Monday, September 26, 2011

বরফবাক্স : মাছ সংরক্ষণের সাশ্রয়ী কৌশল

বরফবাক্স : মাছ সংরক্ষণের সাশ্রয়ী কৌশল

লেখক: আব্দুসসালাম সাগর, বাকৃবি, ময়মনসিংহ |

Details

বাংলাদেশে মাছ ধরার পর থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণের প্রতিটি ধাপে মত্স্যজীবী, মাছ ব্যবসায়ী বা মাছ পরিবহনকারীদের অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে বিপুল পরিমাণ মাছ পচে নষ্ট হয়ে যায়। মাছ ধরার পর থেকে ভোক্তার কাছে পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত গুণাগুণ প্রায় ২৫ থেকে ২৮ শতাংশও টিকে থাকে না। মাছ পচনের এসব ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মাছ সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য বরফ বাক্সের ব্যাপক প্রচলনের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। সমপ্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট মত্স্যবিজ্ঞানী ও বাকৃবির অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. নওশাদ আলম এসব তথ্য দেন।

অধ্যাপক ড. নওশাদ আলম জানান, এফএও এর অর্থায়নে মত্স্য বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত ‘উপকূলীয় মত্স্যজীবীদের জীবিকার নিরাপত্তার জন্য ক্ষমতায়ন (ইসিএফসি)’ শীর্ষক এক প্রকল্পের গবেষণায় দেখা গেছে, মাছ ধরার পর পর মাছকে যথোপযুক্ত বরফ বাক্সে রেখে পরিমাণমত বরফ দিলে মাছের আহরণোত্তর ক্ষতি প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব। বর্তমান সময়ে সঠিকভাবে বরফ বাক্সে মাছ সংরক্ষণ ও পরিবহনের ফলে বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে, যা আমাদের মত একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে।

মত্স্যজীবী ও মাছ ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করে মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য ড. নওশাদ আলম দেশীয় বস্তু দিয়ে তৈরি কয়েকটি আদর্শ ও ব্যয় সাশ্রয়ী বরফ বাক্স তৈরি করেছিলেন। বর্তমান সময়ে এসব বরফ বাক্স দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি হিসেবে বর্তমানে দেশে বছরে মাছ উত্পাদন প্রায় ২৮ লক্ষ মেট্রিক টন। যথাযথ পরিচর্যার অভাবে এর প্রায় চার ভাগের এক ভাগ অর্থাত্ প্রায় ৭ লক্ষ মেট্রিক টন মাছ খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়।

ইসিএফসি এ প্রকল্পটি ২০০১ সাল থেকে শুরু হয়ে চলমান থাকে ৬ বছর। তবে মাছ পরিবহন ও অবিক্রিত মাছ বরফে সংরক্ষণ করে পরে বিক্রির জন্য বরফ বাক্সের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়তে থাকে। কক্সবাজার থেকে শুরু হলেও এই সহজ ও টেকসই প্রযুক্তিটি চট্টগ্রাম, ঢাকা, যশোর, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের প্রধান প্রধান মাছ উত্পাদন ও ব্যবসা অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ২০১১ সালে এসে

দেখা যায় দেশের প্রায় সকল মত্স্য কেন্দ্র, আড়ত ও মাছ বাজারে বরফ বাক্সের ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে বলে দাবি করেন ড. নওশাদ আলম। ড. নওশাদ আলম সম্পাদিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দাউদকান্দি প্লাবনভূমি মত্স্য প্রকল্পের মাছ একটির উপর আর একটি বসানো পর পর ২টি বাঁশের ঝুড়িতে রেখে ট্রাকে পরিবহন করে চট্টগ্রামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ২৭ ভাগ মাছ পচে নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে মাছ চাষিরা ৩০ শতাংশ মূল্য কম পেয়েছেন। অবিক্রিত মাছ সংরক্ষণের জন্য বরফ বাক্স অপেক্ষাকৃত ছোট বরফ বাক্স (৩০ x ২৪ x ১৮ ইঞ্চি) এবং ট্রাকে মাছ পরিবহনের জন্য কমিউনিটি বরফ বাক্সের (৬ x ৩ x ৩ ফুট) ব্যবহার করা হয় যেটি তুলনামূলকভাবে বড় আকারের। প্রয়োজনের তাগিদে মাছ পরিবহনকারীরা ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন করে নিয়েছেন। বড় বাক্সে শীতকালে বরফসহ ২৫০ থেকে ২৮০ কেজি ও গ্রীষ্মকালে বরফসহ ২০০ থেকে ২২০ কেজি এবং ছোট বাক্সে শীতকালে বরফসহ ১২০ থেকে ১৫০ কেজি ও গ্রীষ্মকালে ৮০ থেকে ১২০ কেজি মাছ পরিবহন করা হয়।

মাছ সংরক্ষণ ও পরিবহনে ব্যবহূত এই বরফ বাক্সগুলো তৈরির জন্য দেশব্যাপী অসংখ্য ছোট-বড় উদ্যোক্তা ও নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এখন কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় বাণিজ্যিকভাবে এই সকল বরফ বাক্স তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে মাছের পচন অনেকাংশে কমে গিয়ে মাছের গুণাগুণ ঠিক থাকছে। বরফ বাক্সের ব্যবহার ও উন্নত পরিচর্যার ফলে মাছের আহরণোত্তর পচন ২৮ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে বলে অতি সমপ্রতি এফএও এর অর্থায়নে ড. নওশাদ আলমের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ‘বাংলাদেশে মাছ আহরণের পর তার গুণগত মান হ্রাস: খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণায় জানা গেছে। গত এক দশকে মাছের আহরণোত্তর ক্ষতি প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে আসাতে এখন বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। সরকারি সহায়তা পেলে মাছ সংরক্ষণ ও পরিবহনের এই প্রযুক্তিটি দেশে ব্যাপকভাবে সমপ্রসারিত হয়ে মাছের পচন আরো কমে গিয়ে জনগণের আমিষের চাহিদা বহুলাংশে মেটাতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Source: Daily Ittefaq

নকশি কাঁথা এখন যাচ্ছে বিদেশেও

নকশি কাঁথা এখন যাচ্ছে বিদেশেও

লেখক: জামালপুর প্রতিনিধি | মঙ্গল, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১, ১২ আশ্বিন ১৪১৮

Details

জামালপুরের গ্রামীণ নারীদের নিপুণ হাতে তৈরি নকশি কাঁথা এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যাচ্ছে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের এই নকশি কাঁথা এখন সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের রূপ নিয়েছে। গাঁয়ের বধূরা এখন ঘরে বসে নেই তারা এখন নকশি কাঁথা বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করছেন।

জামালপুর জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় এলাকার দরিদ্র, মধ্যবিত্ত এমনকি শিক্ষিত মহিলারা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কারুশিল্পকে। মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে সীমিত আকারে আশির দশকে এ কারুশিল্প শুরু হয়। বর্তমানে এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে এ ব্যবসার চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। কারুশিল্পকে ঘিরে জামালপুর জেলায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় ৩ শতাধিক নারী উদ্যোক্তা, যার মাধ্যমে ঘরে বসে থাকা ৬০ হাজারের বেশি নারী তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিয়েছেন। কারুশিল্পকে ঘিরে এখন জেলার আনাচে-কানাচে জমজমাট ব্যবসা চলছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মহাজনরা কারুশিল্পী ও উদ্যোক্তাদের কাছে বিভিন্ন ডিজাইনের বিছানার চাদর, নকশি কাঁথা, ওয়ালম্যাট, সোফার কুশন, পাপোশ, ফতুয়া, নকশি করা রকমারি পাঞ্জাবি মহিলাদের হ্যান্ডব্যাগসহ নানা পোশাকের অর্ডার নিয়ে থাকেন।

ঈদ পূজা পার্বণে রকমারি ডিজাইনের পোশাক সারা দেশে বিক্রি হয়ে থাকে। পাইকারী বিক্রির পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে আগত ক্রেতারা নিজেদের পছন্দের পোশাক স্বল্প মূল্যে ক্রয় করে থাকেন। পূজা ও সামনে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। জামালপুরের কারুশিল্পের উন্নয়নে এবং নারী উদ্যোক্তাদের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের নির্দেশে ন্যাশনাল ব্যাংক সমপ্রতি ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া চালু করেছে । ইতিমধ্যে অনেক উদ্যোক্তা মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছেন।

শহরের আমলাপাড়ার পরশমনি হস্তশিল্প, রকি হস্তশিল্প, সৃষ্টি হস্তশিল্পসহ বাংলার উত্সব হস্তশিল্পের মালিকগণ অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েও দীর্ঘদিন যাবত্ ঋণ না পেয়ে তাদের ব্যবসার তেমন প্রসার ঘটাতে পারেননি। এব্যাপারে ব্যাংক ব্যবস্থাপকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, যোগ্য ব্যক্তিদের ঋণদান অব্যাহত রয়েছে। নারী উদ্যোক্তারা জানান, কারু ও কুটির শিল্পের প্রতি সরকারে বিশেষ নজর দিয়ে ঋণ প্রদান অব্যাহত থাকলে মোটা অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে ঘরে বসেই এখন দেশ-বিদেশে ব্যবসা চালিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। পাশাপাশি গ্রামীণ বেকার মহিলারা তাদের ঘরে বসে কর্মক্ষম হয়ে নিজে এবং দেশকে স্বাবলম্বী করে তুলবেন। বর্তমানে জামালপুরে ঘরে বসে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় জেলার অনেক কর্মমুখী নারী/পুরুষ ব্যবসা প্রসার ঘটিয়ে এখন নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন।

শহরের কাচারিপাড়ার কারু নিলয়, হ্যান্ডিক্র্যাফটের মালিক আঞ্জুমান আরা খানম ১৫০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ১৯৯৫ সালে নিজ বাসায় নকশি কাঁথার কাজ শুরু করেন। এখন তার ১০ জন কর্মচারি ও ৭০০ সেলাই কর্মী রয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ৫ লাখ টাকা। বর্তমানে মোট মূলধন দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া দীপ্ত কুঠির, শতদল, রংধনু, প্রত্যয়, প্রতীক হ্যান্ডিক্র্যাফটের মালিকসহ অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানান, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন তারা। জনপ্রিয় শিল্পটি উন্নয়নে সরকারি সহযোগিতা পেলে পোশাক শিল্পের ন্যায় এ শিল্পটি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।

Source: Daily Ittefaq

Related Link:

বিশ্ব বাজারে বগুড়ার নকশি কাঁথা

Sunday, September 25, 2011

পানির ওপর সবুজের উচ্ছ্বাস

পানির ওপর সবুজের উচ্ছ্বাস


দূর থেকে মনে হয়, কে যেন সবুজের গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। কাছে গেলে ভ্রম ভাঙে। এ তো বিশাল জলাশয়ে সবুজের সারি। স্বপ্নে স্বপ্নে গাঁথা সবুজ! চোখ জুড়ানো এ দৃশ্য পিরোজপুরের নাজিরপুর ও স্বরূপকাঠি উপজেলার বিস্তীর্ণ জলাভূমির। কৃষকেরা এসব জলাভূমিতে ‘ভাসমান’ পদ্ধতিতে সবজির চারা ও শাকসবজি চাষ করেছেন।
সবজি চাষ করে ওই দুই উপজেলার অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। এসব খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন শত শত দরিদ্র নারী-পুরুষ। কৃষি অফিস থেকে এসব কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের চাওয়া আরও একটু সরকারি আনুকূল্য, একটু সহজ শর্তে ঋণ। তাহলে বিস্তার ঘটবে ব্যতিক্রমী এ চাষাবাদের।

ফিরে দেখা: কয়েক যুগ আগের কথা, নাজিরপুরের লোকজন দেখল, তাদের শত শত একর নিচু জমি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ থাকে। তারা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। এলাকার প্রবীণ কৃষকেরা অনেক চিন্তাভাবনার পর ধাপ পদ্ধতিতে চাষের পন্থা বের করলেন। জলাবদ্ধতার অভিশাপ পরিণত হলো আশীর্বাদে!
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালিত এক জরিপ থেকে জানা যায়, নাজিরপুরের কৃষকেরা ১৫০ থেকে ২০০ বছর আগে পানিতে সবজি চাষের এ পদ্ধতি বের করেন। সেই থেকে উপজেলার পদ্মডুবি, বিলডুমরিয়া, দেউলবাড়ি-দোবড়া, বেলুয়া, চিলতি, মনোহরপুর, মুগারঝোর, গাওখালী, কলারদোয়ানীয়া, সাচিয়া, মেদা, যুগিয়া, সোনাপুর, পুকুরিয়া, পেনাখালী, মিঠাপুকুর এলাকার পাঁচ থেকে ১০ ফুট গভীর জলাভূমিতে সবজিচারা উ ৎ পাদন ও সবজি আবাদ হয়ে আসছে। এ ছাড়া জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার বলদিয়া, চামি, গগন এলাকায়ও এ পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে।
বর্তমানে নাজিরপুরে প্রায় পাঁচ হাজার একর ও স্বরূপকাঠিতে প্রায় ১০০ একর জমিতে ধাপ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের সবজিচারা ও সবজি উ ৎ পাদন করা হয়। নাজিরপুরে আরও কয়েক হাজার একর জমি অনাবাদি থাকে বলে জানা গেছে।
চাষ পদ্ধতি: বেলুয়া মুগারঝোর এলাকার চাষি আ. রশিদ, সাবেক ইউপি সদস্য আ. সোবাহান জানান, এলাকায় ছড়িয়ে থাকা জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা, শ্যাওলা, কুটিপানা, দুলালীলতা ভাসমান জৈবসার তৈরির প্রধান উপকরণ। মে-জুন মাসে কচুরিপানা সংগ্রহ করে স্তূপ করা হয়। জলাভূমিতে প্রথমে কচুরিপানা এবং পর্যায়ক্রমে শ্যাওলা, কুটিপানা ও দুলালীলতা স্তরে স্তরে সাজিয়ে দুই ফুট পুরু ধাপ তৈরি করা হয়। ধাপে জৈব উপকরণ দ্রুত পচাতে সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একেকটি ভাসমান ধাপ ১০০ থেকে ১৮০ ফুট দীর্ঘ ও চার ফুট প্রশস্ত হয়। এ ধাপ চাষের উপযোগী করতে সাত থেকে ১০ দিন প্রক্রিয়াধীন রাখতে হয়।
চারা উ ৎ পাদন: কৃষক হাশেম মোল্লা ও হাবিবুর রহমান জানান, ‘ভাসমান’ ধাপে সরাসরি বীজ বপন সম্ভব না হওয়ায় তাঁরা প্রতিটি বীজের জন্য এক ধরনের আধার তৈরি করেন। তাঁরা এর নাম দিয়েছেন ‘দৌল্লা’। একমুঠো করে টেপাপানা, দুলালীলতার মধ্যে নারকেল ছোবড়ার গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয় দৌল্লা। এ দৌল্লার মধ্যে বিভিন্ন সবজির অঙ্কুরিত বীজ পুঁতে মাচানে বা শুকনা জায়গায় রাখা হয়। এর আগে আর্দ্র স্থানে বীজ অঙ্কুরিত করা হয়। দৌল্লাগুলো এভাবে তিন থেকে সাত দিন সারি করে রাখা হয়। ধাপে স্থানান্তরের পাঁচ-ছয় দিন পর গজানো সবজি চারার পরিচর্যা শুরু হয়। পাঁচ-ছয় দিন পর পর ‘ভাসমান’ ধাপের নিচের কচুরিপানার মূল বা শ্যাওলা দৌল্লার গোড়ায় বিছিয়ে দেওয়া হয়। প্রয়োজন হলে সামান্য পানিও দেওয়া হয়।
কৃষক দুলাল জানান, বর্ষা শেষে শুরু হয় চাষের নতুন আয়োজন। এ সময় জেগে ওঠা ধাপে শাকসবজি ও মসলাজাতীয় সবজি চাষ করা হয়।
নারীদের কর্মসংস্থান: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত নাজিরপুরের প্রায় দুই হাজার নারী বীজ গজানো, দৌল্লা তৈরি ও দৌল্লায় বীজ-চারা স্থাপনের কাজ করে থাকেন। এ কাজ করেন পুরুষেরাও।
মুগারঝোর এলাকার নারী শ্রমিক রওশনারা, শাহনাজসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজন নারী এক হাজার দৌল্লা ও বীজ-চারা স্থাপনের কাজ করে ২০০ টাকা মজুরি পান। এক হাজার দৌল্লা তৈরি করতে একজন নারীর তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। এ মৌসুমে একজন নারী পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা আয় করে থাকেন।
বাজারজাত: চাষি জলিল ও দুলাল জানান, লাউ, করলা, চালকুমড়া, টমেটো, বেগুন, চিচিঙ্গা, মরিচ, শসা, বরবটি, শিম ইত্যাদি সবজি চারা ভাসমান ধাপে উ ৎ পাদন করা হয়। চারার বয়স এক মাস হলে দৌল্লাসহ চারা উত্তোলন শুরু হয়। দৌল্লাগুলো নৌকায় সাজিয়ে কৃষক চারা বাজারজাত করেন। আবার পাইকারি ক্রেতারা সরাসরি এসে ‘ভাসমান’ ধাপ থেকে চারা ও সবজি ক্রয় করেন। নৌকা বা যন্ত্রচালিত নৌকায় করে চারা নিয়ে তাঁরা বৃহত্তর বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর ও ঢাকা অঞ্চলে বিক্রি করেন। কৃষক শাহাবুদ্দীন বলেন, বাজারজাতকরণের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকদের কম দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়।

সরেজমিনে একদিন: সম্প্রতি মুগারঝোর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, তিন-চারজন কৃষক একটি ধাপের চারায় পানি দিচ্ছেন। কয়েকজন চারা তুলে নৌকায় সাজিয়ে বাজারজাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই এলাকার আ. রশিদ মোল্লা বলেন, ‘অভারের কারণে আমি লেখাপড়া করতে পারিনি। ‘ভাসমান’ পদ্ধতিতে সবজি চাষে আমার ভাগ্য ফিরেছে। আমার সন্তানেরা এখন স্কুল-কলেজে পড়ছে।’
কয়েকজন চাষি জানান, এক মৌসুমে চারা উ ৎ পাদন ও বিক্রি করে একরে ১০ হাজার টাকা লাভ থাকে।
তাঁরা যা বলেন: দেউলবাড়ি-দোবড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ওলিউল্লাহ বলেন, এ এলাকার অনেক পরিবার ‘ভাসমান’ সবজি চাষে জড়িত। পানিবেষ্টিত এই অঞ্চলে ধাপ পদ্ধতির চাষে জড়িত চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ দিলে চাষাবাদের আরও বিস্তৃতি ঘটবে। মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে।
নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, ‘ভাসমান’ ধাপে উন্নত মানের সবজিচারা উ ৎ পাদনের লক্ষ্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, শাকসবজির বাজারজাতকরণ ও বীজ সংরক্ষণ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
হিমাগার হয়নি: পিরোজপুর-১ আসনের (সদর, নাজিরপুর ও জিয়ানগর) সংসদ সদস্য এ কে এম আউয়ালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল দেউলবাড়ি-দোবড়া এলাকায় একটি হিমাগার নির্মাণ করা। কিন্তু আজ অবধি তা করা হয়নি। সংসদ সদস্য আউয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গত মঙ্গলবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যাইনি। এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের পর সরকারিভাবে হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেব।’
চাষিদের দাবি-দাওয়া: সবজিচাষি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, তরিকুল ইসলাম, নিজামউদ্দিন বলেন, কৃষকদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। পণ্য পরিবহনের জন্য উন্নত ব্যবস্থা চালুসহ এলাকায় একটি হিমাগার স্থাপনের দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। এ ছাড়া নাজিরপুরের বৈঠাকাঠা বাজারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) একটি বীজ বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন একান্ত জরুরি।

সূত্র: প্রথম আলো

Related Link:

মাটির স্পর্শ ছাড়াই পানিতে চাষাবাদের পদ্ধতি উদ্ভাবন

নালিতাবাড়িতে পাখি দিয়ে ফসলের পোকা দমন

নালিতাবাড়িতে পাখি দিয়ে ফসলের পোকা দমন

শেরপুরের সীমাত্মবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষক এখন আর আগের মতো ফসলে কীটনাশক ব্যবহার করছে না। ফসল রক্ষায় তারা পোকা-মাকড় দমনে পারচিং পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এতে যেমন উৎপাদন ব্যয় কমে যায়, তেমনি উৎপাদিত ফসলের গুণগতমানও বেড়ে যায়। পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হয় কম। নালিতাবাড়ীতে চলতি আমন মৌসুমে পাখি দিয়ে ধানের পোকা-মাকড় দমন কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।


উপজেলার ২২ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে এখন সবুজের সমারোহ। অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকার জমির ধান ১০/১২ দিনের মধ্যেই কাটা হবে। এমতাবস্থায় কিছু কিছু জমিতে লালচে রোগ ও বাদামি গাছফড়িং পোকা দেখা দেয়ার সাথে সাথে কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ তা দমনের জন্য কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। ফসল রক্ষায় ধানের ক্ষেতে পারচিং পদ্ধতি বা গাছের ডাল-পালা পুঁতে দিয়ে পোকা দমন করা পদ্ধতিতে কৃষক সাড়া দিচ্ছে। কৃষি মন্ত্রীর এলাকায় দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে কৃষি অফিসারসহ অন্য কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ জানায়, এবার চলতি আমন মৌসুমে উপজেলার নয়াবিল, আন্ধারপাড়া, বাঘবেড়সহ কয়েকটি গ্রামে ধানে লালচে রোগ ও বাদামি গাছফড়িং পোকা দেখা দেয়ার সাথে সাথে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর পরার্মশে পারচিং পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করা হয়। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী মোবাইল ফোনে বলেন, রাসায়নিক বালাই নাশকের পরিবর্তে পারচিং পদ্ধতিতে খরচ কম। গাছের ডালে ফিড়িংঙ্গা পাখি (কেউ বলে ফেসকুলস্না পাখি) বসে ধানের শত্রু-পোকা খেয়ে ফেলে এবং পরবর্তীতে এই ডাল জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। তিনি আরো বলেন, ছিটানোর সময় সবটা কীটনাশক ধান গাছের গোড়ায় পৌঁছায় না। ফলে পোকা দমনে তেমন কার্যকর হয় না। তার চাইতে ২ হাত অত্মর ধানে বিলি কেটে ধান গাছের গোড়ায় আলো-বাতাস প্রবেশ করালে এবং গাছের ডাল-পালা পুঁতে দিয়ে পাখি বসার ব্যবস্থা করলে পোকায় ক্ষতি করতে পারে না। সূত্র মতে, মৌসুমের শুরু থেকেই ধানের পোকা-মাকড় দমনে এ বালাই নাশক পারচিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় সুফল পাচ্ছে কৃষক।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, কৃষকদের দুই ধরনের পারচিং পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। একটি লাইভ পারচিং অন্যটি ডেথ পারচিং। লাইভ পারচিং পদ্ধতিতে তিন মিটার দূরত্বে পাখি বসার জন্য ধনচে গাছ রোপণ করা হয়েছে। এই গাছ একটু বড় হলেই সেখানে পাখি খুব সহজে বসতে পারে। অন্যদিকে, এটি আগাছা না হওয়ায় ফসলের ক্ষতি করে না। এছাড়া ধনচে গাছ রাইজোডিয়াম জাতীয় ব্যাকটেরিয়া থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে মাটিতে সরবরাহ করে। ফলে জমিতে ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয় কম। যেহেতু ধনচে গাছ জীবিত অবস্থায় পাখির মাধ্যমে পোকা দমনে খুঁটি হিসাবে কাজ করছে। এ জন্য এটির নাম দেয়া হয়েছে লাইভ পারচিং। অন্যদিকে ডেথ পারচিং হচ্ছে মরা গাছের ডাল জমির মধ্যে পুঁতে দিয়ে পাখি বসার ব্যবস্থা করা। সাধারণত,এক একর জমিতে ৩০/৩৫টি ডাল পুঁতে দিলেই হয়। রুপাকুড়া গ্রামের কৃষক নাসিম মিয়া জানান, পারচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা সুফল পাচ্ছেন। কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বানেজ আলী মিয়া জানান, ধান ক্ষেতে পোকা দমনে পারচিং পদ্ধতি বেশ উপযোগী। কেননা কোন ড়্গেতে অপেক্ষাকৃত উঁচু অবলম্বন পেলে পাখিরা সহজে সেখানে এসে বসে। এরপর পোকা দেখে তা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে ক্ষেত পোকামুক্ত করে। তিনি আরো জানান, কয়েকটি এলাকায় পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও আলোর ফাঁদ ও পারচিং পদ্ধতির মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আছে।

কৃষকরা জানান, এই প্রাকৃতিক কীট দমন পদ্ধতিটি প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শক্রমে এবার আমরা ব্যাপক হারে পারচিং পদ্ধতি ব্যবহার করছি। সুফলও পাচ্ছি।

Source: www.ekrishi.com

Wednesday, September 14, 2011

সাতক্ষীরায় ২ যুবকের উদ্ভাবন জ্বালানি খরচ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন

সাতক্ষীরায় ২ যুবকের উদ্ভাবন জ্বালানি খরচ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন
লিখেছেন: আখতারুজ্জামান

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
ডিজেল, ইঞ্জিন ওয়েল এবং পানি ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাতক্ষীরার দুই ‘বিজ্ঞানী’র এক দশকের প্রচেষ্টা অবশেষে সফল হয়েছে।
সার্কিট, ব্যাটারি, মোটর ও জেনারেটর দিয়েই এই বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট আবিস্কার করা হয়েছে। এটি চালাতে একটি টাকাও খরচ হবেনা। ডিজেল, ইঞ্জিন ওয়েল ও জনবল ছাড়াই এই প্ল্যান্টটি চালানো যাবে।
তরুণ দুজনের এই অভাবনীয় এ আবিস্কারের সফলতা প্রমাণ করতে ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে দেড়ঘণ্টা প্ল্যান্টটি চালিয়ে এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
যারা এই সাফল্যের দাবিদার, তারা হচ্ছেন- সাতক্ষীরার সদর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের সিরাজুল মল্লিকের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম বাবু মল্লিক ও তার সহযোগী একই এলাকার শামসুদ্দিন ঢালীর ছেলে মিজানুর রহমান মিজান। তারা পেশায় একজন দোকানদার, অপরজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি।
আবিস্কারকদের একজন তৌহিদুল ইসলাম বাবু মল্লিক জানান, এই বিদ্যুৎ প্ল্যান্টটি তৈরি করতে ১টি জেনারেটর, ২টি মোটর, ১২ ভোল্টের ১টি ব্যাটারি, ৪টি সার্কিট, ৩টা পুলি, ২টা বেল্ট, ১টা ফ্লাইবারসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ‘এই প্ল্যান্ট থেকে ৩ হাজার ৬০০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এর মধ্যে সরবরাহের সময় ২ হাজার ৮০০ ওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। বাকি ৮০০ ওয়াট বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের ব্যাটারি চার্জ ও সার্কিটগুলো সক্রিয় করে রাখার জন্য ব্যবহৃত হবে। সরবরাহকৃত বিদ্যুতে ১০০টি ৩০ ওয়াটের এনার্জি সেভিং বাল্ব জ্বালানো সম্ভব হবে। এই বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার উপযোগী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেখানে বিদ্যুৎ আছে, সেখানে ব্যবহার করা হলে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ১৩ সেকেন্ডের মধ্যে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টটি অটোস্টার্ট হয়ে যাবে। এই মেশিনে জ্বালানি হিসেবে কোনো ধরনের ডিজেল, ইঞ্জিন ওয়েল ও জনবল প্রয়োজন নেই।’
তিনি বলেন, ‘এটি তৈরি করতে প্ল্যান্ট প্রতি ১ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ পড়বে। পরীক্ষামূলকভাবে এই প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দেখাতে গত ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর বাজারে সাড়ে ৫ ঘণ্টা একটানা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে প্রত্যক্ষদর্শী সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন ওই দুই তরুণ।
তাদের আগামী পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তৌহিদুল ইসলাম বাবু মল্লিক ও মিজানুর রহমান মিজান জানান, আগামীতে তাদের ১০ হাজার ওয়াটের বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সঙ্গে যেখানে একেবারেই বিদ্যুৎ নেই, সেখানে সুইচ চাপ দিয়ে এই মেশিন স্টার্ট করতে হবে।
তারা জানান, রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে কোনো ধরনের শব্দ ছাড়াই বিদ্যুৎ প্ল্যান্টটি কীভাবে স্টার্ট করা যায়, তা নিয়ে তারা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই প্রচেষ্টা বাস্তবে রূপ নিলে দেশের মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে বলে আশা করছেন তারা। এ জন্য তারা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী খান মোক্তার আলী বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের আবিস্কারকে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাই। যদি এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে তাহলে আমাদের বিদ্যুৎ ঘাটতি কমানো যাবে।’
Source: www.sabujbanglablog.net

Monday, September 5, 2011

দেশেইহবে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ

দেশেইহবে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ

লেখক: এনামুল হক কাশেমী, বাসস | মঙ্গল, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১, ১২ আশ্বিন ১৪১৮

Details

অবসরে কিংবা আড্ডায় এক পেয়ালা ধূমায়িত কফি পান করতে কার না ইচ্ছে করে। কেননা কফির পেয়ালায় চুমুক দিলে মন ও শরীর দুই-ই সতেজ হয়ে ওঠে। কিন্তু কফির অতিরিক্ত দামের কারণে সবার তৃষ্ণা মেটানো সম্ভব না। তবে আশার কথা এই যে, কফি এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাষ শুরু হয়েছে। পার্বত্য জেলা বান্দরবানে সম্ভাবনা আরো বেশি। ইতোমধ্যে সেখানকার আদিবাসী ও বাঙালি চাষিরা তাদের বাড়ির আঙিনায়, বড় গাছের ছায়ায় কফি চাষ শুরু করেছেন। কিছুদিনের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ শুরু হবে বলে তারা জানান।

বান্দরবান সদর উপজেলার কানাপাড়া গ্রামের আদিবাসী চাষি রামখুপ বম এবং লাম্বাঘোনার বাঙালি কৃষক মনু ইসলাম জানান, তাদের বাড়ির আঙিনায় ও বাগানে বিপুল সংখ্যক গাছে প্রতি বছর কফির ফল ধরে। তারা ৫ বছর আগে কফি গাছের চারা রোপণ করেন যা দু’বছরের মাথায় ফল আসে। তারা আরো জানান, এখানকার মাটি ও পরিবেশ কফি চাষের অনুকূলে। তাই প্রতিটি গাছ থেকে আধা কেজি করে কফি পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে যার মূল্য ১১শ’ টাকা। চলতি মৌসুম থেকে তারা কফি চাষ আরো বৃদ্ধি করবেন বলে জানান।

সদর উপজেলার চাষি থামলাই ম্রো জানান, গাছে ধরা কফি ফল প্রথমে সবুজ ও পরে লালচে হয়। গাছ থেকে সংগ্রহ করে হালকা তাপে ভেজে গুঁড়ো করে পান উপযোগী করা হয়। কফি গাছের পাতাও চা পাতার মত শুকিয়ে পানীয় তৈরি করে পান করা যায়। বান্দরবান সদর উপজেলা, রুমা, বোয়াংছড়ি ও থানছিতে বিক্ষিপ্তভাবে কফি চাষ হলেও কিছুদিনের মধ্যে সেখানে বাণিজ্যিকভাবে কফির উত্পাদন শুরু হবে বলে জানান কৃষকরা। তাদের ধারণা, কফি চাষ খুবই লাভজনক। কফি উত্পাদনের পাশাপাশি কফি গাছ থেকে মধু আহরণ এবং কফি গাছকে প্রক্রিয়াজাত করে চুলের যত্নে উন্নতমানের শ্যাম্পু করা সম্ভব। চাষিরা আরো মনে করেন, চা বোর্ড বা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারিগরি উপকরণ, সহজ শর্তে ঋণ পেলে জেলায় সম্ভাবনাময় কফি চাষ দ্রুত বিস্তার ঘটবে।

জেলা কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বান্দরবানের মাটি কফি চাষের জন্য উপযোগী। পরিকল্পিতভাবে কফি চাষ করা গেলে বাণিজ্যিকভাবে চাষিরা বিপুলভাবে লাভবান হবেন। তিনি আরো জানান, কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তারা অন্যান্য কৃষি পণ্যের সঙ্গে কফি চাষ উত্সাহিত করতে নানা রকম পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আসছে।

Sunday, September 4, 2011

এক রোপণে দুই ফসল

এক রোপণে দুই ফসল

লেখক: নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, মৌলভীবাজার |

কৃষকদের জন্য একই চাষাবাদে দু’বার ফসল উত্পাদন একটি ব্যতিক্রমী মাত্রা যুক্ত হয়েছে। কেটে ফেলা ধানের মোথা থেকে দ্বিতীয়বার ধান উত্পাদনের উদ্ভাবন করেছেন বিশিষ্ট জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী।

২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের নিজ গ্রাম কানিহাটি এলাকার ২৫ বর্গমিটারের একটি প্রদর্শনী ক্ষেতে বোরো ধানের চারা রোপণ করেন। সঠিকভাবে সেচ ও পরিচর্যা করে ১৩০ দিনের মধ্যে ৮৫ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার উচ্চতার গাছে প্রথমবারের মত ফসল বেরিয়ে আসে। আর এই সময়ের মধ্যেই মাটি থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পরিকল্পিতভাবে ধান কেটে নিতে হয়েছে। কোনো প্রকার চাষাবাদ ছাড়াই প্রথম দফা ধান কেটে নেয়ার পর ধানের মোথায় পরিমাণমত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে মাত্র ৫২ দিনের মাথায় দ্বিতীয়বারের মত ফসল উত্পাদন করা হয়। প্রথম বারের নতুন ধান কেটে নেয়ার পর দেখা গেছে হেক্টরপ্রতি এ ধান উত্পাদন হয়েছে ৬.৪ মেট্রিক টন এবং দ্বিতীয়বার চাষাবাদ বিহীন ধানের মোথায় বিঘাপ্রতি মাত্র ৩শ’ টাকার ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে হেক্টরপ্রতি ধান উত্পাদন হয়েছে ৩ মেট্রিক টন। যেখানে সরকারি হিসাব অনুযায়ী হেক্টরপ্রতি ধান উত্পাদন হয়ে থাকে ৩ থেকে ৪ মেট্রিক টন।

জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী জানান, বাংলাদেশে সাধারণত কোনো জমিতে এক ফসল, কোনো জমিতে দু’ ফসল আবার কোনো জমিতে তিন ফসলি ধান উত্পাদন হয়ে থাকে। এসব জমিতে প্রতিবারই ধান কেটে নিয়ে নতুন করে

জমি চাষাবাদের পর সার প্রয়োগ করে সেচ দিয়ে ধান উত্পাদন করতে হয়। এসব ধান কেটে নেওয়ার পর জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা ধানের মোথা থেকে হালকাভাবে চিটা মিশ্রিত কিছু ধান উত্পাদন হয়ে থাকে। তিনি মনে করেন তার উদ্ভাবিত এ ধানকে কৃষকরা ব্যাপকহারে চাষাবাদ করলে মঙ্গা বা নিধানের ধান হিসেবে আখ্যায়িত করা যাবে। আবেদ চৌধুরীর নতুন উদ্ভাবিত এ ধানের কোনো নাম এখনো দেয়া হয়নি। তবে শুধুমাত্র সাংকেতিক নম্বর দিয়ে রাখা হয়েছে। কৃষকরা সাধারণত ক্ষেতে ধানের যে চারা রোপণ করেন তার উচ্চতা থাকে ১০ সেন্টিমিটারের মত। জিন বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত ধানগাছ গোড়ায় না কেটে ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে কেটে ফেলায় ক্ষেতের মাঝে বেশ উচ্চতার ধানগাছ থেকে যায়। বোরো ধান কেটে নেওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে বন্যা হয়ে থাকে। তখন ক্ষেতে থাকা নতুন উদ্ভাবিত এ ধানগাছ বন্যা প্রতিরোধেও কাজ করবে।

ড. আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত ধানের চারা একটি করে কিছু জায়গা নিয়ে (৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে) রোপণ করা হয়। ফলে রোপিত একটি ধানগাছ মাটি থেকে ভালভাবে শক্তি নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে এবং একটি ধানগাছ থেকে আরো বেশ কয়েকটি ধানগাছ গজাতে থাকে। ১৩০ দিনের মধ্যে প্রথম ফসল সংগ্রহকালে সতর্কতার সাথে ৩৫ সেন্টিমিট ার উপরে কেটে নিলে গোছায় (ধানের গোড়ায়) অপেক্ষমান ঘুমন্ত অন্যান্য গাছগুলো থেকে মাত্র ৫২ দিনের মাথায় দ্বিতীয় বার ফসল বেরিয়ে আসে। আর এ জন্য জমিতে নতুন করে কোনো চাষ না দিয়েই বিঘাপ্রতি মাত্র ৩শ’ টাকার সার প্রয়োগ করলে

সফলভাবে দ্বিতীয় ফসল পাওয়া যায়। এসময়ে ধানক্ষেতে পোকার আক্রমণ কম হয় এবং কীটনাশক ব্যবহারও করতে হয় কম। ড. আবেদ চৌধুরী পরীক্ষামূলকভাবে একই জমিতে প্রথমবার ফসল কেটে কোনো চাষাবাদ ছাড়াই দ্বিতীয় ফসল উত্পাদনে সক্ষম হয়েছেন।

Source: Daily Ittefaq