বিদেশে কৃষি জমি লিজ : দেরিতে হলেও মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ
০০ শফিকুর রহমান রয়েল
- দ্যা ইকোনোমিস্ট অনুসরণে
সম্প্রতি সাপ্তাহিক ২০০০-এ প্রকাশিত বিশেষ একটি প্রতিবেদন পড়লাম মনোযোগ দিয়ে। জানতে পারলাম, গত ২৪ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পশ্চিম আফ্রিকায় 'ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন'-এ ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস। উদ্দেশ্য ছিল- বাজার অনুসন্ধান, জনশক্তি রফতানি ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা। দেশে ফিরে তিনি সাংবাদিকদের শুনিয়েছেন আশাব্যঞ্জক কথাবার্তা। ঘানা, সেনেগাল ও আইভোরিকোস্টকে কৃষি জমি লিজ নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রস্তাব গৃহীত হলে উৎপাদিত ফসল বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেবে দেশগুলো। তার মানে কৃষি কাজ করতে বাংলাদেশের কৃষকদের পশ্চিম আফ্রিকায় যাওয়ার একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর তথ্য অনুসারে, লাইবেরিয়ায় মাত্র এক মার্কিন সেন্টের বিনিময়ে এক একর জমি লিজ নেয়া যায় এক বছরের জন্য। এ তো রীতিমতো পানির দাম!
মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ বিদেশে কৃষি জমি লিজ নেয়ার যে চিন্তা এখন করছে, অনেক দেশই তা শুরু করে দিয়েছে অনেক আগে। পুঁজি রফতানি করে, অথচ খাদ্য আমদানি করে, এমন দেশগুলো এই উদ্যোগের অগ্রপথিক। বিশ্ববাজার থেকে খাদ্য কেনার চেয়ে এই কৌশল বেশি কার্যকরী। সরকারী এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কোম্পানিগুলো বিদেশে কৃষি জমি লিজ নিয়ে ফসল ফলায়। তারপর যৎসামান্য দিয়ে বাকিটা জাহাজ ভরে নিয়ে আসে নিজেদের দেশে। তারা অবশ্য নিজেদের কৃষক পাঠায় না। চুক্তিভিত্তিক ওখানকার কৃষক দিয়েই উৎপাদন করে। অনেকেই এটিকে বলছে, নয়া সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। তবে লিজ নেয়া দেশগুলোর দাবি- বীজ, প্রযুক্তি পুঁজি সরবরাহের বদৌলতে মুনাফা ভোগ করছে তারা।
বিদেশে কৃষি জমি লিজ নেয়ার ফলশ্রুতিতে গেলো বছরের সূচনায় সৌদি আরব প্রথম গমের চালানটি গ্রহণ করে। বাদশাহ আব্দুলস্নাহ এই মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। করবেনই বা না কোনো, সবে তো শুরু। এখন থেকে প্রতিবছর ইথিওপিয়া থেকে আসবে বিশাল পরিমাণের খাদ্য শস্য। বাদশাহ সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগেই জমি লিজ নেয়ার চুক্তি করেন দরিদ্র দেশটির সঙ্গে। প্রথম কয়েক বছর করের কোন ঝামেলা নেই। বিনিয়োগকারী সুযোগ পাচ্ছে উৎপাদিত সমস্ত খাদ্য শস্যই দেশে নিয়ে যাওয়ার। সৌদি আরব ইথিওপিয়াতে বিনিয়োগ করেছে ১১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডবস্ন- এফপি) ঠিক একই পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে ইথিওপিয়াতে গত ৪ বছরে। তবে তাদের লক্ষ্য ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে আক্রান্ত মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা।
বিদেশে কৃষি জমিতে বিনিয়োগ নতুন কিছু নয়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও যৌথ খামারগুলো লিজ নেয়ার জন্য ভিড় করেছিলো বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা। তবে সাম্প্রতিক প্রবণতাকে একটু ভিন্ন বলেই মন হচ্ছে, বিশেষত চুক্তির পরিসরের কারণে। ১ লাখ হেক্টরের (২৪ হাজার একর) চুক্তি হলেই সেটিকে বলা হয় বড় চুক্তি। বর্তমানে চুক্তি হচ্ছে তারচে' অনেক বড় আকারে। কেবলমাত্র সুদানেই ৬ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমি লিজ নেয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। সংযুক্ত আরব-আমিরাত ও মিশর নিয়েছে ৪ লাখ হেক্টর করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুদানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মোট কর্ষিত জমির এক-পঞ্চমাংশ তারা ছেড়ে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের কাছে। আফ্রিকার সর্ববৃহৎ এ দেশটি ঐতিহ্যগতভাবে আরব বিশ্বের রুটির ঝুড়ি নামে পরিচিত। তবে লিজ সেই সব দেশই দিচ্ছে, যাদের রয়েছে কর্ষিত-অকৃর্ষিত প্রচুর জমি, অথচ ঘাটতি রয়েছে পুঁজির।
বিদেশে জমি লিজ নেয়ার দৌড়ে ইতোমধ্যে সামিল হয়েছে ভারত ও চীন। জৈব জ্বালানির জন্য পামওয়েল উৎপাদনের লক্ষ্যে চীন কঙ্গোর কাছ থেকে লিজ নিয়েছে ২.৮ মিলিয়ন হেক্টর জমি। সেখানে তারা গড়ে তুলছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পামওয়েল পস্নানটেশন। এরই মধ্যে সেখানে পেঁৗছে গিয়েছে চীনা কৃষি শ্রমিক। আরো ২ মিলিয়ন হেক্টরের জন্য তারা কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে কঙ্গোর সঙ্গে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই) জানিয়েছে, ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত দরিদ্র দেশগুলোর প্রায় ২০ মিলিয়ন হেক্টর জমি লিজ হিসেবে বিনিময় হয়েছে। এ জন্য অর্থ চুক্তির পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনেকেই এ বিষয়টিকে দেখছে ইতিবাচক দৃষ্টিতে। কারণ, প্রতি হেক্টর জমিতে যদি ২ টন খাদ্য শস্যও হয়, তবে তা হবে আফ্রিকায় গড় উৎপাদনের দ্বিগুণ। এতে করে পৃথিবীর খাদ্য সমস্যা কমানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
আগে ভিন দেশের কৃষিতে বিনিয়োগ হতো কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে, কিন্তু এখন চলছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। তবে বেসরকারী পর্যায়ে বিনিয়োগও টিকে রয়েছে। গত বছর সুইডেনের আলপো এগ্রো কোম্পানি রাশিয়ার কাছ থেকে লিজ নেয় ১ লাখ ২৮ হাজার হেক্টর জমি। প্রায় সমপরিমাণ জমি কম্বোডিয়ার কাছ থেকে নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কোম্পানি।
বৃহৎ পরিসরে জমি লিজ নেয়ার চিন্তাটা হয়তো বাংলাদেশ এখনই করছে না, কিন্তু স্বল্প পরিসরে হলেও এখনই শুরু করা উচিত। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বীরা তৎপর। ভবিষ্যতে সস্তা বিনিময় মূল্য নাও থাকতে পারে। তবে আশার কথা- চাষাবাদ ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো। অদূর ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিকরা ফসল ফলাচ্ছে আফ্রিকায়, আর উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক চলে আসছে বাংলাদেশে।
মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ বিদেশে কৃষি জমি লিজ নেয়ার যে চিন্তা এখন করছে, অনেক দেশই তা শুরু করে দিয়েছে অনেক আগে। পুঁজি রফতানি করে, অথচ খাদ্য আমদানি করে, এমন দেশগুলো এই উদ্যোগের অগ্রপথিক। বিশ্ববাজার থেকে খাদ্য কেনার চেয়ে এই কৌশল বেশি কার্যকরী। সরকারী এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কোম্পানিগুলো বিদেশে কৃষি জমি লিজ নিয়ে ফসল ফলায়। তারপর যৎসামান্য দিয়ে বাকিটা জাহাজ ভরে নিয়ে আসে নিজেদের দেশে। তারা অবশ্য নিজেদের কৃষক পাঠায় না। চুক্তিভিত্তিক ওখানকার কৃষক দিয়েই উৎপাদন করে। অনেকেই এটিকে বলছে, নয়া সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। তবে লিজ নেয়া দেশগুলোর দাবি- বীজ, প্রযুক্তি পুঁজি সরবরাহের বদৌলতে মুনাফা ভোগ করছে তারা।
বিদেশে কৃষি জমি লিজ নেয়ার ফলশ্রুতিতে গেলো বছরের সূচনায় সৌদি আরব প্রথম গমের চালানটি গ্রহণ করে। বাদশাহ আব্দুলস্নাহ এই মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। করবেনই বা না কোনো, সবে তো শুরু। এখন থেকে প্রতিবছর ইথিওপিয়া থেকে আসবে বিশাল পরিমাণের খাদ্য শস্য। বাদশাহ সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগেই জমি লিজ নেয়ার চুক্তি করেন দরিদ্র দেশটির সঙ্গে। প্রথম কয়েক বছর করের কোন ঝামেলা নেই। বিনিয়োগকারী সুযোগ পাচ্ছে উৎপাদিত সমস্ত খাদ্য শস্যই দেশে নিয়ে যাওয়ার। সৌদি আরব ইথিওপিয়াতে বিনিয়োগ করেছে ১১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডবস্ন- এফপি) ঠিক একই পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে ইথিওপিয়াতে গত ৪ বছরে। তবে তাদের লক্ষ্য ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে আক্রান্ত মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা।
বিদেশে কৃষি জমিতে বিনিয়োগ নতুন কিছু নয়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও যৌথ খামারগুলো লিজ নেয়ার জন্য ভিড় করেছিলো বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা। তবে সাম্প্রতিক প্রবণতাকে একটু ভিন্ন বলেই মন হচ্ছে, বিশেষত চুক্তির পরিসরের কারণে। ১ লাখ হেক্টরের (২৪ হাজার একর) চুক্তি হলেই সেটিকে বলা হয় বড় চুক্তি। বর্তমানে চুক্তি হচ্ছে তারচে' অনেক বড় আকারে। কেবলমাত্র সুদানেই ৬ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমি লিজ নেয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। সংযুক্ত আরব-আমিরাত ও মিশর নিয়েছে ৪ লাখ হেক্টর করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুদানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মোট কর্ষিত জমির এক-পঞ্চমাংশ তারা ছেড়ে দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের কাছে। আফ্রিকার সর্ববৃহৎ এ দেশটি ঐতিহ্যগতভাবে আরব বিশ্বের রুটির ঝুড়ি নামে পরিচিত। তবে লিজ সেই সব দেশই দিচ্ছে, যাদের রয়েছে কর্ষিত-অকৃর্ষিত প্রচুর জমি, অথচ ঘাটতি রয়েছে পুঁজির।
বিদেশে জমি লিজ নেয়ার দৌড়ে ইতোমধ্যে সামিল হয়েছে ভারত ও চীন। জৈব জ্বালানির জন্য পামওয়েল উৎপাদনের লক্ষ্যে চীন কঙ্গোর কাছ থেকে লিজ নিয়েছে ২.৮ মিলিয়ন হেক্টর জমি। সেখানে তারা গড়ে তুলছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পামওয়েল পস্নানটেশন। এরই মধ্যে সেখানে পেঁৗছে গিয়েছে চীনা কৃষি শ্রমিক। আরো ২ মিলিয়ন হেক্টরের জন্য তারা কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছে কঙ্গোর সঙ্গে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইএফপিআরআই) জানিয়েছে, ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত দরিদ্র দেশগুলোর প্রায় ২০ মিলিয়ন হেক্টর জমি লিজ হিসেবে বিনিময় হয়েছে। এ জন্য অর্থ চুক্তির পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনেকেই এ বিষয়টিকে দেখছে ইতিবাচক দৃষ্টিতে। কারণ, প্রতি হেক্টর জমিতে যদি ২ টন খাদ্য শস্যও হয়, তবে তা হবে আফ্রিকায় গড় উৎপাদনের দ্বিগুণ। এতে করে পৃথিবীর খাদ্য সমস্যা কমানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
আগে ভিন দেশের কৃষিতে বিনিয়োগ হতো কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে, কিন্তু এখন চলছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। তবে বেসরকারী পর্যায়ে বিনিয়োগও টিকে রয়েছে। গত বছর সুইডেনের আলপো এগ্রো কোম্পানি রাশিয়ার কাছ থেকে লিজ নেয় ১ লাখ ২৮ হাজার হেক্টর জমি। প্রায় সমপরিমাণ জমি কম্বোডিয়ার কাছ থেকে নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কোম্পানি।
বৃহৎ পরিসরে জমি লিজ নেয়ার চিন্তাটা হয়তো বাংলাদেশ এখনই করছে না, কিন্তু স্বল্প পরিসরে হলেও এখনই শুরু করা উচিত। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বীরা তৎপর। ভবিষ্যতে সস্তা বিনিময় মূল্য নাও থাকতে পারে। তবে আশার কথা- চাষাবাদ ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো। অদূর ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিকরা ফসল ফলাচ্ছে আফ্রিকায়, আর উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক চলে আসছে বাংলাদেশে।
- দ্যা ইকোনোমিস্ট অনুসরণে
No comments:
Post a Comment