শ্রীবরদীতে নতুন প্রযুক্তিতে কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য
- রেজাউল করিম বকুল শ্রীবরদী (শেরপুর)
এক বছর আগেও বেকারত্বের অভিশাপ জেঁকে বসেছিল হরলাল রায়ের পরিবারে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন হরলাল। তিনি মাঝে-মধ্যেই যেতেন শ্বশুরবাড়ি নিলফামারীতে। তিনি নিলফামারীতে এক কৃষকের কাছ থেকে আপেল আর বাউকুলের কলম (চারা) এনে শুরু করেন চাষাবাদ। মাত্র ৫০ শতাংশ জমিতে কুলের বাগান করে গত বছর চাষাবাদের ব্যয় মিটিয়েও লাভ করেন ৪০ হাজার টাকা। তার এ সাফল্য দেখে স্থানীয় উপজেলা কৃষি অধিদফতর ও জেলা কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তারা তার কুলের বাগান পরিদর্শন করে নানা দিক থেকে সহায়তা দিচ্ছেন। ফলে এবার তার কুল বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে আশা করেছেন তিনি। এ যুবকের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল গ্রামে। এখন তাকে এলাকার মানুষ বড়ই চাষী বলেই চেনে। কর্ণঝোরার জহির রায়হান, বাবেলাকোনার ভূপেন্দ্র মাস্টার, রাঙ্গাজানের ব্রতিন মারাক, তাতিহাটির জামাল উদ্দিনসহ অনেক কৃষকই আপেল কুল, বাউকুল, লিচু, বাঁশ, কমলা, লেবু, পেঁপেসহ বিভিন্ন জাতের শাক-সবজির চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আয়তন ২৫২ বর্গকিলোমিটার। তন্মধ্যে লোকসংখ্যা ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭৯১ জন। এতে নিট আবাদি জমি ১৯ হাজার ২২৮ হেক্টর। বনবিভাগ রয়েছে ১ হাজার ২২৮ হেক্টর। এতে কৃষির উপর নির্ভরশীল ৫৫ হাজার ৬৩৩টি পরিবার। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কারণে অনেক কৃষকই ধান চাষাবাদের পরিবর্তে গম, গোল আলু, আখ, সরিয়া, শাক-সবজি, আপেল, পেঁপে ও মাছ চাষসহ বিভিন্ন চাষাবাদে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এতে সাফল্যও পাচ্ছেন তারা। নইলের পাড় গ্রামের কৃষক আমের আলী, সোহরাব আলী, কুমর উদ্দিন, আব্দুল জলিলসহ অনেকে জানান, এ গ্রামে এখন ধান চাষাবাদের পরিবর্তে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে মাছ চাষাবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে অনেকে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ধান চাষাবাদের চেয়ে কম খরচে অল্প সময়ে মাছ চাষাবাদ করে বেশি লাভ পাওয়া যায়। তাই কৃষকরা মাছ চাষ বেশি করছেন।
গারো পাহারের রাঙ্গাজান গ্রামের বাসন্তি মারাক, গোলাপ হোসেন, নিলারাণীসহ অনেকে জানান, তাদের বাড়ি পাহাড়ি টিলায়। বছরের কোনো মৌসুমে তাদের জমিতে কোনো ফসল করা যেত না। কিন্তু নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কারণে এখন তাদের এলাকায় বাঁশ, কলা, আনারস, লেবু, শিমুল আলু, পেঁপে, লেবু, লটকন ইত্যাদির চাষাবাদ বেড়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এফএম মোবারক আলী বলেন, মাত্র ৩/৪ বছরের ব্যবধানে উপজেলায় নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনে চাষাবাদে বিপ্লব ঘটেছে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে তথ্যানুসন্ধানে গেলে সফল যুবক হরলাল রায়ের স্ত্রী কবরী রানী বলেন, বিয়ের পর থাইকা মেলা কষ্ট করছি। পোলাপান গোরে দু’বেলা ঠিকমত খেতে দিতে পারি নাই। অহন আপেল আর বাউকুলের চাষাবাদ করে লাভের ট্যাহা দিয়ে পুকুর দিছি। পুকুরে মাছ আছে। হাইব্রিড জাতের ধানও চাষ করছি। ১ মেয়ে আর ১ ছেলে। দু’জনেই স্কুলে পড়ালেহা করে। কবরী রানীর মতো কৃষি ক্ষেত্রে স্বপ্ন দেখছেন অনেকে। তবে তাদের মতে, সরকারি-বেসরকারি ও এনজিওগুলো এসব নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে জোরালো ভূমিকা নিলে আরও ছেলে-মেয়েরা খুঁজে পাবে স্বপ্নের ঠিকানা।
Source: Daily Amardesh
No comments:
Post a Comment