Saturday, January 1, 2011

পার্বত্য অঞ্চলে নাশপাতির চাষ

পার্বত্য অঞ্চলে নাশপাতির চাষ

বিদেশি ফল আপেলের চেয়ে দ্বিগুণ ভিটামিন 'সি' ও প্রোটিন সমৃদ্ধ নাশপাতি পার্বত্য অঞ্চলের একটি নতুন সম্ভাবনাময় ফল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মাটি ও আবহাওয়া রাবি-১ জাতের নাশপাতি চাষের জন্য উপযোগী।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ছোট ছোট পাহাড়ে দো-অাঁশ ও বেলে মাটিতে নাশপাতি চাষ খুবই লাভজনক। পাহাড়ি খাগড়াছড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সম্ভনাময় এই জাতের ফলের চাষাবাদ সমপ্রসারণে বেশ কয়েক বছর ধরে কৃষকদের মাঝে গুটি কলম বিতরণ করে আসছে।

এখানকার আবহাওয়া নাশপাতির ফলন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য ফলের চেয়ে বেশি হওয়ায় এই ফলের চাষাবাদ দিন দিন বাড়ছে। তাছাড়া নাশপাতি অপেক্ষাকৃত শক্ত ফল হওয়ায় সংরক্ষণ করা যায় অধিক সময় পর্যন্ত। পচনশীল নয় বলে দেরীতে বাজারে সরবরাহ করার সুযোগ থাকায় এর দামও বেশি পাওয়া যায়। তাই অনেকে এটি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাময় বলে মনে করেছেন। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে রোপণের পর ৫ বছরের মধ্যে প্রতিটি নাশপাতির গাছ থেকে ৩০ থেকে ৬০ কেজি ফল উৎপাদন সম্ভব। গত কয়েক বছর ধরে এখানকার বাগান থেকে নাশপাতি বাজারে আসা শুরু করেছে।

নাশপাতি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এমন একজন চাষি বারাই মার্মা। তিনি এখন জেলার শ্রেষ্ঠ নাশপাতি চাষি। ২০০৪ সালে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সহায়তায় ৮০ শতক জমিতে তিনি ৬শ' নাশপাতির চারা রোপণ করেন। নিয়মিত পরিচর্যার পর গত ২০০৯ সালে ফলন দিতে শুরু করে গাছগুলো। তার বাগান থেকে বছরে ৫ থেকে ৭শ' মণ নাশপাতির ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে তার বাগান থেকে বছরে কম করে হলেও ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার নাশপাতি বিক্রি করা সম্ভব। বর্তমানে পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি নাশপাতির মূল্য গড়ে ৫০ টাকা। খুচরা বাজারে এর মূল্য প্রায় দ্বিগুণ। নিজস্ব বাগানে উৎপাদিত নাশপাতি বিক্রি করে তিনি এখন আর্থিক দিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন।

পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা চন্দ্রকান্ত দাস জানান, তারা খাগড়াছড়ি বারি-১ জাতের নাশপাতি ২০০৪ সালে অবমুক্তির পর তা মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে একটি মাতৃবাগান সৃজন করেছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের গুটি কলম বিতরণের মাধ্যমে নাশপাতি সমপ্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন।

ঊধর্্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুর রউফ বলেন, প্রতি বছর গবেষণা কেন্দ্রের উৎপাদিত নাশপাতির প্রায় ২ হাজার গুটি কলম কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে খাগড়াছড়ি জেলায় প্রায় সহস্রাধিক সৃজিত বাগানের কৃষককে রোপণ পদ্ধতি ও বিনামূল্যে গুটি কলমের চারা বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া কৃষকদের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

জীতেন বড়-য়া, বাসস
Source: Daily Ittefaq, 8th January-2010

No comments:

Post a Comment