Sunday, July 25, 2010

কোয়েল পালনে ভাগ্য বদল

কোয়েল পালনে ভাগ্য বদল

০০ ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা

শখের বশে ৪ বছর আগে ৭শ' টাকা দিয়ে ১২টি কোয়েল পাখি কিনে পালন শুরু করেছিল যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের আব্দুল আল সামুন। তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর। এখন তার নিজের কোয়েল খামারে পাখির সংখ্যা ৩ হাজার। তার পরিচালনায় বিভিন্নস্থানে ৩০টি কোয়েল খামারে ৩০ হাজার পাখি পালন করা হচ্ছে। কোয়েল পালনে সামুন নিজের ভাগ্য বদল করেছে। পাশাপাশি অন্যের ভাগ্য বদলে সহায়তা করছে।

সামুন জানায়, যশোর থেকে ৭শ' টাকা দিয়ে দুটি পুরুষ ও ১০টি মেয়ে কোয়েল পাখি কিনে বাড়ি এনে পালন শুরু করে। পাখি ডিম পাড়া শুরু করলে বাড়ির মুরগীর ডিমের সাথে রেখে দিত। মুরগীর তাতে দিয়ে ডিম ফুটে বাচ্চা হত। একশ' টি বাচ্চা হয়। বাচ্চাগুলো বড় হলে প্রতি পিস ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা করে বিক্রি করে দেয়। তার হাতে প্রায় ১০ হাজার টাকা জমে। এ টাকা দিয়ে ফের ৩শ' পিস বাচ্চা কিনে এনে গড়ে তোলে কোয়েল পাখির খামার। ডিম পাড়া শুরু করলে প্রতি পিস পাখি ৪০ টাকা করে বিক্রি করে। এরপর এক হাজার পিস বাচ্চা কিনে ৩০ দিন পালনের পর ১৫ টাকা পিস দরে বিক্রি করে। আস্তে আস্তে তার খামারের আয়তন বাড়াতে থাকে।

নিজে বুদ্ধি খাটিয়ে তৈরি করে ডিম ফুটানোর যন্ত্র। দ্রুত তার ভাগ্য বদল ঘটে। লাখপতি হয়ে যায়। তার বাড়িতে ৬টি শেড নির্মাণ করেছে। বর্তমানে তার কোয়েল খামারে ৩ হাজার পাখি আছে। প্রতিদিন দেড় হাজার ডিম হয়। এ ডিম ফুটিয়ে প্রতিদিন এক হাজার বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে। একদিন বয়সের বাচ্চা তার অধীনস্থ খামারিদের কাছে প্রতি পিস ৫ টাকা দরে বিক্রি করে দেয়। তারা ৩০ দিন পালন কর্।ে এরপর তাদের কাছ থেকে প্রতি পিস ২০ টাকা দরে কিনে ঢাকা, সিলেট, কুমিলস্না, খুলনা প্রভৃতি শহরে চালান পাঠায়। প্রতি পিস ২২ - ২৩ টাকা দরে বিক্রি হয়। সামুন জানায়, এক হাজার পিস কোয়েল একমাস পালতে ২শ' কেজি খাবার লাগে। ওষুধ ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ১৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এক হাজার পিস কোয়েল পালনে একজন খামারির মাসে ৭ হাজার টাকা লাভ থাকে। সামুনের খামারিরা মহেশপুর, কালীগঞ্জ, ঝিকরগাছা, বসুনদিয়া, যশোর প্রভৃতি স্থানের। বাচ্চা ৩০ দিন বয়স হলে তারা সামুনের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। সামুন আরো জানায়, কোয়েল পাখি পালনে ঝুঁকি কম। কারণ কোয়েলের রোগব্যাধি কম হয়। বেশি পুঁজি খাটাতে লাগে না। আর পোল্ট্রি খামারের মত দুর্গন্ধ ছড়ায় না। এছাড়াও সে সোনালী লেয়ার মুরগি পালন করে। এর ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করে বিক্রি করে থাকে। সে নিজে খামারে কাজ করে। দু'জন রাখাল রেখেছে তারা পাখি দেখাশুনার জন্য। খরচ বাদে সামুনের এখন মাসে ৪০ হাজার টাকা লাভ থাকে। লাভের টাকা সে খামার সমপ্রসারণে বিনিয়োগ করে। বর্তমানে তার মোট বিনিয়োগ ১২ লাখ টাকা। বিদু্যৎ না থাকলে জেনারেটরে বিদু্যৎ উৎপাদন করে। 
Source: Daily Ittefaq

Thursday, July 15, 2010

নার্সারি পদ্ধতিতে উত্পাদন : বগুড়ার শাজাহানপুরের সবজি চারা ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে

নার্সারি পদ্ধতিতে উত্পাদন : বগুড়ার শাজাহানপুরের সবজি চারা ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে

বগুড়া অফিস ও শাজাহানপুর প্রতিনিধি
নার্সারি পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি চারা উত্পাদন করে বগুড়ার শাজাহানপুরের কৃষকরা নিজেদের অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। বর্তমানে তাদের উত্পাদিত চারা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করছে পঞ্চগড়, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, সিডরকবলিত এলাকা মঠবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের কাছে। এখানকার উত্পাদিত চারার মধ্যে সিম, বরবটি, ঝিঙ্গা, বেগুন, চিচিঙ্গা, লাউ, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শাক, মুলা, চালকুমড়া, পেঁপে, পটল, করল্লা উল্লেখযোগ্য। শাজাহানপুরের মাদলা, খোট্টাপাড়া, চোপীনগর, আমরুল ও আড়িয়া ইউনিয়নের কৃষকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে নার্সারিতে। ওইসব অঞ্চল এনসিডিপি প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কোনো কোনো নার্সারিতে কয়েক দফা চারা উত্পাদন ও বিক্রি হয়েছে। নার্সারির একপাশে চলছে বেড তৈরি অন্য পাশে চলছে চারা উত্তোলন।
উচ্চ ফলনশীল জাতের সুস্থ-সবল সবজি চারা উত্পাদনে খ্যাতি অর্জনকারী উপজেলার দুবলাগাড়ী হাটের জিতু বীজ ভাণ্ডার অ্যান্ড নার্সারিতে দেখা গেছে চারা ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। চারার বয়স, আকার ও সবলতার দিক বিবেচনায় প্রতি হাজার মরিচের চারা ৪শ’ থেকে ৮শ’ টাকায়, কপির চারা ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকায়, এবং টমেটোর চারা ৪শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় বেচা-কেনা হচ্ছে। জিতু বীজ ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী জিল্লুর রহমান বলেন, হাইব্রিড জাতের সবজি চারার চাহিদা বেড়েছে। ২০/২২টি নার্সারিও চারা সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে। অপরদিকে চারা প্রাপ্তির আশায় ক্রেতারা ১০/১৫ দিন আগেই চারা বুকিং দিয়ে যাচ্ছেন। গত বছর তিনি ২০ লাখ মরিচ, ৯ লাখ কপি, দেড় লাখ টমেটো এবং ২ লাখ বেগুনের চারা বিক্রি করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে চলতি বছর চারা উত্পাদন ও বিক্রি দু’টোই বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন—এ তিন মাস ব্যবসা চলে পুরোদমে। কার্তিক ও অগ্রহায়ণে চারা উত্পাদন এবং বিক্রির কাজ অনেকটাই কমে যায়। তখন সীমিত পর্যায়ে চারা তৈরির পাশাপাশি নার্সারির জমিতে নিজেও সবজির চাষ করেন। এভাবে সারা বছরই এখানকার কৃষকরা জড়িয়ে থাকেন সবজি উত্পাদনের সঙ্গে।
চোপিনগর গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী বলেন, হাইব্রিড জাতের ১ কেজি টমেটোর বীজের দাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা, ১ কেজি মরিচের বীজের দাম ৩০-৩৫ হাজার টাকা। তাই চারা উত্পাদনে অনভিজ্ঞ সাধারণ কৃষকরা বীজ থেকে চারা উত্পাদনের ঝুঁকি নেয় না। বরং চারা কিনে চাষাবাদ করাই ভালো।
দুবলাগাড়ী রাস্তা দিয়ে মোটা কাগজের কার্টুনে কিছু একটা নিয়ে যাচ্ছিলেন মোজাম্মেল হক (৪০)। তার বাড়ি জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। কার্টুনের দিকে ইশারা করতেই তিনি বললেন, তাতে আছে বিজলী হাইব্রিড মরিচের চারা। আর এ চারা নিতেই তিনি যমুনা ও বাঙ্গালী নদী পাড়ি দিয়ে দুবলাগাড়ী গ্রামে এসেছিলেন। হাইব্রিড জাতের মরিচ আবাদ করে প্রতিবেশী ফজলু মিয়া কয়েক বছর ধরে বেশ পয়সা কামিয়েছেন। তার মতো মুনাফা পাওয়ার আশায় শাহ্ নগর থেকে তিনি সংগ্রহ করলেন হাইব্রিড মরিচের চারা। সবজি নার্সারি ও সবজি চাষে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েকশ’ নারী ও পুরুষ শ্রমিকের। এলাকার আবাদযোগ্য জমিগুলো চলে এসেছে নিবিড় চাষাবাদের আওতায়। একটানা ২ সপ্তাহের বেশি কোনো জমি পড়ে থাকে না। জমিতে একটার পর একটা ফসল থাকছেই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চল সবজি ও চারা উত্পাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখায় দুবলাগাড়ীহাট এনসিডিপি গ্রোয়ার্স মার্কেট ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
এখানে বার মাসই চলে উত্পাদনের কাজ। এখানকার উত্পাদিত সিম, বরবটি, ঝিঙ্গা, বেগুন, চিচিঙ্গা, ধনিয়া পাতা, রাঁধুনী পাতা, লাউ, মুলা, গাজর, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লালশাক, পালংশাক, মুলা, চালকুমড়া, পেঁপে, পটল, করল্লা, স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী শহর ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বাজারেও পৌঁছে যায়। আর এখানেই লুকিয়ে আছে অসচ্ছল কৃষকদের স্বনির্ভরতার কাহিনী।
Source: Daily Amardesh

কুষ্টিয়ায় মোটাতাজা করা হচ্ছে একশ’ কোটি টাকার গরু

কুষ্টিয়ায় মোটাতাজা করা হচ্ছে একশ’ কোটি টাকার গরু

সিরাজ প্রামাণিক, খোকসা
বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় ৬টি উপজেলায় কৃষকদের গোয়ালে-গোয়ালে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে বিক্রির জন্য অর্ধ লক্ষাধিক গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। টাকার অংকে এগুলোর মূল্য হবে প্রায় একশ’ কোটি টাকা। এছাড়াও ৭-৮টি খামারেও কোরবানির বাজার ধরার জন্য গরু মোটাতাজা করা হয়েছে।
খোকসার এক্তারপুর গ্রামের শাহাদাত আলীর ফার্মে ৫টি গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। আশার এক্তারপুর শাখার ম্যানেজারের পরামর্শ ও অর্থ ঋণ সহায়তায় এ গরুগুলো কিনে আধুনিক সুবিধাসংবলিত খামার গড়ে তুলেছেন। আর এখন এসব নাদুস-নুদুস চোখ জুড়ানো গরুগুলো বিক্রির পালা। এদেশে আগেও বাড়িতে বাড়িতে কোরবানির গরু পালন করা হতো। তবে তার সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। ভারত থেকে চোরাচালানে গরু আসা শুরু হলে এলাকায় দেশীয় গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা একেবারে কমে যায়। ২০০০ সালের পর থেকে কৃষকরা নতুন করে স্থানীয় এনজিওগুলোর অর্থঋণ সহায়তায় বাণিজ্যিকভাবে কোরবানির বাজার ধরতে গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা শুরু করে। কুষ্টিয়ার পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার গ্রামে প্রথম এ ব্যবসা শুরু হয়। এরপর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে দ্রুত প্রসার ঘটে। বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী ও খোকসা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প চলছে কৃষকদের গোয়ালে গোয়ালে।
কুষ্টিয়া জেলার পশু সম্পদ কর্মকর্তা জানান, এ জেলায় এ বছরে ২০ হাজার কৃষক গোয়ালে গোয়ালে ৪৭ হাজার গরু কোরবানির হাটগুলোতে বিক্রির জন্য মোটাতাজা করা হয়েছে। কেউ একটি, দুটি আবার কেউ ৭-৮টি খামারেও গরু মোটাতাজা করেছে। কুষ্টিয়া জেলার টাকিমারা, বরিয়া, হরিনারায়ণপুর, বৃত্তিপাড়া, আব্দালপুর, খাজানগর, দুর্বাচারা, কমলাপুর, লাহিনী, পাহাড়পুর, বাগুলাট, চাপড়া, বাঁশগ্রাম, পান্টি, জোতমোড়া, মোড়াগাছা, এক্তারপুর, আমবাড়িয়া, গোপগ্রাম প্রভৃতি গ্রামে বেশিসংখ্যক গরু মোটাতাজাকরণ হয়ে থাকে। এসব গ্রামের হতাশাগ্রস্ত প্রায় ৫ শতাধিক কৃষক স্থানীয় একটি এনজিওর অর্থঋণ সহায়তায় গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে তুলে সুখের নিঃশ্বাস ছাড়ছে।
মাঝারি ও বড় সাইজের গরুর প্রধান বাজার হচ্ছে ঢাকার গাবতলীর হাট। এছাড়াও এ অঞ্চলের বালেপাড়া, আলমডাঙ্গা, উজানগ্রাম, হরিনারায়ণপুর, পান্টি, মুন্সিগঞ্জ, বদরগঞ্জ, মিরপুর, ভাটই, শৈলকুপা, ডুগডুগি, বাঁশগ্রাম, গাংনীসহ বিভিন্ন পশুর হাটে কোরবানির ঈদের আগে এসব মোটাতাজা গরু তোলা হয়। ব্যাপারীরা হাট থেকে এসব গরু কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুরের টেপাখোলা, বরিশাল, সিলেট ইত্যাদি স্থানে ট্রাকযোগে চালান নিয়ে যায়। আবার ব্যাপারীরা গৃহস্থের বাড়ি থেকেও গরু কিনে ঈদের আগে চালান নিয়ে যায়। বড় চাষী নিজেও ট্রাকে করে গাবতলীর হাটে চালান নিয়ে যায়।
কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের মোঃ আমানুল্লাহ রাজা জানান, তিনি ৩ বছর ধরে কোরবানির পশুর হাটে বিক্রির জন্য গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা করছেন। ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ২টি ফ্রিজিয়ান ও তিনটি শাহীওয়াল ও নেপালি জাতের বাছুর কিনে এক বছর ধরে পালছেন। ১৫-১৬ মণ মাংস হবে এমন দুটি গরু ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দাম দিয়েছে ব্যাপারীরা। নেপালি জাতের একেকটির দাম ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা করে উঠছে। তিনি বলেন, ভারতীয় গরু না এলে এবার চড়া দামে বিক্রি করতে পারবেন। তার পাঁচটি গরু এক বছর পালন করতে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তিনি জানান, গো-খাদ্যের দাম চড়ে যাওয়ায় গরু মোটাতাজাকরণে ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। চালের খুদ প্রতি কেজি ২৩ টাকা, ছোলা ৩৫ টাকা কেজি, খৈল ২৭ টাকা, ধানের বিচালি এক আঁটির দাম ১১ টাকা থেকে ১২ টাকা। গরুপিছু বছরে খাদ্য বাবদ ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর বড় সাইজের একটি গরুর পেছনে প্রতিদিন ২শ’ টাকা ব্যয় হচ্ছে। কৃষকরা জানান, কোরবানির তিনমাস আগ থেকে গরুর খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। এতে গরু তেজী ও দেখতে সুন্দর হয়। কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় সাতগাছি গ্রামে ওসমানের খামারে ৮৯টি ষাঁড় মোটাতাজা করা হয়েছে। পাবনার সাথিয়া থেকে বাছুর কিনে এক বছর ধরে মোটাতাজা করা হচ্ছে। খামারের তত্ত্বাবধায়ক ইসরাইল হোসেন জানান, গরু প্রতি ব্যয় হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৩২ হাজার টাকা। এবার বাজার ভালো বলে তিনি জানান। গত বছর কোরবানির আগে বাজার পড়ে যাওয়ায় অনেক চাষী গরু বিক্রিতে লোকসান দেয়। খোকসার পাইকপাড়ার গ্রামের হাসিনা বেগমও খামার করে সংসারে সুখ-সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন। স্থানীয় একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ১ম পর্যায়ে ১০ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে বাছুর কিনে শুরু করে পালন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে হাসিনার খামারে গরুর সংখ্যা ৫টি। কয়েক বছর আগেও কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ভারতীর গরুর আধিক্য ছিল। বর্তমানে দৃশ্যপট বদলে গেছে। বর্তমানে এদেশের চোখ ধাঁধানো গরুতে হাটগুলো ভরপুর। ক্রেতারাও এসব গরু কিনতে আগ্রহী। ভারত থেকে আসা বুুড়ো গরুর মাংস স্বাদে কম। দেখতে ভালো না বলে ব্যাপারীরা জানান।

গণতন্ত্র উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি

গণতন্ত্র উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি

বর্তমান সময়ে আলোচনার একটি অন্যতম বিষয়বস্তু হচ্ছে গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত উন্নয়ন। বর্তমান সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। গণতন্ত্র উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ এবং কীভাবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে বর্তমান সরকার, জনগণ ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আলাপ-আলোচনা করছে। আজকের প্রবন্ধ গণতন্ত্র উন্নয়নে অন্যান্য দেশ কীভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে এবং কীভাবে আমাদের দেশেও ভূমিকা পালন করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো। লিখেছেন ড. মশিউর রহমান

গণতন্ত্র উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি
প্রথমত রাষ্ট্র, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য জনগণের কাছে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য গণতন্ত্র উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ভূমিকা পালন করতে পারে।
দ্বিতীয়ত সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাপারে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে এবং জনগণের মতামত সংগ্রহ করতে আইসিটি ভূমিকা রাখতে পারে।
রাজনীতির ক্ষেত্রে
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে পারে তাদের সাংগঠনিক অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবং জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ওয়েবসাইটে তাদের কর্মসূচিগুলো তুলে ধরতে পারেন। এছাড়া তাদের ব্যাপারে জনগণের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি জানার জন্য ওয়েবসাইটগুলোর ফোরাম, মতামত, পুল ব্যবহার করা যেতে পারে। জনগণের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি জানার জন্য বর্তমানে আমরা নির্ভর করছি মিডিয়ার ওপর। সাংবাদিক ও লেখকরা যা লিখছেন, তা-ই যে জনগণের মতামত তাও কিন্তু নয়। কেননা এই মাধ্যমগুলোর কোনো কোনোটি আবার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা চালিত হয়ে থাকে। জনগণ সত্যিকারভাবে কী ভাবছে তা জানার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিভিন্নভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।
বিগত আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে সারাবিশ্বে খুব হৈচৈ হয়েছে এবং এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। প্রার্থীরা নিয়মিত অনলাইনে তাদের ব্লগ লিখেছেন এবং সেখানে জনগণ সরাসরি তাদের মন্তব্য প্রার্থীদের জানিয়েছেন। এভাবে রাজনীতিকরা বুঝতে পারছেন জনগণের আকাঙ্ক্ষা। এছাড়া প্রার্থীরা তাদের ভিডিওগুলো ইউটিউব গুগল ভিডিওর মাধ্যমে অনলাইনে প্রচার করছেন। আমেরিকায় নির্বাচনের সব প্রার্থীরই ছিল খরহশবফরহ, Myspace, Facebook-এর মতো সোশ্যাল সাইটগুলোতে নিজস্ব ওয়েবসাইট। এই সাইটগুলো তাদের প্রচারণার জন্য খুবই সাহায্য করছে। এছাড়া জনগণের মতামত প্রার্থীরা জানতে পারছেন এই সাইটগুলোর মাধ্যমে। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য তাদের আয়-ব্যয়, সংগৃহীত অর্থ সংক্রান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য ওয়েবসাইটেই প্রকাশ করছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা একইভাবে ইন্টারনেটের এই টুলসগুলো ব্যবহার করে জনগণের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত হতে পারেন এবং তাদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারেন।
বারাক ওবামার ফেসবুক সাইট
বাংলাদেশেও গণতন্ত্র উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে যা কিছুটা আশাব্যঞ্জক। উদাহরণস্বরূপ প্রথমেই বলতে হয় সুজনের পদক্ষেপের কথা। জাতীয় ও আঞ্চলিক ভোটগুলোতে যেসব প্রার্থী ভোটপ্রার্থী হবেন, তাদের তথ্যগুলো জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য সুজন votebd.org ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছিল। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খুব সহজেই জনগণের কাছে তথ্য পৌঁছানো সম্ভব। এছাড়া সুজন ভোটের প্রার্থীদের সম্পর্কে জাতীয় সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিত সংবাদ আর্কাইভগুলো দিয়েছিল। আমরা যেহেতু একটু ভুলোমনা, তাই আমাদের জন্য এই আর্কাইভগুলো সাহায্য করেছিল বৈকি! এছাড়া নির্বাচন কমিশনও প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল।
তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের আগামী বিশ্বের গণতন্ত্রকে অনেকখানিই বদলে দেবে। এমন একদিন আসবে যখন আর মানুষকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে না। ইতোমধ্যেই ইন্টারনেট বা অনলাইন ভোট, এসএমএস ভোট বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। উদাহরণস্বরূপ ORCA নামে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের সাবেক ছাত্রদের সংগঠন তাদের সাংগঠনিক নির্বাচনে অনলাইন ভোট ব্যবহার করে। কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট দিতে দেখেছি। আগামীতে এই প্রযুক্তিগুলো আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ভূমিকা রাখতে পারে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এখন সরাসরি জনগণের পরিবর্তে জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু ভবিষ্যতে জনগণই সরাসরি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে মতামত রাখতে পারবে।

আইএমআরএস : হাতের মুঠোয় গ্রন্থাগার

আইএমআরএস : হাতের মুঠোয় গ্রন্থাগার উন্নত বিশ্বের অনেক গ্রন্থাগারেই তথ্যসেবা হিসেবে চালু রয়েছে ইন্সট্যান্ট মেসেজিং রেফারেন্স সার্ভিস বা আইএমআরএস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক নাফিজ জামান শুভ নরওয়ে ও এস্তোনিয়ায় এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন। সম্প্রতি তাঁরই তত্ত্বাবধানে দেশে প্রথমবারের মতো ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সেবাটি চালু হয়েছে। আইএমআরএস নিয়ে লিখেছেন তিনি।ঘরে বসেই গ্রন্থাগার থেকে আনা বইটির ফেরত দেওয়ার সময় বাড়াতে পারলে কিংবা গ্রন্থাগারে নতুন আসা বইটি নিজের নামে রিজার্ভ করতে পারলে মন্দ হয় না। আর এ সুবিধা যদি পাওয়া যায় বিনা খরচে, তাহলে তো আরো ভালো। উন্নত বিশ্বে সেবাটি অনেক আগে থেকেই চালু আছে। এর নাম ইন্সট্যান্ট মেসেজিং রেফারেন্স সার্ভিস বা আইএমআরএস।
১৯৮০ সালের দিকে 'ভার্চুয়াল গ্রন্থাগার' নিয়ে তথ্য বিজ্ঞানীরা কাজ শুরু করেন। নব্বইয়ের দশকে এসে তা পূর্ণতা পায়। ২০০০ সালের শুরুতেই আইএমআরএস এ তথ্যসেবার ধারণাই বদলে দেয়। এ পদ্ধতিতে লাইব্রেরি-সংক্রান্ত তথ্যসেবা চলে আসে হাতের মুঠোয়। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় গত ১৮ জুলাই সীমিত পরিসরে দেশে প্রথমবারের মতো আইএমআরএস সেবা চালু করেছে। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণাকাজে সহযোগিতার জন্য ইস্ট ওয়েস্ট গ্রন্থাগার থেকে তাৎক্ষণিক তথ্যসেবা পাচ্ছেন।

আইএমআরএস কী
যাদের ই-মেইল অ্যাকাউন্ট আছে, বিশেষ করে জিমেইল বা ইয়াহু, তারা কমবেশি ইন্সট্যান্ট মেসেজিং বা আইএমের সঙ্গে পরিচিত। অনলাইন বন্ধুদের সঙ্গে ব্যবহারকারী মেইলের বিকল্প হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে যে বার্তা আদান-প্রদান করে থাকেন, তাকে আইএম বলে। গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্রে যখন এ সেবা চালু করা হয় তখন একে আইএমআরএস বলে। ব্যবহারকারীকে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পেঁৗছে দেওয়াই এ সেবার মূল লক্ষ্য। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরিরত একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। গবেষণাকাজে এখন লন্ডন আছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রন্থাগারে আছে এমন একটি গবেষণাপত্র, যা হঠাৎ খুব জরুরি হয়ে পড়ল। গবেষণাপত্রটি হাতে পেতে তো আপনার পক্ষে ঢাকা ফিরে আসা সম্ভব নয়। ইন্সট্যান্ট মেসেজিং রেফারেন্স সার্ভিসের মাধ্যমে আপনি লন্ডনে বসেই গবেষণাপত্রটি হাতে পেতে পারেন।

আইএমআরএস চালু করতে যা দরকার
ইন্সট্যান্ট মেসেজিং রেফারেন্স সার্ভিস চালুর জন্য নতুন করে অবকাঠামো তৈরির দরকার নেই। ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি কম্পিউটার আর যেকোনো মেসেঞ্জার সফটওয়্যার যেমন_ইয়াহু, হটমেইল অথবা জিমেইলের মতো কোনো একটি চ্যাট ক্লায়েন্ট হলেই চলবে। সবশেষে প্রয়োজন ছোট্ট একটা প্রশিক্ষণ। ই-মেইল ব্যবহার করতে জানেন এমন গ্রন্থাগারকর্মী দিয়ে এ সেবাটি নির্দ্বিধায় পরিচালনা করা সম্ভব। এ সেবাটি পরিচালনার জন্য তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টার ব্যবহারিক প্রশিক্ষণই যথেষ্ট।
কোনো গ্রন্থাগারে আইএমআরএস চালু করতে সাধারণত গববনড় সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা হয়। এটি ঞৎরষষরধহ-এর সমজাতীয় একটি সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে সব ই-মেইল আইডি একটি প্লাটফর্মে ব্যবহার করা যায়। এতে একাধিক আইডির জন্য একাধিকবার পাসওয়ার্ড দিয়ে আইএমে ঢোকার প্রয়োজন নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোনো ম্যাসেঞ্জার সফটওয়্যার ডাউনলোড না করেই গববনড় ওয়েব প্লাটফর্ম থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ইন্সট্যান্ট মেসেজিং করা যায়।
গববনড় রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রথমে http://www.meebo.com ঠিকানায় গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করার পর আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন (Login) করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ নতুন অ্যাকাউন্টের নাম নধহনবরং এবং পাসওয়ার্ড নফ১২৩নফ। এ অ্যাকাউন্টে ঢুকতে আইডির ঘরে নধহনবরং-এর পাসওয়ার্ডের ঘরে নফ১২৩নফ দিয়ে ঢুকতে হবে।
এরপর সব ই-মেইল আইডিকে গববনড়-তে রেজিস্টার করতে হবে। এরপর ছোট একটি বক্স আসবে, যাতে ই-মেইল আইডি, পাসওয়ার্ড দিতে হবে। সঙ্গে নেটওয়ার্ক (যেমন yahoo, msn, facebook) নির্বাচন করে দিতে হবে। এরপর Contact list--এ ক্লিক করতে হবে। আমরা যদি কাউকে আমাদের বন্ধু তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাই, তাহলে ডান পাশে থাকা add contact--এর Remove Contact-এ ক্লিক করতে হবে। তেমনি কাউকে বাদ দেওয়ার জন্য Remove Contact-এ ক্লিক করতে হবে। ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি ইন্সট্যান্ট মেসেজিং রেফারেন্স সার্ভিস দিতে meebo me widgets থেকে কোড Cop করে লাইব্রেরির ওয়েবসাইটে Paste করতে হবে। ব্যস, সেবা শুরু হয়ে গেল।

গ্রাহকরা যেভাবে এ সেবা পাবেন
গ্রাহকরা দুই ভাবে সেবাটি পেতে পারেন। প্রথমত ব্যবহারকারীকে বলা হয় গ্রন্থাগারের ই-মেইল অ্যাড্রেসটি তার বন্ধু (ADD FRIEND) হিসেবে যুক্ত করে নেওয়া। গ্রন্থাগারকর্মীকেও ব্যবহারকারীর ই-মেইল হিসাবকে বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে গ্রন্থাগার এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সেবাটি দিতে ইচ্ছুক তাদের উচিত গুরুত্বপূর্ণ সব চ্যাট ক্লায়েন্টেই (ইয়াহু, হটমেইল, জিটক ইত্যাদি) হিসাব খোলা। এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী যে ই-মেইলই ব্যবহার করুক না কেন সেটিকেই সে ইন্সট্যান্ট মেসেজিংয়ের জন্য ব্যবহার করতে পারবে। নতুন করে আলাদা কোনো ই-মেইল অ্যাকাউন্ট তাকে খুলতে হবে না।
দ্বিতীয়ত গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ওয়েবসাইটে চ্যাটিং উইজেট যুক্ত করার মাধ্যমেও এ সেবা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোনো ই-মেইল অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন নেই। এতে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা
রক্ষা হয়। আমাদের দেশে র‌্যাব, পুলিশ বিভিন্ন সময় অপরাধীদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য জনগণের সহযোগিতা চায়। সে ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়। অনেকে মোবাইল ফোনে অপরাধীর তথ্য দিতে ভয় পান। কারণ তাঁরা মনে করেন, মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে গোপনীয় তথ্য দিলে পরে সমস্যা হতে পারে। এ অবস্থায় আইএমআরএস আদর্শ সেবা হতে পারে। ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট ইন্সট্যান্ট মেসেজিং ইনফরমেশন সেবায় অপরাধীর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, কী অপরাধ করেছে ইত্যাদি লিখতে পারে। এতে র‌্যাব বা পুলিশ অপরাধী সম্পর্কে সহজেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারে।

কী ভাষা ব্যবহার করা হবে?
তথ্যানুসন্ধানকারীদের মধ্যে অনেকে ইংরেজিতে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ নাও করতে পারেন। আর যেহেতু সেবাটি গণমানুষের জন্য উন্মুক্ত তাই ভাষাগত সীমাবদ্ধতা না থাকলেই ভালো। যেমন_AMI SHUVA DHAKA THAKEY LIKHCHI.AMAR E-‡OVERNANCE AR UPOR KICHU DOCUMENT DORKER. এভাবে লিখেও সেবাটি পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে জনসাধারণের জন্য মোবাইল ফোনে এমন এসএমএস পাঠানোর নজির রয়েছে ।
১৮৫৪ সালে বেসরকারি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে গ্রন্থাগার আন্দোলন শুরু হলেও গুটিকয় গ্রন্থাগার ছাড়া গ্রন্থাগারসেবার মান এখনো সেকেলে রয়ে গেছে। তবে বিনা পয়সার আইএমআরএস সেবা যদি গ্রন্থাগারগুলোতে চালু করা যায়, তবে এ ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের সেবার মান নিয়ে যে দুর্নাম রয়েছে তা অনেকটাই ঘুচবে। আমাদের দেশের গ্রন্থপ্রেমীদের জন্যও এটা হবে অনেক ভালো খবর।

Thursday, July 8, 2010

আসছে আফ্রিকার ধান 'নিরিকা'

আসছে আফ্রিকার ধান 'নিরিকা'

বদলে দেবে কৃষি অর্থনীতি সব মৌসুমে আবাদ হবে সেচ লাগবে না নষ্ট হবে না খরায়
০০ নিজামুল হক
আফ্রিকার কৃষি অর্থনীতি বদলে দেয়া ধান নিউ রাইস ফর আফ্রিকা (নিরিকা) এখন আবাদ হবে বাংলাদেশে। সরকারি উদ্যোগে ইতিমধ্যে এ ধানের পরীক্ষামূলক আবাদ করে সুফল পাওয়া গেছে। আচিরেই কৃষকদের মাঝে আবাদের জন্য এ ধান বীজ সরবরাহ করা হবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কপের্ারেশনের (ডিএডিসি) কাছে বর্তমানে ১ টন নিরিকা ধানের বীজ মজুদ আছে বলে সংশিস্নষ্টরা জানিয়েছেন। একটি জাতের ধান আবাদে সুফল পাওয়ায় সমপ্রতি নিরিকা-২, নিরিকা-৩, নিরিকা-৪ এবং নিরিকা-১০ নামে আরো চারটি নতুন জাতের ধান বাংলাদেশে আনা হয়েছে।

বিএডিসির সদস্য পরিচালক ( বীজ ও উদ্যান) মোঃ নূরুজ্জামান বলেন, এক সময় আফ্রিকাকে অন্য দেশ থেকে চাল আমদানি করতে হত। আবাদযোগ্য তেমন জমিও ছিল না। কিন্তু সে দেশের কৃষি বিভাগ 'নিরিকা' নামে একে একে ৭৮টি নতুন উন্নত জাত উদ্ভাবন করে সে দেশের কৃষি অর্থনীতির চাকা বদলে দিয়েছে। সব সময়ই জমিতে ধান দেখা যায় ওই দেশে। এখন তারা চাল রপ্তানির পর্যায়ে পেঁৗছে গেছে। এ ধানের জাতটি বছরের সব সময়ই আবাদ করা যায়। শীত, গ্রীষ্ম বা অতি তাপমাত্রার সময়েও এটি ভাল ফলন দেয়। যে নতুন জাতের ধানের মাধ্যমে আফ্রিকার এই পরিবর্তন তা বাংলাদেশে এনে কৃষি অর্থনীতি বদলে দেয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ 'নিরিকা'র একটি জাত এনে বিএডিসির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষামূলক আবাদ শুরু করে। অধিক খরা সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে ধানের এ জাতটিতে। বিএডিসি সূত্র জানায়, এ ধানের ফলন পাওয়া যাবে স্বল্প সময়ের মধ্যে।

গত এক বছর ৯ মাসে ৩টি পর্যায়ে পরীক্ষামূলক চাষ করে সুফল পাওয়া গেছে। বিএডিসির পরিচালক (বীজ) নূরুজ্জামান জানান, বিএডিসি আফ্রিকার এ 'নিরিকা' জাতের ধান আমন মৌসুমে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম পরীক্ষামূলক আবাদ করে। এ সময় মাত্র ৬০ গ্রাম বীজ আবাদ করা হয়। বীজ বপন থেকে শুরু করে শস্য কর্তন পর্যন্ত সময় লাগে তিন মাস। হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া যায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ টন। দ্বিতীয় বার আবাদ করা হয় ডিসেম্বর মাসে। এতে সময় লাগে ১১২-১১৫ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া যায় ৪ দশমিক ৬০ টন।

তৃতীয় পর্যায়ে আউশ মৌসুমেও আবাদ করা হয়। এই মৌসুমে এ জাতের ধান ফলনে সময় লেগেছিল ৮৮ দিন। পরীক্ষামূলকভাবে এটি মধুপুর ও জীবননগরে আবাদ করা হয়। এর মধ্যে মধুপুরে ফলন পাওয়া পাওয়া গেছে ৮৮ দিনে এবং জীবননগরে পাওয়া গেছে ৮০ দিনে। বিএডিসি'র ঊধর্্বতন এক কর্মকর্তা জানান, 'কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে 'নিরিকা' জাতের ধানবীজ নিয়ে আসেন এবং বিএডিসি'কে পরীক্ষামূলক আবাদের জন্য প্রদান করেন।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এটি এমন এক ধরনের ধান যা তিন মৌসুমেই আবাদ করা যাবে। আফ্রিকার মতো এ ধানের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি বদলে যাবে। যেসব জমি বর্তমানে অনাবাদি থাকছে, সেচ সুবিধা নেই, এমন জমিতেও জন্মাবে এই ধান। দিনের তাপমাত্রা যতই তীব্র হোক, তা এ ধানের উৎপাদনে কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। এ জাতের ধান বীজে কোন সুপ্ততা নেই, তাই এক ফসল তুলে ওই বীজ দিয়েই পরবতর্ী মৌসুমে চাষ করা যাবে।

বিএডিসি সূত্র জানায়, এ ধানের সুফল পাবার পর কৃষিমন্ত্রীর উদ্যোগে উগান্ডা থেকে চারটি জাত আনা হয়েছে। এগুলো পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ করে কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হবে। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশের জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে জমি কমছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন নতুন ধানের জাত দেশের ধানের চাহিদা মেটাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

Source: Daily Ittefaq

Monday, July 5, 2010

ওয়েবে শেয়ারবাজার

ওয়েবে শেয়ারবাজার শেয়ারবাজারের খোঁজখবর জানতে স্টক এক্সচেঞ্জে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এ-সংক্রান্ত অধিকাংশ তথ্য ওয়েবসাইটেই পাওয়া যায়। শেয়ারবাজারগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট ছাড়াও রয়েছে একাধিক শেয়ারবাজার ফোরাম।

www.dsebd.org
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এটি। এখানে সব শেয়ারের দাম, প্রতিদিনের সর্বমোট লেনদেন, শেয়ারের সূচকসহ শেয়ারসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য মিলবে। তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে তথ্য মিলবে company info বিভাগে।
www.csebd.com
চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারের নিজস্ব ওয়েবসাইট এটি। এ সাইটের মাধ্যমে চট্টগ্রামের শেয়ারবাজারের সর্বশেষ সংবাদ, বাজার মূল্য ইত্যাদি খবর পাওয়া যাবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক শেয়ারের জন্য আবেদনকারীদের ফলাফল জানা যাবে IPO LOTTERY RESULT বিভাগে। market information বিভাগে পাওয়া যাবে বাজারের সর্বশেষ তথ্য। Trading System, Listing Requirement, Listed Company-সহ আরো কিছু জরুরি বিভাগ রয়েছে এ সাইটে।
www.dg4q.com
সাইটটিতে নিবন্ধন করে মোবাইল ফোনে (আপাতত শুধু বাংলালিংক) এসএমএসের মাধ্যমে শেয়ারবাজারসংক্রান্ত সেবা পাওয়া যাবে। এখানে বিনামূল্যে পছন্দের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের সর্বশেষ দামও জানা যাবে। এ জন্য সাইটটিতে প্রবেশ করে নাম, ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে এবং পছন্দের প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারণ করে দিতে হবে।
bdstock.mobi
এটি মোবাইল ব্রাউজারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ওয়েবসাইট। সাইটটিতে ঝযধৎব, ঝঃধঃং, ঘবংি এবং অমস-সহ বেশ কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। ঘবংি ট্যাবে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন খবর পাওয়া যাবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক সাধারণ সভার তথ্য মিলবে 'অমস' বিভাগে।
নিচের সাইটগুলোতেও শেয়ারবাজারের বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাবে।
www.bangladeshstockmarket.com
www.bdstock.com
www.mydse.com
www.stockbangladesh.com
 
-আল-আমিন কবির

Thursday, July 1, 2010

প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে এগুচ্ছে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো

প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে এগুচ্ছে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো

০০ রেজা মাহমুদ

১৯৫০'র দশকের শেষদিকে জাপান নতুন প্রযুক্তি ও নতুন পণ্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিল্প-বাণিজ্যের দিক দিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিল। ঠিক একইভাবে নতুন প্রযুক্তি ও পণ্য উদ্ভাবন করে উন্নত দেশগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এ মুহূর্তে বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, চীন, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও মেক্সিকো। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনীর এই চ্যালেঞ্জে নেতৃত্ব দিতে প্রতিবছর উদীয়মান দেশগুলোতে লাখ লাখ গ্রাজুয়েট প্রকৌশলী পাস করে বের হচ্ছে। জাতিসংঘ বিনিয়োগ প্রতিবেদন, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার তথ্য ও ইকোনোমিস্ট ম্যাগাজিনের সামপ্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ বিষয়টি।

১৯৫০'র দশকে নতুন সব পণ্য উদ্ভাবনের মধ্যদিয়ে শিল্প বাণিজ্যের অঙ্গনে আমেরিকা ও ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোরদার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশ জাপান। ১৯৮০'র দশকে আমেরিকার গাড়ি নির্মাতা শিল্পগোষ্ঠির নির্বাহী কর্মকর্তারা দেখতে পান যে তাদের সরিয়ে দিয়ে এ ক্ষেত্রে বিশ্বের নেতৃত্বের আসনে উঠে বসেছে জাপান। জাপানি গাড়ীগুলো একদিকে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ির চেয়ে স্বল্পমূল্যের, অন্যদিকে এগুলো ছিল অধিক টেকসই। তারা নতুন মডেলের গাড়ি অত্যন্ত দ্রুত তৈরী ও বাজারজাত করতে সক্ষমতা দেখায়। মার্কিন গাড়ী নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহীরা এর কারণ অনুসন্ধান করতে জাপান সফরে আসেন। মার্কিনীরা ধারণা করেছিল জাপানি গাড়ী নির্মাতাদের এই সফলতার কারণ হয়তো সহায়ক শিল্পনীতি বা সরকারী ভতর্ুকি। কিন্তু তারা দেখতে পান নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনই জাপানিদের এগিয়ে নিচ্ছে সফলতার সঙ্গে। তারা জাপানের এ পদ্ধতির নাম দেন 'বিশেষভাবে ঝুঁকে পড়া' (লিন ম্যানুফ্যাকচারিং) পণ্য উৎপাদন পদ্ধতি।

এই মুহূর্তে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোও একইভাবে নিত্যনতুন প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে উন্নত বিশ্বকে। আজ ইউরোপের ঘরে ঘরে তুরস্কের ইলেক্ট্রনিক্স ও ইলেক্ট্রিক পণ্যসামগ্রী অত্যন্ত জনপ্রিয়। শুধু তা-ই নয় তুরস্কের তৈরী ভারি ও উচ্চ প্রযুক্তির মেশিনারিজ রফতানিও ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সাথে চীন ও মালয়েশিয়ার শিল্পজাত পণ্য বিশ্বের পূর্ব-পশ্চিম সর্বত্রই সমাদৃত হচ্ছে। বিপুল জনসংখ্যার চীন ও ভারতের অভ্যন্তরেই রয়েছে বিশাল ভোক্তা গোষ্ঠি। ব্রাজিল ও রাশিয়াও পিছিয়ে নেই। এ মুহূর্তে উদীয়মান অর্থনীতির এই দেশগুলো বাণিজ্যিক উদ্ভাবনের এক উষ্ণ ক্ষেত্র। ঠিক যেমনটি ঘটেছিল ১৯৫০'র দশকে জাপানের বেলায়।

চীন, তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার মত দেশগুলো নিত্যনতুন পণ্য ও সেবা নিয়ে হাজির হচ্ছে। আর এগুলো নাটকীয়ভাবে পশ্চিমা দেশের তুলনায় কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। এ দেশগুলো ৩০০০ ডলারে গাড়ি, ৩০০ ডলারে কম্পিউটার আর ৩০ ডলারে মোবাইল ফোন সরবরাহ করছে। এই মোবাইল ফোনগুলো প্রতি মিনিটে মাত্র ২ সেন্ট খরচে (সংশিস্নষ্ট) দেশব্যাপী সার্ভিস দিচ্ছে। এসব দেশ পণ্য তৈরি ও সরবরাহের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করছে। এমনকি তারা সম্পূর্ণ নতুন মডেলের ব্যবসায় পদ্ধতি উদ্ভাবন ও অনুসরণ করছে। সাপস্নাই চেইন ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন করছে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিগুলো।

যেসব দেশ এই সেদিনও স্বল্পমূল্যের পণ্য উৎপাদন করে আসছিল তারা কিভাবে নতুন মডেল উদ্ভাবনে এত সফল হল এ প্রশ্নেরও জবাব মিলেছে। গবেষণায় দেখা গেছে অদম্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর প্রতিযোগী কোম্পানির ভীতি এ দু'য়ের মিশ্র তাড়নায় নয়া প্রযুক্তি ও পণ্য উদ্ভাবনে এগিয়ে যাচ্ছে এসব দেশের কোম্পানিগুলো।

জাতিসংঘ বিনিয়োগ প্রতিবেদনে দেখা গেছে বর্তমানে প্রায় ২১,৫০০ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি গড়ে উঠেছে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে। এর মধ্যে চীনের 'বিওয়াইডি' ব্যাটারি উৎপাদনে, ব্রাজিলের 'এমব্রায়ের' জেট বিমান নির্মাণে, তুরস্কের 'কেওসি' ভারি যন্ত্রপাতি তৈরিতে এবং মালয়েশিয়ার 'পেট্রোনাস' খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে উন্নত বিশ্বের সমক্ষেত্রের মাল্টিন্যাশনালের সাথে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সামপ্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সংখ্যা সামপ্রতিক কয়েক বছরে অনেক বেড়ে গেছে। একই সময়ে উন্নত দেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও এখন উদিয়মান এসব বাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। উদীয়মান দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মেধাসম্পন্ন জনশক্তি সহজপ্রাপ্ত হওয়ায় মুনাফা বেশি পাওয়ার আশায়ই এই বিনিয়োগ বৃদ্ধি। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আশা করছে আগামী কয়েক বছরে ৭০ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই আসবে উদীয়মান দেশগুলো থেকেই।

ফরচুন ৫০০ তালিকায় দেখা গেছে 'জেনারেল ইলেকট্রিকস', 'সিসকো', 'মাইক্রোসফট' প্রভৃতি কোম্পানি উদীয়মান দেশগুলোতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে। উন্নত ও উদীয়মান উভয়েরই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অনুধাবন করছে যে এসব বাজারে উন্নতি করতে হলে তাদের কঠোর চেষ্টা করে যেতে হবে। কারণ উদীয়মান দেশগুলোর বড় শহরগুলোর বাইরে দূরবতর্ী এলাকায়ও বাস করে বহু ভোক্তা। এর অর্থ হচ্ছে পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ পদ্ধতির ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবনের চিন্তা করতে হচ্ছে তাদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদীয়মান বিশ্বের বাজার হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার। কারণ এসব জায়গায় সরবরাহ পদ্ধতি হতাশা সৃষ্টি করতে পারে, উপার্জন হতে পারে অভাবিতপূর্ব, দূষণ হতে পারে ফুসফুস দগ্ধকারী। সরকার কখনো সহায়ক কখনো হতাশাজনক নীতির অধিকারী হতে পারে এসব বাজারে। নকল প্রবণতা লাভ কমিয়ে দিতে পারে। দারিদ্র্যহতে পারে সর্বব্যাপী। মোটকথা উীয়মান বাজারে সাফল্যের দ্বীপ চারদিকে সমস্যার সাগরে ঘেরা থাকে; যা কখনো শক্তিশালী কোন কোম্পানিকেও অনেক সময় ব্যর্থ করে দিতে পারে। 'ইয়াহু!' এবং 'ই-বে' চীনে তাদের কার্যক্রম পুনর্বিন্যাস করতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে দেশটির মূল ভূখন্ড থেকে 'গুগল'কে হংকংয়ে সরে যেতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম গৃহস্থালি সামগ্রীর প্রস্তুতকারক 'বস্ন্যাক এন্ড ডেকর' চীন এবং ভারতে প্রায় অদৃশ্য অবস্থায় রয়েছে।

উদীয়মান দেশগুলোতে উলেস্নখিত সমস্যার সাথে সম্ভাবনাও রয়েছে অস্বাভাবিকভাবে বেশি। এখানে পণ্যের রয়েছে বিশাল বাজার। জনসংখ্যা রয়েছে উন্নত বিশ্বের চেয়ে অনেক বেশি আর তা বৃদ্ধিও পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ মধ্যম আয় শ্রেণীতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে। এসব দেশের অথনীতি দ্রুত প্রবৃদ্ধি লাভ করছে। কিছু কোম্পানি উন্নত দেশের মত আগের পদ্ধতি অনুসরণের ফলে ব্যয়াধিক্যের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। উদীয়মান দেশে মেধাবী জনশক্তি সহজলভ্য, সস্তা ও প্রচুর। প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক প্রযুক্তিবিদ বেরিয়ে আসছেন এসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে।

উদীয়মান বাজারগুলোর চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার এই মিশ্র অবস্থা গ্যাসভর্তি ককটেইলের মত এক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। কারণ এসব বাজারে একদিকে বিপুল সংখ্যক ভোক্তা হচ্ছে দরিদ্র অন্যদিকে কোম্পানিগুলোকে যেতে হচ্ছে বিপুল পণ্য সম্ভার নিয়ে। ব্যাপক নকলপ্রবণতার কারণে কোম্পানিগুলোকে তাদের পণ্যসামগ্রিতে নিত্যনতুন পরিবর্তন আনতে হচ্ছে।

সেই আশির দশকের জাপানের শিল্পোন্নত হয়ে ওঠার গল্পই আবার ফিরে এসেছে। 'টয়োটা' এবং 'হোন্ডা' এখনো টিকে আছে নব উদ্ভাবনী ও গুণগতমান ব্যবস্থাপনার সুবাদে। কারণ ভূমি এবং কাঁচামালের মূল্য এখন জাপানে অনেক বেড়ে গেছে। অন্যদিকে উদীয়মান অর্থনীতির কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এসব সমস্যা এখন সুবিধায় পরিণত হয়েছে। কারণ এসব দেশে ভূমি ও কাঁচামালের মূল্য এখনও কম। এ পর্যন্ত ব্যাপকভাবে ধারণা প্রচলিত ছিল যে বিশ্বায়ন পশ্চিমা বিশ্বের দ্বারা চালিত হয়ে বাকি বিশ্বের ওপর চেপে বসেছে। নিউইয়র্ক, লন্ডন ও প্যারিসের কাঁচঘেরা উঁচু দালানে বসে বস'রা বিশ্বায়ন নিয়ন্ত্রণ করবেন আর পশ্চিমা বিশ্বের ভোক্তারা প্রায় একচেটিয়াভাবে এর সুফল ভোগ করবেন। তবে এ ধারণা এখন আর খাটছে না। কারণ উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর ভোক্তারা পশ্চিমাদের তুলনায় দ্রুত ধনী হয়ে উঠছে।

উদ্ভাবনের পুরনো ধারণাও এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। পশ্চিমারা বিশ্বাস করত তারা গবেষণাগারে নতুন একটি ধারণা তৈরি করে তা উন্নয়নশীল বিশ্বে রফতানি করবে। কিন্তু এখন এ ধারণার অসারতা প্রমাণিত হয়েছে। এখন উদীয়মান বাজারের দেশগুলো টেলিকম থেকে কম্পিউটার পর্যন্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাওয়ার হাউজে পরিণত হয়েছে।

উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো ক্রমবর্ধমানহারে নতুন প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য উদ্ভাবনে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এ ধারায় বদলে যাচ্ছে উদীয়মান শক্তির দেশগুলোর জীবনধারাও। ২০০৯ সালের পিউ গেস্নাবাল অ্যাটিচিউডস প্রজেক্টস এক প্রতিবেদনে দেখিয়েছে এসব দেশের ৮৫ থেকে ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত নাগরিক তাদের জীবনযাপনের মান নিয়ে সন্তুষ্ট। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র হেনরি ফোর্ডের প্রডাকশন লাইন অনুসরণ করেছিল, জাপান লিন ম্যানুফ্যাকচারিং আর এখন উদীয়মান শক্তিগুলো তাদের স্বতন্ত্র ধারা অনুসরণ করছে। শুধু সস্তা শ্রম নয় বরং নব উদ্ভাবনই উদীয়মান শক্তিকে এগিয়ে নিচ্ছে।
Source: Daily Ittefaq