
দূর থেকে মনে হয়, কে যেন সবুজের গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। কাছে গেলে ভ্রম ভাঙে। এ তো বিশাল জলাশয়ে সবুজের সারি। স্বপ্নে স্বপ্নে গাঁথা সবুজ! চোখ জুড়ানো এ দৃশ্য পিরোজপুরের নাজিরপুর ও স্বরূপকাঠি উপজেলার বিস্তীর্ণ জলাভূমির। কৃষকেরা এসব জলাভূমিতে ‘ভাসমান’ পদ্ধতিতে সবজির চারা ও শাকসবজি চাষ করেছেন।
সবজি চাষ করে ওই দুই উপজেলার অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। এসব খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন শত শত দরিদ্র নারী-পুরুষ। কৃষি অফিস থেকে এসব কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের চাওয়া আরও একটু সরকারি আনুকূল্য, একটু সহজ শর্তে ঋণ। তাহলে বিস্তার ঘটবে ব্যতিক্রমী এ চাষাবাদের।
ফিরে দেখা: কয়েক যুগ আগের কথা, নাজিরপুরের লোকজন দেখল, তাদের শত শত একর নিচু জমি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ থাকে। তারা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। এলাকার প্রবীণ কৃষকেরা অনেক চিন্তাভাবনার পর ধাপ পদ্ধতিতে চাষের পন্থা বের করলেন। জলাবদ্ধতার অভিশাপ পরিণত হলো আশীর্বাদে!
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালিত এক জরিপ থেকে জানা যায়, নাজিরপুরের কৃষকেরা ১৫০ থেকে ২০০ বছর আগে পানিতে সবজি চাষের এ পদ্ধতি বের করেন। সেই থেকে উপজেলার পদ্মডুবি, বিলডুমরিয়া, দেউলবাড়ি-দোবড়া, বেলুয়া, চিলতি, মনোহরপুর, মুগারঝোর, গাওখালী, কলারদোয়ানীয়া, সাচিয়া, মেদা, যুগিয়া, সোনাপুর, পুকুরিয়া, পেনাখালী, মিঠাপুকুর এলাকার পাঁচ থেকে ১০ ফুট গভীর জলাভূমিতে সবজিচারা উ ৎ পাদন ও সবজি আবাদ হয়ে আসছে। এ ছাড়া জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার বলদিয়া, চামি, গগন এলাকায়ও এ পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে।
বর্তমানে নাজিরপুরে প্রায় পাঁচ হাজার একর ও স্বরূপকাঠিতে প্রায় ১০০ একর জমিতে ধাপ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের সবজিচারা ও সবজি উ ৎ পাদন করা হয়। নাজিরপুরে আরও কয়েক হাজার একর জমি অনাবাদি থাকে বলে জানা গেছে।
চাষ পদ্ধতি: বেলুয়া মুগারঝোর এলাকার চাষি আ. রশিদ, সাবেক ইউপি সদস্য আ. সোবাহান জানান, এলাকায় ছড়িয়ে থাকা জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা, শ্যাওলা, কুটিপানা, দুলালীলতা ভাসমান জৈবসার তৈরির প্রধান উপকরণ। মে-জুন মাসে কচুরিপানা সংগ্রহ করে স্তূপ করা হয়। জলাভূমিতে প্রথমে কচুরিপানা এবং পর্যায়ক্রমে শ্যাওলা, কুটিপানা ও দুলালীলতা স্তরে স্তরে সাজিয়ে দুই ফুট পুরু ধাপ তৈরি করা হয়। ধাপে জৈব উপকরণ দ্রুত পচাতে সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একেকটি ভাসমান ধাপ ১০০ থেকে ১৮০ ফুট দীর্ঘ ও চার ফুট প্রশস্ত হয়। এ ধাপ চাষের উপযোগী করতে সাত থেকে ১০ দিন প্রক্রিয়াধীন রাখতে হয়।
চারা উ ৎ পাদন: কৃষক হাশেম মোল্লা ও হাবিবুর রহমান জানান, ‘ভাসমান’ ধাপে সরাসরি বীজ বপন সম্ভব না হওয়ায় তাঁরা প্রতিটি বীজের জন্য এক ধরনের আধার তৈরি করেন। তাঁরা এর নাম দিয়েছেন ‘দৌল্লা’। একমুঠো করে টেপাপানা, দুলালীলতার মধ্যে নারকেল ছোবড়ার গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয় দৌল্লা। এ দৌল্লার মধ্যে বিভিন্ন সবজির অঙ্কুরিত বীজ পুঁতে মাচানে বা শুকনা জায়গায় রাখা হয়। এর আগে আর্দ্র স্থানে বীজ অঙ্কুরিত করা হয়। দৌল্লাগুলো এভাবে তিন থেকে সাত দিন সারি করে রাখা হয়। ধাপে স্থানান্তরের পাঁচ-ছয় দিন পর গজানো সবজি চারার পরিচর্যা শুরু হয়। পাঁচ-ছয় দিন পর পর ‘ভাসমান’ ধাপের নিচের কচুরিপানার মূল বা শ্যাওলা দৌল্লার গোড়ায় বিছিয়ে দেওয়া হয়। প্রয়োজন হলে সামান্য পানিও দেওয়া হয়।
কৃষক দুলাল জানান, বর্ষা শেষে শুরু হয় চাষের নতুন আয়োজন। এ সময় জেগে ওঠা ধাপে শাকসবজি ও মসলাজাতীয় সবজি চাষ করা হয়।
নারীদের কর্মসংস্থান: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত নাজিরপুরের প্রায় দুই হাজার নারী বীজ গজানো, দৌল্লা তৈরি ও দৌল্লায় বীজ-চারা স্থাপনের কাজ করে থাকেন। এ কাজ করেন পুরুষেরাও।
মুগারঝোর এলাকার নারী শ্রমিক রওশনারা, শাহনাজসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজন নারী এক হাজার দৌল্লা ও বীজ-চারা স্থাপনের কাজ করে ২০০ টাকা মজুরি পান। এক হাজার দৌল্লা তৈরি করতে একজন নারীর তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। এ মৌসুমে একজন নারী পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা আয় করে থাকেন।
বাজারজাত: চাষি জলিল ও দুলাল জানান, লাউ, করলা, চালকুমড়া, টমেটো, বেগুন, চিচিঙ্গা, মরিচ, শসা, বরবটি, শিম ইত্যাদি সবজি চারা ভাসমান ধাপে উ ৎ পাদন করা হয়। চারার বয়স এক মাস হলে দৌল্লাসহ চারা উত্তোলন শুরু হয়। দৌল্লাগুলো নৌকায় সাজিয়ে কৃষক চারা বাজারজাত করেন। আবার পাইকারি ক্রেতারা সরাসরি এসে ‘ভাসমান’ ধাপ থেকে চারা ও সবজি ক্রয় করেন। নৌকা বা যন্ত্রচালিত নৌকায় করে চারা নিয়ে তাঁরা বৃহত্তর বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর ও ঢাকা অঞ্চলে বিক্রি করেন। কৃষক শাহাবুদ্দীন বলেন, বাজারজাতকরণের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকদের কম দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়।
সরেজমিনে একদিন: সম্প্রতি মুগারঝোর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, তিন-চারজন কৃষক একটি ধাপের চারায় পানি দিচ্ছেন। কয়েকজন চারা তুলে নৌকায় সাজিয়ে বাজারজাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই এলাকার আ. রশিদ মোল্লা বলেন, ‘অভারের কারণে আমি লেখাপড়া করতে পারিনি। ‘ভাসমান’ পদ্ধতিতে সবজি চাষে আমার ভাগ্য ফিরেছে। আমার সন্তানেরা এখন স্কুল-কলেজে পড়ছে।’
কয়েকজন চাষি জানান, এক মৌসুমে চারা উ ৎ পাদন ও বিক্রি করে একরে ১০ হাজার টাকা লাভ থাকে।
তাঁরা যা বলেন: দেউলবাড়ি-দোবড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ওলিউল্লাহ বলেন, এ এলাকার অনেক পরিবার ‘ভাসমান’ সবজি চাষে জড়িত। পানিবেষ্টিত এই অঞ্চলে ধাপ পদ্ধতির চাষে জড়িত চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ দিলে চাষাবাদের আরও বিস্তৃতি ঘটবে। মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে।
নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, ‘ভাসমান’ ধাপে উন্নত মানের সবজিচারা উ ৎ পাদনের লক্ষ্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, শাকসবজির বাজারজাতকরণ ও বীজ সংরক্ষণ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
হিমাগার হয়নি: পিরোজপুর-১ আসনের (সদর, নাজিরপুর ও জিয়ানগর) সংসদ সদস্য এ কে এম আউয়ালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল দেউলবাড়ি-দোবড়া এলাকায় একটি হিমাগার নির্মাণ করা। কিন্তু আজ অবধি তা করা হয়নি। সংসদ সদস্য আউয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গত মঙ্গলবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যাইনি। এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের পর সরকারিভাবে হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেব।’
চাষিদের দাবি-দাওয়া: সবজিচাষি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, তরিকুল ইসলাম, নিজামউদ্দিন বলেন, কৃষকদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। পণ্য পরিবহনের জন্য উন্নত ব্যবস্থা চালুসহ এলাকায় একটি হিমাগার স্থাপনের দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। এ ছাড়া নাজিরপুরের বৈঠাকাঠা বাজারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) একটি বীজ বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন একান্ত জরুরি।
সবজি চাষ করে ওই দুই উপজেলার অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। এসব খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন শত শত দরিদ্র নারী-পুরুষ। কৃষি অফিস থেকে এসব কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের চাওয়া আরও একটু সরকারি আনুকূল্য, একটু সহজ শর্তে ঋণ। তাহলে বিস্তার ঘটবে ব্যতিক্রমী এ চাষাবাদের।
ফিরে দেখা: কয়েক যুগ আগের কথা, নাজিরপুরের লোকজন দেখল, তাদের শত শত একর নিচু জমি বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ থাকে। তারা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। এলাকার প্রবীণ কৃষকেরা অনেক চিন্তাভাবনার পর ধাপ পদ্ধতিতে চাষের পন্থা বের করলেন। জলাবদ্ধতার অভিশাপ পরিণত হলো আশীর্বাদে!
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালিত এক জরিপ থেকে জানা যায়, নাজিরপুরের কৃষকেরা ১৫০ থেকে ২০০ বছর আগে পানিতে সবজি চাষের এ পদ্ধতি বের করেন। সেই থেকে উপজেলার পদ্মডুবি, বিলডুমরিয়া, দেউলবাড়ি-দোবড়া, বেলুয়া, চিলতি, মনোহরপুর, মুগারঝোর, গাওখালী, কলারদোয়ানীয়া, সাচিয়া, মেদা, যুগিয়া, সোনাপুর, পুকুরিয়া, পেনাখালী, মিঠাপুকুর এলাকার পাঁচ থেকে ১০ ফুট গভীর জলাভূমিতে সবজিচারা উ ৎ পাদন ও সবজি আবাদ হয়ে আসছে। এ ছাড়া জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার বলদিয়া, চামি, গগন এলাকায়ও এ পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে।
বর্তমানে নাজিরপুরে প্রায় পাঁচ হাজার একর ও স্বরূপকাঠিতে প্রায় ১০০ একর জমিতে ধাপ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের সবজিচারা ও সবজি উ ৎ পাদন করা হয়। নাজিরপুরে আরও কয়েক হাজার একর জমি অনাবাদি থাকে বলে জানা গেছে।
চাষ পদ্ধতি: বেলুয়া মুগারঝোর এলাকার চাষি আ. রশিদ, সাবেক ইউপি সদস্য আ. সোবাহান জানান, এলাকায় ছড়িয়ে থাকা জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা, শ্যাওলা, কুটিপানা, দুলালীলতা ভাসমান জৈবসার তৈরির প্রধান উপকরণ। মে-জুন মাসে কচুরিপানা সংগ্রহ করে স্তূপ করা হয়। জলাভূমিতে প্রথমে কচুরিপানা এবং পর্যায়ক্রমে শ্যাওলা, কুটিপানা ও দুলালীলতা স্তরে স্তরে সাজিয়ে দুই ফুট পুরু ধাপ তৈরি করা হয়। ধাপে জৈব উপকরণ দ্রুত পচাতে সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একেকটি ভাসমান ধাপ ১০০ থেকে ১৮০ ফুট দীর্ঘ ও চার ফুট প্রশস্ত হয়। এ ধাপ চাষের উপযোগী করতে সাত থেকে ১০ দিন প্রক্রিয়াধীন রাখতে হয়।
চারা উ ৎ পাদন: কৃষক হাশেম মোল্লা ও হাবিবুর রহমান জানান, ‘ভাসমান’ ধাপে সরাসরি বীজ বপন সম্ভব না হওয়ায় তাঁরা প্রতিটি বীজের জন্য এক ধরনের আধার তৈরি করেন। তাঁরা এর নাম দিয়েছেন ‘দৌল্লা’। একমুঠো করে টেপাপানা, দুলালীলতার মধ্যে নারকেল ছোবড়ার গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয় দৌল্লা। এ দৌল্লার মধ্যে বিভিন্ন সবজির অঙ্কুরিত বীজ পুঁতে মাচানে বা শুকনা জায়গায় রাখা হয়। এর আগে আর্দ্র স্থানে বীজ অঙ্কুরিত করা হয়। দৌল্লাগুলো এভাবে তিন থেকে সাত দিন সারি করে রাখা হয়। ধাপে স্থানান্তরের পাঁচ-ছয় দিন পর গজানো সবজি চারার পরিচর্যা শুরু হয়। পাঁচ-ছয় দিন পর পর ‘ভাসমান’ ধাপের নিচের কচুরিপানার মূল বা শ্যাওলা দৌল্লার গোড়ায় বিছিয়ে দেওয়া হয়। প্রয়োজন হলে সামান্য পানিও দেওয়া হয়।
কৃষক দুলাল জানান, বর্ষা শেষে শুরু হয় চাষের নতুন আয়োজন। এ সময় জেগে ওঠা ধাপে শাকসবজি ও মসলাজাতীয় সবজি চাষ করা হয়।
নারীদের কর্মসংস্থান: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত নাজিরপুরের প্রায় দুই হাজার নারী বীজ গজানো, দৌল্লা তৈরি ও দৌল্লায় বীজ-চারা স্থাপনের কাজ করে থাকেন। এ কাজ করেন পুরুষেরাও।
মুগারঝোর এলাকার নারী শ্রমিক রওশনারা, শাহনাজসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজন নারী এক হাজার দৌল্লা ও বীজ-চারা স্থাপনের কাজ করে ২০০ টাকা মজুরি পান। এক হাজার দৌল্লা তৈরি করতে একজন নারীর তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। এ মৌসুমে একজন নারী পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা আয় করে থাকেন।
বাজারজাত: চাষি জলিল ও দুলাল জানান, লাউ, করলা, চালকুমড়া, টমেটো, বেগুন, চিচিঙ্গা, মরিচ, শসা, বরবটি, শিম ইত্যাদি সবজি চারা ভাসমান ধাপে উ ৎ পাদন করা হয়। চারার বয়স এক মাস হলে দৌল্লাসহ চারা উত্তোলন শুরু হয়। দৌল্লাগুলো নৌকায় সাজিয়ে কৃষক চারা বাজারজাত করেন। আবার পাইকারি ক্রেতারা সরাসরি এসে ‘ভাসমান’ ধাপ থেকে চারা ও সবজি ক্রয় করেন। নৌকা বা যন্ত্রচালিত নৌকায় করে চারা নিয়ে তাঁরা বৃহত্তর বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর ও ঢাকা অঞ্চলে বিক্রি করেন। কৃষক শাহাবুদ্দীন বলেন, বাজারজাতকরণের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকদের কম দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়।
সরেজমিনে একদিন: সম্প্রতি মুগারঝোর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, তিন-চারজন কৃষক একটি ধাপের চারায় পানি দিচ্ছেন। কয়েকজন চারা তুলে নৌকায় সাজিয়ে বাজারজাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই এলাকার আ. রশিদ মোল্লা বলেন, ‘অভারের কারণে আমি লেখাপড়া করতে পারিনি। ‘ভাসমান’ পদ্ধতিতে সবজি চাষে আমার ভাগ্য ফিরেছে। আমার সন্তানেরা এখন স্কুল-কলেজে পড়ছে।’
কয়েকজন চাষি জানান, এক মৌসুমে চারা উ ৎ পাদন ও বিক্রি করে একরে ১০ হাজার টাকা লাভ থাকে।
তাঁরা যা বলেন: দেউলবাড়ি-দোবড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ওলিউল্লাহ বলেন, এ এলাকার অনেক পরিবার ‘ভাসমান’ সবজি চাষে জড়িত। পানিবেষ্টিত এই অঞ্চলে ধাপ পদ্ধতির চাষে জড়িত চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ দিলে চাষাবাদের আরও বিস্তৃতি ঘটবে। মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে।
নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, ‘ভাসমান’ ধাপে উন্নত মানের সবজিচারা উ ৎ পাদনের লক্ষ্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, শাকসবজির বাজারজাতকরণ ও বীজ সংরক্ষণ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
হিমাগার হয়নি: পিরোজপুর-১ আসনের (সদর, নাজিরপুর ও জিয়ানগর) সংসদ সদস্য এ কে এম আউয়ালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল দেউলবাড়ি-দোবড়া এলাকায় একটি হিমাগার নির্মাণ করা। কিন্তু আজ অবধি তা করা হয়নি। সংসদ সদস্য আউয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গত মঙ্গলবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যাইনি। এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের পর সরকারিভাবে হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেব।’
চাষিদের দাবি-দাওয়া: সবজিচাষি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, তরিকুল ইসলাম, নিজামউদ্দিন বলেন, কৃষকদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। পণ্য পরিবহনের জন্য উন্নত ব্যবস্থা চালুসহ এলাকায় একটি হিমাগার স্থাপনের দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। এ ছাড়া নাজিরপুরের বৈঠাকাঠা বাজারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) একটি বীজ বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন একান্ত জরুরি।
সূত্র: প্রথম আলো
Related Link:
No comments:
Post a Comment