Thursday, July 15, 2010

গণতন্ত্র উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি

গণতন্ত্র উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি

বর্তমান সময়ে আলোচনার একটি অন্যতম বিষয়বস্তু হচ্ছে গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত উন্নয়ন। বর্তমান সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। গণতন্ত্র উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ এবং কীভাবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে বর্তমান সরকার, জনগণ ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আলাপ-আলোচনা করছে। আজকের প্রবন্ধ গণতন্ত্র উন্নয়নে অন্যান্য দেশ কীভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে এবং কীভাবে আমাদের দেশেও ভূমিকা পালন করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো। লিখেছেন ড. মশিউর রহমান

গণতন্ত্র উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি
প্রথমত রাষ্ট্র, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য জনগণের কাছে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য গণতন্ত্র উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ভূমিকা পালন করতে পারে।
দ্বিতীয়ত সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাপারে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে এবং জনগণের মতামত সংগ্রহ করতে আইসিটি ভূমিকা রাখতে পারে।
রাজনীতির ক্ষেত্রে
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে পারে তাদের সাংগঠনিক অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবং জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়েবসাইটে তাদের কর্মসূচিগুলো তুলে ধরতে পারেন। এছাড়া তাদের ব্যাপারে জনগণের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি জানার জন্য ওয়েবসাইটগুলোর ফোরাম, মতামত, পুল ব্যবহার করা যেতে পারে। জনগণের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি জানার জন্য বর্তমানে আমরা নির্ভর করছি মিডিয়ার ওপর। সাংবাদিক ও লেখকরা যা লিখছেন, তা-ই যে জনগণের মতামত তাও কিন্তু নয়। কেননা এই মাধ্যমগুলোর কোনো কোনোটি আবার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা চালিত হয়ে থাকে। জনগণ সত্যিকারভাবে কী ভাবছে তা জানার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিভিন্নভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।
বিগত আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে সারাবিশ্বে খুব হৈচৈ হয়েছে এবং এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। প্রার্থীরা নিয়মিত অনলাইনে তাদের ব্লগ লিখেছেন এবং সেখানে জনগণ সরাসরি তাদের মন্তব্য প্রার্থীদের জানিয়েছেন। এভাবে রাজনীতিকরা বুঝতে পারছেন জনগণের আকাঙ্ক্ষা। এছাড়া প্রার্থীরা তাদের ভিডিওগুলো ইউটিউব গুগল ভিডিওর মাধ্যমে অনলাইনে প্রচার করছেন। আমেরিকায় নির্বাচনের সব প্রার্থীরই ছিল খরহশবফরহ, Myspace, Facebook-এর মতো সোশ্যাল সাইটগুলোতে নিজস্ব ওয়েবসাইট। এই সাইটগুলো তাদের প্রচারণার জন্য খুবই সাহায্য করছে। এছাড়া জনগণের মতামত প্রার্থীরা জানতে পারছেন এই সাইটগুলোর মাধ্যমে। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য তাদের আয়-ব্যয়, সংগৃহীত অর্থ সংক্রান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য ওয়েবসাইটেই প্রকাশ করছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা একইভাবে ইন্টারনেটের এই টুলসগুলো ব্যবহার করে জনগণের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত হতে পারেন এবং তাদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারেন।
বারাক ওবামার ফেসবুক সাইট
বাংলাদেশেও গণতন্ত্র উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে যা কিছুটা আশাব্যঞ্জক। উদাহরণস্বরূপ প্রথমেই বলতে হয় সুজনের পদক্ষেপের কথা। জাতীয় ও আঞ্চলিক ভোটগুলোতে যেসব প্রার্থী ভোটপ্রার্থী হবেন, তাদের তথ্যগুলো জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য সুজন votebd.org ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছিল। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খুব সহজেই জনগণের কাছে তথ্য পৌঁছানো সম্ভব। এছাড়া সুজন ভোটের প্রার্থীদের সম্পর্কে জাতীয় সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিত সংবাদ আর্কাইভগুলো দিয়েছিল। আমরা যেহেতু একটু ভুলোমনা, তাই আমাদের জন্য এই আর্কাইভগুলো সাহায্য করেছিল বৈকি! এছাড়া নির্বাচন কমিশনও প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল।
তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের আগামী বিশ্বের গণতন্ত্রকে অনেকখানিই বদলে দেবে। এমন একদিন আসবে যখন আর মানুষকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে না। ইতোমধ্যেই ইন্টারনেট বা অনলাইন ভোট, এসএমএস ভোট বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। উদাহরণস্বরূপ ORCA নামে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের সাবেক ছাত্রদের সংগঠন তাদের সাংগঠনিক নির্বাচনে অনলাইন ভোট ব্যবহার করে। কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট দিতে দেখেছি। আগামীতে এই প্রযুক্তিগুলো আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ভূমিকা রাখতে পারে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এখন সরাসরি জনগণের পরিবর্তে জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু ভবিষ্যতে জনগণই সরাসরি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে মতামত রাখতে পারবে।

No comments:

Post a Comment