Monday, November 1, 2010

কোয়েল পালনে সফল খামারি দেবত্তম খীসা

কোয়েল পালনে সফল খামারি দেবত্তম খীসা

দেবত্তম খীসা। রাঙামাটি সদর উপজেলার ভেদভেদী (যুব উন্নয়ন) এলাকায় কোয়েলের খামার করে সফল কোয়েল পালনকারী হিসেবে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তার দেখাদেখি আশপাশের আরো অনেকেই কোয়েল পালনে উৎসাহিত হচ্ছে। সখ করে কোয়েল পালনের জন্য প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে বাচ্চা নিয়ে আসেন দেবত্তম খীসা। প্রথম দিকে ঠিকঠাক মত যত্ন, আনার ঝামেলাসহ নানা সমস্যার কারণে বেশকিছু বাচ্চা মারা গেলে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন তিনি। তারপর সিদ্ধান্ত নেন রাঙামাটিতেই মেশিনের সাহায্যে কোয়েলের বাচ্চা উৎপাদন করবেন। যেমনি চিন্তা তেমনি কাজ। প্রায় ৩৫,০০০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ইনকুবেটর মেশিন কেনেন। ওই মেশিনের সাহায্যেই শুরু করেন খামারে বাচ্চা উৎপাদন। এর পর থেকে আর তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি। তাকাতে হয়নি পেছনের দিকে।

দেবত্তম খীসা জানান, প্রথম দিকে মানুষ কোয়েলের ডিম কিনতে রাজি হত না। পরে তাদের নানাভাবে বুঝাতাম। হাঁস-মুরগির মতই কোয়েলের ডিম খাওয়া যায় এবং তা পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে আস্তে আস্তে মানুষ কোয়েল এবং কোয়েলের ডিমের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। বর্তমানে কোয়েলের মাংস ও ডিম বিক্রি করতে কোনো বেগ পেতে হয় না। সবাই আগ্রহ নিয়েই কিনে থাকেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে তার খামারে বর্তমানে ৪০০টির ও বেশি কোয়েল রয়েছে, আর তা থেকে প্রতিদিন ডিম পাচ্ছেন ৩৫০-৩৭০টির মত। এক একটি কোয়েলের ওজন ১৭০-২৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং তা বাজারে বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। ডিমের জোড়া বিক্রি করছেন তিনি ৫ টাকা করে। কোয়েলের ডিম শিশুদের দেহের ও মানসিক বিকাশে এবং রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, বহুমূত্রসহ নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধ করে থাকে।

কোয়েল পালন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, কোয়েল পালন খুবই সোজা। তবে তার পরিচর্যাটা কীভাবে করতে হবে তা বুঝতে হবে। তিনি আরো বলেন, কোয়েল পালনের কারিগরি তথ্য এবং পালন সম্পর্কে পদ্ধতি ও রোগের বিষয়ে প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তারা আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন তাকে। কোয়েলের মহামারী আকারে কোনো রোগ হয় না। তবে কোনো একটি কোয়েলের চোখের রোগ হলে অন্যান্য কোয়েলের সেটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। তখন খামারকে রক্ষা করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য একটি কোয়েলের অসুখ দেখা দিলেই সেটাকে আলাদা করে ফেলতে হবে। কোনো কোয়েল মারা গেলে কারণ খুঁজে দেখতে হবে। পাশাপাশি ওই মরা কোয়েল মাটির নীচে পুঁতে ফেলতে হবে। কোয়েলের বাচ্চা পালনের সময় একটি অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয়। এই সময় বাচ্চাকে ব্রুডিং এর ব্যবস্থা করতে হয়। বাচ্চার বয়স ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত কৃত্রিম উত্তাপের মাধ্যমে এই ব্রুডিং এর ব্যবস্থা করতে হয়। কারণ ডিম থেকে ফোটার পর বাচ্চা উক্ত সময় পর্যন্ত স্পর্শকাতর এবং দুর্বল থাকে। এই সময় তাদেরকে প্রয়োজনীয় ক্যালোরিযুক্ত খাবার দিতে হয়। তা না হলে বাচ্চা ক্যালোরির অভাবে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে মৃতু্যর মুখে ঢলে পড়তে পারে।

বিষেজ্ঞরা প্রমাণ পেয়েছেন বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পালনের জন্য সর্বাধিক উপযোগী। বিভিন্ন হাঁস-মুরগির খামারেও ইদানিং কোয়েল পালন ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে। দেশের পুষ্টি মিটিয়ে কোয়েলের মাংস বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

মো.শফিকুর রহমান, বনরূপা, রাঙামাটি

No comments:

Post a Comment