Sunday, December 19, 2010

গস্নাডিওলাস ফুল চাষি আফসার উদ্দিন

গস্নাডিওলাস ফুল চাষি আফসার উদ্দিন

পুষ্পানুরাগীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় গস্নাডিওলাস ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ঢাকার ধামরাই উপজেলার ফুটনগর বংশী নদীর তীরে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাহারি ফুলের চাষ বাংলাদেশেও লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এ ফুল চাষ বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম ফুলচাষি মো. আফসার উদ্দিনের জীবন। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়-য়া আফসার উদ্দিন নিজেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুলচাষি হিসেবে দাবি করেন। তিনি গত ২০ বছর ধরে ফুল চাষ করে আসছেন। শুরু করেছিলেন মাত্র দু'বিঘা জমিতে। এখন ধামরাইয়ের ফুটনগরে ফুল চাষ করছেন ৬০ বিঘা জমিতে। এলাকাবাসী এখন তাকে 'ফুলরাজ আফসার উদ্দিন' নামে ডাকেন। তার বাগানে এখন কাজ করেন ৪০ জন শ্রমিক। আফসার উদ্দিনের মতে, বছরে তার লাভ হয় ছয় থেকে আট লাখ টাকা। আফসার উদ্দিন নিজেই এ চাষ প্রক্রিয়ায় অংশ নেন। ঢাকার শাহবাগ, খামার বাড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার ফুল বিক্রি হয়। নিজ প্রচেষ্টায় ফুল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে ঢাকার মিরপুর ১৮৫ নম্বর নবাববাগে তিনতলা বাড়ি করে স্ত্রী ও তিন সন্তানের সংসারে ভালই আছেন তিনি। আফসার উদ্দিন সাদা ফুলে যেন রঙিন জীবন ফিরে পেয়েছেন।

১৯৮৫ সালের কথা। আফসার উদ্দিন তখন ঠিকাদার হিসেবে মিরপুর চিড়িয়াখানায় খাদ্য সরবরাহের কাজ করতেন। পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেনের ফুলবাগান দেখে তার আগ্রহ জাগত ফুল চাষের। ১৯৯০ সালে মানিকগঞ্জের বারইরচর গ্রামে প্রথমে দু'বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ শুরু করেন। এরপর ফুল চাষ লাভজনক হওয়ায় ১৯৯৮ সালে প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে নানা জাতের ফুলের চাষ করেন। ওই বছরের বন্যায় সব ফুল তলিয়ে গেলে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এরপরও থেমে থাকেননি আফসার উদ্দিন। পরবতর্ীতে অল্প পুঁজির মাধ্যমে রফতানি বু্যরো থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ধামরাইয়ের ফুটনগর গ্রামে বংশী নদীর তীরে ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে নতুন করে ফুলের চাষ শুরু করেন। বর্তমানে ধামরাইয়ে ৬০ বিঘা জমিতে গস্নাডিওলাস চাষ করছেন তিনি। প্রতি মাসে বিক্রি করছেন ২ লাখ টাকার ফুল। এরমধ্যে খরচ বাদে ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়। এছাড়া সরকারিভাবে ফুল বিক্রির জন্য কোনো মার্কেট এমনকি বৈধ জায়গা না থাকায় ফুল বিক্রিতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। রাস্তার ওপর অবৈধভাবে ভোরবেলায় ফুল বিক্রি করতে গেলে অনেক সময় পুলিশি ঝামেলায় পড়ে ন্যায্যমূল্য পান না।

দুঃখের সাথে আফসার উদ্দিন জানান, ব্যাপক আকারে ফুলচাষ করে বিদেশে রফতানি করার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়ত এ ফুলের চাষ আরো ব্যাপকভাবে করা সম্ভব হত। আফসার উদ্দিন দুঃখের সাথে আরো বলেন, আমাদের কেউ মূল্যায়ন করে না। ফুলের বাগানে বিভিন্ন রোগ-বালাই দেখা দেয়। কিন্তু স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা কোনো প্রকার সহায়তাও করে না। এ ব্যাপারে ধামরাই উপজেলা কৃষি অফিসার খাইরুল আলম প্রিন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ধামরাইয়ের ফুটনগরে ব্যাপক ফুলের চাষের কথা জানেন না বলে জানান।

মোকলেছুর রহমান, ধামরাই, ঢাকা

No comments:

Post a Comment