Wednesday, October 13, 2010

খুবি প্রকৌশলীদের রোবট উদ্ভাবন

খুবি প্রকৌশলীদের রোবট উদ্ভাবন

সোহেল রানা বীর, খুবি
রোবট শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে মানবসদৃশ কোনো যন্ত্র। মনের কল্পনায় আমরা হয়তো দেখি যন্ত্রটি হেঁটে চলছে কিংবা কথাও বলছে। কিন্তু আসলে রোবট কী?
রোবট শব্দটির উত্পত্তি চেক শব্দ ‘রোবোটা’ থেকে, যার অর্থ ফোরসড লেবার বা মানুষের দাসত্ব কিংবা একঘেয়েমি খাটুনি বা পরিশ্রম করতে পারে এমন যন্ত্র।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো একদল তরুণ প্রকৌশলী উদ্ভাবন করেছেন মানুষের বিভিন্ন কাজ বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ, বিপজ্জনক কাজ করতে সক্ষম এমন এক ‘রোবটিক আর্ম’। যা মানুষের হাতের বিকল্প হিসেবে গৃহস্থালির কাজ থেকে শুরু করে শিল্পক্ষেত্রের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ খুব সহজে অল্প সময়ে করতে সক্ষম। একই কাজ মানুষের জন্য বারবার করা বিরক্তিকর ও কষ্টদায়ক। এমন বিরক্তিকর কাজও খুব সহজে এ যন্ত্র দ্বারা সম্পন্ন করা যায়।
রোবটিক আর্ম উদ্ভাবনের চিন্তা প্রথমে আসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) ডিসিপ্লিনের প্রভাষক এসকে আলমগীর হোসেনের মাথায়। তাকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন একই ডিসিপ্লিনের প্রভাষক কাজী মাসুদুল আলম। এ উদ্যোগকে সফল করতে ভাবী প্রকৌশলী কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল ডিসিপ্লিনের তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আবদুল্লাহ আল আহসানকে প্রধান করে নিযুক্ত করা হয় আরও একজন তরুণ প্রকৌশলী তানভির আহমেদ শুভকে। ছয় মাস পর এসকে আলমগীর হোসেন ও কাজী মাসুদুল আলম কম্পিউটার বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে কানাডায় চলে গেলে এ আবিষ্কারে তত্ত্বাবধায়ন করেন একই ডিসিপ্লিনের প্রভাষক মো. মাসুদুর রহমান এবং শামীমা ইয়াসমিন। দীর্ঘ এক বছর গবেষণার পর তারা এ রোবটিক আর্ম আবিষ্কার করতে সক্ষম হন।
আবিষ্কারকরা জানান, এটি আমাদের দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। এতে ব্যবহৃত সব যন্ত্রাংশ সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। তাছাড়া এ যন্ত্রের অন্যতম বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি মানুষের কথামতো কাজ করতে পারে।
এ রোবটিক আর্ম সক্রিয় করতে প্রয়োজন একটি কম্পিউটার, বিভিন্ন ড্রাইভার সার্কিট, হেডফোন এবং রোবটসদৃশ যান্ত্রিক হাত। প্রথমে কম্পিউটার, ড্রাইভার সার্কিট ও রোবটিক আর্মকে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিতে হবে এবং হেডফোনকে কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত করলে ব্যবহারকারী তার কথার মাধ্যমে যন্ত্রটিকে ইচ্ছা অনুযায়ী পরিচালনা করতে পারবেন।
এ বিষয়ে মো. আবদুল্লাহ আল আহসান বলেন, রোবটিক আর্ম হলো এক ধরনের রোবট, যা মানুষের হাতের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। তিনি আরও বলেন, গবেষণাগারে বিভিন্ন বিষাক্ত ও বিপজ্জনক রাসায়নিক বস্তু ব্যবহার মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে এ যন্ত্রটি দ্বারা বিনা সংস্পর্শে সফলতার সঙ্গে কাজ সম্পাদন করা যায়।
তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান বিশ্বে রোবটের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোবটের মাধ্যমে মানুষ বিনা ঝুঁকিতে অসাধ্য কাজও সাধন করতে চলেছে। এ ধরনের উদ্ভাবন তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশকে আরও একধাপ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করেন উদ্ভাবনকারীরা।
এ উদ্ভাবনের তত্ত্বাবধায়ক প্রভাষক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, এ উদ্ভাবন উন্নতমানের রোবট তৈরির প্রথম ধাপ হলেও এটি অনায়াসে মানুষের হাতের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি গৃহস্থালির কাজ থেকে শুরু করে শিল্পক্ষেত্রের বিভিন্ন বিপজ্জনক কাজও করতে সক্ষম।
এ উদ্ভাবনকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাইফুদ্দিন শাহ ও কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ধরনের উদ্ভাবন আমাদের দেশে খুবই বিরল। এ উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশেও উন্নতমানের রোবট আবিষ্কার সম্ভব।
উল্লেখ্য, এর আগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘রোবটিক্স অ্যান্ড ইনটেলিজেন্ট সিস্টেম’ বিষয়ক সেমিনার ও সফটওয়্যার ফেয়ার এবং ঢাকা পরমাণু শক্তি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক্স সোসাইটির (বিইএস) বার্ষিক সম্মেলনে এই রোবটিক আর্মের কার্যকারিতা প্রদর্শন করা হয়। সেমিনারে বক্তারা মানুষের কাজকে আরও সহজ করতে এ ধরনের আবিষ্কারের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা আছে উল্লেখ করে এ আবিষ্কারকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে বাজারজাত করতে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা কামনা করেন।

No comments:

Post a Comment