Thursday, July 15, 2010

আইএমআরএস : হাতের মুঠোয় গ্রন্থাগার

আইএমআরএস : হাতের মুঠোয় গ্রন্থাগার উন্নত বিশ্বের অনেক গ্রন্থাগারেই তথ্যসেবা হিসেবে চালু রয়েছে ইন্সট্যান্ট মেসেজিং রেফারেন্স সার্ভিস বা আইএমআরএস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক নাফিজ জামান শুভ নরওয়ে ও এস্তোনিয়ায় এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন। সম্প্রতি তাঁরই তত্ত্বাবধানে দেশে প্রথমবারের মতো ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সেবাটি চালু হয়েছে। আইএমআরএস নিয়ে লিখেছেন তিনি।ঘরে বসেই গ্রন্থাগার থেকে আনা বইটির ফেরত দেওয়ার সময় বাড়াতে পারলে কিংবা গ্রন্থাগারে নতুন আসা বইটি নিজের নামে রিজার্ভ করতে পারলে মন্দ হয় না। আর এ সুবিধা যদি পাওয়া যায় বিনা খরচে, তাহলে তো আরো ভালো। উন্নত বিশ্বে সেবাটি অনেক আগে থেকেই চালু আছে। এর নাম ইন্সট্যান্ট মেসেজিং রেফারেন্স সার্ভিস বা আইএমআরএস।
১৯৮০ সালের দিকে 'ভার্চুয়াল গ্রন্থাগার' নিয়ে তথ্য বিজ্ঞানীরা কাজ শুরু করেন। নব্বইয়ের দশকে এসে তা পূর্ণতা পায়। ২০০০ সালের শুরুতেই আইএমআরএস এ তথ্যসেবার ধারণাই বদলে দেয়। এ পদ্ধতিতে লাইব্রেরি-সংক্রান্ত তথ্যসেবা চলে আসে হাতের মুঠোয়। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় গত ১৮ জুলাই সীমিত পরিসরে দেশে প্রথমবারের মতো আইএমআরএস সেবা চালু করেছে। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণাকাজে সহযোগিতার জন্য ইস্ট ওয়েস্ট গ্রন্থাগার থেকে তাৎক্ষণিক তথ্যসেবা পাচ্ছেন।

আইএমআরএস কী
যাদের ই-মেইল অ্যাকাউন্ট আছে, বিশেষ করে জিমেইল বা ইয়াহু, তারা কমবেশি ইন্সট্যান্ট মেসেজিং বা আইএমের সঙ্গে পরিচিত। অনলাইন বন্ধুদের সঙ্গে ব্যবহারকারী মেইলের বিকল্প হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে যে বার্তা আদান-প্রদান করে থাকেন, তাকে আইএম বলে। গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্রে যখন এ সেবা চালু করা হয় তখন একে আইএমআরএস বলে। ব্যবহারকারীকে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পেঁৗছে দেওয়াই এ সেবার মূল লক্ষ্য। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরিরত একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। গবেষণাকাজে এখন লন্ডন আছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রন্থাগারে আছে এমন একটি গবেষণাপত্র, যা হঠাৎ খুব জরুরি হয়ে পড়ল। গবেষণাপত্রটি হাতে পেতে তো আপনার পক্ষে ঢাকা ফিরে আসা সম্ভব নয়। ইন্সট্যান্ট মেসেজিং রেফারেন্স সার্ভিসের মাধ্যমে আপনি লন্ডনে বসেই গবেষণাপত্রটি হাতে পেতে পারেন।

আইএমআরএস চালু করতে যা দরকার
ইন্সট্যান্ট মেসেজিং রেফারেন্স সার্ভিস চালুর জন্য নতুন করে অবকাঠামো তৈরির দরকার নেই। ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি কম্পিউটার আর যেকোনো মেসেঞ্জার সফটওয়্যার যেমন_ইয়াহু, হটমেইল অথবা জিমেইলের মতো কোনো একটি চ্যাট ক্লায়েন্ট হলেই চলবে। সবশেষে প্রয়োজন ছোট্ট একটা প্রশিক্ষণ। ই-মেইল ব্যবহার করতে জানেন এমন গ্রন্থাগারকর্মী দিয়ে এ সেবাটি নির্দ্বিধায় পরিচালনা করা সম্ভব। এ সেবাটি পরিচালনার জন্য তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টার ব্যবহারিক প্রশিক্ষণই যথেষ্ট।
কোনো গ্রন্থাগারে আইএমআরএস চালু করতে সাধারণত গববনড় সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা হয়। এটি ঞৎরষষরধহ-এর সমজাতীয় একটি সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে সব ই-মেইল আইডি একটি প্লাটফর্মে ব্যবহার করা যায়। এতে একাধিক আইডির জন্য একাধিকবার পাসওয়ার্ড দিয়ে আইএমে ঢোকার প্রয়োজন নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোনো ম্যাসেঞ্জার সফটওয়্যার ডাউনলোড না করেই গববনড় ওয়েব প্লাটফর্ম থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ইন্সট্যান্ট মেসেজিং করা যায়।
গববনড় রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রথমে http://www.meebo.com ঠিকানায় গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করার পর আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন (Login) করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ নতুন অ্যাকাউন্টের নাম নধহনবরং এবং পাসওয়ার্ড নফ১২৩নফ। এ অ্যাকাউন্টে ঢুকতে আইডির ঘরে নধহনবরং-এর পাসওয়ার্ডের ঘরে নফ১২৩নফ দিয়ে ঢুকতে হবে।
এরপর সব ই-মেইল আইডিকে গববনড়-তে রেজিস্টার করতে হবে। এরপর ছোট একটি বক্স আসবে, যাতে ই-মেইল আইডি, পাসওয়ার্ড দিতে হবে। সঙ্গে নেটওয়ার্ক (যেমন yahoo, msn, facebook) নির্বাচন করে দিতে হবে। এরপর Contact list--এ ক্লিক করতে হবে। আমরা যদি কাউকে আমাদের বন্ধু তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাই, তাহলে ডান পাশে থাকা add contact--এর Remove Contact-এ ক্লিক করতে হবে। তেমনি কাউকে বাদ দেওয়ার জন্য Remove Contact-এ ক্লিক করতে হবে। ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি ইন্সট্যান্ট মেসেজিং রেফারেন্স সার্ভিস দিতে meebo me widgets থেকে কোড Cop করে লাইব্রেরির ওয়েবসাইটে Paste করতে হবে। ব্যস, সেবা শুরু হয়ে গেল।

গ্রাহকরা যেভাবে এ সেবা পাবেন
গ্রাহকরা দুই ভাবে সেবাটি পেতে পারেন। প্রথমত ব্যবহারকারীকে বলা হয় গ্রন্থাগারের ই-মেইল অ্যাড্রেসটি তার বন্ধু (ADD FRIEND) হিসেবে যুক্ত করে নেওয়া। গ্রন্থাগারকর্মীকেও ব্যবহারকারীর ই-মেইল হিসাবকে বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে গ্রন্থাগার এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সেবাটি দিতে ইচ্ছুক তাদের উচিত গুরুত্বপূর্ণ সব চ্যাট ক্লায়েন্টেই (ইয়াহু, হটমেইল, জিটক ইত্যাদি) হিসাব খোলা। এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী যে ই-মেইলই ব্যবহার করুক না কেন সেটিকেই সে ইন্সট্যান্ট মেসেজিংয়ের জন্য ব্যবহার করতে পারবে। নতুন করে আলাদা কোনো ই-মেইল অ্যাকাউন্ট তাকে খুলতে হবে না।
দ্বিতীয়ত গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ওয়েবসাইটে চ্যাটিং উইজেট যুক্ত করার মাধ্যমেও এ সেবা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোনো ই-মেইল অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন নেই। এতে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা
রক্ষা হয়। আমাদের দেশে র‌্যাব, পুলিশ বিভিন্ন সময় অপরাধীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য জনগণের সহযোগিতা চায়। সে ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়। অনেকে মোবাইল ফোনে অপরাধীর তথ্য দিতে ভয় পান। কারণ তাঁরা মনে করেন, মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে গোপনীয় তথ্য দিলে পরে সমস্যা হতে পারে। এ অবস্থায় আইএমআরএস আদর্শ সেবা হতে পারে। ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট ইন্সট্যান্ট মেসেজিং ইনফরমেশন সেবায় অপরাধীর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, কী অপরাধ করেছে ইত্যাদি লিখতে পারে। এতে র‌্যাব বা পুলিশ অপরাধী সম্পর্কে সহজেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারে।

কী ভাষা ব্যবহার করা হবে?
তথ্যানুসন্ধানকারীদের মধ্যে অনেকে ইংরেজিতে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ নাও করতে পারেন। আর যেহেতু সেবাটি গণমানুষের জন্য উন্মুক্ত তাই ভাষাগত সীমাবদ্ধতা না থাকলেই ভালো। যেমন_AMI SHUVA DHAKA THAKEY LIKHCHI.AMAR E-‡OVERNANCE AR UPOR KICHU DOCUMENT DORKER. এভাবে লিখেও সেবাটি পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে জনসাধারণের জন্য মোবাইল ফোনে এমন এসএমএস পাঠানোর নজির রয়েছে ।
১৮৫৪ সালে বেসরকারি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে গ্রন্থাগার আন্দোলন শুরু হলেও গুটিকয় গ্রন্থাগার ছাড়া গ্রন্থাগারসেবার মান এখনো সেকেলে রয়ে গেছে। তবে বিনা পয়সার আইএমআরএস সেবা যদি গ্রন্থাগারগুলোতে চালু করা যায়, তবে এ ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের সেবার মান নিয়ে যে দুর্নাম রয়েছে তা অনেকটাই ঘুচবে। আমাদের দেশের গ্রন্থপ্রেমীদের জন্যও এটা হবে অনেক ভালো খবর।

No comments:

Post a Comment