Thursday, December 2, 2010

বিশ্ব বাজারে বগুড়ার নকশি কাঁথা

বিশ্ব বাজারে বগুড়ার নকশি কাঁথা
০০আমিনুল ইসলাম চৌধুরী,বগুড়া অফিস

বগুড়ার পলস্নীবধূদের নিপুণ হাতে তৈরী হস্তশিল্প বিশ্ব বাজারে স্থান করে নিয়েছে। তৈরী হচ্ছে নকশি কাঁথা, বুটিক, টেবিল ক্লথ, বস্নক প্রিন্টিং উলেন শাল, কুশন, তাল_ খেজুরের পাতা ও শ্বাস থেকে তৈরী ব্যাগ, বাস্কেট। এ শিল্পে কাজের সুযোগ পেয়ে বগুড়া শহর, শহরতলি ও গ্রামের দরিদ্র ও হতদরিদ্র দেড় শতাধিক পলস্নীবধূ স্বাবলম্বী হয়েছে। গৃহকর্মের ফাঁকে বাড়তি আয়ের সুযোগ পেয়েছে। বগুড়া শহরের বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) পলস্নী উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে গ্রামের দরিদ্র ও হতদরিদ্র মহিলাদের সংগঠিত করে প্রায় দশ বছর আগে এ প্রকল্পটি শুরু করেছে। এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের আওতায় মহিলাদের সুচি শিল্প থেকে হস্ত শিল্পের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলারা এখন ডিজাইন তৈরীতেও পারদর্শী। নিপুণ হাতে তৈরী নকশি কাঁথা, কুশন, নকশি করা শাল, তাল খেজুরের পাতা ও শ্বাস থেকে তৈরী বাস্কেট, ব্যাগ, টেবিল ল্যাম্প ক্রয় করে বাজারজাত করছে পলস্নী উন্নয়ন প্রকল্প (পাপ)। বিদেশের বাজারেও এসব হস্ত ও সুচি শিল্পের নমুনা তুলে ধরেছে পাপ। তিন/ চার বছরের ব্যবধানে পাপ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইংল্যান্ড, জার্মান, ইতালি ও নরওয়ে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। স্বীকৃতি পেয়েছে ওয়ার্ল্ড ফেয়ার ট্রেড সংস্থা ( ডবিস্নউএফটিও), এশিয়া ফেয়ার ট্রেড ফোরাম (এএফটিএফ ও ইকোটা ফেয়ার ট্রেড ফোরামের ( ইএফটিএফ)। বিশ্ব বাজার ধরতে পাপ এসব শিল্প মেলায় অংশগ্রহণ করে এখানকার দরিদ্র-হতদরিদ্র মহিলাদের তৈরী হস্ত ও সুচি শিল্পের সুনাম ও চাহিদা তৈর করতে সক্ষম হয়েছে। এখন বিদেশীরাই বগুড়ার গ্রামের মহিলাদের সাথে চুক্তি করছে। ডিজাইন করে দিচ্ছে।

সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক শেখ আবু হাসানাত সাঈদ জানিয়েছেন, গত অর্থবছরে ২৫ লাখ টাকার পলস্নী মহিলাদের তৈরী ১০টি শিল্পকর্ম রপ্তানি করা হয়েছে। এ বছর আরো ৩০ লাখ টাকার চাহিদাপত্র পাওয়া গেছে। বগুড়া শহর, শহরতলি ও গ্রামগুলো হচ্ছে লতিফপুর কলোনী, বেজোড়া, নন্দগ্রাম, জামপাড়া, দেঘলকান্দি, মাঝগ্রাম, নিশ্চিন্তপুর উলেস্নখযোগ্য। গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরের মহিলারা অবসরে বা গৃহকর্মের ফাঁকে সুচি শিল্পকর্মে ব্যস্ত। দেঘলকান্দি গ্রামের দরিদ্র পরিবারের গৃহবধূ বেবী বেগম, সাজেদা বেগমের সংসারে একদিন অভাব অনটন লেগেই থাকত। সমাজে ছিলেন অনাঙ্ক্ষিত। ছিল না মর্যাদা। পলস্নী উন্নয়ন প্রকল্পের (পাপ) সাথে যুক্ত হয়ে ও প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন সে একজন উপার্জনক্ষম নারী। সমাজেও মর্যাদা পাচ্ছেন। বেবী বেগমের মত সাজেদা, পাপিয়ারাও আজ সুচি ও হস্তশিল্প থেকে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। বগুড়া শহরের চকলোকমান এলাকায় পাপের অফিসে গিয়ে দেখা হল দুজন বিদেশিনী এনা ও ইউত্তার সাথে। একজন এসেছেন লন্ডন থেকে, অপরজন এসেছেন নরওয়ে থেকে বগুড়ার মহিলাদের তৈরী নকশিকাঁথা, কুশন, পাটের ব্যাগ ও পরিবেশ বান্ধব তাল ও খেজুর পাতা ও শ্বাস থেকে তৈরী হস্তশিল্প পরিদর্শনে। নিজের দেশের জন্য অর্ডার নিয়ে যাবেন। এনা ও ইউত্তার জানালেন, এখানকার হস্তশিল্প তাদের দেশে যথেষ্ট চাহিদা আছে। এ দুজন বিদেশিনী এবার ৫ লাখ টাকা মূল্যের হস্তশিল্পের অর্ডার দিয়েছেন।
Source: Daily Ittefaq

No comments:

Post a Comment