শেরপুরের সীমাত্মবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষক এখন আর আগের মতো ফসলে কীটনাশক ব্যবহার করছে না। ফসল রক্ষায় তারা পোকা-মাকড় দমনে পারচিং পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এতে যেমন উৎপাদন ব্যয় কমে যায়, তেমনি উৎপাদিত ফসলের গুণগতমানও বেড়ে যায়। পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হয় কম। নালিতাবাড়ীতে চলতি আমন মৌসুমে পাখি দিয়ে ধানের পোকা-মাকড় দমন কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
উপজেলার ২২ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে এখন সবুজের সমারোহ। অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকার জমির ধান ১০/১২ দিনের মধ্যেই কাটা হবে। এমতাবস্থায় কিছু কিছু জমিতে লালচে রোগ ও বাদামি গাছফড়িং পোকা দেখা দেয়ার সাথে সাথে কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ তা দমনের জন্য কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। ফসল রক্ষায় ধানের ক্ষেতে পারচিং পদ্ধতি বা গাছের ডাল-পালা পুঁতে দিয়ে পোকা দমন করা পদ্ধতিতে কৃষক সাড়া দিচ্ছে। কৃষি মন্ত্রীর এলাকায় দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে কৃষি অফিসারসহ অন্য কর্মকর্তারা।
উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ জানায়, এবার চলতি আমন মৌসুমে উপজেলার নয়াবিল, আন্ধারপাড়া, বাঘবেড়সহ কয়েকটি গ্রামে ধানে লালচে রোগ ও বাদামি গাছফড়িং পোকা দেখা দেয়ার সাথে সাথে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর পরার্মশে পারচিং পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করা হয়। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী মোবাইল ফোনে বলেন, রাসায়নিক বালাই নাশকের পরিবর্তে পারচিং পদ্ধতিতে খরচ কম। গাছের ডালে ফিড়িংঙ্গা পাখি (কেউ বলে ফেসকুলস্না পাখি) বসে ধানের শত্রু-পোকা খেয়ে ফেলে এবং পরবর্তীতে এই ডাল জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। তিনি আরো বলেন, ছিটানোর সময় সবটা কীটনাশক ধান গাছের গোড়ায় পৌঁছায় না। ফলে পোকা দমনে তেমন কার্যকর হয় না। তার চাইতে ২ হাত অত্মর ধানে বিলি কেটে ধান গাছের গোড়ায় আলো-বাতাস প্রবেশ করালে এবং গাছের ডাল-পালা পুঁতে দিয়ে পাখি বসার ব্যবস্থা করলে পোকায় ক্ষতি করতে পারে না। সূত্র মতে, মৌসুমের শুরু থেকেই ধানের পোকা-মাকড় দমনে এ বালাই নাশক পারচিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় সুফল পাচ্ছে কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, কৃষকদের দুই ধরনের পারচিং পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। একটি লাইভ পারচিং অন্যটি ডেথ পারচিং। লাইভ পারচিং পদ্ধতিতে তিন মিটার দূরত্বে পাখি বসার জন্য ধনচে গাছ রোপণ করা হয়েছে। এই গাছ একটু বড় হলেই সেখানে পাখি খুব সহজে বসতে পারে। অন্যদিকে, এটি আগাছা না হওয়ায় ফসলের ক্ষতি করে না। এছাড়া ধনচে গাছ রাইজোডিয়াম জাতীয় ব্যাকটেরিয়া থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে মাটিতে সরবরাহ করে। ফলে জমিতে ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয় কম। যেহেতু ধনচে গাছ জীবিত অবস্থায় পাখির মাধ্যমে পোকা দমনে খুঁটি হিসাবে কাজ করছে। এ জন্য এটির নাম দেয়া হয়েছে লাইভ পারচিং। অন্যদিকে ডেথ পারচিং হচ্ছে মরা গাছের ডাল জমির মধ্যে পুঁতে দিয়ে পাখি বসার ব্যবস্থা করা। সাধারণত,এক একর জমিতে ৩০/৩৫টি ডাল পুঁতে দিলেই হয়। রুপাকুড়া গ্রামের কৃষক নাসিম মিয়া জানান, পারচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা সুফল পাচ্ছেন। কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বানেজ আলী মিয়া জানান, ধান ক্ষেতে পোকা দমনে পারচিং পদ্ধতি বেশ উপযোগী। কেননা কোন ড়্গেতে অপেক্ষাকৃত উঁচু অবলম্বন পেলে পাখিরা সহজে সেখানে এসে বসে। এরপর পোকা দেখে তা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে ক্ষেত পোকামুক্ত করে। তিনি আরো জানান, কয়েকটি এলাকায় পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও আলোর ফাঁদ ও পারচিং পদ্ধতির মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আছে।
কৃষকরা জানান, এই প্রাকৃতিক কীট দমন পদ্ধতিটি প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শক্রমে এবার আমরা ব্যাপক হারে পারচিং পদ্ধতি ব্যবহার করছি। সুফলও পাচ্ছি।
Source: www.ekrishi.com
No comments:
Post a Comment