Friday, October 5, 2012

বাংলাদেশী গবেষকদের আবিষ্কার ডাক্তার ছাড়াই প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা

বাংলাদেশী গবেষকদের আবিষ্কার ডাক্তার ছাড়াই প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা

প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়, নিকটবর্তী কোন হাসপাতাল বা ডাক্তার নাই। আপনার বাচ্চা অসুস্থ মনে হচ্ছে কিন্তু কি হয়েছে বুঝতে পারছেন না। এদের কথা চিন্তা করেই সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তৈরি করা হয়েছে ডাক্তার ছাড়াই প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পদ্ধতি।
ড. আতিকুর রহমান এবং বাহারুল ইসলাম গবেষক হিসাবে কাজ করছেন জেমস কুক ইউনিভার্সিটি সিংগাপুর ক্যাম্পাসে। স্বল্প মূল্যের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশ বিশেষ করে আফ্রিকা এবং এশিয়ার অনেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মাঝে কিভাবে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া যায় সেই চিন্তা থেকে তারা নিরলস এক বছর গবেষণা করে এমন একটা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যার মাধ্যমে ডাক্তার ছাড়াই এক থেকে আট বছর বয়সের বাচ্চাদের শ্বাস কষ্টজনিত রোগ যেমন সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদির প্রাথমিক অবস্থায় জানা যাবে।
এই কাজ করতে তারা উন্নয়নশীল দেশ যেমন ভারত, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২ হাজার বাচ্চার শ্বাস কষ্ট জনিত বিভিন্ন রোগের তথ্য-উপাত্ত যেমন বাচ্চার নিঃশ্বাসের শব্দ, রোগের লক্ষণ, ডাক্তারের বক্তব্য, পিতামাতার বক্তব্য ইত্যাদি নিয়েছেন। তারা বাংলাদেশের ঢাকা (আজিমপুর, মিরপুর), নরসিংদি ও ভোলা জেলার এবং ভারতেরর তামিলনাইডু ও দিল্লী থেকে এই ডাটা গুলো সংগ্রহ করেছেন।
এ প্রসংগে গবেষক ড. আতিকুর রহমান বলেন, ‘‘আমি মনে করি এই সিস্টেম উন্নয়নশীল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য একটা আশীর্বাদ স্বরূপ। এক থেকে ৮ বছর বয়সের বাচ্চাদের প্রায় ১২০০ ফিচার ও বিভিন্ন রোগের উপাত্ত নিয়ে আমরা এই সিস্টেমটা ডেভেলপ করেছি।‘‘
সম্প্রতি তারা তাদের উদ্ভাবিত সিস্টেমটি বাংলাদেশের ভোলা জেলার তজুমুদ্দিন থানার চাপড়ী গ্রামে প্রায় ৫০টি পরিবারের ওপর সফল ভাবে প্রয়োগ করেছেন। প্রত্যেক পরিবারকে একটি করে  মোবাইল ফোন প্রদান করে তাদের সিস্টেমের ফলাফল পরীক্ষা করছেন। ওই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পিতা-মাতা তাদের বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে বাচ্চার নিঃশ্বাসের শব্দ রেকর্ড করে মাল্টিমিডিয়া মেসেজ (এমএমএস) করে পাঠালে সাথে সাথে তারা ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারেন তাদের বাচ্চার স্বাস্থ্যের অবস্থা কি। এখন পর্যন্ত এই সিস্টেমের ফলাফল দেখে ৮ জন বাচ্চার পিতা-মাতা তাদের বাচ্চাকে নিয়ে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করলে তাদের ভিতর ৭ জন বাচ্চার রেস্পাইরেটরী বা শ্বাস কষ্ট জনিত রোগ আছে বলে ডাক্তার নিশ্চিত করেছেন। ফলে ঐ শিশুরা এই সিস্টেমের মাধ্যমে জটিল রোগে আক্রান্তের হাত থেকে রক্ষা পেল।
এই সম্পর্কে গবেষক বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘‘উন্নয়নশীল দেশের প্রায় কম বেশি সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। সুতরাং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কিভাবে তাদের স্বংক্রিয় ভাবে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া যায় এই চিন্তা থেকে আমাদের এই পদ্ধতি তৈরি করা।’’
এই প্রজেক্টের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. ইনসু সং বলেন, "This mobile phone based health technology is for children that will save many children's life in the world."
আপনার বাচ্চার শ্বাস কষ্টজনিত রোগ আছে কিনা বা থাকলে কি পরিমাণ আছে তা এখনি জানতে পারেন। এর জন্য আপনাকে শুধু আপনার মোবাইল থেকে আপনার বাচ্চার নিঃশ্বাসের শব্দ রেকর্ড করে এমএমএস করতে হবে। সাথে সাথে আপনি আপনার বাচ্চার অবস্থার উপর তার একটা ফিরতি ম্যাসেজ পাবেন। ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমেও এই সেবা পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে নিঃশ্বাস রেকর্ড করে অনলাইনে আপলোড করলে সাথে সাথে জেনে যাবেন আপনার বাচ্চার অবস্থা।  
এই প্রজেক্টের অর্থায়ন করছে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন (মাইক্রোসফট) এবং সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন ড. ইনসু সং, জেমস কুক ইউনিভার্সিটি সিংগাপুর।
ড. আতিকুর রহমান খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করে সেখানেই ৭ বছর অধ্যাপনা করেছেন পরে ন্যানইয়াং টেকনোলোজিক্যাল ইউনিভার্সিটি সিংগাপুর থেকে পিএইচডি করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলায়।
বাহারুল ইসলাম রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারে বিএসসি এবং  ন্যানইয়াং টেকনোলোজিক্যাল ইউনিভার্সিটি সিংগাপুর থেকে মাস্টার্স করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার মোহাম্মাদপুর থানার রো-নগর গ্রামে।
বাচ্চার নিঃশ্বাস আপলোড করতে এই লিংক যেতে http://www.infor.kopo.com/breathing-sound-analyser হবে অথবা এমএমএস করতে পারেন + ৬৫ ৯১০৮৮৯৯২ নাম্বারে।            

Source: http://www.dailysangram.com
 

No comments:

Post a Comment