Saturday, October 9, 2010

যেমন চলছে বাংলাদেশ কলেজ অব লেদার টেকনোলজি

যেমন চলছে বাংলাদেশ কলেজ অব লেদার টেকনোলজি

০০ গাজী আব্দুল হাদী

চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ খাতে গত অর্থ বছরে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। আয় অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কলেজ অব লেদার টেকনোলজি থেকে পাস করা টেকনোলজিস্টদের ভূমিকাই প্রধান। অথচ প্রতিষ্ঠানের দুইটি বিভাগ প্রকল্পের অধীনে থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতনভাতা না পাওয়ায় ভাল ভাল শিক্ষক ইতিমধ্যে চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক সংকট চরমে। প্রকল্পের অধীনে ফুটওয়্যার ও লেদার প্রোডাক্টস বিভাগে ৬১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ থাকলেও এর অধিকাংশ পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়াও রাজস্ব খাতেরও বেশিরভাগ পদ শূন্য।

পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীকে চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পে কারিগরিভাবে দক্ষ জনসম্পদে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ইস্ট বেঙ্গল ট্যানিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৯ সালের ১০ জুন থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৫২ সালে ইস্ট পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি নামে নামকরণ হয়। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ডিপেস্নামা, সার্টিফিকেট কোর্স এবং কারিগরি পর্যায়ের শিক্ষা চালু ছিল। অর্থনীতিতে এ শিল্পের অবদানের কথা চিন্তা করে সরকার আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উন্নত সিলেবাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব লেদার টেকনোলজি নামে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়।

বাংলাদেশ কলেজ অব লেদার টেকনোলজিতে বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে ছাত্র ভর্তির উদ্যোগ নেয়। এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা সর্বনিম্ন চতুর্থ বিষয় বাদে জিপিএ ৪ প্রাপ্তরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন ফরম কলেজ ওয়েব সাইট িি.িনপষঃপড়স.নফ থেকে সংগ্রহ করে স্বহস্তে কালো কালি দ্বারা পূরণ করে নির্ধারিত ৩০০/- ফি জমাদান রশিদ ও সংশিস্নষ্ট কাগজপত্রসহ রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দিয়ে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে হবে। লিখিত পরীক্ষা ৩১ ডিসেম্বর সকাল ১০.০০ থেকে ১১.৩০ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত হবে। লিখিত, মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রাথর্ীরাই ভর্তির যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

বাংলাদেশ কলেজ অব লেদার টেকনোলজিতে চার বছর মেয়াদি তিনটি কোর্স পরিচালিত হয়। বিএসসি ইন লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি ইন ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিএসসি ইন লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রতিটি কোর্সে আসন সংখ্যা ৪০টি। এছাড়াও কলেজটিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়াদে শর্টকোর্স ছিল। প্রকল্পের অধীনে থাকায় শিক্ষক স্বল্পতার কারণে কোর্সগুলো বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ কলেজ অব লেদার টেকনোলজিতে প্রায় আটশ' ছাত্র-ছাত্রীর জন্য দুইটি ছাত্রাবাস ও একটি ছাত্রীবাস রয়েছে। ছাত্রাবাস দুইটির নতুনটিতে ৫০ জন ও পুরানটিতে ২৫০ জন এবং টিচার্স কোয়ার্টারে ৫২ জন ছাত্রীসহ মোট তিনশ' ৫২ ছাত্র-ছাত্রী অবস্থান করছে। ছাত্র-ছাত্রীর তুলনায় সিট কম থাকায় একই রুমে সিটের অতিরিক্ত ছাত্র থাকছে। এ প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের পাশাপাশি বর্তমানে ছাত্রীরাও ভর্তি হচ্ছে। ছাত্রীদের জন্য নতুন চার তলা ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণের কাজ চলছে।

ছাত্রাবাসের ব্যাপারে হোস্টেল সুপার নূর মোহাম্মদ বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের তুলনায় হোস্টেলে সিট কম। তিনি আরো একটি বহুতল ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য ঊধর্্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।

এই প্রতিষ্ঠানে একটি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। ১ জন মেডিক্যাল অফিসার ও ১ জন কম্পাউন্ডার রয়েছেন। প্রয়োজনের তুলনায় ওষুধপত্র নেই বললেই চলে। ছাত্ররা জানান, ফুটওয়্যার ও লেদার প্রোডাক্টস বিভাগে কাজ করতে গেলে নানা দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহারে চোখের সমস্যা হয়। বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে প্রেরণ করে থাকেন।

ক্রিসেন্ট ট্যানারি লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান এম এ কাদের বলেন, চায়না, ভিয়েতনাম, ইটালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লেদার টেকনোলজিস্টদের চাহিদা রয়েছে। দেশের বাজারে যেমন- বাটা কোম্পানিতে ৫২ জন, এ্যাপেক্স ৪০ জন ও ক্রিসেন্ট ফুটওয়্যার ও লেদার প্রোডাক্টস ৭ জনসহ অনেক কোম্পানিতে লেদার টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন। শেষবর্ষে থাকতেই দেশীয় কোম্পানিতে ৫০%-৬০% ছাত্রদের চাকরি হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৯০টি ট্যানারি বন্ধ। এ ট্যানারিরগুলো চালু হলে টেকনোলজিস্টদের চাহিদা আরো বাড়বে।
Source: Daily Ittefaq

No comments:

Post a Comment