দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে বগুড়ার সবজি
আসাদুজ্জামান ফিরোজ বগুড়া ও আবুল কালাম আজাদ শাজাহানপুর
সমন্বিত পদ্ধতিতে উত্পাদন করে এ দেশের সবজির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন বগুড়ার চাষীরা। জেলায় প্রতিবছর একই জমিতে ২-৩ জাতের সবজি চাষ করছেন তারা। আসন্ন শীতের মৌসুমে একই জমিতে পাঁচ জাতের সবজি চাষ এখন লক্ষণীয় বিষয়। এখন সবজি ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত দিন পার করছেন জেলার চাষীরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, বগুড়ায় প্রতিবছর ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে চলছে সমন্বিত পদ্ধতিতে সবজি চাষ। এ জমিতে বছরে উত্পাদিত হয় ৪ লাখ ২৫ হাজার টন সবজি।
সবচেয়ে বেশি উত্পাদন হয় শীত মৌসুমে। এ মৌসুমে ২ লাখ ২৫ হাজার টন সবজি উত্পাদন হয়। উত্পাদিত সবজির মধ্যে ২ লাখ ৪০ হাজার টন স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে। বাকি ১ লাখ ৮৪ হাজার টন রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে সরবরাহ হচ্ছে। প্রায় ৪২৫ কোটি টাকার সবজি উত্পাদন হয়। এসব সবজি বিক্রি করে জেলার কৃষকরা প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় করেন।
বগুড়া কৃষিপ্রধান অঞ্চল হিসেবে খ্যাত নবগঠিত শাজাহানপুর উপজেলা। উপজেলার চোপিনগর ইউনিয়নের কামাড়পাড়ার সবজিচাষী গোলাম রব্বানীর কয়েক শতাংশ জমিতে চাষ করা হয়েছে পুল পেঁয়াজ, পালংশাক, হাইব্রিড মরিচ চারা, পটোলের চারা ও রাঁধুনি পাতা। গোলাম রব্বানী বলেন, গত আশ্বিনের শেষ সপ্তাহে সবজি চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করেন তিনি। জমিতে পালংশাকের বীজ, রাঁধুনির বীজ এবং বীজ পেঁয়াজ বোনা হয়। এর মধ্যে উত্পাদিত পালংশাক ও রাঁধুনি পাতা চলতি কার্তিকের ১২ তারিখে এক দফা বাজারে বিক্রি করেছেন তিনি। জমির খালি অংশে হাইব্রিড মরিচ ও পটোলের চারা লাগিয়েছেন। চলতি মাসেই পালং ও রাঁধুনি আরও এক দফা বাজারে বিক্রি হয়ে জমিতে মরিচ ও পটোল চারা থাকবে। সেই সঙ্গে ধনিয়া বীজ বোনা হবে। আগামী অগ্রহায়ণে বাজারে বিক্রি হবে ধনিয়া পাতা ও মরিচ। পরে এক মাসের মধ্যে পটোলও উত্পাদন হবে। বছর শেষে এক লাখ টাকা আয় হয় উত্পাদিত সবজি বিক্রি করে। এভাবে সারাবছর জেলায় চলে চাষীদের সমন্বিত পদ্ধতিতে সবজি চাষ। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে চাষী ও নার্সারি মালিকরা সমন্বয় করে চলেন। সবজিচাষীদের বীজ ও চারা সরবারহ করে থাকেন সবজি নার্সারি মালিকরা। শাজাহানপুরের সবজিচাষী এরশাদুল, ইমরান হোসেন, লালু আকন্দ বলেন, দুবলাগাড়ী বন্দরের জিতু বীজ ভাণ্ডার ও নার্সারি থেকে উন্নত হাইব্রিড জাতের ধনিয়া, রাঁধুনি, পালংশাখের বীজ ও হাইব্রিড মরিচ চারা সংগ্রহ করেছেন তারা। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি অধিদফতরের লোকজন মাঠপর্যায়ে কৃষকদের চাষাবাদ পরিদর্শন করেন না। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বীজ ও কীটনাশক কোম্পানির পরামর্শের জন্য তারা হাজির হন। কৃষকরা বলেন, সবজি চাষে পরিচর্যার এতোটাই চাপ থাকে, জেলা কিংবা উপজেলা কৃষি অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে ওঠে না। অথচ প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিদর্শনের জন্য একজন করে সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। মাঝেমধ্যে সবজিতে মড়ক দেখা দিলে সবজিচাষীদের ক্ষতির শিকার হতে হয়। তারপরও অর্থনৈতিনক উন্নয়নে সবজি চাষ করে চলছেন কৃষকরা। শত শত চাষী উত্পাদিত সবজি বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে এনে তুলছেন স্থানীয় বাজারগুলোতে।
স্থানীয় বাজার থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সবজি কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছেন। বগুড়া সদর, মহাস্থান, মোকামতলা, শিবগঞ্জ, ধুনট, শাজাহানপুর, শেরপুর, গাবতলীসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে গড়ে প্রতিদিন ৫০ ট্রাক করে সবজি চালান হচ্ছে বাইরের জেলাগুলোতে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করছেন এ জেলার চাষীরা। কৃষকরা ভোর থেকেই ছুটে যান এসব সবজি বাজারে। দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। বাইরের জেলা থেকেও ব্যবসায়ীরা এসে ভিড় জমাচ্ছেন এসব বাজারে। ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, ঝিনাইদহসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। সবজিবাজার ঘিরে কর্মমুখর থাকেন শত শত শ্রমিক, গ্রামের মহিলারা। জমি থেকে সবজি সংগ্রহ, পরিবহন, বাছাই, বস্তায় ভরা ও ট্রাক বোঝাই করার কাজে শত শত মহিলাসহ সব শ্রমিক রাত-দিন ব্যস্ত সময় কাটান।
শাজাহানপুর উপজেলার দুবলাগাড়ী হাটের ইজারাদার সাজু মিয়া বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মহাস্থানগড় বাজারে চলে শীতের সবজির বেচাকেনা। শুরুতে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ট্রাক সবজি সরবরাহ হচ্ছে এ হাট থেকে। দুবলাগাড়ী হাটে আসা চট্টগ্রামের কাঁচামাল পাইকার বাবু মিয়া জানালেন, দেশের অন্য জেলাগুলোতেও সবজি উত্পাদন হয়। তবে বগুড়ার শীতের সবজি উত্কৃষ্টমানের। তাছাড়া ব্যবসার পরিবেশসহ যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। এ জন্যই এখানে সবজি কিনতে আসা। বগুড়ার শীবগঞ্জের বিহার, নামুজা, উথলী, কানুপুর, মোকামতলা, ভড়িয়া এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত মণ মুলা, পটোল, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, বরবটি, করলা এসে উঠছে বগুড়ার বিখ্যাত সবজিবাজার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে। মোকামতলার তালিকপুরের সবজিচাষী আরিফ হোসেন জানালেন, গতবারের চেয়ে এবার সবজির দাম অপেক্ষাকৃত বেশি।
জেলার অনেক কৃষকেরই অভিযোগ, হিমাগার ও সংরক্ষণের অভাবে বিপুল পরিমাণ সবজি নষ্ট হয় এবং অনেক সময় পানির দামে বিক্রি করতে গিয়ে তারা ক্ষতির শিকার হন। সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে সারাবছর কম দামে সবজি পাওয়া যেত।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলতাব হোসাইন জানান, বর্তমানে বগুড়া জেলায় চাহিদার দ্বিগুণ সবজি উত্পাদন হচ্ছে। সমন্বিত সবজি চাষের ওপর নিয়মিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে কৃষকরা সঠিক দাম পেতে পেতেন।
Source: Daily Amardesh
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, বগুড়ায় প্রতিবছর ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে চলছে সমন্বিত পদ্ধতিতে সবজি চাষ। এ জমিতে বছরে উত্পাদিত হয় ৪ লাখ ২৫ হাজার টন সবজি।
সবচেয়ে বেশি উত্পাদন হয় শীত মৌসুমে। এ মৌসুমে ২ লাখ ২৫ হাজার টন সবজি উত্পাদন হয়। উত্পাদিত সবজির মধ্যে ২ লাখ ৪০ হাজার টন স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে। বাকি ১ লাখ ৮৪ হাজার টন রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে সরবরাহ হচ্ছে। প্রায় ৪২৫ কোটি টাকার সবজি উত্পাদন হয়। এসব সবজি বিক্রি করে জেলার কৃষকরা প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় করেন।
বগুড়া কৃষিপ্রধান অঞ্চল হিসেবে খ্যাত নবগঠিত শাজাহানপুর উপজেলা। উপজেলার চোপিনগর ইউনিয়নের কামাড়পাড়ার সবজিচাষী গোলাম রব্বানীর কয়েক শতাংশ জমিতে চাষ করা হয়েছে পুল পেঁয়াজ, পালংশাক, হাইব্রিড মরিচ চারা, পটোলের চারা ও রাঁধুনি পাতা। গোলাম রব্বানী বলেন, গত আশ্বিনের শেষ সপ্তাহে সবজি চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করেন তিনি। জমিতে পালংশাকের বীজ, রাঁধুনির বীজ এবং বীজ পেঁয়াজ বোনা হয়। এর মধ্যে উত্পাদিত পালংশাক ও রাঁধুনি পাতা চলতি কার্তিকের ১২ তারিখে এক দফা বাজারে বিক্রি করেছেন তিনি। জমির খালি অংশে হাইব্রিড মরিচ ও পটোলের চারা লাগিয়েছেন। চলতি মাসেই পালং ও রাঁধুনি আরও এক দফা বাজারে বিক্রি হয়ে জমিতে মরিচ ও পটোল চারা থাকবে। সেই সঙ্গে ধনিয়া বীজ বোনা হবে। আগামী অগ্রহায়ণে বাজারে বিক্রি হবে ধনিয়া পাতা ও মরিচ। পরে এক মাসের মধ্যে পটোলও উত্পাদন হবে। বছর শেষে এক লাখ টাকা আয় হয় উত্পাদিত সবজি বিক্রি করে। এভাবে সারাবছর জেলায় চলে চাষীদের সমন্বিত পদ্ধতিতে সবজি চাষ। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষে চাষী ও নার্সারি মালিকরা সমন্বয় করে চলেন। সবজিচাষীদের বীজ ও চারা সরবারহ করে থাকেন সবজি নার্সারি মালিকরা। শাজাহানপুরের সবজিচাষী এরশাদুল, ইমরান হোসেন, লালু আকন্দ বলেন, দুবলাগাড়ী বন্দরের জিতু বীজ ভাণ্ডার ও নার্সারি থেকে উন্নত হাইব্রিড জাতের ধনিয়া, রাঁধুনি, পালংশাখের বীজ ও হাইব্রিড মরিচ চারা সংগ্রহ করেছেন তারা। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি অধিদফতরের লোকজন মাঠপর্যায়ে কৃষকদের চাষাবাদ পরিদর্শন করেন না। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বীজ ও কীটনাশক কোম্পানির পরামর্শের জন্য তারা হাজির হন। কৃষকরা বলেন, সবজি চাষে পরিচর্যার এতোটাই চাপ থাকে, জেলা কিংবা উপজেলা কৃষি অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে ওঠে না। অথচ প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিদর্শনের জন্য একজন করে সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। মাঝেমধ্যে সবজিতে মড়ক দেখা দিলে সবজিচাষীদের ক্ষতির শিকার হতে হয়। তারপরও অর্থনৈতিনক উন্নয়নে সবজি চাষ করে চলছেন কৃষকরা। শত শত চাষী উত্পাদিত সবজি বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে এনে তুলছেন স্থানীয় বাজারগুলোতে।
স্থানীয় বাজার থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সবজি কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছেন। বগুড়া সদর, মহাস্থান, মোকামতলা, শিবগঞ্জ, ধুনট, শাজাহানপুর, শেরপুর, গাবতলীসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে গড়ে প্রতিদিন ৫০ ট্রাক করে সবজি চালান হচ্ছে বাইরের জেলাগুলোতে। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করছেন এ জেলার চাষীরা। কৃষকরা ভোর থেকেই ছুটে যান এসব সবজি বাজারে। দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। বাইরের জেলা থেকেও ব্যবসায়ীরা এসে ভিড় জমাচ্ছেন এসব বাজারে। ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, ঝিনাইদহসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। সবজিবাজার ঘিরে কর্মমুখর থাকেন শত শত শ্রমিক, গ্রামের মহিলারা। জমি থেকে সবজি সংগ্রহ, পরিবহন, বাছাই, বস্তায় ভরা ও ট্রাক বোঝাই করার কাজে শত শত মহিলাসহ সব শ্রমিক রাত-দিন ব্যস্ত সময় কাটান।
শাজাহানপুর উপজেলার দুবলাগাড়ী হাটের ইজারাদার সাজু মিয়া বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মহাস্থানগড় বাজারে চলে শীতের সবজির বেচাকেনা। শুরুতে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ট্রাক সবজি সরবরাহ হচ্ছে এ হাট থেকে। দুবলাগাড়ী হাটে আসা চট্টগ্রামের কাঁচামাল পাইকার বাবু মিয়া জানালেন, দেশের অন্য জেলাগুলোতেও সবজি উত্পাদন হয়। তবে বগুড়ার শীতের সবজি উত্কৃষ্টমানের। তাছাড়া ব্যবসার পরিবেশসহ যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। এ জন্যই এখানে সবজি কিনতে আসা। বগুড়ার শীবগঞ্জের বিহার, নামুজা, উথলী, কানুপুর, মোকামতলা, ভড়িয়া এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত মণ মুলা, পটোল, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, বরবটি, করলা এসে উঠছে বগুড়ার বিখ্যাত সবজিবাজার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে। মোকামতলার তালিকপুরের সবজিচাষী আরিফ হোসেন জানালেন, গতবারের চেয়ে এবার সবজির দাম অপেক্ষাকৃত বেশি।
জেলার অনেক কৃষকেরই অভিযোগ, হিমাগার ও সংরক্ষণের অভাবে বিপুল পরিমাণ সবজি নষ্ট হয় এবং অনেক সময় পানির দামে বিক্রি করতে গিয়ে তারা ক্ষতির শিকার হন। সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে সারাবছর কম দামে সবজি পাওয়া যেত।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলতাব হোসাইন জানান, বর্তমানে বগুড়া জেলায় চাহিদার দ্বিগুণ সবজি উত্পাদন হচ্ছে। সমন্বিত সবজি চাষের ওপর নিয়মিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে কৃষকরা সঠিক দাম পেতে পেতেন।
Source: Daily Amardesh
No comments:
Post a Comment