আইসিডিডিআরবি'র আবিষ্কারসহজেই ধরা পড়বে কালাজ্বর
কালাজ্বরের প্রচলিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতি ঝুঁকিপূর্ণ, ব্যথাদায়ক, জটিল ও ব্যয়বহুল। আর এসব মাথায় রেখে রোগীর মূত্রের নমুনা থেকে কালাজ্বর নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন আইসিডিডিআরবির পরজীবীবিদ্যা গবেষণাগারের একদল বিজ্ঞানী। গবেষণার বিস্তারিত জানাচ্ছেন তৌহিদ এলাহীপ্রচলিত পদ্ধতিতে কালাজ্বর নির্ণয় করতে হয় অস্থিমজ্জা, প্লিহা বা লসিকা থেকে কোষসমষ্টি বা কলা সংগ্রহ করে। এখান থেকে নমুনা নিয়ে লেসমেনিয়া নামের একটি পরজীবীর অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয় কালাজ্বর। নমুনা নেওয়ার সময় ব্যবহার করতে হয় বিশেষ সিরিঞ্জ। ওটা যথেষ্ট বেদনাদায়ক। উপযুক্ত সরঞ্জামাদি ছাড়া এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না। সিরিঞ্জ ব্যবহৃত হওয়ায় অন্য জীবাণুঘটিত রোগের সংক্রমণের আশক্সকাও আছে। সময় লাগে অনেক বেশি। আর তাই মূত্রের নমুনা থেকে আবিষ্কৃত রোগ নির্ণয় পদ্ধতিটি কালাজ্বরের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য দারুণ এক আশা জাগানিয়া খবর। এমনকি মূত্রের নমুনা থেকে কালাজ্বর নির্ণয়ের পদ্ধতি আর কোথাও প্রচলিত নেই।
গবেষণা দলের প্রধান আইসিডিডিআরবির পরজীবী বিজ্ঞান ল্যাবরেটরির গবেষক গোলাম মুসাবি্বর খান জানান, কালাজ্বরের দুটো পরজীবী প্রজাতি লেসমেনিয়া ডনোভানি, লেসমেনিয়া চাগাসি। এদের মধ্যেই কেবল পাওয়া যায় '৩৯ অ্যামাইনো এসিডবিশিষ্ট' পরিবর্তিত জিনেটিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রোটিন অণু। লেসমেনিয়া ছাড়া অন্য কোনো পরজীবী বা অণুজীবে এটি পাওয়া যায় না। আক্রান্ত রোগীর মূত্রের নমুনায় খুঁজে পাওয়ার ওপর ভিত্তি করেই উদ্ভাবন করা হয়েছে নতুন পদ্ধতিটি। মূত্রের নমুনা ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় পদ্ধতির নাম 'আরকে-৩৯ স্ট্রিপ টেস্ট'। এটি ব্যবহার করে রোগীর সেরাম, প্লাজমা বা পাতলা জলীয় রক্তরস অংশের মাধ্যমে আরেকটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। তবে তাতে সুই-সিরিঞ্জের ব্যবহার আছে। ওটা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু মূত্রের নমুনা থেকে রোগ নির্ণয় পদ্ধতিতে ১০ মিনিটেই জানা যাবে কালাজ্বরের পরজীবীর উপস্থিতি।
কালাজ্বরের এ গবেষণায় প্রথমে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এক শ স্বেচ্ছাসেবী রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে ওই ১০০ রোগীকে প্রথমে রক্তরস বা প্লাজমা ও সেরামে টেস্টের মাধ্যমে কালাজ্বর আক্রান্ত হিসেবে নিশ্চিত করতে হয়েছে। পরে তাদের মূত্রের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা গেল তাদের ওই নমুনার মাধ্যমেও কালাজ্বরের উপস্থিতি বলে দেওয়া সম্ভব। এ গবেষণা আইসিডিডিআরবির মহাখালী শাখায় পরজীবীবিদ্যা গবেষণাগারের পাশাপাশি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায়ও সম্পন্ন হয়েছে।
গোলাম মুসাবি্বর খান জানান, রোগীর মূত্রের নমুনা আইসিডিডিআরবির পরজীবী বিজ্ঞান গবেষণাগারে আনতে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়েছে। পাশাপাশি আনা হয়েছে রক্তের নমুনাও। প্রক্রিয়াজাতকরণের পর রসের নমুনায় এসিডিটি কমাতে একটি বিশেষ দ্রবণ যোগ করতে হয়েছে। এরপর প্রচলিত পদ্ধতিতে ওই নমুনায় 'অ্যান্টি আরকে-৩৯ ইমিউনোগ্লোবিউলিন' অণু খুঁজে পেতে লাগে ৩০ মিনিট। নতুন পদ্ধতিতে ১০ মিনিটেই 'অ্যান্টি আরকে-৩৯ ইমিউনোগ্লোবিউলিন' অণু খুঁজে পাওয়া গেছে। এতে আলাদা কোনো দ্রবণও যোগ করতে হয়নি। পরে প্রাপ্ত উপাত্ত পরিসংখ্যানের সফটওয়্যার এসপিএসএস ব্যবহার করেও নির্ভুল ফল পাওয়া গেছে।
সহজে নমুনা সংগ্রহের কারণে এ পদ্ধতিটি খুবই উপযোগী। বিশেষ করে শিশু বা বৃদ্ধ রোগীদের অস্থিমজ্জা, প্লিহা সুই-সিরিঞ্জ দিয়ে ছিদ্র না করে নমুনা সংগ্রহ অনেক সহজ, আরামদায়ক। তবে এ গবেষণার ছোটখাটো কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও স্বীকার করলেন গবেষকরা। গবেষক শফিউল আলম জানান, প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এটি ৯৫ শতাংশ কার্যকর। দ্রুত এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এর জন্য আরো অনেক রোগী নিয়ে বড় মাপের গবেষণার দরকার।
গবেষণা দলে আরো ছিলেন, মিল্কা প্যাট্রিসিয়া পোদ্দার, মাকাতো ইতোহ, কাজি এম জামিল, রশিদুল হক, ইউকিকো ওয়াগাত সুমা। জাপান-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগের এ গবেষণার অর্থায়ন করেছে জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গবেষণার বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতা করেছেন_পরজীবী গবেষক দেবাশীষ ঘোষ, নাজমুল হুদা, এইচ এম রুবায়েত এলাহী, শারমিনা দেলোয়ার। আইসিডিডিআরবির পরজীবীবিদ্যা গবেষণাগার ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাপানের আইচিয়ে মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সুকুবা। এ গবেষণাকর্ম নিয়ে ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর বিজ্ঞান সাময়িকী বায়োমেড সেন্ট্রালের 'প্যারাসাইটস অ্যান্ড ভেক্টরস'-এ একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
কালাজ্বরের প্রচলিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতি ঝুঁকিপূর্ণ, ব্যথাদায়ক, জটিল ও ব্যয়বহুল। আর এসব মাথায় রেখে রোগীর মূত্রের নমুনা থেকে কালাজ্বর নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন আইসিডিডিআরবির পরজীবীবিদ্যা গবেষণাগারের একদল বিজ্ঞানী। গবেষণার বিস্তারিত জানাচ্ছেন তৌহিদ এলাহীপ্রচলিত পদ্ধতিতে কালাজ্বর নির্ণয় করতে হয় অস্থিমজ্জা, প্লিহা বা লসিকা থেকে কোষসমষ্টি বা কলা সংগ্রহ করে। এখান থেকে নমুনা নিয়ে লেসমেনিয়া নামের একটি পরজীবীর অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয় কালাজ্বর। নমুনা নেওয়ার সময় ব্যবহার করতে হয় বিশেষ সিরিঞ্জ। ওটা যথেষ্ট বেদনাদায়ক। উপযুক্ত সরঞ্জামাদি ছাড়া এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না। সিরিঞ্জ ব্যবহৃত হওয়ায় অন্য জীবাণুঘটিত রোগের সংক্রমণের আশক্সকাও আছে। সময় লাগে অনেক বেশি। আর তাই মূত্রের নমুনা থেকে আবিষ্কৃত রোগ নির্ণয় পদ্ধতিটি কালাজ্বরের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য দারুণ এক আশা জাগানিয়া খবর। এমনকি মূত্রের নমুনা থেকে কালাজ্বর নির্ণয়ের পদ্ধতি আর কোথাও প্রচলিত নেই।
গবেষণা দলের প্রধান আইসিডিডিআরবির পরজীবী বিজ্ঞান ল্যাবরেটরির গবেষক গোলাম মুসাবি্বর খান জানান, কালাজ্বরের দুটো পরজীবী প্রজাতি লেসমেনিয়া ডনোভানি, লেসমেনিয়া চাগাসি। এদের মধ্যেই কেবল পাওয়া যায় '৩৯ অ্যামাইনো এসিডবিশিষ্ট' পরিবর্তিত জিনেটিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রোটিন অণু। লেসমেনিয়া ছাড়া অন্য কোনো পরজীবী বা অণুজীবে এটি পাওয়া যায় না। আক্রান্ত রোগীর মূত্রের নমুনায় খুঁজে পাওয়ার ওপর ভিত্তি করেই উদ্ভাবন করা হয়েছে নতুন পদ্ধতিটি। মূত্রের নমুনা ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় পদ্ধতির নাম 'আরকে-৩৯ স্ট্রিপ টেস্ট'। এটি ব্যবহার করে রোগীর সেরাম, প্লাজমা বা পাতলা জলীয় রক্তরস অংশের মাধ্যমে আরেকটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। তবে তাতে সুই-সিরিঞ্জের ব্যবহার আছে। ওটা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু মূত্রের নমুনা থেকে রোগ নির্ণয় পদ্ধতিতে ১০ মিনিটেই জানা যাবে কালাজ্বরের পরজীবীর উপস্থিতি।
কালাজ্বরের এ গবেষণায় প্রথমে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এক শ স্বেচ্ছাসেবী রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে ওই ১০০ রোগীকে প্রথমে রক্তরস বা প্লাজমা ও সেরামে টেস্টের মাধ্যমে কালাজ্বর আক্রান্ত হিসেবে নিশ্চিত করতে হয়েছে। পরে তাদের মূত্রের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা গেল তাদের ওই নমুনার মাধ্যমেও কালাজ্বরের উপস্থিতি বলে দেওয়া সম্ভব। এ গবেষণা আইসিডিডিআরবির মহাখালী শাখায় পরজীবীবিদ্যা গবেষণাগারের পাশাপাশি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায়ও সম্পন্ন হয়েছে।
গোলাম মুসাবি্বর খান জানান, রোগীর মূত্রের নমুনা আইসিডিডিআরবির পরজীবী বিজ্ঞান গবেষণাগারে আনতে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়েছে। পাশাপাশি আনা হয়েছে রক্তের নমুনাও। প্রক্রিয়াজাতকরণের পর রসের নমুনায় এসিডিটি কমাতে একটি বিশেষ দ্রবণ যোগ করতে হয়েছে। এরপর প্রচলিত পদ্ধতিতে ওই নমুনায় 'অ্যান্টি আরকে-৩৯ ইমিউনোগ্লোবিউলিন' অণু খুঁজে পেতে লাগে ৩০ মিনিট। নতুন পদ্ধতিতে ১০ মিনিটেই 'অ্যান্টি আরকে-৩৯ ইমিউনোগ্লোবিউলিন' অণু খুঁজে পাওয়া গেছে। এতে আলাদা কোনো দ্রবণও যোগ করতে হয়নি। পরে প্রাপ্ত উপাত্ত পরিসংখ্যানের সফটওয়্যার এসপিএসএস ব্যবহার করেও নির্ভুল ফল পাওয়া গেছে।
সহজে নমুনা সংগ্রহের কারণে এ পদ্ধতিটি খুবই উপযোগী। বিশেষ করে শিশু বা বৃদ্ধ রোগীদের অস্থিমজ্জা, প্লিহা সুই-সিরিঞ্জ দিয়ে ছিদ্র না করে নমুনা সংগ্রহ অনেক সহজ, আরামদায়ক। তবে এ গবেষণার ছোটখাটো কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও স্বীকার করলেন গবেষকরা। গবেষক শফিউল আলম জানান, প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এটি ৯৫ শতাংশ কার্যকর। দ্রুত এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এর জন্য আরো অনেক রোগী নিয়ে বড় মাপের গবেষণার দরকার।
গবেষণা দলে আরো ছিলেন, মিল্কা প্যাট্রিসিয়া পোদ্দার, মাকাতো ইতোহ, কাজি এম জামিল, রশিদুল হক, ইউকিকো ওয়াগাত সুমা। জাপান-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগের এ গবেষণার অর্থায়ন করেছে জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গবেষণার বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতা করেছেন_পরজীবী গবেষক দেবাশীষ ঘোষ, নাজমুল হুদা, এইচ এম রুবায়েত এলাহী, শারমিনা দেলোয়ার। আইসিডিডিআরবির পরজীবীবিদ্যা গবেষণাগার ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাপানের আইচিয়ে মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সুকুবা। এ গবেষণাকর্ম নিয়ে ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর বিজ্ঞান সাময়িকী বায়োমেড সেন্ট্রালের 'প্যারাসাইটস অ্যান্ড ভেক্টরস'-এ একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
এক নজরে কালাজ্বরকালাজ্বর তথা ভিসেরাল লেসমোনিয়াসিস একটি পতক্সগবাহিত পরজীবীঘটিত রোগ।রোগটির বাহক বেলে মাছি। তাই দরিদ্ররাই বেশি আক্রান্ত হয়।বাংলাদেশ সরকারের ডিজিজ কন্ট্রোল ইউনিটের সূত্রমতে, ১৯৯৪-২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭৩ হাজার ৮৬৯ জন কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়। ২০০৮ সালে আক্রান্ত হয় চার হাজার ৮২৪ জন এবং মারা যায় ১৭ জন।এই মুহূর্তে কালাজ্বরের ঝুঁকিতে আছে আরো প্রায় ২০ লাখ মানুষ।Source: Daily Kalerkantho
No comments:
Post a Comment