দুগ্ধ খামারিদের দারিদ্র্য জয়
সিরাজুল ইসলাম
সঠিক পরিকল্পনা, কাজের প্রতি আন্তরিক আর সততা থাকলে যে অসহায়তার শৃঙ্খলে কাউকে বেঁধে রাখা যায় না—সেটাই প্রমাণ করেছে দুগ্ধ খামার গড়ে তুলে খোকসা-কুমারখালীর পাঁচ শতাধিক বেকার যুবক। এসব দুগ্ধ খামারকে কেন্দ্র করে কুমারখালীতে গড়ে উঠেছে বৃহত্ শিলাইদহ ডেইরি ফার্ম। এখানকার ফার্মের প্রক্রিয়াজাত দুধ প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। খোকসার এক্তারপুর গ্রামের শাহাদত আলীর ১০টি গাভী প্রতিনিয়ত প্রায় এক মণ দুধ দিচ্ছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশার এক্তারপুর শাখার ম্যানেজারের পরামর্শ ও অর্থঋণ সহায়তায় চলতি বছরে আরও পাঁচটি গাভী কিনে আধুনিক সুবিধাসংবলিত দুগ্ধ খামার গড়ে তুলেছেন। গবাদি পশুর জাত বিচার, ওষুধ, পরিবেশ ও ফার্ম আবাদ পদ্ধতি সম্পর্কেও রয়েছে তার বেশ জ্ঞান। বর্তমানে তার দুগ্ধ খামারে ১৫টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে উন্নতজাতের পাঁচটি। গোবর থেকে তৈরি জৈব সার ও জ্বালানি থেকেও মাসে প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকা আয় হয় বলে শাহাদত জানান। তার দুগ্ধ খামারটি এলাকায় আত্মকর্ম সংস্থানের একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। খোকসার পাইকপাড়া গ্রামের হাসিনা বেগমও দুগ্ধ খামার করে সংসারে সুখ ও সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন। একসময় অভাব-অনটন ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী। তবুও স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে ভোলেন না তিনি। খুঁজতে থাকেন কোনো অবলম্বন। এরকম দুর্বিষহ জীবনযাপনকালে তার সহায়তায় এগিয়ে আসে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশা। ওই সংস্থা থেকে প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুটি গাভী কিনে শুরু করেন পালন। এরপর হাসিনাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে হাসিনার দুগ্ধ খামারে গাভীর সংখ্যা আটটি। খোকসা-কুমারখালীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা-গড়াই নদীর পাড়ের ২০ গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক যুবক আশা’র ঋণ সহায়তায় গড়ে তুলেছে দুগ্ধ খামার। মাত্র এক দশকের ব্যবধানে বেশ বদলে গেছে এই দুই উপজেলার আর্থ-সামাজিক অবস্থার চালচিত্র। এখানকার জনসংখ্যার প্রায় ১৫ ভাগ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুগ্ধ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কুমারখালীর দইরামপুর, হাশিমপুর, কালোয়া ও কয়া এলাকার প্রতিটি ঘরেই রয়েছে দুগ্ধ খামার। খাঁটি দুধ থেকে তৈরি দইয়েরও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। ১৯৯৯ সালে চাকরির পেছনে হন্যে হয়ে ঘোরা হতাশ শিক্ষিত যুবক রিপন এগিয়ে আসেন দুগ্ধ খামার স্থাপনে। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশা। তার খামারে পাঁচ কর্মচারীকে প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা বেতন ও অন্যান্য খরচ বাদে বছরে দুধ বিক্রির টাকার লাভ পায় প্রায় দেড় লাখ টাকা বলে তিনি জানান। আশা সংস্থা দুগ্ধ খামারিদের ঋণ সহায়তা দিতে শুরু করেছে আলাদা রকমের প্রকল্প। ফলে ইচ্ছে করলে যেকোনো যুবকই আশার ঋণ সহায়তা এবং তাদের পরামর্শে দুগ্ধ খামার গড়ে তুলতে পারে। দুগ্ধ খামারি আ. ওহাব বলেন, ‘আসলে আমরা কেউ অভাবী নই; নিজের উদ্যমতা, পরিশ্রম আর মেধাকে ঠিকমত কাজে লাগাতে পারলে অভাব কখনোই কাছে আসতে পারে না।’
No comments:
Post a Comment