Friday, October 8, 2010

কুষ্টিয়ায় কপি চাষে বিপ্লব

কুষ্টিয়ায় কপি চাষে বিপ্লব

জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল, মিরপুর (কুষ্টিয়া)
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের গোলাপনগর, ফকিরাবাদ ও ক্ষেমিরদিয়াড় গ্রামের কৃষকরা দীর্ঘদিন তাদের জমিতে সারা বছর আখ চাষ করতেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তারা তাদের উত্পাদিত আখের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলেন। পাটের মতো আখেরও একই অবস্থা হওয়ার কারণে কৃষকরা জমিতে তা আবাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর থেকে তারা তাদের জমিতে কপি চাষ শুরু করেন এবং লাভবান হন। লাভবান হওয়ার পর এ বছর অনেকটা প্রস্তুতি নিয়েই কপি চাষ করেছেন। শীত শুরুর আগেই কপি বিক্রি করে তারা যথেষ্ট লাভবান হচ্ছেন। মোকারিমপুর ইউনিয়নে পাশাপাশি তিনটি গ্রাম গোলাপনগর, ফকিরাবাদ ও ক্ষেমিরদিয়াড়ে ঢুকলেই চোখে পড়ে সবুজের সমারোহ। মাঠের পর মাঠ কপির ক্ষেত। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে সবুজ পাতার মধ্যে ফুটে আছে সাদা রংয়ের এক থোকা ফুলকপি। কৃষকরা ক্ষেত থেকে সেই কপি তুলছেন। কেউ কেউ কপির পাতা ছাঁটা, ঝুড়ি সাজানো ও বস্তা সেলাই কাজে ব্যস্ত। কপির ঝুড়ি-বস্তাগুলো ট্রাকভর্তি হয়ে দূর-দূরান্তে চলে যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ভেড়ামারা অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল খালেক জানান, ভেড়ামারায় এবার তিন হাজার বিঘা জমিতে কপি চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি কপি চাষ হয়েছে মোকারিমপুর ইউনিয়নের ওই তিন গ্রামে। গ্রামগুলোর প্রায় পাঁচশ’ চাষী এবার কপির আবাদ করেছেন। মোকারিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেনজির আহমেদ বেনু জানালেন, কপিগুলো শুধু আশপাশের বাজারেই বিক্রি হচ্ছে না। এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ টন কপি দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে পাট, তামাক ও আখ চাষে অভ্যস্ত কৃষকরা হঠাত্ করে কপি চাষ শুরু করলেন কেন, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় কৃষকরা জানান কপি চাষের নেপথ্য কাহিনী। ২০০৫ সালে গোলাপনগর গ্রামের শিক্ষিত যুবক কবির আহমেদ বাবু মাত্র দুই বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের কপি চাষ করেন। প্রথম বছরেই তিনি সফল হন। তাকে অনুসরণ করেন ওই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম সবুজ, আরাফাত হোসেন, মেহেরুল আলম নামের আরও কয়েক যুবক। ২০০৬ সালে তারাও বাবুর মতো কপির আবাদ করে লাভবান হন। অন্য ফসল আবাদ করে এক বছরে যে লাভ হয়, সে তুলনায় মাত্র তিন মাসে কপি চাষ করে তার থেকে অনেক বেশি লাভ হয়। গ্রামের যুবকদের দেখাদেখি অন্য কৃষকরাও কপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। বাবু বলেন, সৌদি আরব থেকে ফিরে আসার পর চাকরির পেছনে না ছুটে সবজি আবাদের সিদ্ধান্ত নিই। উন্নতজাতের কপি বীজ সংগ্রহ ও চারা রোপণ করি। প্রথম বছরই প্রচুর লাভ হয়। মাত্র তিন মাসে কপি আবাদে আমার লাভ দেখে গ্রামের কিছু আগ্রহী যুবকসহ কৃষকরা কপি চাষে অনুপ্রাণিত হন। তারা সবাই এ বছর কপির আবাদ করেছেন। বাবু আরও বলেন, এক বিঘা জমিতে কপির উত্পাদন খরচ ২০ হাজার টাকা, কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায়।
গোলাপনগর, ফকিরাবাদ ও ক্ষেমিরদিয়াড় গ্রামের কপি চাষীরা বলেন, চলতি বছর জুলাই মাসের মাঝামাঝি তারা বীজতলা তৈরি করেছিলেন। এক মাস পর বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে জমিতে লাগান। অধিকাংশ কৃষক হোয়াইট শর্ট, হোয়াইট এভারেস্ট (জাপান) জাতের কপির চারা লাগান। সঠিক পরিচর্যার পর গত অক্টোবর মাসের শেষ দিকে তারা ক্ষেত থেকে কপি তোলা শুরু করেন। প্রথম দিকে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে কপি বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে। চাষীরা আরও বলেন, কপি চাষ করে তারা এখন লাভবান হচ্ছেন। তবে কপির আবাদ করতে গিয়ে তারা সার সঙ্কটে পড়েছেন। জমিতে যে পরিমাণ সার দেয়া দরকার ছিল, সে পরিমাণ সার তারা দিতে পারেননি। আগামীবার কপি চাষের শুরুতেই পর্যাপ্ত সার সরবরাহ করার দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, ভেড়ামারায় এ বছর এত বেশি কপির আবাদ হবে আমাদের ধারণা ছিল না। তারপরও আমরা কৃষকদের পরিমানমত সার দেয়ার চেষ্টা করেছি। কপি চাষে কৃষকদের আগ্রহ দেখে আমরা আগামী বছর থেকে ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে কপি চাষীদের সার দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।

No comments:

Post a Comment