পেলে মাছ সংরক্ষণ ও পরিবহনের এই প্রযুক্তিটি দেশে ব্যাপকভাবে সমপ্রসারিত হয়ে মাছের পচন আরো কমে গিয়ে জনগণের আমিষের চাহিদা বহুলাংশে মেটাতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Source: Daily Ittefaq

নকশি কাঁথা এখন যাচ্ছে বিদেশেও

নকশি কাঁথা এখন যাচ্ছে বিদেশেও

লেখক: জামালপুর প্রতিনিধি | মঙ্গল, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১, ১২ আশ্বিন ১৪১৮

Details

জামালপুরের গ্রামীণ নারীদের নিপুণ হাতে তৈরি নকশি কাঁথা এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যাচ্ছে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের এই নকশি কাঁথা এখন সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের রূপ নিয়েছে। গাঁয়ের বধূরা এখন ঘরে বসে নেই তারা এখন নকশি কাঁথা বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করছেন।

জামালপুর জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় এলাকার দরিদ্র, মধ্যবিত্ত এমনকি শিক্ষিত মহিলারা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কারুশিল্পকে। মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে সীমিত আকারে আশির দশকে এ কারুশিল্প শুরু হয়। বর্তমানে এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে এ ব্যবসার চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। কারুশিল্পকে ঘিরে জামালপুর জেলায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় ৩ শতাধিক নারী উদ্যোক্তা, যার মাধ্যমে ঘরে বসে থাকা ৬০ হাজারের বেশি নারী তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিয়েছেন। কারুশিল্পকে ঘিরে এখন জেলার আনাচে-কানাচে জমজমাট ব্যবসা চলছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মহাজনরা কারুশিল্পী ও উদ্যোক্তাদের কাছে বিভিন্ন ডিজাইনের বিছানার চাদর, নকশি কাঁথা, ওয়ালম্যাট, সোফার কুশন, পাপোশ, ফতুয়া, নকশি করা রকমারি পাঞ্জাবি মহিলাদের হ্যান্ডব্যাগসহ নানা পোশাকের অর্ডার নিয়ে থাকেন।

ঈদ পূজা পার্বণে রকমারি ডিজাইনের পোশাক সারা দেশে বিক্রি হয়ে থাকে। পাইকারী বিক্রির পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে আগত ক্রেতারা নিজেদের পছন্দের পোশাক স্বল্প মূল্যে ক্রয় করে থাকেন। পূজা ও সামনে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। জামালপুরের কারুশিল্পের উন্নয়নে এবং নারী উদ্যোক্তাদের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের নির্দেশে ন্যাশনাল ব্যাংক সমপ্রতি ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া চালু করেছে । ইতিমধ্যে অনেক উদ্যোক্তা মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছেন।

শহরের আমলাপাড়ার পরশমনি হস্তশিল্প, রকি হস্তশিল্প, সৃষ্টি হস্তশিল্পসহ বাংলার উত্সব হস্তশিল্পের মালিকগণ অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েও দীর্ঘদিন যাবত্ ঋণ না পেয়ে তাদের ব্যবসার তেমন প্রসার ঘটাতে পারেননি। এব্যাপারে ব্যাংক ব্যবস্থাপকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, যোগ্য ব্যক্তিদের ঋণদান অব্যাহত রয়েছে। নারী উদ্যোক্তারা জানান, কারু ও কুটির শিল্পের প্রতি সরকারে বিশেষ নজর দিয়ে ঋণ প্রদান অব্যাহত থাকলে মোটা অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে ঘরে বসেই এখন দেশ-বিদেশে ব্যবসা চালিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। পাশাপাশি গ্রামীণ বেকার মহিলারা তাদের ঘরে বসে কর্মক্ষম হয়ে নিজে এবং দেশকে স্বাবলম্বী করে তুলবেন। বর্তমানে জামালপুরে ঘরে বসে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় জেলার অনেক কর্মমুখী নারী/পুরুষ ব্যবসা প্রসার ঘটিয়ে এখন নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন।

শহরের কাচারিপাড়ার কারু নিলয়, হ্যান্ডিক্র্যাফটের মালিক আঞ্জুমান আরা খানম ১৫০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ১৯৯৫ সালে নিজ বাসায় নকশি কাঁথার কাজ শুরু করেন। এখন তার ১০ জন কর্মচারি ও ৭০০ সেলাই কর্মী রয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ৫ লাখ টাকা। বর্তমানে মোট মূলধন দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া দীপ্ত কুঠির, শতদল, রংধনু, প্রত্যয়, প্রতীক হ্যান্ডিক্র্যাফটের মালিকসহ অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানান, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন তারা। জনপ্রিয় শিল্পটি উন্নয়নে সরকারি সহযোগিতা পেলে পোশাক শিল্পের ন্যায় এ শিল্পটি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।

Source: Daily Ittefaq

Related Link:

বিশ্ব বাজারে বগুড়ার নকশি কাঁথা

Sunday, September 25, 2011

পানির ওপর সবুজের উচ্ছ্বাস

পানির ওপর সবুজের উচ্ছ্বাস


দূর থেকে মনে হয়, কে যেন সবুজের গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। কাছে গেলে ভ্রম ভাঙে। এ তো বিশাল জলাশয়ে সবুজের সারি। স্বপ্নে স্বপ্নে গাঁথা সবুজ! চোখ জুড়ানো এ দৃশ্য পিরোজপুরের নাজিরপুর ও স্বরূপকাঠি উপজেলার বিস্তীর্ণ জলাভূমির। কৃষকেরা এসব জলাভূমিতে ‘ভাসমান’ পদ্ধতিতে সবজির চারা ও শাকসবজি চাষ করেছেন।
সবজি চাষ করে ওই দুই উপজেলার অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। এসব খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন শত শত দরিদ্র নারী-পুরুষ। কৃষি অফিস থেকে এসব কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের চাওয়া আরও একটু সরকারি আনুকূল্য, একটু সহজ শর্তে ঋণ। তাহলে বিস্তার ঘটবে ব্যতিক্রমী এ চাষাবাদের।

ফিরে দেখা: কয়েক যুগ আগের কথা, নাজিরপুরের লোকজন দেখল, তাদের শত শত একর নিচু জমি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ থাকে। তারা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। এলাকার প্রবীণ কৃষকেরা অনেক চিন্তাভাবনার পর ধাপ পদ্ধতিতে চাষের পন্থা বের করলেন। জলাবদ্ধতার অভিশাপ পরিণত হলো আশীর্বাদে!
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালিত এক জরিপ থেকে জানা যায়, নাজিরপুরের কৃষকেরা ১৫০ থেকে ২০০ বছর আগে পানিতে সবজি চাষের এ পদ্ধতি বের করেন। সেই থেকে উপজেলার পদ্মডুবি, বিলডুমরিয়া, দেউলবাড়ি-দোবড়া, বেলুয়া, চিলতি, মনোহরপুর, মুগারঝোর, গাওখালী, কলারদোয়ানীয়া, সাচিয়া, মেদা, যুগিয়া, সোনাপুর, পুকুরিয়া, পেনাখালী, মিঠাপুকুর এলাকার পাঁচ থেকে ১০ ফুট গভীর জলাভূমিতে সবজিচারা উ ৎ পাদন ও সবজি আবাদ হয়ে আসছে। এ ছাড়া জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার বলদিয়া, চামি, গগন এলাকায়ও এ পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে।
বর্তমানে নাজিরপুরে প্রায় পাঁচ হাজার একর ও স্বরূপকাঠিতে প্রায় ১০০ একর জমিতে ধাপ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের সবজিচারা ও সবজি উ ৎ পাদন করা হয়। নাজিরপুরে আরও কয়েক হাজার একর জমি অনাবাদি থাকে বলে জানা গেছে।
চাষ পদ্ধতি: বেলুয়া মুগারঝোর এলাকার চাষি আ. রশিদ, সাবেক ইউপি সদস্য আ. সোবাহান জানান, এলাকায় ছড়িয়ে থাকা জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা, শ্যাওলা, কুটিপানা, দুলালীলতা ভাসমান জৈবসার তৈরির প্রধান উপকরণ। মে-জুন মাসে কচুরিপানা সংগ্রহ করে স্তূপ করা হয়। জলাভূমিতে প্রথমে কচুরিপানা এবং পর্যায়ক্রমে শ্যাওলা, কুটিপানা ও দুলালীলতা স্তরে স্তরে সাজিয়ে দুই ফুট পুরু ধাপ তৈরি করা হয়। ধাপে জৈব উপকরণ দ্রুত পচাতে সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একেকটি ভাসমান ধাপ ১০০ থেকে ১৮০ ফুট দীর্ঘ ও চার ফুট প্রশস্ত হয়। এ ধাপ চাষের উপযোগী করতে সাত থেকে ১০ দিন প্রক্রিয়াধীন রাখতে হয়।
চারা উ ৎ পাদন: কৃষক হাশেম মোল্লা ও হাবিবুর রহমান জানান, ‘ভাসমান’ ধাপে সরাসরি বীজ বপন সম্ভব না হওয়ায় তাঁরা প্রতিটি বীজের জন্য এক ধরনের আধার তৈরি করেন। তাঁরা এর নাম দিয়েছেন ‘দৌল্লা’। একমুঠো করে টেপাপানা, দুলালীলতার মধ্যে নারকেল ছোবড়ার গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয় দৌল্লা। এ দৌল্লার মধ্যে বিভিন্ন সবজির অঙ্কুরিত বীজ পুঁতে মাচানে বা শুকনা জায়গায় রাখা হয়। এর আগে আর্দ্র স্থানে বীজ অঙ্কুরিত করা হয়। দৌল্লাগুলো এভাবে তিন থেকে সাত দিন সারি করে রাখা হয়। ধাপে স্থানান্তরের পাঁচ-ছয় দিন পর গজানো সবজি চারার পরিচর্যা শুরু হয়। পাঁচ-ছয় দিন পর পর ‘ভাসমান’ ধাপের নিচের কচুরিপানার মূল বা শ্যাওলা দৌল্লার গোড়ায় বিছিয়ে দেওয়া হয়। প্রয়োজন হলে সামান্য পানিও দেওয়া হয়।
কৃষক দুলাল জানান, বর্ষা শেষে শুরু হয় চাষের নতুন আয়োজন। এ সময় জেগে ওঠা ধাপে শাকসবজি ও মসলাজাতীয় সবজি চাষ করা হয়।
নারীদের কর্মসংস্থান: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত নাজিরপুরের প্রায় দুই হাজার নারী বীজ গজানো, দৌল্লা তৈরি ও দৌল্লায় বীজ-চারা স্থাপনের কাজ করে থাকেন। এ কাজ করেন পুরুষেরাও।
মুগারঝোর এলাকার নারী শ্রমিক রওশনারা, শাহনাজসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজন নারী এক হাজার দৌল্লা ও বীজ-চারা স্থাপনের কাজ করে ২০০ টাকা মজুরি পান। এক হাজার দৌল্লা তৈরি করতে একজন নারীর তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। এ মৌসুমে একজন নারী পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা আয় করে থাকেন।
বাজারজাত: চাষি জলিল ও দুলাল জানান, লাউ, করলা, চালকুমড়া, টমেটো, বেগুন, চিচিঙ্গা, মরিচ, শসা, বরবটি, শিম ইত্যাদি সবজি চারা ভাসমান ধাপে উ ৎ পাদন করা হয়। চারার বয়স এক মাস হলে দৌল্লাসহ চারা উত্তোলন শুরু হয়। দৌল্লাগুলো নৌকায় সাজিয়ে কৃষক চারা বাজারজাত করেন। আবার পাইকারি ক্রেতারা সরাসরি এসে ‘ভাসমান’ ধাপ থেকে চারা ও সবজি ক্রয় করেন। নৌকা বা যন্ত্রচালিত নৌকায় করে চারা নিয়ে তাঁরা বৃহত্তর বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর ও ঢাকা অঞ্চলে বিক্রি করেন। কৃষক শাহাবুদ্দীন বলেন, বাজারজাতকরণের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকদের কম দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়।

সরেজমিনে একদিন: সম্প্রতি মুগারঝোর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, তিন-চারজন কৃষক একটি ধাপের চারায় পানি দিচ্ছেন। কয়েকজন চারা তুলে নৌকায় সাজিয়ে বাজারজাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই এলাকার আ. রশিদ মোল্লা বলেন, ‘অভারের কারণে আমি লেখাপড়া করতে পারিনি। ‘ভাসমান’ পদ্ধতিতে সবজি চাষে আমার ভাগ্য ফিরেছে। আমার সন্তানেরা এখন স্কুল-কলেজে পড়ছে।’
কয়েকজন চাষি জানান, এক মৌসুমে চারা উ ৎ পাদন ও বিক্রি করে একরে ১০ হাজার টাকা লাভ থাকে।
তাঁরা যা বলেন: দেউলবাড়ি-দোবড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ওলিউল্লাহ বলেন, এ এলাকার অনেক পরিবার ‘ভাসমান’ সবজি চাষে জড়িত। পানিবেষ্টিত এই অঞ্চলে ধাপ পদ্ধতির চাষে জড়িত চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ দিলে চাষাবাদের আরও বিস্তৃতি ঘটবে। মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে।
নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, ‘ভাসমান’ ধাপে উন্নত মানের সবজিচারা উ ৎ পাদনের লক্ষ্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, শাকসবজির বাজারজাতকরণ ও বীজ সংরক্ষণ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
হিমাগার হয়নি: পিরোজপুর-১ আসনের (সদর, নাজিরপুর ও জিয়ানগর) সংসদ সদস্য এ কে এম আউয়ালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল দেউলবাড়ি-দোবড়া এলাকায় একটি হিমাগার নির্মাণ করা। কিন্তু আজ অবধি তা করা হয়নি। সংসদ সদস্য আউয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গত মঙ্গলবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যাইনি। এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের পর সরকারিভাবে হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেব।’
চাষিদের দাবি-দাওয়া: সবজিচাষি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, তরিকুল ইসলাম, নিজামউদ্দিন বলেন, কৃষকদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। পণ্য পরিবহনের জন্য উন্নত ব্যবস্থা চালুসহ এলাকায় একটি হিমাগার স্থাপনের দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। এ ছাড়া নাজিরপুরের বৈঠাকাঠা বাজারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) একটি বীজ বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন একান্ত জরুরি।

সূত্র: প্রথম আলো

Related Link:

মাটির স্পর্শ ছাড়াই পানিতে চাষাবাদের পদ্ধতি উদ্ভাবন

নালিতাবাড়িতে পাখি দিয়ে ফসলের পোকা দমন

নালিতাবাড়িতে পাখি দিয়ে ফসলের পোকা দমন

শেরপুরের সীমাত্মবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষক এখন আর আগের মতো ফসলে কীটনাশক ব্যবহার করছে না। ফসল রক্ষায় তারা পোকা-মাকড় দমনে পারচিং পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এতে যেমন উৎপাদন ব্যয় কমে যায়, তেমনি উৎপাদিত ফসলের গুণগতমানও বেড়ে যায়। পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হয় কম। নালিতাবাড়ীতে চলতি আমন মৌসুমে পাখি দিয়ে ধানের পোকা-মাকড় দমন কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।


উপজেলার ২২ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে এখন সবুজের সমারোহ। অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকার জমির ধান ১০/১২ দিনের মধ্যেই কাটা হবে। এমতাবস্থায় কিছু কিছু জমিতে লালচে রোগ ও বাদামি গাছফড়িং পোকা দেখা দেয়ার সাথে সাথে কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ তা দমনের জন্য কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। ফসল রক্ষায় ধানের ক্ষেতে পারচিং পদ্ধতি বা গাছের ডাল-পালা পুঁতে দিয়ে পোকা দমন করা পদ্ধতিতে কৃষক সাড়া দিচ্ছে। কৃষি মন্ত্রীর এলাকায় দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে কৃষি অফিসারসহ অন্য কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ জানায়, এবার চলতি আমন মৌসুমে উপজেলার নয়াবিল, আন্ধারপাড়া, বাঘবেড়সহ কয়েকটি গ্রামে ধানে লালচে রোগ ও বাদামি গাছফড়িং পোকা দেখা দেয়ার সাথে সাথে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর পরার্মশে পারচিং পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করা হয়। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী মোবাইল ফোনে বলেন, রাসায়নিক বালাই নাশকের পরিবর্তে পারচিং পদ্ধতিতে খরচ কম। গাছের ডালে ফিড়িংঙ্গা পাখি (কেউ বলে ফেসকুলস্না পাখি) বসে ধানের শত্রু-পোকা খেয়ে ফেলে এবং পরবর্তীতে এই ডাল জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। তিনি আরো বলেন, ছিটানোর সময় সবটা কীটনাশক ধান গাছের গোড়ায় পৌঁছায় না। ফলে পোকা দমনে তেমন কার্যকর হয় না। তার চাইতে ২ হাত অত্মর ধানে বিলি কেটে ধান গাছের গোড়ায় আলো-বাতাস প্রবেশ করালে এবং গাছের ডাল-পালা পুঁতে দিয়ে পাখি বসার ব্যবস্থা করলে পোকায় ক্ষতি করতে পারে না। সূত্র মতে, মৌসুমের শুরু থেকেই ধানের পোকা-মাকড় দমনে এ বালাই নাশক পারচিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় সুফল পাচ্ছে কৃষক।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, কৃষকদের দুই ধরনের পারচিং পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। একটি লাইভ পারচিং অন্যটি ডেথ পারচিং। লাইভ পারচিং পদ্ধতিতে তিন মিটার দূরত্বে পাখি বসার জন্য ধনচে গাছ রোপণ করা হয়েছে। এই গাছ একটু বড় হলেই সেখানে পাখি খুব সহজে বসতে পারে। অন্যদিকে, এটি আগাছা না হওয়ায় ফসলের ক্ষতি করে না। এছাড়া ধনচে গাছ রাইজোডিয়াম জাতীয় ব্যাকটেরিয়া থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে মাটিতে সরবরাহ করে। ফলে জমিতে ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয় কম। যেহেতু ধনচে গাছ জীবিত অবস্থায় পাখির মাধ্যমে পোকা দমনে খুঁটি হিসাবে কাজ করছে। এ জন্য এটির নাম দেয়া হয়েছে লাইভ পারচিং। অন্যদিকে ডেথ পারচিং হচ্ছে মরা গাছের ডাল জমির মধ্যে পুঁতে দিয়ে পাখি বসার ব্যবস্থা করা। সাধারণত,এক একর জমিতে ৩০/৩৫টি ডাল পুঁতে দিলেই হয়। রুপাকুড়া গ্রামের কৃষক নাসিম মিয়া জানান, পারচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা সুফল পাচ্ছেন। কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বানেজ আলী মিয়া জানান, ধান ক্ষেতে পোকা দমনে পারচিং পদ্ধতি বেশ উপযোগী। কেননা কোন ড়্গেতে অপেক্ষাকৃত উঁচু অবলম্বন পেলে পাখিরা সহজে সেখানে এসে বসে। এরপর পোকা দেখে তা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে ক্ষেত পোকামুক্ত করে। তিনি আরো জানান, কয়েকটি এলাকায় পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও আলোর ফাঁদ ও পারচিং পদ্ধতির মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আছে।

কৃষকরা জানান, এই প্রাকৃতিক কীট দমন পদ্ধতিটি প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শক্রমে এবার আমরা ব্যাপক হারে পারচিং পদ্ধতি ব্যবহার করছি। সুফলও পাচ্ছি।

Source: www.ekrishi.com

Wednesday, September 14, 2011

সাতক্ষীরায় ২ যুবকের উদ্ভাবন জ্বালানি খরচ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন

সাতক্ষীরায় ২ যুবকের উদ্ভাবন জ্বালানি খরচ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন
লিখেছেন: আখতারুজ্জামান

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
ডিজেল, ইঞ্জিন ওয়েল এবং পানি ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাতক্ষীরার দুই ‘বিজ্ঞানী’র এক দশকের প্রচেষ্টা অবশেষে সফল হয়েছে।
সার্কিট, ব্যাটারি, মোটর ও জেনারেটর দিয়েই এই বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট আবিস্কার করা হয়েছে। এটি চালাতে একটি টাকাও খরচ হবেনা। ডিজেল, ইঞ্জিন ওয়েল ও জনবল ছাড়াই এই প্ল্যান্টটি চালানো যাবে।
তরুণ দুজনের এই অভাবনীয় এ আবিস্কারের সফলতা প্রমাণ করতে ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে দেড়ঘণ্টা প্ল্যান্টটি চালিয়ে এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
যারা এই সাফল্যের দাবিদার, তারা হচ্ছেন- সাতক্ষীরার সদর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের সিরাজুল মল্লিকের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম বাবু মল্লিক ও তার সহযোগী একই এলাকার শামসুদ্দিন ঢালীর ছেলে মিজানুর রহমান মিজান। তারা পেশায় একজন দোকানদার, অপরজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি।
আবিস্কারকদের একজন তৌহিদুল ইসলাম বাবু মল্লিক জানান, এই বিদ্যুৎ প্ল্যান্টটি তৈরি করতে ১টি জেনারেটর, ২টি মোটর, ১২ ভোল্টের ১টি ব্যাটারি, ৪টি সার্কিট, ৩টা পুলি, ২টা বেল্ট, ১টা ফ্লাইবারসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ‘এই প্ল্যান্ট থেকে ৩ হাজার ৬০০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এর মধ্যে সরবরাহের সময় ২ হাজার ৮০০ ওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। বাকি ৮০০ ওয়াট বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের ব্যাটারি চার্জ ও সার্কিটগুলো সক্রিয় করে রাখার জন্য ব্যবহৃত হবে। সরবরাহকৃত বিদ্যুতে ১০০টি ৩০ ওয়াটের এনার্জি সেভিং বাল্ব জ্বালানো সম্ভব হবে। এই বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার উপযোগী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেখানে বিদ্যুৎ আছে, সেখানে ব্যবহার করা হলে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ১৩ সেকেন্ডের মধ্যে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টটি অটোস্টার্ট হয়ে যাবে। এই মেশিনে জ্বালানি হিসেবে কোনো ধরনের ডিজেল, ইঞ্জিন ওয়েল ও জনবল প্রয়োজন নেই।’
তিনি বলেন, ‘এটি তৈরি করতে প্ল্যান্ট প্রতি ১ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ পড়বে। পরীক্ষামূলকভাবে এই প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দেখাতে গত ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর বাজারে সাড়ে ৫ ঘণ্টা একটানা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে প্রত্যক্ষদর্শী সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন ওই দুই তরুণ।
তাদের আগামী পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তৌহিদুল ইসলাম বাবু মল্লিক ও মিজানুর রহমান মিজান জানান, আগামীতে তাদের ১০ হাজার ওয়াটের বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সঙ্গে যেখানে একেবারেই বিদ্যুৎ নেই, সেখানে সুইচ চাপ দিয়ে এই মেশিন স্টার্ট করতে হবে।
তারা জানান, রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে কোনো ধরনের শব্দ ছাড়াই বিদ্যুৎ প্ল্যান্টটি কীভাবে স্টার্ট করা যায়, তা নিয়ে তারা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই প্রচেষ্টা বাস্তবে রূপ নিলে দেশের মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে বলে আশা করছেন তারা। এ জন্য তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী খান মোক্তার আলী বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের আবিস্কারকে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাই। যদি এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে তাহলে আমাদের বিদ্যুৎ ঘাটতি কমানো যাবে।’
Source: www.sabujbanglablog.net

Monday, September 5, 2011

দেশেইহবে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ

দেশেইহবে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ

লেখক: এনামুল হক কাশেমী, বাসস | মঙ্গল, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১, ১২ আশ্বিন ১৪১৮

Details

অবসরে কিংবা আড্ডায় এক পেয়ালা ধূমায়িত কফি পান করতে কার না ইচ্ছে করে। কেননা কফির পেয়ালায় চুমুক দিলে মন ও শরীর দুই-ই সতেজ হয়ে ওঠে। কিন্তু কফির অতিরিক্ত দামের কারণে সবার তৃষ্ণা মেটানো সম্ভব না। তবে আশার কথা এই যে, কফি এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাষ শুরু হয়েছে। পার্বত্য জেলা বান্দরবানে সম্ভাবনা আরো বেশি। ইতোমধ্যে সেখানকার আদিবাসী ও বাঙালি চাষিরা তাদের বাড়ির আঙিনায়, বড় গাছের ছায়ায় কফি চাষ শুরু করেছেন। কিছুদিনের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ শুরু হবে বলে তারা জানান।

বান্দরবান সদর উপজেলার কানাপাড়া গ্রামের আদিবাসী চাষি রামখুপ বম এবং লাম্বাঘোনার বাঙালি কৃষক মনু ইসলাম জানান, তাদের বাড়ির আঙিনায় ও বাগানে বিপুল সংখ্যক গাছে প্রতি বছর কফির ফল ধরে। তারা ৫ বছর আগে কফি গাছের চারা রোপণ করেন যা দু’বছরের মাথায় ফল আসে। তারা আরো জানান, এখানকার মাটি ও পরিবেশ কফি চাষের অনুকূলে। তাই প্রতিটি গাছ থেকে আধা কেজি করে কফি পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে যার মূল্য ১১শ’ টাকা। চলতি মৌসুম থেকে তারা কফি চাষ আরো বৃদ্ধি করবেন বলে জানান।

সদর উপজেলার চাষি থামলাই ম্রো জানান, গাছে ধরা কফি ফল প্রথমে সবুজ ও পরে লালচে হয়। গাছ থেকে সংগ্রহ করে হালকা তাপে ভেজে গুঁড়ো করে পান উপযোগী করা হয়। কফি গাছের পাতাও চা পাতার মত শুকিয়ে পানীয় তৈরি করে পান করা যায়। বান্দরবান সদর উপজেলা, রুমা, বোয়াংছড়ি ও থানছিতে বিক্ষিপ্তভাবে কফি চাষ হলেও কিছুদিনের মধ্যে সেখানে বাণিজ্যিকভাবে কফির উত্পাদন শুরু হবে বলে জানান কৃষকরা। তাদের ধারণা, কফি চাষ খুবই লাভজনক। কফি উত্পাদনের পাশাপাশি কফি গাছ থেকে মধু আহরণ এবং কফি গাছকে প্রক্রিয়াজাত করে চুলের যত্নে উন্নতমানের শ্যাম্পু করা সম্ভব। চাষিরা আরো মনে করেন, চা বোর্ড বা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারিগরি উপকরণ, সহজ শর্তে ঋণ পেলে জেলায় সম্ভাবনাময় কফি চাষ দ্রুত বিস্তার ঘটবে।

জেলা কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বান্দরবানের মাটি কফি চাষের জন্য উপযোগী। পরিকল্পিতভাবে কফি চাষ করা গেলে বাণিজ্যিকভাবে চাষিরা বিপুলভাবে লাভবান হবেন। তিনি আরো জানান, কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তারা অন্যান্য কৃষি পণ্যের সঙ্গে কফি চাষ উত্সাহিত করতে নানা রকম পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছে।

Sunday, September 4, 2011

এক রোপণে দুই ফসল

এক রোপণে দুই ফসল

লেখক: নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, মৌলভীবাজার |

কৃষকদের জন্য একই চাষাবাদে দু’বার ফসল উত্পাদন একটি ব্যতিক্রমী মাত্রা যুক্ত হয়েছে। কেটে ফেলা ধানের মোথা থেকে দ্বিতীয়বার ধান উত্পাদনের উদ্ভাবন করেছেন বিশিষ্ট জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী।

২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের নিজ গ্রাম কানিহাটি এলাকার ২৫ বর্গমিটারের একটি প্রদর্শনী ক্ষেতে বোরো ধানের চারা রোপণ করেন। সঠিকভাবে সেচ ও পরিচর্যা করে ১৩০ দিনের মধ্যে ৮৫ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার উচ্চতার গাছে প্রথমবারের মত ফসল বেরিয়ে আসে। আর এই সময়ের মধ্যেই মাটি থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পরিকল্পিতভাবে ধান কেটে নিতে হয়েছে। কোনো প্রকার চাষাবাদ ছাড়াই প্রথম দফা ধান কেটে নেয়ার পর ধানের মোথায় পরিমাণমত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে মাত্র ৫২ দিনের মাথায় দ্বিতীয়বারের মত ফসল উত্পাদন করা হয়। প্রথম বারের নতুন ধান কেটে নেয়ার পর দেখা গেছে হেক্টরপ্রতি এ ধান উত্পাদন হয়েছে ৬.৪ মেট্রিক টন এবং দ্বিতীয়বার চাষাবাদ বিহীন ধানের মোথায় বিঘাপ্রতি মাত্র ৩শ’ টাকার ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে হেক্টরপ্রতি ধান উত্পাদন হয়েছে ৩ মেট্রিক টন। যেখানে সরকারি হিসাব অনুযায়ী হেক্টরপ্রতি ধান উত্পাদন হয়ে থাকে ৩ থেকে ৪ মেট্রিক টন।

জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী জানান, বাংলাদেশে সাধারণত কোনো জমিতে এক ফসল, কোনো জমিতে দু’ ফসল আবার কোনো জমিতে তিন ফসলি ধান উত্পাদন হয়ে থাকে। এসব জমিতে প্রতিবারই ধান কেটে নিয়ে নতুন করে

জমি চাষাবাদের পর সার প্রয়োগ করে সেচ দিয়ে ধান উত্পাদন করতে হয়। এসব ধান কেটে নেওয়ার পর জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা ধানের মোথা থেকে হালকাভাবে চিটা মিশ্রিত কিছু ধান উত্পাদন হয়ে থাকে। তিনি মনে করেন তার উদ্ভাবিত এ ধানকে কৃষকরা ব্যাপকহারে চাষাবাদ করলে মঙ্গা বা নিধানের ধান হিসেবে আখ্যায়িত করা যাবে। আবেদ চৌধুরীর নতুন উদ্ভাবিত এ ধানের কোনো নাম এখনো দেয়া হয়নি। তবে শুধুমাত্র সাংকেতিক নম্বর দিয়ে রাখা হয়েছে। কৃষকরা সাধারণত ক্ষেতে ধানের যে চারা রোপণ করেন তার উচ্চতা থাকে ১০ সেন্টিমিটারের মত। জিন বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত ধানগাছ গোড়ায় না কেটে ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে কেটে ফেলায় ক্ষেতের মাঝে বেশ উচ্চতার ধানগাছ থেকে যায়। বোরো ধান কেটে নেওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে বন্যা হয়ে থাকে। তখন ক্ষেতে থাকা নতুন উদ্ভাবিত এ ধানগাছ বন্যা প্রতিরোধেও কাজ করবে।

ড. আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত ধানের চারা একটি করে কিছু জায়গা নিয়ে (৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে) রোপণ করা হয়। ফলে রোপিত একটি ধানগাছ মাটি থেকে ভালভাবে শক্তি নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে এবং একটি ধানগাছ থেকে আরো বেশ কয়েকটি ধানগাছ গজাতে থাকে। ১৩০ দিনের মধ্যে প্রথম ফসল সংগ্রহকালে সতর্কতার সাথে ৩৫ সেন্টিমিট ার উপরে কেটে নিলে গোছায় (ধানের গোড়ায়) অপেক্ষমান ঘুমন্ত অন্যান্য গাছগুলো থেকে মাত্র ৫২ দিনের মাথায় দ্বিতীয় বার ফসল বেরিয়ে আসে। আর এ জন্য জমিতে নতুন করে কোনো চাষ না দিয়েই বিঘাপ্রতি মাত্র ৩শ’ টাকার সার প্রয়োগ করলে

সফলভাবে দ্বিতীয় ফসল পাওয়া যায়। এসময়ে ধানক্ষেতে পোকার আক্রমণ কম হয় এবং কীটনাশক ব্যবহারও করতে হয় কম। ড. আবেদ চৌধুরী পরীক্ষামূলকভাবে একই জমিতে প্রথমবার ফসল কেটে কোনো চাষাবাদ ছাড়াই দ্বিতীয় ফসল উত্পাদনে সক্ষম হয়েছেন।

Source: Daily Ittefaq

Saturday, April 30, 2011

ব্রি উদ্ভাবিত ঘাস কাটার যন্ত্র

ব্রি উদ্ভাবিত ঘাস কাটার যন্ত্র- মনিরুজ্জামান কবির

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট একটি নতুন ধরনের ঘাস কাটার যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে। যন্ত্রটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জেলা এবং উপজেলা পরিষদ, সার্কিট হাউস, স্কুল, কলেজ, আধুনিক ভবন, অবকাশ কেন্দ্র, পার্ক, হোটেল-মোটেলের আঙিনা, প্রবেশপথ এবং রাস্তার দুধারের ঘাস কাটার জন্য খুবই উপযোগী। যন্ত্রটির ঘাস কাটার ক্ষমতা প্রচলিত ঘাস কাটার যন্ত্রের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি। ব্রি ঘাস কাটা যন্ত্রটি দামে সস্তা এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী।বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের খামার যন্ত্রপাতি ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের প্রধান মাহবুবুল আলম জামী এটি উদ্ভাবন করেছেন। যন্ত্রটি ঘণ্টায় ১.৮ বিঘা জমির ঘাস কাটতে পারে। যন্ত্রটির কর্তন বেস্নডের ব্যাস ৩২ ইঞ্চি বিধায় অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ জমির ঘাস কাটে। স্বচালিত এ যন্ত্রটিতে জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করা হয়। এতে জ্বালানি ব্যয় হয় ঘণ্টায় ০.৫ থেকে ০.৭ লিটার, যার বাজার মূল্য বর্তমানে ২৪ থেকে ২৮ টাকা। পক্ষান্তরে বিদেশ থেকে আনা ঘাস কাটা যন্ত্র পেট্রোল, গ্যাসোলিন দিয়ে চালাতে হয় বলে খরচ অনেক বেশি লাগে। দেশের যেকোনো ওয়ার্কশপে তা নির্মাণ ও মেরামত সম্ভব হয় না। অথচ ব্রি ঘাস কাটা যন্ত্রের যন্ত্রাংশগুলো সাধারণ বলে দেশের যেকোনো ওয়ার্কশপে নির্মাণ ও মেরামত সম্ভব। যন্ত্রটি তৈরি প্রসঙ্গে গবেষক মাহবুবুল আলম জামী বলেন, ব্রি মাঠগুলোর সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিদেশ থেকে আনা ঘাস কাটা যন্ত্রগুলো তিন থেকে চার মাস ব্যবহারের পর নষ্ট হয়ে গেলে ব্রি ওয়ার্কশপে নিয়ে আসা হতো। কিন্তু বাজারে এর যন্ত্রাংশ না পাওয়ায় মেরামত সম্ভব হতো না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি অটোক্যাড প্রোগ্রামিংয়ে নিজস্ব ডিজাইন অনুযায়ী ব্রি ওয়ার্কশপে এটি তৈরি করেন। সমপ্রতি ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. নূর-ই-এলাহী, পরিচালক (গবেষণা) ড. এম এ ছালাম, পরিচালক (প্রশাসন) ডা. বি এ এ মুস্তাফিজ ও ব্রির বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের উপস্থিতিতে ব্রি খেলার মাঠ এবং ব্রি প্রগতি স্কুল মাঠে যন্ত্রটির মাঠ দক্ষতা যাচাই করা হয়। এর মাঠ দক্ষতা চমৎকার বলে উপস্থিত সবাই মন্তব্য করেন। সমপ্রতি অনুষ্ঠিত ব্রি বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা সভায় উপস্থাপন করলে ব্রির মহাপরিচালক ও বিজ্ঞানীরা এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ প্রসঙ্গে জামী জানান, কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে এটি বাজারজাত করা হবে।কারিগরি বিষয়ব্রি ঘাস কাটা যন্ত্রটির কারিগরি বিষয় বেশ সহজ। এর বেস্নড সহজেই পরিবর্তনযোগ্য। এটি ঘূর্ণন গতিতে কাজ করে। এর ঘূর্ণন গতি ১২৫০ আরপিএম। এটি চার অশ্বক্ষমতাসম্পন্ন ডিজেলচালিত ইঞ্জিন বিধায় ওজনে হালকা, এর মাঠ ক্ষমতা ০.২৪৩ হেক্টর/ঘণ্টা, মাঠ দক্ষতা প্রায় ৮৭ শতাংশ।এটি ভূমি থেকে ৪-৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় ঘাস কাটে। এর জ্বালানি খরচ মাত্র ০.৫-০.৭ লি/ঘণ্টা। এর সম্মুখ ৩.৫ কিলোমিটার/ঘণ্টা বলে হেঁটে হেঁটে চালানো সম্ভব।বিশেষ সুবিধা : মাঠে ঘাস কাটার ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি, জ্বালানি খরচ কম, ওজনে হালকা, যেকোনো ওয়ার্কশপে মেরামত করা সম্ভব, মেরামত খরচ কম।Source: http://www.jjdin.com৩০ এপ্রিল ২০১১


যোগাযোগের ঠিকানা


মহাপরিচালক
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি),
জয়দেবপুর, গাজীপুর-১৭০১।
ই-মেইলঃ dg@brri.gov.bd, brrihq@yahoo.com
ফোন নং-  ৮৮০-২-৯২৯৪১১৭-২১
ফ্যাক্স নং-  ৮৮০২-৯২৬১১১০
ওয়েবসাইটঃ www.brri.gov.bd, www.knowledgebank-brri.org

Wednesday, March 2, 2011

বাকৃবি গবেষকের সাফল্য : কোয়েলের উচ্চ উত্পাদনশীল নতুন ৮টি উপজাত উদ্ভাবন

বাকৃবি গবেষকের সাফল্য :

কোয়েলের উচ্চ উত্পাদনশীল নতুন ৮টি উপজাত উদ্ভাবন

ময়মনসিংহ ও বাকৃবি প্রতিনিধি
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পোল্ট্রিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শহিদুর রহমান দেশে প্রথমবারের মতো অর্গানিক মাংস উচ্চ উত্পাদনশীল কোয়েলের নতুন ৮টি উপজাত উদ্ভাবন করেছেন। ফলে দেশে অর্গানিক মাংস উত্পাদনের নতুন মাত্রা যোগ হলো। সফল উদ্ভাবিত নতুন রঙের কোয়েলগুলোর উপজাতের নামকরণ করা হয়েছে বিবি-হোয়াইট, বিবি-ঢাকাইয়া, বাউ-ফন, বাউ-লেয়ার, বিবি-টুক্সেডো, বাউ-অ্যাশ, বিবি-বস্ন্যাক, বিবি-রোসেটা। এদের মধ্যে বিবি-হোয়াইট ও বিবি-ঢাকাইয়া বেশি লাভজনক।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আমিষের চাহিদা পূরণে হাইব্রিড মুরগির মাংস ও ডিমের বিকল্প নেই। কিন্তু বর্তমানে উত্পাদিত মুরগির খাবারে ব্যাপক হারে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। ওইসব অ্যান্টিবায়োটিক মুরগি থেকে মানুষের শরীরে আসে। ফলে মানুষের শরীর কোনো রোগে আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না। ফলে মানুষ ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্বসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এমতাবস্থায় অর্গানিক মাংস আমিষের অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোয়েলের মাংস ও ডিম সম্পূর্ণ অর্গানিক। কারণ কোয়েলের রোগ হয় না। ফলে কোয়েলকে কোনো ধরনের ওষুধ বা টিকা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু কোয়েলের সহজলভ্যতা না থাকায় মানুষ ইচ্ছা করলেও এর ডিম ও মাংস খেতে পারে না। কোয়েলের মাংস ও ডিম সহজলভ্য করতে দীর্ঘদিন ধরে পোল্ট্রিবিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কোয়েলের নতুন ৮টি উপজাতের লাভজনক দিক সম্পর্কে উদ্ভাবক ড. শহিদুর রহমান জানান, ‘নতুন উদ্ভাবিত কোয়েল ৮টি আট রঙের যা আগের কোয়েল থেকে ভিন্ন। মুরগির মতো কোয়েল পালনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হয় না। এতে অর্গানিক মাংস উত্পাদন সম্ভব। এসব কোয়েল রোগমুক্ত। কোনো ভ্যাকসিন ও ওষুধ লাগে না। শহরের ছাদে বা সিঁড়ির ধারে খাচায় অল্প জায়গায় পালন করা যায়। সৌখিন মানুষের মনের খোরাক জোগায়। কোয়েল পালন গরিব মানুষের হাতের নাগালে। মাত্র ৪০ দিন বয়সেই ডিম দেয়া শুরু করে ও মাংস হিসেবে খাওয়া যায়। শিশুদের কোয়েলের ডিম অত্যন্ত প্রিয়। গবেষণায় দেখা গেছে, কোয়েলের মাংস ও ডিম হার্ট ডিজিজ কমায়। বার্ধক্য দূর করে। অল্প পুঁজিতে বাণিজ্যিকভাবে পালন করা যায়। কোয়েল পালনে দ্বিগুণ লাভ করা যায়। গবেষক আরও জানান, এক হাজার কোয়েল পালন করে মাসে ৯ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব।
বাকৃবি রিসার্স সিস্টেম (বাউরেস) ও বিএলআরই’র অর্থায়নে গবেষণা প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের পোল্ট্রিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুর রহমানকে সহযোগিতা করেন বিএলআরআই’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নজরুল ইসলাম ও পোল্ট্রিবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী কেএম গোলাম রছুল।
Source: Daily Amardesh, 2th March

Tuesday, February 15, 2011

উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি প্রযুক্তি "লবণের বাটিতে গাছ"

উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি প্রযুক্তি "লবণের বাটিতে গাছ"

প্রফেসর ড. মো. সদরুল আমিন

আমরা চারা রোপণের পূর্বে গর্তের তলদেশে কয়েক কেজি লবণ দিয়ে যে নারিকেলসহ বেশ কিছু নাট-পাম গাছ লাগাই তা "লবণের বাটিতে গাছ" লাগানোর মতই। দেশের উপকূলীয় কৃষি পরিবেশ অঞ্চল ১৩ থেকে ১৮ এবং ২৩/২৪ মিলে ফসলি জমির প্রায় শতকরা ৩৬ ভাগ অনাবাদি থাকে, যদিও এ মাটির লবণের তীব্রতা মধ্যমেরও কম। পটুয়াখালীর দুমকি এলাকায় আমি হেক্টরে ৪ টন গম, ৭ টন ভুট্টা, ৪৫ টন মিষ্টি আলু, ৩০ টন লাউ, ৩৫ টন মুলা, ৩০ টন টমেটো নিজে উৎপাদন করেছি। এজন্য প্রযুক্তির মধ্যে ছিল মাটির সোডিয়াম, কেলসিয়াম, মেগনেসিয়ামের সালফেট, কার্বনেট/ বাইকার্বনেট লবণসমূহের পারস্পারিক অনুপাত ভিত্তিতে এসএআর, টিএসএস, ইসি এবং পিএইচ বিশেস্নষণ করে মৃত্তিকা পরিচর্যা করা, জমি গভীর চাষ দেয়া ও সুষম সার দেয়া, যা একজন কৃষিবিদ মৃত্তিকা বিজ্ঞানীর দক্ষতার আওতাভুক্ত। তাই উপকূলীয় অঞ্চলের মৃত্তিকা প্রযুক্তি হিসেবে আমি নিম্নরূপ সুপারিশ করছি-

১. একটু লম্বা জাতের ধান (স্থানীয়/উফশী/হাইব্রিড) চাষ করতে হবে; ২. তেল ফসল হিসেবে চিনাবাদাম, তিল ও সূর্যমুখীর চাষ করতে হবে। সূর্যমুখী জাতের মধ্যে হাইব্রিড এসএইচ/কেবিএইচ/পিএসি/সানব্রেড গ্রুপের জাত নির্বাচন করে তাতে বিঘাতে ২৬ কেজি ইউরিয়া, ৮০ কেজি এসএসপি এবং ২৩ কেজি পটাশ সার দিতে হবে। সবজির জন্য জমিতে ভিরিডি পাউডার প্রয়োগসহ উঁচু আইল তৈরি করে তার ঢালে চারা লাগাতে হবে। সকল জমিতে বিঘাপ্রতি ১.৫ থেকে ২ টন জৈব সার এবং ১ থেকে ২ কেজি বোরন সার দিতে হবে।

বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে চকোরিয়া মহেশখালী পর্যন্ত কশ মাটিতে (এসিড সালফেট) যে ফসল হয় তা নিতান্তই "লবণের বাটিতে গাছ" লাগানোর মত। বর্ণিত এসব প্রযুক্তি অবলম্বন করে এলাকার বিপুল পরিমাণ জমি আবাদে আনা এবং আবাদকৃত জমির ফসল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব, এজন্য প্রয়োজন কেবল সরকারের সদিচ্ছা এবং উপযুক্ত মৃত্তিকা প্রযুক্তি নির্বাচন ও প্রতিপালন। দেশের দক্ষিণ এলাকার জন্য ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এ পর্যন্ত অন্তত ১০টি ছোট-মধ্যম প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, যার ফাইনাল রিপোর্ট পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না, অর্থাৎ সরকারের সদিচ্ছায় দুর্বলতা ছিল। তাই বলছি সরকারের সদিচ্ছা ও যথার্থ মৃত্তিকা পরিচর্যা অবলম্বন করে দেশের উপকূলীয় পশ্চিমাঞ্চলে খাদ্যসহ অনেক ফসল উৎপাদন সম্ভব, যা ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত উপকূল ও পাশর্্ববতর্ী এলাকার গাছের জন্য প্রজাতিভেদে নূ্যনতম সহনীয় মাত্রার লোনা মাটিতে সম্ভব করা হয়েছে। কেবল খেয়াল রাখতে হবে যে কেউ যেন বাটির লবণ ফেলে দিয়ে সেখানে গাছ লাগিয়ে "লবণের বাটিতে গাছ" লাগানোর কথাটি বলার সুযোগ না পায়।

Friday, February 11, 2011

বিশ্বের কনিষ্ঠ প্রাণী আবিষ্কারক সাজিদ

বিশ্বের কনিষ্ঠ প্রাণী আবিষ্কারক সাজিদ
আবদুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ হাওলাদার। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বন্যপ্রাণীবিষয়ক জার্নাল জুট্যাক্সয়ে লেখা প্রকাশ করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রাপ্ত বিরল প্রজাতির এ ব্যাঙ আবিষ্কার করে তিনি পরিণত হয়েছেন বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রাণী আবিষ্কারক হিসেবে। বাংলাদেশে প্রাপ্ত বা কোনো বাংলাদেশি কর্তৃক উভচর, সরীসৃপ বা স্তন্যপায়ী প্রাণী আবিষ্কারের রেকর্ড এটিই প্রথম।
এ প্রসঙ্গে সাজিদের লেখা প্রকাশিত হওয়া জার্নাল 'জুট্যাক্সা'র প্রধান সম্পাদক ড. জি-ক্যুআ্যং জ্যাং (Dr Zhi-Qiang Zhang) বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই প্রতিনিধিকে এক ই-মেইল বার্তায় জানান, বিশ্বে এ প্রজাতির ব্যাঙ আর কোথাও আবিষ্কৃত হয়নি, এটিই প্রথম। আমরা তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং কোনো বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের জার্নালে এটিই কোনো বাংলাদেশির লেখা প্রকাশিত হলো।
সাজিদ তার শিক্ষক আসমতের নামানুসারে তার আবিষ্কৃত ব্যাঙের নাম দিয়েছেন 'ফেজারভারিয়া আসমতি'। গত ৯ ফেব্রুয়ারি জুট্যাক্সয়ে তার প্রাপ্ত ব্যাঙ সম্পর্কিত প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। একক ব্যক্তি কর্তৃক খ্যাতিমান কোনো কো-অথরের সহায়তা ছাড়া প্রাণী আবিষ্কার ও আন্তর্জাতিক জার্নালে লেখা প্রকাশের ঘটনা এটিই প্রথম।
এ ব্যাপারে সাজিদ হাওলাদার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি কতটা আনন্দিত বুঝাতে পারব না। আমার সব কৃতিত্ব আমার শিক্ষক ও দেশের মানুষকে দিতে চাই। সরীসৃপ প্রজাতি নিয়ে অব্যাহতভাবে কাজ করে আমি আমার কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর এমন আবিষ্কার সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. আলাউদ্দিন বলেন, তার আবিষ্কার সম্পর্কে শুনে আমরা খুবই আনন্দিত। সে বিশ্বের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমরা তার গবেষণা কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই।
খ্যাতিমান প্রাণিবিজ্ঞানী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আসমত সাজিদের আবিষ্কার প্রসঙ্গে জানান, সাজিদই একমাত্র বাংলাদেশি যে প্রাণী আবিষ্কারের কৃতিত্ব অর্জন করল। তার কৃতিত্বের জন্য সারা বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে। এ ধরনের গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডে ভবিষ্যতে সাজিদকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
সাজিদ কর্তৃক আবিষ্কৃত ব্যাঙ ও তার প্রবন্ধ প্রকাশে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি-এর কিউরেটর ড. ড্যারেল ফ্রস্ট। বিশ্বের সরীসৃপ প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসের ক্ষেত্রে সাজিদই সর্বকনিষ্ঠ বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন। বিশ্বজুড়ে সমাদৃত প্রাণী বিজ্ঞানী ড. ক্রেইগ এডলার সম্পাদিত ইনডেক্স অব অথরস অব হারপেটোলজিক্যাল ট্যাক্সোনমিস্ট-এর লেখক ড. জন এস এপলেগার্থ এক অভিনন্দন বার্তায় সাজিদের কৃতিত্বের জন্য তাকে অভিনন্দন জানিয়ে তার সাফল্য কামনা করেছেন।
২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ব্যাঙ নিয়ে কাজ শুরু করেন সাজিদ। ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাঙের জীবন প্রণালী ও বংশবৃদ্ধি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা চালিয়ে যান তিনি। এ সময়ে ব্যাঙের বংশবৃদ্ধির জন্য হটস্পট হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটাপাহাড় রাস্তার দুই পাশ থেকে বিভিন্ন ব্যাঙের স্যাম্পল সংগ্রহ করতে থাকেন তিনি। এর মধ্যে ২০০৮ সালে একদিন পেয়ে যান বিরল প্রজাতির একটি ব্যাঙ। স্বভাবমতো সেটিকে তিনি ব্যক্তিগত সংরক্ষণাগারে নিয়ে গিয়ে এটির প্রজাতি ও প্রকৃতি উদ্ধারের কাজে লেগে যান। কিন্তু সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ও তালিকাভুক্ত সাড়ে ছয়শ প্রজাতির মধ্যেও এ ব্যাঙের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। তারপর শুরু হয় অন্য ধরনের গবেষণা। এ ব্যাঙের ব্যতিক্রমী ডাক ও বৈশিষ্ট্য বের করতে তিনি যোগাযোগ করেন বিশ্বের সেরা সব প্রাণিবিজ্ঞানীর সঙ্গে। দীর্ঘসময় ধরে পর্তুগাল, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় ব্যাঙের ডাকের সাউন্ড এনালাইসিস এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে এ ধরনের ব্যাঙের অস্তিত্ব বাংলাদেশেই পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে তিনি বিশ্বের সেরা প্রাণিবিজ্ঞানীদের সম্পাদনায় প্রকাশিত বণ্যপ্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসের কাজে নিয়োজিত জার্নাল জুট্যাক্সা-তে এ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ পাঠান। ওই জার্নাল কর্র্তৃপক্ষ তার আবিষ্কারের সত্যাসত্য যাচাইয়ের পর চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি প্রবন্ধটি গ্রহণ করেন। এরপর গত মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জুট্যাক্সা জার্নালের ২৭৬১ ভলিউমে এটি প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে প্রথম কোনো বাংলাদেশির প্রবন্ধ এ জার্নালে প্রকাশিত হলো।

Source: Daily Bangladesh Pratidin, 11th Feb-2011

Wednesday, February 9, 2011

ভৈরবে গড়ে উঠেছে স্টিলের নৌকা নির্মাণ শিল্প

ভৈরবে গড়ে উঠেছে স্টিলের নৌকা নির্মাণ শিল্প

মো. মোস্তাফিজুর রহমান আমিন, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

ভৈরবে গড়ে উঠেছে স্টিলের মালবাহী নৌকা নির্মাণ শিল্প। অসংখ্য নদ-নদী আর খাল-বিল-হাওরাঞ্চল পরিবেশিষ্ট হওয়ায় এ অঞ্চলে এ নৌকার চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। ফলে প্রতি বছরই নতুন নতুন উদ্যোক্তা এ সম্ভাবনাময় খাতে পুঁজি বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আর এ শিল্পে এলাকার কয়েকশ’ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হওয়ায় তারাও বেশ ভালো আছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে।
ড্রেজিংয়ের বালি, পাথর, কয়লা, কাঠ ও ইট ইত্যাদি মালামাল পরিবহন করা হয় এসব স্টিলের নৌকা দিয়ে। মালামাল পরিবহনে এ নৌকা অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় এর চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। ভৈরবসহ আশপাশে বর্তমানে ১০ থেকে ১২টি স্থানে এ নৌকা তৈরি হচ্ছে। ২ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার ৬শ’ বর্গফুট আয়তনের একেকটি স্টিলের নৌকা তৈরি করতে সময় লাগে তিন মাসের মতো। প্রতিটি নৌকা নির্মাণে শ্রমিকের প্রয়োজন ১০ থেকে ১২ জন। দক্ষ-অদক্ষ প্রতি শ্রমিক প্রতি মাসে বেতন পান সাড়ে ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। স্টিলের নৌকা তৈরির উদ্যোক্তারা জানান, প্রথমে তারা সুনামগঞ্জ, সরাই ও বাজিতপুর এলাকা থেকে এসব স্টিলের নৌকা কিনে আনতেন। ধীরে ধীরে এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ১০/১২ বছর আগে থেকে ভৈরবে সীমিত আকারে এর নির্মাণ কাজ শুরু হলেও পরে চাহিদা থাকায় ভৈরবসহ আশপাশে বেশ কয়েকটি স্থানে নৌকা নির্মাণ শুরু হয়। তারা জানান, বছরে প্রায় অর্ধশত স্টিলের নৌকা নির্মাণ হচ্ছে এখানে। প্রতিটি নৌকা তৈরিতে প্রথমে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা ব্যয় হলেও নির্মাণসামগ্রী এবং শ্রমিকের মজুরিসহ আনুষঙ্গিক সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে খরচ পড়ে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা। আয়তন ও আকার অনুযায়ী কোনোটির ব্যয় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ১৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদি একেকটি নৌকা থেকে এক বছরে ভাড়া আদায় হয় ৫ থেকে সাড়ে ১০ লাখ টাকা। ফলে লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এ শিল্প খাতে পুঁজি বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
Source: Daily Amardesh

Saturday, February 5, 2011

আমিরের বায়ুচালিত গাড়ি আসছে শিগগিরই

আমিরের বায়ুচালিত গাড়ি আসছে শিগগিরই

আসাদুজ্জামান ফিরোজ, বগুড়া
বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক আমির হোসেন এক অসাধারণ প্রতিভাবান ব্যক্তি। এর আগে তিনি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরি করে দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন। আবারও দেশে ঝড় তুলতে যাচ্ছেন। অল্পদিনের মধ্যে বাতাসচালিত গাড়ি দেশবাসীকে উপহার দিতে পারবেন বলে তিনি জানান।
প্রাকৃতিক বাতাস শক্তিকে অটোমেটিক ফাংশনে রূপান্তর করে বিদ্যুত্ উত্পাদনের মাধ্যমে কিছু করা যায় কি-না তার ওপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে আবার প্রাকৃতিক বজ্রপাতকে আয়ত্তে এনে কিভাবে জ্বালানির কাজে লাগানো যায় তার ওপরও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমির হোসেন বলেন, আমরা শুধু মরীচিকার পেছনে ছুটছি। কারণ আল্লাহ পৃথিবীতে ৪টি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়েছেন। এগুলো হলো পানি, বাতাস, সূর্য ও বজ্রপাত রশ্মি। এই বজ্রপাত অল্প সময়ের জন্য হয়। কিন্তু এই বজ্রপাত রশ্মি বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে আয়ত্বে নিতে পারলে এখান থেকেও জ্বালানি কাজে লাগানো সম্ভব। তবে সর্বশেষ তার তৈরি বাতাসচালিত গাড়ি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালাচ্ছেন তিনি।
সর্বাধুনিক ও সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি নতুন গাড়ি চলবে বাতাসে। এই গাড়ি চালাতে লাগবে না জ্বালানি। ঘনীভূত বাতাস ট্যাংকে ভরে পিচঢালা পথ ধরে ছুটবে গাড়ি। অন্য ১০টি গাড়ির মতো সমানতালে চলবে। এতে মূল্যবান জ্বালানি তেলের অপচয় রোধের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণকারী কোনো গ্যাস নির্গমনের আশঙ্কাও থাকবে না। বাতাসনির্ভর গাড়িটি হলো ৫ আসনবিশিষ্ট। গাড়ির বডি নির্মিত হবে হাওয়াই অ্যালাই দিয়ে। ওজন মাত্র ৩০০ কেজি। অন্য গাড়িগুলো যেভাবে জ্বালানি তেল সংরক্ষণের জন্য ট্যাংক থাকে, এটিতেও তেমনি থাকবে। তবে ট্যাংকে শুধু প্রাকৃতিক ঘনীভূত বাতাস ভরা থাকবে। কমপ্রেসারের মাধ্যমে এই ট্যাংকে প্রাকৃতিক বাতাস ভরতে সময় লাগবে ৮ মিনিট। প্রতি চার ঘণ্টা পর পর গাড়িটিতে কমপ্রেসারের মাধ্যমে বিকল্প পথে একটি ফুয়েল বার্নার ঘনীভূত বাতাস গরম করার মাধ্যমে বাতাসের চাপ বাড়িয়ে দেবে। এভাবে গাড়ির গতি বাড়বে। শুধু ২৪টি পিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা ইঞ্জিন, যা চলবে শুধু এয়ার টারবাইন দিয়ে।
দূর পথ ভ্রমণের ক্ষেত্রে খুব সহজ হবে এই গাড়িটি। আবার যদি এমনটি হয় রাস্তায় যানজটে পড়লে গাড়ি যাতে উড়ে চলতে পারে তারও ব্যবস্থা আছে। এই গাড়ি খাড়াভাবে শূন্যে ওঠে যেতে পারবে এবং একই সঙ্গে শূন্যে স্থির হয়ে থাকতে পারবে। রাস্তায় প্রতি ঘণ্টায় ৮০ মাইল এবং আকাশে এর গতি হবে প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ কিমি প্রায়। বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ইয়ার টারবাইনে ঘুরবে ১০০০ ওয়াটের একটি জেনারেটর। এটি সর্বোচ্চ ৫০০ ফুট পর্যন্ত উঁচুতে উড়তে পারবে। চলন্ত সময়ে ডানে-বামে ইচ্ছামত ঘোরানো যাবে।
দরজাগুলো অটোরিমোট সিস্টেমে খোলা ও বন্ধ করা যাবে। সামনে-পেছনে চলাচলের জন্য অটোমনিটর ফাংশন সিস্টেম থাকবে। যে কোনো সময় যে কোনো অবস্থায় গাড়ি চলাচলে কোনো প্রকার সমস্যায় পড়তে হবে না। এ গাড়ি তৈরিতে খরচ হবে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে মিডিয়ার সামনে চলন্ত অবস্থায় উপস্থাপন করা হবে বাতাসচালিত এই গাড়ি এমনই দাবি করলেন এর উদ্ভাবক আমির হোসেন। এই প্রযুক্তিগুলো মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের বেশকিছু সূরা থেকে গবেষণা করে পেয়েছেন বলে তিনি জানান।
Source: Daily Amardesh, 06th Feb-2011

Friday, February 4, 2011

নাটোরে বিনা চাষে রসুন

নাটোরে বিনা চাষে রসুন

চলতি রবি মৌসুমে নাটোরে বিনা চাষে রসুনের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় চার হাজার হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে এবার রসুন চাষের আওতায় এসেছে।
১৯৯৫-৯৬ সালে জেলার গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলা এলাকার কৃষকরা স্ব-উদ্যোগে বিনা চাষে রসুনের আবাদ প্রচলন করেন- যা বাংলাদেশে প্রথম। এরপর গ্রামগুলোতে রসুন চাষের জমির পরিমাণ বাড়তে থাকে। পরে গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার পাশাপাশি অন্য উপজেলাগুলোতে এর চাষাবাদ সমপ্রসারিত হয়।
বিনা চাষে রসুনের চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে গুরুদাসপুরের কাছিকাটা এলাকার কৃষক জেহের আলী বলেন, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর সাধারণত কার্তিক মাসে নরম জমিতে বিনা চাষে রসুনের কোয়া লাগানো হয়। এতে সেচেরও বেশি প্রয়োজন হয় না। জমিতে আগাছা থাকে কম। তুলনামূলকভাবে সারের ব্যবহারও কম করতে হয়। রোপণের ১২০ দিনের মধ্যে রসুন তোলা যায়। রবি মৌসুমের রসুন উৎপাদন খরচ প্রচলিত চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদিত রসুনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম। বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয় ২৫ থেকে ৩০ মণ। জেলা কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ২০০৮-০৯ সালে ৭,৫৫০ হেক্টর এবং ২০০৯-১০ সালে ৯,৩৯০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ হয়। রসুন চাষের পরিধি পর্যায়ক্রমে আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি মৌসুমে ১০ হাজার ৭০ হেক্টর জমি চাষাবাদ করে ৬০ হাজার ৪২০ টন রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, উৎপাদন ৮০ হাজার টন ছাড়িয়ে যাবে। আবাদি জমির মধ্যে ৮ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বিনা চাষে রসুন এবং অবশিষ্ট জমিতে প্রচলিত পদ্ধতির চাষের মাধ্যমে রসুন আবাদ করা হয়েছে। আবাদি জমির বেশিরভাগ গুরুদাসপুর উপজেলায়।
বিনা চাষে রসুন আবাদ সম্পর্কে শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত সিংড়া উপজেলার কুমিরা গ্রামের কৃষক জুলফিকার আনাম বলেন, অল্প পরিশ্রমে অল্প ব্যয়ে কৃষকরা বিনা চাষে রসুন আবাদে ঝুঁকছেন। এটি একটি লাভজনক ফসল হিসেবেই আমরা এর আবাদ করে থাকি। পাশাপাশি রসুনের বাজারমূল্য বেশি হওয়ার কারণেও কৃষকদের রসুন আবাদে আগ্রহ আরো বেড়েছে।
নাটোর কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক এম. দেলোয়ার হোসেন বলেন, কৃষকদের মাঝে বিনা চাষে রসুন জনপ্রিয় হওয়ায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। রসুনের বাজারমূল্য চড়া হওয়ার কারণে কৃষকরা বেশি মুনাফার আশায় এবার অধিক জমিতে রসুন চাষ করেছেন। কৃষকদের যেকোনো ধরনের সমস্যায় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ তাদের পাশে আছে।
ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন, বাসস

Thursday, February 3, 2011

'মারের সাগর পাড়ি দেব'

'মারের সাগর পাড়ি দেবইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তত্ত্বাবধানে নতুন প্রযুক্তির ১০টি নৌকা তৈরি করেছে সাভারের 'তাড়াতাড়ি শিপইয়ার্ড'। পাটের নৌকার মতো ফাইবার গ্লাসের এ নৌকাও বাংলাদেশের জেলেদের জন্য কাজ করবে লাইফজ্যাকেটের মতো। বিস্তারিত বলছেন তায়েফুর রহমান তাড়াতাড়ি শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নৌপ্রকৌশলী ইভ মার বলেন, 'নৌকাটি ফাইবার গ্লাস ও প্লাস্টিকের সমন্বয়ে তৈরি।' দেড় থেকে দুই টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নৌকাটির নকশা করেছেন ফ্রান্সের বিখ্যাত ভিপিএলপি ইয়েস্ট ডিজাইন কোম্পানির নৌপ্রকৌশলী মার্ক ভ্যান পেটিগেম। প্রতিটি নৌকা তৈরিতে খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। কাঠের নৌকার চেয়েও দ্রুত চলবে এগুলো।
আকারে প্রতিটি নৌকা ৩০ ফুট লম্বা ও সাড়ে ছয় ফুট চওড়া। মাস্তুলের উচ্চতা সাত মিটার এবং পাল ১৮ বর্গমিটার। সুদৃশ্য পালের রং লাল। জ্বালানি সাশ্রয়ী এ নৌকার রক্ষণাবেক্ষণেও তেমন খরচ হবে না। তা ছাড়া পানিতে ডুবে না যাওয়াটাই এর সবচেয়ে বড় গুণ।ফাইবার গ্লাসের প্রতিটি নৌকায় রয়েছে ১৬ অশ্বশক্তির ইঞ্জিন, দুইটি ব্যাটারি, সোলার সিস্টেম, জ্বালানি তেলের তিনটি পাত্র, অগি্ননির্বাপক যন্ত্র, নৌকা বাঁধার লোহার চেইন, দুটি বয়া, পাঁচটি লাইফজ্যাকেট, কম্পাস, রেডিও ও দিকনির্দেশনার বাতি। ডিজেলচালিত হলেও বাতাস অনুকূলে থাকলে পালের সাহায্যেও চলবে এ নৌকা।২২ জানুয়ারি ঢাকার সাভারের কর্ণপাড়ায় তাড়াতাড়ি শিপইয়ার্ডে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের বাগেরহাটের রামপাল, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা, পটুয়াখালীর দশমিনা ও বাউফল, ভোলার দৌলতখান ও তজুমদ্দিন, বরগুনার বেতাগী, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ এবং সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ৫০ জন দরিদ্র জেলের মধ্যে প্রথম দফায় বিনা মূল্যে ১০টি নৌকা হস্তান্তর করা হয়। এর আগে ওই ৫০ জনকে সাভারের বংশী নদীতে চারদিন ধরে ফাইবার নৌকা চালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।হস্তান্তর অনুষ্ঠানে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, 'প্রাথমিক পর্যায়ে ৪০টি নৌকা বিতরণ করা হবে। এতে উপকৃত হবে ২০০ জেলে। ভালো ফল পাওয়া গেলে পরে আরো নৌকা বিতরণ করা হবে।ইইউর প্রতিনিধি কোন ডোচাটু বলেন, 'দরিদ্র মৎস্যজীবীদের পক্ষে নৌকাগুলো কেনা সম্ভব নয়। তাই দরিদ্র জেলেদের বিনা মূল্যে এ নৌকা প্রদানের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ইইউ।বিনা মূল্যে উন্নত প্রযুক্তির নৌকা পেয়ে প্রান্তিক জেলেরা বেশ উচ্ছ্বসিত। ভোলার দৌলতখানের জেলে জাহাঙ্গীর জানান, আইলা তার নৌকার সঙ্গে ভাইকেও কেড়ে নিয়েছিল। তিনি হয়ে যান নিঃস্ব। এখন ফাইবার গ্লাসের নৌকায় সওয়ার হয়ে জীবন বদলে দেওয়ার পালা।
Source: Daily Kalerkantho, 1th Feb-2011

Tuesday, February 1, 2011

দুর্গম পাহাড় আলোকিত বিদু্যতের আলোয়: বরকলে বিদায় হারিকেন কুপিবাতি

দুর্গম পাহাড় আলোকিত বিদু্যতের আলোয়
বরকলে বিদায় হারিকেন কুপিবাতি
০০ রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা

দুই হাজার সালে বান্দরবানের মনজয় পাড়ায় একটি ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ উৎপাদন ইউনিট স্থাপন করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলো পাহাড়ী যুবক অং থুই খাই। তার সেই উদ্ভাবনে খুলে গেছে সম্ভাবনার দুয়ার। সেই ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ প্রকল্প দিয়ে দীর্ঘকাল অন্ধকারে থাকা দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলো এখন আলোকিত হতে পারে বিদু্যতের আলোয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ওনটেক পাওয়ার সিস্টেমের যৌথ উদ্যোগে রাঙ্গামাটির বরকলে বাস্তবায়িত ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ প্রকল্পের সাফল্যে এমন আশাই জেগেছে পাহাড়ি মানুষের মনে।
দুর্গম বরকলের পাহাড়ি মানুষ যেখানে এতদিন হারিকেন আর কুপিবাতি জ্বালাতো আজ তারা বিদু্যতের আলো পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের অর্ধ লক্ষ মানুষকে বিদু্যৎ সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে। বিজিবি ও ওনটেক পাওয়ার সিস্টেমের যৌথ উদ্যোগে ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ কেন্দ্রের পাইলট প্রকল্পের সাফল্যে এই আশাবাদ জেগেছে ।
বরকল সদরে পাহাড়ি ঝরনার পানি ব্যবহার করে এই ক্ষুদ্র বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ কেন্দ্র চালু করতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি টাকা । মঙ্গলবার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রামের ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন।
ওনটেক পাওয়ার সিস্টেমের ইঞ্জিনিয়ার হাফিজ রশিদ বরকলে স্থাপিত ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ কেন্দ্র সম্পর্কে জানান, এটি একটি পাইলট প্রজেক্ট। এটা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত সফলভাবে শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এ বিদু্যৎ কেন্দ্র থেকে ৫০ কিলোওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই উৎপাদন ক্ষমতা আরো বাড়ানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বরকলের মতো পার্বত্যাঞ্চলের দুর্গম এলাকা যেখানে পানির উৎস রয়েছে, জলপ্রপাত রয়েছে সেখানে এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে এ ধরনের ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ কেন্দ্র করা গেলে সাফল্য পাওয়া যাবে। তবে এই কাজের জন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার যদি ব্যাংক ঋণের সুবিধা করে দেয় তাহলে পার্বত্যাঞ্চলের অনুন্নত এলাকা উন্নত করতে তারা প্রচেষ্টা নিতে পারবে।
ওনটেক পাওয়ার সিস্টেমের উদ্যোক্তা নজরুল ইসলাম (নান্নু) জানান, বরকলে ক্ষুদ্র পানি বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার প্রাকৃতিক উৎস ব্যবহার করে পার্বত্যাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে বিদু্যৎ সুবিধা পেঁৗছে দেয়া সম্ভব। পাহাড়ে অনেক পাহাড়ি ঝরনা রয়েছে। সেসব ঝরনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে আরো বিদু্যৎ কেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বিজিবি'র ২৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল সৈয়দ সাইয়েদিস সাকলাইন।
Source: Daily Ittefaq

এক একর আঙুর বাগান থেকে ৪০ বছরে কোটি টাকা

এক একর আঙুর বাগান থেকে ৪০ বছরে কোটি টাকা

মো. আলী আশরাফ খান
স্বল্প পরিসরে আঙ্গুর চাষের জন্য বাড়তি জায়গার প্রয়োজন হয় না। বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় যে স্থানে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রৌদ্র থাকে অথচ পানি দাঁড়ায় না এমন জায়গা নির্বাচন করে আঙ্গুর চাষ করা যায়। প্রতি ৮০ বর্গফুটে (২.৫০–৩.২৫ মিটার) চারটি আঙ্গুর গাছ লাগানো যায়। যেহেতু আঙ্গুর গাছ ৪০-৫০ বছর বাঁচে সেজন্য লোহা/সিমেন্টের পিলার ও জিআই তার দ্বারা মাচা তৈরী করা উচিত। যদি একর প্রতি ১র্০–র্৮ পদ্ধতিতে ৫৪৪টি গাছ লাগানো যায় এবং প্রতি গাছে বছরে গড়ে কমপক্ষে ৪ কেজি করে আঙ্গুর উত্পাদিত হলে মোট আঙ্গুরের পরিমাণ হবে ২১৭৬ কেজি। বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি কেজি ১৫০ টাকা হিসাবে মোট মূল্য দাঁড়াবে ৩,২৬,৪০০ টাকা। এক একর জমিতে আঙ্গুর চাষ করতে খরচ হবে আনুমানিক ১,৫০,০০০ টাকা। খরচ বাদে মোট লাভ দাঁড়াবে ১,৭৬,০০০ টাকা, যা অন্য যে কোনো ফল ও ফসলের তুলনায় বেশ লাভজনক।
ইংরেজিতে Grape এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Vitis Vinifera আঙ্গুর Vitaceae পরিবারভুক্ত। এটা মিষ্ট এবং উপাদেয় ফল। তবে সঠিক পরিচর্যা এবং জমিতে প্রয়োজনীয় উপাদানের অভাবে আঙ্গুরের স্বাদ টকও হতে পারে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আঙ্গুর চাষের তেমন প্রসার ঘটেনি। সমপ্রতি গাজীপুর জেলার কাশিমপুরে বিএডিসির উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রের সহযোগিতায় বিভিন্ন স্থানে সীমিত পরিমাণে আঙ্গুরের চাষ হচ্ছে। এদেশের আবহাওয়া এবং জলবায়ু কিছু কিছু জাতের আঙ্গুর চাষের উপযোগী বিধায় এর উত্পাদন বৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। আঙ্গুর চাষের জন্য একদিকে যেমন উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া প্রয়োজন হয়, তেমনি প্রয়োজন অল্প বৃষ্টিসহ শীতল আবহাওয়া। যে সময়ে আঙ্গুরের ফুল আসে সে সময়ে আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে আঙ্গুরের ফলন বেড়ে যায়। শীতকালে আঙ্গুরগাছের পাতা ঝরে পড়ে এবং বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন লতাপাতা গজাতে থাকে। এসময় গাছে ফুল আসে এবং কালক্রমে তা ফলে রূপান্তরিত হয়। পরিমিত বৃষ্টিপাত এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন স্থানই আঙ্গুর চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। এছাড়া শুষ্ক এবং উষ্ণ আবহাওয়া অত্যন্ত জরুরি। তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকা উত্তম। তবে সূর্যকরোজ্জ্বল শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু আঙ্গুর চাষের জন্য অনুকূল। তবে আঙ্গুর গাছের দৈহিক বৃদ্ধির সময় ঠাণ্ডা জলবায়ু এবং ফল ধারণের সময় শুষ্ক ও উষ্ণ জলবায়ু আবশ্যক। জাতের ভিন্নতাহেতু আঙ্গুর কম-বেশি নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়াতেও জন্মে থাকে।
অপেক্ষাকৃত হালকা দোআঁশযুক্ত লাল মাটি যেখানে বৃষ্টির পানি দাঁড়াতে পারে না অথচ নিষ্কাশন সহজ এমন জমি আঙ্গুর চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত। তাছাড়া জৈবিক সারসহ কাঁকড় জাতীয় মাটি এবং পাহাড়ের পাললিক ভূমিতেও আঙ্গুর চাষ করা যায়। যেহেতু রৌদ্র ব্যতীত আঙ্গুর গাছে ফুল ও ফল ধরে না, সেজন্য ছায়ামুক্ত রৌদ্রজ্জ্বল স্থানই নির্বাচন করা উত্তম।
সারা পৃথিবীতে মোট ১২ ধরনের ৬০০ প্রজাতির আঙ্গুর উত্পাদিত হয়ে থাকে। তন্মধ্যে বেশ কিছু জাত উপমহাদেশীয় জলবায়ুতে লাগসই হওয়াতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও থাইল্যান্ডে এর চাষ হয়ে থাকে। এসব জাতের মধ্যে উন্নতমানের হলো : (১) থম্পসন (বীজশূন্য), (২) পুসা (বীজশূন্য), (৩) বিউটি (বীজশূন্য), (৪) পারলেট (দু্রত পাকে), (৫) আনার-ই-শাহী, (৬) চিমা সাহেবি, (৭) কালি সাহেবি (কালো), (৮) ভোকাবি, (৯) খলিলি (দ্রুত পাকে), (১০) আর্লি মাস্কাট, (১১) ডিলাইট, (১২) কার্ডিনাল (কালো), (১৩) হোয়াইট মালাগা (থাই) ইত্যাদি। এসব জাতের মধ্যে বীজহীন এবং বীজযুক্ত উভয়ই রয়েছে। বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী জাতের নাম ‘পার্পেল’। এ জাতটি এদেশে সবচেয়ে ভালো জন্মে। চাষের প্রসারতা বাড়ানোর জন্য সঠিক জাত নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আঙ্গুরের বীজ ও শাখা কাটিং দ্বারা বংশবিস্তার করা যায়। ভালো জাতের আঙ্গুর গাছ নির্বাচন করে তা থেকে এক বছরের পুরাতন শাখা যা তামাটে রং ধারণ করছে এমন শাখা থেকে কাটিং করে কলম তৈরি করা যায়। এই পদ্ধতি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য। রোগবিহীন সুস্থ -সবল আঙ্গুর গাছের শাখা বংশবিস্তারের জন্য উপযোগী। শীতকালে অর্থাত্ অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে আঙ্গুর গাছ সুপ্তাবস্থায় চলে যায়। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে শাখা কর্তন পদ্ধতিতে ৩/৪টি গিরাসহ কাটিং করতে হবে, যা লম্বায় ১৩/১৪ সেমি. হবে। কাটিংগুলো একত্রে বেঁধে ২৪ ঘণ্টা ধরে নিচের অংশ উপরের দিক করে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে রাখা উচিত। কারণ কাটার পর থেকে এক ধরনের আঠা নির্গত হয় যা সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লাগালে চারা নাও গজাতে পারে। বীজতলায় কাটিং বসানোর পর এক মাসের মধ্যে চারা উত্পন্ন হয়। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে উক্ত কলম নির্বাচিত জমিতে রোপণ করা যায়। তবে কলমের জন্য ডাল কেটে নেয়ার পর ভিজে কাপড় দ্বারা ১৫ দিন জড়িয়ে রেখে তারপর বীজতলায় বসালে তাড়াতাড়ি শিকড় গজায়। প্রথমে নির্বাচিত জমিটি উত্তমরূপে চাষ দিতে হবে। তারপর ৭০–৭০–৭০ সেমি. মাপের গর্ত করতে হবে। উক্ত গর্তে ১০ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১০০ গ্রাম পটাশ একত্রে মিশ্রিত করে খননকৃত মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে উক্ত গর্তটি ভরাট করে দিতে হবে। এভাবে ২০/২৫ দিন উক্ত গর্তটিতে প্রয়োজনানুযায়ী পানি দিতে হবে, যাতে প্রয়োগকৃত সারগুলো পচে যায়। অতঃপর চারা রোপণের জন্য গর্তটি তৈরি হবে। পরে বীজতলা থেকে সংগৃহীত শক্তিশালী একটি চারা এনে উক্ত গর্তে রোপণ করতে হবে। চারাটি সোজাভাবে রোপণ করে একটা লাঠি দ্বারা আটকে দিতে হবে। উক্ত চারার গোড়ায় হালকাভাবে পানি সেচ দিতে হবে।
আঙ্গুর গাছ যেহেতু লতানো সেজন্য এ গাছে প্রচুর সার প্রয়োগের ব্যবস্থা থাকা দরকার। আমাদের এই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ৩–৩ মিটার পদ্ধতিতে গাছ লাগানো যায়। রোপণের পর এক মাসের মধ্যে রোপণকৃত গাছ যদি সতেজ না হয় তবে গাছটির গোড়ায় মাটি আলগা করে কিছু পরিমাণ ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। আবহাওয়াজনিত কারণে বাংলাদেশে আঙ্গুর গাছ রোপণের উত্কৃষ্ট সময় হলো মার্চ ও এপ্রিল মাস। এক থেকে তিন বছরের প্রতিটি গাছে প্রতি বছর ৩ কেজি গোবর সার, ১০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০ গ্রাম পটাশ দিতে হবে। ৫ বছরের উপরে প্রতি গাছে ৫ কেজি গোবর সার ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম পটাশ দিতে হবে। পটাশ বেশি দিলে আঙ্গুর মিষ্টি হয় এবং রোগবালাই প্রতিরোধ করে। তাছাড়া প্রতি চার মাস অন্তর অন্তর প্রতি গাছে আধাকেজি করে হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আঙ্গুর গাছের ডাল ও কাণ্ড ছাঁটাই করা অতি আবশ্যক। এর ব্যতিক্রম হলে গাছের ফলন অনেক কমে যায়। আঙ্গুর গাছের নতুন ডালে ফুল ও ফল ধরে বিধায় সময়মত এর অঙ্গ ছাঁটাই না করলে ফুল ও ফল ধরবে না। আঙ্গুর গাছের ফল বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। ছাঁটাইয়ের আগে বা পরে সেচ দেয়ার প্রয়োজন নেই। গাছ রোপণের পর থেকে মাচায় ওঠা পর্যন্ত প্রধান কাণ্ড ছাড়া অন্যসব পার্শ্বশাখা ছেঁটে ফেলতে হবে।
ক) প্রথম ছাঁটাই : মাচায় কাণ্ড ওঠার পর ৩৫-৪০ সেমি. লম্বা হলে প্রধান কাণ্ডের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে, যাতে ওই কাণ্ডের দু’দিক থেকে দুটি করে ৪টি কাণ্ড গজায়।
খ) দ্বিতীয় ছাঁটাই : উক্ত ৪টি কাণ্ড দু’দিকে বড় হতে থাকবে এবং ১৫-২০ দিন পর যখন কাণ্ডগুলো ৪৫-৬০ সেমি. পর্যন্ত লম্বা হবে তখন উক্ত ৪টি কাণ্ডের শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে, যাতে প্রতিটি শাখার দু’দিক থেকে আগের মতো ২টি করে ৪টি কাণ্ড গজায় । এভাবে মোট ১৬টি কাণ্ড গজাবে।
গ) তৃতীয় ছাঁটাই : এবার ওই ১৬টি কাণ্ড ১৫-২০ দিন পর যখন প্রতিটি ৪৫-৬০ সেমি. লম্বা হবে তখন পুনরায় শীর্ষদেশ কেটে দিতে হবে, যাতে করে প্রতিটি শাখার দু’দিকে দুটি করে ৪টি কাণ্ড এবং এভাবে ১৬টি শাখা থেকে সর্বমোট ৬৪টি কাণ্ড গজাবে। অনেক সময় গাছের দুর্বলতার কারণে ৬৪টি কাণ্ড নাও পাওয়া যেতে পারে। কাণ্ড গজানোর পর দুর্বল কাণ্ডগুলো মারা যেতে পারে। ফলে ৪০-৫০টি সতেজ কাণ্ড থাকে এবং এর প্রশাখার ৩/৪টি গিরার মধ্যেই ফুল ও ফল ধরবে। পরবর্তী সময়ে ছাঁটাইয়ের সময় খুব সাবধানে কাণ্ড কর্তন করতে হবে, যাতে ৫ম গিরার পর ছাঁটাই হয়, অন্যথায় আঙ্গুর ধরবে না। আঙ্গুরের জাতের ভিন্নতার কারণে অনেক গাছে ৫ম ও ৬ষ্ঠ গিরাতেও আঙ্গুর ধরে। এমতাবস্থায় ৭ম গিরার পর ছাঁটাই করতে হবে।
এ ছাঁটাই পদ্ধতিতে কলম রোপণের ৬৫-৭৫ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল এসে যায় এবং তাতে আঙ্গুর ধরে। ফুল থেকে আঙ্গুর পাকা পর্যন্ত সময় লাগে ১১০-১২৫ দিন। প্রথম বছর ফল পাওয়ার পর শাখাগুলোকে ১৫-২০ সেমি. লম্বা রেখে শীতের প্রারম্ভেই ছেঁটে দিতে হবে। ফলে বসন্তের প্রাক্কালে নতুন শাখা গজাবে এবং ফুল ধরবে। এই পদ্ধতি ৩-৪ বছর পর্যন্ত চলবে। অতঃপর বেশি ফুল ও ফল পাওয়ার জন্য মূল কাণ্ডটিকে সামান্য গোড়া খেকে ছেঁটে দিলে আবার নতুন কাণ্ড ও শাখা গজাবে এবং তাতে ফুল ও ফল ধরবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে ফোন করা যেতে পারে : মোবাইল নং-০১৭১০৪০৭০৭৪, ০১১৯৯৪২৫৫২৩, ০১৯১১৪০৫৩৬৬, লেখক : কবি, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক, গবেষক, গ্রন্থাকার ও প্রধান নিরীক্ষা কর্মকর্তা, বিসিক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা। E-mail: asraf.khan98@yahoo.com

শ্রীবরদীতে নতুন প্রযুক্তিতে কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য

শ্রীবরদীতে নতুন প্রযুক্তিতে কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য

- রেজাউল করিম বকুল শ্রীবরদী (শেরপুর)

এক বছর আগেও বেকারত্বের অভিশাপ জেঁকে বসেছিল হরলাল রায়ের পরিবারে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন হরলাল। তিনি মাঝে-মধ্যেই যেতেন শ্বশুরবাড়ি নিলফামারীতে। তিনি নিলফামারীতে এক কৃষকের কাছ থেকে আপেল আর বাউকুলের কলম (চারা) এনে শুরু করেন চাষাবাদ। মাত্র ৫০ শতাংশ জমিতে কুলের বাগান করে গত বছর চাষাবাদের ব্যয় মিটিয়েও লাভ করেন ৪০ হাজার টাকা। তার এ সাফল্য দেখে স্থানীয় উপজেলা কৃষি অধিদফতর ও জেলা কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা তার কুলের বাগান পরিদর্শন করে নানা দিক থেকে সহায়তা দিচ্ছেন। ফলে এবার তার কুল বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে আশা করেছেন তিনি। এ যুবকের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল গ্রামে। এখন তাকে এলাকার মানুষ বড়ই চাষী বলেই চেনে। কর্ণঝোরার জহির রায়হান, বাবেলাকোনার ভূপেন্দ্র মাস্টার, রাঙ্গাজানের ব্রতিন মারাক, তাতিহাটির জামাল উদ্দিনসহ অনেক কৃষকই আপেল কুল, বাউকুল, লিচু, বাঁশ, কমলা, লেবু, পেঁপেসহ বিভিন্ন জাতের শাক-সবজির চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আয়তন ২৫২ বর্গকিলোমিটার। তন্মধ্যে লোকসংখ্যা ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭৯১ জন। এতে নিট আবাদি জমি ১৯ হাজার ২২৮ হেক্টর। বনবিভাগ রয়েছে ১ হাজার ২২৮ হেক্টর। এতে কৃষির উপর নির্ভরশীল ৫৫ হাজার ৬৩৩টি পরিবার। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কারণে অনেক কৃষকই ধান চাষাবাদের পরিবর্তে গম, গোল আলু, আখ, সরিয়া, শাক-সবজি, আপেল, পেঁপে ও মাছ চাষসহ বিভিন্ন চাষাবাদে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এতে সাফল্যও পাচ্ছেন তারা। নইলের পাড় গ্রামের কৃষক আমের আলী, সোহরাব আলী, কুমর উদ্দিন, আব্দুল জলিলসহ অনেকে জানান, এ গ্রামে এখন ধান চাষাবাদের পরিবর্তে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে মাছ চাষাবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে অনেকে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ধান চাষাবাদের চেয়ে কম খরচে অল্প সময়ে মাছ চাষাবাদ করে বেশি লাভ পাওয়া যায়। তাই কৃষকরা মাছ চাষ বেশি করছেন।
গারো পাহারের রাঙ্গাজান গ্রামের বাসন্তি মারাক, গোলাপ হোসেন, নিলারাণীসহ অনেকে জানান, তাদের বাড়ি পাহাড়ি টিলায়। বছরের কোনো মৌসুমে তাদের জমিতে কোনো ফসল করা যেত না। কিন্তু নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কারণে এখন তাদের এলাকায় বাঁশ, কলা, আনারস, লেবু, শিমুল আলু, পেঁপে, লেবু, লটকন ইত্যাদির চাষাবাদ বেড়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এফএম মোবারক আলী বলেন, মাত্র ৩/৪ বছরের ব্যবধানে উপজেলায় নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনে চাষাবাদে বিপ্লব ঘটেছে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে তথ্যানুসন্ধানে গেলে সফল যুবক হরলাল রায়ের স্ত্রী কবরী রানী বলেন, বিয়ের পর থাইকা মেলা কষ্ট করছি। পোলাপান গোরে দু’বেলা ঠিকমত খেতে দিতে পারি নাই। অহন আপেল আর বাউকুলের চাষাবাদ করে লাভের ট্যাহা দিয়ে পুকুর দিছি। পুকুরে মাছ আছে। হাইব্রিড জাতের ধানও চাষ করছি। ১ মেয়ে আর ১ ছেলে। দু’জনেই স্কুলে পড়ালেহা করে। কবরী রানীর মতো কৃষি ক্ষেত্রে স্বপ্ন দেখছেন অনেকে। তবে তাদের মতে, সরকারি-বেসরকারি ও এনজিওগুলো এসব নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে জোরালো ভূমিকা নিলে আরও ছেলে-মেয়েরা খুঁজে পাবে স্বপ্নের ঠিকানা।
Source: Daily Amardesh

Sunday, January 30, 2011

বিলের বাঁধে হাঁসের খামার

বিলের বাঁধে হাঁসের খামার

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার রক্তদহ বিলের বাঁধ এখন হাঁসের খামারে পরিণত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বেকার যুবকরা এসে বিলের বাঁধে গড়ে তুলেছেন একাধিক হাঁসের খামার। এদের মধ্যে রিপন আলীর হাঁসের খামার সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। বর্তমানে তার খামারে হাঁসের সংখ্যা প্রায় ৫ থেকে ৬শ'।

রিপন আলী। বাড়ি বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার পাতাঞ্জু গ্রামে। বেকার ছিলেন। মানুষের নানান কথা আর খারাপ ব্যবহারে মন যখন ভারাক্রান্ত তখন মাথায় আসে রক্তদহ বিলের বাঁধে হাঁসের খামারের কথা। সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে নেমে পড়েন তিনি। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রমাণ করেছেন ইচ্ছে থাকলে উপায় একটা হয়-ই হয়। তার সফলতা দেখে এখন এলাকার অনেক বেকার যুবক এগিয়ে এসেছেন রক্তদহ বিলের বাঁধে হাঁসের খামার করতে।

মাত্র ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে এ পদ্ধতিতে হাঁসের খামার করে অভাবনীয় সফলতা পেয়ে যান রিপন। হাঁসের খামার থেকে আসা লাভের টাকা দিয়ে নিজের বাড়িতে গড়ে তোলেন হাঁসের হ্যাচারি। নিজের হ্যাচারিতে তিনি এখন তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করছেন। পাশাপাশি সেই বাচ্চা অন্য খামারিদের কাছে বিক্রি করে হচ্ছেন লাভবান। রিপন জানান, অনেকদিন ধরেই হাঁসের খামারের কথা তার মাথায় ঘুরপাক খেলেও তাদের বাড়ি বিল এলাকায় না হওয়ায় হাঁসের খামার গড়ে তুলতে সাহস পাচ্ছিলেন না। একদিন পাশর্্ববর্তী নওগাঁ জেলার আত্রাই হাটে গিয়ে খোলা জলাশয়ে বিলের বাঁধে হাঁস পালন করা দেখে তার মধ্যে এই পদ্ধতিতে হাঁসের খামার করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। অনেক কষ্টে কিছু টাকা জোগাড় করে মাত্র ৫০টি হাঁস কিনে তিনি হাঁসের খামার শুরু করেন।

খোলা জলাশয়ে হাঁস পালন সমর্্পকে রিপন আরো জানান, সাধারণত খামারে আটকে রেখে হাঁস পালনে অনেক বেশি খরচ। খামারে ১টি হাঁসের জন্য যে পরিমাণ খরচ হয়, খোলা বিল এলাকায় সে খরচ অর্ধেকেরও কম হয়। কারণ বিলে হাঁস শামুকসহ নানা খাবার সহজেই পায়। বিলের খোলা জায়গার খাবার খাওয়ার জন্য হাঁস ডিমও দেয় অনেক বেশি। এ ছাড়া হাঁস রাখার জন্য কোনো ঘর তৈরি করতে হয় না। বাঁেধর উপর পলিথিন দিয়ে ঘিরে সামান্য খরচে হাঁস রাখার জায়গা তৈরি করতে হয়। খোলা বিলে ১টি হাঁসে জন্য খরচ হয় সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ১শ' টাকা। ৪ থেকে ৫ মাস বয়স হলে হাঁস ডিম দেয়া শুরু করে। ক্যাম্বেল জাতের প্রতিটি হাঁস একটানা ২৫০ থেকে ২৮০টি পর্যন্ত ডিম দেয়।

বর্ষা মৌসুমের ৬ মাস রিপনের কাটে বিলের বাঁধে, বাকি সময় থাকে হ্যাচারি নিয়ে। হাঁসের ডিম দেয়া শেষ হলে হাঁস ও ডিম বিক্রি করে তার লাভ হয় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। রিপনকে অনুসরণ করে বর্তমানে রক্তদহ বিল এলাকার বাঁধে খামার করেছে জাকারিয়া, মোতালেব, রুহুল, জাকিরুলসহ ১০ জন বেকার যুবক। এদের প্রত্যেকের হাঁসের সংখ্যা ৩ থেকে ৪শ'র উপরে। হাঁস পালনকারী জাকারিয়া বলেন, লেখাপড়া শিখে চাকরির আশায় বসে না থেকে বেকার যুবকরা ছোটখাট হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলতে পারেন। বর্তমানে যারা বিলের বাঁধ থেকে হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন তারা সবাই কমবেশি লেখাপড়া জানেন।

খোলা জলাশয়ে হাঁস পালন সম্পর্কে আদমদীঘি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এনামুল হক রক্তদহ বিলের বাঁধে হাঁস পালন সম্পর্কে বলেন, বেকার যুবকদের এ ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তারা চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেবে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। তিনি আরো বলেন, হাঁসের যেকোনো ধরনের রোগ দেখা দেয়ার আগেই তার বিভাগের লোকজন বিল এলাকায় ওই সমস্ত খামারে গিয়ে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যবস্থা করবে।

এস. এম. নাজমুল হক ইমন, সান্তাহার, বগুড়া

Friday, January 28, 2011

রাজ্জাকের সেচযন্ত্রটি হতে পারে মডেল

রাজ্জাকের সেচযন্ত্রটি হতে পারে মডেল

ফরিদপুর (পাবনা) প্রতিনিধি
ফরিদপুর উপজেলার হাদল গ্রামের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশের মেকানিক্স মোঃ আবদুর রাজ্জাকের (৪০) উদ্ভাবিত নতুন সেচ যন্ত্র পানি সেচ ব্যবস্থাপনায় গত বছর ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে। গত বছর বোরো মৌসুমে উদ্ভাবিত নতুন সেচযন্ত্রের মাধ্যমে দুটি স্কীমে যথাক্রমে ৪৫ বিঘা ও ৩৫ বিঘা জমিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহ করে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করেছে বলে জানা গেছে। তিনি তার উদ্ভাবিত পাম্পযন্ত্রের নাম দিয়েছেন ও.ঝ.উ.অ.জ.(ইরিগ্রেশন সিস্টেম ডিসকভার আবদুর রাজ্জাক)। তার এই সেচযন্ত্রের সাহায্যে রবি মৌসুমে নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি পাওয়া সম্ভব। সাধারণত সেচপাম্প ২৪-২৬ ফুট নিচ থেকে পানি উত্তোলন করতে পারে। কিন্তু এই সেচযন্ত্রটি দ্বারা ৪৫-৫০ ফুট নিচ থেকে পানি উত্তোলন করা সম্ভব। মোটর থেকে পাম্পযন্ত্রটি পৃথক করে ১০ ফুট মাটির নিচে নামানো হয়। এতে অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয় গিয়ার, সেপ, বিয়ারিং বুস, পাইপসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ। এতে কৃষকের অতিরিক্ত ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি সেচ মৌসুমে পানির সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়। আগের তুলনায় জ্বালানি খরচ হয় অর্ধেক। এই যন্ত্রটি গ্যাস, ডিজেল ও বিদ্যুতে চালানো যায়। প্রতি বছর এই অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বোরো ধান চাষসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করা হয়ে থাকে। যার ফলে প্রত্যক্ষভাবে নিরবছিন্ন পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ সময় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সম্ভব হয় না। এছাড়া অতিরিক্ত চাপে মোটর পুড়ে গিয়েও পানি সরবরাহ ব্যববস্থার বিঘ্ন ঘটে। ফলে সঠিক সময়ে ফসল চাষ করা সম্ভাব হয় না। আবদুর রাজ্জাক ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপাড়া করেছেন। তার উদ্ভাবিত যন্ত্রটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ সেচযন্ত্রটি দেখার জন্য ভিড় করছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর ফেল করার কারণে পানি নিয়ে দুর্ভাবনা দূর করার জন্য এই যন্ত্রের আবিষ্কারক আবদুর রাজ্জাকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার সরকার শফিউল আলম জানান, যেসব অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যায় এবং সেচ ব্যবস্থাপনার সমস্যা হয়, সেসব অঞ্চলে তার উদ্ভাবিত যন্ত্রটি ব্যবহৃত হলে কৃষকরা উপকৃত হবেন। অর্থ-সম্পদহীন আবদুর রাজ্জাক বলেন, সাহায্য-সহযোগিতা পেলে কৃষি উপযোগী নতুন নুতন যন্ত্র তিনি উপহার দিতে পারবেন, যা কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে। আবদুর রাজ্জাক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারের জন্য আবেদন করেছেন।
Source: Daily Amardesh,
6th Feb-2010

Thursday, January 27, 2011

সাফল্য : মূলধনবিহীন চেতারার হস্তশিল্প


সাফল্য : মূলধনবিহীন চেতারার হস্তশিল্প
রহিমা আক্তার

জগতের যা কিছু শ্রেষ্ঠ অর্জন তা সম্ভব হয়েছে প্রতিভার কল্যাণে। নারীরা তাদের বুদ্ধি ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে সমাজে তাদের অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ করে তাদের ছোট করে রাখা হচ্ছে। সভ্যতার চরম উত্কর্ষের কালেও নারী তার সাধারণ মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যে কোনো সভ্য সমাজে নারীর অবস্থান অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। আজ শুধু গৃহ সংরক্ষণ ও সন্তান পরিচর্যাই নারীদের একমাত্র দায়িত্ব নয়। তারা পুরুষের মতো সৃষ্টিশীল ও উন্নয়নমূলক কাজ করতে সক্ষম। নারীরা তাদের বুদ্ধি আর আত্মবিশ্বাস দিয়ে তৈরি করছে অনেক অভাবনীয় জিনিসপত্র। আজকের এই নারীর দক্ষতার মধ্যে রয়েছে আলাদা এক বৈচিত্র্য।চেতারা বেগম নোয়াখালীর গ্রামের এক গৃহবধূ, সংসার জীবনে প্রবেশের পর থেকেই ছোটখাটো কুটির শিল্পের কাজ করতেন। এতে করে নিজের পারিবারিক জিনিসগুলোর চাহিদা মিটত এবং তার হাতে কিছু নগদ টাকা আসত। তার শিল্পের সঙ্গে ছিল নকশি শীতলপাটি, হাতপাখা (বাঁশের, কাপড়ের)। চার সন্তানের জননী চেতারা বেগম সন্তানদের দায়িত্ব পালনের অবসরে এসব কাজ করতেন। গ্রামের দৃশ্য গাছপালা ও ফুলের নকশা করতেন শীতলপাটি ও হাতপাখার মাঝে। গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বন্ধ হয়ে যায় তার কুটির শিল্পের কাজ। অবসর সময় তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেত। সময়কে কাজে লাগানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তিনি। তখনি একদিন টিভির একটা অনুষ্ঠানে শুনতে পান, কাগজকে ভাতের মাড়ের সঙ্গে ভিজিয়ে রাখলে তাতে মণ্ড তৈরি হয়। এই কৌশলটা তিনি আয়ত্ত করেন। প্রথমে ছোট ছোট বাটি-ঝাঁকা তৈরি করেন। ২/১টা জিনিস তৈরি করার পর আগ্রহ বেড়ে যায়। এরপর আস্তে আস্তে তিনি কীভাবে কী তৈরি করা যায় তার কৌশল খুঁজতে থাকেন। আমাদের গৃহের ব্যবহারের উপযোগী কিছু আসবাবপত্র তৈরি করতে চেষ্টা করেন। রান্নাঘরের সবজি ও শুকনো জিনিস রাখার জন্য এই মণ্ড দিয়ে রেক তৈরি করেন। পানির ফিলটার রাখার স্ট্যান্ড তৈরি করেন। ফুলদানি ও বড় বড় ঝাঁকা তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গে ভাবেন কীভাবে আরও নতুন নতুন আসবাবপত্র তৈরি করা যায়। একে একে তিনি চেয়ার-টেবিল বানানোর উদ্যোগ নেন এবং সেভাবে ট্রি টেবিল-চেয়ার, টিভির ট্রলি, চাল রাখার বক্স, ট্রাঙ্ক ধরনের বক্স ইত্যাদি তৈরি করেন। বসার জন্য বিভিন্ন আকারের মোড়া বানান। এগুলো শুধু শো-পিস হিসেবে নয়, আমাদের কাঠের তৈরি আসবাবপত্রের মতো ব্যবহারও করা হয়। চেতারা বেগম জানান, গ্রামে গৃহবধূ থাকাকালে কাজের ফাঁকে বাঁশ, বেত ও সুতার কাজ করতে ভালো লাগত। গ্রামের মেয়েদের বিয়ের সময় এগুলোর প্রয়োজন হতো। তখন ওরা এগুলো কিনতে আসত। তখন শিতলপাটি, নামাজের বিছানা, কাপড়ের হাতপাখার খুব কদর ছিল। সর্বপ্রথম ১ জোড়া কাপড়ের নকশা করা হাতপাখা ২০ টাকায় বিক্রি করি। শেষের দিকে এক জোড়া ১২০ টাকাও বিক্রি করেছি। নিখুঁত কাজের ওপর দাম দেয়া হতো। সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় গ্রাম ছেড়ে শহরে আসি। শহরের সাংসারিক কাজ শেষে অবসর সময় কাটানো যায় না। বই পড়া আর টিভি দেখা ছাড়া কোনো কাজ নেই। শহরের বৈদ্যুতিক পাখার জায়গায় হাতপাখার খুব একটা প্রয়োজন হতো না। তারপরও নিজের ব্যবহারের জন্য তৈরি করেছি। একদিন টিভিতে পেপার ও ভাতের মাড়ের সাহায্যে শো-পিস তৈরির কথা শুনি। এরপর এটাকে কাজে লাগাই। প্রথমে ছোট কিছু তৈরি করতে পারাতে আগ্রহ বাড়ে। জিনিসগুলো দেখতে ভালো এবং মজবুত হয়। কীভাবে মণ্ড তৈরি করেন জানতে চাইলে বলেন, ভাতের মাড়ের মাঝে দুই দিন পেপার বা অপ্রয়োজনীয় কাগজগুলো ভিজিয়ে রাখি। দুই দিন পর এগুলোকে চিপে শিলের (পাটার শিল) সাহায্যে থেঁতলে নরম করে আটার মতো করি। এরপর ইচ্ছামত ডিজাইন করি মাটির তৈরি জিনিসগুলোর মতো। মাটির তৈরি জিনিসগুলো ভেঙে যায়, কিন্তু এগুলোকে হাতের সাহায্যে টিপে টিপে শক্ত করে রোদে শুকালে অনেক মজবুত হয়। যত বেশি রোদে দেয়া যায়, এগুলো শুকিয়ে তত হালকা হয়। তবে বড় কিছু তৈরি করতে বেশি কাগজের প্রয়োজন হয় বলে মাঝে মাঝে ভেতরে ছোট ছোট জর্দার কৌটা ব্যবহার করেছি। শুকিয়ে এলে ভাতের মাড়ের সাহায্যে সাদা কাগজ লাগিয়ে তার ওপর বিভিন্ন রং দিয়ে ডিজাইন করে থাকি। এই কাগজের তৈরি আসবাবপত্র আমি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করছি। চেয়ার-টেবিলে দাঁড়ানো বা বসা যায়, মোড়াগুলো যে কোনো কাজে ব্যবহার করা যায়। এগুলোকে একমাত্র পানি থেকে দূরে রাখতে হয়। আসল কথা হলো, এই কাজে কোনো টাকার প্রয়োজন হয় না। শুধু শারীরিক পরিশ্রম ও ফেলে দেয়া জিনিস দিয়ে এগুলো তৈরি করা সম্ভব। এই শিল্প জনপ্রিয়তা পাবে। নিখুঁত হাতে তৈরি করলে এর মাধ্যমে নতুনত্বের ছোঁয়া আসতে পারে।চেতারা বেগম আরও বলেন, এখনও আমাদের দেশে অনেক নারী-পুরুষ আছেন যারা পুঁজির অভাবে কাজ খুঁজে পান না। তবে ধৈর্য ও নিখুঁত হাতের ব্যবহার করলে কাগজের তৈরি এই শিল্প জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। কাঠ, বেত ও স্টিলের আসবাবপত্রের সঙ্গে এই শিল্প একদিন ভালো একটা জায়গা দখল করবে, এটাই প্রত্যাশা চেতারা বেগমের।

Wednesday, January 26, 2011

সিরাজগঞ্জ ও চলনবিলে সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণ: মৌচাষিরা প্রায় ১০কোটি টাকা আয় করেন ।


সিরাজগঞ্জ ও চলনবিলে সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণ: মৌচাষিরা প্রায় ১০কোটি টাকা আয় করেন ।
০০সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা

সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষিরা। এ জন্য শীত মৌসুমের শুরু থেকেই জেলার বেলকুচি,উলস্নাপাড়া, শাহজাদপুর,রায়গঞ্জ, তাড়াশ উপজেলারসহ চলনবিলের বিভিন্ন জায়গায় মৌচাষিরা মধু সংগ্রহ করে মৌচাষিরা প্রায় ১০কোটি টাকা আয় করেন ।

চলনবিলের রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উলস্নাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, আত্রাই ও সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, কাজিপুর উপজেলায় পযর্াপ্ত সরিষার ফলন হয়ে থাকে। কৃষি অফিস জানিয়েছে , এবার প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষার ফুলে ছেয়ে গেছে বিস্তৃীর্ণ অঞ্চল।

নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মৌচাষিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ভাড়া করা সরিষার ক্ষেতসংলগ্ন স্থানে মৌমাছির বাক্সগুলো সারি সারিভাবে সাজিয়ে রেখেছে চাষিরা। চলনবিলের দীঘি সগুনা, গোয়ালগ্রাম, ভেটুয়া, কুসুম্বী, মাকড়শোন, কুন্দইল,মাগুড়া, রুহাই, প্রতাপ, নওগাঁ, শ্যামপুর, তেলীপাড়া, চান্দাইকোনা, বেলকুচিরচালা, শেরপুরসহ বিভিন্ন মাঠে মৌচাষিরা মৌ বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করছে।

এ বছর এ অঞ্চল থেকে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা সম্ভব বলে মৌচাষিরা জানিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের জননী মৌ খামারের চাষি আলমগীর হোসেন জানান, প্রতিটি বাক্সে একটি করে রাণী মৌমাছি রয়েছে। মৌমাছিগুলো সরিষার মধু আহরণ করে রক্ষিত বাক্সে এনে জমা করে। ৫-৭ দিন পর পর বাক্স থেকে চাকগুলো আলাদা করে মধু সংগ্রহ করা হয়। ৫০-৫৫টি বাক্সে গড়ে ৫-৭ মণ করে মধু সংগ্রহ করা যায়। তিনি আরো জানান, সরিষা মৌসুম ছাড়াও তারা লিচু মৌসুম ও সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। তবে সরিষা মৌসুমে মধু আহরণ করে লাভবান হলেও অন্য সময়ে তাদের লোকসান গুনতে হয়।

সাতক্ষীরার মৌচাষি গোলাম মোস্তফা ও আবুল হোসেন ইত্তেফাককে জানান, প্রতিবছর তারা সরিষার মৌসুমে চলনবিল থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ মণ মধু সংগ্রহ করে থাকেন।

মৌচাষিদের অভিযোগ, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ও বাণিজ্যিকভাবে মধু বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো বেশিরভাগ মধু পাশর্্ববতর্ী দেশ ভারত থেকে আমদানি করে থাকে। যে কারণে তারা প্রকৃত দাম থেকে বঞ্চিত হন। গুটিকয়েক কোম্পানি খামারীদের নিকট থেকে ১২০/১৪০ টাকা কেজি দরে মধু ক্রয় করে এবং ২০০-৩০০ কেজি হিসেবে বাজারজাত করে।
Source: Daily Ittefaq, 27 th january-2011

Tuesday, January 25, 2011

মির্জাপুরে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের চাহিদা বেড়েছে

মির্জাপুরে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের চাহিদা বেড়েছে

০০ মির্জাপুর সংবাদদাতা

টাংগাইলের মির্জাপুর উপজেলায় পরিবেশবান্ধব গুটি ইউরিয়া সার প্রয়োগ যন্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৫০ (বাংলা মতি) জমিতে সার প্রয়োগে এই যন্ত্র কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার টাংগাইলের মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে পরিবেশ বান্ধব এই যন্ত্র কৃষকদের ব্যবহার করতে দেখা গেছে। মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি ধান- ৫০ (বাংলা মতি) অধিক ফলনের লক্ষ্যে এই গুটী ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র আবিষ্কার করেছে। কৃষি বিভাগ মির্জাপুর উপজেলায় বিনা মূল্যে ২৫টি যন্ত্র বিতরণ করেছে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার নিখিল চন্দ্র বসাক জানিয়েছেন, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে। এতে সময় কম লাগে, শ্রমিক খরচ ৩০-৪০% কম, ধানের ফলন ২০% বৃদ্ধি হচ্ছে। আগে একরে ১০০-১২০ কেজি সার প্রয়োজন হত এখন লাগছে ৬০-৬৫ কেজি।
Source: Daily Ittefaq, 26th January-2011

ফলের স্বাদ যুক্ত দই: সিকৃবিতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন

ফলের স্বাদ যুক্ত দই:

সিকৃবিতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন

০০ খলিলুর রহমান ফয়সাল

ফলের স্বাদ যুক্ত দই উদ্ভাবন করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরী এন্ড পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আন্জুমান আরা ও প্রভাষক ডাঃ সুদেব সাহা। আম, আপেল ও কমলার স্বাদ যুক্ত উদ্ভাবিত এই দই দুগ্ধ শিল্পের বাজার সমপ্রসারণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা বলেছেন, বর্তমান বাজারে বিভিন্ন প্রকারের দই থাকলেও ফ্রুটস দই তৈরির প্রযুক্তি খুবই কম। সিকৃবি'র এই বিভাগ ফ্রুটস দই তৈরি করে দু্গ্ধ শিল্পে আমূল পরিবর্তন আনলো। ফ্রুটস কেক, ফ্রুটস আইসক্রিম বাজারে সচরাচর দেখা গেলেও ফ্রুটস দই এই প্রথম বাজারজাত করণের উপযোগী করে উদ্ভাবন করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল। গবেষক দলের প্রধান আন্জুমান আরা বলেন 'গরুর দুধের সাথে বিভিন্ন ফলের জুস মিশিয়ে বিভিন্ন স্বাদ যুক্ত দই উৎপাদন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। বাজারে সচরাচর যে দই পাওয়া যায় তার পুষ্টিগুণ অপেক্ষায় এই ফ্রুটস দইয়ের পুষ্টি গুণাগুণ অনেক বেশি ও মানসম্মত।'
বাজারে বর্তমানে দুই ধরনের দই পাওয়া যায়। মিষ্টি দই, অন্যটি টক দই। এই প্রথম দুই ধরনের দই -এর বিপরীতে একটু ভিন্ন স্বাদের দই উৎপাদন করেছে সিকৃবি'র এই বিভাগ। তবে এ সকল দই-এর পুষ্টিগুণ টক ও মিষ্টি দই-এর চেয়ে বেশি। যারা টক ও মিষ্টি দই পছন্দ করেন না তারা এই বিভিন্ন ধরনের ফলের সুগন্ধযুক্ত দই খেতে পারবেন। তাদের এ ক্ষেত্রে এই ধরনের দই গ্রহণে কোন ধরনের অসুবিধা হবে না।
গবেষক দলের সদস্য ডাঃ সুদেব সাহা জানান, 'এই ল্যাবরেটরিতে প্রস্তুতকৃত এই ফ্রুটস দই বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করলে বেশি লাভবান হওয়া যায়।' আনুষ্ঠানিক ভাবে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ভেটেরিনারী এন্ড এ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদের ডিন, প্রফেসর মোঃ সাইফুল ইসলাম, এই নতুন প্রযুক্তির ফ্রুটস দইয়ের উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. মতিয়ার রহমান হাওলাদার, ড. এ এস এম মাহবুবসহ অন্য শিক্ষকমন্ডলী।
Source: Daily Ittefaq

Sunday, January 23, 2011

নতুন পদ্ধতিতে বোরো আবাদে ঝুঁকছেন কৃষক

নতুন পদ্ধতিতে বোরো আবাদে ঝুঁকছেন কৃষক

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জে নতুন পদ্ধতিতে শুরু হয়েছে বোরো আবাদ। নতুন পদ্ধতিতে বীজতলায় পানি না হলেও চারা উত্পাদনে কৃষকদের আর বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। এ পদ্ধতিতে উত্পাদিত বীজ জমিতে রোপণ করলে ফলনও বেশি পাওয়া যায়। আবার বীজধানও কম লাগে।
ধান উত্পাদনের পূর্বশর্ত হলো বীজ থেকে সুস্থ-সবল চারা উত্পাদন করে তা সঠিক সময়ে রোপণ করা আর সেই লক্ষ্যেই মানিকগঞ্জে এবার শুরু হয়েছে নতুন পদ্ধতিতে বোরো ধানের আবাদ। জমিতে পানি না উঠায় প্রতি বছর কৃষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় এ বীজতলা তৈরি করতে। আর এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর মানিকগঞ্জ। এ পদ্ধতিতে বর্ষা বা সেচের পানি কোনোটির ওপর নির্ভর না করে যে কোনো জমিতে অঙ্কুরিত বীজ মাটিতে ছিটিয়ে পলিথিন পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। এতেই উত্পাদন হয় সুস্থ-সবল ধানের চারা। ১০/১২ দিন পরে পলিথিন উঠিয়ে দিলে চারাগুলো সোজা হয়ে ওঠে। এই পদ্ধতিতে মাত্র ২০/২৫ দিনের মধ্যেই চারা রোপণের উপযোগী হয়ে ওঠে। রোপণের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চারাগুলো পলিথিনে ঢেকে রাখতে হয়। আগে যেখানে ১ একর জমিতে ৬০ কেজি বীজ ধান লাগত, এখন এ পদ্ধতিতে মাত্র ১০ কেজি বীজধানই যথেষ্ট। মানিকগঞ্জ জেলায় এ বছর ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে জেলার কৃষকরা শুরু করে দিয়েছেন বোরো ধান রোপণের কাজ। মানিকগঞ্জ সদর থানার কেওয়ারজানি গ্রামের মোতালেব মাস্টার জানান, তিনি গত ২ বছর যাবত এই পদ্ধতিতে ৩০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন।কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম জানান, আমাদের এই এলাকায় প্রতি বছর ধানের চারার সঙ্কট হতো, এই সঙ্কট নিরসনে আমিই প্রথম মানিকগঞ্জে এই পদ্ধতিতে বীজ উত্পাদন করে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি। এতে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন এই এলাকার কৃষকরা।
এই পদ্ধতিতে একদিকে বীজধান কম প্রয়োজন হচ্ছে, অপর দিকে ধানও ৩ গুণ বেশি উত্পাদিত হচ্ছে।
Source: Daily Amardesh

Saturday, January 22, 2011

আইসিডিডিআরবি'র আবিষ্কার: সহজেই ধরা পড়বে কালাজ্বর

আইসিডিডিআরবি'র আবিষ্কারসহজেই ধরা পড়বে কালাজ্বর
কালাজ্বরের প্রচলিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতি ঝুঁকিপূর্ণ, ব্যথাদায়ক, জটিল ও ব্যয়বহুল। আর এসব মাথায় রেখে রোগীর মূত্রের নমুনা থেকে কালাজ্বর নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন আইসিডিডিআরবির পরজীবীবিদ্যা গবেষণাগারের একদল বিজ্ঞানী। গবেষণার বিস্তারিত জানাচ্ছেন তৌহিদ এলাহীপ্রচলিত পদ্ধতিতে কালাজ্বর নির্ণয় করতে হয় অস্থিমজ্জা, প্লিহা বা লসিকা থেকে কোষসমষ্টি বা কলা সংগ্রহ করে। এখান থেকে নমুনা নিয়ে লেসমেনিয়া নামের একটি পরজীবীর অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয় কালাজ্বর। নমুনা নেওয়ার সময় ব্যবহার করতে হয় বিশেষ সিরিঞ্জ। ওটা যথেষ্ট বেদনাদায়ক। উপযুক্ত সরঞ্জামাদি ছাড়া এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না। সিরিঞ্জ ব্যবহৃত হওয়ায় অন্য জীবাণুঘটিত রোগের সংক্রমণের আশক্সকাও আছে। সময় লাগে অনেক বেশি। আর তাই মূত্রের নমুনা থেকে আবিষ্কৃত রোগ নির্ণয় পদ্ধতিটি কালাজ্বরের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য দারুণ এক আশা জাগানিয়া খবর। এমনকি মূত্রের নমুনা থেকে কালাজ্বর নির্ণয়ের পদ্ধতি আর কোথাও প্রচলিত নেই।
গবেষণা দলের প্রধান আইসিডিডিআরবির পরজীবী বিজ্ঞান ল্যাবরেটরির গবেষক গোলাম মুসাবি্বর খান জানান, কালাজ্বরের দুটো পরজীবী প্রজাতি লেসমেনিয়া ডনোভানি, লেসমেনিয়া চাগাসি। এদের মধ্যেই কেবল পাওয়া যায় '৩৯ অ্যামাইনো এসিডবিশিষ্ট' পরিবর্তিত জিনেটিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রোটিন অণু। লেসমেনিয়া ছাড়া অন্য কোনো পরজীবী বা অণুজীবে এটি পাওয়া যায় না। আক্রান্ত রোগীর মূত্রের নমুনায় খুঁজে পাওয়ার ওপর ভিত্তি করেই উদ্ভাবন করা হয়েছে নতুন পদ্ধতিটি। মূত্রের নমুনা ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় পদ্ধতির নাম 'আরকে-৩৯ স্ট্রিপ টেস্ট'। এটি ব্যবহার করে রোগীর সেরাম, প্লাজমা বা পাতলা জলীয় রক্তরস অংশের মাধ্যমে আরেকটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। তবে তাতে সুই-সিরিঞ্জের ব্যবহার আছে। ওটা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু মূত্রের নমুনা থেকে রোগ নির্ণয় পদ্ধতিতে ১০ মিনিটেই জানা যাবে কালাজ্বরের পরজীবীর উপস্থিতি।
কালাজ্বরের এ গবেষণায় প্রথমে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এক শ স্বেচ্ছাসেবী রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে ওই ১০০ রোগীকে প্রথমে রক্তরস বা প্লাজমা ও সেরামে টেস্টের মাধ্যমে কালাজ্বর আক্রান্ত হিসেবে নিশ্চিত করতে হয়েছে। পরে তাদের মূত্রের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা গেল তাদের ওই নমুনার মাধ্যমেও কালাজ্বরের উপস্থিতি বলে দেওয়া সম্ভব। এ গবেষণা আইসিডিডিআরবির মহাখালী শাখায় পরজীবীবিদ্যা গবেষণাগারের পাশাপাশি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায়ও সম্পন্ন হয়েছে।
গোলাম মুসাবি্বর খান জানান, রোগীর মূত্রের নমুনা আইসিডিডিআরবির পরজীবী বিজ্ঞান গবেষণাগারে আনতে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়েছে। পাশাপাশি আনা হয়েছে রক্তের নমুনাও। প্রক্রিয়াজাতকরণের পর রসের নমুনায় এসিডিটি কমাতে একটি বিশেষ দ্রবণ যোগ করতে হয়েছে। এরপর প্রচলিত পদ্ধতিতে ওই নমুনায় 'অ্যান্টি আরকে-৩৯ ইমিউনোগ্লোবিউলিন' অণু খুঁজে পেতে লাগে ৩০ মিনিট। নতুন পদ্ধতিতে ১০ মিনিটেই 'অ্যান্টি আরকে-৩৯ ইমিউনোগ্লোবিউলিন' অণু খুঁজে পাওয়া গেছে। এতে আলাদা কোনো দ্রবণও যোগ করতে হয়নি। পরে প্রাপ্ত উপাত্ত পরিসংখ্যানের সফটওয়্যার এসপিএসএস ব্যবহার করেও নির্ভুল ফল পাওয়া গেছে।
সহজে নমুনা সংগ্রহের কারণে এ পদ্ধতিটি খুবই উপযোগী। বিশেষ করে শিশু বা বৃদ্ধ রোগীদের অস্থিমজ্জা, প্লিহা সুই-সিরিঞ্জ দিয়ে ছিদ্র না করে নমুনা সংগ্রহ অনেক সহজ, আরামদায়ক। তবে এ গবেষণার ছোটখাটো কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও স্বীকার করলেন গবেষকরা। গবেষক শফিউল আলম জানান, প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এটি ৯৫ শতাংশ কার্যকর। দ্রুত এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এর জন্য আরো অনেক রোগী নিয়ে বড় মাপের গবেষণার দরকার।
গবেষণা দলে আরো ছিলেন, মিল্কা প্যাট্রিসিয়া পোদ্দার, মাকাতো ইতোহ, কাজি এম জামিল, রশিদুল হক, ইউকিকো ওয়াগাত সুমা। জাপান-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগের এ গবেষণার অর্থায়ন করেছে জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গবেষণার বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতা করেছেন_পরজীবী গবেষক দেবাশীষ ঘোষ, নাজমুল হুদা, এইচ এম রুবায়েত এলাহী, শারমিনা দেলোয়ার। আইসিডিডিআরবির পরজীবীবিদ্যা গবেষণাগার ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাপানের আইচিয়ে মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সুকুবা। এ গবেষণাকর্ম নিয়ে ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর বিজ্ঞান সাময়িকী বায়োমেড সেন্ট্রালের 'প্যারাসাইটস অ্যান্ড ভেক্টরস'-এ একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
এক নজরে কালাজ্বরকালাজ্বর তথা ভিসেরাল লেসমোনিয়াসিস একটি পতক্সগবাহিত পরজীবীঘটিত রোগ।রোগটির বাহক বেলে মাছি। তাই দরিদ্ররাই বেশি আক্রান্ত হয়।বাংলাদেশ সরকারের ডিজিজ কন্ট্রোল ইউনিটের সূত্রমতে, ১৯৯৪-২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭৩ হাজার ৮৬৯ জন কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়। ২০০৮ সালে আক্রান্ত হয় চার হাজার ৮২৪ জন এবং মারা যায় ১৭ জন।এই মুহূর্তে কালাজ্বরের ঝুঁকিতে আছে আরো প্রায় ২০ লাখ মানুষ।Source: Daily Kalerkantho