Friday, October 22, 2010

মরিচের সাথে ভুট্টা চাষ

মরিচের সাথে ভুট্টা চাষ

বাংলাদেশে ভুট্টার উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট মরিচের সাথে সাথী ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এই প্রযুক্তিতে দেশের বহুল ব্যবহূত এবং গুরুত্বপূর্ণ ফসল হিসেবে মরিচকে প্রাধান্য দিয়ে এর সঙ্গে কিছু পরিমাণে ভুট্টার আবাদ করা হয় এমনভাবে যেন মরিচ উৎপাদনে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। এতে কৃষক তার মরিচ শস্যের সাথে ভুট্টা বোনাস হিসেবে পেয়ে থাকে, অপরদিকে বাড়তি ভুট্টার উৎপাদনের জন্য কৃষককে জমিতে অতিরিক্ত কোনো সার দিতে হয় না।

স্থান নির্বাচন ও চাষের মৌসুম: মরিচ ও ভুট্টা উভয়ের জন্য পানি জমে থাকে না- এমন উঁচু উন্মুক্ত ও আলো বাতাসময় জায়গা নির্বাচন করতে হবে। মাটি সাধারণত দো-অাঁশ এঁটেল দো-অাঁশ,

পলি দো-অাঁশ কিংবা বেলে দো-অাঁশ হলে সবচেয়ে ভাল হয়। সাধারণত মধ্যে কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ পর্যন্ত সময়কালে মরিচের চারা রোপণ ও ভুট্টা বীজ বোনার সঠিক সময়। অবশ্য এর পরেও এই ফসলের চাষ করা যেতে পারে। বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত মরিচের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগই হয় রবি মোৗসুমে।

জাত ও মরিচের চারা তৈরি: ১. মরিচের যেকোনো স্থানীয় বাণিজ্যিক জাত হলেও চলে। তবে শুকনো মরিচ হিসেবে বিক্রি করা যায় এমন জাতের মরিচই এই প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজন। ২. ভুট্টা: ভুট্টার জাত যেমন- খই ভুট্টা, মোহর, বর্ণালী, সাভার-১ সাদাফ ইত্যাদি উলেস্নখযোগ্য।

মরিচের বীজ সরাসরি মাঠে বোনা যায়, আবার বীজতলায় চারা তৈরি করে তা মাঠে রোপণ করা যায়। চারা রোপণ করাই উত্তম। তাতে মাঠে চারা রোপণের আগ পর্যন্ত সময়টা পূর্ববতর্ী ফসল উৎপাদনের জন্য পাওয়া যায়। ভুট্টার বীজ সরাসরি

বপন করতে হয়।

মরিচ ও ভুট্টার রোপণ: মরিচের চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেমি (প্রায় ২০ ইঞ্চি) বা সারিতে এক চারা থেকে আরেক চারার দূরত্ব হবে ৩০ সেমি (১২ ইঞ্চি বা ১ ফুট)।

ভুট্টা রোপণের দূরত্ব: প্রতি দুই সারি মরিচের পর পরবর্তী দুই সারির মাঝখান দিয়ে এক সারি ভুট্টার গাছ থাকবে।

সারের পরিমাণ:মরিচ ও ভুট্টার জন্য সারের পরিমাণ প্রায় এক। সারের পরিমাণ হল- ইউরিয়া প্রতি হেক্টরে ১৭৫ কেজি, এক একরে ৭০ কেজি এবং প্রতি শতকে ৭০০ গ্রাম। টিএসটি প্রতি হেক্টরে ১৩৫ কেজি, এক একরে ৫০ কেজি এবং প্রতি শতকে ৫৪০ গ্রাম। এমপি/পটাশ প্রতি হেক্টরে ৭৫ কেজি, এক একরে ৩০ কেজি এবং প্রতি শতকে ৩০০ গ্রাম।

পরিচর্যা: চারা রোপণ ও বীজ বপনের পরে মাটিতে যদি রস না থাকে তাহলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। রোপণের প্রায় এক মাস পরে মাঠে একবার ভালভাবে পানি সেচের পর, ১৫ দিন পর পর দুই বা তিনবার সেচের প্রয়োজন হতে পারে।

আগাছা দমন ও মালাচিং: চারা রোপণ ও বীজ বপনের পরবর্তী দেড় মাস আগাছা দমন করা খুবই জরুরি। এ জন্য প্রয়োজনে এক থেকে তিনবার নিড়ানী দেওয়া যেতে পারে।

পোকা-মাকড় রোগ বালাই: মরিচের রোগের মধ্যে ডাইব্যাক উলেস্নখযোগ্য। এই রোগের শুরুতে শাখার আগা মরে যায়। পরে সেটা নিচের দিকে নামতে থাকে। শেষে গাছ মরে যায়। ফাংগাস বা ছত্রাকজনিত এই রোগে বোর্দো মিকচার বা অন্য কোনো ছত্রাক দমনকারী ওষুধ ছিটাতে হবে। এছাড়া সফট রট বা নরম পচা রোগও গাছের ক্ষতি করে। মরিচের বিভিন্ন ক্ষতিকারক পোকার মধ্যে কাটওয়ার্ম বা কাটুই পোকা অন্যতম। এটি চারা অবস্থায় গাছ কেটে ফেলে। এর প্রতি কৃষককে কড়া নজর দিতে হবে।

ভুট্টা: ভুট্টার রোগ বালাইর মধ্যে লিফ ব্র্যাইট বা পাতার মড়ক বা শীষ পচা ও মিলডিউ রোগ বিশেষ উলেস্নখযোগ্য। এসব রোগের জন্য আগেই প্রতি সাড়ে ১২ লিটার পানিতে ২ গ্রাম কিউপ্রাভিট মিশিয়ে সপ্রে করতে হবে। আর ভুট্টার শত্রু মাজরা পোকা উলেস্নখযোগ্য। এই পোকা গাছের কচি পাতার ভেতরে প্রবেশ করে খেতে থাকে। উপযুক্ত কীটনাশক ওষুধ ছিটিয়ে এই পোকা দমন করা যেতে পারে।

মরিচ ফসল সংগ্রহ: মরিচ কাঁচা পাকা দুভাবেই গাছ থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। কাঁচা অবস্থায় মরিচ তুলতে হবে যখন তা বতি হবে বা বতি হতে যাচ্ছে এমন অবস্থায়। পাকা মরিচের বেলায় তা তুলতে হবে একটু লালচে বর্ণ হয়েছে এমন সময়। সাধারণত মাঠ থেকে হেক্টরপ্রতি মোট ৪ থেকে ৬ টন পাকা মরিচ সংগ্রহ করা হয়। পরে এই মরিচ রোদে শুকিয়ে সংগ্রহ করা হয়।

ভুট্টা সংগ্রহ: ভুট্টাও কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত কাঁচা অবস্থায় তোলা হয় সিদ্ধ করে বা পুড়িয়ে খাওয়ার জন্য। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভুট্টা পাকার পরই ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা ভাল।

কৃষিবিদ বকুল হাসান খান

No comments:

Post a Comment