Tuesday, November 2, 2010

বান্দরবানে বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টের গ্যাস সিএনজি-সিলিন্ডারে বিক্রি হচ্ছে

বান্দরবানে বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টের গ্যাস সিএনজি-সিলিন্ডারে বিক্রি হচ্ছে

০০মিলন চক্রবতর্ী, বান্দরবান

বান্দরবানে বায়োগ্যাস পস্ন্ল্ল্যান্টে উৎপাদিত গ্যাস সিএনজি ও সিলিন্ডারে বিক্রি হচ্ছে। বায়ো গ্যাস পস্ন্যান্টের উৎপাদিত বিদু্যতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে প্রকল্পসহ আশপাশের ঘরবাড়ি। জেলা সদরের সূয়ালক এলাকায় ২ একর পাহাড়ী জমির উপর বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্ট করেছে খোকন দাস। বেকার এই যুবকের উদ্ভাবিত বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্ট দেশজুড়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। দুই একর পাহাড়ী জমির উপর প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচ করে গড়ে তোলা বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্ট পার্বত্য চট্টগ্রামে মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন প্রতিদিন বান্দরবানে উদ্ভাবিত বায়োগ্যাস প্রকল্পের কৌশল শিখতে ভীড় জমাচ্ছে সূয়ালকে। বায়োগ্যাস প্রকল্পটি থেকে বর্তমানে ৫ হাজার ওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন ছাড়াও সিএনজি ও গ্যাস সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে।

প্রতিদিন উক্ত পস্ন্ল্যান্ট থেকে সাতকানিয়া ও কেরানীহাট সড়কে চলাচলকারী সিএনজিগুলো গ্যাস ভরাট করে নিচ্ছে বলে জানান সংশিস্নষ্টরা। পাশাপাশি উৎপাদিত গ্যাস এখন গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তি করে বান্দরবানসহ পার্শ্ববতর্ী বাজারগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রকল্প থেকে প্রচুর পরিমাণ জৈব সারও উৎপাদন করা হচ্ছে। আর্থিক সংকটে ক্ষুদ্র বায়োগ্যাস প্রকল্পটি বৃহৎ পরিসরে করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান উদ্ভাবক খোকন দাস। তিনি আরো জানান, বর্তমানে বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্টে মাত্র ৯টি গরু এবং কিছু হাঁস-মুরগি রয়েছে। কিন্তু বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্টের জন্য প্রচুর পরিমাণ কাঁচা গরুর গোবর ও হাঁস-মুরগীর বিষ্ঠা প্রয়োজন। এ কারণে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরুর গোবর এবং হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা সংগ্রহ করে বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্ট চালানো হচ্ছে। বর্তমানে বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টে গ্যাসের চাপ প্রচুর। সার্বক্ষণিক গ্যাসের চাপ ধরে রাখতে প্রচুর পরিমাণে গরুর গোবর দরকার হলেও জেলায় প্রয়োজনীয় গরুর গোবর পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান আবিষ্কারক খোকন দাস। অপরদিকে বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্টে উৎপাদিত ৫ হাজার ওয়াট বিদু্যৎ জেনারেটরের সাহায্যে সূয়ালক বাজার ও পাশর্্ববতর্ী বসতবাড়িতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট (যন্ত্রাংশ) পাওয়া গেলে উদ্ভাবিত বায়োগ্যাস পস্ন্ল্যান্টের মাধ্যমে বান্দরবানে গ্যাসের সংকট দূর করা সম্ভব বলে মনে করছে স্থানীয়রা। বর্তমান সময়ে বিদু্যৎ সংকট দূর করতে বেসরকারীভাবে এই ধরনের উদ্যোগ অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে। রবিবার ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊধর্্বতন কর্মকর্তারাও প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছে।
Source: Daily Ittefaq

বায়োগ্যাস থেকে সিএনজি:
বান্দরবানের খোকন দৃষ্টি কেড়েছেন সারাদেশের কৃষি উদ্যোক্তার
- মাটি ও মানুষের কৃষি ডেস্ক

দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত বহুবার বায়োগ্যাস পস্ন্যান্ট স্থাপন ও কৃষকের লাভবান হওয়ার কথা আমরা পত্র-পত্রিকা কিংবা টিভির মাধ্যমে জানতে পেরেছি। অনেক ঝক্কি ঝামেলা পার হয়ে শেষ পর্যন্ত তারা দেখতে পেরেছেন সফলতার মুখ। আপনারা দেখেছেন তিন বছর আগে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের শ্যামেরঘন গ্রামে আব্দুর রাজ্জাক সিএনজি চালিত জেনারেটরের মাধ্যমে মাঠে মাঠে সেচ সুবিধা পেঁৗছে দিতে। রায়গঞ্জ উপজেলা ছাড়িয়ে সিএনজি চালিত সেচ পাম্প পেঁৗছে যায় তাড়াশ উপজেলায়। অগভীর থেকে গভীর নলকূপের মাধ্যমেও চলতে থাকে সেচ সুবিধা পেঁৗছে দেয়ার কাজ। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের পটিয়ায় শিকলবাহার দুগ্ধপলস্নীর ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে বায়োগ্যাস পস্ন্যান্ট। গ্যাসের বিদু্যতে আলোকিত হচ্ছে এক একটি ঘর, মিটছে তাদের নিত্য দিনের জ্বালানি চাহিদা।
বায়োগ্যাস পস্ন্যান্ট থেকে জ্বালানি হয়, বড় জোর জ্বলে বাতি, খামার পর্যায়ে এ প্রযুক্তির বিকাশ ছিল একুটুই। বান্দরবানের খোকন দাসই প্রথম বায়োগ্যাসের আরো কার্যকর ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের নতুন দ্বার উন্মোচন করেছেন। ইতিমধ্যে টেলিভিশন ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার কল্যাণে তার এ সফলতা পেঁৗছে গেছে অনেক অনেক দূর। সারাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষি উদ্যোক্তার দৃষ্টি এখন এমন লাভজনক উদ্যোগের দিকে। কারণ, আমাদের দেশে দিন দিন বাড়ছে জৈব সারের চাহিদা; সে সঙ্গে জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রয়োজনীয়তার কথা তো বলাই বাহুল্য। আছে বিদু্যতের চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনে বায়োগ্যাস থেকে দেয়া বিদু্যতেরও।
খোকন দাস দরিদ্র পরিবারের সন্তান। লেখাপড়ায় প্রাথমিক শ্রেণীর গণ্ডি পেরোতে পারেননি। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তার ভাবনায় গুরুত্ব পায় কৃষি। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা থেকে শুরু করে কীটনাশকের আগ্রাসন থেকে কৃষিকে বাঁচানোর জন্য চিন্তা-ভাবনা করে আসছেন অনেক আগে থেকেই। তার চিন্তায় ছিল উৎকৃষ্টমানের জৈব সার তৈরির বিষয়টি। এ চিন্তার পথ ধরেই একদিন পেঁৗছে যান বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টের কাছে।
খোকন দাস করতে চেয়েছেন ব্যতিক্রম কিছু। তাই বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টেই তিনি থেমে থাকেননি। পস্ন্যান্ট নিয়ে নতুন নতুন চিন্তা করেছেন রাত-দিন। দিনের পর দিন এঁকেছেন নতুন নতুন মানচিত্র। একদিন সূয়ালক এলাকায় ২একর পাহাড়ি জমির উপর গড়ে তোলা বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টটির দিকে দৃষ্টি আনতে পেরেছেন সারা দেশবাসীর। খোকন তার বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টের সঙ্গেই যুক্ত করেছেন গ্যাস জেনারেটর। সেখান থেকে উৎপাদিত বিদু্যতের শক্তি দিয়ে বায়োগ্যাসকে তৈরি করেছেন রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসে। যাকে আমরা সিএনজি বলি।
দেশের লক্ষ লক্ষ যানবাহনের সবচেয়ে লাভজনক জ্বালানি সিএনজি। এখন প্রতিদিনই সিএনজি চালিত অটোরিক্সা আসে খোকনের এই পাম্প থেকে গ্যাস নিতে। এখানে ভাল মানের সিএনজি পাওয়াতে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন সিএনজি পরিবহনের চালকরা। খুব বেশি সিএনজির চাহিদা পূরণ সম্ভব হয় না ঠিকই কিন্তু এলাকাবাসী এখন বিশ্বাস করেছে যে এখান থেকে একদিন ঠিকই তাদের নানা ধরনের চাহিদা পূরণ হবে। কিন্তু মানুষের আশা বাড়িয়ে দেয়া এই প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন অনেক অনেক অর্থের।
বর্তমানে এই পস্ন্যান্টে মাত্র ৯টি গরু এবং কিছু হাঁস-মুরগি রয়েছে। কিন্তু পস্ন্যান্টের জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণ কাঁচা গোবর ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা। এ কারণে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরুর গোবর এবং হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা সংগ্রহ করে বায়োগ্যাস পস্ন্যান্ট চালানো হচ্ছে। বর্তমানে বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টে গ্যাসের চাপ প্রচুর। সার্বক্ষণিক গ্যাসের চাপ ধরে রাখতে প্রচুর পরিমাণে গরুর গোবর দরকার হলেও জেলায় প্রয়োজনীয় গরুর গোবর পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানালেন খোকন দাস। এখনো এই প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে খোকন চিন্তা করেন বায়োগ্যাস পস্ন্যান্টের উচ্ছিষ্ট অংশের জৈব সারকে। পস্ন্যান্টের মধ্যেই তিনি তার পরিকল্পনা ও নকশা অনুযায়ী স্থাপন করেছেন জৈব সারের একটি কক্ষ। যেখানে জমা হয় উৎকৃষ্ট মানের জৈব সার। এরও বাণিজ্যিক গুরুত্ব কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের জন্য কম নয়। খোকন দাসের এই প্রকল্পের সঙ্গে সবচেয়ে সহায়ক হিসেবে রয়েছেন এই এলাকারই যুবক নূরুল আমীন।
বান্দরবানের সূয়ালকে খোকন দাসের উদ্ভাবন ও প্রয়াস সাড়া জাগিয়েছে গোটা এলাকাসহ সারাদেশে। একটি উদ্ভাবন থেকে ছোটখাটো একটি ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়িয়ে গেছে খোকন দাসের নিরলস পরিশ্রমে। সিএনজি পরিবহনের পাশাপাশি বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য সিলিন্ডারেও গ্যাস নিতে আসেন অনেকেই। গ্যাসের মান নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। এখন স্বল্প উৎপাদনেই দৈনিক কমপক্ষে তিন সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করেন খোকন দাস। যারা গ্যাস নিচ্ছেন তারাও আছেন বেশ স্বস্তিতে।
কৃষিকে লাভজনক করতে কিংবা জীবনের প্রাত্যহিক প্রয়োজনগুলো আরো সহজে মেটানোর জন্য তৃণমূলে চলছে বহু রকম গবেষণা। বিদু্যত, জ্বালানি আর জৈব সারের চিন্তা থেকেই বায়োগ্যাস, সেখান থেকেই সিএনজি। খোকন দাসের এই প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত এদেশে বহুমুখি উৎপাদন ব্যবস্থার একটি মডেল। দেশের অনেক উদ্যোগী কৃষক ও খামারিই ইতিমধ্যে স্থাপন করেছেন বিভিন্ন আকারের বায়োগ্যাস পস্ন্যান্ট। সেখান থেকে তারা মেটাচ্ছেন দৈনন্দিন বিদু্যত ও জ্বালানির চাহিদা। এবার সিএনজির চাহিদা পূরণের চিন্তা নিয়ে এমন এক একটি পস্ন্যান্ট স্থাপিত হতে পারে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। সেক্ষেত্রে খোকন দাসের এই পস্ন্যান্টটিই হতে পারে অনুসরণীয়। তা একদিকে আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রতিদিনের চাহিদা পূরণে যেমন কিছু অংশের যোগানদার হতে পারে, অন্যদিকে জৈব সার উৎপাদনেও আমরা এগিয়ে যেতে পারি বেশ খানিকটা পথ

Source: Daily Ittefaq, 30th January-2011

No comments:

Post a Comment