হাওরের বাস্তবতা ও বৃক্ষরোপণ
ড. নিয়াজ পাশা
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বি.এ.আর.সি.) আয়োজিত বনজ, কাঠ ও ফল গাছ বিষয়ক নীতিনিধর্ারণী এক কর্মশালায় দেশে বন সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে বিজ্ঞ বিজ্ঞানীদের প্রবন্ধ, নিবন্ধ উপস্থাপন, মতামত ও আলোচনা হচ্ছিল। সবাই উপকূল, লোনা পানি, সুন্দরবন, সমতল আর পাহাড়ি এলাকায় বন বৃদ্ধি নিয়ে অভিজ্ঞতালব্ধ পরামর্শ বর্ণনা করছিলেন। আচমকা আমার প্রশ্নে মাননীয় সভাপতির ঝটপট উত্তর, হাওর ! তো- পানি, কিভাবে বনায়ন সম্ভব ? আমি অতি বিনয়ের সাথে বললাম, স্যার ! সমুদ্রের কড়া পানিতে যদি গাছ জন্মায়, তবে হাওরের মিঠা পানিতে গাছ হবে না কেন ?
হাওরের মিঠা পানিতে গাছ হবে এবং ছিলও প্রচুর। কিন্তু অযাচিতভাবে এ সব গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। সারা দেশের বন ধ্বংস উৎসব হতে হাওর কোনভাবেই পিছিয়ে নেই বরং একধাপ এগিয়ে আছে। হাওরে বলতে গেলে কোন গাছই নেই। দিগন্ত বিস্তৃত ফাকা ধু ধু মাঠ খাঁ খাঁ করছে। অথচ একদা এখানে ছিল- আকণ্ঠ নিমগ্ন হিজল, তমাল, ইকরা, নল খাগড়ার বন। হাওরের দ্বীপসম গ্রামগুলোতে বলতে গেলে বৃক্ষ শূন্য, ঘন বসতির ন্যাংটা, শুধু বাড়িঘর, জনারণ্যে নেই কোন বৃক্ষরাজি। হাওর দেশের একটা বিশেষায়িত অনুন্নত, অবহেলিত ও উন্নয়ন কর্মকান্ড হতে বঞ্চিত অঞ্চল। দেশে এখন বৃক্ষরোপণ অভিজান চলছে। গাছ লাগানো হচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক, সংযোগ সড়ক ও সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, হাওরে নেই তার কোন ছিটে ফোটা প্রভাব, সারা শব্দ ও উদ্যোগ। হাওরে বৃক্ষ রোপণের জন্য কোন আর্থিক বরাদ্দ আছে কিনা জানা নাই ? কিন্তু এ জানি যে, বৃক্ষ রোপণের কোন তৎপরতা হাওরে নেই। দেশের ছয় ভাগের এক অংশকে এবং প্রায় দুই কোটি লোককে বনায়নের বাহিরে রেখে আর যাই হউক, সুষম উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষা সম্ভব নয়। দেশের উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনার মূল স্রোত হতে সব সময় বাহিরে রাখা হয় হাওরকে। বিষয়টা পরিকল্পনাবিদ, নীতি নির্ধারক ও উন্নয়ন সহায়ক সংগঠকের দৃষ্টি সীমার বাহিরে অথবা প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব রয়েছে। বর্ষায় হাওরে দিগন্ত বেষ্টিত পানি আর পানি। এর মধ্যে বনায়ন বা বৃক্ষরোপণ করা সম্ভব? একথা দুই দশক আগে (১৯৮৮) কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম চৌধুরৗ এবং এই লেখক প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে হাওরে পানির মধ্যে বনায়নের দাবী, গুরুত্ব ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। তখন এই প্রস্তাবনা ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে ছিল। সমুদ্রের কড়া পানির লুনা মাটিতে বৃক্ষ রোপণের যে তোরজোড় আমরা লক্ষ্য করি, তার কিয়দাংশ ব্যবহার করেই এর চেয়ে বেশী পরিমাণ সুফল আমরা পেতে পারি হাওরে। সমুদ্রের পানিতে ভেসে গাছের বীজ অন্যত্র ছড়িয়ে পরে। হাওরেও অনেক গাছের বীজ এভাবে বংশ বিস্তার করে। হাওরের গ্রাম, রাস্তা কাম বাঁধে, কান্দায়, উচুঁ ভূমিতে, সড়কে, শিক্ষাঙ্গণে, অফিস প্রাঙ্গনে, বিলের পাড়ে, নদীর ধারে, গরুর মাঠে-হাটে, ধানের জমির আইলে, মসজিদ মন্দিরে পানি সহিঞ্চু গাছ লাগানো যেতে পারে। বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট নিচু জলমগ্ন ভূমিতে রোপণ উপযোগি ৭৭ প্রকারের গাছ চিহি্নত করেছে যা, অত্যন্ত আশা-ব্যঞ্জক সু-সংবাদ। এর মধ্যে ফলজ গাছও রয়েছে। এ থেকেই হাওরে বনায়নের গুরুত্ব ও উপযোগিতা প্রমাণ হয়।
এন.জি.ও. বিক্ষিপ্তভাবে হাওরে গাছ লাগাচ্ছে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে, পূর্ব অভিজ্ঞতা ও গবেষণা ছাড়াই গাছ লাগালে যা হয়, সে ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। টাকার নয় ছয় হয় বটে কিন্তু সফলতার জন্য প্রয়োজন আন্তরিকতা, সঠিক গাছ নির্বাচন, সঠিক স্থান, গাছের বয়স ও রোপণের সময় নির্ধারণ। সর্বাগ্রে প্রয়োজন হাওরে রোপণ যোগ্য গাছের জীবনবৃত্তান্ত, বংশ বিস্তারের পদ্ধতি, বীজ/চারা উৎপাদন কৌশল ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণালব্ধ তথ্য । পানির মধ্যে গাছ লাগানোর টনিক উদ্ভাবন করতে হবে।
তাছাড়া কেবল পানি সহিষ্ণু গাছ রোপণই নয়, প্রবল ঢেউয়ের আঘাত সহনীয় গাছের অনুসন্ধান করাও প্রয়োজন। 'ইন্টার ক্রপস'-এর কৃষিবিদ হামিদ ভাই তাঁর প্রতিষ্ঠান কতর্ৃক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত 'জার্ম পস্নাজম' সহ হাজার হাজার নাসর্ারি, মাতৃ গাছ সৃষ্টির সুসংবাদ জানান কিন্তু হাওরের জন্য একটা নার্সারির অস্থিত্বও খুঁেজ পায় না। অথবা বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. সালেহ ভাই যখন 'ওয়েট ল্যান্ড মেনেজম্যান্ড (ডবঃ খধহফ গধহধমবসবহঃ)' বিষয়ে শুধু উপকূলীয় জলাভূমি নিয়ে কথা বলেন, সেখানেও হাওর উহ্য থাকে, বাদ পরে যায়। আসলে হাওরের অবস্থা, বাস্তবতা, সমস্যা ও সম্ভাবনা লোক চক্ষুর আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। আমরা নীতি নির্ধারক ও পরিকল্পনাবিদদের কাছে হাওরকে তুলে ধরতে পারি নাই। হাওরের মিঠা জল, জলাশয়, জনগণ এবং এর বৃক্ষ সম্পদকে কেন্দ করে পর্যটন, বিনোদন, মৎস্য এর উৎসে, সম্পদে পরিণত হতে পারে। মিডিয়া শুধু হাতের কাছের সংবাদ বেশী প্রচার করে, দুর্গম হাওরের সংবাদ তাঁরা পায় না, তাই প্রচারও হয় কম। একে উন্মোচন করতে হবে। জানাতে হবে এর সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা। প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে হাওরবাসি উন্নয়ন পরিকল্পনা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। আশার কথা, বি.এ.আর.সি.'র বন বিজ্ঞানী ড. শাহজাহান উক্ত কর্মশালায় হাওরে বনায়নের বিষয়টি সুপারিশমালায় সংযোজনে একমত হয়েছেন।
হাওরের মিঠা পানিতে গাছ হবে এবং ছিলও প্রচুর। কিন্তু অযাচিতভাবে এ সব গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। সারা দেশের বন ধ্বংস উৎসব হতে হাওর কোনভাবেই পিছিয়ে নেই বরং একধাপ এগিয়ে আছে। হাওরে বলতে গেলে কোন গাছই নেই। দিগন্ত বিস্তৃত ফাকা ধু ধু মাঠ খাঁ খাঁ করছে। অথচ একদা এখানে ছিল- আকণ্ঠ নিমগ্ন হিজল, তমাল, ইকরা, নল খাগড়ার বন। হাওরের দ্বীপসম গ্রামগুলোতে বলতে গেলে বৃক্ষ শূন্য, ঘন বসতির ন্যাংটা, শুধু বাড়িঘর, জনারণ্যে নেই কোন বৃক্ষরাজি। হাওর দেশের একটা বিশেষায়িত অনুন্নত, অবহেলিত ও উন্নয়ন কর্মকান্ড হতে বঞ্চিত অঞ্চল। দেশে এখন বৃক্ষরোপণ অভিজান চলছে। গাছ লাগানো হচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক, সংযোগ সড়ক ও সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, হাওরে নেই তার কোন ছিটে ফোটা প্রভাব, সারা শব্দ ও উদ্যোগ। হাওরে বৃক্ষ রোপণের জন্য কোন আর্থিক বরাদ্দ আছে কিনা জানা নাই ? কিন্তু এ জানি যে, বৃক্ষ রোপণের কোন তৎপরতা হাওরে নেই। দেশের ছয় ভাগের এক অংশকে এবং প্রায় দুই কোটি লোককে বনায়নের বাহিরে রেখে আর যাই হউক, সুষম উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষা সম্ভব নয়। দেশের উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনার মূল স্রোত হতে সব সময় বাহিরে রাখা হয় হাওরকে। বিষয়টা পরিকল্পনাবিদ, নীতি নির্ধারক ও উন্নয়ন সহায়ক সংগঠকের দৃষ্টি সীমার বাহিরে অথবা প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব রয়েছে। বর্ষায় হাওরে দিগন্ত বেষ্টিত পানি আর পানি। এর মধ্যে বনায়ন বা বৃক্ষরোপণ করা সম্ভব? একথা দুই দশক আগে (১৯৮৮) কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম চৌধুরৗ এবং এই লেখক প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে হাওরে পানির মধ্যে বনায়নের দাবী, গুরুত্ব ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। তখন এই প্রস্তাবনা ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে ছিল। সমুদ্রের কড়া পানির লুনা মাটিতে বৃক্ষ রোপণের যে তোরজোড় আমরা লক্ষ্য করি, তার কিয়দাংশ ব্যবহার করেই এর চেয়ে বেশী পরিমাণ সুফল আমরা পেতে পারি হাওরে। সমুদ্রের পানিতে ভেসে গাছের বীজ অন্যত্র ছড়িয়ে পরে। হাওরেও অনেক গাছের বীজ এভাবে বংশ বিস্তার করে। হাওরের গ্রাম, রাস্তা কাম বাঁধে, কান্দায়, উচুঁ ভূমিতে, সড়কে, শিক্ষাঙ্গণে, অফিস প্রাঙ্গনে, বিলের পাড়ে, নদীর ধারে, গরুর মাঠে-হাটে, ধানের জমির আইলে, মসজিদ মন্দিরে পানি সহিঞ্চু গাছ লাগানো যেতে পারে। বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট নিচু জলমগ্ন ভূমিতে রোপণ উপযোগি ৭৭ প্রকারের গাছ চিহি্নত করেছে যা, অত্যন্ত আশা-ব্যঞ্জক সু-সংবাদ। এর মধ্যে ফলজ গাছও রয়েছে। এ থেকেই হাওরে বনায়নের গুরুত্ব ও উপযোগিতা প্রমাণ হয়।
এন.জি.ও. বিক্ষিপ্তভাবে হাওরে গাছ লাগাচ্ছে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে, পূর্ব অভিজ্ঞতা ও গবেষণা ছাড়াই গাছ লাগালে যা হয়, সে ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। টাকার নয় ছয় হয় বটে কিন্তু সফলতার জন্য প্রয়োজন আন্তরিকতা, সঠিক গাছ নির্বাচন, সঠিক স্থান, গাছের বয়স ও রোপণের সময় নির্ধারণ। সর্বাগ্রে প্রয়োজন হাওরে রোপণ যোগ্য গাছের জীবনবৃত্তান্ত, বংশ বিস্তারের পদ্ধতি, বীজ/চারা উৎপাদন কৌশল ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণালব্ধ তথ্য । পানির মধ্যে গাছ লাগানোর টনিক উদ্ভাবন করতে হবে।
তাছাড়া কেবল পানি সহিষ্ণু গাছ রোপণই নয়, প্রবল ঢেউয়ের আঘাত সহনীয় গাছের অনুসন্ধান করাও প্রয়োজন। 'ইন্টার ক্রপস'-এর কৃষিবিদ হামিদ ভাই তাঁর প্রতিষ্ঠান কতর্ৃক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত 'জার্ম পস্নাজম' সহ হাজার হাজার নাসর্ারি, মাতৃ গাছ সৃষ্টির সুসংবাদ জানান কিন্তু হাওরের জন্য একটা নার্সারির অস্থিত্বও খুঁেজ পায় না। অথবা বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. সালেহ ভাই যখন 'ওয়েট ল্যান্ড মেনেজম্যান্ড (ডবঃ খধহফ গধহধমবসবহঃ)' বিষয়ে শুধু উপকূলীয় জলাভূমি নিয়ে কথা বলেন, সেখানেও হাওর উহ্য থাকে, বাদ পরে যায়। আসলে হাওরের অবস্থা, বাস্তবতা, সমস্যা ও সম্ভাবনা লোক চক্ষুর আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। আমরা নীতি নির্ধারক ও পরিকল্পনাবিদদের কাছে হাওরকে তুলে ধরতে পারি নাই। হাওরের মিঠা জল, জলাশয়, জনগণ এবং এর বৃক্ষ সম্পদকে কেন্দ করে পর্যটন, বিনোদন, মৎস্য এর উৎসে, সম্পদে পরিণত হতে পারে। মিডিয়া শুধু হাতের কাছের সংবাদ বেশী প্রচার করে, দুর্গম হাওরের সংবাদ তাঁরা পায় না, তাই প্রচারও হয় কম। একে উন্মোচন করতে হবে। জানাতে হবে এর সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা। প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে হাওরবাসি উন্নয়ন পরিকল্পনা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। আশার কথা, বি.এ.আর.সি.'র বন বিজ্ঞানী ড. শাহজাহান উক্ত কর্মশালায় হাওরে বনায়নের বিষয়টি সুপারিশমালায় সংযোজনে একমত হয়েছেন।
No comments:
Post a Comment