Tuesday, October 26, 2010

এবার পুকুরে ইলিশ চাষ

এবার পুকুরে ইলিশ চাষ

জি এম শাহীন, চাঁদপুর (দক্ষিণ)
সাগর ও নদীর মাছ ইলিশ এবার বদ্ধ জলাশয় পুকুরে চাষ হবে। চলতি মে মাস থেকেই বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে ইলিশ চাষ শুরু হচ্ছে। দীর্ঘ ১৪ বছর গবেষণার পর পাওয়া সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বিশেষজ্ঞরা বদ্ধ পুকুরের মিঠাপানিতে রুপালি ইলিশ চাষের পদ্ধতি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।
দেশে প্রতি বছর ৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উত্পাদন হয়। নদী ও সাগর থেকে এই ইলিশ আহরিত হয়। জাটকা শিকারের পাশাপাশি নদীর নাব্য সঙ্কট, পানি দূষণসহ নানা কারণে ইলিশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ চাষের উদ্যোগ নেয়া হলো। ইলিশ গবেষকদের মতে, বিশ্বে এই প্রথম পুকুরে ইলিশ চাষ শুরু হতে যাচ্ছে।
১৯৮৮ সাল থেকে পুকুরের মিঠাপানিতে ইলিশ চাষ করা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। দীর্ঘ ১৪ বছর গবেষণার পর চাঁদপুর মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষকরা সফলতা পান। ইনস্টিটিউটের ৩টি পুকুরে চলতি মাসের শেষদিক থেকে শুরু হচ্ছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইলিশ চাষ।
চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও বরিশালের পদ্মা-মেঘনা নদী ইলিশের অভয়াশ্রম। এগুলোতে কারেন্ট জালের সাহায্যে নির্বিচারে জাটকা নিধন করা হচ্ছে। শুধুম কারেন্ট জাল দিয়ে গড়ে বছরে ১১ হাজার মেট্রিক টন জাটকা শিকার করা হয়। কিন্তু এই জাটকার যদি ১০ ভাগও রক্ষা করা যেত তাহলে ১ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ইলিশ উত্পাদন হতো, যার দাম ২ হাজার কোটি টাকা।
চাঁদপুর মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান জানান, পুকুরে ইলিশ চাষের সব প্রস্তুতি এরমধ্যে শেষ হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এখন শুরু হবে পুকুরে ইলিশ চাষ। পুকুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইলিশ চাষ শুরুর সংবাদে ব্যবসায়ীরা বেশ আনন্দিত। এতে সারা বছরই পাওয়া যাবে ইলিশ। ব্যবসা সচল থাকবে বলে আশাবাদী তারা।
ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান আরও জানিয়েছেন, প্রতিটি ইলিশ মাছের ডিম থেকে প্রায় ১ লাখ রেণু পোনা হয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পুকুরে ইলিশ চাষ পুরোপুরি শুরু হলে জেলেরা কারেন্ট জাল দিয়ে আর জাটকা নিধন করবে না বলে আশা করা হচ্ছে। জীবন্ত জাটকা আহরণ করে জেলেরাই ইলিশ চাষীদের কাছে বিক্রি করতে পারবে। বদ্ধ জলাশয় অর্থাত্ পুকুরে ইলিশ চাষ সর্বত্র বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু করা গেলে দেশের মত্স্য খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
Source: Daily Amardesh, 9th May, 2010

ইলিশ পোনা বড় হচ্ছে পুকুরে

চাঁদপুরে পরীক্ষামূলকভাবে পুকুরে চাষ করা ইলিশ পোনাগুলোর আকৃতি কিছুটা বেড়েছে। গত তিন মাস আগে তিনটি পুকুরে এ পোনা ছাড়া হয়।
শনিবার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান পুকুরে ইলিশ চাষের সম্ভাবনা তুলে ধরে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, চাঁদপুরের তিনটি পুকুরে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গত মে মাসে
দুই হাজার ইলিশ পোনা ছাড়ে। এখনো পর্যন্ত এসব পোনার একটিও মরেনি।
তিনি জানান, যে তিনটি পুকুরে ইলিশ ছাড়া হয়েছে সেগুলোর পানির গুণাগুণ ভাল এবং ঠিকমতো খাবার দেওয়া হচ্ছে। পোনার আকৃতিও বেড়েছে। জাটকা সংরক্ষণ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা’ শিরোনামে একটি প্রকল্পের আওতায় পুকুরে এ ইলিশ চাষ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আনিছুর রহমান জানান, এসব পুকুরে ইলিশ মাছের খাদ্যাভ্যাস, বৃদ্ধির হার, স্বাদ, পরিপক্কতা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা হবে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে পোনাগুলোর ওপর পরীক্ষা চালানো হবে। এক্ষেত্রে কতটুকু সফলতা আসবে তা ওই পরীক্ষার পর বোঝা যাবে।
এর আগে ইনস্টিটিউটের দুটি পুকুরে ১৯৮৮ সালের মার্চ থেকে ১৯৮৯ সালের ফেব্রয়ারি পর্যন্ত ১২ মাস ধরে পুকুরে ইলিশ মাছের চাষ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করা হয়।
ওই গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে আনিছুর রহমান জানান, সে বার ইলিশের বেঁচে থাকার হার ছিল শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ।
নদী, মোহনা ও সাগরে যে ধরনের গুণাগুণ সম্পন্ন পানিতে ইলিশ মাছ অভ্যস্ত, পুকুরের পানিতে সেসব না থাকায় ও সঠিক খাবারের অভাবে পুকুরে ইলিশের বৃদ্ধি ২৪ শতাংশ কম হয়েছিল বলে জানান তিনি।
আনিছুর রহমান বলেন, পুকুরে খাবার ও ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ নদী কিংবা মোহনার পানির কাছাকাছি রেখে ইলিশ মাছ চাষ করলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। এজন্যে আরো গবেষণার প্রয়োজন।
তিনি জানান, অভিজ্ঞতার অভাব এবং নদীর চেয়ে ফল অনেক কম থাকার কারণে ওই সময় আর পুকুরে ইলিশ চাষ হয়নি।
তবে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইলিশের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে আগামী জাটকা মৌসুম (মার্চ-মে) থেকে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র, চাঁদপুরে বিস্তিৃত পরিসরে পুকুরে ইলিশ মাছ চাষের পরিকল্পনা নিয়েছেে
News Date: 19 September

ইলিশের বিচরণক্ষেত্র বাড়ানো প্রয়োজন
বকুল আশরাফ
বিজ্ঞান আগাবেই। এটাই নিয়ম। গবেষণা হবে, প্রতিনিয়ত উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করে যাবে মানুষ। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে ফল পাবে, তা জনকল্যাণের কাজে ব্যবহূত হবে। এটাই আধুনিক নিয়ম। আমাদের চারপাশে বেড়ে ওঠা জনগণের চাহিদা মেটানোর জন্য বিদেশী বিজ্ঞানীরা যেমন কাজ করে যাচ্ছেন, তেমনি দেশীয় বিজ্ঞানীরাও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, উদ্ভাবন করছেন নতুন নতুন প্রযুক্তি ও প্রজাতি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট অনেক ধরনের উন্নত জাতের ধানের বীজ আবিষ্কার করেছে, যা আমাদের দেশের কৃষি উন্নতিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে। সেই সব গবেষণালব্ধ উদ্ভাবন কৃষকদের কাছে এখন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকরাও নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে উচ্চ ফলনে, উন্নত প্রজাতিতে।

আমার ছোটবেলায় ভরা বর্ষায় দেখেছি বিলের মধ্যে আমন ধান। ঐ ধানগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পানি যত বাড়বে ধানও পানির সাথে সাথে বাড়বে। ফলন কম-বেশী বড় কথা নয়। মূল কথা হচ্ছে বাংলাদেশের বেশীর ভাগ অঞ্চলই বর্ষার পানিতে তলিয়ে যায় সুতরাং পানির উচ্চতার সমকক্ষ, বর্ষা বান্ধব ধান দরকার । অর্থাৎ পানি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে এমন ধানই আমন ধান। এই আমন ধানও ছিল সেই সময়ের বিজ্ঞানের আবিষ্কার। ইদানিং আবার খরা বান্ধব ধান আবিষ্কারে নেমেছে বিজ্ঞানীরা। যত দূর জানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রায় শেষ। এখন শুধু ফলন বাড়ানোর চেষ্টা। তারপর ক্রমাগতভাবে কৃষকদের মাঝখানে ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই উদ্ভাবন। জানি না পানি বিহীন এই পৃথিবী টিকে থাকবে কি না ? আসলেই কি বিজ্ঞান পানির বিকল্প কিছু উদ্ভাবন করতে পারবে ? মূল বিষয়ে ফিরে আসি। বাংলাদেশের মৎস্য বিজ্ঞানীরা এখন পুকুরে ইলিশ মাছের চাষ করছেন। ছোট বেলায় কৌতুক করে বলতে শুনেছি, বড় কর্তাকে খুশী করার জন্য তার বাড়িতে মাছ পাঠানো হতো। বলা হতো স্যার আমার পুকুরের মাছ আপনার জন্য নিয়ে এসেছি। কোন এক বোকা-সোকা লোক তার বড় কর্তার বাসায় ইলিশ মাছ নিয়ে গিয়ে বলেছিলো স্যার আমার পুকুরের ইলিশ আপনার জন্য নিয়ে এলাম। শুনে বড় কর্তার চোখ প্রায় ছানাবড়া। বলে কি পুকুরের ইলিশ ! কর্তা খুশী হবেন কি, উল্টো রেগে গিয়েছিলেন। অথচ একবিংশ শতাব্দীতে বড় সাহেবের জন্য পুকুরের একজোড়া ইলিশ হাতে নিয়ে যেতেই পারেন কোন অধস্তন কর্মচারী।

সম্প্রতি একটি দৈনিক পত্রিকার চাষাবাস পাতায় একটি প্রতিবেদন পড়ে আর্শ্চয্য হলাম। পুকুরে ইলিশ মাছ চাষের সম্ভবনা ও সফলতা বিষয়ক প্রতিবেদন। বাংলাদেশের মৎস্য বিজ্ঞানীরা স্থানীয় মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নিজস্ব পুকুরে ইলিশের পোনা ছেড়েছেন পরীক্ষামূলক। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। ইলিশের জীবিত পোনা সংগ্রহ করে পুকুরে ছেড়ে এই পরীক্ষা। তারা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন ইলিশের জীবন প্রকৃতি, ইলিশের বেড়ে উঠা, গতি প্রকৃতি, খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত অনেক তথ্য ও উপাত্ত। প্রায় দুই দশক আগে বাংলাদেশের মৎস্য বিজ্ঞানীরা ইলিশ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। মূল বিষয়, কি করে পুকুরে ইলিশের চাষ করা যায়। বর্তমানে তাদের নিরবিচ্ছিন্ন গবেষণা বলছে, যে পরিমাণ জাটকা নিধন হয় এই দেশে, তার পরিপূরক হিসেবে যদি ইলিশের পোনাকে বদ্ধ জলাশয়ে খাপ খাওয়ানো যায় তবে প্রচুর জাটকা নিধন হলেও ইলিশের অপ্রাপ্তি রোধ করা যাবে। বিজ্ঞানীদের মতে পুকুরে চাষ করা ইলিশের দৈঘর্্য এক বছরে প্রায় দশ ইঞ্চি এবং ওজন ৪৫০ গ্রাম।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের যুক্তির বিশেষ লক্ষণীয় বিষয়টি হলো, সরকার কতর্ৃক জাটকা সংরক্ষণে অভয়াশ্রম কর্মসূচি হাতে নেবার পর, জাটকার আধিক্য বেড়েছে সত্যি,কিন্তু নদীর নব্যতা হ্রাস পাওয়ায় ইলিশের পরিভ্রমণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু কিছু নদীর পানি দূষিত হয়ে বড় নদীতে পড়ছে। এতে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। এবং ইলিশের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। তাই বিকল্প হিসেবে পুকুরে ইলিশের উৎপাদনের চেষ্টা। বিজ্ঞানীদের কঠোর মনোবল, এবার তারা সফলতার দারপ্রান্তে পেঁঁৗছাবেনই। তারা যোগ-বিয়োগ, গুণ করে অর্থনৈতিক সাফল্যের হিসেবও দেখিয়েছেন। বছরে প্রায় এক লক্ষ মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদন করতে পারবেন পুকুরে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

বিজ্ঞানীদের গবেষণা মানুষকে, একটি দেশকে অনেক উন্নত করে তোলে কথাটি যেমন সত্যি, তেমনি যদি আমরা মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতামতগুলোকে প্রাধান্য দেই, তবে দেখবো যে কারণে তারা পুকুরে ইলিশের চাষ নিয়ে গবেষণা করছেন সেগুলো হলো-এক. নদীর নাব্যতার ক্রমবর্ধমান হ্রাস পাওয়া। দুই. নদীর পানি ক্রমাগত দূষিত হয়ে যাওয়া। তিন. প্রচুর পরিমাণে জাটকা নিধন। বাংলাদেশে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিচালিত জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর জাটকা ধরা পড়ে মোট ৩৫০০-৪০০০ মেট্রিকটন। শুধুমাত্র মেঘনাতেই ধরা পড়ে এর পঞ্চাশভাগ। অথচ মৎস্য আইনে জাটকা ধরার অনুমতি নেই। অর্থাৎ যারা জাটকা ধরেন তারা অবৈধ কাজ করেন। অপরাধ করেন। আমরা কি পারি না নদীর নাব্যতাকে ড্রেজিং করে ধরে রাখতে। বাংলাদেশের প্রতিটি নদীতেই এখন ড্রেজিং-এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সরকারীভাবে একটি সমন্বিত কর্মসূচি এখনই গ্রহণ করা অত্যাবশকীয় হয়ে পড়েছে। সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। শিল্প কারখানার বর্জ্য যেন নদীতে না ফেলা হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। নদীর দূষন ঠেকাতে আইনি প্রয়োগসহ মানুষদের সচেতন করে তুলতে হবে । জাটকা নিধন ঠেকাতে হবেই। ইলিশ মাছ বিষয়ক সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। উপরোক্ত তিনটি বিষয়ে যদি সরকারসহ আমরা সাধারণ জনগণ মিলিত প্রয়াস চালাই তবেই সফলতার কাছাকাছি পেঁঁৗছানো সম্ভব হবে। এই তিনটি বিষয়ে সরকার যদি তার নজরদারী বাড়ান বা বাস্তবসম্মত কঠোর কর্মসূচি হাতে নেন তবে আমরা যে শুধু ইলিশের বাড়তি উৎপাদন পাবো, তা নয়। আমরা পাবো অন্যান্য মাছেরও বাড়তি উৎপাদন। পাবো মাছদের জন্য অভয় বিচরণ ক্ষেত্র। ভাতে মাছে বাঙালি ফিরে পাবে তাদের ঐতিহ্যের স্বাদ। পানির সরবরাহও ফিরে পাবো। ফিরে পাবো পুনরায় নদীপথে যাতায়াতের সুযোগ। আমাদের দৈনন্দিন কর্মকান্ডে পানির অভাব থেকে পরিত্রাণ পাবো। কমবে ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা। আমরা পরিত্রাণ পাবো লোনা পানি উঠে আসার ভয় থেকে। ইলিশ মাছ-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে সাঁতারু মাছ। তার বিচরণ ক্ষেত্র লাগে ব্যাপক। তার বসবাস নদী, মোহনা ও সুমুদ্রে। এই মাছ প্রজননের জন্য স্বাদু পানির স্রোতের ওজানে অগভীর পানিতে উঠে আসে এবং ডিম ছাড়ে। সুতরাং আমরা ইলিশকে পুকুরের একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে না এনে বরং ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র নিয়ে কেন মাথা ঘামাচ্ছি না। বাঙালি জাতীর ঐতিহ্য বহন করা ইলিশের স্বভাব সুলভ গতি প্রকৃতির দিকে খেয়াল করছি না কেন? ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। সুতরাং এই মাছের বাড়ন, বিচরণ ক্ষেত্র রক্ষা করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য।
[লেখক:কবি, প্রাবন্ধিক]
Source: Daily Ittefaq


জাতীয় মাছপুকুরে ইলিশ!
পদ্মার নয়, সাতক্ষীরার পুকুরের ইলিশ। ছবি : কালের কণ্ঠ
- ফখরে আলম ও রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, সাতক্ষীরা থেকে পুকুরে ছাড়া হয়েছিল রুই, কাতলা ও চক্ষুবাটার পোনা। জাল ফেলে সেই পুকুরে মিলল জলজ্যান্ত ইলিশ! একটুও গল্পের নয়, সত্যিকারের।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতা গ্রামের একটি পুকুরে মিলেছে এ ইলিশ মাছের সন্ধান। গত শুক্রবার দুপুরে ওই পুকুরে জাল ফেলা হলে তাতে উঠে আসে বেশ কয়েকটি ইলিশ। তাও একেবারে ছোট নয়, দুই শ-আড়াই শ গ্রাম ওজনের। ইলিশ দেখে জেলেরা হতবাক! জাল থেকে কয়েকটি ইলিশ তুলে নিয়ে বাকিগুলো আবার পানিতে ছেড়ে দেন পুকুরের মালিক আব্বাস আলী বিশ্বাস।
সাতক্ষীরা শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে আব্বাস আলীর একটি বরফকল রয়েছে। সেখানে রয়েছে দুই বিঘা আয়তনের একটি পুকুর। পুকুরটি বন্যা কিংবা অতি বর্ষণে কখনো তলিয়ে যায়নি। এর পরও সেই পুকুরে ধরা পড়েছে ইলিশ।
পুকুরটি দেখাশোনা করেন আব্বাস আলীর ভাই মাহাবুব। তিনি বলেন, 'কয়েক মাস আগে খুলনার পাইকগাছার শিবসা নদী থেকে চক্ষুবাটার পোনা এনে পুকুরটিতে ছাড়া হয়। গত জুন মাসের দিকে পুকুরে জাল টানা হলে প্রথমবারের মতো কয়েকটি ইলিশ ধরা পড়ে। কিন্তু এরপর জাল টেনে আর কোনো ইলিশ পাওয়া যায়নি। শুক্রবার জাল টানা হলে আবার ১৫-১৬টি একই সাইজের ইলিশ ধরা পড়ে। দুটি রেখে বাকিগুলো পুকুরে ছেড়ে দিয়েছি।'
জাল টানার সময় কথা হয় জেলে বুদ্ধিশ্বর মণ্ডল ও পরিতোষ মণ্ডলের সঙ্গে। বুদ্ধিশ্বর বলেন, 'আমরা ২০-২৫ বছর ধরে
জাল টানার কাজ করছি। কিন্তু পুকুরে কোনোদিন ইলিশ মাছ দেখিনি। মনে হয়, শিবসা নদী থেকে চক্ষুবাটার পোনার সঙ্গে ইলিশের পোনাও কোনোভাবে এ পুকুরে চলে এসেছে।'
এ ব্যাপারে যশোরের চাঁচড়ার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খলিলুর রহমান বলেন, 'ইলিশ সমুুদ্র, মোহনা ও নদীতে বাস করে। স্বল্প অঙ্েিজন ও তাপমাত্রার তারতম্য হলে ইলিশের পোনা বাঁচতে পারে না। তবে পুকুরেও ইলিশ বেঁচে থাকতে পারে।'
Source: Daily Kalerkantho, 3th April, 2011

No comments:

Post a Comment