Thursday, April 29, 2010

শহিদুলের ঘটি দই এখন ইউরোপ আমেরিকায়

শহিদুলের ঘটি দই এখন ইউরোপ আমেরিকায়

আরিফুল আবেদীন টিটো, ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নিভৃত পল্লী পরাণপুরের ‘ঘটিদই’ এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ব্যতিক্রমধর্মী এই ঘটিদইয়ের উদ্ভাবক ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পরাণপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম। এর উদ্ভাবক হিসেবে তিনি এরই মধ্যে ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ‘ঘটিদই শহিদুল’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। একইসঙ্গে এই পরিণত বয়সে এসে দই ব্যবসার মাধ্যমে স্বাবলম্বীও হয়ে উঠেছেন তিনি।
ঘটিদই আসলে সাধারণ দই-ই, তবে মাটির পাত্রের পরিবর্তে সুদৃশ্য অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে সুস্বাদু এই দই তৈরি করা হয় বলে এ অঞ্চল ছাড়াও দেশব্যাপী এটি ‘ঘটিদই’ নামেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি লাভ করেছে।
ঘটিদইয়ের উদ্ভাবক শহিদুল ইসলাম জানালেন, প্রথম জীবনে ১৯৮৮ সালের দিকে তিনি আড়তদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন। ধান, পাট, মসুর ও ছোলাসহ তিনি বিভিন্ন কাঁচামাল কেনাবেচা করতে দেশের নানা প্রান্তে যাওয়া-আসা করতেন। একপর্যায়ে তিনি আড়তদারি ব্যবসায় প্রচুর লোকসান দিয়ে প্রায় নিঃস্ব্ব হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ১৯৯০ সালের দিকে কোটচাঁদপুর শহরে হোটেল ব্যবসা শুরু করেন। ভালোই চলছিল তার হোটেল ব্যবসা। ব্যবসার ফাঁকে ফাঁকে তিনি নিজের হাতে দই ও মিষ্টি বানাতেন। এলাকাবাসী তার হোটেলে তৈরি দইয়ের নাম করায় তিনি দই তৈরির দিকেই ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। ২০০২ সালে হোটেল ব্যবসাও গুটিয়ে নিতে হয় তাকে। পরে বেশ কয়েক বছর বেকার জীবনযাপন করে ২০০৪ সালের মাঝামাঝি তিনি কোটচাঁদপুর উপজেলার একটি এনজিও থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মহেশপুর উপজেলার পরাণপুর গ্রামের নিভৃত পল্লীতে নিজের দীর্ঘজীবনের হোটেল ব্যবসার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী ঘটিদইয়ের বাণিজ্যিক উত্পাদন শুরু করেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
শহিদুল জানান, পরাণপুর এলাকার গরুর মালিকদের বাড়ি থেকে ঘটিদইয়ের জন্য প্রতিকেজি ৩০ টাকা করে খাঁটি দুধ সংগ্রহ করা হয়। তারপর বড় বড় কড়াইয়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ধরে দুধ জাল দিয়ে কেবল চিনি মিশিয়ে সুস্বাদু সরের ঘটিদই তৈরি করা হয়। এই দই তিনি পাইকারদের কাছে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এরপর এই ঘটিদই মহেশপুর, কোটচাঁদপুর, জীবননগর, চৌগাছাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
ঘটিদইয়ের উদ্ভাবক শহিদুল ইসলামের মহেশপুরের পরাণপুরের কারখানায় প্রায় ৩০ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করছেন। এ কারখানায় ৬-৭ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়েছে। এ টাকার পুরোটাই বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে পাওয়া ঋণ। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিমাসে তার ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হয়। তিনি আরও জানালেন, প্রায় প্রতিদিনই তার উত্পাদিত দই মানুষ কারখানা থেকে কিনে নিয়ে বিদেশে তাদের আত্মীয়স্বজনদের কাছে পাঠাচ্ছেন। এরই মধ্যে ঘটিদই আমেরিকা, সৌদি আরব, দুবাই, কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইতালি, রাশিয়া ও ভারতের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির বাঙালি কম্যুনিটিতে তার ঘটিদইয়ের ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটির এক বাঙালি ব্যবসায়ী তাকে বাণিজ্যিকভাবে ঘটিদই রফতানির প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে শহিদুল দই রফতানি করতে পারছেন না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন। সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পেলে আরও ব্যাপক ভিত্তিতে ঘটিদই উত্পাদন করে বিদেশে রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে জানালেন তিনি।