Sunday, January 2, 2011

ভিন্ন খবর : ক্যান্সার সারাবে আগাছা!

ভিন্ন খবর : ক্যান্সার সারাবে আগাছা!

ডেস্ক রিপোর্ট
ছোট্ট একটা লতা। সবুজ। সময় হলে হালকা গোলাপি কিংবা খয়েরি রঙের ছোট ছোট ফুলে ছেয়ে যায়। বনে-জঙ্গলে বড় বড় গাছপালার ফাঁক-ফোঁকরে কোনোমতে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে থাকে। অথবা মানুষের আসা-যাওয়ার পথের দু’পাশে ধুঁকতে ধুঁকতে টিকে থাকে। আবার কখনও হয়তো মানুষের ক্ষেতখোলায়ও সুযোগ পেলে মেলে ধরতে চায় নিজেকে। কিন্তু হিসেবি কৃষকের নজরে পড়লে সমূলে উত্পাটন। আগাছা দিয়ে কী হবে?
আগাছাই বৈকি? মানুষ ব্যবহারিক কোনো উপযোগিতা না পেলে গাছকে আগাছাই বলে। তবে ছোট্ট মিল্কউয়িড লতার আগাছা অপবাদ সম্ভবত ঘুচতে চলেছে। বিজ্ঞানীরা যা বলেছেন তা যদি সত্যি হয়, তাহলে রাতারাতিই মহার্ঘ্য হয়ে উঠবে এই পথের ধারের লতাটি।
ক্যান্সার রোগের প্রকৃত চিকিত্সায় সত্যিকার অর্থে ওষুধ বের হয়নি। এ পর্যন্ত যা জানা গেছে, তা নেহাত রোগটির প্রতিরোধ বিষয়ে। ক্যান্সারের পুরোপুরি উপশম বিষয়ে চিকিত্সকরা এখনও নীরব। কিছু কিছু ওষুধের কথা অবশ্য বলা হয়, যা রোগটির প্রাথমিক পর্যায়ে প্রয়োগ করা গেলে সেরে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু একবার গেড়ে বসতে পারলে ক্যান্সারকে হটানোর প্রতিষেধক এখনও চিকিত্সা বিজ্ঞান বের করতে পারেনি।
ক্যান্সার হটানো মানে এর সেলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া, যাতে আর বিস্তৃত হতে না পারে। কিন্তু সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানীরা এমন একটি লতার কথা বলেছেন, যার রসে রয়েছে ক্যান্সারের সেল ধ্বংসকারী উপাদান। আর সে লতাটি হলো এই মিল্কউয়িড বা পেটে স্পার্জ। উদ্ভিদবিদ্যায় একে বলা হয় ইউফোরবিয়া পেপলাস। এই উদ্ভিদটি ইল্যান্ডেই বেশি দেখা যায়। মিল্ক উয়িড কাজ করে নন-মেলানোমাজনিত স্কিন ক্যান্সার সারানোর কাজে। আর ইংল্যান্ডে এই ক্যান্সারটির প্রাদুর্ভাব এত বেশি যে, প্রতি বছর লাখ লাখ লোক এতে আক্রান্ত হয়।
তবে মিল্কউয়িডকে ইংল্যান্ডে যতটা অবহেলিত ভাবা হোক, অন্যত্র এর কিছু ব্যবহারিক উপযোগিতা রয়েছে বলেও জানা যায়। মিল্কউয়িড শত শত বছর ধরে গ্রামাঞ্চলে আঁচিল, হাঁপানি এবং কিছু কিছু চর্মরোগের ভেষজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম এটিকে ল্যাবরেটরিতে নিয়ে গিয়ে এর ওপর গবেষণা চালিয়ে উপর্যুক্ত তথ্য আবিষ্কার করেন।
গবেষণা বা পারীক্ষাটি চালানো হয়েছিল ৪৮ জন নন-মেলানোমাজনিত চর্মরোগ বা স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর ওপর। এরা এসব রোগের প্রথাগত চিকিত্সায় সেরে ওঠেনি। অনেককে বয়সের কারণে সার্জারি করতেও পারেননি চিকিত্সকরা। কেউ কেউ সার্জারি ভয় করে বলে তাতে রাজি হয়নি। এরা সবাই চামড়ার ওপরে বিসিসি (বাসেল সেল কারকিনোমাস, এসসিসি স্কুয়ামস কারকিনোমাস) ও আইইসি (ইন্ট্রাএপিডার্মাল কারকিনোমাস) ধরনের রোগে ভুগছিলেন।
এদের ক্ষতে দেয়া হয় ইউফোরবিয়া পেপলাস লতার প্রাণরস। আর এর প্রাথমিক ফলাফলও হলো অবাক করার মতো। পরপর তিন দিন টানা ব্যবহারের পর অবস্থার উন্নতি ঘটতে শুরু করল। এক মাসের মধ্যে ৪৮ জন রোগীর মধ্যে ৪১ জনই সুস্থ হয়ে উঠল পুরোপুরি। আর যাদের ক্ষেত্রে প্রথম পালাটা তেমন কাজ করেনি। তাদের দেয়া হলো দ্বিতীয় দফার ট্রিটমেন্ট। এভাবে ১৫ মাসের নিয়মিত ওষুধ ব্যবহারের পর ওদের প্রায় সবার ক্যান্সার সেরে গেল।
এমন চমত্কার খবরটা দেবেন গবেষকরা ব্রিটিশ জার্নাল অব ডারম্যাটোলজি নামের সাময়িকীতে খুব শিগগির। ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন অব ডারম্যাটোলজিস্টের একজন কিম্বারলি কার্টার বলেন, ‘সার্জারি ছাড়াই আমরা আশা করছি মিল্কউয়িডের রস থেকে বানানো ওষুধই ক্যান্সার সারাতে চমত্কার ভূমিকা রাখবে।’
Source: Daily Amardesh, 27th January-2011

No comments:

Post a Comment