বিশ্ব জ্বালানি সম্মেলন প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ
মুহম্মদ মাছুম বিলস্নাহ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। ভবিষ্যৎ জ্বালানি, পরিবেশ এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের শ্রম বাজার মধ্যপ্রাচ্যে বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি করা ইত্যাদি বিষয়ের দিক থেকে এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা কতটা আদায় করতে পারব বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে এবং আবুধাবীতে শ্রমবাজার কতটা সমপ্রসারণ করতে পারব তার উপর নির্ভর করছে এই সফরের সফলতা এবং ব্যর্থতা। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এই শীর্ষ বৈঠকের রয়েছে প্রভূত গুরুত্ব। চারটি প্রধান বিষয় ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয় যেমন- নবায়নযোগ্য জ্বালানি শিল্প পলিসি, বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং অর্থায়ন। আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা প্রণয়নকারী, ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, উদ্ভাবনকারী এবং অর্থায়নকরী যোগ দিয়েছিলেন এই সম্মেলনে। সৌরশক্তি, বাতাস, শক্তির দক্ষতা, বায়ো-জ্বালানি, জলবিদু্যৎ, জিওথার্মাল ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এবং এদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা হয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সুযোগে আবুধাবীর ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীর সাথে জনশক্তি রপ্তানি, ব্যবসা, বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তার আলোচনায় আরও স্থান পায় খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ুর পরিবর্তন, নদী খনন, স্বাস্থ্য, চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ এবং বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমীরাতের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ বের করা ।গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে ৩৫৬১০০ জন শ্রমিক রপ্তানি করা হয় , তাদের মধ্যে শুধুমাত্র আরব আমীরাতে রপ্তানি করা হয় ১৮৬১২৭ জন দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিক। অতএব আরব আমীরাতে আমাদের শ্রমবাজার যে কত গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় তা এই চিত্র থেকেই বুঝা যায়। গত ২০১০ সালের নভেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স কমেছে ৬ শতাংশ অর্থাৎ বহির্বিশ্বে আমাদের শ্রমবাজারের অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যাচেছ, এই প্রেক্ষাপটে আমাদের মূল শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক একটু ভিন্নভাবে দেখার দাবি রাখে।
বিশ্বময় কার্বন নিঃসরণ কমাতে আত্মকেন্দ্রিকতা ও ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি প্রযুক্তির পাশাপাশি নিজস্ব মজুদ গ্যাস ও কয়লা এবং আমদানি করা তেল, পরমাণুশক্তিসহ জ্বালানির সব উৎসের ভারসাম্যপূর্ণ সদ্ব্যবহার করার জন্য বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। আবুধাবির ন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারে চতুর্থ বিশ্ব ভবিষ্যৎ জ্বালানি সম্মেলনে তিনি এসব আহবান জানান। গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের কারণেই বিশ্ব দিনদিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আর এজন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোই প্রধানত দায়ী। গোটা বিশ্ব এখন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে। কোথাও প্রচন্ড ঠান্ডা আবার কোথাও অতিরিক্ত উষ্ণতা, রাশিয়ায় অনাবৃষ্টিতে ফসল হয়নি বিস্তীর্ণ এলাকায়, অষ্ট্রেলিয়ার মত উন্নত দেশ বন্যার কবলে। এগুলো সবই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফল, আর এজন্য উন্নত বিশ্বগুলোই প্রধানত দায়ী। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববাসীকে এই সত্যি কথাটাই বার বার স্মরণ করিয়ে দিচেছন বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তজর্াতিক ফোরামে । কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের ভূমিকা অনুলেস্নখযোগ্য হলেও এর বিপদের ভাগটা বাংলাদেশকেই নিতে হচ্ছে অনেক বেশি। বৈশ্বিক ঊষ্ণতার ফলে সমুদ্র উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার আশংকা, এর ফলে বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা সাগরে চলে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো আমরা বেশ কয়েক বছর যাবৎ শুনে আসছি অথচ ধনী দেশগুলো মনে হয় কোন কথাই শুনছে না। ধরিত্রী সম্মেলন ও এর ধারাবাহিকতায় কিওটো, বালি, কোপেনহেগেন ও কানকুন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল বৈশ্বিক ঊষ্ণতাজনিত বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার তাগিদে। কিন্তু এ পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি অর্থাৎ আমরা আরও ধ্বংসের দিকে এগুচ্ছি। চীনের ৮০ শতাংশ বিদু্যতের উৎস কয়লা, ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লা থেকে ৪ লাখ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে। অস্ট্রেলিয়ার ৭৫ শতাংশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ৯৩ শতাংশ বিদু্যৎ আসে কয়লা থেকে। অন্যদিকে বাংলাদেশে যে পরিমাণ কয়লার মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে প্রতিদিন ৫ হাজার মেগাওয়াট হিসেবে ৫০ বছর বিদু্যৎ উৎপাদন করা সম্ভব হলেও এখন কয়লানির্ভর বিদু্যৎ উৎপাদনের পরিমাণ মাত্র আড়াইশ' মেগাওয়াট। অর্থাৎ বলা যেতে পারে, কার্বন নিঃসরণ বন্ধ কিংবা কমিয়ে আনার আন্দোলনে চীন, ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিলসহ অন্যান্য কার্বন নিঃসরণকারী দেশের চেয়ে বেশি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ।
আমরা জানি কানকুন সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আমাদের যে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড গঠিত হয়েছে, বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত তা থেকে কোন অর্থ পায়নি। অবশ্য এ অর্থ কিভাবে খরচ করা হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট নীতিমালাই তৈরি হয়নি এখনও। আন্তর্জাতিকভাবে কার্বন নিঃসরণ রোধকল্পে বাধ্যতামূলক আইনি কাঠামো গড়ে তোলার একটা প্রচেষ্টা চলছে। আমেরিকাসহ অধিক কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো এ ধরনের আইনি কাঠামোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যদিও চীন ও ভারতকে আগের চেয়ে নমনীয় দেখাচ্ছে। এটি একটি আশার কথা। বাংলাদেশ পৃথিবীর ৬৪তম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ এবং পৃথিবীতে নিঃসরিত মোট কার্বনের মাত্র ০.১৫ শতাংশ নিঃসরণ করে থাকে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ, বিশ্ববাসীকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য কালবিলম্ব না করে ধনী ও উন্নয়নশীল উভয় ধরনের দেশকেই এগিয়ে আসতে হবে, বিসর্জন দিতে হবে অনেক সাময়িক স্বার্থ আর তা না হলে গোটা বিশ্বই বিপর্যয়ের কবলে পড়বে। আমরা আশাকরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আহবান বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগাবে আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য এবং প্রাণীকুলকে নিরাপদে রাখার ক্ষেত্রে তার এ আহবান এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
[লেখক :আন্তর্জাতিক বিশেস্নষক]
Source: Daily Ittefaq, 22th January-2011
বিশ্বময় কার্বন নিঃসরণ কমাতে আত্মকেন্দ্রিকতা ও ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি প্রযুক্তির পাশাপাশি নিজস্ব মজুদ গ্যাস ও কয়লা এবং আমদানি করা তেল, পরমাণুশক্তিসহ জ্বালানির সব উৎসের ভারসাম্যপূর্ণ সদ্ব্যবহার করার জন্য বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। আবুধাবির ন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারে চতুর্থ বিশ্ব ভবিষ্যৎ জ্বালানি সম্মেলনে তিনি এসব আহবান জানান। গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের কারণেই বিশ্ব দিনদিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আর এজন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোই প্রধানত দায়ী। গোটা বিশ্ব এখন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে। কোথাও প্রচন্ড ঠান্ডা আবার কোথাও অতিরিক্ত উষ্ণতা, রাশিয়ায় অনাবৃষ্টিতে ফসল হয়নি বিস্তীর্ণ এলাকায়, অষ্ট্রেলিয়ার মত উন্নত দেশ বন্যার কবলে। এগুলো সবই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফল, আর এজন্য উন্নত বিশ্বগুলোই প্রধানত দায়ী। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববাসীকে এই সত্যি কথাটাই বার বার স্মরণ করিয়ে দিচেছন বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তজর্াতিক ফোরামে । কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের ভূমিকা অনুলেস্নখযোগ্য হলেও এর বিপদের ভাগটা বাংলাদেশকেই নিতে হচ্ছে অনেক বেশি। বৈশ্বিক ঊষ্ণতার ফলে সমুদ্র উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার আশংকা, এর ফলে বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা সাগরে চলে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো আমরা বেশ কয়েক বছর যাবৎ শুনে আসছি অথচ ধনী দেশগুলো মনে হয় কোন কথাই শুনছে না। ধরিত্রী সম্মেলন ও এর ধারাবাহিকতায় কিওটো, বালি, কোপেনহেগেন ও কানকুন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল বৈশ্বিক ঊষ্ণতাজনিত বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার তাগিদে। কিন্তু এ পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি অর্থাৎ আমরা আরও ধ্বংসের দিকে এগুচ্ছি। চীনের ৮০ শতাংশ বিদু্যতের উৎস কয়লা, ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লা থেকে ৪ লাখ মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে। অস্ট্রেলিয়ার ৭৫ শতাংশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ৯৩ শতাংশ বিদু্যৎ আসে কয়লা থেকে। অন্যদিকে বাংলাদেশে যে পরিমাণ কয়লার মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে প্রতিদিন ৫ হাজার মেগাওয়াট হিসেবে ৫০ বছর বিদু্যৎ উৎপাদন করা সম্ভব হলেও এখন কয়লানির্ভর বিদু্যৎ উৎপাদনের পরিমাণ মাত্র আড়াইশ' মেগাওয়াট। অর্থাৎ বলা যেতে পারে, কার্বন নিঃসরণ বন্ধ কিংবা কমিয়ে আনার আন্দোলনে চীন, ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিলসহ অন্যান্য কার্বন নিঃসরণকারী দেশের চেয়ে বেশি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ।
আমরা জানি কানকুন সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আমাদের যে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড গঠিত হয়েছে, বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত তা থেকে কোন অর্থ পায়নি। অবশ্য এ অর্থ কিভাবে খরচ করা হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট নীতিমালাই তৈরি হয়নি এখনও। আন্তর্জাতিকভাবে কার্বন নিঃসরণ রোধকল্পে বাধ্যতামূলক আইনি কাঠামো গড়ে তোলার একটা প্রচেষ্টা চলছে। আমেরিকাসহ অধিক কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো এ ধরনের আইনি কাঠামোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যদিও চীন ও ভারতকে আগের চেয়ে নমনীয় দেখাচ্ছে। এটি একটি আশার কথা। বাংলাদেশ পৃথিবীর ৬৪তম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ এবং পৃথিবীতে নিঃসরিত মোট কার্বনের মাত্র ০.১৫ শতাংশ নিঃসরণ করে থাকে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ, বিশ্ববাসীকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য কালবিলম্ব না করে ধনী ও উন্নয়নশীল উভয় ধরনের দেশকেই এগিয়ে আসতে হবে, বিসর্জন দিতে হবে অনেক সাময়িক স্বার্থ আর তা না হলে গোটা বিশ্বই বিপর্যয়ের কবলে পড়বে। আমরা আশাকরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আহবান বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগাবে আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য এবং প্রাণীকুলকে নিরাপদে রাখার ক্ষেত্রে তার এ আহবান এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
[লেখক :আন্তর্জাতিক বিশেস্নষক]
Source: Daily Ittefaq, 22th January-2011
No comments:
Post a Comment