Wednesday, October 27, 2010

রাজশাহীতে বীজ শোধন : অধিক ফলন পাচ্ছে কৃষক

রাজশাহীতে বীজ শোধন : অধিক ফলন পাচ্ছে কৃষক

রাজশাহী অফিস
বীজ শোধন মানেই অধিক ফলন। রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা বীজ শোধন করে চাষ করার ফলে অধিক ফলন পাচ্ছে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন বীজ উত্পন্নকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কৃষকরাও এখন বীজ শোধন করে ফসলের চাষ করছেন। বিশ্বের সেরা বীজ শোধন ও প্রতিরোধক ছত্রাকনাশক আমেরিকার কেমচুরা করপোরেশনের প্রোভেক্সসহ বীজ শোধক ব্যবহার করছেন কৃষকরা।
রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নওগাঁর বীজ উত্পাদনকারীদের সংগঠন বেসরকারি বীজ উত্পাদনকারী সমিতির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, তাদের সমিতির সব সদস্য বীজ শোধন করার পর বীজ বাজারজাত করে থাকেন। ভালো বীজে ভালো ফলন, বীজ শোধনে অধিক ফলন, এটা এখন কৃষকরাও বোঝেন ও জানেন। বীজ আলু উত্পাদক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান কাজী বলেন, তার সমিতির ৮ শতাধিক সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে বেশকিছু সদস্য প্রোভেক্স দিয়ে বীজ শোধন করে আলুর চাষ করে গত বছর ভালো ফলন পেয়েছেন। পাশাপাশি ধান, গম ও অন্যান্য ফসলের বীজ শোধন করে আবাদ করছেন কৃষকরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএ মুনজুর হোসেন বলেন, বীজ শোধন হচ্ছে বীজের বাইরে বা বীজের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র জীবকণার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জৈবিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়া। বীজ শোধন করা হলে অতি ক্ষুদ্র জীবাণুর হাত থেকে বীজ ও চারাগাছকে রক্ষা করা যাবে। বীজ শোধন করে ফসল লাগানোর ফলে ৪/৫ সপ্তাহ পর্যন্ত রোগের আক্রমণ থেকে ফসল সুরক্ষিত থাকে। গাছের সার্বিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, ফসলের উত্পাদন বাড়ে। যে কোনো কৃষক বাজার থেকে বীজ প্রোভেক্স বা পাউডার কিনে প্রতি কেজি ধান, গম, পাট, লাউ, বেগুন, আলু বীজের জন্য ২ থেকে ৩ গ্রাম নিয়ে পানিতে মিশিয়ে সরাসরি বীজে দিতে পারে। তিনি ধান, গম, ভুট্টা ও আলুর বীজ শোধন ও বীজ ট্রিটমেন্ট নিয়ে কাজ করছে। এর ফলাফল অত্যন্ত ভালো।
বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক সরদার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, শুধু বিএডিসি নয় তার জানা মতে, সারা বিশ্বে সরকারি ও বেসরকারিভাবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বীজ শোধন করে চাষাবাদ করছেন। এতে করে শুধু ফলনই বাড়ে না বরং ফসলের পরবর্তী সংরক্ষণের গুনগত মান বজায় থাকে।
হোসেন এন্টারপ্রাইজ সিসি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, তিনি আমেরিকার কেমচুরা করপোরেশনের প্রোভেক্সের আমদানিকারক। প্রোভেক্সের মধ্যে বীজ শোধন করার জন্য কার্বোক্সিন ও থিরাম নামের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে; যা বীজ শোধন ও সংরক্ষণ করে থাকে। তার কোম্পানি বিএডিসি ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ধান ও গমের বীজ শোধনের জন্য বা বীজ ট্রিটমেন্টের জন্য ৫ বছর মেয়াদী চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এতে করে এখন থেকে কৃষকরা শোধন করা বীজ পাবেন। সারা বিশ্বে ১০০টিরও বেশি দেশে ৫০টির বেশি ফসলে প্রোভেক্স ব্যবহার করা হয় বলে তিনি জানান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ইউনুছ আলী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৃষকরা বীজ শোধন করে আবাদ করে থাকেন।
ফলে কৃষকদের ফসলের উত্পাদন বাড়ে। রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা ধান, গম, আলুসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ শোধন করে আবাদ করে থাকেন। এখন কৃষকরা চাষাবাদের ক্ষেত্রে অনেক সচেতন। তারপরও মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন ধরনের ফসলের উত্পাদন কলাকৌশলের ওপর কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ভালো বীজে ভালো ফলন, বীজ শোধনে অধিক ফলন—এটা এখন কৃষকরা সহজেই বোঝেন ও জানেন।
Source: Daily Amardesh

No comments:

Post a Comment