নকশি কাঁথা এখন যাচ্ছে বিদেশেও
লেখক: জামালপুর প্রতিনিধি | মঙ্গল, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১, ১২ আশ্বিন ১৪১৮
জামালপুরের গ্রামীণ নারীদের নিপুণ হাতে তৈরি নকশি কাঁথা এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যাচ্ছে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের এই নকশি কাঁথা এখন সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের রূপ নিয়েছে। গাঁয়ের বধূরা এখন ঘরে বসে নেই তারা এখন নকশি কাঁথা বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করছেন।
জামালপুর জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় এলাকার দরিদ্র, মধ্যবিত্ত এমনকি শিক্ষিত মহিলারা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কারুশিল্পকে। মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে সীমিত আকারে আশির দশকে এ কারুশিল্প শুরু হয়। বর্তমানে এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে এ ব্যবসার চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। কারুশিল্পকে ঘিরে জামালপুর জেলায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় ৩ শতাধিক নারী উদ্যোক্তা, যার মাধ্যমে ঘরে বসে থাকা ৬০ হাজারের বেশি নারী তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিয়েছেন। কারুশিল্পকে ঘিরে এখন জেলার আনাচে-কানাচে জমজমাট ব্যবসা চলছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মহাজনরা কারুশিল্পী ও উদ্যোক্তাদের কাছে বিভিন্ন ডিজাইনের বিছানার চাদর, নকশি কাঁথা, ওয়ালম্যাট, সোফার কুশন, পাপোশ, ফতুয়া, নকশি করা রকমারি পাঞ্জাবি মহিলাদের হ্যান্ডব্যাগসহ নানা পোশাকের অর্ডার নিয়ে থাকেন।
ঈদ পূজা পার্বণে রকমারি ডিজাইনের পোশাক সারা দেশে বিক্রি হয়ে থাকে। পাইকারী বিক্রির পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে আগত ক্রেতারা নিজেদের পছন্দের পোশাক স্বল্প মূল্যে ক্রয় করে থাকেন। পূজা ও সামনে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। জামালপুরের কারুশিল্পের উন্নয়নে এবং নারী উদ্যোক্তাদের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের নির্দেশে ন্যাশনাল ব্যাংক সমপ্রতি ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া চালু করেছে । ইতিমধ্যে অনেক উদ্যোক্তা মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছেন।
শহরের আমলাপাড়ার পরশমনি হস্তশিল্প, রকি হস্তশিল্প, সৃষ্টি হস্তশিল্পসহ বাংলার উত্সব হস্তশিল্পের মালিকগণ অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েও দীর্ঘদিন যাবত্ ঋণ না পেয়ে তাদের ব্যবসার তেমন প্রসার ঘটাতে পারেননি। এব্যাপারে ব্যাংক ব্যবস্থাপকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, যোগ্য ব্যক্তিদের ঋণদান অব্যাহত রয়েছে। নারী উদ্যোক্তারা জানান, কারু ও কুটির শিল্পের প্রতি সরকারে বিশেষ নজর দিয়ে ঋণ প্রদান অব্যাহত থাকলে মোটা অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে ঘরে বসেই এখন দেশ-বিদেশে ব্যবসা চালিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। পাশাপাশি গ্রামীণ বেকার মহিলারা তাদের ঘরে বসে কর্মক্ষম হয়ে নিজে এবং দেশকে স্বাবলম্বী করে তুলবেন। বর্তমানে জামালপুরে ঘরে বসে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় জেলার অনেক কর্মমুখী নারী/পুরুষ ব্যবসা প্রসার ঘটিয়ে এখন নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন।
শহরের কাচারিপাড়ার কারু নিলয়, হ্যান্ডিক্র্যাফটের মালিক আঞ্জুমান আরা খানম ১৫০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ১৯৯৫ সালে নিজ বাসায় নকশি কাঁথার কাজ শুরু করেন। এখন তার ১০ জন কর্মচারি ও ৭০০ সেলাই কর্মী রয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ৫ লাখ টাকা। বর্তমানে মোট মূলধন দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া দীপ্ত কুঠির, শতদল, রংধনু, প্রত্যয়, প্রতীক হ্যান্ডিক্র্যাফটের মালিকসহ অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানান, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন তারা। জনপ্রিয় শিল্পটি উন্নয়নে সরকারি সহযোগিতা পেলে পোশাক শিল্পের ন্যায় এ শিল্পটি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
Source: Daily Ittefaq
Related Link:
No comments:
Post a Comment