Monday, January 3, 2011

ঈশ্বরগঞ্জে গুটিপোকার চাষ ।। ৭০ পরিবার স্বচ্ছল

ঈশ্বরগঞ্জে গুটিপোকার চাষ ।। ৭০ পরিবার স্বচ্ছল

০০ ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা

ভিন্নধমর্ী রেশম গুটিপোকার চাষ সহজেই একটি পরিবারে আনতে পারে আর্থিক সচ্ছলতা। তার প্রমাণ ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রেশম গুটিপোকার চাষ সংশিস্নষ্ট ৭০টি পরিবার। উপজেলার চরহোসেনপুর, পুম্বাইল, ভাইদগাঁও, কাকনহাটি, কুলস্নাপাড়া, রাউলেরচর, বড়জোড়া, চরশিহারী, ডাংরী, আশ্রবপুর, কাঁঠাল, জয়পুর ও জাটিয়া গ্রামের ৭০টি পরিবার রেশম গুটিপোকা চাষের বদৌলতে আজ বড়লোক হওয়ার পথে।
প্রকাশ, বাংলাদেশ রেশম বোর্ড, ময়মনসিংহ শাখা থেকে সরবরাহকৃত ছোট ছোট পোকার ডিম্বাণু অল্প কয়েকদিনেই পূর্ণাঙ্গ পোকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সাধারণত পরিচ্ছন্ন গোয়ালঘর, রান্নাঘর এমনকি বসতঘরেও এ পোকা অনায়াসে পালন করা যায়। পোকার প্রথম ও প্রধান খাদ্য হচ্ছে তোত গাছের পাতা। আর তোতগাছ সরাসরি কৃষকদের মাঝে নামমাত্র ৫০ পয়সা মূল্যে সরবরাহ করা হয়। সাধারণত পুকুর পাড়, ক্ষেতের আইল,বাড়ির আঙ্গিনা, সরকারি রাস্তার পাশে, এমনকি যে কোন অনাবাদি পতিত জমিতে সহজেই তোত গাছের আবাদ করা যায়। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস তোতগাছের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। পোকা পালনের ২০/২৫ দিনের মধ্যেই গুটিরূপ ধারণ করে। গুটি সাধারণত দুই রংয়ের হয়ে থাকে, সাদা ও সোনালী। চন্দ্রকী নামের বিশেষ চাটাইয়ে বাসকারী পোকা শারীরিকভাবে পূর্ণতা লাভের পর তার মুখ থেকে নির্গত লালা অাঁশে পরিণত হয়। পরে পোকা আপন শিল্পীসত্তা দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে নিজের ভেতরে অবস্থান করে গুটি তৈরি করে। তারপর পর্যায়ক্রমে গুটিতে রোদ লাগিয়ে ভেতরে অবস্থানকারী পোকা মেরে ফেলা হয় এবং বিশেষ প্রযুক্তিতে সংগ্রহ করা আঁশ পরবতর্ীতে রূপ নেয় বিশ্বখ্যাত সিল্ক সুতা হিসেবে। প্রতিটি গুটির সুতা আকারভেদে ১২শ' থেকে ১৮শ' গজ পর্যন্ত লম্বা হয়। বিশ্বজুড়ে সমাদৃত রাজশাহী সিল্ক ও ঢাকার মিরপুরের বেনারসী সিল্কের সুতা তৈরির একমাত্র উপাদান রেশমের গুটি। বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এগুটির রয়েছে প্রচুর কদর। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের রেশম গুটিপোকা চাষের উন্নয়ন ও সমপ্রসারণের লক্ষ্যে জাপান, ডেনমার্ক ও বাংলাদেশ যৌথভাবে ৫ বছর মেয়াদী (জেডিসিএফ) নামক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গুটিপোকার চাষ সমপ্রসারণ ও কৃষকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বর্তমানে পোকাপালনের উপকরণ বিতরণ, আর্থিক ঋণ ও পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। আর কৃষকদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সরাসরি টাকার পরিবর্তে উৎপাদিত রেশমের গুটি দিয়ে যেমন রয়েছে ঋণ পরিশোধের অভিনব পন্থা তেমনি সরাসরি প্রকল্প অফিসে গুটি বিক্রি করেও চাষীরা পাচ্ছেন নগদ অর্থ।
এব্যাপারে বিভাগীয়ভাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত ঈশ্বরগঞ্জে কর্মরত রেশম প্রতিপালক মকবুল হোসেন জানান, এবছর উপজেলায় ৭ জন সফল চাষীকে ৮ হাজার টাকা করে ৫৬ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। সেই সাথে ঈশ্বরগঞ্জে ৭০টি পরিবারের ৫৩ জন চাষীকে (বসনী) ৫ থেকে ২৫ দিন মেয়াদী বছরে ২/৩ বার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
আশ্রবপুর গ্রামের চাষী মাহতাবউদ্দিন জানান, অল্প পরিশ্রমে গুটিপোকার চাষ করে সহজেই ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা উপার্জন করা সম্ভব। গ্রামের দরিদ্র জনগণের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনয়নের লক্ষ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ময়মনসিংহ প্রকল্প কার্যালয়ে বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীল চন্দ্র পাল সরাসরি চাষীদের সাথে মতবিনিময় করেন। ফলে কৃষক অনুপ্রাণিত হয় এবং অতিশীঘ্রই ময়মনসিংহ অঞ্চলে রেশম গুটিপোকা চাষে নীরব বিপস্নব সাধিত হবে বলে সংশিস্নষ্টরা জানান।
এব্যাপারে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ইত্তেফাককে জানান, বর্তমানে জনবল সংকটের কারণে এ অঞ্চলে রেশম গুটিপোকা চাষ উন্নয়ন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম রেশম চাষের সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সংশিস্নষ্ট ঊধর্্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
Source: Daily Ittefaq, 26th January-2011

No comments:

Post a Comment