Saturday, October 30, 2010

সিলেটে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাম অয়েল চাষ শুরু

সিলেটে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাম অয়েল চাষ শুরু

০০ সিলেট অফিস

সিলেটের মাটিতে পাম অয়েল চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে সিলেট, বালাগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বাণিজ্যিকভিত্তিতে পাম অয়েল গাছ লাগানো শুরু হয়েছে। যদিও মালয়েশিয়ায় ব্যাপকহারে পাম অয়েল চাষ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশের মাটি পাম অয়েল ফলন উপযোগী। এখানে ফলন হয়ে থাকে দেড় থেকে দ্বিগুণ। বাংলাদেশে বছরে একটি গাছে ১০-১২টি কাঁদি ধরে। মালয়েশিয়াতে প্রতি কাঁদির ওজন হয় ২০-৪০ কেজি। আর বাংলাদেশে ৪০-৬০ কেজি পর্যন্ত হচ্ছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান। একটি পাম গাছের চারার মূল্য ৫-৬শ' টাকা। চারার মূল্য বেশি থাকায় অনেকেই আবার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পাম চাষে এগিয়ে আসতে পারছে না।

ইতিমধ্যে সিলেট নগরীর অদূরে খাদিমনগর এলাকায় ছায়াঘেরা গহীন পাহাড় টিলার গাঁয়ে প্রকৌশলী মোস্তফা শাহরিয়ার পাম অয়েলের চাষ শুরু করেছেন। সেখানে তিনি ৫ হাজার চারা রোপণ করেছেন। চারাগুলোর বর্তমান উচ্চতা দেড় দুই ফুট। আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যেই ফলন আসবে। কৃষিবিদরা জানান, প্রতিটি গাছে অন্তত ৫০ লিটার পাম অয়েল উৎপন্ন হবে। যার বাজার মূল্য ৩ হাজার টাকা। শাহরিয়ার জানান, যদি ফলন ভালো হয় তাহলে তিনি সিলেটে পাম অয়েলের একটি মিল করার ইচ্ছা রয়েছে।

সংশিস্নষ্টরা জানান, বাড়ির পাশে অথবা পতিত জমিতে ১০০টি গাছ রোপণ করলে প্রতিবছর ৩ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। এমনকি ২টি পাম গাছ থেকে একটি পরিবারের সারা বছরের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ হয়।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, এক বিঘা জমিতে সাধারণ ফসল ফলিয়ে বছরে যেখানে ৪-৫ হাজার টাকা আয় হয়ে থাকে। সেখানে পাম অয়েল গাছ লাগিয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। পাম অয়েল গাছ পরিবেশ বান্ধব ও দীর্ঘজীবী।

সূত্র মতে, বাংলাদেশে প্রথম '৭৬-৭৭ সালে হবিগঞ্জের সাতছড়িতে কিছু পাম গাছ লাগানো হয়। পরবর্তীতে '৭৯ সাল থেকে সেখানে বাণিজ্যিকভাবে পাম চাষ শুরু হয়। ইতিমধ্যে বগুড়া, খাগড়াছাড়ি, যশোর, ঢাকা, সাভার ও কুমিলস্না সেনানিবাসেও ব্যাপকহারে পাম গাছ লাগানো হয়েছে।

বেসরকারি সংস্থা গ্রিন বাংলাদেশের উদ্যোগে সিলেটের বালাগঞ্জ বাণিজ্যিকভাবে কৃষকদের উৎসাহ দান করে যাচ্ছে। তারা ধানী ও ফসলী জমির ক্ষেত ব্যবহার না করে অনাবাদি জমিতে পাম চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে। সংস্থাটি দেশের ৪০টি জেলার ২১৩টি থানায় পাম গাছ রোপণ করছে। একটি পাম গাছের চারার মূল্য ৫শ' ৯০ টাকা। কিস্তিতে নিলে প্রতিটি গাছের মূল্য ৮শ' ৫০ টাকা।
Source: Daily Ittefaq

মার্সিডিস, বিএমডবিস্নউ ও ক্যাডিলাকের ইন্টেরিয়র ডিজাইন হবে ঢাকায়

মার্সিডিস, বিএমডবিস্নউ ও ক্যাডিলাকের ইন্টেরিয়র ডিজাইন হবে ঢাকায়

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ বিশেস্নষক

ঢাকার সরু আর যানজটে রাস্তায় ক্যাডিলাক এর লাক্সারী সিডানগুলো দেখতে চাওয়াও বিলাস। আকারে ঢাউস এবং সব বিলাসী জীবন অনুষঙ্গ থাকে এই গাড়ীতে-চলেন মধ্যপ্রাচ্যের রাজা বাদশা ও তাদের পরিজনেরা, ইউরোপ-আমেরিকার সরকারের শীর্ষকর্তা, শতশত কোটিপতি ব্যবসায়ী ও তারকাবৃন্দ। ক্যাডিলাক, মার্সিডিস ও বিএমডবিস্নউ এমন অনেক দামী গাড়ীগুলোর ভেতরটা আমরা অনেকেই দেখেছি অন্তত টেলিভিশনে বা ইন্টারনেটের ছবিতে। এদের কোন কোন সিরিজের সবচে কমদামি মডেলটির দামই হয়ে যায় কোটি টাকা ।

বিলাস আর আভিজাত্যের কতো অনুষঙ্গ থাকে এসব গাড়িতে। এবার বাংলাদেশেই নকশা হতে যাচ্ছে এর সব।

আসন্ন শীতের কোন এক সকালেই হয়তো ঢাকায় আনুষ্টানিকভাবে শুরু হয়ে যাবে জার্মানীর অটোমোটিভ সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ড্রাক্সালমিয়ারের ডিজাইন ল্যাবটি। থাইল্যান্ড, চিন ও মালয়েশিয়ার পর ঢাকায় ল্যাবটি হবে এশিয়ায় তাদের চতুর্থ ল্যাব। গাড়ীর ড্যাশবোর্ড, সিটিং স্পেস ও ফ্যাসিলিটসের সাথে গাড়ী ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যারিং এর ডিজাইনও হবে ঢাকায় ড্রাক্সালমিয়ার ল্যাবে।

কয়েকমাস আগে প্রতিষ্ঠানটি ৯ জন বাংলাদেশী প্রকৌশলীকে নিয়োগ দিয়েছে। তারা এখন জামর্ানী ও পোল্যান্ডের ড্রাক্সালমিয়ার ল্যাবগুলোতে ট্রেনিং নিচ্ছেন, ঢাকায় ফিরবেন ডিসেম্বর নাগাদ। জামর্ান ডিজাইন প্রতিষ্ঠানটি ঢাকায় আরো প্রকৌশলী ও একজন শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে এখন, জানিয়েছেন বাংলাদেশ জার্মান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির নির্বাহী পরিচালক ডেনিয়েল সিড্ল।

ঢাকায় ড্রাক্সালমিয়ার ল্যাব এর বিশটি ডিজাইন টার্মিনাল এর জন্য কম্পিউটার-এইডেড-সফটওয়্যার বা ক্যাড এর বার্ষিক লাইসেন্স ফিই হবে সাত কোটি টাকার সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রা, বললেন ডেনিয়েল।

আর্থিক বিনিয়োগে হয়ত অনেক বড়ো বড়ো শিল্প প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এটি ছোট তবে প্রযুক্তি আর অগ্রসর শিল্প খাতে প্রবেশের দ্বার বিবেচনায় ঢাকায় ড্রাক্সালমিয়ার এর ল্যাব প্রতিষ্টা একটি সদুরপ্রসারী জাতীয় ঘটনা অবশ্যই।

অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে ড্রাক্সালমিয়ার বিশ্বের সব নামি দামি গাড়ী নির্মাতাদের জন্য ইন্টেরিয়র ও ইকুইপমেন্ট ডিজাইন করে আসছে। বিশটি দেশে এর ৫১টি ল্যাব ও পস্নান্টে কাজ করছে ৩৫ হাজারেরও বেশী কর্মী। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক টার্নওভার দুইশ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি।

এমন একটি প্রতিষ্ঠান কিন্তু হঠাৎ করেই বাংলাদেশে আসেনি। এখানকার তরুন প্রজন্ম প্রকৌশলীদের সৃষ্টিশীল মেধার খবর পেয়েই তারা তাদের উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে এই উদ্যোগটির সিদ্ধান্তটিও আপনাআপনি হয়ে যায়নি- এমনটি হয়ওনা সারা বিশ্বেই।

হয়ত স্বপ্ন আছে অনেকের মাঝে বাংলাদেশী একটি গাড়ীর। তবে বাস্তবতা হলো সরাসরি গাড়ী বানাতে গিয়ে ফেল মারার চাইতে গাড়ীর উপকরণ বানানোর চেষ্টা করাই দূরদর্শীতার পরিচায়ক। গাড়ী নির্মাতা বা নিমর্াতাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগী হয়ে কাজ করতে থাকলে একদিন বাংলাদেশেরও দক্ষতা চলে আসবে। নিজেদের গাড়ী বানানোর স্বপ্নটির বাস্তবায়নও সহজ হয়ে যাবে তখন।
Source: Daily Ittefaq

Wednesday, October 27, 2010

সোলার এনার্জি সেলস উদ্ভাবন করে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী


সোলার এনার্জি সেলস উদ্ভাবন করে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী
০ ইত্তেফাক রিপোর্ট

বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর সোলার এনার্জি সেলস উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ম্যারিল্যান্ডের কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং গবেষক বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ডঃ জামালউদ্দিন ইতিহাস গড়েছেন। কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির ন্যাচারাল সাইন্সের সহকারী অধ্যাপক এবং ইউনিভার্সিটির নেনোট্যাকনোলজি রিচার্স সেন্টারের গবেষক ডঃ জামালউদ্দিন এবং তার পাঁচ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষানবিশ গবেষকরা স্পেক্ট্রোল্যাবের সোলার সেলের তুলনায় প্রায় ৪ পারসেন্ট অধিক কার্যকর সোলার এনার্জি সেল উদ্ভাবন করলেন।

প্রসঙ্গত, এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সোলার এনার্জি সেল তৈরির শীর্ষস্থানটি দখলে রেখেছে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রোল্যাব। ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সোলার সেল তৈরির সুনামটিও তাদের। নিজের এই উদ্ভাবনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়াতে ডঃ জামালউদ্দিন জানান, এটা সত্যিই রোমাঞ্চকর এবং আশাব্যঞ্জক একটি বিষয় যা আরো অধিক নেনোট্যাকনোলজির ওপর গবেষণাকল্পে আমাদের আরো উৎসাহ যোগাবে।

ড. জামাল উদ্দিন এবং তার গ্রুপ সোলার সেল থেকে শতকরা ৪৩.৪ পুনঃব্যবহারযোগ্য এনার্জি উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে যা বিশ্বে এই উৎপাদনের সর্বোচ্চ মাত্রা। ড. জামাল মেটাফিজিঙ্ক সফট ওয়ার-কমসল এবং পিসি-ওয়ান ডি ব্যবহার করে এই ক্ষেত্রে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন।

ড. জামালের মতে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই তারা এই এনার্জি উৎপাদন শতকরা ৫০ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হবেন। এই গবেষণাকল্পে প্রণোদনা স্বরূপ ম্যারীল্যান্ড ট্যাকনোলজী ডেভেলোপমেন্ট কর্পোরেশন গত জুলাই ২০০৯-এ ৮৯,০০০ ডলার প্রদান করেন। আগামী ২৬ অক্টোবর ড. জামালের নেতৃত্বে এই কপিনের গবেষণা দল ম্যারিল্যান্ডের ফোর্ট ডেট্রিক আর্মি রিসার্চ ল্যাবে খ্যতিমান নেনোট্যাক সাইন্টিস, স্কলারস এবং ভিজিটরসদের সামনে তাদের উদ্ভাবনী বিষয়টি উপস্থাপন করবেন।

ড. জামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের মরহুম আব্দুল জলিল ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান ড. জামাল। বর্তমানে তার পরিবার রাজধানীর ১৯৮ নং এলিফ্যান্ট রোডে বসবাস করছে।

ড. জামালের সহোদর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিজ) সিনিয়র রিচার্স ফেলো ড. এম জসিমউদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, ছোটবেলা থেকে তার ভাই অসম্ভব মেধাবী ছিলেন। তার এই সাফল্য পুরো বাংলাদেশের।

রাজশাহীতে বীজ শোধন : অধিক ফলন পাচ্ছে কৃষক

রাজশাহীতে বীজ শোধন : অধিক ফলন পাচ্ছে কৃষক

রাজশাহী অফিস
বীজ শোধন মানেই অধিক ফলন। রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা বীজ শোধন করে চাষ করার ফলে অধিক ফলন পাচ্ছে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন বীজ উত্পন্নকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কৃষকরাও এখন বীজ শোধন করে ফসলের চাষ করছেন। বিশ্বের সেরা বীজ শোধন ও প্রতিরোধক ছত্রাকনাশক আমেরিকার কেমচুরা করপোরেশনের প্রোভেক্সসহ বীজ শোধক ব্যবহার করছেন কৃষকরা।
রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নওগাঁর বীজ উত্পাদনকারীদের সংগঠন বেসরকারি বীজ উত্পাদনকারী সমিতির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, তাদের সমিতির সব সদস্য বীজ শোধন করার পর বীজ বাজারজাত করে থাকেন। ভালো বীজে ভালো ফলন, বীজ শোধনে অধিক ফলন, এটা এখন কৃষকরাও বোঝেন ও জানেন। বীজ আলু উত্পাদক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান কাজী বলেন, তার সমিতির ৮ শতাধিক সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে বেশকিছু সদস্য প্রোভেক্স দিয়ে বীজ শোধন করে আলুর চাষ করে গত বছর ভালো ফলন পেয়েছেন। পাশাপাশি ধান, গম ও অন্যান্য ফসলের বীজ শোধন করে আবাদ করছেন কৃষকরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএ মুনজুর হোসেন বলেন, বীজ শোধন হচ্ছে বীজের বাইরে বা বীজের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র জীবকণার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জৈবিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়া। বীজ শোধন করা হলে অতি ক্ষুদ্র জীবাণুর হাত থেকে বীজ ও চারাগাছকে রক্ষা করা যাবে। বীজ শোধন করে ফসল লাগানোর ফলে ৪/৫ সপ্তাহ পর্যন্ত রোগের আক্রমণ থেকে ফসল সুরক্ষিত থাকে। গাছের সার্বিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, ফসলের উত্পাদন বাড়ে। যে কোনো কৃষক বাজার থেকে বীজ প্রোভেক্স বা পাউডার কিনে প্রতি কেজি ধান, গম, পাট, লাউ, বেগুন, আলু বীজের জন্য ২ থেকে ৩ গ্রাম নিয়ে পানিতে মিশিয়ে সরাসরি বীজে দিতে পারে। তিনি ধান, গম, ভুট্টা ও আলুর বীজ শোধন ও বীজ ট্রিটমেন্ট নিয়ে কাজ করছে। এর ফলাফল অত্যন্ত ভালো।
বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক সরদার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, শুধু বিএডিসি নয় তার জানা মতে, সারা বিশ্বে সরকারি ও বেসরকারিভাবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বীজ শোধন করে চাষাবাদ করছেন। এতে করে শুধু ফলনই বাড়ে না বরং ফসলের পরবর্তী সংরক্ষণের গুনগত মান বজায় থাকে।
হোসেন এন্টারপ্রাইজ সিসি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, তিনি আমেরিকার কেমচুরা করপোরেশনের প্রোভেক্সের আমদানিকারক। প্রোভেক্সের মধ্যে বীজ শোধন করার জন্য কার্বোক্সিন ও থিরাম নামের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে; যা বীজ শোধন ও সংরক্ষণ করে থাকে। তার কোম্পানি বিএডিসি ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ধান ও গমের বীজ শোধনের জন্য বা বীজ ট্রিটমেন্টের জন্য ৫ বছর মেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এতে করে এখন থেকে কৃষকরা শোধন করা বীজ পাবেন। সারা বিশ্বে ১০০টিরও বেশি দেশে ৫০টির বেশি ফসলে প্রোভেক্স ব্যবহার করা হয় বলে তিনি জানান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ইউনুছ আলী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৃষকরা বীজ শোধন করে আবাদ করে থাকেন।
ফলে কৃষকদের ফসলের উত্পাদন বাড়ে। রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা ধান, গম, আলুসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ শোধন করে আবাদ করে থাকেন। এখন কৃষকরা চাষাবাদের ক্ষেত্রে অনেক সচেতন। তারপরও মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন ধরনের ফসলের উত্পাদন কলাকৌশলের ওপর কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ভালো বীজে ভালো ফলন, বীজ শোধনে অধিক ফলন—এটা এখন কৃষকরা সহজেই বোঝেন ও জানেন।
Source: Daily Amardesh

Tuesday, October 26, 2010

এবার পুকুরে ইলিশ চাষ

এবার পুকুরে ইলিশ চাষ

জি এম শাহীন, চাঁদপুর (দক্ষিণ)
সাগর ও নদীর মাছ ইলিশ এবার বদ্ধ জলাশয় পুকুরে চাষ হবে। চলতি মে মাস থেকেই বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে ইলিশ চাষ শুরু হচ্ছে। দীর্ঘ ১৪ বছর গবেষণার পর পাওয়া সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বিশেষজ্ঞরা বদ্ধ পুকুরের মিঠাপানিতে রুপালি ইলিশ চাষের পদ্ধতি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।
দেশে প্রতি বছর ৫ হাজার ৬শ’ কোটি টাকার ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উত্পাদন হয়। নদী ও সাগর থেকে এই ইলিশ আহরিত হয়। জাটকা শিকারের পাশাপাশি নদীর নাব্য সঙ্কট, পানি দূষণসহ নানা কারণে ইলিশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ চাষের উদ্যোগ নেয়া হলো। ইলিশ গবেষকদের মতে, বিশ্বে এই প্রথম পুকুরে ইলিশ চাষ শুরু হতে যাচ্ছে।
১৯৮৮ সাল থেকে পুকুরের মিঠাপানিতে ইলিশ চাষ করা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। দীর্ঘ ১৪ বছর গবেষণার পর চাঁদপুর মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষকরা সফলতা পান। ইনস্টিটিউটের ৩টি পুকুরে চলতি মাসের শেষদিক থেকে শুরু হচ্ছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইলিশ চাষ।
চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও বরিশালের পদ্মা-মেঘনা নদী ইলিশের অভয়াশ্রম। এগুলোতে কারেন্ট জালের সাহায্যে নির্বিচারে জাটকা নিধন করা হচ্ছে। শুধুম কারেন্ট জাল দিয়ে গড়ে বছরে ১১ হাজার মেট্রিক টন জাটকা শিকার করা হয়। কিন্তু এই জাটকার যদি ১০ ভাগও রক্ষা করা যেত তাহলে ১ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ইলিশ উত্পাদন হতো, যার দাম ২ হাজার কোটি টাকা।
চাঁদপুর মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান জানান, পুকুরে ইলিশ চাষের সব প্রস্তুতি এরমধ্যে শেষ হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এখন শুরু হবে পুকুরে ইলিশ চাষ। পুকুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইলিশ চাষ শুরুর সংবাদে ব্যবসায়ীরা বেশ আনন্দিত। এতে সারা বছরই পাওয়া যাবে ইলিশ। ব্যবসা সচল থাকবে বলে আশাবাদী তারা।
ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান আরও জানিয়েছেন, প্রতিটি ইলিশ মাছের ডিম থেকে প্রায় ১ লাখ রেণু পোনা হয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পুকুরে ইলিশ চাষ পুরোপুরি শুরু হলে জেলেরা কারেন্ট জাল দিয়ে আর জাটকা নিধন করবে না বলে আশা করা হচ্ছে। জীবন্ত জাটকা আহরণ করে জেলেরাই ইলিশ চাষীদের কাছে বিক্রি করতে পারবে। বদ্ধ জলাশয় অর্থাত্ পুকুরে ইলিশ চাষ সর্বত্র বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু করা গেলে দেশের মত্স্য খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
Source: Daily Amardesh, 9th May, 2010

ইলিশ পোনা বড় হচ্ছে পুকুরে

চাঁদপুরে পরীক্ষামূলকভাবে পুকুরে চাষ করা ইলিশ পোনাগুলোর আকৃতি কিছুটা বেড়েছে। গত তিন মাস আগে তিনটি পুকুরে এ পোনা ছাড়া হয়।
শনিবার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান পুকুরে ইলিশ চাষের সম্ভাবনা তুলে ধরে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, চাঁদপুরের তিনটি পুকুরে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গত মে মাসে
দুই হাজার ইলিশ পোনা ছাড়ে। এখনো পর্যন্ত এসব পোনার একটিও মরেনি।
তিনি জানান, যে তিনটি পুকুরে ইলিশ ছাড়া হয়েছে সেগুলোর পানির গুণাগুণ ভাল এবং ঠিকমতো খাবার দেওয়া হচ্ছে। পোনার আকৃতিও বেড়েছে। জাটকা সংরক্ষণ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা’ শিরোনামে একটি প্রকল্পের আওতায় পুকুরে এ ইলিশ চাষ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আনিছুর রহমান জানান, এসব পুকুরে ইলিশ মাছের খাদ্যাভ্যাস, বৃদ্ধির হার, স্বাদ, পরিপক্কতা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা হবে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে পোনাগুলোর ওপর পরীক্ষা চালানো হবে। এক্ষেত্রে কতটুকু সফলতা আসবে তা ওই পরীক্ষার পর বোঝা যাবে।
এর আগে ইনস্টিটিউটের দুটি পুকুরে ১৯৮৮ সালের মার্চ থেকে ১৯৮৯ সালের ফেব্রয়ারি পর্যন্ত ১২ মাস ধরে পুকুরে ইলিশ মাছের চাষ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করা হয়।
ওই গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে আনিছুর রহমান জানান, সে বার ইলিশের বেঁচে থাকার হার ছিল শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ।
নদী, মোহনা ও সাগরে যে ধরনের গুণাগুণ সম্পন্ন পানিতে ইলিশ মাছ অভ্যস্ত, পুকুরের পানিতে সেসব না থাকায় ও সঠিক খাবারের অভাবে পুকুরে ইলিশের বৃদ্ধি ২৪ শতাংশ কম হয়েছিল বলে জানান তিনি।
আনিছুর রহমান বলেন, পুকুরে খাবার ও ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ নদী কিংবা মোহনার পানির কাছাকাছি রেখে ইলিশ মাছ চাষ করলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। এজন্যে আরো গবেষণার প্রয়োজন।
তিনি জানান, অভিজ্ঞতার অভাব এবং নদীর চেয়ে ফল অনেক কম থাকার কারণে ওই সময় আর পুকুরে ইলিশ চাষ হয়নি।
তবে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইলিশের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে আগামী জাটকা মৌসুম (মার্চ-মে) থেকে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র, চাঁদপুরে বিস্তিৃত পরিসরে পুকুরে ইলিশ মাছ চাষের পরিকল্পনা নিয়েছেে
News Date: 19 September

ইলিশের বিচরণক্ষেত্র বাড়ানো প্রয়োজন
বকুল আশরাফ
বিজ্ঞান আগাবেই। এটাই নিয়ম। গবেষণা হবে, প্রতিনিয়ত উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করে যাবে মানুষ। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে ফল পাবে, তা জনকল্যাণের কাজে ব্যবহূত হবে। এটাই আধুনিক নিয়ম। আমাদের চারপাশে বেড়ে ওঠা জনগণের চাহিদা মেটানোর জন্য বিদেশী বিজ্ঞানীরা যেমন কাজ করে যাচ্ছেন, তেমনি দেশীয় বিজ্ঞানীরাও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, উদ্ভাবন করছেন নতুন নতুন প্রযুক্তি ও প্রজাতি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট অনেক ধরনের উন্নত জাতের ধানের বীজ আবিষ্কার করেছে, যা আমাদের দেশের কৃষি উন্নতিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে। সেই সব গবেষণালব্ধ উদ্ভাবন কৃষকদের কাছে এখন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকরাও নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে উচ্চ ফলনে, উন্নত প্রজাতিতে।

আমার ছোটবেলায় ভরা বর্ষায় দেখেছি বিলের মধ্যে আমন ধান। ঐ ধানগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, পানি যত বাড়বে ধানও পানির সাথে সাথে বাড়বে। ফলন কম-বেশী বড় কথা নয়। মূল কথা হচ্ছে বাংলাদেশের বেশীর ভাগ অঞ্চলই বর্ষার পানিতে তলিয়ে যায় সুতরাং পানির উচ্চতার সমকক্ষ, বর্ষা বান্ধব ধান দরকার । অর্থাৎ পানি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে এমন ধানই আমন ধান। এই আমন ধানও ছিল সেই সময়ের বিজ্ঞানের আবিষ্কার। ইদানিং আবার খরা বান্ধব ধান আবিষ্কারে নেমেছে বিজ্ঞানীরা। যত দূর জানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রায় শেষ। এখন শুধু ফলন বাড়ানোর চেষ্টা। তারপর ক্রমাগতভাবে কৃষকদের মাঝখানে ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই উদ্ভাবন। জানি না পানি বিহীন এই পৃথিবী টিকে থাকবে কি না ? আসলেই কি বিজ্ঞান পানির বিকল্প কিছু উদ্ভাবন করতে পারবে ? মূল বিষয়ে ফিরে আসি। বাংলাদেশের মৎস্য বিজ্ঞানীরা এখন পুকুরে ইলিশ মাছের চাষ করছেন। ছোট বেলায় কৌতুক করে বলতে শুনেছি, বড় কর্তাকে খুশী করার জন্য তার বাড়িতে মাছ পাঠানো হতো। বলা হতো স্যার আমার পুকুরের মাছ আপনার জন্য নিয়ে এসেছি। কোন এক বোকা-সোকা লোক তার বড় কর্তার বাসায় ইলিশ মাছ নিয়ে গিয়ে বলেছিলো স্যার আমার পুকুরের ইলিশ আপনার জন্য নিয়ে এলাম। শুনে বড় কর্তার চোখ প্রায় ছানাবড়া। বলে কি পুকুরের ইলিশ ! কর্তা খুশী হবেন কি, উল্টো রেগে গিয়েছিলেন। অথচ একবিংশ শতাব্দীতে বড় সাহেবের জন্য পুকুরের একজোড়া ইলিশ হাতে নিয়ে যেতেই পারেন কোন অধস্তন কর্মচারী।

সম্প্রতি একটি দৈনিক পত্রিকার চাষাবাস পাতায় একটি প্রতিবেদন পড়ে আর্শ্চয্য হলাম। পুকুরে ইলিশ মাছ চাষের সম্ভবনা ও সফলতা বিষয়ক প্রতিবেদন। বাংলাদেশের মৎস্য বিজ্ঞানীরা স্থানীয় মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নিজস্ব পুকুরে ইলিশের পোনা ছেড়েছেন পরীক্ষামূলক। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। ইলিশের জীবিত পোনা সংগ্রহ করে পুকুরে ছেড়ে এই পরীক্ষা। তারা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন ইলিশের জীবন প্রকৃতি, ইলিশের বেড়ে উঠা, গতি প্রকৃতি, খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত অনেক তথ্য ও উপাত্ত। প্রায় দুই দশক আগে বাংলাদেশের মৎস্য বিজ্ঞানীরা ইলিশ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। মূল বিষয়, কি করে পুকুরে ইলিশের চাষ করা যায়। বর্তমানে তাদের নিরবিচ্ছিন্ন গবেষণা বলছে, যে পরিমাণ জাটকা নিধন হয় এই দেশে, তার পরিপূরক হিসেবে যদি ইলিশের পোনাকে বদ্ধ জলাশয়ে খাপ খাওয়ানো যায় তবে প্রচুর জাটকা নিধন হলেও ইলিশের অপ্রাপ্তি রোধ করা যাবে। বিজ্ঞানীদের মতে পুকুরে চাষ করা ইলিশের দৈঘর্্য এক বছরে প্রায় দশ ইঞ্চি এবং ওজন ৪৫০ গ্রাম।

মৎস্য বিজ্ঞানীদের যুক্তির বিশেষ লক্ষণীয় বিষয়টি হলো, সরকার কতর্ৃক জাটকা সংরক্ষণে অভয়াশ্রম কর্মসূচি হাতে নেবার পর, জাটকার আধিক্য বেড়েছে সত্যি,কিন্তু নদীর নব্যতা হ্রাস পাওয়ায় ইলিশের পরিভ্রমণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু কিছু নদীর পানি দূষিত হয়ে বড় নদীতে পড়ছে। এতে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। এবং ইলিশের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। তাই বিকল্প হিসেবে পুকুরে ইলিশের উৎপাদনের চেষ্টা। বিজ্ঞানীদের কঠোর মনোবল, এবার তারা সফলতার দারপ্রান্তে পেঁঁৗছাবেনই। তারা যোগ-বিয়োগ, গুণ করে অর্থনৈতিক সাফল্যের হিসেবও দেখিয়েছেন। বছরে প্রায় এক লক্ষ মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদন করতে পারবেন পুকুরে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

বিজ্ঞানীদের গবেষণা মানুষকে, একটি দেশকে অনেক উন্নত করে তোলে কথাটি যেমন সত্যি, তেমনি যদি আমরা মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতামতগুলোকে প্রাধান্য দেই, তবে দেখবো যে কারণে তারা পুকুরে ইলিশের চাষ নিয়ে গবেষণা করছেন সেগুলো হলো-এক. নদীর নাব্যতার ক্রমবর্ধমান হ্রাস পাওয়া। দুই. নদীর পানি ক্রমাগত দূষিত হয়ে যাওয়া। তিন. প্রচুর পরিমাণে জাটকা নিধন। বাংলাদেশে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিচালিত জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর জাটকা ধরা পড়ে মোট ৩৫০০-৪০০০ মেট্রিকটন। শুধুমাত্র মেঘনাতেই ধরা পড়ে এর পঞ্চাশভাগ। অথচ মৎস্য আইনে জাটকা ধরার অনুমতি নেই। অর্থাৎ যারা জাটকা ধরেন তারা অবৈধ কাজ করেন। অপরাধ করেন। আমরা কি পারি না নদীর নাব্যতাকে ড্রেজিং করে ধরে রাখতে। বাংলাদেশের প্রতিটি নদীতেই এখন ড্রেজিং-এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সরকারীভাবে একটি সমন্বিত কর্মসূচি এখনই গ্রহণ করা অত্যাবশকীয় হয়ে পড়েছে। সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। শিল্প কারখানার বর্জ্য যেন নদীতে না ফেলা হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। নদীর দূষন ঠেকাতে আইনি প্রয়োগসহ মানুষদের সচেতন করে তুলতে হবে । জাটকা নিধন ঠেকাতে হবেই। ইলিশ মাছ বিষয়ক সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। উপরোক্ত তিনটি বিষয়ে যদি সরকারসহ আমরা সাধারণ জনগণ মিলিত প্রয়াস চালাই তবেই সফলতার কাছাকাছি পেঁঁৗছানো সম্ভব হবে। এই তিনটি বিষয়ে সরকার যদি তার নজরদারী বাড়ান বা বাস্তবসম্মত কঠোর কর্মসূচি হাতে নেন তবে আমরা যে শুধু ইলিশের বাড়তি উৎপাদন পাবো, তা নয়। আমরা পাবো অন্যান্য মাছেরও বাড়তি উৎপাদন। পাবো মাছদের জন্য অভয় বিচরণ ক্ষেত্র। ভাতে মাছে বাঙালি ফিরে পাবে তাদের ঐতিহ্যের স্বাদ। পানির সরবরাহও ফিরে পাবো। ফিরে পাবো পুনরায় নদীপথে যাতায়াতের সুযোগ। আমাদের দৈনন্দিন কর্মকান্ডে পানির অভাব থেকে পরিত্রাণ পাবো। কমবে ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা। আমরা পরিত্রাণ পাবো লোনা পানি উঠে আসার ভয় থেকে। ইলিশ মাছ-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে সাঁতারু মাছ। তার বিচরণ ক্ষেত্র লাগে ব্যাপক। তার বসবাস নদী, মোহনা ও সুমুদ্রে। এই মাছ প্রজননের জন্য স্বাদু পানির স্রোতের ওজানে অগভীর পানিতে উঠে আসে এবং ডিম ছাড়ে। সুতরাং আমরা ইলিশকে পুকুরের একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে না এনে বরং ইলিশের বিচরণ ক্ষেত্র নিয়ে কেন মাথা ঘামাচ্ছি না। বাঙালি জাতীর ঐতিহ্য বহন করা ইলিশের স্বভাব সুলভ গতি প্রকৃতির দিকে খেয়াল করছি না কেন? ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। সুতরাং এই মাছের বাড়ন, বিচরণ ক্ষেত্র রক্ষা করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য।
[লেখক:কবি, প্রাবন্ধিক]
Source: Daily Ittefaq


জাতীয় মাছপুকুরে ইলিশ!
পদ্মার নয়, সাতক্ষীরার পুকুরের ইলিশ। ছবি : কালের কণ্ঠ
- ফখরে আলম ও রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, সাতক্ষীরা থেকে পুকুরে ছাড়া হয়েছিল রুই, কাতলা ও চক্ষুবাটার পোনা। জাল ফেলে সেই পুকুরে মিলল জলজ্যান্ত ইলিশ! একটুও গল্পের নয়, সত্যিকারের।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতা গ্রামের একটি পুকুরে মিলেছে এ ইলিশ মাছের সন্ধান। গত শুক্রবার দুপুরে ওই পুকুরে জাল ফেলা হলে তাতে উঠে আসে বেশ কয়েকটি ইলিশ। তাও একেবারে ছোট নয়, দুই শ-আড়াই শ গ্রাম ওজনের। ইলিশ দেখে জেলেরা হতবাক! জাল থেকে কয়েকটি ইলিশ তুলে নিয়ে বাকিগুলো আবার পানিতে ছেড়ে দেন পুকুরের মালিক আব্বাস আলী বিশ্বাস।
সাতক্ষীরা শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে আব্বাস আলীর একটি বরফকল রয়েছে। সেখানে রয়েছে দুই বিঘা আয়তনের একটি পুকুর। পুকুরটি বন্যা কিংবা অতি বর্ষণে কখনো তলিয়ে যায়নি। এর পরও সেই পুকুরে ধরা পড়েছে ইলিশ।
পুকুরটি দেখাশোনা করেন আব্বাস আলীর ভাই মাহাবুব। তিনি বলেন, 'কয়েক মাস আগে খুলনার পাইকগাছার শিবসা নদী থেকে চক্ষুবাটার পোনা এনে পুকুরটিতে ছাড়া হয়। গত জুন মাসের দিকে পুকুরে জাল টানা হলে প্রথমবারের মতো কয়েকটি ইলিশ ধরা পড়ে। কিন্তু এরপর জাল টেনে আর কোনো ইলিশ পাওয়া যায়নি। শুক্রবার জাল টানা হলে আবার ১৫-১৬টি একই সাইজের ইলিশ ধরা পড়ে। দুটি রেখে বাকিগুলো পুকুরে ছেড়ে দিয়েছি।'
জাল টানার সময় কথা হয় জেলে বুদ্ধিশ্বর মণ্ডল ও পরিতোষ মণ্ডলের সঙ্গে। বুদ্ধিশ্বর বলেন, 'আমরা ২০-২৫ বছর ধরে
জাল টানার কাজ করছি। কিন্তু পুকুরে কোনোদিন ইলিশ মাছ দেখিনি। মনে হয়, শিবসা নদী থেকে চক্ষুবাটার পোনার সঙ্গে ইলিশের পোনাও কোনোভাবে এ পুকুরে চলে এসেছে।'
এ ব্যাপারে যশোরের চাঁচড়ার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খলিলুর রহমান বলেন, 'ইলিশ সমুুদ্র, মোহনা ও নদীতে বাস করে। স্বল্প অঙ্েিজন ও তাপমাত্রার তারতম্য হলে ইলিশের পোনা বাঁচতে পারে না। তবে পুকুরেও ইলিশ বেঁচে থাকতে পারে।'
Source: Daily Kalerkantho, 3th April, 2011

Monday, October 25, 2010

তরুণ বিজ্ঞানী জিয়নের আরও কিছু আবিষ্কার

তরুণ বিজ্ঞানী জিয়নের আরও কিছু আবিষ্কার

আসাদুজ্জামান সাজু
লালমনিরহাটের হাতিবান্ধার মুমতাহিন জিয়ন নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে তৈরি করতে থাকে বিভিন্ন প্রজেক্ট। এভাবেই সে উদ্ভাবন করে পারিবারিক বায়ুবিদ্যুত্, পা-চালিত বিদ্যুত্, ঘর শীতলীকরণ যন্ত্র, জ্বালানিবিহীন সেচযন্ত্র ইত্যাদি। আমার দেশ-এ জিয়নের প্রজেক্টগুলো নিয়ে ৩টি প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই তার উত্সাহ দিন দিন বেড়েই চলে।
জিয়ন মনে করেন, প্রযুক্তি খাতে দেশকে এগিয়ে নিতে প্রথম আমদানিকৃত পণ্যগুলোর তালিকা এবং তা দেশে উত্পাদনে শিল্পপতিদের উত্সাহিত করাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করতে হবে সরকারকে। প্রযুক্তি যদি জনগণের কল্যাণে না আসে তবে তা বৃথা। এভাবে চিন্তা করতে গিয়েই হঠাত্ মাথায় আসে এনার্জি সেভারের বিষয়টি। দীর্ঘ সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এনার্জি সেভারটি পূর্ণাঙ্গতা পায়। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি পরিবার ২০ থেকে ৩৫ ভাগ বিদ্যুত্ সাশ্রয় করতে পারবে। জিয়নের কয়েকটি প্রকল্প হলো—
বায়ুবিদ্যুত্ প্রকল্প : বায়ুবিদ্যুত্ প্রকল্প সফল করতে পুরনো বাইসাইকেলের বিয়ারিংয়ের সঙ্গে ডায়নামা যুক্ত করে পেনিয়ামের সাহায্যে সেটি বাতাসে ঘুরানোর উপযোগী করা হয়। এরপর সিলিং ফ্যানের পাখা সেট করে পরীক্ষামূলক বাড়ির ছাদে স্থাপন করা হয়। বাতাসে পাখা ঘুরে ডায়নামো দিয়ে বিদ্যুত্ উত্পন্ন হয়ে ব্যাটারি চার্জ হয়।
পা-চালিত বিদ্যুত্ প্রকল্প : জিয়নের পা-চালিত বিদ্যুত্ প্রকল্পটি দিয়ে আধাঘণ্টা ব্যায়াম করার ফলে একটি পরিবার ৩ ঘণ্টা বিদ্যুত্ পেতে পারে।
ঘর শীতলীকরণ যন্ত্র : সুতো পানির ব্যবহারে বিদ্যুত্চালিত এ যন্ত্রটি কিছুক্ষণের মধ্যে ঘরকে শীতল করে ফেলে। এর বিদ্যুত্ খরচ সাধারণ একটি ফ্যান চালানোর চেয়ে বেশি নয়। এ কারণে একটি মধ্যবিত্ত পরিবার তার ঘরটি শীতল রাখতে এটি সহজ মূল্যে কিনতে পারবে।
জ্বালানিবিহীন পানি উত্তোলন যন্ত্র : মূলত বায়ুর চাপে এটি কাজ করে। রিফ্লেকটরের সাহায্যে সূর্যের তাপে এটিকে বায়ুশূন্য করে পরবর্তী সময়ে শীতলীকরণের মাধ্যমে নিচ থেকে পানি উপরে ওঠে আসে এবং তা স্বল্প সেচ কাজে ব্যবহার করা যায়। জিয়নের পড়াশোনার পুরোটাই কেটেছে সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করেও ইন্টারনেটের বদৌলতে বিশ্বকে নিয়েছে হাতের মুঠোয়। হাতিবান্ধা এসএস উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞান সবার মাঝে পৌঁছে দিতে ক’জনে মিলে বের করে ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কম্পিউটার টেকনোলজি নামক একটি পত্রিকা। তাতে সে সহকারী সম্পাদকের ভূমিকা পালন করে। জিয়নের বাবা অবসরপ্রাপ্ত পেটি অফিসার, মা গৃহিণী। জিয়ন খুদে বয়সে ন্যাশনাল মিডিয়া সেন্টার, কিডস জোন ও টেকনোলজিবেজের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। জিয়নের  মোবাইল : ০১৭১৯৪০২০০২

ফার্নিচার রফতানি: সংকট ও সম্ভাবনা

ফার্নিচার রফতানি: সংকট ও সম্ভাবনা

১৮ হাজার কোটি টাকার ফার্নিচার বাজার

প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা

দেশিয় চাহিদা পূরণ করে বিশ্ব বাজারে ফার্নিচার শিল্পের রফতানি বাড়ছে। বিশ্বে আসবাব পত্র শিল্পের বাজার প্রায় ১৮ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশ ঐ হিসাবে বছরে ২ কোটি ডলারের আসবাব পত্র বিদেশে রফতানি করছে। একই সঙ্গে এই শিল্প থেকে অভ্যন্তরীণ চার হাজার কোটি টাকা বাজারের চাহিদা পূরণ করছে। উদ্যোক্তারা বলছেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এ শিল্প পরিকল্পনা মাফিক গড়ে উঠলে বছরে কয়েকগুন রফতানি আরও বৃদ্ধি পাবে। ঘরের সৌন্দর্য্য ও শোভাবর্ধনের চেয়ে প্রয়োজনের তাগিদেই বৈচিত্র্যময় ডিজাইনের আসবাব পত্রের চাহিদা বেড়েছে। দেশের তৈরি এসব আসবাব পত্র সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে। রফতানি খাতে এ শিল্পের আয়ের পরিমান বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমশ বাড়ছে। এ খাতের বর্তমান প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ। উদ্যোক্তারা মনে করেন জিডিপিতে এ খাতের অবদান দশমিক ২৯ শতাংশ। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে প্রতি বছর বাড়ছে এ খাতের অবদান। দেশের অভ্যন্তরীণ ফার্নিচারের যোগান দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। রফতানি বাজারে সুনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পালস্না দিয়ে চলছে। সারাদেশে প্রায় ৪১ হাজার ৫৬০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ শিল্পে সরাসরি জড়িত আছে প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক। রফতানি ও অভ্যন্তরীণ চাহিদার ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে অটবি, আকতার ফার্নিশার্স, নাভানা, হাতিল, পারটেক্সসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। সংশিস্নষ্টরা বলছেন, রফতানি বাজার সম্প্রসারণ করতে সরকারের সুষ্ঠু সহযোগিতা থাকতে হবে। সরকারের সহযোগিতা পেলে আন্তর্জাতিক মানের ফার্নিচার তৈরি করে দেশের এ শিল্প অনেক দুর এগিয়ে যেতে পারবে।

ফার্নিচারের বিশ্ব বাণিজ্য

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার(আইটিসি) এর তথ্য মতে, ২০০৬ সালে বিশ্বে আসবাব পত্র বেচাকেনা হয়েছে ১৩ হাজার ৮শ কোটি মার্কিন ডলারের। ২০০৭ সালে সারা বিশ্বে আসবাব পত্র বিক্রি হয় ১৬ হাজার ২শ কোটি মার্কিন ডলারের। ২০০৮ সালে এ বাণিজ্যের পরিমান দাঁড়ায় ১৮ হাজার মার্কিন ডলারের।

ফার্নিচার রফতানি

রফতানি উন্নয়ন বু্যরোর হিসাব মতে, ২০০৯-১০ অর্থ বছরে বিদেশে ফার্নিচার রফতানি হয়েছে এক কোটি ৯২ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১০-১১ অর্থ বছরের ফানির্চার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলারের। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে বিদেশে ফানির্চার রফতানি হয়েছে ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে বিদেশে বাংলাদেশের ফার্নিচার রফতানি হয়েছে ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের। ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে ফার্নিচার রফতানি হয় ২৪ লাখ ডলার। ২০০৬-০৭ অর্থ বছরে ১৮ লাখ এবং ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে ফার্নিচার রফতানি হয়েছে ২২ লাখ ডলারের।

যেসব দেশে রফতানি হচ্ছে

বাংলাদেশের ফার্নিচার বর্তমান অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচেছ। চীন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে কাঠ ও আসবাব পত্র আমদানি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে মালয়েশিয়া থেকে ২৬ কোটি টাকার কাঠ ও আসবাব পত্র আমদানি করা হয়। সিঙ্গাপুর থেকে ৮৩ কোটি টাকার কাঠ ও আসবাব পত্র আমদানি করা হয়।

ফার্নিচারের একাল সেকাল

এক সময় ফার্নিচার তৈরি হতো শুধু কাঠ দিয়ে। ঐ সময় খুব অল্পসংখ্যক ফার্নিচার তৈরি হতো। যা ছিল আকারে বেশ বড় এবং ভারি। ফার্নিচারের ব্যাপক চাহিদা বনের উপর প্রভাব ফেলে। বনের কাঠ এক সময় উজাড় হতে থাকে। ধীরে ধীরে ফার্নিচার শিল্পে লাগে আধুনিকতার ছোঁয়া। পরিবেশ বিজ্ঞানিদের অনুরোধে কাঠের পরিবর্তে ব্যবহার শুরু হল বিকল্প কাঠ। এছাড়া স্টীনলেস স্টীল, মিন্টস্টীল ও পস্নাস্টিক দিয়ে তৈরি হলো ফার্নিচার।

বাংলাদেশে আধুনিক ফানির্চারের যাত্রা

উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশে ফার্নিচার শিল্পে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বর্তমানে বিশ্বমানের বেশ কিছু ফার্নিচারের প্রতিষ্টান গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আসবাব পত্র দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চার হাজার কোটি টাকার মার্কেট দখল করে আছে।

অটবি

বাংলাদেশের ফার্নিচার শিল্পের আধুনিকতার পথিকৃত অটবি। ১৯৭৫ সালে দেশবরেণ্য শিল্পী নিতুন কুন্ডের হাতে গড়ে উঠা এই প্রতিষ্ঠান। তার একান্তিক চেষ্টা আর শৈল্পিক ছোয়ায় ফার্নিচার জগতে এসেছে নতুনত্ব। গত ৩৪ বছরে অটবি এ দেশের মানুষকে দিয়েছে নিত্যনতুন ডিজাইনের ফার্নিচার। এছাড়াও তাদের রয়েছে বিক্রয়োত্তর সেবা।

নাভানা ফার্নিচার

প্রায় ১১ বছর ধরে নাভানা গ্রুপ ফানির্চার শিল্পের সঙ্গে জড়িত। বিশ্বমানের আধুনিক ফানির্চার মানুষের ঘরে পৌছে দেয়া হচ্ছে তাদের লক্ষ্য। অটবির মতো নাভানাও বিদেশে ফার্নিচার রফতানি করছে।

পারটেক্স

পারটেক্স ফার্নিচারের যাত্রা শুরু ১৯৯৯ সাল থেকে। ফার্নিচার তৈরির জন্য পারটেক্স একটু ব্যতিক্রম। কারণ পারটেক্সের কাঁচামাল নিজেরাই তৈরি করে থাকে। পারটেক্স বাংলাদেশের সর্ববৃহত্তম কাঠের বিকল্প বোর্ড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্টান।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠান

ঢাকা মহানগরীতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। অনেক প্রতিষ্টান ফার্নিচার আমদানি করেও বিক্রি করছে। তবে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে।

ফার্নিচার শিল্পকে এগিয়ে নিতে দরকার সরকারের সহযোগিতা। সরকারের সহযোগিতা ছাড়াই এ শিল্প এগিয়ে এসেছে। এ শিল্প বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৮০ ভাগ পূরণ করছে। কিন্তু এ খাতের কাঁচামাল আমদানি করতে ৩০ শতাংশের বেশি মূল্য সংযোজন করা হয়। এ শিল্পের উদ্যোক্তাদের মতে, ফানির্চার শিল্পের জন্য আলাদা জোন ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য একটি ইন্সটিটিউট করা দরকার।
SOURCE: DAILY ITTEFAQ

Sunday, October 24, 2010

সময় মেপে ঘুরবে সোলার প্যানেল

ভিন্ন খবর : মৃতবত্সা মায়ের পাশে বিজ্ঞান

ভিন্ন খবর : মৃতবত্সা মায়ের পাশে বিজ্ঞান

মা শব্দটি ছোট হলেও একজন নারী যখন মা ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত হন, তখন পৃথিবীর প্রায় সবকিছুই তার কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ে। পৃথিবীর কাছে তিনি নিজেও হয়ে পড়েন প্রায় মূল্যহীন। কেবল ‘মা’ ডাকটি শোনার জন্য নারীরা অনেক কষ্ট মেনে নেন। তবু অনেকেরই মা হওয়ার সৌভাগ্য হয় না। এ সমস্যা ছিল একসময়
জটিল। কিন্তু বিজ্ঞানের আবিষ্কার এ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছে। ১৯৭০ সালে এক গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন টেস্ট টিউব বেবির ধারণাটি। অনেক চড়াই-উত্রাই পার করে এ আবিষ্কার এখন পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত। এ আবিষ্কার অনেক নারীকে মা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু এখানেই নারীদের কষ্ট ঘোচেনি।
এরপরও মা হতে না পারার পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। অনেক নারী গভর্ধারণ করেও শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারছেন না। মৃত সন্তান প্রসব করেন। তাদের জন্য বিজ্ঞানের আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত নতুন একটি খবর। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ইউনির্ভাসিটি অব আরহান্সের কয়েকজন গবেষক আবিষ্কার করেছেন আইভিএফ মেডিসিন। এ মেডিসিনের মাধ্যমে নারীদের রক্তের উচ্চ ও নিম্ন রসগ্রন্থির উর্বরতা, হরমোনজনিত সমস্যা, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, জরায়ু এবং ডিম্বাণুর সমস্যা, বারবার গর্ভপাতের সমস্যা দূর করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। এ প্রসঙ্গে ড. জিন জিয়াং জুহ বলেছেন, আমাদের স্মরণ রাখতে হবে মানবদেহের বৃদ্ধির ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে এবং এর বাড়ার ক্ষমতা থাকে খুবই কম। তিনি আরও বলেন, গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে, এসব সমস্যার কারণে শিশু জন্মগ্রহণ করলেও পরে মা ও শিশু দুজনেরই বিভিন্ন সমস্যা হয়। কিন্তু এ ওষুধ গ্রহণের পরে যেসব শিশু জন্মগ্রহণ করে তাদের ঝুঁকি থাকে কম। বিবিসি

ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন-৪ : ঝড় সতর্কীকরণ সরল যন্ত্র

ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন-৪ : ঝড় সতর্কীকরণ সরল যন্ত্র

এমরানা আহমেদ
ঝড় বা ঘূর্ণিঝড় আসার আগেই বায়ুর গতি, চাপ ও দিক নির্ণয় করা যাবে ঝড় সতর্কীকরণ সরল যন্ত্রগুলোর সাহায্যে। এগুলোর কিছু কিছু প্রধান যন্ত্র অতি সহজেই ঘরে তৈরি করে বৈরী আবহাওয়া সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পাবেন সমুদ্রতীরবর্তী ঝড়প্রবণ এলাকার মানুষ। নিতে পারবেন সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
এই প্রকল্পটির ক্ষুদে দুই উদ্ভাবক খন্দকার মাসুক ইবনে মাহফুজ এবং ইরতেজা ইনাম কবির জানান, তিনটি যন্ত্রের সাহায্যে এই প্রকল্পটি কাজ করে থাকে। প্রথমটি হচ্ছে ‘অ্যানিমোমিটার’ বা বায়ুর বেগ মাপক যন্ত্র। এর দ্বারা বায়ুর গতি বাড়ছে না কমছে তা নির্ণয় করা যাবে। দ্বিতীয় যন্ত্রটি ছিল ‘সরল ব্যারোমিটার’। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। এর দ্বারা বায়ুর চাপ কমছে না বাড়ছে তা নির্ণয় করা যায়। বায়ুর চাপ কমলে বোঝা যাবে যে আবহাওয়া খারাপ হতে পারে। ঝড় বা বৃষ্টির সম্ভাবনা কম না বেশি তা বোঝা যায়। তৃতীয় যন্ত্রটি ছিল ‘উইন্ড ভেন বা বাত পতাকা’ যা বায়ুর দিক নির্দেশ করে। এ থেকে বোঝা যাবে ঝড় কোনদিকে প্রবাহিত হচ্ছে। তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আবহাওয়া অধিদফতরের ঝড় সতর্কীকরণ যন্ত্রের মাধ্যম সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করতে বেশ সময় লেগে যায়। ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। সম্পদসহ ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। অতি দ্রুত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে তাদের এই প্রকল্পটি অতি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন এই দুই ক্ষুদে উদ্ভাবক।তাদের প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে খন্দকার মাসুক ইবনে মাহফুজ ও ইরতেজা ইনান কবির বলেন, বিশেষ করে এই প্রকল্পটি উপকূলীয় জনবসতিতে ভালো কাজ দেবে। ঝড় সম্পর্কে জনসাধারণকে সতর্ক করা যাবে। তারা আরও বলেন, এতে জনসাধারণ নিজেরাই সতর্ক হতে পারবেন। সিডর ও আইলার মতো ঝূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে বিশাল মৃত্যু আর আমাদের দেখতে হবে না।

Friday, October 22, 2010

ছাগল উত্পাদন বেড়েছে বছরে এক কোটি

ছাগল উত্পাদন বেড়েছে বছরে এক কোটি

আলাউদ্দিন আরিফ
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের (পশুসম্পদ) ছাগল পালন কর্মসূচি ছিল লাভজনক। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর দেশে বছরে ছাগলের উত্পাদন বেড়েছে প্রায় এক কোটি। সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৫ শতাধিক ছোট-বড় খামার। কর্মসূচি সংশ্লিষ্টরা বলেন, ওই কর্মসূচি বাস্তবায়নের পর দেশজুড়ে ব্লাক বেঙ্গল জাতের ছাগল উত্পাদন আশানুরূপ বেড়েছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় বিপুলসংখ্যক খামার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
২০০২ সালের ২৭ এপ্রিল তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল সিদ্দিকী। ‘দারিদ্র্য বিমোচনে ছাগল উন্নয়ন কর্মসূচি’ নামে ৫ বছরমেয়াদি কর্মসূচির যাত্রা শুরু হয় ২০০৩-০৪ অর্থবছরে। এর ব্যয় ধরা হয় ৫২ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। শুরুর বছর প্রকল্পের জন্য ছাড় দেয়া হয় ৮ কোটি টাকা।
বিশ্বে ১৮ প্রজাতির ছাগল থাকলেও ছাগল উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য বেছে নেয়া হয় বিশ্বের সর্বোত্কৃষ্ট জাতের ছাগল ‘ব্লাক বেঙ্গল’। এই জাতের ছাগল বাছাই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এরা কৃষি উপজাত ও প্রাকৃতিকভাবে উত্পাদিত ঘাস লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকে; অল্প জায়গায় অধিকসংখ্যক ছাগল পালন করা যায়; এই জাতের ছাগল দ্রুত প্রজননক্ষম, ৭ মাস বয়সে গর্ভধারণ করে, বছরে ২ বার বাচ্চা দেয়, একটি ছাগী বছরে ৪ থেকে ৬টি বাচ্চা দেয়; প্রতিকূল পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে এবং দ্রুত বাড়ে; খাদ্য খরচ কম; অভ্যন্তরীণ ও বিশ্ববাজারে এদের মাংস ও চামড়ার চাহিদা অনেক বেশি এবং অধিক মূল্যবান; চামড়া মোটা, পশম চামড়ার উপরে থাকায় সহজেই পশম ছাড়ানো যায়; এদের মাংসের আঁশ মিহি ও সুস্বাদু, মাংসের ভিতর চর্বি থাকে না, চর্বি থাকে মাংসের বাইরে, চাইলে টেনে মাংস থেকে চর্বি আলাদা করা যায়। তাছাড়া প্রকৃতিগতভাবেই আমাদের দেশে এই জাতের ছাগলের উত্পাদন হয়। স্বাভাবিক উত্পাদনের পাশাপাশি আধুনিক ও লাগসই প্রযুক্তি প্রয়োগ এবং রোগব্যাধির হাত থেকে রক্ষা করতে এই জাতের ছাগল বেছে নেয়া হয়। কর্মসূচির আওতায় ব্লাক বেঙ্গলের পাশাপাশি যুমনা পারি বা রামছাগলের উত্পাদনও বেড়েছে, কমেছে রোগবালাই।
কর্মসূচি প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, কস্ট অব বেসিক নিড (সিবিএন)-এর ভিত্তিতে বাংলাদেশে মোট জনসংখার ৫৩.২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। জমির পরিমাণ হিসাবে এই দারিদ্র্য ৫৮ থেকে ৬৮ শতাংশ বেশি। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রায় সবাই ছাগল পালন করে। মানুষকে ছাগল পালনে আরও উত্সাহী করা, ছাগলের রোগবালাই দূর করা, কম জায়গায় অধিকসংখ্যক ছাগল পালন করা, ছাগল পালনের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ, বেকারত্ব দূর করা, ছাগলের মাংস ও দুধ উত্পাদন বাড়ানোর মাধ্যমে পুষ্টি সরবরাহ বাড়ানো, ছাগলের মাংস ও চামড়া রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে এই কর্মসূচির যাত্রা শুরু হয়।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, কর্মসূচি শুরুর আগে ২০০১ সালে দেশে ছাগল উত্পাদন হতো ২০ মিলিয়নের কম। ২০০১ পূর্ববর্তী বছরগুলোতে ছাগল উত্পাদনের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২.৫০ শতাংশ। ওই অবস্থায় ২০০২ সালে দারিদ্র্য বিমোচনে ছাগল উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয় ৫২ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর আওতায় কোনো ঋণ বিতরণ করা হয়নি। ঋণ বিতরণ করা হয়েছে মত্স্য ও পশুপালন প্রকল্পের আওতায়। পরে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মাঠপর্যায়ে জনবল সঙ্কটের কারণে এই ঋণ বিতরণ বন্ধ করে দেয়া হয়।
কর্মসূচির আওতায় ছাগল পালনের গুরুত্ব সম্পর্কে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণ, চাষীদের সচেতন করা, সঠিক জাত বাছাই করা, খাসি, ছাগী ও বাচ্চার পরিচর্যা, ছাগল রাখা ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জ্ঞান দেয়া, রোগের প্রতিষেধক সরবরাহ এবং ছাগলের খামার করতে পরামর্শ ও উত্সাহ দেয়া হয়। ছাগল উন্নয়ন কর্মসূচির সাবেক ডেপুটি প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ডা. মো. আলেক মণ্ডল জানান, কর্মসূচি গ্রহণের পর দেশে ছাগল পালন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। ২০০২ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশে ছাগলের উত্পাদন গড়ে ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। ২০০৫ সালে উত্পাদন প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯.২৫ শতাংশ এবং ২০০৬ সালে ছিল ১০.৩৫ শতাংশ। রোগের প্রতিষেধক দেয়া ও সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্লাক বেঙ্গল ছাড়াও বিটাল, বারবারী, অ্যাংলোনুবিয়ান, যুমনাপারী (রামছাগল) ইত্যাদি প্রজাতির ছাগলের উত্পাদনও অনেক বৃদ্ধি পায়। ২০০৯ সাল নাগাদ ছাগলের উত্পাদন বেড়ে বছরে ৩ কোটি ছাড়িয়ে যায়। এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, কর্মসূচি বাস্তবায়নের পর দেশে বার্ষিক ছাগল উত্পাদন বেড়েছে প্রায় এক কোটি।
প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ছাগলের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাংস, চামড়া ও দুধ উত্পাদন বেড়েছে। পশু চিকিত্সকদের মতে, ছাগলের দুধ গরুর দুধের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। যেসব এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ছাগল উত্পাদন হয় সেখানে গরুর দুধের সঙ্গে মিশিয়ে ছাগলের দুধও বাজারজাত করা হয়। মিল্কভিটা বা অন্যসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুরুর দুধের সঙ্গে এই দুধ কিনে প্যাকেটজাত করে। এর থেকে গুঁড়োদুধও তৈরি হয়। তাছাড়া অনেক এলাকায় পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে রোজ হিসেবেও বিক্রি হয় ছাগলের দুধ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, বর্তমানে অ্যানথ্রাক্সজনিত কারণে গরুর আমদানি ও জবাইয়ের হার কমেছে। ফলে প্রায় মার খেতে বসেছে দেশের চামড়া শিল্প। এ অবস্থায় ছাগল জবাইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে চামড়ার জোগানও। এর থেকে চামড়া শিল্পের জঙ্গে জড়িতরা কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালের জুন মাসে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের এই কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ এনে বরখাস্ত করা হয় কয়েকজন কর্মকর্তাকে। তবে বর্তমানে আবারও এ কর্মসূচি হাতে নেয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এরই মধ্যে প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য ও প্রকল্প প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, শিগগিরই এ ধরনের প্রকল্প আবার চালু করা হতে পারে।
ছাগল উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয় প্রাণিসম্পদ (পশু) অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. সালেহ উদ্দিন মাহমুদের সময়। তিনি আমার দেশকে জানান, এটি কোনো প্রকল্প ছিল না। বরং এটি ছিল ছাগল পালন বাড়াতে ৫২ কোটি ৭২ লাখ টাকার ৫ বছরমেয়াদি একটি কর্মসূচি। প্রতি অর্থবছর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এই কর্মসূচির জন্য ৭-৮ কোটি টাকা করে ছাড় দেয়া হতো। বিএনপি সরকারের ৫ বছরে এই কর্মসূচির জন্য সর্বোচ্চ ৪০ কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয়েছিল। কর্মসূচির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে ৭ বছরে প্রায় ৪৫ কোটি টাকার মতো ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু ‘ছাগল প্রকল্পের নামে এক হাজার কোটি টাকা লুট; ছাগল প্রকল্পের নামে হাজার কোটি টাকা জলে গেছে, ছাগল প্রকল্পের হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়া হয়েছে’ এ ধরনের হাস্যকর ও বিভ্রান্তিকর অনেক বক্তব্য আমাদের মন্ত্রী-এমপিরা দিয়েছেন। এমনকি জাতীয় সংসদেও ভুল তথ্য পরিবেশন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম জড়িয়ে অনেক হাসি তামাশা করা হয়েছে। এসব বিষয় সত্যিই দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন, জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও আমাদের আমিষের চাহিদা পূরণে ছাগল পালন গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখে। এখনও দেশে বিধবা দরিদ্র ও বয়ষ্ক মহিলাদের আয়ের একমাত্র উত্স হিসেবে বিবেচিত হয় ছাগল পালন। প্রচলিত ধ্যান-ধারণার আলোকে যুগ যুগ ধরেই আমাদের দেশে ছাগল পালন হয়ে আসছে। ছাগল পালনের ক্ষেত্রে আধুনিক ও লাগসই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে এর উত্পাদন বৃদ্ধি ও রোগবালাই থেকে এদের রক্ষা করার জন্য কিছু কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, জনগুরুত্বপূর্ণ এই কর্মসূচি নিয়ে অনেক হাসি-তামাশা করা হয়েছে এবং এটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ডা. সালেহ উদ্দিন আরও বলেন, দেশের মানুষ ছাগল উন্নয়ন কর্মসূচির সুফল পেয়েছে। এবার কোরবানির ঈদে ছাগলের যে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে ওই কর্মসূচি বাস্তবায়নের কারণে সেটি মেটানো সম্ভব হচ্ছে। এখন দেশে ছাগল আমদানি করতে হচ্ছে না বরং রফতানি করা যাচ্ছে। এর থেকেই সহজেই বুঝা যায় কর্মসূচিটি ছিল সফল ও লাভজনক।
বর্তমানে অনেকেরই অভিযোগ, এই কর্মসূচির হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। প্রশ্ন হলো যেখানে মোট বরাদ্দ ৫২ কোটি টাকা, কর্মসূচি চলাকালে প্রতি অর্থবছরে ছাড় করা হতো ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা। ৫ বছরের ওই কর্মসূচিতে (পরবর্তীতে ২ বছর বৃদ্ধি) কীভাবে হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে বিষয়টি বোধগম্য নয়। কেউ কেউ বলছেন, বেগম খালেদা জিয়া ওই কর্মসূচির উদ্বোধন করার কারণে রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি হিসেবে এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।

Source: Daily Amardesh

রাঙ্গুনিয়ায় তৈরি হচ্ছে পাখিশালা

রাঙ্গুনিয়ায় তৈরি হচ্ছে পাখিশালা
- মুহাম্মদ সেলিম, রাঙ্গুনিয়া থেকে ফিরে
চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়ায় নির্মিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাখিশালা 'শেখ রাসেল এভিয়ারি অ্যান্ড ইকো-পার্ক'। এ পাখিশালায় বিলুপ্ত হতে যাওয়া পাখি ও বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ সংরক্ষণ করা হবে।   


কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরপাখির জগৎ সম্পর্কে ধারণা দিতে গড়ে তোলা হচ্ছে এই ইকো-পার্ক। প্রাণিজগৎ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের গবেষণায় সহায়তার পাশাপাশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এখানে বিভিন্ন ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। গতকাল পার্কটির নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। উদ্বোধনের পর প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পার্ক তৈরির মাধ্যমে এখানে পরিবেশের উন্নয়ন ঘটানো হবে। বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পার্কটিতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রাখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সভাপতি পাখিবিশেষজ্ঞ মওদুদুল আলম বলেন, এখানে বিলুপ্ত হওয়া বিভিন্ন পাখি ও বৃক্ষ সংরক্ষণ করা হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো দেশে এভিয়ারি অ্যান্ড ইকো-পার্ক নেই। এশিয়ায় শুধু মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে এ পার্ক রয়েছে। এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এভিয়ারি পার্ক প্রতিষ্ঠা করছে। এ ধরনের পার্কে সাধারণত বিলুপ্ত হওয়া পাখি সংরক্ষণ করা হয়। সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার পাহাড় ও সমতলের ২১০ হেক্টর এলাকা জুড়ে পার্কটি গড়ে উঠছে। এটি তৈরিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। এখানে বাবুই, হলদে পাখি, ইগল, শকুন, বুলবুলি, দোয়েল, শ্যামা, শালিক, ভিংবাজ, পেঁচা, টুনটুনি, টিয়া, ঘুঘু, মাছরাঙা, সাদা বকের মতো বিলুপ্তপ্রায় পাখিগুলো সংরক্ষণ করা হবে। প্রকল্প এলাকায় ভেষজ ও অন্যান্য বিলুপ্তপ্রায় ৭১ হাজার ৫০০ গাছ লাগানো হচ্ছে। এ ছাড়া রোপণ করা হচ্ছে ৩০ হাজার সৌন্দর্যবর্ধক গাছ। পাশাপাশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে থাকছে রেস্টহাউস, ঝুলন্ত সেতু, আধুনিক রেস্তোরাঁ, লেক, হেলানো বেঞ্চ, আরসিসি স্টিল ছাতা, ওয়াচ টাওয়ার এবং শিশুদের জন্য দোলনা ও স্লিপার। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় থাকছে শেখ রাসেলের ম্যুরাল, হরিণ বিচরণক্ষেত্র ও কুমির প্রজননক্ষেত্র। এ বিষয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা এস এম গোলাম মওলা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পাহাড় ও বনজঙ্গল ধ্বংস করার ফলে পাখির অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শেখ রাসেল এভিয়ারি অ্যান্ড ইকো-পার্কে বিলুপ্ত হওয়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সংরক্ষণ করা হবে। 
Source: Daily Bangladesh-Pratidin, 8th August

মরিচের সাথে ভুট্টা চাষ

মরিচের সাথে ভুট্টা চাষ

বাংলাদেশে ভুট্টার উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট মরিচের সাথে সাথী ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এই প্রযুক্তিতে দেশের বহুল ব্যবহূত এবং গুরুত্বপূর্ণ ফসল হিসেবে মরিচকে প্রাধান্য দিয়ে এর সঙ্গে কিছু পরিমাণে ভুট্টার আবাদ করা হয় এমনভাবে যেন মরিচ উৎপাদনে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। এতে কৃষক তার মরিচ শস্যের সাথে ভুট্টা বোনাস হিসেবে পেয়ে থাকে, অপরদিকে বাড়তি ভুট্টার উৎপাদনের জন্য কৃষককে জমিতে অতিরিক্ত কোনো সার দিতে হয় না।

স্থান নির্বাচন ও চাষের মৌসুম: মরিচ ও ভুট্টা উভয়ের জন্য পানি জমে থাকে না- এমন উঁচু উন্মুক্ত ও আলো বাতাসময় জায়গা নির্বাচন করতে হবে। মাটি সাধারণত দো-অাঁশ এঁটেল দো-অাঁশ,

পলি দো-অাঁশ কিংবা বেলে দো-অাঁশ হলে সবচেয়ে ভাল হয়। সাধারণত মধ্যে কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ পর্যন্ত সময়কালে মরিচের চারা রোপণ ও ভুট্টা বীজ বোনার সঠিক সময়। অবশ্য এর পরেও এই ফসলের চাষ করা যেতে পারে। বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত মরিচের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগই হয় রবি মোৗসুমে।

জাত ও মরিচের চারা তৈরি: ১. মরিচের যেকোনো স্থানীয় বাণিজ্যিক জাত হলেও চলে। তবে শুকনো মরিচ হিসেবে বিক্রি করা যায় এমন জাতের মরিচই এই প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজন। ২. ভুট্টা: ভুট্টার জাত যেমন- খই ভুট্টা, মোহর, বর্ণালী, সাভার-১ সাদাফ ইত্যাদি উলেস্নখযোগ্য।

মরিচের বীজ সরাসরি মাঠে বোনা যায়, আবার বীজতলায় চারা তৈরি করে তা মাঠে রোপণ করা যায়। চারা রোপণ করাই উত্তম। তাতে মাঠে চারা রোপণের আগ পর্যন্ত সময়টা পূর্ববতর্ী ফসল উৎপাদনের জন্য পাওয়া যায়। ভুট্টার বীজ সরাসরি

বপন করতে হয়।

মরিচ ও ভুট্টার রোপণ: মরিচের চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেমি (প্রায় ২০ ইঞ্চি) বা সারিতে এক চারা থেকে আরেক চারার দূরত্ব হবে ৩০ সেমি (১২ ইঞ্চি বা ১ ফুট)।

ভুট্টা রোপণের দূরত্ব: প্রতি দুই সারি মরিচের পর পরবর্তী দুই সারির মাঝখান দিয়ে এক সারি ভুট্টার গাছ থাকবে।

সারের পরিমাণ:মরিচ ও ভুট্টার জন্য সারের পরিমাণ প্রায় এক। সারের পরিমাণ হল- ইউরিয়া প্রতি হেক্টরে ১৭৫ কেজি, এক একরে ৭০ কেজি এবং প্রতি শতকে ৭০০ গ্রাম। টিএসটি প্রতি হেক্টরে ১৩৫ কেজি, এক একরে ৫০ কেজি এবং প্রতি শতকে ৫৪০ গ্রাম। এমপি/পটাশ প্রতি হেক্টরে ৭৫ কেজি, এক একরে ৩০ কেজি এবং প্রতি শতকে ৩০০ গ্রাম।

পরিচর্যা: চারা রোপণ ও বীজ বপনের পরে মাটিতে যদি রস না থাকে তাহলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। রোপণের প্রায় এক মাস পরে মাঠে একবার ভালভাবে পানি সেচের পর, ১৫ দিন পর পর দুই বা তিনবার সেচের প্রয়োজন হতে পারে।

আগাছা দমন ও মালাচিং: চারা রোপণ ও বীজ বপনের পরবর্তী দেড় মাস আগাছা দমন করা খুবই জরুরি। এ জন্য প্রয়োজনে এক থেকে তিনবার নিড়ানী দেওয়া যেতে পারে।

পোকা-মাকড় রোগ বালাই: মরিচের রোগের মধ্যে ডাইব্যাক উলেস্নখযোগ্য। এই রোগের শুরুতে শাখার আগা মরে যায়। পরে সেটা নিচের দিকে নামতে থাকে। শেষে গাছ মরে যায়। ফাংগাস বা ছত্রাকজনিত এই রোগে বোর্দো মিকচার বা অন্য কোনো ছত্রাক দমনকারী ওষুধ ছিটাতে হবে। এছাড়া সফট রট বা নরম পচা রোগও গাছের ক্ষতি করে। মরিচের বিভিন্ন ক্ষতিকারক পোকার মধ্যে কাটওয়ার্ম বা কাটুই পোকা অন্যতম। এটি চারা অবস্থায় গাছ কেটে ফেলে। এর প্রতি কৃষককে কড়া নজর দিতে হবে।

ভুট্টা: ভুট্টার রোগ বালাইর মধ্যে লিফ ব্র্যাইট বা পাতার মড়ক বা শীষ পচা ও মিলডিউ রোগ বিশেষ উলেস্নখযোগ্য। এসব রোগের জন্য আগেই প্রতি সাড়ে ১২ লিটার পানিতে ২ গ্রাম কিউপ্রাভিট মিশিয়ে সপ্রে করতে হবে। আর ভুট্টার শত্রু মাজরা পোকা উলেস্নখযোগ্য। এই পোকা গাছের কচি পাতার ভেতরে প্রবেশ করে খেতে থাকে। উপযুক্ত কীটনাশক ওষুধ ছিটিয়ে এই পোকা দমন করা যেতে পারে।

মরিচ ফসল সংগ্রহ: মরিচ কাঁচা পাকা দুভাবেই গাছ থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। কাঁচা অবস্থায় মরিচ তুলতে হবে যখন তা বতি হবে বা বতি হতে যাচ্ছে এমন অবস্থায়। পাকা মরিচের বেলায় তা তুলতে হবে একটু লালচে বর্ণ হয়েছে এমন সময়। সাধারণত মাঠ থেকে হেক্টরপ্রতি মোট ৪ থেকে ৬ টন পাকা মরিচ সংগ্রহ করা হয়। পরে এই মরিচ রোদে শুকিয়ে সংগ্রহ করা হয়।

ভুট্টা সংগ্রহ: ভুট্টাও কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত কাঁচা অবস্থায় তোলা হয় সিদ্ধ করে বা পুড়িয়ে খাওয়ার জন্য। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভুট্টা পাকার পরই ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা ভাল।

কৃষিবিদ বকুল হাসান খান

স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে চান বাংলামতি ধান দিয়ে

স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে চান বাংলামতি ধান দিয়ে

এস এম আতিয়ার রহমান

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ৫০ তম জাত হল বাংলামতি। বাংলাদেশের কৃষক ও কৃষির জন্য বাংলামতি ধান বড় ধরনের সুসংবাদ বয়ে এনেছে। বিজ্ঞানীরা এ জাতটির উদ্ভাবনের মাধ্যমে পাল্টে দিতে চান কৃষকের ভাগ্য। এই ধান পাকিস্তান ও ভারতের বাসমতি সমমানের বলে উদ্ভাবক কৃষি বিজ্ঞানীরা দাবি করেন। সুপার ফাইন এ্যারোমেটিক (সুগন্ধি) রাইচ হিসেবে বিশ্বব্যাপী বাসমতি চালের যে জনপ্রিয়তা, সুনাম ও উচ্চমূল্য রয়েছে ঠিক সে চালই পাওয়া যাবে এই বাংলামতি ধান থেকে। পাকিস্তান ও ভারতের বাসমতির চেয়ে বাংলামতির ফলন বেশি। পার্থক্য কেবল নামে। আন্তর্জাতিক প্যাটেন্ট আইনের কারণে এ ধানকে বাসমতি বলা যাচ্ছে না। তবে চালের গুণগতমানে কোনো পার্থক্য নেই। ফলে একদিকে এ ধানের চালের বিদেশে চাহিদা রয়েছে; অপরদিকে স্থানীয় বাজারেও এর ভাল কদর পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মাটি ও মানুষের কৃষি ডেস্ক
সুগন্ধি বাংলামতি ধান চাষ করে তার বীজ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান এস এম আতিয়ার রহমান। বাংলামতি ধান চাষে সাফল্য আসার পর তার বীজ কিনে নিতে চেয়েছিল বড় একটা বীজ কোম্পানি। কিন্তু তিনি তাতে রাজী হননি। তার ইচ্ছে ছিল বীজ কৃষকের চাষাবাদের আগ্রহের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়-ক এক জেলা থেকে আরেক জেলাতে। তার এ ইচ্ছে এখন পূরণ হতে চলেছে। এ পর্যন্ত তিনি দেশের ৫২টি জেলায় দু'তিন জন করে কৃষকের হাতে বীজ তুলে দিয়েছেন। তারা এ ধান চাষে আগ্রহী। তিন পার্বত্য জেলা, বৃহত্তর পটুয়াখালীসহ আর মাত্র ১২টি জেলায় বীজ সরবরাহ করলে দেশের ৬৪টি জেলায় ছড়িয়ে পড়বে তার ক্ষেতের বাংলামতি ধানের বীজ। কৃষকরা সংগৃহীত বীজ আগামী মৌসুমে চাষ করবেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ৫০ তম জাত হল বাংলামতি। বাংলাদেশের কৃষক ও কৃষির জন্য বাংলামতি ধান বড় ধরনের সুসংবাদ এনে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এ জাতটি উদ্ভাবনের মাধ্যমে পাল্টে দিতে চান কৃষকের ভাগ্য। এই ধান পাকিস্তান ও ভারতের বাসমতি সমমানের বলে উদ্ভাবক কৃষি বিজ্ঞানীরা দাবি করেন। সুপার ফাইন এ্যারোমেটিক (সুগন্ধি) রাইচ হিসেবে বিশ্বব্যাপী বাসমতি চালের যে জনপ্রিয়তা, সুনাম ও উচ্চমূল্য রয়েছে ঠিক সে চালই পাওয়া যাবে এই বাংলামতি ধান থেকে। পাকিস্তান ও ভারতের বাসমতির চেয়ে বাংলামতির ফলন বেশি। পার্থক্য কেবল নামে। আন্তর্জাতিক প্যাটেন্ট আইনের কারণে এ ধানকে বাসমতি বলা যাচ্ছে না। তবে চালের গুণগতমানে কোনো পার্থক্য নেই। ফলে একদিকে এ ধানের চালের বিদেশে চাহিদা রয়েছে; অপরদিকে স্থানীয় বাজারেও এর ভাল কদর পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বোরো মৌসুমে আমাদের দেশে সুগন্ধি ধানের জাত যেমন নেই, তেমনি চাষও হয় না বললেই চলে। সে ক্ষেত্রে বাংলামতি ধান (ব্রি-৫০) উদ্ভাবন এক যুগান্তকারী ঘটনা। উচ্চফলনশীল তথা আধুনিক জাতের এই ধান দেখতে অন্য যেকোনো ধানের তুলনায় লম্বা ও সরু। ধানের পেছনের অংশ তরবারির ডগার মত বাঁকা। ধানের চারা অবস্থা থেকে শুরু করে পাতা ও কাণ্ড সবুজ থাকা পর্যন্ত সুগন্ধ বেশি ছড়ায়, এমনকি পাকা ও মাড়াই পর্যন্ত।
আমাদের দেশে সুগন্ধি ধান হিসেবে কালজিরা, চিনি কানাই, ব্রি উদ্ভাবিত দুলাভোগ বা অন্য যে পাঁচ-দশটি জাত চাষ হয় তার সবই প্রায় আমন মৌসুমে এবং উত্তরাঞ্চল ভিত্তিক। আর ফলনও একর প্রতি কম হওয়ায় অনেকের এসব সুগন্ধি ধান চাষে আগ্রহ কম। বাংলামতি ধান সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা। একদিকে মৌসুম হিসেবে বোরো মৌসুমে চাষ করার সুবিধা রয়েছে অপরদিকে ফলনও বেশি। বোরো মৌসুমে আমাদের দেশে যে পরিমাণ জমিতে ধানের চাষ হয় তার মধ্যে ব্রি-২৮ চাষ হয় শতকরা ৭৪ থেকে ৭৮ ভাগ জমিতে। আর একর প্রতি উৎপাদন ৪০ থেকে ৫০ মণ। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বাংলামতি ধান চাষে এই উৎপাদন ৬০ থেকে ৭০ মণ পর্যন্ত পাওয়া যায়। এ ধানের বীজ অনুমোদনের পর ২০০৯ সালের বোরো মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষামূলক চাষের পরবতর্ী এ বছর (২০১০ সাল) গেল বোরো মৌসুমে সারা দেশের মধ্যে ৪ থেকে ৫টি জেলার মাত্র ১০ থেকে ১২ জন চাষি এ ধানের চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন। সবখানেই ফলন একর প্রতি গড় ৬০ থেকে ৭০ মণের উপরে।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মেছাঘোনা গ্রাম সংলগ্ন কার্তিকডাংগা বিলে গলদা চিংড়ি ঘেরে ব্রি-২৮ এর পরিবর্তে গত বোরো মৌসুমে বাংলামতি ধানের চাষ করেন এস এম আতিয়ার রহমান। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যা ছিল প্রথম বাংলামতি ধানের চাষ।
এস এম আতিয়ার রহমান একজন অগ্রগামী চাষি হিসেবে দারুণ উৎসাহ নিয়ে চাষ করেন বাংলামতি ধান। অপেক্ষায় থাকেন ফলাফলের জন্য। প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা নিয়ে শেষ পর্যন্ত যখন ধানে ফুল আসে তখন দেখে অভিভূত হয়ে যান তিনি। এই সেই বাসমতি সমমানের বাংলামতি ধান! একদিকে ধানের ক্ষেতের পাশে গেলে বাতাসে সুবাস অন্যদিকে ধানের নয়ন ভোলানো শোভা।
কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ থেকে ক্রপকাটিং নিয়ে সাথে সাথে মাড়াইয়ের পর হিসেব করে একর প্রতি ফলন ঘোষণা করা হয় ৭০ মণ। কৃষি কর্মকর্তা তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমি অভিভূত। ক্ষেতেই ধান মাড়াইয়ের পর অধিকাংশ বীজ নাটোর, চাপাই, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল থেকে অনেক কৃষক এসে নিয়ে গেছেন। বাদ বাকি বীজ তিনি বিভিন্ন জেলার কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করে চাষাবাদে উৎসাহিত করছেন। তিনি ধারণা পোষন করেন, দেশে-বিদেশে বাংলামতির প্রচুর চাহিদা থাকার কারণে এবং ফলন ভাল পাওয়ায় কৃষকরা এই ধান চাষ করে উপকৃত হবে।

আধুনিক পদ্ধতিতে অগ্নিনির্বাপণ : রুহুল আমিনের আবিষ্কার সাড়া ফেলেছে বিশ্বময়

আধুনিক পদ্ধতিতে অগ্নিনির্বাপণ : রুহুল আমিনের আবিষ্কার সাড়া ফেলেছে বিশ্বময়

ডালিম হোসেন
গ্রীষ্ম এলেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি, বহুতল ভবন, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বাসাবাড়িতে ঘটে থাকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। আগুনে মারা যাচ্ছে বহু মানুষ। কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। আমাদের দেশে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। দেখা গেছে, দূরে কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়। বাংলাদেশে প্রতি বছর আগুনে পুড়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে গার্মেন্ট ব্যবসায়ী সংগঠন বিজিএমইএ’র দাবি।
বাংলাদেশের এ ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সুদূর মালয়েশিয়ায় বসে চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর গ্রামের রুহুল আমিন তৈরি করেছেন অটোমেটিক অগ্নিনির্বাপণ সিস্টেম। রুহুল আমিনের দাবি, তার এ সিস্টেম ব্যবহার করে মালয়েশিয়ার বড় বড় ৮টি কোম্পানি সফলতা পেয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদরের বেগমপুর গ্রামের আবুল ফজলের ছেলে দেশে চাকরি না পেয়ে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে প্রায় ১৮ বছর আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানে প্রথমে একটি কোম্পানিতে চাকরির পাশাপাশি মেকানিক্যাল ডিপ্লোমা কোর্স করেন। এরপর ’৯৩ সালে মালয়েশিয়ার ওয়াইটেল নামে বিখ্যাত একটি কোম্পানিতে প্রজেক্ট ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন। সেখানেই তিনি ১৫ বছরের গবেষণা শেষে তৈরি করেন আগুন নেভানো এ স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম ব্যবস্থা।
সম্প্রতি রুহুল আমিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, মূলত দেশের ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করেই আমার এই স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ সিস্টেম তৈরি করা। মালয়েশিয়ার ৮টি কোম্পানির মধ্যে একটি কোম্পানিতে আগুন লাগলেও তার এ প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে সেই কোম্পানিতে মাত্র ৭ শতাংশ ক্ষতি হয় বলে দাবি করেন রুহুল আমিন। এখন ইচ্ছে তার সফল প্রযুক্তি বাংলাদেশে ব্যবহার হোক।
সমপ্রতি মালয়েশিয়া থেকে মাত্র ৩৩ দিনের ছুটিতে দেশে এসেছেন তিনি। এরই মধ্যে তিনি তার অবিষ্কার দেশে কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশ বিজিএমইএ ও বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈমুল হক আসাদুল্লাহর সঙ্গে দেখা করেছেন। ৮ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠকেও তিনি যোগ দেন। আলোচনাকালে কর্তৃপক্ষ তার অবিষ্কার কাজে লাগানোর আশ্বাস দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
রুহুল আমিন বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক প্রযুক্তির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে থাকে। এসব ক্ষতির হাত থেকে রেহায় পেতে আধুনিক এ আবিষ্কার ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। স্থাপনাগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে অটোমেটিক এ অগ্নিনির্বাপণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হলে অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে খুব অল্পসময়ের মধ্যে বাল্ব ফেটে দ্রুতগতিতে পানি বের হয়ে আগুন নিন্ত্রয়ণে আনতে সহায়ক হবে। প্রয়োজন হবে না কোনো ব্যক্তির সহযোগিতা। ফলে আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডে বড় ধরনের ক্ষতক্ষতি থেকে রেহায় পাওয়া যাবে।

Thursday, October 21, 2010

খুবিতে রোবট উদ্ভাবনে বিস্ময় সৃষ্টিকারী মুক্তা

খুবিতে রোবট উদ্ভাবনে বিস্ময় সৃষ্টিকারী মুক্তা

সোহেল রানা বীর
সভ্যতার বিকাশের সেই শুরু থেকেই নারীরা পুরুষের সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিত্সাসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এটা আবারও প্রমাণিত হলো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমপ্রতি উদ্ভাবিত রোবটে নারীর বিস্ময়কর অবদানের মাধ্যমে। এ ধরনের উদ্ভাবনে প্রথমবারের মতো ভূমিকা রেখে সত্যিই এক বিস্ময় সৃষ্টি করলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষকা শামীমা ইয়াসমিন মুক্তা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো একদল তরুণ প্রকৌশলী উদ্ভাবন করলেন মানুষের বিভিন্ন কাজ বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক কাজ করতে সক্ষম এমন এক ‘রোবটিক আর্ম’, যা মানুষের হাতের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। রোবটিক আর্ম উদ্ভাবনের পেছনে রয়েছে ৫ জন পুরুষ আর একজন নারী। রোবট উদ্ভাবনে তত্ত্বাবধায়নের মতো এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন একমাত্র নারী শামীমা ইয়াসমিন মুক্তা। এই উদ্ভাবনের দুজন তত্ত্বাবধায়ক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) ডিসিপ্লিনের প্রভাষক এস কে আলমগীর হোসেন ও প্রভাষক কাজী মাসুদুল আলম ৬ মাস পর উচ্চতর ডিগ্রির জন্য কানাডায় চলে গেলে নবীন এই শিক্ষিকা রোবট উদ্ভাবনের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে অপর তত্ত্বাবধায়ক একই ডিসিপ্লিনের প্রভাষক মো. মাসুদুর রহমানের সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শামীমা ইয়াসমিন মুক্তা খুলনা সরকারি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর ২০০৪ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) ডিসিপ্লিনে ভর্তি হন। এখান থেকে ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক কোর্স শেষ করে ২০০৯ সালের ৩ নভেম্বর একই ডিসিপ্লিনে নবীন শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি এ ডিসিপ্লিনে লেকচারার হিসেবে পাঠদান করছেন।
রোবট আবিষ্কারের মতো এ উদ্ভাবনে নিজে জড়িত থাকার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে উদ্ভাবনের একমাত্র নারী শামীমা ইয়াসমিন মুক্তা বলেন, ‘আমার খুবই ভালো লাগছে যে নারী হয়েও এ ধরনের বিরল উদ্ভাবনে পুরুষের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে পেরেছি। তাছাড়া আমরা সব সময়ই নতুন কিছু করার চেষ্টা করে থাকি। বাংলাদেশে সফটওয়ারের কাজ হলেও হার্ডওয়ারের কাজ খুব একটা হয় না। সফটওয়ারের পাশাপাশি হার্ডওয়ারের কাজেও বিশেষ ভূমিকা রাখতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশেও উন্নতমানের রোবট আবিষ্কার সম্ভব। শুধু প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা।’
এ ধরনের উদ্ভাবন তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশকে আরও একধাপ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করেন সবাই। সেই সঙ্গে সভ্যতার উন্নয়নে রোবটের মতো যেকোনো বড় ধরনের উদ্ভাবনে নারীরা সব সময় পুরুষের সহযোগী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা করতে সক্ষম হবে বলে বিশ্বাস করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবট উদ্ভাবনে ভূমিকা রাখা একমাত্র নারী শামীমা ইয়াসমিন মুক্তা। আমাদের দেশের সমাজব্যবস্থায় মুক্তার মতো দীপ্ত উদ্ভাবনে নারীদের রোল মডেলও হতে পারেন তিনি—এ প্রত্যাশা আজ কোটি কোটি বাঙালি নারীর।

Wednesday, October 20, 2010

FUEL REDUCER GENERATOR INVENTED IN KURIGRUM













CLICK THIS IMAGE FOR LARGE VIEW
Source: Daily Sangbad, 22th may

কেম্ব্রিজের অসামান্য গবেষণা সাফল্য

কেম্ব্রিজের অসামান্য গবেষণা সাফল্য

আফতাব হোসেন

গবেষণায় অত্যন্ত নাটকীয় এক অগ্রগতির ফলে এই পৃথিবীর লাখো কোটি মানুষের জীবন বদলে যেতে পারে। কেম্ব্রিজ গবেষণাগারের গবেষণায় প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, দেহে যে স্বাভাবিক অনাক্রম্যতা শক্তি বা দেহে প্রবিষ্ট জীবাণু বা দুশমনের বিরুদ্ধে যে প্রতিরক্ষা দলটি রয়েছে তা ভাইরাসজনিত সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা বা সর্দিজ্বর প্রতিরোধ করতে পারে। এ পরীক্ষায় প্রমাণিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো ঠাণ্ডা বা সর্দিজ্বরের ভাইরাস মানুষের দেহকোষের একান্ত ভেতরের স্তরে পেঁৗছে যাবার পরও দেহের অনাক্রম্যতা ব্যবস্থা তা প্রতিরোধ করতে পারে। বিষয়টি অদ্যাবধি অসম্ভব মনে করা হতো।

ব্রিটিশ পত্রিকা দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এর বিজ্ঞান সম্পাদক স্টিভ কনর বলছেন, ঘন লাল রঙের ভাইরাস দেহে অনুপ্রবেশ করার পর আমাদের দেহের রক্তপ্রবাহে প্রবাহিত হয়ে থাকে। আর সেই রক্তে থাকে অ্যান্টিবডি উৎপাদক অ্যান্টিবডি ( হলুদ বর্ণের)। অ্যান্টিবডি ভাইরাস শনাক্ত করতে পারে।

কেম্ব্রিজ গবেষণাগারের আবিষ্কার নতুন নতুন ভাইরাসবিধ্বংসী ওষুধ তৈরির দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে যা মানুষের দেহকোষের ভাইরাস ধ্বংসের স্বাভাবিক ব্যবস্থাকে আরো অনেক বেশি শক্তিশালী করে তুলতে পারে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, আগামী দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এই গবেষণালব্ধ ফলের ভিত্তিতে নতুন নতুন ওষুধের প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়ে যাবে।

গবেষকরা বলছেন, আরো অনেক ধরনের রোগব্যাধির ভাইরাসের বিরুদ্ধেও এ পদ্ধতিতে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। নন-ভাইরাস রোগ বা রোটাভাইরাস সংক্রমণজনিত উদরাময়ও এসব রোগের অন্তভর্ুক্ত থাকতে পারে। রোটাভাইরাস ডায়রিয়ায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হাজার হাজার শিশু প্রাণ হারায়।

তথ্য হলো, ভাইরাস এখনও সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী রোগ। ক্যান্সারে পৃথিবীতে যতো বেশি লোক প্রাণ হারায় তার দ্বিগুণ লোক মারা যায় এই ভাইরাসে। এর মূল কারণ হলো ভাইরাস দেহে সংক্রমণের পর গভীরে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। আর তখন দেহের যে অনাক্রম্যতা শক্তি রযেছে তা সেখানে গিয়ে কাজ করতে পারে না। কাজ করতে পারে না এমনকি অনেক শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক অথচ এসব অ্যান্টিবায়োটিক জীবাণুর বিরুদ্ধে খুবই ভালো কাজ করতে পারে।

কেম্ব্রিজের বিশ্বখ্যাত আণব জীববিদ্যা গবেষণাগারে একটি সমীক্ষাদল কার্যত প্রমাণ করেছেন যে, মানব দেহের অনাক্রম্যতা ক্ষমতা যে একটা সীমা পর্যন্ত কাজ করতে পারে বলে পাঠ্যপুস্তকে যে কথা বলা হয়েছে তা ঠিক নয়। কারণ ভাইরাসধ্বংসকারী অ্যান্টিবডি আসলে ভাইরাস দেহের কোষে প্রবেশ করে তার সাথে ঐ অ্যান্টিভাইরাস অ্যান্টিবডিও ঢুকতে পারে। আর অনুপ্রবেশকারী বিজাতীয় ভাইরাসকেও ধ্বংস করার জন্য দ্রুত সক্রিয় হতে পারে। '' রোগ অনাক্রম্যতা সম্পর্কিত বিজ্ঞানের যে কোনো পাঠ্যবই থেকে জানা যায় যে, একবার কোনো ভাইরাস দেহকোষে ঢুকে যেতে পারলে সব খেলা শেষ তখন আর কিছুই করার থাকে না কেননা কোষটি আক্রান্ত হয়ে যায়। তখন দেহের মাঝে রোগ অনাক্রম্যতার যে স্বাভাবিক ক্ষমতাটি থাকে তা কেবল কোষটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ভাইরাসজনিত রোগটি নিরাময় করতে পারে না। একথা বলছেন কেম্ব্রিজ গবেষণা টিম প্রধান লিও জেমস।

তবে মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের গবেষণাগারের সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেহের অনাক্রম্যতা ব্যবস্থায় যে অ্যান্টিবডি উৎপাদিত হয় তা হামলাকারী ভাইরাসকে শনাক্ত করে তার বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায়। আসলে এ প্রক্রিয়ায় অ্যান্টিবডি বহিরাগত ঐ ভাইরাসের ঘাড়ে চড়েই দেহকোষে প্রবেশ করে। আর একবার কোষে ঢুকতে পারলেই দেহকোষে ট্রিম২১ নামে যে স্বাভাবিক প্রোটিন থাকে তা অ্যান্টিবডিকে শনাক্ত করলে ওটা শক্তিশালী ভাইরাস ধ্বংসকারী মেশিন বা যন্ত্রে রূপান্তরিত হয় আর মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে ঐ ভাইরাসকে সেল বা দেহকোষটিকে ছিনতাই করে সেটিকে তার নিজস্ব প্রোটিনে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা অর্জনের আগেই খতম করে দেয়। '' এটা দেহকোষের জন্য সংক্রমিত হওয়ার পর তা থেকে অব্যাহতি লাভের শেষ সুযোগ নইলে কোষটির ধ্বংস হওয়া ছাড়া গতি থাকে না বলেছেন ডঃ জেমস।

সেলের তথা দেহকোষের ভেতরে যখন ভাইরাসটি ঢুকে যায় তার সাথে অ্যান্টিবডিও আঠার মতো লেগে থাকে - কোনো মতেই অ্যান্টিবডিকে ভাইরাস ঝেড়ে ফেলতে পারে না। আর সেজন্যই অ্যান্টিবডির সাথে যা লেগে থাকে অর্থাৎ ভাইরাসটি লেগে থাকলে তা বিজাতীয় হিসেবে শনাক্ত হবার পর ভেঙে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। এ হলো সবচেয়ে বড়ো সুবিধা।

এ যাবৎ ভাবা হতো যে দেহের অনাক্রম্যতা ব্যবস্থায় অ্যান্টিবডি যে কাজই করুক তা করে রক্ত কিংবা অন্য ধরনের সেলরস ইত্যাদিতে থাকা দেহকোষের একান্ত বাইরে। এখন বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন যে দেহকোষের মধ্যে আরো একটি ভেতরের অনাক্রম্যতা স্তর আছে যার ভাইরাসবিধ্বংসী ব্যবস্থাকে আরো অনেক বেশি শক্তিশালী করে তোলা যায়। এখানে একটি অতি চমৎকার বিষয় হলো প্রতিটি সংক্রমণের বেলায় যখনই কোনো ভাইরাস দেহকোষে প্রবেশ করে তখনই অ্যান্টিবড়ির জন্য সুযোগ তৈরি হয় ওটাকে বহিষ্কার করার। আর এটাই হলো দেহের অনাক্রম্যতা শক্তি সম্পর্কে এতোকালের যে ধারণা তার মোৗলিক পার্থক্য। ঠিক এ মুহূর্তে আমরা জানি টি সেল (রক্তের শ্বেতকণিকা) পেশাদার দেহরক্ষাকারী হিসেবে সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং সেরকম কোনো কিছু ধরা পড়লে সেটাকে ধ্বংস করে।

ডঃ জেমস বলছেন, এ ব্যবস্থাটা অনেকটা অতর্কিতে আক্রমণ পরিচালনার মতো। যতোবারই ভাইরাস কোষে প্রবেশ করতে চায় ততোবারই অনাক্রম্যতা ব্যবস্থার সুযোগ থাকে ঐ ভাইরাসকে বের করে দেয়ার। প্রক্রিয়াটি খুবই দ্রুত। আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে, সেলে ভাইরাস ঢোকার ২-১ ঘণ্টার মধ্যেই সেটাকে অকার্যকর করে দেয় অ্যান্টিভাইরাস।

এ সমীক্ষার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের জার্নালে। গবেষণাগারে মানুষের যে দেহকোষ কালচার করে তৈরি করা হয়েছে সেটাকে প্রাণীর দেহে প্রয়োগ করে সংখ্যাবৃদ্ধি করতে হবে যাতে তার প্রথম ক্লিনিক্যাল টেস্টটি মানুষের দেহে অনুষ্ঠিত হতে পারে।

এর এক সম্ভাবনা হলো এই যে, সর্দিঠাণ্ডা ডেকে আনে এমন অনেক জাতের ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রোটিন ট্রিম২১কে নাকের স্প্রে হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। রাইনোভাইরাসের মতো ভাইরাসগুণো সাধারণত নোরাভাইরাস সংক্রমণের কারণ যা থেকে শীতকালে সাধারণত বমির মতো রোটাভাইরাস সংক্রমণ ঘটে। এ থেকে আবার গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস বা পাকস্থলী প্রদাহের সৃষ্টি হয়।

ডঃ জেমস জানান, এভাবে দেহের সকল অ্যান্টিবডিকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে আরো সক্রিয়, আরো শক্তিশালী করে তোলা যায়। তাতে সুবিধে হবে এই যে, এটাকে বহু ভাইরাস সংক্রমণের বেলায়ও ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, আমরা এভাবে যেসব ওষুধ তৈরি করবো সেগুলো নাকের স্প্রে বা ইনহেলার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে, পিল হিসেবে সেবনের দরকার হবে না। আর এ দিয়ে ঠাণ্ডা-সর্দির চমৎকার চিকিৎসা করা যাবে। এটার সুবিধে আগেই বলা হয়েছে, সংক্রমিত ভাইরাস তার নিজের প্রোটিন তৈরি করে পাল্টা লড়ার সুযোগ পাবে না বা বেঁচে থাকতেও পারবে না।

এ গবেষণাগারের আরেক বিজ্ঞানী স্যার গ্রেগ উইন্টার বলেছেন, অ্যান্টিবডিগুলো আসলে দারুণ ক্ষমতাধর আণব সমরযন্ত্র বিশেষ। এখন দেখা যায়, তারা কোষের ভেতরে গিয়েও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে পারে। কাজেই আজকে গবেষণা যে পর্যায়ে উপস্থিত হয়েছে সেটা থেকে শুধু এটাই জানা যায়নি অ্যাটিভাইরাস কেমন করে কোথায় কাজ করে বরং তার চেয়েও আমাদের বড়ো লাভ হয়েছে অনাক্রম্যতা ও সংক্রমণ সম্পর্কে আমরা যে জ্ঞান নিয়েছিলাম তাতে রীতিমতো একটা বিপস্নব এসেছে।

সূত্র ঃ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট, যুক্তরাজ্য

[ লেখক : সাংবাদিক ]

দেখেই মেশিন তৈরি করতে পারেন বগুড়ার আমির হোসেন

দেখেই মেশিন তৈরি করতে পারেন বগুড়ার আমির হোসেন

আসাদুজ্জামান ফিরোজ
একবার চোখে দেখেই তৈরি করেন মেশিন। তাই তার আবিষ্কারের ঝোলায় যোগ হয় নিত্যনতুন সব আইটেম। তিনি আমির হোসেন। তার বাবা বগুড়া শহরের ঠিকাদারপাড়া লেনের ধলু মেকার প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ গড়ে তোলেন ১৯৪০ সালের দিকে। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তত্কালীন বগুড়ার ডিসির নির্দেশে ধলু মেকার সতর্কতামূলক সাইরেন মেশিন তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এই ধলু মেকার নিজেই হস্তচালিত লেদ মেশিন তৈরি করে বগুড়াসহ উত্তরবঙ্গে আলোচনায় আসেন। তিনি ১৯৮৮ সালের ১৩ নভেম্বরে মারা যাওয়ার পর রহিম ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের দায়িত্ব নেন ছেলে আমির হোসেন। বর্তমানে ওয়ার্কশপটি ওই এলাকায় রয়েছে। আমির হোসেনের হাতেখড়ি হয় তার বাবা ধলু মেকারের কাছে। ধলু মেকারের ৮ ছেলেমেয়ের মধ্যে আমির হোসেন চতুর্থ। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই শুরু হয় গবেষণা। প্রকৌশলী আমির হোসেন ২০০৩ সালে বুয়েট থেকে বিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ও জিটিজেড থেকে কৃষি সামগ্রী উদ্ভাবনের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। এ কাজে আমির হোসেনকে সাহায্য করেন তার দ্বিতীয় মেয়ে আসমা খানম আশা ও তৃতীয় মেয়ে তাহিয়া খানম।
আবিষ্কার : নিজের চোখে যা দেখেন অবিকল সেটিই তৈরি করার কারিগর আমির হোসেন ১৯৯১ সালে ইট ও পাথর ভাঙা মেশিন উদ্ভাবন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক তৈরি করেছেন বিভিন্ন মেশিন।
অটোব্রিকস মেশিন : ২০০৩ সালে আমির হোসেন বানিয়েছেন অটোব্রিকস তৈরি মেশিন, যা চীনের তৈরি অটোব্রিকস মেশিনের চেয়ে একটু উন্নত। এই মেশিনটি পরবর্তী সময়ে চলতি বছরে আরও আধুনিক করা হয়েছে। আগে তৈরি করা মেশিনটি বিদ্যুত্ ও স্যালো মেশিন দিয়ে চলত। এবারেরটি বিদ্যুত্ ছাড়া। মেশিনটি তৈরি করা হয়েছে ২টি স্যালো মেশিন দিয়ে। জনবল লাগবে মাত্র ২০ জন। প্রতি ঘণ্টায় ইট তৈরি হবে ১৫০০ থেকে ২০০০টি। জ্বালানি তেল লাগবে ৩ লিটার। মেশিনটি ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে। ইটের গুণগতমান বিদেশি মেশিনের মতোই। দুই সাইজের মেশিনের মধ্যে একটি মুভিং সিস্টেম রয়েছে, যা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সহজে নেয়া যাবে। দাম ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা।
জ্বালানিবিহীন গাড়ি : জ্বালানিবিহীন গাড়ি তৈরি করে আলোচনায় চলে এসেছেন আমির হোসেন। এখন ছাড়পত্রের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। ২৫০ কেজি ওজনের এ গাড়ি পরিবেশ সহায়ক এবং দেশীয় যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি। ড্রাইভারসহ ৫ জন নিয়ে এ গাড়ি ঘণ্টায় ৭০/৮০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। গাড়ি চলার সময় ব্যাটারি রিচার্জ হয়ে যাবে। গাড়িতে ব্যবহার করা হয়েছে ১২ ভোল্টের ৫টি সেকেন্ডারি সেল। ৬০ ভোল্টের ডিসি মোটর এ গাড়ি চালাবে। তেল-মবিল লাগবে না। গাড়ির দাম মাত্র আড়াই লাখ টাকা। গাড়ির মডেল করা হয়েছে হিটলার ও রাণী এলিজাবেথের ব্যবহার করা দুটি গাড়ির মডেলের আদলে। এছাড়াও নিত্যনতুন গাড়ি তৈরির গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। গবেষণায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে ১২০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন জ্বালানিবিহীন গাড়ি।
ধান কাটা মেশিন : হালকা ও শস্তা ধান কাটার মেশিন তৈরি করেছেন প্রকৌশলী আমির হোসেন। ২ ঘণ্টায় এক বিঘা জমির ধান কাটা যাবে এ মেশিন দিয়ে। খরচ হবে ২ লিটার পেট্রোল। মেশিনটির ওজন ১০/১৫ কেজি। দাম ৮/১০ হাজার টাকা। যন্ত্রটির বৈশিষ্ট্য হলো—ধানের গাছ যে অবস্থায় থাক না কেন সে অবস্থায়ই কাটা যায়। এ মেশিন আরও শস্তা ও আধুনিক করার জন্য কৃষিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সহযোগিতা চেয়েছেন আমির হোসেন। বর্তমানে সোলার পাওয়ারের সাহায্যে মেশিন চালানোর জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
অটো জৈব ও মিশ্র সার : অটো জৈব ও মিশ্র সার মেশিন তৈরি করে সারা দেশে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন আমির হোসেন। মেশিনটি শ্রেণীভেদে দাম দেড় লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। মেশিনের প্রকারভেদে সার উত্পন্ন হয় ১০০ কেজি থেকে ১ টন পর্যন্ত। এরই মধ্যে এ জৈব ও মিশ্র সার তৈরির মেশিনটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও দিনাজপুর জেলায় ব্যবহৃত হচ্ছে। সুফলও পাচ্ছেন সাধারণ কৃষকরাও।
ফিশ ফিড ও পোলট্রি ফিড : আধুনিক মানে তৈরি করেছেন ফিশ ফিড ও পোলট্রি ফিড। প্রকারভেদে এ মেশিনগুলোর মূল্য ২৫ হাজার টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে রয়েছে অটো মেশিন, যার সুফল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফিশ ও পোলট্রি ফিড ব্যবসায়ীরা ভোগ করতে শুরু করেছে।
অন্যান্য : আমির হোসেন আরও আবিষ্কার করে এরই মধ্যে বাজারজাত করেছেন অনেক মেশিন। এর মধ্যে রয়েছে রেলগাড়ি, ইটভাঙা মেশিন, সেমাই তৈরি মেশিন, গো-খাদ্য অটো মেশিন, মিক্সচার মেশিন, ভুট্টা মাড়াই ও ভাঙা মেশিন শুঁটকি মাছ, ঝিনুক খৈল ক্রাশার মেশিন, সিলিকন ভাঙা অটো মেশিন, পল্গাস্টিক পাইপ তৈরি মেশিন। এছাড়াও রয়েছে আদা, রসুন, মরিচ ও সস তৈরি অটো ক্রাশার মেশিন। আম, আনারস, টমেটো, কমলালেবু ক্রাশার মেশিন, ড্রাম সিডার চাষ ছাড়াই বীজ বপন যন্ত্র, শস্য মাড়াই যন্ত্র।
আমির হোসেনের মতামত : এতকিছু করেছি সবই নিজ উদ্যোগে। এগুলো করতে গিয়ে কখনও গচ্ছিত টাকায়, কখনও স্ত্রীর গয়না বিক্রি, কখনও ঋণ করতে হয়েছে। কিন্তু সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা বা সহযোগিতা পাইনি। এমনকি ব্যাংকও এসব গবেষণা কাজে কোনো সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি। আমি মনে করি, যারা নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে চায় তাদের জন্য সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করা উচিত। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কলয়া খনিতে বিকল মেশিনগুলো খুব কম দামে মেরামত করা সম্ভব। অথচ তা না করে কোটি কোটি টাকা দামের মেশিনগুলো খোলা আকাশের নিচে ফেলে নষ্ট করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ারও দাবি জানান তিনি। যোগাযোগ : ০১৭১৫-৩১৯৯৩৭

Tuesday, October 19, 2010

আই আর-৬৪ সাব ১ : স্বল্পমেয়াদি ও বন্যাসহিষ্ণু ধান

আই আর-৬৪ সাব ১ : স্বল্পমেয়াদি ও বন্যাসহিষ্ণু ধান

কৃষকের প্রদর্শনী মাঠে শুরু হয়েছে আই আর-৬৪ সাব ১ ধান কাটা। ৩০ দিন বয়সের চারা রোপণের মাত্র ৯০ দিনের মধ্যেই এই ধান কৃষক কাটতে পারছেন এবং হেক্টরপ্রতি ৪.৫ টন ফলন ঘরে তুলতে পারছেন। এতে তারা একদিকে যেমন স্বল্পমেয়াদি ধান হিসেবে আশ্বিন-কার্তিক মাসে মঙ্গার সময়ে ধান কাটতে পারছেন, অন্যদিকে এই ধানের জাত বন্যাসহিষ্ণু হওয়ায় বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উত্তরাঞ্চলে যেখানে বন্যায় প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হচ্ছে, সেখানে আইআর-৬৪ সাব ১ জাতের ধান চাষ করে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নাবী বন্যার হাত থেকে কৃষক রক্ষা করতে পারছে। পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি ধান হওয়ার কারণে আশ্বিন-কার্তিক মাসে এই ধান কেটে উত্তরাঞ্চলের কৃষক এবং কৃষি শ্রমিক মঙ্গার অভিশাপ থেকে রক্ষা পাচ্ছে। সেই সাথে সঠিক সময়ে অর্থাৎ কার্তিক মাসের শেষেই কৃষকরা একই জমিতে আমন ধান কাটার পর আলু, সরিষাসহ ইত্যাদি রবি ফসল করতে পারছেন এবং বেশি ফলন ও আয় নিশ্চিত করছেন।

সম্ভবত আই আর-৬৪ সাব ১ জাতটিই এখন পর্যন্ত একমাত্র উদ্ভাবিত ধানের জাত, যে জাতটিতে স্বল্পমেয়াদি এবং বন্যাসহিষ্ণু এই দু'টি গুণই বিদ্যমান। মঙ্গা নিরসনে স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের কার্যকারিতা এই মুহূর্তে একটি প্রমাণিত প্রযুক্তি। আরডিআরএস ২০০৪ সাল থেকে গবেষণা কার্যক্রম এবং ২০০৫ সাল থেকে কৃষকের মাঠে এই গবেষণার ফলাফল বাস্তবায়ন করে মঙ্গা নিরসনে স্বল্পমেয়াদি ধানের প্রযুক্তি ব্যাপক সমপ্রসারণের কাজ করছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কতর্ৃক ১৯৯৭ সালে উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৩৩, বাংলাদেশ আনবিক গবেষণা ইনস্টিটিউট কতর্ৃক ২০০৭ সনে উদ্ভাবিত বিনা ধান ৭ এবং বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ২০০৮ সালে উদ্ভাবিত বি ইউ ধান ১ জাতের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে আরডিআরএস, কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরসহ বেশ কিছু সংস্থা মঙ্গা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

আই আর-৬৪ ইরি কতর্ৃক উদ্ভাবিত একটি স্বল্পমেয়াদি ধানের জাত, যা আমাদের দেশের আবহাওয়া উপযোগী। বিভিন্ন প্রদর্শনী মাঠে দেখা গেছে, অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি ধানের মতই আই আর-৬৪ জাতের ধান ১২০-১২৪ দিনের মধ্যেই কাটা যায় এবং ফলন অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি ধানের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফলিত গবেষণা বিভাগ এবং আরডিআরএস কর্তৃক যৌথভাবে বাস্তবায়িত বিভিন্ন সময়ে প্রদর্শনীর ফলাফলেও আই আর-৬৪ ধানের ফলন হেক্টরে ৪.৫ টনের মত পাওয়া গেছে, যা স্বল্পমেয়াদি ধান হিসেবে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

ইরির এই জনপ্রিয় স্বল্পমেয়াদি ধানের জাতে সাব-১ জিন সংমিশ্রণ করার ফলে আই আর-৬৪ সাব ১ ধান গাছ এখন বন্যাসহিষ্ণুতা অর্জন করেছে। অর্থাৎ এই জাতের ধান গাছ বন্যার পানিতে ১৫ দিন পর্যন্ত ডুবে থাকলেও মরে যায় না। ২০০৯ সালে বিল ও মেলিন্ডা গেটস প্রকল্পের আওতায় আরডিআরএস এই জাতের ধান কৃষকের মাঠে সমপ্রসারণকালে দেখতে পায়, বন্যার পানিতে ১৫ দিন পর্যন্ত ডুবে থাকার পরেও কোনো ক্ষতি হয়নি।

বীজ বপনের দিন থেকে ফুল আসা পর্যন্ত সময় লাগে ৯০ থেকে ৯৫ দিন; বীজ বপনের দিন থেকে ধান পাকা পর্যন্ত সময় লাগে ১২০-১২৪ দিন; ধান গাছের উচ্চতা হয় ৯০ থেকে ৯৫ সে.মি. ধানে এমাইলোজের পরিমাণ থাকে ২২ ভাগ। আই আর ৬৪-সাব ১ ধানের চারা রোপণ করে দেখা গেছে, এই জাতটি যদি ৫ দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থাকে, তাহলে জাতটি হেক্টরে ৪.৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। যদি জাতটি ৬-১০ দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থাকে, তাহলে ৪ টনের মত ফলন দিতে পারে। যদি ১১-১৪ দিন পর্যন্ত এই জাতটি সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থাকে তাহলে জাতটি ৩.৫ টন ফলন দিতে সক্ষম। এ ছাড়াও দেখা গেছে, ১৫-১৭ দিন পর্যন্ত যদি এই জাতটি পানির নিচে থাকে, তাহলে ৩ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেখা গেছে প্রায় প্রতি বছরই আশ্বিন-কার্তিক মাসে প্রচণ্ড খরা হয়। এই সময়ে ধান গাছে কাঁচথোর বের হয়। তখন জমিতে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা না থাকলে ধান চিটা হয়ে যায়। কিন্তু আই আর-৬৪ সাব ১ ধান স্বল্পমেয়াদি হওয়ায় ভাদ্র মাসের শেষেই এই ধান গাছে কাঁচথোর বের হয়। ভাদ্র মাসের শেষে জমিতে প্রয়োজনীয় আদর্্রতা থাকে বিধায় চিটার পরিমাণও এই ধানে কম হয়। তাই আশ্বিন-কার্তিক মাসে খরা হলেও এই ধান গাছের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না, বরং সেই সময়ে বৃষ্টি না হলে এই ধান গাছের জন্য ভাল। কারণ এই সময় এই জাতের ধান পাকার সময়।

তবে এ ধানের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়ে গেছে যেমন- বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরেও জমিতে যদি প্রচুর পানি আটকে থাকে এবং ১৫ দিনের বেশি যদি ধান গাছ পানির নিচে থাকে, তাহলে ইপ্সিত ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে। যদি বন্যার পানি কর্দমাক্ত হয়, সেক্ষেত্রেও ভাল ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে। ধান গাছে ফুল আসার পর যদি বন্যার পানিতে ডুবে যায়, তাহলে ফলন পাওয়া যাবে না। পানির তাপমাত্রা যদি বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে ফলন কমে যেতে পারে।

প্রতি বছরই আশ্বিন-কার্তিক মাসে খরা হলে ধানের জমিতে প্রচুর পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়। এই পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে ধান গাছকে রক্ষা করতে কৃষককে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। যেহেতু আই আর-৬৪ সাব ১ কার্তিক মাসেই পেকে যায়, তাই পোকা-মাকড় এই ধান গাছকে তেমন ক্ষতি করার সুযোগ পায় না।

আই আর ৬৪-সাব ১ ধান চাষে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে সেগুলো হল- ১. ২৫-৩০ দিন বয়স্ক চারা লাগাতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বেশি বয়সের চারা লাগানো যাবে না; ২. ৬ ইঞ্চি ী ৬ ইঞ্চি দূরত্বে চারা লাগাতে হবে। এর চেয়ে বেশি দূরত্বে চারা লাগালে গড় ফলন কমে যেতে পারে; ৩. চারা লাগানোর ৪০ দিনের মধ্যে সমস্ত ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ শেষ করতে হবে।

উত্তরাঞ্চলে আই আর ৬৪-সাব ১ ধানের উপযোগিতা:

১. স্বল্পমেয়াদি ধান বিধায় আশ্বিন-কার্তিক মাসে মঙ্গার সময়ে কাটা যায়; ২. বন্যাসহিষ্ণু হওয়ায় বন্যায় ১৫ দিন পর্যন্ত ধান গাছ ডুবে গেলেও মরে না, এবং কাংখিত ফলন দেয়; ৩.স্বল্পমেয়াদি হওয়ার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খরাজনিত ক্ষতি থেকে ধান গাছ রক্ষা পায়; ৪. আশ্বিন-কার্তিক মাসে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব হওয়ার আগেই এই ধান কাঁটা যায়; ৫. আশ্বিন-কার্তিক মাসের খরার সময় এই জাতের ধান চাষে সম্পূরক সেচের প্রয়োজন হয় না, বরং ওই সময়ে খরা হলে ধান সময়মত পাকে।

ধান মাঝারী চিকন হওয়ার কারণে এই ধানের বাজারমূল্য বেশি, স্বল্পমেয়াদি হওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ কম, বন্যাসহিষ্ণু হওয়ায় এবং খরা হওয়ার আগেই ধান পেকে যাওয়ায় ঝুঁকিবিহীনভাবে এই ধান উৎপাদন সম্ভব, আশ্বিন-কার্তিক মাসেই এই ধান পাকে বিধায় ওই সময়ে গো-খাদ্যের জন্য খড়ের তীব্র অভাব দূর করা সম্ভব হয় ।

ড. এম জি নিয়োগী, হেড অফ এগ্রিকালচার
Daily Ittefaq, 24-10-10

বিদ্যুতের বিকল্প কী হতে পারে?

বিদ্যুতের বিকল্প কী হতে পারে?

দেশব্যাপী লোডশেডিংজনিত ভয়াবহ বিদ্যুতের ঘাটতি জনজীবন স্থবির করে তুলেছে। শিল্প-কলকারখানা মারাত্মক হুমকির মধ্যে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে কিন্তু এই মুহূর্তে বিদ্যুতের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করতে পারছে না। অথচ উন্নত দেশে বিদ্যুতের রয়েছে নানা বিকল্প। যেখানে বিকল্প এসব পদ্ধতি ব্যবহার করে বিদ্যুত্ পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হচ্ছে। কন্তু কীি হতে পারে বিদ্যুতের বিকল্প? এ নিয়ে লিখেছেন— সাদ আব্দুল ওয়ালী
আমরা প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাই অথচ বিদ্যুতের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে পারছি না। দিন দিন বিদ্যুত্ সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। বলতে গেলে, জনজীবন ক্রমে স্থবির হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক বিদ্যুত্ চাহিদার কাছাকাছিও আমরা যেতে পারছি না। অর্থাত্ যেমন বিদ্যুত্ উত্পাদনের কোনো লক্ষ্যমাত্রাও নেই, তেমনি নেই কোনো অগ্রগতি। সরকারেরও এ ব্যাপারে নেই কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা। বিদ্যুতের এই চরম সঙ্কটে দেশবাসী উত্কণ্ঠিত—কীভাবে মিলবে এর সুষ্ঠু সমাধান। তবে বিদ্যুতেরও রয়েছে বিকল্প। কিন্তু তা কী হতে পারে?
বিকল্প শক্তির উত্স বিদ্যুতের বিকল্প শক্তির উত্স খোঁজা হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, সমগ্র বিশ্বে এ তত্পরতা বেড়ে চলেছে। তবে নবায়নযোগ্য শক্তিকে কাজে লাগানোর প্রয়াস অগ্রগণ্য। উন্নত দেশসহ উন্নয়নশীল দেশেও বিকল্প শক্তির প্রসারে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব বিকল্প শক্তি যেমন—সোলার প্ল্যান্ট, উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট, পারমাণবিক শক্তি, ভূ-উত্তাপ শক্তি, সাগরের তাপশক্তির রূপান্তর উল্লেখযোগ্য। সৌর বিদ্যুত্-সোলার প্ল্যান্ট সোলার পাওয়ার একটি নবায়নযোগ্য উত্স। ফলে এখানে বিকল্প বিদ্যুত্ হিসেবে সোলার প্ল্যান্ট কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে পারবে। বাংলাদেশে বছরে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ দিন সূর্যালোক থাকে। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ কিলোওয়াট ঘণ্টা শক্তি এ দেশের প্রতি বর্গমিটার জমিতে আছড়ে পড়ছে। আর ভূপতিত এই সৌরশক্তিকে সঠিকভাবে বিদ্যুত্শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারলে বাংলাদেশের বিদ্যুত্ চাহিদার একটা বড় অংশ মিটিয়ে ফেলা সম্ভব। একটি সোলার প্ল্যান্টে প্রাথমিক বিনিয়োগ অনেক বেশি মনে হলেও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ন্যূনতম কিছু খরচ ছাড়া আর তেমন খরচ হয় না। এরজন্য মাসিক কোনো বিল দিতে হচ্ছে না। গরমকালে তিন মাসে বিদ্যুত্ ঘাটতি অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। লক্ষ্য করার বিষয়, সৌর বিদ্যুতের পিক সময় হচ্ছে গরমকাল। অর্থাত্ গরমকালে সূর্যের বিকিরণ হয় সর্বোচ্চ। কাজেই আমাদের দেশে সৌরবিদ্যুেক যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব। এই সোলার প্ল্যান্টের সবচেয়ে বড় বাধা এর প্রাথমিক বিনিয়োগ। সে ক্ষেত্রে এর ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে একসঙ্গে অনেক প্ল্যান্ট স্থাপনে এবং স্থানীয় মার্কেটে এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রগুলো তৈরির মাধ্যমে এ বিনিয়োগ কমে যেতে পারে অনেকাংশেই।
কারা ব্যবহার করছেন সৌরবিদ্যুত্ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সৌরবিদ্যুত্ নিয়ে তাদের গবেষণা ও প্রসার অব্যাহত রেখেছে। সাধারণত আমাদের দেশের যেসব এলাকায় অর্থাত্ প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে বিদ্যুত্ এখনও পৌঁছেনি, সেখানে সৌরশক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে প্রায় ৪০ লাখের মতো মানুষ সৌরবিদ্যুত্ ব্যবহার করছে। এসব এলাকার সচ্ছল পরিবারের মানুষ এ প্রযুক্তির সুবিধা নিচ্ছে। ভারতে সৌরশক্তিকে ব্যবহার করে বিদ্যুত্ উত্পাদন করা হচ্ছে এবং সেখানে ভবিষ্যতের জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপকভাবে বিদ্যুত্ উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, রাজস্থানে এ সৌরবিদ্যুত্ খুবই সম্ভাবনাময়। নেপালেও সৌরবিদ্যুত্ উত্পাদিত হচ্ছে।
বায়ুশক্তিচালিত বিদ্যুত্-উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট বাতাসের শক্তিকে একটি সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুত্ উত্পাদন করা সম্ভব। আর তা করা যায় উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের দ্বারা। দেশের সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় ১০০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনে উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট বা বায়ুশক্তিচালিত বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এটিও একটি নবায়নযোগ্য শক্তির উত্স। এটি বিদ্যুত্ উত্পাদনের সহায়ক হিসেবে কাজে লাগতে পারে। বায়ুশক্তিচালিত টারবাইন দ্বারা যথেষ্ট বিদ্যুত্ উত্পাদন করা সম্ভব। বিভিন্ন দেশে এ প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। বাংলাদেশে গত দুই বছর আগে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তা হচ্ছে পিডিবির ব্যবস্থাপনায় কুতুবদিয়ায় পাইলট প্রকল্পের অধীনে একটি উইন্ডমিল তৈরি করা হয়েছিল, যার উত্পাদন ক্ষমতা ছিল এক মেগাওয়াট। সমুদ্রের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অফশোর উইন্ডমিল বানানো এবং রক্ষণাবেক্ষণ ভূমিতে বানানো উইন্ডমিলের চেয়ে ব্যয়বহুল হলেও এটি হবে জোরালো এবং সব সময় বাতাসের উত্স থাকায় উত্পাদন বেড়ে যাবে অনেকাংশে। তা ছাড়া এ ধরনের উইন্ডমিল আকারে বড় হবে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ডেনমার্ক, হল্যান্ড এ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে শক্তি ও বিদ্যুত্ উত্পাদনের দিক থেকে অনেক অগ্রসরমান। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো যেমন—নেপাল ও ভারতে এ ধরনের উইন্ডমিল স্থাপন করা হচ্ছে।
ভারত ও নেপালে বায়ুশক্তিচালিত বিদ্যুত্ ভারতে বায়ুশক্তি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০১২ সাল নাগাদ ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। উজানা গেছে, নেপাল খুব শিগগিরই নবায়নযোগ্য শক্তির একটি উত্স হিসেবে বায়ুশক্তি ব্যবহার করতে যাচ্ছে। এ জন্য তারা একটি জাতীয় পলিসির খসড়াও চূড়ান্ত করেছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যুত্ উত্পাদনে বাণিজ্যিক টারবাইন স্থাপন করা। এতে একটি পাইলট স্কিমের আওতায় ৫০০ কিলোওয়াটের অধিক শক্তি জেনারেট করতে পারবে। সোলার প্ল্যান্ট অপেক্ষা এটি একটি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি। তা ছাড়া টারবাইন স্থাপনের জন্য স্থানীয় মার্কেট থেকে এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রাদি পাওয়া যাবে। পারমাণবিক শক্তি পারমাণবিক শক্তি দ্বারা বিদ্যুত্ উত্পাদন করা যেতে পারে। অবশ্য বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করছে। একটি ছোট আকারের পরমাণু কেন্দ্র থেকে অসম্ভব পরিমাণে শক্তি উত্পাদন করা সম্ভব। এ পারমাণবিক শক্তি বিদ্যুত্ উত্পাদনের একটি সহায়ক সমাধান হতে পারে। তবে এ ধরনের বিদ্যুত্ উত্পাদনে বড় বাধা হচ্ছে এর ক্ষতিকর বর্জ্য এবং ব্যয়বহুল উত্পাদন ব্যয়।
জিওথার্মাল বা ভূ-উত্তাপ শক্তি শীতপ্রধান দেশে এ ধরনের শক্তি কাজে লাগানোর প্রয়াস লক্ষণীয়। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাতে যে শক্তি পরিলক্ষিত হয় তার চেয়েও কয়েকগুণ শক্তি ভূপৃষ্ঠের নিচে সংরক্ষিত রয়েছে। এই ভূ-উত্তাপ ব্যবহার করে শীতপ্রধান দেশে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট উষ্ণ রাখাসহ বিদ্যুত্ উত্পাদনের কথা জোরেসোরে উচ্চারিত হচ্ছে। এ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সারা বিশ্বে উত্পাদিত প্রায় আট হাজার মেগাওয়াট জিওথার্মাল বা ভূ-উত্তাপ শক্তির মধ্যে আমেরিকাতে প্রায় দুই হাজার ৮শ মেগাওয়াট শক্তি উত্পাদিত হচ্ছে। এটি ব্যয়বহুল প্রজেক্ট।
সাগরের তাপশক্তির রূপান্তর সাগরের পানিতে ওপরে এক রূপ আর নিচের দিকের পানিতে আরেক রূপ। সূর্যের আলোয় ওপরের পানি ক্রমে উষ্ণ হয় এবং নিচের দিকের পানি থাকে শীতল। অল্প তাপে ফুটতে থাকে এমন তরল গ্যাস ব্যবহার করে সাগরের ওপরের দিকের পানি থেকে তাপ সংগ্রহ করে বিশেষ প্ল্যান্টের সহায়তায় টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদন করা যায়। আবার এ তরল গ্যাসকে সাগরের গভীরে পাঠিয়ে পানি শীতল করা সম্ভব। এর মাধ্যমে কয়েকগুণ বেশি বিদ্যুত্ উত্পাদন করা যেতে পারে।
করণীয় যা হতে পারে আমাদের দেশে সৌরবিদ্যুত্ প্রকল্প শুরু হয়েছিল প্রথমে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে। কিন্তু আজ আমাদের জাতীয় বিদ্যুত্ ব্যবস্থার যে অবনতি তাতে সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনাকে স্তিমিত রাখা মোটেও যুক্তিসঙ্গত হবে না। বরং এ প্রযুক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে সঠিক পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের। এর মাধ্যমে আমরা বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে পারব নিঃসন্দেহে। শহরে বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুত্ প্ল্যান্ট স্থাপন করা যেতে পারে। সমপ্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সৌরবিদ্যুত্ প্রকল্প চালু করা হয়েছে, যা একটি শুভ উদ্যোগ হিসেবে চিহিত। ব্যক্তিগত উদ্যোগে যাতে এ প্রযুক্তি প্রসার লাভ করতে পারে সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুতের বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কমিটি বিকল্প শক্তি হিসেবে সৌর, বায়ু এবং পানি বিদ্যুত্ উত্পাদনের সুপারিশ করেছেন। দেশে উত্পাদিত বিদ্যুতের শতকরা ৮৬ ভাগ উত্পন্ন হয় গ্যাসচালিত বিদ্যুেকন্দ্র থেকে। আর বাকি বিদ্যুত্ উত্পন্ন হয় তরল জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে। সামান্য পরিমাণ বিদ্যুত্ উত্পন্ন হয় সৌরশক্তি থেকে। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। আরও অধিক পরিমাণে সৌরবিদ্যুত্ উত্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া বায়ুশক্তি বিদ্যুত্ উত্পাদনের একটি নির্ভরযোগ্য উত্স হতে পারে। বর্তমান সরকার পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের কথা চিন্তাভাবনা করছে। এ শক্তির দ্বারা বিকল্প বিদ্যুত্ উত্পাদনের একটি পদক্ষেপ নিতে পারে এ সরকার। বিদ্যুতের বিকল্প নবায়নযোগ্য কী কী শক্তি কাজে আসতে পারে তা যাচাই-বাছাই ও পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্তে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় বিদ্যুত্ একটি অতীব চাহিদাসম্পন্ন উপকরণ। বিদ্যুত্ ব্যবস্থার সঠিক প্রাপ্তি সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের জীবনযাত্রা, শিল্প, কলকারখানা, অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রে যে অচল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে তা থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় থাকবে না। কাজেই আমাদের যেমন বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়াতে হবে, তেমনি প্রচলিত এই বিদ্যুত্ ব্যবস্থার বিকল্প কী হতে পারে সে ব্যাপারে ভেবে শিগগিরই একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
ইমেইল: walisearch@yahoo.com

দুগ্ধ খামারিদের দারিদ্র্য জয়

দুগ্ধ খামারিদের দারিদ্র্য জয়

সিরাজুল ইসলাম
সঠিক পরিকল্পনা, কাজের প্রতি আন্তরিক আর সততা থাকলে যে অসহায়তার শৃঙ্খলে কাউকে বেঁধে রাখা যায় না—সেটাই প্রমাণ করেছে দুগ্ধ খামার গড়ে তুলে খোকসা-কুমারখালীর পাঁচ শতাধিক বেকার যুবক। এসব দুগ্ধ খামারকে কেন্দ্র করে কুমারখালীতে গড়ে উঠেছে বৃহত্ শিলাইদহ ডেইরি ফার্ম। এখানকার ফার্মের প্রক্রিয়াজাত দুধ প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। খোকসার এক্তারপুর গ্রামের শাহাদত আলীর ১০টি গাভী প্রতিনিয়ত প্রায় এক মণ দুধ দিচ্ছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশার এক্তারপুর শাখার ম্যানেজারের পরামর্শ ও অর্থঋণ সহায়তায় চলতি বছরে আরও পাঁচটি গাভী কিনে আধুনিক সুবিধাসংবলিত দুগ্ধ খামার গড়ে তুলেছেন। গবাদি পশুর জাত বিচার, ওষুধ, পরিবেশ ও ফার্ম আবাদ পদ্ধতি সম্পর্কেও রয়েছে তার বেশ জ্ঞান। বর্তমানে তার দুগ্ধ খামারে ১৫টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে উন্নতজাতের পাঁচটি। গোবর থেকে তৈরি জৈব সার ও জ্বালানি থেকেও মাসে প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকা আয় হয় বলে শাহাদত জানান। তার দুগ্ধ খামারটি এলাকায় আত্মকর্ম সংস্থানের একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। খোকসার পাইকপাড়া গ্রামের হাসিনা বেগমও দুগ্ধ খামার করে সংসারে সুখ ও সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন। একসময় অভাব-অনটন ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী। তবুও স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে ভোলেন না তিনি। খুঁজতে থাকেন কোনো অবলম্বন। এরকম দুর্বিষহ জীবনযাপনকালে তার সহায়তায় এগিয়ে আসে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশা। ওই সংস্থা থেকে প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুটি গাভী কিনে শুরু করেন পালন। এরপর হাসিনাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে হাসিনার দুগ্ধ খামারে গাভীর সংখ্যা আটটি। খোকসা-কুমারখালীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা-গড়াই নদীর পাড়ের ২০ গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক যুবক আশা’র ঋণ সহায়তায় গড়ে তুলেছে দুগ্ধ খামার। মাত্র এক দশকের ব্যবধানে বেশ বদলে গেছে এই দুই উপজেলার আর্থ-সামাজিক অবস্থার চালচিত্র। এখানকার জনসংখ্যার প্রায় ১৫ ভাগ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুগ্ধ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কুমারখালীর দইরামপুর, হাশিমপুর, কালোয়া ও কয়া এলাকার প্রতিটি ঘরেই রয়েছে দুগ্ধ খামার। খাঁটি দুধ থেকে তৈরি দইয়েরও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। ১৯৯৯ সালে চাকরির পেছনে হন্যে হয়ে ঘোরা হতাশ শিক্ষিত যুবক রিপন এগিয়ে আসেন দুগ্ধ খামার স্থাপনে। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশা। তার খামারে পাঁচ কর্মচারীকে প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা বেতন ও অন্যান্য খরচ বাদে বছরে দুধ বিক্রির টাকার লাভ পায় প্রায় দেড় লাখ টাকা বলে তিনি জানান। আশা সংস্থা দুগ্ধ খামারিদের ঋণ সহায়তা দিতে শুরু করেছে আলাদা রকমের প্রকল্প। ফলে ইচ্ছে করলে যেকোনো যুবকই আশার ঋণ সহায়তা এবং তাদের পরামর্শে দুগ্ধ খামার গড়ে তুলতে পারে। দুগ্ধ খামারি আ. ওহাব বলেন, ‘আসলে আমরা কেউ অভাবী নই; নিজের উদ্যমতা, পরিশ্রম আর মেধাকে ঠিকমত কাজে লাগাতে পারলে অভাব কখনোই কাছে আসতে পারে না।’