Sunday, January 30, 2011

বিলের বাঁধে হাঁসের খামার

বিলের বাঁধে হাঁসের খামার

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার রক্তদহ বিলের বাঁধ এখন হাঁসের খামারে পরিণত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বেকার যুবকরা এসে বিলের বাঁধে গড়ে তুলেছেন একাধিক হাঁসের খামার। এদের মধ্যে রিপন আলীর হাঁসের খামার সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। বর্তমানে তার খামারে হাঁসের সংখ্যা প্রায় ৫ থেকে ৬শ'।

রিপন আলী। বাড়ি বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার পাতাঞ্জু গ্রামে। বেকার ছিলেন। মানুষের নানান কথা আর খারাপ ব্যবহারে মন যখন ভারাক্রান্ত তখন মাথায় আসে রক্তদহ বিলের বাঁধে হাঁসের খামারের কথা। সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে নেমে পড়েন তিনি। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রমাণ করেছেন ইচ্ছে থাকলে উপায় একটা হয়-ই হয়। তার সফলতা দেখে এখন এলাকার অনেক বেকার যুবক এগিয়ে এসেছেন রক্তদহ বিলের বাঁধে হাঁসের খামার করতে।

মাত্র ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে এ পদ্ধতিতে হাঁসের খামার করে অভাবনীয় সফলতা পেয়ে যান রিপন। হাঁসের খামার থেকে আসা লাভের টাকা দিয়ে নিজের বাড়িতে গড়ে তোলেন হাঁসের হ্যাচারি। নিজের হ্যাচারিতে তিনি এখন তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করছেন। পাশাপাশি সেই বাচ্চা অন্য খামারিদের কাছে বিক্রি করে হচ্ছেন লাভবান। রিপন জানান, অনেকদিন ধরেই হাঁসের খামারের কথা তার মাথায় ঘুরপাক খেলেও তাদের বাড়ি বিল এলাকায় না হওয়ায় হাঁসের খামার গড়ে তুলতে সাহস পাচ্ছিলেন না। একদিন পাশর্্ববর্তী নওগাঁ জেলার আত্রাই হাটে গিয়ে খোলা জলাশয়ে বিলের বাঁধে হাঁস পালন করা দেখে তার মধ্যে এই পদ্ধতিতে হাঁসের খামার করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। অনেক কষ্টে কিছু টাকা জোগাড় করে মাত্র ৫০টি হাঁস কিনে তিনি হাঁসের খামার শুরু করেন।

খোলা জলাশয়ে হাঁস পালন সমর্্পকে রিপন আরো জানান, সাধারণত খামারে আটকে রেখে হাঁস পালনে অনেক বেশি খরচ। খামারে ১টি হাঁসের জন্য যে পরিমাণ খরচ হয়, খোলা বিল এলাকায় সে খরচ অর্ধেকেরও কম হয়। কারণ বিলে হাঁস শামুকসহ নানা খাবার সহজেই পায়। বিলের খোলা জায়গার খাবার খাওয়ার জন্য হাঁস ডিমও দেয় অনেক বেশি। এ ছাড়া হাঁস রাখার জন্য কোনো ঘর তৈরি করতে হয় না। বাঁেধর উপর পলিথিন দিয়ে ঘিরে সামান্য খরচে হাঁস রাখার জায়গা তৈরি করতে হয়। খোলা বিলে ১টি হাঁসে জন্য খরচ হয় সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ১শ' টাকা। ৪ থেকে ৫ মাস বয়স হলে হাঁস ডিম দেয়া শুরু করে। ক্যাম্বেল জাতের প্রতিটি হাঁস একটানা ২৫০ থেকে ২৮০টি পর্যন্ত ডিম দেয়।

বর্ষা মৌসুমের ৬ মাস রিপনের কাটে বিলের বাঁধে, বাকি সময় থাকে হ্যাচারি নিয়ে। হাঁসের ডিম দেয়া শেষ হলে হাঁস ও ডিম বিক্রি করে তার লাভ হয় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা। রিপনকে অনুসরণ করে বর্তমানে রক্তদহ বিল এলাকার বাঁধে খামার করেছে জাকারিয়া, মোতালেব, রুহুল, জাকিরুলসহ ১০ জন বেকার যুবক। এদের প্রত্যেকের হাঁসের সংখ্যা ৩ থেকে ৪শ'র উপরে। হাঁস পালনকারী জাকারিয়া বলেন, লেখাপড়া শিখে চাকরির আশায় বসে না থেকে বেকার যুবকরা ছোটখাট হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলতে পারেন। বর্তমানে যারা বিলের বাঁধ থেকে হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন তারা সবাই কমবেশি লেখাপড়া জানেন।

খোলা জলাশয়ে হাঁস পালন সম্পর্কে আদমদীঘি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এনামুল হক রক্তদহ বিলের বাঁধে হাঁস পালন সম্পর্কে বলেন, বেকার যুবকদের এ ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তারা চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। এ ছাড়া তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেবে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। তিনি আরো বলেন, হাঁসের যেকোনো ধরনের রোগ দেখা দেয়ার আগেই তার বিভাগের লোকজন বিল এলাকায় ওই সমস্ত খামারে গিয়ে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যবস্থা করবে।

এস. এম. নাজমুল হক ইমন, সান্তাহার, বগুড়া

Friday, January 28, 2011

রাজ্জাকের সেচযন্ত্রটি হতে পারে মডেল

রাজ্জাকের সেচযন্ত্রটি হতে পারে মডেল

ফরিদপুর (পাবনা) প্রতিনিধি
ফরিদপুর উপজেলার হাদল গ্রামের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশের মেকানিক্স মোঃ আবদুর রাজ্জাকের (৪০) উদ্ভাবিত নতুন সেচ যন্ত্র পানি সেচ ব্যবস্থাপনায় গত বছর ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে। গত বছর বোরো মৌসুমে উদ্ভাবিত নতুন সেচযন্ত্রের মাধ্যমে দুটি স্কীমে যথাক্রমে ৪৫ বিঘা ও ৩৫ বিঘা জমিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহ করে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করেছে বলে জানা গেছে। তিনি তার উদ্ভাবিত পাম্পযন্ত্রের নাম দিয়েছেন ও.ঝ.উ.অ.জ.(ইরিগ্রেশন সিস্টেম ডিসকভার আবদুর রাজ্জাক)। তার এই সেচযন্ত্রের সাহায্যে রবি মৌসুমে নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি পাওয়া সম্ভব। সাধারণত সেচপাম্প ২৪-২৬ ফুট নিচ থেকে পানি উত্তোলন করতে পারে। কিন্তু এই সেচযন্ত্রটি দ্বারা ৪৫-৫০ ফুট নিচ থেকে পানি উত্তোলন করা সম্ভব। মোটর থেকে পাম্পযন্ত্রটি পৃথক করে ১০ ফুট মাটির নিচে নামানো হয়। এতে অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয় গিয়ার, সেপ, বিয়ারিং বুস, পাইপসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ। এতে কৃষকের অতিরিক্ত ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি সেচ মৌসুমে পানির সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়। আগের তুলনায় জ্বালানি খরচ হয় অর্ধেক। এই যন্ত্রটি গ্যাস, ডিজেল ও বিদ্যুতে চালানো যায়। প্রতি বছর এই অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বোরো ধান চাষসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করা হয়ে থাকে। যার ফলে প্রত্যক্ষভাবে নিরবছিন্ন পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ সময় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সম্ভব হয় না। এছাড়া অতিরিক্ত চাপে মোটর পুড়ে গিয়েও পানি সরবরাহ ব্যববস্থার বিঘ্ন ঘটে। ফলে সঠিক সময়ে ফসল চাষ করা সম্ভাব হয় না। আবদুর রাজ্জাক ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপাড়া করেছেন। তার উদ্ভাবিত যন্ত্রটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ সেচযন্ত্রটি দেখার জন্য ভিড় করছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর ফেল করার কারণে পানি নিয়ে দুর্ভাবনা দূর করার জন্য এই যন্ত্রের আবিষ্কারক আবদুর রাজ্জাকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার সরকার শফিউল আলম জানান, যেসব অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যায় এবং সেচ ব্যবস্থাপনার সমস্যা হয়, সেসব অঞ্চলে তার উদ্ভাবিত যন্ত্রটি ব্যবহৃত হলে কৃষকরা উপকৃত হবেন। অর্থ-সম্পদহীন আবদুর রাজ্জাক বলেন, সাহায্য-সহযোগিতা পেলে কৃষি উপযোগী নতুন নুতন যন্ত্র তিনি উপহার দিতে পারবেন, যা কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে। আবদুর রাজ্জাক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারের জন্য আবেদন করেছেন।
Source: Daily Amardesh,
6th Feb-2010

Thursday, January 27, 2011

সাফল্য : মূলধনবিহীন চেতারার হস্তশিল্প


সাফল্য : মূলধনবিহীন চেতারার হস্তশিল্প
রহিমা আক্তার

জগতের যা কিছু শ্রেষ্ঠ অর্জন তা সম্ভব হয়েছে প্রতিভার কল্যাণে। নারীরা তাদের বুদ্ধি ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে সমাজে তাদের অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ করে তাদের ছোট করে রাখা হচ্ছে। সভ্যতার চরম উত্কর্ষের কালেও নারী তার সাধারণ মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যে কোনো সভ্য সমাজে নারীর অবস্থান অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। আজ শুধু গৃহ সংরক্ষণ ও সন্তান পরিচর্যাই নারীদের একমাত্র দায়িত্ব নয়। তারা পুরুষের মতো সৃষ্টিশীল ও উন্নয়নমূলক কাজ করতে সক্ষম। নারীরা তাদের বুদ্ধি আর আত্মবিশ্বাস দিয়ে তৈরি করছে অনেক অভাবনীয় জিনিসপত্র। আজকের এই নারীর দক্ষতার মধ্যে রয়েছে আলাদা এক বৈচিত্র্য।চেতারা বেগম নোয়াখালীর গ্রামের এক গৃহবধূ, সংসার জীবনে প্রবেশের পর থেকেই ছোটখাটো কুটির শিল্পের কাজ করতেন। এতে করে নিজের পারিবারিক জিনিসগুলোর চাহিদা মিটত এবং তার হাতে কিছু নগদ টাকা আসত। তার শিল্পের সঙ্গে ছিল নকশি শীতলপাটি, হাতপাখা (বাঁশের, কাপড়ের)। চার সন্তানের জননী চেতারা বেগম সন্তানদের দায়িত্ব পালনের অবসরে এসব কাজ করতেন। গ্রামের দৃশ্য গাছপালা ও ফুলের নকশা করতেন শীতলপাটি ও হাতপাখার মাঝে। গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বন্ধ হয়ে যায় তার কুটির শিল্পের কাজ। অবসর সময় তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেত। সময়কে কাজে লাগানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তিনি। তখনি একদিন টিভির একটা অনুষ্ঠানে শুনতে পান, কাগজকে ভাতের মাড়ের সঙ্গে ভিজিয়ে রাখলে তাতে মণ্ড তৈরি হয়। এই কৌশলটা তিনি আয়ত্ত করেন। প্রথমে ছোট ছোট বাটি-ঝাঁকা তৈরি করেন। ২/১টা জিনিস তৈরি করার পর আগ্রহ বেড়ে যায়। এরপর আস্তে আস্তে তিনি কীভাবে কী তৈরি করা যায় তার কৌশল খুঁজতে থাকেন। আমাদের গৃহের ব্যবহারের উপযোগী কিছু আসবাবপত্র তৈরি করতে চেষ্টা করেন। রান্নাঘরের সবজি ও শুকনো জিনিস রাখার জন্য এই মণ্ড দিয়ে রেক তৈরি করেন। পানির ফিলটার রাখার স্ট্যান্ড তৈরি করেন। ফুলদানি ও বড় বড় ঝাঁকা তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গে ভাবেন কীভাবে আরও নতুন নতুন আসবাবপত্র তৈরি করা যায়। একে একে তিনি চেয়ার-টেবিল বানানোর উদ্যোগ নেন এবং সেভাবে ট্রি টেবিল-চেয়ার, টিভির ট্রলি, চাল রাখার বক্স, ট্রাঙ্ক ধরনের বক্স ইত্যাদি তৈরি করেন। বসার জন্য বিভিন্ন আকারের মোড়া বানান। এগুলো শুধু শো-পিস হিসেবে নয়, আমাদের কাঠের তৈরি আসবাবপত্রের মতো ব্যবহারও করা হয়। চেতারা বেগম জানান, গ্রামে গৃহবধূ থাকাকালে কাজের ফাঁকে বাঁশ, বেত ও সুতার কাজ করতে ভালো লাগত। গ্রামের মেয়েদের বিয়ের সময় এগুলোর প্রয়োজন হতো। তখন ওরা এগুলো কিনতে আসত। তখন শিতলপাটি, নামাজের বিছানা, কাপড়ের হাতপাখার খুব কদর ছিল। সর্বপ্রথম ১ জোড়া কাপড়ের নকশা করা হাতপাখা ২০ টাকায় বিক্রি করি। শেষের দিকে এক জোড়া ১২০ টাকাও বিক্রি করেছি। নিখুঁত কাজের ওপর দাম দেয়া হতো। সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় গ্রাম ছেড়ে শহরে আসি। শহরের সাংসারিক কাজ শেষে অবসর সময় কাটানো যায় না। বই পড়া আর টিভি দেখা ছাড়া কোনো কাজ নেই। শহরের বৈদ্যুতিক পাখার জায়গায় হাতপাখার খুব একটা প্রয়োজন হতো না। তারপরও নিজের ব্যবহারের জন্য তৈরি করেছি। একদিন টিভিতে পেপার ও ভাতের মাড়ের সাহায্যে শো-পিস তৈরির কথা শুনি। এরপর এটাকে কাজে লাগাই। প্রথমে ছোট কিছু তৈরি করতে পারাতে আগ্রহ বাড়ে। জিনিসগুলো দেখতে ভালো এবং মজবুত হয়। কীভাবে মণ্ড তৈরি করেন জানতে চাইলে বলেন, ভাতের মাড়ের মাঝে দুই দিন পেপার বা অপ্রয়োজনীয় কাগজগুলো ভিজিয়ে রাখি। দুই দিন পর এগুলোকে চিপে শিলের (পাটার শিল) সাহায্যে থেঁতলে নরম করে আটার মতো করি। এরপর ইচ্ছামত ডিজাইন করি মাটির তৈরি জিনিসগুলোর মতো। মাটির তৈরি জিনিসগুলো ভেঙে যায়, কিন্তু এগুলোকে হাতের সাহায্যে টিপে টিপে শক্ত করে রোদে শুকালে অনেক মজবুত হয়। যত বেশি রোদে দেয়া যায়, এগুলো শুকিয়ে তত হালকা হয়। তবে বড় কিছু তৈরি করতে বেশি কাগজের প্রয়োজন হয় বলে মাঝে মাঝে ভেতরে ছোট ছোট জর্দার কৌটা ব্যবহার করেছি। শুকিয়ে এলে ভাতের মাড়ের সাহায্যে সাদা কাগজ লাগিয়ে তার ওপর বিভিন্ন রং দিয়ে ডিজাইন করে থাকি। এই কাগজের তৈরি আসবাবপত্র আমি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করছি। চেয়ার-টেবিলে দাঁড়ানো বা বসা যায়, মোড়াগুলো যে কোনো কাজে ব্যবহার করা যায়। এগুলোকে একমাত্র পানি থেকে দূরে রাখতে হয়। আসল কথা হলো, এই কাজে কোনো টাকার প্রয়োজন হয় না। শুধু শারীরিক পরিশ্রম ও ফেলে দেয়া জিনিস দিয়ে এগুলো তৈরি করা সম্ভব। এই শিল্প জনপ্রিয়তা পাবে। নিখুঁত হাতে তৈরি করলে এর মাধ্যমে নতুনত্বের ছোঁয়া আসতে পারে।চেতারা বেগম আরও বলেন, এখনও আমাদের দেশে অনেক নারী-পুরুষ আছেন যারা পুঁজির অভাবে কাজ খুঁজে পান না। তবে ধৈর্য ও নিখুঁত হাতের ব্যবহার করলে কাগজের তৈরি এই শিল্প জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। কাঠ, বেত ও স্টিলের আসবাবপত্রের সঙ্গে এই শিল্প একদিন ভালো একটা জায়গা দখল করবে, এটাই প্রত্যাশা চেতারা বেগমের।

Wednesday, January 26, 2011

সিরাজগঞ্জ ও চলনবিলে সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণ: মৌচাষিরা প্রায় ১০কোটি টাকা আয় করেন ।


সিরাজগঞ্জ ও চলনবিলে সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণ: মৌচাষিরা প্রায় ১০কোটি টাকা আয় করেন ।
০০সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা

সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষিরা। এ জন্য শীত মৌসুমের শুরু থেকেই জেলার বেলকুচি,উলস্নাপাড়া, শাহজাদপুর,রায়গঞ্জ, তাড়াশ উপজেলারসহ চলনবিলের বিভিন্ন জায়গায় মৌচাষিরা মধু সংগ্রহ করে মৌচাষিরা প্রায় ১০কোটি টাকা আয় করেন ।

চলনবিলের রায়গঞ্জ, তাড়াশ, উলস্নাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, আত্রাই ও সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, কাজিপুর উপজেলায় পযর্াপ্ত সরিষার ফলন হয়ে থাকে। কৃষি অফিস জানিয়েছে , এবার প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষার ফুলে ছেয়ে গেছে বিস্তৃীর্ণ অঞ্চল।

নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মৌচাষিরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ভাড়া করা সরিষার ক্ষেতসংলগ্ন স্থানে মৌমাছির বাক্সগুলো সারি সারিভাবে সাজিয়ে রেখেছে চাষিরা। চলনবিলের দীঘি সগুনা, গোয়ালগ্রাম, ভেটুয়া, কুসুম্বী, মাকড়শোন, কুন্দইল,মাগুড়া, রুহাই, প্রতাপ, নওগাঁ, শ্যামপুর, তেলীপাড়া, চান্দাইকোনা, বেলকুচিরচালা, শেরপুরসহ বিভিন্ন মাঠে মৌচাষিরা মৌ বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করছে।

এ বছর এ অঞ্চল থেকে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা সম্ভব বলে মৌচাষিরা জানিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের জননী মৌ খামারের চাষি আলমগীর হোসেন জানান, প্রতিটি বাক্সে একটি করে রাণী মৌমাছি রয়েছে। মৌমাছিগুলো সরিষার মধু আহরণ করে রক্ষিত বাক্সে এনে জমা করে। ৫-৭ দিন পর পর বাক্স থেকে চাকগুলো আলাদা করে মধু সংগ্রহ করা হয়। ৫০-৫৫টি বাক্সে গড়ে ৫-৭ মণ করে মধু সংগ্রহ করা যায়। তিনি আরো জানান, সরিষা মৌসুম ছাড়াও তারা লিচু মৌসুম ও সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। তবে সরিষা মৌসুমে মধু আহরণ করে লাভবান হলেও অন্য সময়ে তাদের লোকসান গুনতে হয়।

সাতক্ষীরার মৌচাষি গোলাম মোস্তফা ও আবুল হোসেন ইত্তেফাককে জানান, প্রতিবছর তারা সরিষার মৌসুমে চলনবিল থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ মণ মধু সংগ্রহ করে থাকেন।

মৌচাষিদের অভিযোগ, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ও বাণিজ্যিকভাবে মধু বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো বেশিরভাগ মধু পাশর্্ববতর্ী দেশ ভারত থেকে আমদানি করে থাকে। যে কারণে তারা প্রকৃত দাম থেকে বঞ্চিত হন। গুটিকয়েক কোম্পানি খামারীদের নিকট থেকে ১২০/১৪০ টাকা কেজি দরে মধু ক্রয় করে এবং ২০০-৩০০ কেজি হিসেবে বাজারজাত করে।
Source: Daily Ittefaq, 27 th january-2011

Tuesday, January 25, 2011

মির্জাপুরে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের চাহিদা বেড়েছে

মির্জাপুরে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের চাহিদা বেড়েছে

০০ মির্জাপুর সংবাদদাতা

টাংগাইলের মির্জাপুর উপজেলায় পরিবেশবান্ধব গুটি ইউরিয়া সার প্রয়োগ যন্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৫০ (বাংলা মতি) জমিতে সার প্রয়োগে এই যন্ত্র কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার টাংগাইলের মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে পরিবেশ বান্ধব এই যন্ত্র কৃষকদের ব্যবহার করতে দেখা গেছে। মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি ধান- ৫০ (বাংলা মতি) অধিক ফলনের লক্ষ্যে এই গুটী ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র আবিষ্কার করেছে। কৃষি বিভাগ মির্জাপুর উপজেলায় বিনা মূল্যে ২৫টি যন্ত্র বিতরণ করেছে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার নিখিল চন্দ্র বসাক জানিয়েছেন, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে। এতে সময় কম লাগে, শ্রমিক খরচ ৩০-৪০% কম, ধানের ফলন ২০% বৃদ্ধি হচ্ছে। আগে একরে ১০০-১২০ কেজি সার প্রয়োজন হত এখন লাগছে ৬০-৬৫ কেজি।
Source: Daily Ittefaq, 26th January-2011

ফলের স্বাদ যুক্ত দই: সিকৃবিতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন

ফলের স্বাদ যুক্ত দই:

সিকৃবিতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন

০০ খলিলুর রহমান ফয়সাল

ফলের স্বাদ যুক্ত দই উদ্ভাবন করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরী এন্ড পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আন্জুমান আরা ও প্রভাষক ডাঃ সুদেব সাহা। আম, আপেল ও কমলার স্বাদ যুক্ত উদ্ভাবিত এই দই দুগ্ধ শিল্পের বাজার সমপ্রসারণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা বলেছেন, বর্তমান বাজারে বিভিন্ন প্রকারের দই থাকলেও ফ্রুটস দই তৈরির প্রযুক্তি খুবই কম। সিকৃবি'র এই বিভাগ ফ্রুটস দই তৈরি করে দু্গ্ধ শিল্পে আমূল পরিবর্তন আনলো। ফ্রুটস কেক, ফ্রুটস আইসক্রিম বাজারে সচরাচর দেখা গেলেও ফ্রুটস দই এই প্রথম বাজারজাত করণের উপযোগী করে উদ্ভাবন করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল। গবেষক দলের প্রধান আন্জুমান আরা বলেন 'গরুর দুধের সাথে বিভিন্ন ফলের জুস মিশিয়ে বিভিন্ন স্বাদ যুক্ত দই উৎপাদন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। বাজারে সচরাচর যে দই পাওয়া যায় তার পুষ্টিগুণ অপেক্ষায় এই ফ্রুটস দইয়ের পুষ্টি গুণাগুণ অনেক বেশি ও মানসম্মত।'
বাজারে বর্তমানে দুই ধরনের দই পাওয়া যায়। মিষ্টি দই, অন্যটি টক দই। এই প্রথম দুই ধরনের দই -এর বিপরীতে একটু ভিন্ন স্বাদের দই উৎপাদন করেছে সিকৃবি'র এই বিভাগ। তবে এ সকল দই-এর পুষ্টিগুণ টক ও মিষ্টি দই-এর চেয়ে বেশি। যারা টক ও মিষ্টি দই পছন্দ করেন না তারা এই বিভিন্ন ধরনের ফলের সুগন্ধযুক্ত দই খেতে পারবেন। তাদের এ ক্ষেত্রে এই ধরনের দই গ্রহণে কোন ধরনের অসুবিধা হবে না।
গবেষক দলের সদস্য ডাঃ সুদেব সাহা জানান, 'এই ল্যাবরেটরিতে প্রস্তুতকৃত এই ফ্রুটস দই বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করলে বেশি লাভবান হওয়া যায়।' আনুষ্ঠানিক ভাবে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ভেটেরিনারী এন্ড এ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদের ডিন, প্রফেসর মোঃ সাইফুল ইসলাম, এই নতুন প্রযুক্তির ফ্রুটস দইয়ের উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. মতিয়ার রহমান হাওলাদার, ড. এ এস এম মাহবুবসহ অন্য শিক্ষকমন্ডলী।
Source: Daily Ittefaq

Sunday, January 23, 2011

নতুন পদ্ধতিতে বোরো আবাদে ঝুঁকছেন কৃষক

নতুন পদ্ধতিতে বোরো আবাদে ঝুঁকছেন কৃষক

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জে নতুন পদ্ধতিতে শুরু হয়েছে বোরো আবাদ। নতুন পদ্ধতিতে বীজতলায় পানি না হলেও চারা উত্পাদনে কৃষকদের আর বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। এ পদ্ধতিতে উত্পাদিত বীজ জমিতে রোপণ করলে ফলনও বেশি পাওয়া যায়। আবার বীজধানও কম লাগে।
ধান উত্পাদনের পূর্বশর্ত হলো বীজ থেকে সুস্থ-সবল চারা উত্পাদন করে তা সঠিক সময়ে রোপণ করা আর সেই লক্ষ্যেই মানিকগঞ্জে এবার শুরু হয়েছে নতুন পদ্ধতিতে বোরো ধানের আবাদ। জমিতে পানি না উঠায় প্রতি বছর কৃষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় এ বীজতলা তৈরি করতে। আর এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর মানিকগঞ্জ। এ পদ্ধতিতে বর্ষা বা সেচের পানি কোনোটির ওপর নির্ভর না করে যে কোনো জমিতে অঙ্কুরিত বীজ মাটিতে ছিটিয়ে পলিথিন পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। এতেই উত্পাদন হয় সুস্থ-সবল ধানের চারা। ১০/১২ দিন পরে পলিথিন উঠিয়ে দিলে চারাগুলো সোজা হয়ে ওঠে। এই পদ্ধতিতে মাত্র ২০/২৫ দিনের মধ্যেই চারা রোপণের উপযোগী হয়ে ওঠে। রোপণের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চারাগুলো পলিথিনে ঢেকে রাখতে হয়। আগে যেখানে ১ একর জমিতে ৬০ কেজি বীজ ধান লাগত, এখন এ পদ্ধতিতে মাত্র ১০ কেজি বীজধানই যথেষ্ট। মানিকগঞ্জ জেলায় এ বছর ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে জেলার কৃষকরা শুরু করে দিয়েছেন বোরো ধান রোপণের কাজ। মানিকগঞ্জ সদর থানার কেওয়ারজানি গ্রামের মোতালেব মাস্টার জানান, তিনি গত ২ বছর যাবত এই পদ্ধতিতে ৩০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন।কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম জানান, আমাদের এই এলাকায় প্রতি বছর ধানের চারার সঙ্কট হতো, এই সঙ্কট নিরসনে আমিই প্রথম মানিকগঞ্জে এই পদ্ধতিতে বীজ উত্পাদন করে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি। এতে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন এই এলাকার কৃষকরা।
এই পদ্ধতিতে একদিকে বীজধান কম প্রয়োজন হচ্ছে, অপর দিকে ধানও ৩ গুণ বেশি উত্পাদিত হচ্ছে।
Source: Daily Amardesh

Saturday, January 22, 2011

আইসিডিডিআরবি'র আবিষ্কার: সহজেই ধরা পড়বে কালাজ্বর

আইসিডিডিআরবি'র আবিষ্কারসহজেই ধরা পড়বে কালাজ্বর
কালাজ্বরের প্রচলিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতি ঝুঁকিপূর্ণ, ব্যথাদায়ক, জটিল ও ব্যয়বহুল। আর এসব মাথায় রেখে রোগীর মূত্রের নমুনা থেকে কালাজ্বর নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন আইসিডিডিআরবির পরজীবীবিদ্যা গবেষণাগারের একদল বিজ্ঞানী। গবেষণার বিস্তারিত জানাচ্ছেন তৌহিদ এলাহীপ্রচলিত পদ্ধতিতে কালাজ্বর নির্ণয় করতে হয় অস্থিমজ্জা, প্লিহা বা লসিকা থেকে কোষসমষ্টি বা কলা সংগ্রহ করে। এখান থেকে নমুনা নিয়ে লেসমেনিয়া নামের একটি পরজীবীর অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হয় কালাজ্বর। নমুনা নেওয়ার সময় ব্যবহার করতে হয় বিশেষ সিরিঞ্জ। ওটা যথেষ্ট বেদনাদায়ক। উপযুক্ত সরঞ্জামাদি ছাড়া এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না। সিরিঞ্জ ব্যবহৃত হওয়ায় অন্য জীবাণুঘটিত রোগের সংক্রমণের আশক্সকাও আছে। সময় লাগে অনেক বেশি। আর তাই মূত্রের নমুনা থেকে আবিষ্কৃত রোগ নির্ণয় পদ্ধতিটি কালাজ্বরের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য দারুণ এক আশা জাগানিয়া খবর। এমনকি মূত্রের নমুনা থেকে কালাজ্বর নির্ণয়ের পদ্ধতি আর কোথাও প্রচলিত নেই।
গবেষণা দলের প্রধান আইসিডিডিআরবির পরজীবী বিজ্ঞান ল্যাবরেটরির গবেষক গোলাম মুসাবি্বর খান জানান, কালাজ্বরের দুটো পরজীবী প্রজাতি লেসমেনিয়া ডনোভানি, লেসমেনিয়া চাগাসি। এদের মধ্যেই কেবল পাওয়া যায় '৩৯ অ্যামাইনো এসিডবিশিষ্ট' পরিবর্তিত জিনেটিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রোটিন অণু। লেসমেনিয়া ছাড়া অন্য কোনো পরজীবী বা অণুজীবে এটি পাওয়া যায় না। আক্রান্ত রোগীর মূত্রের নমুনায় খুঁজে পাওয়ার ওপর ভিত্তি করেই উদ্ভাবন করা হয়েছে নতুন পদ্ধতিটি। মূত্রের নমুনা ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় পদ্ধতির নাম 'আরকে-৩৯ স্ট্রিপ টেস্ট'। এটি ব্যবহার করে রোগীর সেরাম, প্লাজমা বা পাতলা জলীয় রক্তরস অংশের মাধ্যমে আরেকটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। তবে তাতে সুই-সিরিঞ্জের ব্যবহার আছে। ওটা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু মূত্রের নমুনা থেকে রোগ নির্ণয় পদ্ধতিতে ১০ মিনিটেই জানা যাবে কালাজ্বরের পরজীবীর উপস্থিতি।
কালাজ্বরের এ গবেষণায় প্রথমে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এক শ স্বেচ্ছাসেবী রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে ওই ১০০ রোগীকে প্রথমে রক্তরস বা প্লাজমা ও সেরামে টেস্টের মাধ্যমে কালাজ্বর আক্রান্ত হিসেবে নিশ্চিত করতে হয়েছে। পরে তাদের মূত্রের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা গেল তাদের ওই নমুনার মাধ্যমেও কালাজ্বরের উপস্থিতি বলে দেওয়া সম্ভব। এ গবেষণা আইসিডিডিআরবির মহাখালী শাখায় পরজীবীবিদ্যা গবেষণাগারের পাশাপাশি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায়ও সম্পন্ন হয়েছে।
গোলাম মুসাবি্বর খান জানান, রোগীর মূত্রের নমুনা আইসিডিডিআরবির পরজীবী বিজ্ঞান গবেষণাগারে আনতে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়েছে। পাশাপাশি আনা হয়েছে রক্তের নমুনাও। প্রক্রিয়াজাতকরণের পর রসের নমুনায় এসিডিটি কমাতে একটি বিশেষ দ্রবণ যোগ করতে হয়েছে। এরপর প্রচলিত পদ্ধতিতে ওই নমুনায় 'অ্যান্টি আরকে-৩৯ ইমিউনোগ্লোবিউলিন' অণু খুঁজে পেতে লাগে ৩০ মিনিট। নতুন পদ্ধতিতে ১০ মিনিটেই 'অ্যান্টি আরকে-৩৯ ইমিউনোগ্লোবিউলিন' অণু খুঁজে পাওয়া গেছে। এতে আলাদা কোনো দ্রবণও যোগ করতে হয়নি। পরে প্রাপ্ত উপাত্ত পরিসংখ্যানের সফটওয়্যার এসপিএসএস ব্যবহার করেও নির্ভুল ফল পাওয়া গেছে।
সহজে নমুনা সংগ্রহের কারণে এ পদ্ধতিটি খুবই উপযোগী। বিশেষ করে শিশু বা বৃদ্ধ রোগীদের অস্থিমজ্জা, প্লিহা সুই-সিরিঞ্জ দিয়ে ছিদ্র না করে নমুনা সংগ্রহ অনেক সহজ, আরামদায়ক। তবে এ গবেষণার ছোটখাটো কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও স্বীকার করলেন গবেষকরা। গবেষক শফিউল আলম জানান, প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এটি ৯৫ শতাংশ কার্যকর। দ্রুত এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এর জন্য আরো অনেক রোগী নিয়ে বড় মাপের গবেষণার দরকার।
গবেষণা দলে আরো ছিলেন, মিল্কা প্যাট্রিসিয়া পোদ্দার, মাকাতো ইতোহ, কাজি এম জামিল, রশিদুল হক, ইউকিকো ওয়াগাত সুমা। জাপান-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগের এ গবেষণার অর্থায়ন করেছে জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গবেষণার বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতা করেছেন_পরজীবী গবেষক দেবাশীষ ঘোষ, নাজমুল হুদা, এইচ এম রুবায়েত এলাহী, শারমিনা দেলোয়ার। আইসিডিডিআরবির পরজীবীবিদ্যা গবেষণাগার ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাপানের আইচিয়ে মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সুকুবা। এ গবেষণাকর্ম নিয়ে ২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর বিজ্ঞান সাময়িকী বায়োমেড সেন্ট্রালের 'প্যারাসাইটস অ্যান্ড ভেক্টরস'-এ একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
এক নজরে কালাজ্বরকালাজ্বর তথা ভিসেরাল লেসমোনিয়াসিস একটি পতক্সগবাহিত পরজীবীঘটিত রোগ।রোগটির বাহক বেলে মাছি। তাই দরিদ্ররাই বেশি আক্রান্ত হয়।বাংলাদেশ সরকারের ডিজিজ কন্ট্রোল ইউনিটের সূত্রমতে, ১৯৯৪-২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭৩ হাজার ৮৬৯ জন কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়। ২০০৮ সালে আক্রান্ত হয় চার হাজার ৮২৪ জন এবং মারা যায় ১৭ জন।এই মুহূর্তে কালাজ্বরের ঝুঁকিতে আছে আরো প্রায় ২০ লাখ মানুষ।Source: Daily Kalerkantho

বীজ সংরক্ষণে শতবর্ষী চয়েন বানু

বীজ সংরক্ষণে শতবর্ষী চয়েন বানু

ধান বীজসহ বিভিন্ন বীজ সংরক্ষণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণসহ গবেষণা চলছে দীর্ঘদিন। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়াই সনাতন পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করে আসছেন বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার তালশন গ্রামের চয়েন বানু। মাটির তৈরি কুঠরীতে নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বছরের পর বছর ধান, গম, যব, কলাইসহ যেকোনো শস্য বীজ সংরক্ষণ করেন চয়েন বানু। তার কাছে থেকে মাটির কুঠরীতে বীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি শিখে বর্তমানে উপকৃত হচ্ছেন তালশনসহ আশেপাশের গ্রামের হাজার হাজার কৃষক। চয়েন বানুর মাটির তৈরি এই কুঠরিতে সব ধরনের বীজ ছাড়াও যেকোনো ধরনের খাদ্যদ্রব্যও রাখা যায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত। এলাকার একাধিক কৃষকের কাছে থেকে জানা গেছে, চয়েন বানুর প্রযুক্তিতে তৈরি করা মাটির কুঠরীতে বীজ সংরক্ষণ করলে বীজের গুণগতমান ভাল থাকে। এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা বীজে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ সুস্থ চারা পাওয়া যায়।

চয়েন বানু। বয়স ১০২ বছর ছুঁই ছুই করছে। এখনো দিন যাপন করছে সুস্থভাবে। কোনো বড় ধরনের রোগ-বালাই হয়নি কোনোদিন। এই বয়সেও থেমে নেই তার চলার গতি। কখনো বসে থাকেন না। বসে থাকলে নাকি শরীরে ব্যথা হয়। শারিরীক গঠন দেখে অবশ্য বয়সটা অনুমান করা কঠিন। বীজ সংরক্ষণের সুফল কুফলের মত নিজের জীবনের চলার পথে সুফল কুফল সমর্্পকে অত্যন্ত সচেতন তিনি। অলসতা তাকে যেন স্পর্শ করতে পারে না। রাতে খাবারের পরই ঘুম। ভোর রাতে উঠে তাহাজ্জদ নামাজ আদায় এবং কোরান তেলাওয়াত করেন। ঘর ঝাড়- দেয়া, থালা-বাসন মাজা, তরিতরকারি কাটা ইত্যাদি সাংসারিক কাজের পাশাপাশি গাছপালা ও জীবজন্তুর পরিচর্যা করা তার দৈনন্দিন কাজ। ছোটবেলা থেকেই তিনি ঢেঁকিতেই ধান ছাঁটেন। আজো সংসারের পুরো খোরাকির চালের জোগাড় হয় ঢেঁকিতে ছেঁটে। এছাড়া যাঁতায় গম পিষে আটা তৈরি করেন খাবারের জন্য।

চয়েন বানু বীজ সংরক্ষণের নিরপদ ব্যবস্থা মাটির তৈরি এই কুঠরী সম্পর্কে বলেন, মাটির কুঠরী তৈরি করা শিখেছেন তার মায়ের কাছ থেকে। এ কুঠরী তৈরি করতে তেমন কোনো খরচ নেই। প্রয়োজন শুধু পরিশ্রম আর কৌশলের। কুঠরী তৈরির উত্তম সময় হল কার্তিক থেকে অগ্রাহায়ণ মাস পর্যন্ত। প্রথমে কালো দো-অাঁশ মাটি ভিজিয়ে শোধন করে নিতে হয় টুথপেস্টের মত। তারপর সেই মাটির সাথে খড়ের কুচি, ধানের চিটা এবং সামান্য পরিমাণ তুষ মিশিয়ে নিতে হয়। এরপর প্রথমে কুঠরীর তলদেশ তৈরি করতে হয়। তলদেশ তৈরির পর কমপক্ষে ৩ দিন রোদে শুকাতে হয়। পরবর্তীতে কুপের পাটার মত করে ৩ থেকে ৪ দিন পর পর পাটা তৈরি করে একটির পর আর একটি বসাতে হয়। অবশেষে মুখের দিকে সরু করে আনতে হয় এবং মাপ মত ঢাকনা তৈরি করতে হয়। কুঠরী বিভিন্ন আকৃতির বানানো যায়। ছোট, মাঝারী ও বড় চৌকোনা। বীজ সংরক্ষণ ছাড়া ও বড় আকৃতির একটি কুঠরীতে ৩০ থেকে ৪০ মণ চাল রাখা যায়। তিনি জানান, এই পদ্ধতি তৈরি করা কুঠীরতে সাধারণত বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। এ কারণে দীর্ঘদিন বীজ রাখলে বীজের কোনো ক্ষতি হয় না।

আগের দিনে অধিকাংশ মানুষ কাঁচা বাড়ি অর্থাৎ খড়ের ছাউনি দেয়া ঘরেই বেশি বাস করত। ওই সকল খড়ের ঘরে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকত বেশি। সে কারণে তখনকার দিনে মাটির কুঠরীর বেশ কদর ছিল। কারণ ঘড় পুড়ে গেলেও কুঠরীর মধ্যে রাখা জিনিসের কোনো ক্ষতি হত না। চয়েন বানু জোর দিয়ে বলেন, বর্তমানে ধান-চাল রাখার জন্য বিভিন্ন আধুনিক ব্যবস্থা হওয়ায় মাটির কুঠরীর কদর কমে গেলেও বীজ সংরক্ষণের এর বিকল্প নেই বলে আমার মনে হয়।

চয়েন বানু আরো বলেন, শুধুমাত্র কুঠরীতে বীজ রাখলেই ভাল বীজ পাওয়া যায় না। বীজ সংরক্ষণের জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। ভাল বীজ না হলে ভাল ফসল পাওয়া যায় না। প্রথমে পুষ্ট ও দানাদার বীজ বেছে নিতে হয়, খেয়াল রাখতে হয় বীজ যেন ভেজা না হয়। এ কারণে কুঠরীতে রাখার আগে সব ধরনের বীজ ভালভাবে শুকিয়ে নিতে হয়। বীজে যেন পোকা না থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়।

উপজেলার জিনইর গ্রামের কৃষক মেহেদী হাসান জানান, চয়েন বানুর সংরক্ষণ করা ধান বীজ ব্যবহার করে তিনি আশাতীত ফলন পেয়েছেন। তিনি নিজেও চয়েন বানুর তৈরি করা কুঠরীর মত করে কুঠরী তৈরি করে বীজ সংরক্ষণ করছেন। তালশন গ্রামের আরেক কৃষক নুর ইসলাম বলেন, শীত মৌসুমে ইরি-বোরো ধানের বীজ থেকে বেশি ভাগ সময় চারা তৈরি কঠিন হয় কিন্তু চয়েন বানুর কুঠরী পদ্ধতিতে ধান সংরক্ষণ করলে এ সমস্যা থাকে না।

আদমদীঘি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রওশন জামাল বলেন, চয়েন বানু যে পদ্ধতি ব্যবহার করে বীজ সংরক্ষণ করছেন তা সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত। তিনি যে পাত্রে বীজ রাখেন তা বায়ু প্রতিরোধক হওয়ার কারণে তার পাত্রের বীজ নষ্ট হয় না। তার এ পদ্ধতি অনুসরণ করে আশপাশ গ্রামের আরো অনেক কৃষক উপকৃত হচ্ছে। ফলে চয়েন বানুর এ উদ্যোগকে উৎসাহিত করার ব্যাপারে সব ধরনের সহয়তাও দেয়া হবে।

-এস. এম. নাজমুল হক ইমন, বগুড়া
Source: Daily Ittefaq

Wednesday, January 19, 2011

বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় সম্ভব

বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় সম্ভব:
পাবনায় দুই সহোদরের 'দোতলা কৃষি' পদ্ধতি উদ্ভাবন
০০ পাবনা সংবাদদাতা

জেলার আটঘরিয়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক কৃষিবিদ জাফর সাদেক ও তার সহোদর বিশ্বব্যাংকের সাবেক কনসালট্যান্ট সৌখিন জ্যোতির্বিদ মো:আব্দুল্লাহ সাদেক দেশের প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থার বিপরীতে 'দোতলা কৃষি' পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।
তাদের উদ্ভাবিত এই নতুন পদ্ধতি বাংলাদেশে চালু হলে কৃষিক্ষেত্রে বার্ষিক গড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা বা ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়তি আয় হবে বলে জানা গেছে। কৃষিবিদ জাফর সাদেক তাদের এই উদ্ভাবনে তিনটি মাঠ গবেষণা পরিচালনা করে সফলও হয়েছেন।
কৃষিতত্ত্ব ও জ্যোতির্বিদ্যার সফল প্রয়োগে তারা এই 'দোতলা কৃষি' পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এক্ষেত্রে উদ্ভিদের ২৪ ঘন্টার খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় নূ্যনতম ৮ ঘন্টাব্যাপী সূর্যালোকের প্রয়োজনীয়তার কৃষি তাত্তি্বক সূত্রকে মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। একই জমিতে একই সময়ে ভিন্ন উচ্চতায় দু'টি ভিন্ন ফসল ফলানোর পদ্ধতিকেই তিনি 'দোতলা কৃষি' পদ্ধতি নামে অভিহিত করেছেন।
রবিবার পাবনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষিবিদ জাফর সাদেক তাদের দুই ভাইয়ের উদ্ভাবিত 'দোতলা কৃষি' পদ্ধতি সম্পর্কে সংবাদকর্মীদের অবহিত করেন। সংবাদ সম্মেলনে 'দোতলা কৃষি' সম্পর্কে জানানো হয়, '২০০৮ সালের মে মাস হতে ২০০৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১৪ মাসব্যাপী প্রাথমিক গবেষণায় কৃষিবিদ জাফর সাদেক নিশ্চিত হন যে, বাংলাশের যে কোন স্থানে যে কোন আকারের ও আকৃতির জমিতে ঠিক উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ভূমি হতে ৫ ফুট উঁচুতে, ৪ ফুট চওড়া ও ১৩ ফুট পরপর মাচা নির্মাণ করলে জমিতে অনধিক আড়াই ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি ফসল এবং মাচায় লতা জাতীয় অন্য ফসল আবাদ করা সম্ভব।'
সম্মেলনে আরো জানানো হয়, কৃষিবিদ জাফর সাদেক ও তার সহোদর সৌখিন জ্যোতির্বিদ আব্দুল্লাহ সাদেক দোতলা কৃষি উদ্ভাবনে তিনটি মাঠ গবেষণা পরিচালনা করেছেন। তারা পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামের মো: রওশন আলীর জমিতে মাচায় কভারক্রপ হিসিবে পটল ও মাটিতে বেসক্রপ হিসেবে মরিচ আবাদ করে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করেন এবং সিরাজগঞ্জের মাচার ছায়ায় বেসক্রপ হিসেবে প্রতি বিঘায় মিনিকেট জাতের ২২ মণ ধান ফলান।
এছাড়া নওগাঁ জেলার বদলগাছি ইউনিয়নের ডাঙ্গিসারা গ্রামের দীনেশ সিংয়ের ৭ কাঠা জমিতে মাচায় লাউ, মাটিতে বিআর-২৮ জাতের ধান আবাদ করেন। ওই ৭ কাঠা জমিতে ধানের ফলন পাওয়া যায় ৮ মণ বা বিঘায় ২৩ মণ। যা জাতীয় গড় ফলনের সমান। সেই সঙ্গে ৭ কাঠা জমিতে কভারক্রপ হিসেবে ২১৫টি লাউ উৎপাদিত হয়। আমন মৌসুমেও একই জমিতে বিনা-৭ জাতের ধান আবাদ করে সাড়ে ৬ মণ ধান ফলান, যা বিঘা প্রতি দাঁড়ায় ১৮ মণ এবং কভারক্রপ হিসেবে মাচায় ২৪৯টি লাউ আবাদ করেন, যা বিঘা প্রতি দাঁড়ায় ৭২০টি।
সাদেক ভ্রাতৃদ্বয় পরিচালিত গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, দোতলা কৃষি পদ্ধতিতে মাচার ক্ষেত্রফল জমির মোট পরিমাণের ২৫% হওয়ায় একই জমি ব্যবহারগত দিক দিয়ে ২৫% বেড়ে যায়। গবেষণায় তারা দেখিয়েছেন, এক বিঘা জমির কভারক্রপের (মাচা) থেকে উৎপাদিত ফসলের মূল্য দাঁড়ায় সাড়ে ১৩ হাজার টাকা বা হেক্টরে ১ লাখ টাকা। এ হিসেবে বাংলাদেশের মোট ৮২.৯০ লক্ষ হেক্টর আবাদি জমির ২৫% বা ২০.৭৩ লক্ষ হেক্টর জমিতে মাচায় লতা জাতীয় ফসল চাষ করে বার্ষিক ২০ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা বা ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাড়তি আয় করা সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষিবিদ জাফর সাদেক তাদের দুই ভাইয়ের উদ্ভাবিত 'দোতলা কৃষি' পদ্ধতি দেশব্যাপী চালু করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি ও আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
Source: Daily Ittefaq, 20th January-2011

গোবিন্দগঞ্জের লতিফের বালাইনাশক ওষুধ সাড়া ফেলেছে

গোবিন্দগঞ্জের লতিফের বালাইনাশক ওষুধ সাড়া ফেলেছে
০০ গোবিন্দগঞ্জ সংবাদদাতা
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের প্রতিভাবান কৃষক আব্দুল লতিফ দেশীয় গাছ-পালা দিয়ে বালাইনাশক ওষুধ তৈরি করে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছে। দেশের প্রচলিত কীটনাশক ব্যবহার না করে এ এলাকার প্রায় ২শ' কৃষক ১ হাজার ৮শ' বিঘা জমিতে আবদুল লতিফের তৈরি ভেষজ কীট ও বালাইনাশক ব্যবহার করে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়ায় ক্রমেই অন্য কৃষকরা উক্ত বালাইনাশক ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়নের বাগদা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ। এসএসসি পাসের পর কারিগরি শিক্ষার জন্য টেকনিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে আর পড়াশুনা শেষ করতে পারেননি। পরবর্তীতে তিনি কৃষি কাজে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। অবিবাহিত লতিফ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গাছ-পালা, লতা-গুল্ম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উলেস্নখিত ভেষজ কীট ও বালাইনাশক আবিষ্কার করেন। লতিফ জানান, পরিমাণ মত নিমপাতা, নিম গাছের অংশ, নিমের বীজ, তুলশী পাতা, মেহগনি গাছের বীজ, আতা গাছের পাতা মিশিয়ে পরিবেশবান্ধব এই ভেষজ কীট ও বালাইনাশক ওষুধ তৈরি করা হয়েছে। আর এ কীটনাশক তৈরির কাজে কৃষি অফিস থেকে পাওয়া ভর্তুকির ১ হাজার টাকা দিয়ে বিভিন্ন ওষধি গাছের চারা কিনে বাড়ির পাশে, ঘরের কোণায় গড়ে তুলেছেন ভেষজ বাগান। আবদুল লতিফ বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে দেশে প্রচলিত কীটনাশক ব্যবহারে কৃষককে ৭শ' টাকা থেকে ৮শ' টাকা ব্যয় করতে হয়। কিন্তু তার তৈরি কীটনাশক প্রতিবিঘায় প্রয়োগে মাত্র ৬০ টাকা খরচ হয়। তবে তিনি এবার কৃষকদের মাঝে ১৮শ' বিঘা জমিতে প্রয়োগের জন্য বিনামূল্যে ভেষজ কীটনাশক প্রদান করেন। এলাকার কৃষকদের মতে প্রতিভাবান এই কৃষককে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিলে তিনি দেশের কল্যাণে কৃষি খাতে ভাল অবদান রাখতে পারবেন।
কাটাবাড়ী ইউনিয়নের বোগদা কলোনীর কৃষক আহম্মদ আলী বলেন, বর্তমান রোপা আমন মৌসুমে তার ১২ বিঘা ধানের জমিতে মাজরা পোকা, খোলপচা রোগ দেখা দিলে দেশের বিভিন্ন কোম্পানীর তৈরি ওষুধ ব্যবহার করি। তাতেও ফল না পেয়ে প্রতিবেশীর পরামর্শ মত আব্দুল লতিফের তৈরি ভেষজ কীটনাশক ব্যবহার করি। এরপর থেকে লক্ষ্য করছি ক্ষেতে কোন পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই নেই। বর্তমানে জমির ধানও বেশ ভাল হয়েছে।
কাটাবাড়ী ইউনিয়ন বস্নকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুল ইসলাম ও জিয়াউল হক জিয়া বলেন, আমরা নিজে মাঠ ঘুরে দেখেছি, ভেষজ কীটনাশক ব্যবহারকারী কৃষকদের কারো ক্ষেতেই কোন রোগ-বালাই নেই।
Source: Daily Ittefaq, 20th January-2011

Tuesday, January 18, 2011

শাহাবুদ্দিনের পাওয়ার কন্ট্রোল মোবাইল দিয়েই চালু বা বন্ধ হবে গাড়ি

শাহাবুদ্দিনের পাওয়ার কন্ট্রোল মোবাইল দিয়েই চালু বা বন্ধ হবে গাড়ি

০০ খালেদ আহমেদ ০০

একটি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে যদি আপনার গাড়ি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চালু বা বন্ধ করা যায়, তা হলে কেমন হয়? এক বাক্যে আপনি বলবেন_অবশ্যই ভালো। তেমনি একটি পাওয়ার কন্ট্রোল ডিভাইস তৈরি করেছেন শাহাবুদ্দিন নামের এক তরুণ। তার দাবি, পাওয়ার কন্ট্রোল ডিভাইস বা শক্তিনিয়ন্ত্রক যন্ত্র নামের এই যন্ত্রের সঙ্গে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অনুমতি পেলে যেকোনো স্থান থেকে বিদু্যৎচালিত সব যন্ত্র চালু ও বন্ধ করা সম্ভব। বিদ-্যতের অপচয় রোধ, গাড়ি চুরি ঠেকানো ইত্যাদি কাজে এই যন্ত্র কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। শাহাবুদ্দিনের তৈরি যন্ত্রটি ১২ ইঞ্চি বাই ৮ ইঞ্চি আকারের। বিস্তারিত তথ্য গোপন রেখে তিনি জানান, কিছু ছোট যন্ত্রপাতি দিয়ে এটি তৈরি। বানাতে খরচ পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। প্রয়োজনীয় অর্থ ও আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের সুযোগ পেলে যন্ত্রটি আরও ছোট আকারে ও কম মূল্যে তৈরি করা সম্ভব। তার যন্ত্রটি কোনো একটি যন্ত্র চালু ও বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করা যায়। আবার পুরো বাড়ির বৈদ-্যতিক যন্ত্র চালু ও বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করা যায়। এ ক্ষেত্রে যে যন্ত্রটি চালু বা বন্ধ অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সেটির সঙ্গে শক্তি নিয়ন্ত্রক যন্ত্রটি যুক্ত করতে হয়। যন্ত্রটি যুক্ত করা হলে সেটি একটি কোড নম্বর নির্দিষ্ট (যন্ত্রের মালিকের) মোবাইল ফোন নম্বরে পাঠিয়ে দেয়। ওই নম্বরটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টিপে নির্দিষ্ট যন্ত্রটি বা যানবাহন চালু ও বন্ধ করা হয়। তবে প্রযুক্তিটি চুরির ভয়ে এর কার্যকারিতার বিস্তারিত বর্ণনা এখন প্রকাশ করতে চাননি শাহাবুদ্দিন। মেহেরপুরের গাঙনি উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের দরিদ্র এক কৃষক পরিবারে শাহাবুদ্দিনের জন্ম। বাবা রহমতউলস্নাহ ও মা হামিদা খাতুন। ২০০৩ সালে গাঙনি ভোকেশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাশ করেন শাহাবুদ্দিন। পারিবারিক দৈন্যের কারণে আর পড়াশোনা বেশিদূর এগোয়নি। কিন্তু শৈশব থেকেই আবিষ্কারের নেশা পেয়ে বসে তাকে। শাহাবুদ্দিন জানান, বিদুৎশক্তি দিয়ে কত কিছু চলছে। আবার এক সুইচেই সব চালু বা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি অবাক করতো। ওই শক্তির উৎস খুঁজতে খুঁজতেই তার এই আবিষ্কার। ঢাকায় দুই বছর চাকরি করার পর গ্রামে ফিরে মায়ের নামে 'হামিদা হার্ডওয়ার অ্যান্ড ইলেকট্রিক ওয়ার্কশপ' খোলেন। সেখানে বসে অন্যান্য কাজ করার পাশাপাশি তার এই যন্ত্রের উন্নয়নে কাজ করে চলছেন।

আবিষ্কারের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে শাহাবুদ্দিন তার উদ্ভাবিত যন্ত্রের বাণিজ্যিক বিক্রি ও উদ্ভাবন বন্ধ রেখেছেন। তিনি জানান, এই যন্ত্রটি সেচযন্ত্রে লাগানো থাকলে শীতকালে ঠান্ডায় কষ্ট করে জমিতে গিয়ে সেচযন্ত্র চালু করতে হবে না। ঘরে বসেই চালু ও বন্ধ করা যাবে। একইভাবে মোবাইল ফোনের সুইচ টিপে বহু দূর থেকেই লিফটসহ বৈদু্যতিক শক্তিচালিত সব যন্ত্র, মোটরসাইকেল, বাস, ট্রাক ইত্যাদি যানবাহন এই যন্ত্রের সাহায্যে চালু ও বন্ধ করা সম্ভব। বাজারের যেসব দূর-নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র পাওয়া যায়, সেগুলোর বেশিরভাগের কার্যকারিতা নির্দিষ্ট স্বল্প দূরত্বের মধ্যে। কিন্তু এই শক্তি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করে। তাই এর কার্যক্ষমতার আওতা বিস্তৃত। শাহাবুদ্দিনের ইচ্ছা_অর্থ, আধুনিক যন্ত্রাংশ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অনুমতি পেলে এই যন্ত্রটির বাণিজ্যিক উৎপাদন ও সরবরাহ করা সম্ভব। এ বিষয়ে তিনি সরকারের সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন।
Source: Daily Ittefaq, 14th January-2011

Monday, January 17, 2011

কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিনার সাফল্য

কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিনার সাফল্য

বিনাতে বার্ষিক কর্মশালার উদ্বোধন

০০বাকৃবি সংবাদদাতা, জানুয়ারি ১৬, ২০১১

লবণসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন, বায়োফার্টিলাইজারের ব্যবহারসহ ৪৭ টি উন্নতজাতের খাদ্যশস্যের জাত উদ্ভাবন করে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। শস্য উৎপাদনে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি গবাদিপশু, পোলট্রি ও মৎস্য সম্পদেও পরমাণু শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বিনাতে এ্যানিম্যাল সাইন্স বিভাগ চালু করতে হবে। সৌর শক্তিকে কাজে লাগানোর প্রয়াস চালাতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান প্রযুক্তি কৃষকদের হাতে সমপ্রসারণ করতে হবে। শনিবার সকালে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তা ও কৃষিবিজ্ঞানীরা এসব কথা বলেন।

জানা যায়, গত এক বছরের গবেষণা কর্মকান্ড নিয়ে আয়োজিত ৫দিন ব্যাপী এ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিনা'র মহাপরিচালক ড. এম.এ সাত্তারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ-৪ এর সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম.এ সাত্তার মন্ডল। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিনা'র পরিচালক (গবেষণা) ড. আব্দুস সালাম, গবেষণা সমন্বয়ক আব্দুর রব হাওলাদার, কৃষক প্রতিনিধি মো. নজরুল ইসলাম খান ও মো. ইয়ার উদ্দিন। ৫দিন ব্যাপী এ কর্মশালায় ১০ টি বৈজ্ঞানিক সেশনের মাধ্যমে ৮ টি গবেষণা বিভাগের অধীনে প্রায় শতাধিক চলমান গবেষণা প্রকল্পের প্রবন্ধ সমূহ উপস্থাপন করা হবে। উলেস্নখ্য, কর্মশালাটি শেষ হবে আগামী ১৯ জানুয়ারি বুধবার ।
Source:

Thursday, January 13, 2011

গোপালপুরে সালাউদ্দীনের কৃষিযন্ত্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে


গোপালপুরে সালাউদ্দীনের কৃষিযন্ত্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে

০০ গোপালপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা

গোপালপুরের ক্ষুদে কৃষি বিজ্ঞানী গাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দীন বহুমুখি কৃষি যন্ত্র উদ্ভাবন করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ যন্ত্রের নাম দেয়া হয়েছে ফার্মারস হ্যান্ড পাওয়ার মেশিন। স্বল্প দামের এবং হালকা ওজনের সহজেই বহনোপযোগী এ মেশিন দিয়ে একজন কৃষক তার প্রয়োজনীয় সব কাজই খুব দ্রুত এবং সুচারুরুপে সম্পন্ন করতে পারবে। এ হ্যান্ড পাওয়ার মেশিন দিয়ে জমিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সব ধরনের শস্য বীজ রোপণ, সুষম সার ছিঁটানো, পোকামাকড় দমনে সঠিক মাপে কীটনাশক ও বিষ প্রয়োগ, ফসলী জমিতে সেচ প্রদান, আগাছা নিড়ানি দেয়া, ফসল পরিবহন, মিটার পদ্ধতিতে ফসলের ওজন নিরুপণ এবং বিদু্যৎ উৎপাদনের জন্য জেনারেটর মেশিনের কাজ করবে।

গাজী মোহম্মদ সালাউদ্দীনের বাড়ি গোপালপুর উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়নের জোতগোপাল গ্রামে। তার পিতার নাম গোলাম কিবরিয়া। সালাউদ্দীন জানান, ছোটকাল থেকেই তার মধ্যে আবিস্কারের নেশা ছিল। মিনি কারখানার নাম দিয়েছেন ইজতিহাদ প্রকৌশলী ওয়ার্কশপ ও গবেষণা সেন্টার। এলাকার বিভিন্ন খামারে এ হ্যান্ড পাওয়ার মেশিন ব্যবহার করে কৃষি খাতে বহুমুখি সুফল পাওয়া গেছে বলে গ্রামবাসিরা জানায়। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, সালাউদ্দীনের এ নব্য আবিষ্কার কৃষিবিদ সহ সংশিস্নষ্ট সবাইকে মুগ্ধ করেছে।
SOURCE: Daily Ittefaq

Tuesday, January 11, 2011

ফ্রিবি পে সল্যুশন : ক্রেডিট কার্ড বা নগদ টাকার বিকল্প প্রযুক্তি : ড. সাইফুরের উদ্ভাবনে ব্যাপক সাড়া

ফ্রিবি পে সল্যুশন : ক্রেডিট কার্ড বা নগদ টাকার বিকল্প প্রযুক্তি : ড. সাইফুরের উদ্ভাবনে ব্যাপক সাড়া

এনা, নিউইয়র্ক
প্রযুক্তির সুবাদে এখন আর কেনাকাটায় দরকষাকষির জন্য টাকার বান্ডিল কিংবা ক্রেডিট কার্ড পকেটে ভরে দোকানে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। কোন জিনিসে কত ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে, তা নিয়েও সেলসম্যানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার দরকার হবে না। কোন স্টোরে কখন মূল্যহ্রাস ঘোষণা করা হচ্ছে এবং দ্রব্যের ডিসকাউন্ট প্রাপ্তির আগাম কুপনও ডাকযোগে বাসায় আসার দরকার হবে না। সবকিছুই সম্পাদিত হবে মোবাইল ফোনে। মোবাইল ফোনকে মানিব্যাগ/ওয়ালেট হিসেবে ব্যবহারের সর্বাধুনিক একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশী আমেরিকান কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ড. সাইফুল খন্দকার। নতুন এ সফটওয়্যারের নাম হচ্ছে ‘ফ্রিবি পে’। আর এটি যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ফেসবুক, গুগলসহ বিখ্যাত সব কোম্পানির পক্ষ থেকে সাইফুল খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে ‘ফ্রিবি পে’ কেনা অথবা পার্টনার হওয়ার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের ১০ লাখেরও বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক স্থাপনকারী ‘আরবিএস’ চাচ্ছে এ প্রযুক্তির স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হতে। ফেসবুকের একজন কো-ফাউন্ডার ফেসক্যাশ সল্যুশন নিয়ে কাজ করছেন। তিনিও ড. সাইফুল খন্দকারের সঙ্গে লবিং করছেন এ প্রযুক্তির সহায়তা নিতে। কানাডা, প্যারিসসহ ইউরোপের কয়েকটি কোম্পানিও চেষ্টা করছে প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে।
তিনদিনব্যাপী ‘দ্য ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন এক্সপো ২০১১’-এর প্রথম দু’দিনই জ্যাকব জেভিট কনভেনশন সেন্টারে ড. সাইফুল খন্দকারের এ উদ্ভাবনী নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল পরিলক্ষিত হয়। এ প্রদর্শনীতে ভারতের টাটাসহ যুক্তরাষ্ট্রের ৫শ’রও বেশি আইটি কোম্পানি অংশ নিচ্ছে। তারা সবাই নিজ নিজ উদ্ভাবিত পণ্যের দোকান দিয়েছেন। ৬২ দেশের ৫০ হাজারেরও বেশি ক্রেতা-দর্শক প্রদর্শনীতে এসেছেন বলে আয়োজকরা জানান। মোটা অর্থের বিনিময়ে প্রতিটি কোম্পানিকে এ প্রদর্শনীতে অংশ নিতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯১১ সাল থেকে আইটি সেক্টরের প্রদর্শনী হয়ে আসছে নিউইয়র্কে। ৩০ বছর আগের প্রদর্শনীতেও কল্পনা করা যায়নি যে, ২০১১ সালের প্রদর্শনীতে বিশ্বের সব অঞ্চলের ক্রেতা-উদ্ভাবকের বিরাট সমাগম ঘটবে। ‘কতদূর এসেছি, তোমরা কতদূর যেতে চাও’ স্লেম্লাগানে উজ্জীবিত এবারের এ প্রদর্শনীতে আটলান্টাভিত্তিক আইটি কোম্পানি ‘এমআইথ্রি’র কর্ণধার ড. সাইফুল খন্দকার এবং তার সহযোগী তথা পণ্য উদ্ভাবন ও উন্নয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রড স্ট্র্যামবাহ, বিক্রয় ও ব্যবসায়িক উন্নয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কনস্ট্যান্স কোর্টনি, বিজনেস ম্যানেজার জিল রবার্টস এবং এমআইপির পরিচালনা পরিষদের সদস্য এজাজ চৌধুরী ছিলেন অনেকের মধ্যমণি। এমআইথ্রি’র মাধ্যমে বিশাল এ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশও গর্বে মেতে উঠেছিল। অনেক ক্রেতার সঙ্গেই কথা বলার সময় ড. সাইফুল খন্দকার বাংলাদেশকে টেনে নিয়ে এসেছেন। উল্লেখ্য, এমআইথ্রি’র ‘ফ্রিবি পে’র স্টলের সন্নিকটেই ভারতীয় টাটা কোম্পানির স্টল। সেখানেও ভিড় পরিলক্ষিত হয়, তবে ‘ফ্রিবি পে’র মতো নয়।
নতুন এ উদ্ভাবন সম্পর্কে ড. সাইফুল খন্দকার প্রদর্শনী কেন্দ্রে বলেন, ‘আইটি সেক্টরের গবেষকরা মনে করছেন ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বের বড় বড় সিটির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ৭০ শতাংশ বিক্রি সম্পাদিত হবে অনলাইনে মোবাইল টেলিফোনে। আর এক্ষেত্রে আমাদের উদ্ভাবিত ‘ফ্রিবি পে’ হবে পাইওনিয়ার। তিনি বলেন, মোবাইল ফোনকে কেনাকাটার অবলম্বনে পরিণত করার সফটওয়্যার তৈরির কাজে আরও কয়েকজন হাত দিয়েছেন। পরীক্ষামূলকভাবে কেউ কেউ করছেনও। কিন্তু আমরা সরাসরি বাজারে চলে এসেছি সবার আগে। তাই আমাদের সফটওয়্যার সবার দৃষ্টি কেড়েছে। তিনি বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ক্রমান্বয়ে মোবাইল ফোনের ওপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে। অনলাইনকে অনেক মানুষ বেঁচে থাকার অবলম্বনে পরিণত করেছেন। কেনাকাটার ক্ষেত্রেও সে অবলম্বন খুব দু্রত বাড়বে বলে মনে করছি। নগদ অর্থ বহন করা অথবা ক্রেডিট কার্ড ওয়ালেট/মানিব্যাগে রাখা খুব নিরাপদ নয়। এছাড়া ক্রেডিট কার্ডে বিল পরিশোধের পর ডাকযোগে বিল আসবে বাসায়। পোস্টাল স্ট্যাম্প ব্যয়ের পাশাপাশি সময়ও দিতে হবে সে চেক লিখতে। কিন্তু ‘ফ্রিবি পে’তে সেসব ঝামেলা নেই। সেলফোনই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে। ক্রেডিট কার্ডের ব্যালেন্স সংরক্ষিত থাকবে ফোনের মেমোরিতে। বিল পর্যালোচনা করবে মোবাইল ফোন নিজেই। সেলসম্যানকে বলতে হবে না কিছুই। সবকিছু মুহূর্তে ঘটে যাবে পছন্দের জিনিস হাতে নেয়ার পরই। ড. সাইফুল খন্দকার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে এরই মধ্যে অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়েছে। অর্থাত্ তাদের সব পণ্য ওয়েবসাইটে চলে গেছে। এভাবেই আমাদের উদ্ভাবিত সফটওয়্যারের দিকে মানুষের ঝোঁক বাড়বে।
SOURCE: Daily Amardesh

বাঁশ চাষে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ব্যাপক সাফল্য

বাঁশ চাষে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ব্যাপক সাফল্য

মিজানুর রহমান রাঙ্গা সাঘাটা (গাইবান্ধা)
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালীর কৃষিবিদ মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাঁশ চাষের এক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যাতে স্বল্প ব্যয়ে খুব দ্রুত বাঁশবাগান সৃজন করা সম্ভব। তার নব উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে শুধু গাইবান্ধা জেলায়ই নয়, জেলার বাইরে ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নীলফামারী, পঞ্চগড়, যশোর, টাঙ্গাইল এবং শরীয়তপুর জেলায়ও কৃষকরা কাটিং পদ্ধতিতে বাঁশ চাষ করে দ্রুত উন্নতজাতের বাঁশ উত্পাদনে সক্ষম হয়েছেন। কৃষি উদ্যানতত্ত্ব বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করা নজরুল ইসলাম বৃক্ষ সার্জন নামেও গাইবান্ধায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। তার উদ্ভাবিত বাঁশচাষ পদ্ধতিটি এমন—বাঁশঝাড় থেকে দুই বছর বয়সী সতেজ ও সবল বাঁশ চিহ্নিত করে কেটে নিতে হবে। বাঁশের কঞ্চিগুলো দুই ইঞ্চি পরিমাণ লম্বা রেখে বাকি অংশ ছেঁটে ফেলে সম্পূর্ণ বাঁশটিকে দুই গিটের মাঝখানে করাতের সাহায্যে বাঁশের আকৃতিভেদে ৪০ থেকে ৫০ টুকরো করে নিতে হবে। এক বিঘা জমিতে বাঁশের চারা তৈরির জন্য এরকম ৩০০ টুকরো দরকার হবে। বাঁশ টুকরা করার পর সব টুকরো একটি গর্তে রেখে খড় দিয়ে ঢেকে প্রতিদিন হালকা সেচ দিয়ে ভেজাতে হবে। এরপর পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এভাবে ১০ থেকে ১৫ দিন রাখার পর দেখা যাবে প্রতিটি গিট থেকে কুশি (নতুন পাতা) বেরিয়েছে। টুকরাগুলো তুলে নিয়ে নির্ধারিত জমিতে ৮-৬ ফুট পরপর নালা কেটে তার মধ্যে বসিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এই মাটি দিয়ে ঢাকার পদ্ধতি হবে আলু চাষের মতো। পরবর্তী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই বাঁশের চারাগাছ কঞ্চি আকারে বেরুতে থাকবে। এগুলো মাটি পুঁতে দিলে পুরো বাঁশঝাড় তৈরি হতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে। কৃষির উন্নয়নে এই অভূতপূর্ব সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকারের জাতীয় কৃষি পুরস্কার, রোটারি ক্লাব বাংলাদেশ পুরস্কারসহ একাধিকবার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কৃষি মেলার শ্রেষ্ঠ কৃষিবিদ হিসেবে পুরস্কৃত হন তিনি।
SOURCE: Daily Amardesh

গিফট তেলাপিয়ার সুপারমেল

গিফট তেলাপিয়ার সুপারমেল

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেলাপিয়া চাষের সর্বশেষ লাভজনক প্রযুক্তি গিফট তেলাপিয়ার সুপার মেল। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।

ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের প্রফেসর ড. মো: রফিকুল ইসলাম সরদার এবং মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য মো: মোখলেছুর রহমান দীর্ঘ আড়াই বছর যৌথ গবেষণা শেষে এ সুপারমেল (পুরুষ) উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। উদ্ভাবিত সুপারমেল কোনো হরমোন প্রয়োগ ছাড়াই কৌলিতাত্ত্বিকভাবে শতভাগ মেল বাচ্চা উৎপাদন করতে পারবে। বাণিজ্যিকভাবে শতভাগ মেল বাচ্চা উৎপাদন বেশ লাভজনক।

শতভাগ মেল (পুরুষ) বাচ্চা উৎপাদনে বর্তমান যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে তা বেশ জটিল ও ব্যয় সাপেক্ষ। এ পদ্ধতিতে পুরুষ ও স্ত্রী গিফট তেলাপিয়া ১:৪ থেকে ১৮ অনুপাতে জালের তৈরি হাপার মধ্যে পুকুরে রাখা হয়। ১৫ দিন পর পর স্ত্রী মাছের মুখ থেকে নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করে তা হ্যাচারিতে ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করা হয়।

উৎপন্ন বাচ্চাকে সাধারণত প্রতি কেজি খাদ্যে ৬০ মিলিগ্রাম হারে মিথাইল টেস্টোস্টেরন হরমোন মিশিয়ে ২১ থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত খাওয়ানো হয়। এর ফলে অধিকাংশ পোনা পুরুষে পরিণত হয়। দেশের ৮ থেকে ১০টি হ্যাচারি এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বছরে ১৫ থেকে ২০ কোটি তেলাপিয়ার পোনা উৎপাদন করছে। এ পদ্ধতিতে মেল উৎপাদনের হার প্রায় ৯০ ভাগ এবং বেশ জটিল। ড. রফিকুল ইসলাম সরদার এবং মোখলেছুর রহমান উদ্ভাবিত সুপারমেল এ জটিলতা দূর করবে এবং শতভাগ মেল বাচ্চা উৎপাদন নিশ্চিত করবে।

ড. রফিকুল ইসলাম সরদার জানান, আফিন্সকায় জন্মগত তেলাপিয়া ১৯৫৪ সাল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশে আনা হয় এবং চাষাবাদের চেষ্টা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৪ সালে তেলাপিয়ার উন্নত প্রজাতি আফিন্সকা থেকে দেশে আনা হয়। এ তেলাপিয়াই গিফট তেলাপিয়া হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

এটি বর্তমানে দেশে থাই পাঙ্গাস মাছের পরই সর্বাধিক চাষকৃত মাছ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ড. সরদার বলেন, পুরুষ ও স্ত্রী তেলাপিয়া একসাথে চাষ করলে বংশ বিস্তার খুব দ্রুত হয়। এতে মাছের সংখ্যা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে এবং ব্যবস্খাপনা কঠিন হয়ে যায়। শতভাগ মেল বাচ্চা উৎপাদনে এ সমস্যা আর থাকে না। আগ্রহী তেলাপিয়া চষিরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্যের জন্য ০১৭১২-০১৫৯০৮ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।

Source: http://bangladeshagri.com

Monday, January 10, 2011

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করছে

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করছে

বরিশাল বিভাগের নদীবেষ্টিত এলাকা পটুয়াখালীর দুমকিতে অবস্থিত কৃষি কলেজকে ২০০০ সালে আধুনিক মানের ডিজিটাল প্রযুক্তিতে গড়া কৃষিভিত্তিক উচ্চতর শিক্ষাসমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপদান করা হয়, যা বর্তমানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। এর উপাচার্য হিসেবে রয়েছেন প্রফেসর ড. সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ প্রায় তিন যুগের কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে জানতে ড. সাখাওয়াত হোসেন-এর সাথে আমার দেশ-এর ‘আমার ক্যাম্পাস’ বিভাগের প্রতিবেদক ইমাদুল হক প্রিন্স খোলামেলা আলোচনা করেন । এখানে সেই সাক্ষাত্কারের বিশেষ অংশ তুলে ধরা হলো :
প্রশ্ন : পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই।
ড. সাখাওয়াত হোসেন : এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬টি অনুষদ রয়েছে। মোট বিভাগ হলো ৪১টি এর মধ্যে মূল ক্যাম্পাস ৩২টি এবং বহিঃক্যাম্পাস (বাবুগঞ্জ, বরিশাল শহরে) ৯টি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ৮৯. ৯৭ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্ অংশ জুড়ে রয়েছে গবেষণা খামার। নতুন নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবনসহ হর্টিকালচার সেন্টার ও মাত্স্য বিভাগের ওপর কিছু গবেষণা কার্যক্রম রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হতো। আমি যোগদানের পরে ৬২ জন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছে। যারা প্রত্যেকে নিজ নিজ বিষয়ে হাইলি কোয়ালিফাইড। সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করা হয়। বর্তমানে এখানে ১৮০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে এর মধ্যে এম এস ও পিএইচডিতে ৫৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যারা পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের আওতায় শিক্ষা ও গবেষণা করছে। পিজিডি ইন আইসিটি ও এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ডিজাষ্টার ম্যানেজমেন্ট এর ওপরে ডিপ্লোমা এ্যাওয়াডিং প্রোগ্রাম রয়েছে। দেশে এ বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রথম এবং একমাত্র ডিজাষ্টার ম্যানেজমেন্ট-এর ওপরে স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
প্রশ্ন : আপনি দায়িত্ব গ্রহণের পরে উল্লেখযোগ্য কি কি উদ্যোগ নিয়েছেন এবং সরকারের নিকট আপনার প্রত্যাশা কী?
ড. সাখাওয়াত হোসেন : প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা করেছি। ক্লাস রুমে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও ল্যাপটপ দেয়া হয়েছে। দ্রুত গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট দক্ষিণ অঞ্চলে এই প্রথম। শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম উন্নয়নে যৌথভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ সফলতার সাথে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যেই নরওয়ে, জার্মানী ও ডেনমার্কের ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পবিপ্রবি’র দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। মাত্স্যবিজ্ঞান বিভাগ ২৯ নভেম্বর থেকে অনুষদে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি বিরাট সাফল্য। অবকাঠামোগত উন্নয়ের ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছি। শিক্ষকদের আবাসন সুবিধা দেয়ার জন্য ডরমেটরি সম্প্রসারন করেছি। রূপালী ব্যাংক এর অর্থায়নে নতুন ডরমেটরি নির্মাণ করা হয়েছে। হলগুলোতে সিট বৃদ্ধির জন্য Horizontal and Vertical এক্সটেনশন করা হয়েছে। বিদেশী কযেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যে চুক্তি হয়েছে তাতে করে আমাদের শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়তে পারবে তাদের শিক্ষার্থীও এখানে পড়তে পারবে শিক্ষাকরা সেখানে গবেষণা করতে পারবে। এতে করে শিক্ষা, গবেষণা, তথ্য ও প্রযুক্তির আদান প্রদান সম্ভব হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শোভাবর্ধনে উদ্যোগ নিয়েছি। এবছর ভর্তি পরিক্ষার পর ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালযের কার্যক্রম প্রমাণ করতে পেরেছি। সরকারের নিকট আমার প্রত্যাশা হলো অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে নতুন অনুষদ ও বিভাগ চালু করা দরকার, পরিবহন বাড়ানো এবং গবেষণার ক্ষেত্র প্রসার করাসহ আরো কিছু বিষয়ে সমৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রকল্প অনুমোদন হলে বিদ্যালয়ের চিত্র পরিবর্তন হবে।
প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি?
প্রফেসর সাখাওয়াত হোসেন : বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সমাবর্তন এক বিশাল অর্জন, এতে করে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্সাহ সৃষ্টি হয়, তারা একামেডিক স্বীকৃতি পায়। নিয়ম হলো প্রতি বছরই সমাবর্তনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে এগিয়ে নেয়া কিন্তু দক্ষ পরিচালনা না থাকার কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছরে একটিও হয়নি। আমার উদ্যোগ আগামী ২৭ ফ্রেরুয়ারি ২০১১ আমাদের প্রথম সমাবর্তন হবে। ইতোমধ্যে সমাবর্তন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। এ জন্য সরকার ও সংবাদ মাধ্যমের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
Source: Daily Amardesh

Saturday, January 8, 2011

শুকনো পদ্ধতিতে বোরো চাষ

শুকনো পদ্ধতিতে বোরো চাষ

শুকনো পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, ডিএই (এইসি) ডানিডা এএসপিএস গতবছর ৪টি জেলায় (নেত্রকোনার নারান্দিয়া, দিনাজপুরের সুন্দরবন, রাজশাহীর বিজয় নগর, টাঙ্গাইলের নরকোনায়) পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে সফলতার পর এবারো কৃষক পানি সাশ্রয়ের জন্য চাষ করতে পারেন তার জমিতে। এ পদ্ধতিতে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ সেচের পানি সাশ্রয় হবে ও ধানের ফলন ভাল পাওয়া যাবে।
প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মশিউর রহমান জানান, শুকনো জমিতে প্রাইমিং করা ধানের বীজ নির্দিষ্ট দূরত্বে বপন করতে হবে। পরবর্তীতে প্রয়োজনমত সেচ দিতে হবে। ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি মাসের ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত বীজ বপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে ব্রিধান ২৯ সবেচেয়ে ভাল। তবে বিনা ধান ৬, ব্রিধান ৪৭ ও ব্রিধান ২৮ জাতের চাষ করা যেতে পারে। বীজ প্রথমে ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর ২৪ থেকে ৩০ ঘণ্টা জাগ দিয়ে ধান বীজের মুখ ফাটা অবস্থা তৈরি করতে হবে। আমন ধান কাটার পরে জোঁ অবস্থায় প্রয়োজনমত চাষ ও মই দিয়ে ভালভাবে জমি তৈরি করতে হবে। জমিতে রস না থাকলে সেচ দিয়ে পরে জোঁ অবস্থা তৈরি করে নিতে হবে। হাতে অথবা যন্ত্রের সাহায্যে ২৫ সেমি. দূরে দূরে লাইন এবং লাইনে ১৫ সেমি. দূরে দূরে ৩ থেকে ৫ সেমি. গভীর গর্তে ও প্রতি গর্তে ৪ থেকে ৬টি বীজ বপন করতে হবে। জমির উর্বরতা ধানের জাত ভেদে সারের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। তবে বিএআরসি/সরকারি সার প্রয়োগ সুপারিশ নীতিমালা অনুয়ায়ী অঞ্চলভেদে যে মাত্রা নির্ধারিত আছে সে অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। গোবর, কম্পোস্ট, টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও দস্তা সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ৪ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি শেষে চাষের সময়, দ্বিতীয় কিস্তি বীজ বপনের ৪৫ থেকে ৫৫ দিন পরে, তৃতীয় কিস্তি ৬০ থেকে ৭০ দিন পরে এবং শেষ কিস্তি ৭৫ থেকে ৮০ দিন পরে প্রয়োগ করতে হবে।
আগাছা দমন এই পদ্ধতির প্রধান সমস্যা। যন্ত্র বা নিড়ানির মাধ্যমে আগাছা দমন করতে হবে। এ পদ্ধতিতে আগাছার আক্রমণ রোধ করতে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ২ বা ৩টি বেশি নিড়ানি দরকার হয়। নিড়ানি খরচ বেশি হলেও পানি ও চারা রোপণের খরচ কম লাগে বলে অধিক মুনাফা পাওয়া যাবে। চীন ও ভারতের বিভিন্ন আগাছা নাশক যেমন বাই স্পাইরিকেব সোডিয়াম, ট্রাইফ্লুরালিন, পেনক্সসুলাম ইত্যাদি ব্যবহার করে কম খরচে সফলতার সাথে শুকনো পদ্ধতির ধানের জমিতে আগাছা দমন করতে হবে। বপনের পরে জমিতে রস না থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে। এরপর ৬০ থেকে ৭০ দিন পর হতে প্রয়োজনমত ৭ থেকে ১০টি সেচ দিতে হবে। উলেস্নখ্য যে, শুকনো পদ্ধতিতে বপন থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত খুব অল্প পরিমাণ সেচ লাগে। থোড় আসার সময় থেকে বীজ পুষ্ট হওয়ার সময় পর্যন্ত জমিতে সামান্য পানি রাখা ভাল। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় এই পদ্ধতিতে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয়। পোকামাকাড় ও রোগের আক্রমণ হলে আইপিএম অথবা আইসিএম পদ্ধতি অনুসরণ করে পোকামাকাড় দমন করতে হবে।
Source: Daily Ittefaq

অপার সম্ভাবনাময় ধোলাইখাল

অপার সম্ভাবনাময় ধোলাইখাল

০০ মোহাম্মদ আবু তালেব

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে পুরনো ঢাকার ধোলাইখাল। এখানে মোটর পার্টস ও ইলেকট্রনিক্স তৈরির এক বিশাল সম্ভাবনা গড়ে উঠেছে। লাইনার, পিস্টন, বেয়ারিং থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি মোটর পার্টস, গাড়ির ব্রেকড্রাম, ইঞ্জিন, কার্টিজ, সকেট, জগ, জাম্পার, স্প্রিং, হ্যামার, ম্যাকেল জয়েন্ট, বল জয়েন্টসহ নানা সামগ্রী তৈরি হচ্ছে।

ধোলাইখালে তৈরি মেশিনারি পার্টস ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ নানা দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া ভাল রিকন্ডিশন্ড পার্টসের জন্য ধোলাইখালের দেশব্যাপী সুনাম রয়েছে। পুরনো গাড়ি ভেঙ্গে পার্টস সংগ্রহ করা হয় এখানে। ধোলাইখালের পার্টসের চাহিদা গোটা দেশে। ইতিমধ্যেই সারাদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের অপার সম্ভাবনাময় এই ধোলাইখালের মেশিনারি ও পার্টস শিল্প এক সময় বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

ঢাকা বিশারদ অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন ইত্তেফাককে বলেন, ধোলাইখালের উৎপত্তি মোগল আমলে সুবেবাংলার রাজধানী হিসাবে ঢাকার জন্মলগ্ন থেকে। ঢাকের আওয়াজের ব্যাপ্তি জুড়ে ঢাকা রাজধানী হওয়ার পর প্রথম সুবেদার ইসলাম খান চিশতি (১৬১০-১৩) বুড়িগঙ্গার সঙ্গে দুলাই নদীর সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি খাল খনন করেছিলেন, যা পরবতর্ীকালে দোলাইখাল ও শেষ লোকমুখে ধোলাইখাল নামে পরিচিতি পায়। স্বাধীনতার আগে থেকেই এখানে এলাকায় মোটর পার্টস তৈরির গোড়াপত্তন ঘটে। স্বাধীনতা পরবতর্ী সময়ে ধোলাইখাল ভরাট হতে থাকে। এইসঙ্গে এখানে প্রসার ঘটতে থাকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের।

কমমূল্যে ভাল রিকন্ডিশন্ড পার্টস কেনার জন্যই ধোলাইখাল সুনাম অর্জন করেছে। বর্তমানে এ এলাকায় ছোটবড় কয়েক হাজার দোকান ও কারখানা রয়েছে। এ শিল্প ব্যবসার সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ী। ধোলাইখালের পুরো এলাকাতেই ছড়িয়ে রয়েছে পার্টস এবং ইলেকট্রনিক্স দোকান ও কারখানা। গাড়ির পার্টসসহ বিভিন্ন অংশের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা মার্কেট। মার্কেটের মধ্যে রয়েছে হাজী মনসুর 'মার্কেট', 'বাঁশপট্টি মার্কেট', 'গাছ মার্কেট' এবং 'টং মার্কেট।' হাজী মনসুর মার্কেটে প্রাইভেটকারের স্পেয়ার পার্টস, বাঁশপট্টি মার্কেটে টয়োটা, হোন্ডাসহ অন্যান্য গাড়ির পার্টস, গাছ মার্কেটে বেডফোর্ডের পার্টস, টং মার্কেটে প্রায় সব ধরনের স্পেয়ার পার্টস এবং এর পাশেই গাড়ির পুরনো টায়ার ও রিম পাওয়া যায়।

এসব মার্কেটে প্রায় সব ধরনের প্রাইভেটকার, বাস ও ট্রাকের স্পেয়ার পার্টস পাওয়া যায়। সুলভমূল্যে ভাল রিকন্ডিশন্ড পার্টস কিনতে গাড়ির মালিকরা বাধ্য হয়েই ধোলাইখাল যান।

ধোলাইখালের ব্যবসায়ীরা জানান, এসব পার্টস বিভিন্ন মোটর গ্যারেজ থেকে সংগৃহীত এবং কিছু জিনিস নিজস্ব কারিগরি দক্ষতায় তৈরি করা হয়। পুরনো গাড়ি ভেঙ্গেও পার্টস সংগ্রহ করা হয়।

ধোলাইখালের রীনা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক হাজী নূরুজ্জামান শেখ বলেন, তার প্রতিষ্ঠানটি মোটর গাড়ির সব ধরনের পার্টস মেরামত ও গাড়ির ২৫ শতাংশ যন্ত্রপাতি তৈরি করে থাকে। তিনি বলেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি যন্ত্রাংশ পাশর্্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। রপ্তানিকৃত লাইনার, পিস্টন, নজল, বেয়ারিংসহ নানা যন্ত্রাংশ গুণগত মানের দিক থেকে চীন ও জাপানে তৈরি যন্ত্রাংশের চেয়ে অধিকতর টেকসই এবং দামে সস্তা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, গাড়ির ব্রেকডাম, ইঞ্জিনসহ সব ধরনের যন্ত্রাংশ মেরামত করা হয় এ ধরনের কারখানায়। সাধারণত গাড়ির মালিকরা এখানে স্পেয়ার পার্টসের জন্যই আসেন। নতুনের চেয়ে অনেক কম দামে এসব মালামাল কিনে থাকেন। এখানে গাড়ির কার্টিজ, সকেট জাম্পার, স্প্রিং, হ্যাঙ্গার, ম্যাক্ল জয়েন্ট, বল জয়েন্টসহ সবই মেলে অতি সুলভে। আর যে পার্টস মিলবে না তার পুরনোটি দিলে নতুনের মত তৈরিও করে দেয়া হয়। এসব যন্ত্রাংশের দাম গাড়ির মডেল অনুযায়ী হয়ে থাকে।

ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা গাড়ি চোর সিন্ডিকেটের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে চোরাই যন্ত্রাংশ এনে বিক্রি করেন। তবে সংশিস্নষ্টরা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এখানে গাড়ির সাইড গস্নাস বা বডির যন্ত্রাংশ বিক্রি হয় না যা চোরাই হিসাবে ধরা হয়। মাদকাসক্ত যুবক ও ছিঁচকে চোর এসব যন্ত্রাংশ চুরি করে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে। অল্পসংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য সবাইকে ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

ধোলাইখালের প্রবীণ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন মিয়া জানান, ধোলাইখালের তৈরি পার্টস ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ভুটানসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

ধোলাইখাল এলাকার পার্টস শিল্প উন্নয়নে এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৪ সালে একটি প্রতিনিধিদল জাপানে গিয়ে গাড়ি তৈরির কারখানা পরিদর্শনসহ বেশকিছু কারিগরি জ্ঞান অর্জন করে আসে। সেটিই ছিল সরকারি পর্যায়ের প্রথম এবং শেষ উদ্যোগ। তারপর আর কোন ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই এখানকার 'মেকাররা' নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে যন্ত্রাংশ তৈরি করছেন। দেশে তৈরি এসব যন্ত্রাংশের গায়ে লেখা থাকে 'মেড ইন জাপান'। তারা বলেন, 'দেশের জিনিসের কদর নাই তাই জাপানের নামেই মাল চালাই।' গাড়ির ইঞ্জিন, পার্টস ছাড়াও ধোলাইখালে রয়েছে ইলেকট্রনিক্স বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরির কারখানা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ফিরোজ আলম জানান, তারা নিজস্ব উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন সকেট ক্যাব্ল, বেঞ্চ ওভার সুইচ, লাইট টেপের মতো সরঞ্জামাদির কারখানা। ২০০১ সালে ছোট পরিসরে আরম্ভ করেছিলেন তার কারখানাটি। বর্তমানে ৩৫ জন কর্মচারি নিয়ে দুইটি কারখানা রয়েছে তার। তিনি জানান, ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামাদির চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। দেশে তৈরি এসব জিনিসের দাম খুবই কম। দেশীয় শিল্প বাঁচাতে ভ্যাট কর্তৃপক্ষের হয়রানি থেকে মুক্তি দাবি করেন তারা।

সরকার শিল্প উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করলে দেশের সম্ভাবনাময় ধোলাইখালের পার্টস শিল্প ও ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জামাদি অনেক এগিয়ে যাবে। দেশীয় শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি দেশের জন্য বয়ে আনতে পারে উজ্জ্বল সম্ভাবনা এমনটিই মনে করেন ধোলাইখালের পার্টস ব্যবসায়ী, কারখানার মালিক-শ্রমিক ও বিশেষজ্ঞ মহল।
Source: Daily Ittefaq

RELATED BLOG-
Dholai Khal

পঞ্চগড়ে চা চাষে নীরব বিপ্লব

পঞ্চগড়ে চা চাষে নীরব বিপ্লব

আতাউর রহমান কাজল, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার)
দেশের উত্তর জনপদের পঞ্চগড়ে চা চাষ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর পঞ্চগড় অন্যতম চা অঞ্চল হিসেবে এরই মধ্যে দেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। গত ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত মৌসুমে (২০১০) পঞ্চগড় জেলায় ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮০৫ কেজি চা উত্পাদন হয়েছে, যা ২০০৯ সালের তুলনায় ২ লাখ ১১ হাজার ৫১ কেজি বেশি।
২০০৯ সালে পঞ্চগড়ে চা উত্পাদন হয়েছিল ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫৪ কেজি। অপরদিকে ২০০৮ সালে এ জেলায় চা উত্পাদন হয় ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৩২৪ কেজি। ২০০৫ সালে যাত্রা শুরুর বছর ওই জেলায় চা উত্পাদন হয়েছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ২২৬ কেজি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পঞ্চগড়ে প্রতি বছর চা উত্পাদন বাড়ছে।
শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ ও রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ চা বোর্ড দেশের নতুন নতুন এলাকায় চা চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় পরীক্ষামূলক কার্যক্রম হাতে নেয় চা বোর্ড। ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট ও বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি চা বিশেষজ্ঞ দল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় জরিপ চালিয়ে চা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। ২০০০ সালের ২ এপ্রিল তেঁতুলিয়া উপজেলায় চা চাষের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট সূত্র জানায়, বর্তমানে পঞ্চগড় জেলায় ২ হাজার ৩৯২ দশমিক ১৫ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে কাজী অ্যান্ড কাজী, তেতুলিয়া টি কোম্পানি ও করতোয়া কারখানায় চা উত্পাদন হচ্ছে। কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট তাদের নিজস্ব বাগানে উত্পাদিত সবুজ পাতা প্রক্রিয়াজাত করে অর্গানিক চা তৈরি করে।
পঞ্চগড়ে অবস্থিত বাংলাদেশ চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আমির হোসেনের সঙ্গে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ জেলায় এখন ৮টি চা বাগান, ১৫ জন ক্ষুদ্র চা খামারি ও ১৯০ জন ক্ষুদ্র চাষী চা চাষে যুক্ত আছেন। ফলে গত কয়েক বছরের মধ্যেই পঞ্চগড়ে চা চাষে ঘটে যায় বিপ্লব। তিনি আরও জানান, উত্তর জনপদের পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় চা চাষ উপযোগী প্রায় ৪০ হাজার একর জমি রয়েছে। এসব জমিতে চা আবাদ বাড়িয়ে উন্নতমানের পরিচর্যা নিশ্চিত করতে পারলে আগামীতে ওই দুই জেলায় চায়ের উত্পাদন হেক্টরপ্রতি ৩ হাজার কেজি দাঁড়াবে বলে চা বোর্ড আশা করছে।
Source: Daily Amardesh

Wednesday, January 5, 2011

তিস্তার চরাঞ্চলে 'ধান ব্যাংক'

তিস্তার চরাঞ্চলে 'ধান ব্যাংক'
০০কমল কান্ত রায়, গঙ্গাচড়া সংবাদদাতা

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার চরাঞ্চলে হতদরিদ্র মানুষের মঙ্গার সময় আশার আলো জ্বালিয়েছে 'ধান ব্যাংক'। বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস'র ব্যক্তিক্রমধমর্ী উদ্যোগ এলাকার মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে আশ্বিন-কার্তিক মাস শ্রমজীবী মানুষের কাজ থাকে না। অনেকে আগাম শ্রম বিক্রি করে। এ অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করে থাকে দুস্থ লোকজন। উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর আলালচরের নীলারপাড়া। এখানে অধিকাংশ লোকজনই নদী ভাঙ্গনের শিকার। জমাজমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে এসব অভাবী পরিবার। বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস চরাঞ্চলের অভাবী মানুষের কথা চিন্তা করে গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে চালু করে ৯টি ধান ব্যাংক। প্রতিটি ধান ব্যাংকে ১ টন ধান সরবরাহ করে সংস্থা। প্রতিটি ধান ব্যাংকের আওতায় ২০ জন করে সদস্য রয়েছে। গত আশ্বিন-কার্তিক মাসে মঙ্গার সময় প্রতিটি সদস্যকে ৫০ কেজি ধান দেয়া হয়েছে। আমন ধান কাটামাড়ি শেষে এসব সদস্য ৫০ কেজি করে ধান আবার জমা করবে আগামী মঙ্গা মাসের জন্য। নীলারপাড়া এলাকার ১০ নং বেলী মহিলা দলের সভাপতি আরজিনা বেগম বললেন, "এবার মঙ্গার সময় হামাক গুলাক আর মানুষের কাছে ধার করা নাগে নাই।" সমিতির সদস্যা আফরোজা, আনজু, অমিচা বললেন, আশ্বিন-কার্তিক মাসে কাজ থাকে না, এ সময় এই ধান হামার গুলার অনেক কামত নাগে। আরডিআরএস'র টেকনিক্যাল অফিসার (কৃষি) নাসিরউদ্দিন জানান, মঙ্গা এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে এ ধান ব্যাংক গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে ৯টি মর্নেয়া এলাকায় ৯টি ধান ব্যাংক আছে। পর্যায়ক্রমে আরও বাড়ানো হবে। সেইসাথে ধানের পরিমাণও বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।
Source: Daily Ittefaq

সাতক্ষীরায় নতুন জাতের সরিষার বাম্পার ফলন

সাতক্ষীরায় নতুন জাতের সরিষার বাম্পার ফলন

০০সাতক্ষীরা সংবাদদাতা

সাতক্ষীরায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকদের উদ্ভাবিত লবণ-সহিষ্ণু বারি সরিষা ১৪ ও ১৫ জাতের বীজ পরীক্ষামূলক ভাবে জমিতে চাষ করে ব্যাপক ফলন পাওয়া গেছে। কৃষি গবেষকরা জানিয়েছেন, বিঘা প্রতি প্রায় আট মণ সরিষা উৎপাদন হয়েছে। সদর উপজেলার ঘোনা-গাজীপুর বিলে প্রায় ২৫ একর জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে এবছর ঐ জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। যার উৎপাদন দেশীয় সরিষা জাতের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি।

মঙ্গলবার দুপুরে ঘোনা-গাজীপুর বিলে বারি সরিষা ১৪ ও ১৫ এর উপর এক মাঠ দিবসে বারি গবেষকেরা বলেন, আমন ও বোরো মৌসুমে ধান কাটার পরপরই সরিষার এই জাত দুইটি চাষ করতে হয়। এই জাতের বীজ লবণ-সহিষ্ণু মাটি, মিষ্টি মাটিসহ সব শ্রেণীর মাটিতে চাষ করা সম্ভব। এই জাতের সরিষায় রোগ-বালাই তুলনামূলক অনেক কম। সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। তবে সেচ দিলে শস্যদানায় পুষ্টি বেশি হয়।

সোমবার অনুষ্ঠিত মাঠ দিবসে কৃষকদের মাঝে বারি সরিষা ১৪ ও ১৫ জাত চাষ বিষয়ে আলোচনা করেন যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শেখ মোস্তফা জামান, বিনেরপোতা কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. এ কে এম হাবিবুর রহমান, ড. লতিফ বিশ্বাস, ড. রফিউদ্দিন মণ্ডল। বক্তারা এ সময় এই জাতের সরিষা চাষ করার জন্য কৃষকদের প্রতি আহবান জানান।
Source: Daily Ittefaq, 27th January-2011

Tuesday, January 4, 2011

বায়োগ্যাসে ঝালাই!

বায়োগ্যাসে ঝালাই!
বায়োগ্যাসে ঝালাই করছেন শিবু সরকার শিবুর বায়ো-প্ল্যান্ট

দেশে এখনো রান্না ও গুটিকয়েক বাতি জ্বালানোর কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে বায়োগ্যাস। ব্যতিক্রম গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের শিবু সরকার। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট দিয়ে কাপড় ইস্ত্রি থেকে শুরু করে ছোটখাট ঝালাইয়ের কাজও চালাচ্ছেন তিনি। তাঁর প্ল্যান্ট ঘুরে এসে জানাচ্ছেন সন্দীপ কুমার সেন

শিবু বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেন গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে। মার্চের শেষ নাগাদ সব কাজ হয়ে যায়। ২ দশমিক ৪ ঘনমিটারের প্ল্যান্টটি নির্মাণে সব মিলিয়ে খরচ হয় ৩৫ হাজার টাকা। নবায়নযোগ্য শক্তির আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কম্পানি লিমিটেড (ইডকল) থেকে ৯ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছিলেন শিবু। আর প্ল্যান্ট নির্মাণের পর্যবেক্ষক ছিল গ্রামীণ শক্তি।
শিবু সরকারের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল জৈব সার তৈরি ও রান্না। কিন্তু গ্যাস প্লান্টটি চার্জ করার আগেই চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যমুনায় বিলীন হয়ে যায় শিবুর নিজের ও বর্গা নেওয়া জমি। সম্বল ছিল দুটি গরু। দুটিই বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। তবে হাল ছাড়েননি শিবু। ভাবলেন গ্যাস প্লান্ট দিয়ে উপার্জনের কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না। বেশ কষ্টে আবার দুটি গরু কেনেন। কিন্তু গোবর কম হওয়ায় চার্জ হচ্ছিল না প্ল্যান্ট। এমন অবস্থায় কার না মাথা ঠিক থাকে! শিবু তাই রাগ করে গ্যাস তৈরির মূল ট্যাংকে গোবরের পরিবর্তে ঘাস ও বিভিন্ন বর্জ্য ঢেলে দিলেন। কিছু দিন পর প্ল্যান্টটি হঠাৎ চার্জ হয়ে গেল। বের হতে লাগলো গ্যাস! এতে নতুন আইডিয়া পেয়ে যান শিবু। একসময় কাজ করতেন ঝালাইয়ের ওয়ার্কশপে। তাই ভাবলেন অঙ্-িএসিটিলিন গ্যাসের কাজটি মিথেন দিয়ে করা সম্ভব কি না? গ্যাসপাইপের সঙ্গে জুড়ে দিলেন একটি অঙ্েিজনের পাইপ। এখন শিবু সেই বায়োগ্যাস প্লান্ট দিয়ে দিব্যি ঝালাই চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্য একটি গ্যাসপাইপ দিয়ে চুলা জ্বালিয়ে গরম করছেন ইস্ত্রি। আর এতে করে টুকটাক আয়ও হচ্ছে।
এখন শিবু সরকারের চিন্তা হলো প্লান্টে উৎপাদিত গ্যাস সিলিন্ডারে ঢোকানো। মিথেন গ্যাসকে বোতলজাত করার পাম্প মেশিনের সঙ্গে প্লান্ট থেকে আসা গ্যাসপাইপ যুক্ত করে গ্যাস বোতলে ঢোকানোর চেষ্টা করছেন শিবু।
বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরির প্রচলিত নিয়ম উপেক্ষা করেছেন শিবু। আর প্রমাণ করেছেন একটা সামান্য উদ্যোগই পারে দেশকে চলমান জ্বালানি সংকট থেকে অনেকখানি বাঁচিয়ে দিতে।
Source: Daily Kalerkantho

প্রজাপতি সখা

প্রজাপতি সখা
জাবির প্রাঙ্গণে নির্ভয়ে ডানা মেলেছে বাহারি প্রজাপতি ছবি_মোহাম্মদ আসাদ, ড. মনোয়ার হোসেন

প্রজাপতির রঙিন পাখার পেছনে ছুটে শৈশব কেটেছে সবারই। তাই বলে বড় হয়েও দিনরাত প্রজাপতির পেছনে ছোটাছুটি! অবশ্য সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে নয়, গবেষণার জন্যই প্রজাপতির পেছনে ছুটে চলছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন। গত বছরের শেষ দিকে তাঁর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হয়েছিল প্রজাপতির মেলা। প্রজাপতিপ্রেমী এ গবেষকের গল্প শোনাচ্ছেন সমুদ্র সৈকত

'উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি' এই স্লোগান ছিল সবার মুখে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ঊ ক্যাম্পাসের জহির রায়হান অডিটরিয়ামের সামনে ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে জাল দিয়ে ঘেরা 'প্রজাপতি ঘরে' শতাধিক প্রজাতির শত শত প্রজাপতি দেখেন দর্শনার্থীরা। 'পরিবেশের জন্য প্রজাপতির উপকারিতা তুলে ধরা এবং তা সংরক্ষণে জনগণকে সচেতন করতেই এ মেলা', জানালেন ড. মনোয়ার হোসেন।
১৯৯৬ সালে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ঢোকার পর থেকেই প্রজাপতি নিয়ে মেতে আছেন মনোয়ার হোসেন। চারটি নতুন প্রজাতির প্রজাপতি আবিষ্কার করেছেন তিনি। এত কিছু থাকতে এই চপলমতি পতঙ্গের পেছনে কেন? 'জাপান ও চীনের একদল গবেষক সোলার প্ল্যান্টে প্রজাপতির পাখার উপাদান ব্যবহার করে প্রচলিত সোলার প্যানেলের চেয়ে ১০ গুণ বেশি শক্তিশালী প্যানেল তৈরি করেছেন। তাই প্রজাপতির কাছ থেকে তথ্য নিয়ে দেশে সৌরশক্তির বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।'
'বাটারফ্লাই কালার ভিশন'-এর ওপর প্রি ডক্টোরাল ফেলোশিপ করেছেন ড. মনোয়ার হোসেন। পিএইচডি করেছেন মলিকুলার ডেভেলপমেন্টাল বায়োলজি বিষয়ে। 'বাটারফ্লাই কালার ভিশন' সম্পর্কে বললেন, 'মানুষের কোনো কিছু দেখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে রং। চোখ দিয়ে দেখার পর মস্তিষ্ক কিভাবে বিশ্লেষণ করে তা আজও অজানা। প্রজাপতির ক্ষেত্রে এ রহস্য অনেকখানি উন্মোচিত হয়েছে। মানুষের চোখ মৌলিক তিনটি রং লাল, সবুজ ও নীল শনাক্ত করতে পারে। অন্যদিকে 'ওমাটিডিয়াম' নামের প্রজাপতির যৌগিক চোখ ধরতে পারে সাতটি রং। তাই প্রজাপতির দৃষ্টি রহস্য পুরোটা ভেদ করতে বিজ্ঞানীরা উঠেপড়ে লেগেছেন। কারণ প্রজাপতির মস্তিষ্কের লেমিনার মনোপোলার অংশের সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্কের বাইপোলার সেলের সাদৃশ্য আছে। প্রজাপতি কিভাবে দেখে তা জানা গেলে সে বিজ্ঞান মানুষের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। তখন তুড়ি মেরে ঠিক করা যাবে চোখের নানান রোগ। জানা যাবে মানুষের রং পছন্দ-অপছন্দের কারণও। আর তা প্রয়োগ করা যাবে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে।' বুঝুন এবার, প্রজাপতি কি কেবল কবিতার বিষয়!
এ সব কারণে প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য ড. মনোয়ার তাঁর শিক্ষার্থীদের নিয়ে দিনের পর দিন ঘুরে বেড়াচ্ছেন বনে-জঙ্গলে। কোন প্রজাতির প্রজাপতি কোন গাছে বাস করে, কোন গাছের পাতা কিংবা কোন ফুলের মধু বেশি খায় তা নিশ্চিত করতে খাটছেন নিরলসভাবে। ড. মনোয়ার জানালেন, 'ক্যামেরার লেন্সে চোখ রেখে মাঝে মাঝেই প্রজাপতির পিছু নেই। ডোবা পুকুরের কোমর জলে নেমেও ছবি তুলেছি। বৃষ্টির জলেও ভিজেছে সাধের ক্যামেরাটা। তবে নতুন প্রজাপতির দেখা পাওয়া মাত্রই যেন ভুলে গেছি হাড়ভাঙ্গা খাটুনির কথা।' প্রজাপতির গবেষণার জন্য ফটোগ্রাফি খুবই জরুরি। এতে প্রজাপতির পছন্দের গাছেরও ছবি পাওয়া যায়। প্রজাপতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত গাছগুলো শনাক্ত করতে পারলে তাদের সংরক্ষণের পথটা অনেকটাই সহজ হয়ে আসবে। ওই বিশেষ গাছগুলো বেশি করে লাগিয়ে প্রজাপতির আবাস সুনিশ্চিত করা যাবে।
ফুলের পরাগায়ন ঘটাতে মৌমাছির পরেই প্রজাপতির অবস্থান। আর পরাগায়ন না ঘটলে বীজ, ফল আর উদ্ভিদের অভাবে মারা যাবে সবাই। প্রজাপতির লার্ভা খেয়ে গিরগিটি, পিঁপড়া, মাকড়শাসহ অন্যান্য প্রাণী বেঁচে থাকে। বাস্তুসংস্থান টিকিয়ে রাখতে প্রজাপতির অবদান তাই অসামান্য। অনেক ক্ষতিকর পোকামাকড়ও খায় এ পতঙ্গ।
প্রজাপতির বাণিজ্যও কিন্তু মন্দ নয়। অনেক দেশেই প্রজাপতির বড় বড় খামার আছে। ড. মনোয়ার হোসেন জানালেন, 'বছরে বিশ্বে ২ থেকে ৩ কোটি ডলারের প্রজাপতি বিকিকিনি হয়। তবে এর বেশির ভাগই বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য।' তাই দেশে অর্থনীতির পাল্লা ভারী করতে বাণিজ্যিকভাবে প্রজাপতির চাষ করা যেতে পারে বলে মনে করেন এই গবেষক।
প্রজাপতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার জন্য ড. মনোয়ার হোসেন নিজ বিভাগে প্রতিষ্ঠা করেছেন 'অ্যান্টোমলজি ল্যাব'। বেশির ভাগ সময় সেখানেই কাটান। প্রজাপতি নিয়ে গবেষণার জন্য ইনকিউবেটর থেকে শুরু করে শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপ, হাই সেন্সেটিভ রেফ্রিজারেটর, সেন্ট্রিফিউজ মেশিন, রিয়ার-ইন কেইজ, ইনসেক্ট সুইপিং নেট, কিলিং জার; সবই আছে সেই গবেষণাগারে। কীটতত্ত্ববিদ ড. মনোয়ার জানালেন, নতুন প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত করতে কিংবা উচ্চতর গবেষণার জন্য প্রথমে সুইপিং নেট দিয়ে প্রজাপতিটি সংগ্রহ করতে হয়। এরপর ওটাকে ল্যাবের পাঁচ ফুট বাই পাঁচ ফুট জাল দিয়ে ঘেরা বিশেষ ঘরে (রিয়ার-ইন কেইজ) রাখা হয়। সেখানে আগে থেকেই প্রজাপতির পছন্দ অনুযায়ী গাছ রাখতে হয়।
প্রজাপতির গড় আয়ু দুই থেকে পাঁচ সপ্তাহ। তবে দু'একটি প্রজাতি এক বছরও বাঁচে। পরিবেশের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও দিনের দৈর্ঘ্যের ওপর এর আয়ু নির্ভর করে। প্লেন টাইগার প্রজাপতি গড়ে ২৮ দিন বাঁচে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্ত্রী ও পুরুষ প্রজাপতি মিলিত হয়। এরা ডিম পাড়ে গাছের পাতায়। ডিম থেকে লার্ভা বের হতে লাগে এক-দুই দিন। প্রাকৃতিকভাবে না ফুটলে ইনকিউবেটরে ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ডিম ফুটান গবেষকরা। প্রাকৃতিকভাবে ডিম থেকে লার্ভা তৈরির হার ১০ শতাংশ হলেও গবেষণাগারে তা ৩৫ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। এরপর শুরু হয় প্রজাপতির পিউপা দশা। মনোয়ার হোসেন জানালেন, 'গবেষণার প্রয়োজনে পিউপা অবস্থায় প্রজাপতিকে রেফ্রিজারেটরে মাইনাস ১০ থেকে মাইনাস ১৫ ডিগ্রিতে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।' এরপর ওই পিউপা পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতিতে পরিণত হয়। এভাবে উৎপন্ন প্রজাপতি নিয়ে পরে গবেষকরা বিভিন্ন গবেষণা করে থাকেন। 'ড্রাই প্রিজারভেশন' নামের একটি কৌশলে মৃত প্রজাপতি সংরক্ষণ করেন গবেষকরা। 'বাটারফ্লাই প্রিজারভেশন ক্যাবিনেট'-এ সংরক্ষিত প্রজাপতিগুলো নিয়েই বেশির ভাগ গবেষণা হয়।
প্রজাপতি ছোট পতঙ্গ হলেও এর গবেষণার খরচ প্রচুর। তাই প্রজাপতি নিয়ে উন্নত গবেষণার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা বেসরকারি উদ্যোগের বিকল্প নেই বলে মনে করেন প্রজাপতি অন্তঃপ্রাণ ড. মনোয়ার হোসেন।

দেশে প্রজাপতি নিয়ে প্রথম গবেষণা শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহমুদুল আমিন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফিক হায়দার চৌধুরী ২৭ প্রজাতির প্রজাপতি শনাক্ত করেন। ১৯৮৩-৮৫ সালে চট্টগ্রামের ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক এম এ ওয়াহিদ, বক্শ চৌধুরী ও জে এইচ চৌধুরী দেশের বিভিন্ন বনে-জঙ্গলে আরো ৩৩টি প্রজাতি চিহ্নিত করেন। ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় গবেষণা চালিয়ে ২১ প্রজাতির সন্ধান পান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম এস আলম ও জি এম উল্লাহ।
এরপর ১৯৯৬ সালে ড. ইসমাইল হোসেন, ড. শফিক হায়দার ও সহযোগী অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন গবেষণা চালিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫১ প্রজাতির প্রজাপতির সন্ধান পান। এর মধ্যে নতুন প্রজাতি ২১টি। ২০০৩ সালে ড. মনোয়ারের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থী এম এ রাজ্জাক গবেষণা করে আরো ৩৯ প্রজাতি চিহ্নিত করেন, যার মধ্যে ৩৬টিই নতুন! ২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ বাশার সারা দেশে ১৬৭ প্রজাতি শনাক্ত করতে সক্ষম হন। সর্বশেষ ২০১০ সালে ড. মনোয়ার হোসেন যে চারটি প্রজাতি শনাক্ত করেন সেগুলো হলো_স্ট্রাইপেড পাইরোট, মাংকি পাজল, ব্লু প্যানসি ও পেইন্টেড লেডি।
Source: Dailykalerkantho

জৈব কৃষির এক সরব অভিযাত্রী : সেলিনা জাহান

জৈব কৃষির এক সরব অভিযাত্রী : সেলিনা জাহান

মাটি ও মানুষের কৃষি ডেস্ক

মাটি আর ফসলের সঙ্গে নিবিড় প্রেম কৃষকের। মাটিতে অংকুরিত ফসল যেমন জানান দেয় তার খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা। বিপর্যস্ত মাটিও বলে দেয়, তার শক্তি হারানোর যন্ত্রণা। মাটি তার সর্বস্ব বিলিয়ে চলেছে ফসলের পেছনে। আমরা তাকিয়ে থাকি ফসলের দিকে। কিন্তু ফসলের ভলমন্দের জন্য যে জননীর সকল অবদান সেই মাটির কথা খুব বেশি ভাবি না। যেসব কৃষক নিবিড়ভাবে এই চিত্র উপলব্ধি করেছেন তারা সত্যিই ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন।

এই অবস্থায় সত্যিই মাটি বার বার আমাদের কাছে চাইছে পুষ্টিকর খাদ্য। মাটি- যাকে আমরা জননী বলছি, সেই জননীর ব্যথা যেন খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করছেন আরেক জননী। বলছি নরসিংদীর সেলিনা জাহানের কথা। যিনি গ্রামীণ নারীদের চার দেয়ালের ভেতর থেকে টেনে বের করে এনেছেন ফসলের মাঠে। একেকজন নারীর মনে যিনি রোপণ করেছেন স্বাবলম্বি হওয়ার ইচ্ছের বীজ। আর জানান দিয়েছেন, যে নারীর হাত দিয়ে একদিন এই কৃষির আবির্ভাব, কৃষিকে সচল রাখতে হাল ধরতে হবে সেই নারীদেরকেই।

নরসিংদীর শিবপুর, রায়পুরা উপজেলার গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে পেঁৗছেছেন সেলিনা জাহান। সাংসারিক নানা সমস্যা আর সংকটে পিছিয়ে পড়া নারীরা তার চোখেই দেখেছেন এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। সবজি চাষ, পোল্ট্রি খামার, ছোট ছোট ফলের বাগান করে কেউ কেউ স্বাবলম্বিও হয়েছেন। আবার অনেকেই পরিবেশসম্মত ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে সাফল্য দেখিয়েছেন। এই এলাকায় চ্যানেল আই-এর হূদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে বেসরকারি সংগঠন সেফ এগ্রিকালচার ও স্থানীয় কৃষি বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের যে অভিযান শুরু হয়, তা স্বউদ্যোগে এগিয়ে নিয়ে যান সেলিনা জাহান। এ যেন বিষের বিরুদ্ধে এক অভিযান। ক্ষতিকর রাসায়নিকের বিরুদ্ধে এক সামাজিক আন্দোলন। যেখানে রয়েছে মাটি পরিবেশ তথা গোটা জনস্বাস্থ্যকে বাঁচানোর তাগিদ। এর ধারাবাহিকতায় গ্রামীণ নারীরা সম্পৃক্ত হয়েছেন কেঁচো কম্পোস্ট অর্থাৎ জৈব সার তৈরির একটি কার্যকর অভিযানে। সেখানেও মধ্যমণি সেলিনা জাহান।

নরসিংদী শিবপুর উপজেলার সৈকারচর গ্রাম। ওই গ্রামেই সেলিনা জাহানের বাবার বাড়ি। বাড়িটির পাশেই সেলিনা তার নিজের জমিতে গড়ে তুলেছেন জৈব সার তৈরির মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের আয়বৃদ্ধির প্রকল্প। শুরুটা ২১জন নারী দিয়ে। কেঁচো কম্পোস্ট তৈরির এই কাজটি এখন এই নারীদের কাছে বাণিজ্যিক এক কৃষি উৎপাদন।

অল্পদিনের উদ্যোগীই এলাকার নারীরা বুঝে গেছেন প্রাকৃতিক লাঙল কেঁচোর গুরুত্ব। কোনটি হাইব্রিড কেঁচো, কোন কেঁচোর সার উৎপাদন ক্ষমতা ভাল, আর কোন কেঁচোর মাধ্যমে ভাগ্য খুলে যাচ্ছে এই হিসাবগুলো এখন সব নারীরই জানা। হাউস তৈরি, গোবর, কলাগাছ ও কচুরিপানার মিশ্রণের মধ্যে সার তৈরির মূল উপাদান কেঁচো প্রয়োগ, ৪৫ দিনে সার উৎপাদন এবং উৎপাদিত সার জমিতে প্রয়োগের উপযোগী করার কাজটির মধ্যে আলাদা এক আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন নারীরা। কারণ এখান থেকে ভালই অর্থ আসছে তাদের। আর এই উৎসাহ এখন পেঁৗছে গেছে বিভিন্ন এলাকায়। সবখানেই সেলিনা জাহানের দেখানো পথে ছুটছেন একে একে অনেকেই। নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় এখন নারীরা সংগঠিত হয়ে গড়ে তুলছেন কেঁচো কম্পোস্ট পস্নান্ট। আর পস্নান্টের একেকটি হাউস একেকজন নারীর কর্মস্থল।

নারীদের এই এগিয়ে আসা এবং তাদের উদ্বুদ্ধ করার পেছনে রয়েছে বিভিন্ন মহলের আন্তরিক উদ্যোগ ও সহায়তা। এক্ষেত্রে সক্রিয় উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের খুব কাছে এসে কেঁচো কম্পোস্ট প্রকল্পকে এগিয়ে নিচ্ছেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক অমৃত বাড়ৈ।

কৃষি বিভাগ কীভাবে সহায়তা করেছে এ প্রশ্ন নিয়ে কথা হল স্থানীয় উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, আমরা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কীভাবে কী করতে হবে তার সহযোগিতায় কমতি করছি না।

তৃণমূলে কোনো কোনো ইউনিয়ন পরিষদও জৈব কৃষির এই অভিযানে বেশ উদ্যোগী। তাদের মধ্যে একজন নরসিংদীর যশোর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন। তিনি জানালেন, এই এলাকায় কেঁচো কম্পোস্ট ছড়িয়ে পড়ার শুরুর দিকেই তার ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় প্রশিক্ষণের। সেখানেই প্রথম প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন সেলিনা জাহান।

এ তো গেল উৎকৃষ্ট জৈব সার উৎপাদনের প্রসঙ্গ। মাঠ পর্যায়ে এই জৈব সার ব্যবহারের কার্যকারিতায় এসেছে সুফল। এবার আমন মৌসুমে জৈব সার ব্যবহার করে তারা কীভাবে উৎপাদন খরচ সাশ্রয় করেও পেয়েছেন অনেক বেশি ফলন।

যারা সবজি ফসলে এই কেঁচো জৈব সার ব্যবহার করছেন তারা শুধু সারের ব্যয়ই কমাচ্ছেন না, রীতিমত কীটনাশকের খরচ থেকেও রেহাই পাচ্ছেন। এই কেঁচো সার দেয়ার কারণে পোকা-মাকড়েরর আক্রমণ কম হচ্ছে।

এই এলাকায় জৈব সার উৎপাদন তথা এতসব সাফল্যচিত্রের পেছনে সবচেয়ে নিবিড় ভূমিকা সেলিনা জাহানের। যিনি তার জীবনকেই নিবেদন করেছেন স্বাস্থ্যকর কৃষির পেছনে। কৃষিক্ষেত্রে সেলিনা জাহানের পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও একের পর এক নতুন পদ্ধতি সম্প্রসারণের সাংগঠনিক দক্ষতা যেকোনো এলাকার শিক্ষিত সচেতন নারী-পুরুষের জন্যই হতে পারে অনুকরণীয়। সেলিনা জাহান আজ শুধু কৃষকেরই সহায়ক নন, তিনি গবেষক ও বিজ্ঞানীদের সহায়ক, সহায়ক দেশের কৃষি সম্প্রসারণ ব্যবস্থার। দেশের প্রত্যেক এলাকায় এমন উদ্যোগী সংগঠক এখন সময়েরই চাহিদা।
Source: Daily Ittefaq

Related Other Blog:
http://biocompostbd.blogspot.com

Monday, January 3, 2011

মুক্তাগাছায় বাণিজ্যিকভিত্তিতে সাহেবী আলু চাষ

মুক্তাগাছায় বাণিজ্যিকভিত্তিতে সাহেবী আলু চাষ

০০মুক্তাগাছা সংবাদদাতা

বাংলাদেশের বিভিন্ন রকমের বুনো আলু পাওয়া যায়। মানুষের খাদ্য-তালিকায় এর অল্প ক'টি স্থান পেয়েছে। এসবের প্রায়গুলোই বুনো শূকর, সজারু ইত্যাদি প্রাণীর খাবার। তার মধ্যে গচ্চা আলু (নজ আলু), সাহেবী আলু ও গারো আলু খাবার হিসেবে সংগ্রহ এবং চাষ করা হয়। এর মধ্যে গারো আলু শুধুমাত্র মধুপুর, মুক্তাগাছা, রসুলপুরসহ গারো পাহাড় অঞ্চলে আদিবাসীদের পছন্দের খাবার। এটি বনেই জন্মায়, সাধারণত এর চাষ হয় না। অন্য দুই প্রজাতির আলু সার্বজনীনভাবে ব্যবহূত হয়। অর্থাৎ সবার কাছে সমাদৃত। এর মধ্যে বেশী জনপ্রিয় আলুটির নাম সাহেবী আলু।

সাহেবী আলুর লতানো গাছ বড় বড় বৃক্ষ-গুল্মর শাখা-প্রশাখা জড়িয়ে পলস্নবিত হয়। লতানো গাছের কাণ্ডে অসংখ্য গোলআলু ফলে। প্রতিটি আলু ১শ' থেকে ৫শ' গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়। গাছের মূলে মাটির নীচেও বিশাল আকারের আলু হয়। এই আলুর ওজন ৫ কেজি থেকে ১ মণ পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বরেন্দ্র ভূমি অঞ্চল মধুপুর-রসুলপুর গড় অঞ্চল এবং চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে এটি বেশি জন্মায়। এছাড়াও সারা বাংলাদেশে এটির কম-বেশি আবাদ হয়। চৈত্র-বৈশাখে সাহেবী আলুর লতা মাটি ভেদ করে গজায়। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়-শ্রাবণে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে। ভাদ্র থেকে একটানা ৪/৫ মাস ফল দেয়। সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সবজি হিসেবে মাছ, মাংস এমনকি সবজি রান্নাতেও এটির ব্যবহার জনপ্রিয়। অন্যান্য সবজি চাষের সম্ভাবনার চাইতে এটি চাষ নিরাপদ। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় অন্যান্য সবজির মত এটি নষ্ট হয় না। ব্যতিক্রমী কিছু উৎসাহী কৃষককে বাণিজ্যিকভিত্তিতে সাহেবী আলু চাষ করতে দেখা যায়। বাজারে এই আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হয়ে থাকে। মুক্তাগাছার দুলস্না, কুমারগাতা, বাঁশাটি, মানকোন, খেরুয়াজানী, বড়গ্রাম, তারাটি, ঘোগা, কাশিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বহু কৃষক সাহেবী আলু চাষ করছেন।
Source: Daily Ittefaq

ঈশ্বরগঞ্জে গুটিপোকার চাষ ।। ৭০ পরিবার স্বচ্ছল

ঈশ্বরগঞ্জে গুটিপোকার চাষ ।। ৭০ পরিবার স্বচ্ছল

০০ ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা

ভিন্নধমর্ী রেশম গুটিপোকার চাষ সহজেই একটি পরিবারে আনতে পারে আর্থিক সচ্ছলতা। তার প্রমাণ ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রেশম গুটিপোকার চাষ সংশিস্নষ্ট ৭০টি পরিবার। উপজেলার চরহোসেনপুর, পুম্বাইল, ভাইদগাঁও, কাকনহাটি, কুলস্নাপাড়া, রাউলেরচর, বড়জোড়া, চরশিহারী, ডাংরী, আশ্রবপুর, কাঁঠাল, জয়পুর ও জাটিয়া গ্রামের ৭০টি পরিবার রেশম গুটিপোকা চাষের বদৌলতে আজ বড়লোক হওয়ার পথে।
প্রকাশ, বাংলাদেশ রেশম বোর্ড, ময়মনসিংহ শাখা থেকে সরবরাহকৃত ছোট ছোট পোকার ডিম্বাণু অল্প কয়েকদিনেই পূর্ণাঙ্গ পোকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সাধারণত পরিচ্ছন্ন গোয়ালঘর, রান্নাঘর এমনকি বসতঘরেও এ পোকা অনায়াসে পালন করা যায়। পোকার প্রথম ও প্রধান খাদ্য হচ্ছে তোত গাছের পাতা। আর তোতগাছ সরাসরি কৃষকদের মাঝে নামমাত্র ৫০ পয়সা মূল্যে সরবরাহ করা হয়। সাধারণত পুকুর পাড়, ক্ষেতের আইল,বাড়ির আঙ্গিনা, সরকারি রাস্তার পাশে, এমনকি যে কোন অনাবাদি পতিত জমিতে সহজেই তোত গাছের আবাদ করা যায়। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস তোতগাছের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। পোকা পালনের ২০/২৫ দিনের মধ্যেই গুটিরূপ ধারণ করে। গুটি সাধারণত দুই রংয়ের হয়ে থাকে, সাদা ও সোনালী। চন্দ্রকী নামের বিশেষ চাটাইয়ে বাসকারী পোকা শারীরিকভাবে পূর্ণতা লাভের পর তার মুখ থেকে নির্গত লালা অাঁশে পরিণত হয়। পরে পোকা আপন শিল্পীসত্তা দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে নিজের ভেতরে অবস্থান করে গুটি তৈরি করে। তারপর পর্যায়ক্রমে গুটিতে রোদ লাগিয়ে ভেতরে অবস্থানকারী পোকা মেরে ফেলা হয় এবং বিশেষ প্রযুক্তিতে সংগ্রহ করা আঁশ পরবতর্ীতে রূপ নেয় বিশ্বখ্যাত সিল্ক সুতা হিসেবে। প্রতিটি গুটির সুতা আকারভেদে ১২শ' থেকে ১৮শ' গজ পর্যন্ত লম্বা হয়। বিশ্বজুড়ে সমাদৃত রাজশাহী সিল্ক ও ঢাকার মিরপুরের বেনারসী সিল্কের সুতা তৈরির একমাত্র উপাদান রেশমের গুটি। বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এগুটির রয়েছে প্রচুর কদর। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের রেশম গুটিপোকা চাষের উন্নয়ন ও সমপ্রসারণের লক্ষ্যে জাপান, ডেনমার্ক ও বাংলাদেশ যৌথভাবে ৫ বছর মেয়াদী (জেডিসিএফ) নামক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গুটিপোকার চাষ সমপ্রসারণ ও কৃষকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বর্তমানে পোকাপালনের উপকরণ বিতরণ, আর্থিক ঋণ ও পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। আর কৃষকদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সরাসরি টাকার পরিবর্তে উৎপাদিত রেশমের গুটি দিয়ে যেমন রয়েছে ঋণ পরিশোধের অভিনব পন্থা তেমনি সরাসরি প্রকল্প অফিসে গুটি বিক্রি করেও চাষীরা পাচ্ছেন নগদ অর্থ।
এব্যাপারে বিভাগীয়ভাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত ঈশ্বরগঞ্জে কর্মরত রেশম প্রতিপালক মকবুল হোসেন জানান, এবছর উপজেলায় ৭ জন সফল চাষীকে ৮ হাজার টাকা করে ৫৬ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। সেই সাথে ঈশ্বরগঞ্জে ৭০টি পরিবারের ৫৩ জন চাষীকে (বসনী) ৫ থেকে ২৫ দিন মেয়াদী বছরে ২/৩ বার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
আশ্রবপুর গ্রামের চাষী মাহতাবউদ্দিন জানান, অল্প পরিশ্রমে গুটিপোকার চাষ করে সহজেই ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা উপার্জন করা সম্ভব। গ্রামের দরিদ্র জনগণের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনয়নের লক্ষ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ময়মনসিংহ প্রকল্প কার্যালয়ে বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীল চন্দ্র পাল সরাসরি চাষীদের সাথে মতবিনিময় করেন। ফলে কৃষক অনুপ্রাণিত হয় এবং অতিশীঘ্রই ময়মনসিংহ অঞ্চলে রেশম গুটিপোকা চাষে নীরব বিপস্নব সাধিত হবে বলে সংশিস্নষ্টরা জানান।
এব্যাপারে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ইত্তেফাককে জানান, বর্তমানে জনবল সংকটের কারণে এ অঞ্চলে রেশম গুটিপোকা চাষ উন্নয়ন কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম রেশম চাষের সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সংশিস্নষ্ট ঊধর্্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
Source: Daily Ittefaq, 26th January-2011

কানাইলালের কমলা

কানাইলালের কমলা আবদুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁওঅন্য ফলের চেয়ে কমলাকে একটু বেশিই ভালোবাসেন কানাইলাল। তাই ভোক্তা থেকে এখন সফল কমলাচাষি। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার কাদিহাট গ্রামের এ চাষি জানান, ১৯৯৬ সালে কমলার কয়েকটি বীজ তিনি বাড়ির উঠানে বপন করেন। এক সময় তা থেকে চারা গজায়। সাড়ে ৫ বছর পর কমলা ধরে। শেষ পর্যন্ত টিকে ছিল ৪টি। স্বাদ ও গন্ধ বেশ ভালো। তিন বছর পর থেকে ৪৩টি গাছের ৩২টিতে নিয়মিত কমলা ধরছে। প্রতিটি গাছে ২০০ থেকে ১ হাজার কমলা ধরে। এ বছর তিনি প্রতিটি কমলা গড়ে ৮ টাকা বিক্রি করে ৩২ হাজার টাকা আয় করেছেন। এলাকায় তার পরিচিতি এখন সফল কমলাচাষি হিসেবে। তার দেখাদেখি অনেকেই কমলার বাগান করেছেন। এ গ্রামের আরও এক সফল কমলাচাষি রুস্তম আলী। সদর উপজেলার আকচা গ্রামের হাসান আলীও কমলা চাষে সাফল্য পেয়েছেন। জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের উপযোগী এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেকেই কমলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ২০০৩ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় দেশে কমলা চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে টাস্কফোর্স গঠন করে। এ টাস্কফোর্স পরীক্ষা-নিরীক্ষা ১০টি জেলার ৪০টি উপজেলা কমলা চাষের উপযোগী হিসেবে শনাক্ত করে। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সুনিষ্কাশিত বেলে দো-আঁশ, দো-আঁশ এবং মাটিতে অম্লত্বের (পিএইচ) পরিমাণ সাড়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশ থাকলে কমলা চাষ করা যায়। এ ছাড়া তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে নয় এবং ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের ওপরে নয়। ঠাকুরগাঁও জেলার ২৩ হাজার ৬৫২ হেক্টর জমি কমলা চাষের উপযোগী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এর ভিত্তিতে ২০০৬ সালে কানাইলালের বাগানটি কমলা চাষ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। উৎপাদন বাড়াতে এখানে সরকারিভাবে ৭৫ হেক্টর জমিতে কমলার চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া ৪ হাজার ১৫০টি বসতভিটায় গড়ে ১২টি করে ৪৯ হাজার ৬৮০টি কমলা গাছ রোপণ করা হয়।
এ ছাড়াও কমলা বাগান রয়েছে ৭৫টি। কমলা চাষির সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ১০০ জন। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ১৫০ জনকে। গত মৌসুমে কমলা উৎপাদন হয় ৩০ হাজার মেট্রিক টন। এবার উৎপাদন আরও বাড়বে বলে মনে করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
Source: Daily Bangladesh Pratidin

প্রসঙ্গ :মানসম্মত শস্যের উৎপাদন

প্রসঙ্গ :মানসম্মত শস্যের উৎপাদন

এম জি মহিউদ্দীন আহম্মদ

আমাদের দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর বিকল্প নেই। তাই প্রায় পাঁচ দশক থেকে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর বহুমাত্রিক তৎপরতা চলছে। ধারাবাহিক এ তৎপরতায় খাদ্য-শস্য উৎপাদন উলেস্নখযোগ্যভাবে বেড়েছে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষক তার শস্য রক্ষা করতে অব্যাহতভাবে কীটনাশক ব্যবহার করছে। শস্য রক্ষায় ঢালাওভাবে কৃষকদের কীটনাশক প্রয়োগে খাদ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। শস্যের সাথে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশের অবস্থান খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও সৃষ্টি করছে।

তাছাড়া কীটনাশকের প্রত্যক্ষ প্রভাবে জলজ উদ্ভিদ বিলুপ্ত হচ্ছে এবং মাছের উৎপাদন কমছে। বৃষ্টির পানির সাথে কীটনাশক খাল-বিল নদী-নালায় যায় এবং মাছের ডিম ধ্বংসে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে। তাই আমাদের দেশের মুক্ত জলাশয়ের মাছের যোগান অব্যাহতভাবে কমছে। আর মাছ আমাদের খাদ্যে পুষ্টি যোগানে সে অতীত থেকেই ভূমিকা রেখে আসলেও কীটনাশকের প্রভাবে ব্যাপক নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তাই আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিহীন এবং মানসম্পন্ন খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করতে কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া অপরিহার্য। খাদ্যমান নিশ্চিত করতে হলে কীটনাশক প্রয়োগে আমাদের অবশ্যই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

ধান,গম এসব দানা জাতীয় খাদ্য-শস্যের চেয়ে শাক-সবজি ও ফল-মূলে কীটনাশকের প য়োগ আমাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকির কারণ। শাক-সবজি ও ফল-মূলে কীটনাশকের অবস্থান বেশী থেকে যায় বিধায় ঝুঁকির পরিমাণও বেশী।

উৎপাদন বাড়ানোর তৎপরতা অব্যাহতভাবে চালাতে হবে এ বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ না থাকলেও ঢালাওভাবে কীটনাশকের প্রয়োগ রোধ করতেই হবে। তাই মানসম্পন্ন খাদ্য-শস্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে আমাদের তৎপর হতেই হবে। খুশির বিষয় এ ক্ষেত্রে সীমিত পর্যায়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে। প্রাকৃতিক উৎস হতে জৈব কীটনাশকের সন্ধানে কৃষকদের তৎপর হতে দেখা যায়। বিভিন্ন সময় আমাদের প্রচার মাধ্যমে জৈব কীটনাশক প্রয়োগে সাফল্য চিত্র প্রচারিত হতে দেখা যায়। গত ২০ শে জানুয়ারী ২০১১ তারিখ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রচারিত গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় লতিফের বালাইনাশক ওষুধ সাড়া ফেলেছে। শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। এ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের প্রতিভাবান কৃষক আবদুল লতিফ দেশীয় গাছপালা দিয়ে বালাইনাশক তৈরি করে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছে। দেশের প্রচলিত কীটনাশক ব্যবহার না করে এ এলাকার প্রায় ২৭ কৃষক ১ হাজার ৮শ বিঘা জমিতে আবদুল লতিফের তৈরি ভেষজ কীট ও বালাইনাশক ব্যবহার করে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়ায় ক্রমেই অন্য কৃষকরা উক্ত বালাইনাশক ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ভেষজ বালাইনাশকের এ সাফল্য কৃষকদের আকৃষ্ট করার খবরটি আমাদের নতুনপথের সন্ধান দিবে এটা আশা করা যায়। জানা যায় , উচ্চশিক্ষাবঞ্চিত হয়ে আবদুল লতিফ কৃষি কাজে জড়িত হয় এবং সাফল্য নিশ্চিত করতে তৎপরতা চালায়। জানা যায়, অবিবাহিত লতিফ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গাছপালা, লতাগুল্ম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উলেস্নখিত ভেষজ কীট ও বালাইনাশক আবিষ্কার করেন। লতিফ জানান, পরিমাণমত নিমপাতা, নিমগাছের অংশ, নিমের বীজ, তুলসি পাতা, মেহগনি গাছের বীজ, আতা গাছের পাতা মিশিয়ে পরিবেশবান্ধব ওষুধ তৈরি করা হয়েছে। এ কৃষকের আবিষ্কার এলাকার কৃষকদের ভেষজ কীট ও বালাইনাশকের সন্ধান দিয়ে মানসম্পন্ন শস্য উৎপাদনের পথ দেখিয়েছে। এ অভিজ্ঞতা দেশের কৃষকদের মাঝে পেঁৗছানো গেলে মানসম্পন্ন শস্য উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানোরও সম্ভব হতে পারে। আর এ কাজটি সহজ হতে পারে আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে এ অভিজ্ঞতা পেঁৗছে দেয়া। এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ্য, ইতিপূর্বেও এ ধরনের সংবাদ প্রতিবেদনে ভেষজ বালাইনাশকের প্রয়োগের সাফল্য চিত্র প্রচারিত হয়েছে। নিমের বীজ থেকে তেল তৈরি করে বালাইনাশক হিসেবে প্রয়োগেও সাফল্য এসেছে বলে জানা যায়। মেহগনি বীজ থেকে তেল তৈরি করে বালাইনাশক হিসেবে ব্যবহার করেও সাফল্যের কথা জানা গেছে। বিচ্ছিন্নভাবে এসব তৎপরতা চলতে থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে ভেষজ বালাইনাশক তৈরির কথা জানা যায়নি। কৃষকদের ভেষজ বালাইনাশকের কার্যকরী প্রয়োগ সম্বন্ধে অবগত করা হলে সাফল্য আসতে পারে সহজেই। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে ভেষজ বালাইনাশক তৈরি করার উদ্যোগ নেয়াও দরকার। মানসম্পন্ন শস্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে ভেষজ বালাইনাশকই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

আমাদের দেশে কৃষিবিদ জনশক্তি বিকশিত হয়েছে। তাদের লেখা সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও ভেষজ বালাইনাশকের কার্যকরী অবস্থার কথা জানা যায়। তাই বাণিজ্যিকভাবে ভেষজ বালাইনাশক উৎপাদনের জন্য উদ্যোগ নেয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে সরকারী উদ্যোগই সাফল্য নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক তৎপরতায় সরকারই মুখ্য ভূমিকা রেখে আসছে। আর কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর সাফল্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বর্তমান সরকার কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বহুমাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্যঝুঁকিমুক্ত মানসম্পন্ন খাদ্য-শস্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগের পরিবর্তে ভেষজ বালাইনাশক ব্যবহার ত্বরান্বিত করতে সরকারকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্যোগী হওয়া দরকার।

এ ধরনের পদক্ষেপে সাফল্য অর্জনের জন্য কৃষকদের ভেষজ বালাইনাশকের সাথে পরিচিত করতে হবে এবং রাসায়নিক কীটনাশকের ক্ষতিকর দিকগুলো জানাতে হবে। উলেস্নখ্য, আমাদের দেশের কৃষকরা শস্য উৎপাদনে ভালো যে কোন পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কৃষকদের ভেষজ বালাইনাশকের সাথে পরিচিত করানোর পাশাপাশি দেশে ভেষজ উদ্ভিদ উৎপাদন তৎপরতাও ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তা হলে বাণিজ্যিকভাবে ভেষজ বালাইনাশক পর্যাপ্ত্ত পরিমাণে উৎপাদন করা সহজতর হতে পারে। তাছাড়া ভেষজ বালাইনাশক বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্যও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কৃষক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ভেষজ বালাইনাশক সরবরাহ কর প্রয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব হলেই কেবল মানসম্পন্ন খাদ্য-শস্যের জোগান বাড়ানো যেতে পারে। আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানোর জন্য মানসম্পন্ন খাদ্য-শস্যের যোগান পাবার বিকল্প নেই। তাই এ ক্ষেত্রে সাফল্য নিশ্চিত করা আমাদের জন্য অপরিহার্য।

[লেখক : সাবেক ব্যাংকার ]