Sunday, September 4, 2011

এক রোপণে দুই ফসল

এক রোপণে দুই ফসল

লেখক: নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, মৌলভীবাজার |

কৃষকদের জন্য একই চাষাবাদে দু’বার ফসল উত্পাদন একটি ব্যতিক্রমী মাত্রা যুক্ত হয়েছে। কেটে ফেলা ধানের মোথা থেকে দ্বিতীয়বার ধান উত্পাদনের উদ্ভাবন করেছেন বিশিষ্ট জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী।

২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের নিজ গ্রাম কানিহাটি এলাকার ২৫ বর্গমিটারের একটি প্রদর্শনী ক্ষেতে বোরো ধানের চারা রোপণ করেন। সঠিকভাবে সেচ ও পরিচর্যা করে ১৩০ দিনের মধ্যে ৮৫ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার উচ্চতার গাছে প্রথমবারের মত ফসল বেরিয়ে আসে। আর এই সময়ের মধ্যেই মাটি থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পরিকল্পিতভাবে ধান কেটে নিতে হয়েছে। কোনো প্রকার চাষাবাদ ছাড়াই প্রথম দফা ধান কেটে নেয়ার পর ধানের মোথায় পরিমাণমত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে মাত্র ৫২ দিনের মাথায় দ্বিতীয়বারের মত ফসল উত্পাদন করা হয়। প্রথম বারের নতুন ধান কেটে নেয়ার পর দেখা গেছে হেক্টরপ্রতি এ ধান উত্পাদন হয়েছে ৬.৪ মেট্রিক টন এবং দ্বিতীয়বার চাষাবাদ বিহীন ধানের মোথায় বিঘাপ্রতি মাত্র ৩শ’ টাকার ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে হেক্টরপ্রতি ধান উত্পাদন হয়েছে ৩ মেট্রিক টন। যেখানে সরকারি হিসাব অনুযায়ী হেক্টরপ্রতি ধান উত্পাদন হয়ে থাকে ৩ থেকে ৪ মেট্রিক টন।

জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী জানান, বাংলাদেশে সাধারণত কোনো জমিতে এক ফসল, কোনো জমিতে দু’ ফসল আবার কোনো জমিতে তিন ফসলি ধান উত্পাদন হয়ে থাকে। এসব জমিতে প্রতিবারই ধান কেটে নিয়ে নতুন করে

জমি চাষাবাদের পর সার প্রয়োগ করে সেচ দিয়ে ধান উত্পাদন করতে হয়। এসব ধান কেটে নেওয়ার পর জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা ধানের মোথা থেকে হালকাভাবে চিটা মিশ্রিত কিছু ধান উত্পাদন হয়ে থাকে। তিনি মনে করেন তার উদ্ভাবিত এ ধানকে কৃষকরা ব্যাপকহারে চাষাবাদ করলে মঙ্গা বা নিধানের ধান হিসেবে আখ্যায়িত করা যাবে। আবেদ চৌধুরীর নতুন উদ্ভাবিত এ ধানের কোনো নাম এখনো দেয়া হয়নি। তবে শুধুমাত্র সাংকেতিক নম্বর দিয়ে রাখা হয়েছে। কৃষকরা সাধারণত ক্ষেতে ধানের যে চারা রোপণ করেন তার উচ্চতা থাকে ১০ সেন্টিমিটারের মত। জিন বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত ধানগাছ গোড়ায় না কেটে ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে কেটে ফেলায় ক্ষেতের মাঝে বেশ উচ্চতার ধানগাছ থেকে যায়। বোরো ধান কেটে নেওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে বন্যা হয়ে থাকে। তখন ক্ষেতে থাকা নতুন উদ্ভাবিত এ ধানগাছ বন্যা প্রতিরোধেও কাজ করবে।

ড. আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত ধানের চারা একটি করে কিছু জায়গা নিয়ে (৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে) রোপণ করা হয়। ফলে রোপিত একটি ধানগাছ মাটি থেকে ভালভাবে শক্তি নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে এবং একটি ধানগাছ থেকে আরো বেশ কয়েকটি ধানগাছ গজাতে থাকে। ১৩০ দিনের মধ্যে প্রথম ফসল সংগ্রহকালে সতর্কতার সাথে ৩৫ সেন্টিমিট ার উপরে কেটে নিলে গোছায় (ধানের গোড়ায়) অপেক্ষমান ঘুমন্ত অন্যান্য গাছগুলো থেকে মাত্র ৫২ দিনের মাথায় দ্বিতীয় বার ফসল বেরিয়ে আসে। আর এ জন্য জমিতে নতুন করে কোনো চাষ না দিয়েই বিঘাপ্রতি মাত্র ৩শ’ টাকার সার প্রয়োগ করলে

সফলভাবে দ্বিতীয় ফসল পাওয়া যায়। এসময়ে ধানক্ষেতে পোকার আক্রমণ কম হয় এবং কীটনাশক ব্যবহারও করতে হয় কম। ড. আবেদ চৌধুরী পরীক্ষামূলকভাবে একই জমিতে প্রথমবার ফসল কেটে কোনো চাষাবাদ ছাড়াই দ্বিতীয় ফসল উত্পাদনে সক্ষম হয়েছেন।

Source: Daily Ittefaq

No comments:

Post a Comment