Friday, November 12, 2010

সিরাজগঞ্জে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দেশীয় পাওয়ারলুম

সিরাজগঞ্জে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দেশীয় পাওয়ারলুম

এনায়েতপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
বিদেশ থেকে আমদানি করা যানবাহন টেম্পোর মতো স্থানীয়ভাবে তৈরি হচ্ছে সহজলভ্য টেম্পো, যা দেশজুড়ে নসিমন নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ঠিক একই ধরনের লোহার তৈরি ভারী পাওয়ারলুমের আদলে এখন কাঠের তৈরি বিদ্যুত্চালিত পাওয়ারলুম উদ্ভাবন করেছেন সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ এনায়েতপুরের ক্ষুদ্র তাঁতিরা। এর নামও দেয়া হয়েছে নসিমন পাওয়ারলুম। তাই বিদেশ থেকে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে বিদ্যুত্চালিত পাওয়ারলুম বাংলাদেশী শিল্প উদ্যোক্তাদের আর কষ্ট করে আনতে হবে না। স্বল্প অর্থ ব্যয়ে সহজলভ্য নতুন উদ্ভাবিত এই তাঁতে শ্রমিকরা আগের মতো একটি তাঁতে নয়, এখন শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই কাজ করছেন একসঙ্গে দুটি তাঁতে। যে কারণে বিদেশি পাওয়ারলুমের মতো উত্পাদিত হচ্ছে দ্বিগুণ কাপড়। তাই তারা পাচ্ছেন বাড়তি মজুরি এবং মালিকরাও হচ্ছেন লাভবান। এক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা পেলে দিন বদল হবে দেশের লাখো দরিদ্র তাঁতির।
এনায়েতপুর থানার খুকনী, রূপনাই, গোপালপুর, বেতিল, খামারগ্রাম, গোপরেখী, আজগড়া, মাধবপুর, শীবপুর, গোপীনাথপুর এবং চৌহালী উপজেলার জোতপাড়া, খাসপুকুরিয়া, রেহাই পুকুরিয়ায় প্রায় ৫০ হাজার তাঁত হস্তচালিত এবং বিদ্যুত্চালিত পাওয়ারলুম রয়েছে। প্রযুক্তিগত কারণে বেশি কাপড় উত্পাদনের লক্ষ্যে গত ৮ থেকে ১০ বছর আগে বিদ্যুত্চালিত পাওয়ারলুম এ অঞ্চলে প্রথম নিয়ে আসা হয়। এ তাঁত বিদ্যুতের সাহায্যে চলে বলে শ্রমিকদের তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। আর দেশীয় হস্তচালিত তাঁতের চেয়ে কাপড়ও হয় দ্বিগুণ। এই পাওয়ারলুম সম্পূর্ণ লোহা দিয়ে তৈরি বলে ওজন প্রায় ১ টন। আর একেকটি তাঁতের মূল্য প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা, যা ক্ষুদ্র তাঁতিদের পক্ষে ক্রয় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এনায়েতপুর থানার গোপালপুর গ্রামের ক্ষুদ্র তাঁতি বাবুল হোসেন চেষ্টা করে কীভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে কাঠের তৈরি হ্যান্ডলুম তাঁতকে বিদেশি পাওয়ারলুমে পরিণত করা যায়। বেশ কিছুদিন চেষ্টার পর গত ছয় মাস আগে তিনি তৈরি করতে সক্ষম হন কাঠ দিয়ে বিদ্যুত্চালিত পাওয়ারলুমে শাড়ি-লুঙ্গি উত্পাদন করতে। হস্তচালিত কাঠের তাঁত পাওয়ারলুমে রূপান্তর করার আগে তাঁতের ডান পাশের ওপরে বসানো হয় একটি মোটর। নিচে লোহার চাকার সঙ্গে একটি মোটা ফিতা দিয়ে ওই মোটরের সঙ্গে লাগানো হয়। এরপর তার দিয়ে কানেকশন দেয়ার পর তাঁতের পাশে সুইচ লগিয়ে করা হয় পাওয়ারলুম। নতুন উদ্ভাবিত পাওয়ারলুমের ওজন প্রায় ৮ থেকে ১০ মণ। আর তা তৈরিতে খরচ হয় মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বলে উদ্ভাবনকারী বাবুল হোসেন জানান। তিনি আরও জানান, তার উদ্ভাবিত কাঠের পাওয়ারলুম এখন সব থানাজুড়ে।

Source: Daily Amardesh

সিরাজগঞ্জে তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের পাওয়ার লুম যন্ত্রাংশ

০০ ফজল-এ-খোদা লিটন,সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা

সিরাজগঞ্জের এক নিভৃত পলস্নীতে তৈরী হচ্ছে বিশ্বমানের পাওয়ারলুম যন্ত্রাংশ। দেশের দ্রুত বর্ধনশীল বস্ত্রখাতের পাওয়ারলুমের সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠার এটি এক অনন্য উদ্যোগ। সাউথ এশিয়ান হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ বস্ত্রখাতের পাওয়ারলুম শিল্পের বিকাশে শাটেল-পিকার ও ওয়ারাইন্টেডসহ আন্তর্জাতিকমানের যন্ত্রাংশগুলো এখন নিজেরাই তৈরি করছে। এই অনন্য উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলার তামাই গ্রামে।

জানা গেছে, তাঁতশিল্প বিকাশের এক সহায়ক শিল্প গড়ে ওঠায় দেশের হাজার হাজার তাঁতীরা এ সকল যন্ত্রাংশ সহজেই স্বল্প মূল্যে ক্রয় করতে পারছেন। যেখানে কোরিয়ার শাটেল ৭০০ টাকা, সিরাজগঞ্জে তৈরি একপিচ টি.এস-৭ শাটেল ৪৫০ দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় তৈরি গস্নাস ফাইবার শাটেল কোরিয়ার শাটেলের চেয়েও অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন কিন্তু দামে কোরিয়ার তৈরী শাটেলের চেয়ে ২০০ টাকা কম। এখন সুনামের সঙ্গে তাদের উৎপাদিত যন্ত্রাংশগুলি বিদেশী যন্ত্রাংশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে একের পর এক অভ্যন্তরীণ বাজার দখল করছে। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানী করার মত পুঁজি না থাকায় মাসে প্রায় ৩ হাজার শাটেল তৈরি করা হচ্ছে। তারা জানান, অল্প কিছুদিনের মধ্যে উৎপাদন বাড়িয়ে খুব শীঘ্রই এই যন্ত্রাংশগুলো পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি করা হবে । সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশে উৎপাদিত এই যন্ত্রাংশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে বিপুল টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে সক্ষম হবে।

জানা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে তামাই গ্রামে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পাওয়ারলুম যন্ত্রাংশ তৈরি শুরু হয়। এদের গস্নাস ফাইবার মিশ্রিত ইঞ্জিনিয়ারিং পলিমার ও পাল্প সংযুক্ত সিনথেটিক রেজিনের সংমিশ্রণে তৈরি যন্ত্রাংশগুলো পাওয়ারলুম শিল্পের বিকাশে এক নব দিগন্তের সৃষ্টি করেছে। উদ্যোক্তারা জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এগুলো দেশীয় তাঁতশিল্পের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে জানা গেছে। তারা জানান, ইন্দোনেশিয়ায় ও পাকিস্তানে কয়েকশ' কোটি টাকার যন্ত্রাংশ রপ্তানির সুযোগ পেয়েও সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

জানা যায়, প্রায় এক যুগে পাওয়ারলুম শিল্পের প্রসার ঘটায় শুধু নরসিংদী জেলায় প্রায় ৩ লাখ পাওয়ারলুম রয়েছে। এছাড়াও সমপ্রতি সিরাজগঞ্জে প্রায় ৪০ হাজার আধুনিক পাওয়ারলুম স্থাপিত হয়েছে। এ হিসেব সারা দেশের প্রায় ৪ লাখ পাওয়ারলুমের জন্য দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ আমদানী করতে হয় বলে আমদানীকারকরা জানান। বর্তমানে এগুলোর অধিকাংশই কোরিয়া, চীন ও ভারত থেকে আমদানী হয়ে আসছে। এই যন্ত্রাংশ তৈরির অন্যতম উদ্যোক্তা সিরাজগঞ্জের মোসলেহউদ্দিন আহমেদ মন্টুর। ১৯৯৬ সনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক মিটিংয়ে পরিচয় হয় পোলান্ডের ওয়ার'শ ইউনিভার্সিটির পলিমার ডিভিশনের বিভাগীয় প্রধান মিঃ মিসতেরেকের সাথে। এ পস্নাষ্টিক শিল্পে তেরেসের সহযোগিতায় তিনি কমপ্রেশন মোল্ডিং পদ্ধতিতে টেক্সটাইল যন্ত্রাংশ তৈরির ধারণা এদেশে প্রথম চালু করেন। নিজের সীমিত অর্থ এবং একটি ক্ষুদ্র শিল্পে অর্থ সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ নিয়ে তিনি এ বিষয়ে বছরের বছর পর গবেষণা করতে থাকেন। ২০০৭ সালে তিনি সাউথ এশিয়ান হাইটেক শাটেল ইন্ডাস্ট্রিজ স্থাপন করে । তিনি ৪ বছর প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি বিরাট দক্ষ কারিগর বাহিনী গড়ে তুলেছেন। এ নিয়ে সরেজমিন তাঁত শিল্প মালিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, সিরাজগঞ্জের তৈরি শাটেল, পিকার ও অন্যান্য যন্ত্রাংশা মানসম্মত ও টেকসই। বিদেশী যন্ত্রাংশের চেয়ে এগুলোর দাম কম হওয়ায় তাঁত শিল্প বিকাশে খুবই সহায়ক হচ্ছে। ঢাকার নবাবপুরের বিশিষ্ট আমদানীকারক খান ট্রেডিং কোম্পানীর মালিক নুরুল ইসলাম জানান, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হওয়ায় সিরাজগঞ্জের তৈরি যন্ত্রাংশই এখন বাইরের দেশে রপ্তানি করা সম্ভব।
Daily Ittefaq, 12th January

No comments:

Post a Comment