Sunday, December 5, 2010

বিলিয়ন ডলার পাদুকা রপ্তানী শিল্প খুব দূরে নয়

বিলিয়ন ডলার পাদুকা রপ্তানী শিল্প খুব দূরে নয়

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ : বিশেস্নষক

চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর এই পাঁচ মাসে ১১ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পাদুকা রপ্তানী হয়েছে বাংলাদেশ থেকে সারা দুনিয়ায়। আগের অর্থবছরের এই সময়ের তুলনায় শতকার ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে পাুদকা রপ্তানী আয়ে। এ ধারা চলতে থাকলে অর্থবছর শেষে আয় দাড়াবে প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলার যা টাকার অংকে ২১শ কোটি।

এটি কিন্তু স্বপ্ন নয় বরং ঘটতে যাচ্ছে এমন এক সমূহ সম্ভাবনা। ঘটতে পারে বা ঘটতে যাচ্ছে এমন আরো একটি বিশাল সম্ভাবনা বাস-াবায়ন পর্বও শুরু হয়েছে এরমধ্যেই। সেটি হলো শত কোটি ডলার পাদুকা রপ্তানীকারক দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের নাম। এটিও ঘটবে আগামী তিন বছরের মধ্যেই। এটি কোন স্বপ্নচারী বিবৃতি নয় বরং আগাম হিসেব করলে মিলে যায় এমন ব্যাপারই।

২০১৩ সাল নাগাদ শতকোটি বা বিলিয়ন ডলার ফুটওয়্যার রপ্তানী শিল্প হবে বাংলাদেশে এটি হলফ করেই বলা যায় যদি না দেশে এমন কোন রাজনৈত্যিক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে যাতে দেশি বিদেশি উদ্যোক্তাদের গুটাতে হয় উৎপাদনরত ও নির্মিয়মান কারখানাগুলো ।

চলতি অর্থবছর শেষে না হয় ত্রিশ কোটি ডলার হলোই পাদুকা রপ্তানী- কিন্তু এর পরের আড়াই তিন বছরের বাকি সত্তর কোটি ডলার কোথা থেকে আসবে?

হিসেবটা এখান্ইে।

বর্তমানে একটিমাত্র বৃহৎ রপ্তানীকারক এপেক্স-আডেলকি ফুটওয়্যার ছাড়া বাকি গোটা চলি্লশেক ছোট মাঝারী সু ইন্ড্রাস্টি রপ্তানী বাজারের জন্য পাদ-কা উৎপাদন করছে তাদের অনেকেরই কমবেশি সমপ্রসারন হবে, প্রবৃদ্ধি হবে। কারন বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পাদুকার ব্যপক চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে। আগামী তিন বছরে পাদুকা রপ্তানীতে মূল প্রবৃদ্ধি আসবে নির্মিয়মান কারখানাগুলো থেকেই।

ছ'মাস আগে চট্রগ্রামে নির্মান শুরু হয়েছে ইয়াংওয়ান ফুটওয়্যার কমপ্লেক্স। কোরিয়ান ইয়াংওয়ান কর্পোরেশন বাংলাদেশ এর একক বৃহত্তম রপ্তানীকারক তৈরী পোষাক খাতে। তারা স্পোর্টসওয়্যার ও আউটারওয়্যার উৎপাদন করে। ইয়াংওয়ান এবার বাংলাদেশে নির্মান করছে এশিয়ার বৃহত্তম জুতার কারখানা যেখানে প্রায় ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। কারখানার প্রথম ধাপ আগামী অর্থবছরের শুরতে উৎপাদনে যাবে। জানা গেছে, ২০১৩ সালের মধ্যে তাদের পরিকল্পনামত পুরো উৎপাদন ক্ষমতা কাজ শুরু করবে তাতে তারা ২৫ কোটি ডলার রপ্তানী করবে বাৎসরিক। ইয়াংওয়ান এখন মাঝারী আকারের কারখানায় নাইকি সহ কিছু দামী বান্ড্রের জন্য স্পোর্টস ফুটওয়ার উৎপাদন করে যা থেকে ২০১০ সালে রপ্তানী আয় ৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

তাদের প্রতিষ্টান এর এক-তুতীয়াংশ না করলেও ইয়াংওয়ান মনে করে ২০১৩ সালের মধ্যেই বাংলাদেশে বিলিয়ন ডলার পাদুকা রপ্তানী শিল্প হবে।

ইয়াংওয়ান ছাড়াও বিশ্বের বড়ো মাপের জুতা উৎপাদকেরা এখানে কারখানা গড়তে শুরু করেছেন। চ্রটগ্রামে একটি মাঝারী মাপের কারখানা করছে তাইওয়ানের পাও চেন যারা বিশ্বে এক নম্বর। চিনে পাও চেন এর কারখানাগুলো পাঁচ লাখ শ্রমিক কাজ করে। পর্যাপ্ত জায়গা পেলে পাও চেন আরো বড়ো কারখানা করতো বাংলাদেশেও। তাইওয়ান থেকে জেন-চেন জেন-ফোর্ডসহ আরো কিছু জুতা প্রস-ুতকারক এসেছে বাংলাদেশে, কারখানা বানাচ্ছে তারা। বনবন সু এসছে যারা বানায় হিউগো বস ব্রান্ডের জুতা।

স্থানীয়রাও বসে নেই। ইপিজেড এর বাইরে গোটা দশেক কারখানা নির্মর্িয়মান। এমনই একজন উদ্যোক্তা বাংলাদেশ ফিনিসড লেদার এক্সপোর্টাস এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি টিপু সুলতান। ভদ্রলোক ফেনিতে গড়ে তুলছেন একটি কারখনা। ছমাস পর প্রতিদিন দুহাজার পিস জুতা উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে প্রথম ধাপ চালু করবেন তিনি এরপর আগামী বছর তিনেকে সমপ্রসারন হবে দশ হাজার পিসে।

টিপু বলেন, চিনের শ্রমিক সংকট ও পশ্চিমা আমদানীকারকদের নতুন আমদানীসুত্র খোঁজার কারনে বাংলাদেশের পাদুকা শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। তাই অনেকেই সাহস করছেন কারখানা করতে।

নিকট ভবিষ্যতেই বিলিয়ন ডলার পাদুকা রপ্তানী শিল্পটি দেখতে পাচ্ছেন, শীর্ষ ও অভিজ্ঞ রপ্তানীকারক, এপেক্স-আডেলকি এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, সৈয়দ নাছিম মঞ্জুরও।

প্রতিদিন প্রায় ১৮ হাজার জোড়া পাদুকা তৈরী করে এপেক্স-আডেলকির বাৎসরিক টার্নওভার প্রায় ১০ কোটি ডলার। ফেব্রুয়ারীতে তাদের অংশিদারিত্বে ব্লু ওশান নামে আরেকটি কারখানা চালু হবে।

বর্তমান প্রবৃদ্ধি ও সমপ্রসারিত উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে ২০১৩ সাল নাগাদ নাছিম মঞ্জুরদের প্রতিষ্ঠান ২০ কোটি ডলার সু এক্সপোর্ট টার্নওভারের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে এটি হিসব কষলেই মিলে যায়।

নাছিম বললেন, প্রচলিত বাজার জাপান ও জার্মানী ছাড়াও আমেরিকার ক্রেতারা আজকাল বেশ আসছেন বাংলাদেশে।

তবে ইউনির্ভাসিটি অফ পেনসিলভেনিয়ার বিখ্যাত ওয়ারটন বিজনেস স্কুলে পড়ে আসা এই মেধাবী উদ্যোক্তা বলেন, সব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারকে বিদু্যৎ সহায়তা দিতে হবে, অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে দ্রুত। শিল্পের গুড ইমেজ উন্নয়নে হাজারীবাগের ট্যানারী দূষনও বন্ধ করতে হবে দ্রত, বলেন টিপু সলতান ও নাছিম মঞ্জুর দুজনেই।
Source: Daily Ittefaq

No comments:

Post a Comment