Friday, February 11, 2011

বিশ্বের কনিষ্ঠ প্রাণী আবিষ্কারক সাজিদ

বিশ্বের কনিষ্ঠ প্রাণী আবিষ্কারক সাজিদ
আবদুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ হাওলাদার। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বন্যপ্রাণীবিষয়ক জার্নাল জুট্যাক্সয়ে লেখা প্রকাশ করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রাপ্ত বিরল প্রজাতির এ ব্যাঙ আবিষ্কার করে তিনি পরিণত হয়েছেন বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রাণী আবিষ্কারক হিসেবে। বাংলাদেশে প্রাপ্ত বা কোনো বাংলাদেশি কর্তৃক উভচর, সরীসৃপ বা স্তন্যপায়ী প্রাণী আবিষ্কারের রেকর্ড এটিই প্রথম।
এ প্রসঙ্গে সাজিদের লেখা প্রকাশিত হওয়া জার্নাল 'জুট্যাক্সা'র প্রধান সম্পাদক ড. জি-ক্যুআ্যং জ্যাং (Dr Zhi-Qiang Zhang) বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই প্রতিনিধিকে এক ই-মেইল বার্তায় জানান, বিশ্বে এ প্রজাতির ব্যাঙ আর কোথাও আবিষ্কৃত হয়নি, এটিই প্রথম। আমরা তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং কোনো বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের জার্নালে এটিই কোনো বাংলাদেশির লেখা প্রকাশিত হলো।
সাজিদ তার শিক্ষক আসমতের নামানুসারে তার আবিষ্কৃত ব্যাঙের নাম দিয়েছেন 'ফেজারভারিয়া আসমতি'। গত ৯ ফেব্রুয়ারি জুট্যাক্সয়ে তার প্রাপ্ত ব্যাঙ সম্পর্কিত প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। একক ব্যক্তি কর্তৃক খ্যাতিমান কোনো কো-অথরের সহায়তা ছাড়া প্রাণী আবিষ্কার ও আন্তর্জাতিক জার্নালে লেখা প্রকাশের ঘটনা এটিই প্রথম।
এ ব্যাপারে সাজিদ হাওলাদার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি কতটা আনন্দিত বুঝাতে পারব না। আমার সব কৃতিত্ব আমার শিক্ষক ও দেশের মানুষকে দিতে চাই। সরীসৃপ প্রজাতি নিয়ে অব্যাহতভাবে কাজ করে আমি আমার কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর এমন আবিষ্কার সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. আলাউদ্দিন বলেন, তার আবিষ্কার সম্পর্কে শুনে আমরা খুবই আনন্দিত। সে বিশ্বের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমরা তার গবেষণা কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই।
খ্যাতিমান প্রাণিবিজ্ঞানী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আসমত সাজিদের আবিষ্কার প্রসঙ্গে জানান, সাজিদই একমাত্র বাংলাদেশি যে প্রাণী আবিষ্কারের কৃতিত্ব অর্জন করল। তার কৃতিত্বের জন্য সারা বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে। এ ধরনের গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডে ভবিষ্যতে সাজিদকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
সাজিদ কর্তৃক আবিষ্কৃত ব্যাঙ ও তার প্রবন্ধ প্রকাশে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি-এর কিউরেটর ড. ড্যারেল ফ্রস্ট। বিশ্বের সরীসৃপ প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসের ক্ষেত্রে সাজিদই সর্বকনিষ্ঠ বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন। বিশ্বজুড়ে সমাদৃত প্রাণী বিজ্ঞানী ড. ক্রেইগ এডলার সম্পাদিত ইনডেক্স অব অথরস অব হারপেটোলজিক্যাল ট্যাক্সোনমিস্ট-এর লেখক ড. জন এস এপলেগার্থ এক অভিনন্দন বার্তায় সাজিদের কৃতিত্বের জন্য তাকে অভিনন্দন জানিয়ে তার সাফল্য কামনা করেছেন।
২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ব্যাঙ নিয়ে কাজ শুরু করেন সাজিদ। ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাঙের জীবন প্রণালী ও বংশবৃদ্ধি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা চালিয়ে যান তিনি। এ সময়ে ব্যাঙের বংশবৃদ্ধির জন্য হটস্পট হিসেবে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটাপাহাড় রাস্তার দুই পাশ থেকে বিভিন্ন ব্যাঙের স্যাম্পল সংগ্রহ করতে থাকেন তিনি। এর মধ্যে ২০০৮ সালে একদিন পেয়ে যান বিরল প্রজাতির একটি ব্যাঙ। স্বভাবমতো সেটিকে তিনি ব্যক্তিগত সংরক্ষণাগারে নিয়ে গিয়ে এটির প্রজাতি ও প্রকৃতি উদ্ধারের কাজে লেগে যান। কিন্তু সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ও তালিকাভুক্ত সাড়ে ছয়শ প্রজাতির মধ্যেও এ ব্যাঙের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। তারপর শুরু হয় অন্য ধরনের গবেষণা। এ ব্যাঙের ব্যতিক্রমী ডাক ও বৈশিষ্ট্য বের করতে তিনি যোগাযোগ করেন বিশ্বের সেরা সব প্রাণিবিজ্ঞানীর সঙ্গে। দীর্ঘসময় ধরে পর্তুগাল, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় ব্যাঙের ডাকের সাউন্ড এনালাইসিস এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে এ ধরনের ব্যাঙের অস্তিত্ব বাংলাদেশেই পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে তিনি বিশ্বের সেরা প্রাণিবিজ্ঞানীদের সম্পাদনায় প্রকাশিত বণ্যপ্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসের কাজে নিয়োজিত জার্নাল জুট্যাক্সা-তে এ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ পাঠান। ওই জার্নাল কর্র্তৃপক্ষ তার আবিষ্কারের সত্যাসত্য যাচাইয়ের পর চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি প্রবন্ধটি গ্রহণ করেন। এরপর গত মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জুট্যাক্সা জার্নালের ২৭৬১ ভলিউমে এটি প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে প্রথম কোনো বাংলাদেশির প্রবন্ধ এ জার্নালে প্রকাশিত হলো।

Source: Daily Bangladesh Pratidin, 11th Feb-2011

No comments:

Post a Comment