Sunday, November 7, 2010

ফিশ ফিডের দাম বাড়ছে : মত্স্য বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনে ফলন হবে তিনগুণ

ফিশ ফিডের দাম বাড়ছে : মত্স্য বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনে ফলন হবে তিনগুণ

মো. আরিফুল হক
বর্তমানে মাছের খাবারের মূল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা লাভবান হতে পারছেন না। এ দিক বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। তেমনি একটি উদ্ভাবন হলো পেরিফাইটন, যা মত্স্য উত্পাদনকে করেছে দুই থেকে তিন গুণ। অথচ খরচ খুবই কম। সাধারণ খামারিরা সহজেই এ পদ্ধতিতে চাষ করতে পারেন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সহজ স্বল্পব্যয়ের কারণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও হাতিয়ে নিচ্ছে দেশীয় উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তিটি। দীর্ঘ সময় গবেষণা পেরিফাইটন পদ্ধতিতে মত্স্য চাষের এ প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছেন দেশের খ্যাতনামা মাত্স্যবিজ্ঞানী ও ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল ওহাব।
প্রধান গবেষক ড. ওহাব বলেন, স্বল্পমূল্যে এবং অল্প জমিতে অধিক মত্স্য উত্পাদনের মাধ্যমে জনগণের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদে শুরু হয় গবেষণা। যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড ও ভারতীয় বিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্যোগে ‘পেরিফাইটন-ভিত্তিক মাছ চাষ’ প্রকল্পের আওতায় গবেষণা শুরুর দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছর পর এ কাজে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন।
তিনি বলেন, পেরিফাইটন এক ধরনের শৈবাল, যা মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন জলজ জীব-অণুজীবের জটিল মিশ্রণ এই পেরিফাইটন, যা জলাশয়ের পানিতে অবস্থিত কোনো কিছুর গায়ে লেগে থাকে। এসব জীব-অণুজীবের মধ্যে রয়েছে—ব্যাকটেরিয়া, এককোষী প্রাণী, ছত্রাক, ফাইটোপ্লাংটন, জুপ্লাংটনসহ বিভিন্ন তলদেশীয় ও অমেরুদণ্ডি প্রাণী। পেরিফাইটন বিভিন্ন মত্স্যকুলকে শুধু আকৃষ্টই করে না বরং এসব অণুজীব মাছ ও চিংড়ি জাতীয় মাছের খুবই প্রিয় এবং পুষ্টিকর খাবারও বটে। সাধারণত যেসব মাছ গ্রেজিং বা কোনো কিছুর সঙ্গে লেগে থাকা খাবার চেঁছে খায় সেসব মাছই পেরিফাইটন পদ্ধতিতে চাষের জন্য উপযোগী। দেশীয় মত্স্য প্রজাতির মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশসহ তেলাপিয়া ও চিংড়ি পেরিফাইটন পদ্ধতিতে চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
পেরিফাইটন এক ধরনের শৈবাল হলেও সাধারণ পানিতে এবং সব পরিবেশে এটা জন্মায় না। সাবস্ট্রেট বা ভিত্তিমূলের ওপর পেরিফাইটন জন্মে থাকে। এক্ষেত্রে হিজল ডাল সবচেয়ে উপযোগী। তবে বাঁশ, কঞ্চি, শেওড়া ইত্যাদি গাছের ডাল এমনকি পাটের খড়ি, গ্লাস রড, প্লাস্টিক দণ্ডও ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব ডালপালা পুকুরজুড়ে বা ধান ক্ষেতের কোণে পুঁতে রাখলে তাতেই ওই শৈবাল জাতীয় জুপ্লাংটন বা ফাইটোপ্লাংটন জন্মে থাকে এবং সবুজাভ রংয়ের একটি আস্তরণ পড়ে। এছাড়া অন্যান্য প্রাণিজ খাবারও তৈরি হয়। ওইসব ডালপালার ওপর জন্মানো আস্তরণ বা শৈবালই পেরিফাইটন, যা মাছের প্রিয় খাবার। খাবার প্রয়োগের বাড়তি খরচ লাগে না বিধায় গরিব খামারিদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। একই পুকুরে একই বাঁশ বা কঞ্চি প্রায় তিন বছর ব্যবহার করা যায়। অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে মাছের বৃদ্ধির তুলনায় পেরিফাইটন প্রযুক্তিটি অত্যন্ত পরিবেশবান্ধবও বটে।
পেরিফাইটন পদ্ধতিতে রুই মাছের উত্পাদন হেক্টরপ্রতি ১৯০০ কেজি সম্ভব। যেখান স্বাভাবিক পদ্ধতিতে উত্পাদন হেক্টরপ্রতি ১০০০ কেজিরও কম। এছাড়া তেলাপিয়া-চিংড়ি মিশ্রচাষে ১৪৫ দিনে সর্বোচ্চ মোট উত্পাদন হেক্টরপ্রতি ২৪৪৫ কেজি তেলাপিয়া এবং ১৪১ কেজি চিংড়ি পাওয়া গেছে।
গবেষক ড. ওহাব বলেন, পরিবেশবান্ধব, ব্যয়স্বল্পতা এবং সহজে সম্পাদনযোগ্য প্রযুক্তিটি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বর্তমানে বিদেশের মাটিতেও বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, হাইতি, ইসরাইল, ঘানাসহ বেশ কয়েকটি দেশে পরীক্ষামূলক ব্যবহারও চলছে। তবে সম্প্রসারণ সুবিধার অভাবে দেশের অনেক স্থানেই যথেষ্ট সম্ভাবনাময় এ প্রযুক্তিটির ব্যবহার জানেন না অনেক খামারি। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সক্রিয় ভূমিকা রাখা দরকার বলে মনে করেন ড. ওহাব।

Source: Daily Amardesh

No comments:

Post a Comment